নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
দুধ (Milk) একটি আদর্শ ও সুষম পানীয়। মহান আল্লাহ তাআলার অনন্য নেয়ামতের মধ্যে দুধ একটি। শুধুমাত্র ‘ভিটামিন সি’ এর ঘাটতি ছাড়া দুধে খাদ্যের সকল উপাদান সুষম অবস্থায় বিরাজ করে। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২৫০ মিলি দুধ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে দুধকে সুস্বাস্থ্যের জন্য অতুলনীয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, ‘দুধ ছাড়া আর কোনো (খাবার) জিনিস নেই, যা একই সঙ্গে খাবার ও পানীয় উভয়টির জন্য যথেষ্ট হয়’(আবু দাউদ)।
প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে দৈনিক ২৯,২৬০ মেট্রিক টন তরল দুধ উৎপাদিত হয়। তন্মধ্যে ৫% প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করা হয়। ৮১% তরল দুধ সাধারণ চা ও মিষ্টির দোকানে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ১৪% বাড়ি বাড়ি গ্রাহকরা ক্রয় করে ব্যবহার করে থাকে। অর্থাৎ মোট উৎপাদিত তরল দুধের চারপঞ্চমাংশেরও বেশি পরিমাণ মিষ্টির দোকানে বিক্রয় হয়। ফলে বেশিরভাগ দুগ্ধ খামারীদের ব্যবসা, বিনিয়োগ, বিপনন মিষ্টির দোকানদারদের মর্জির উপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সামাজিক অস্থিরতা বা অন্য কোন কারণে মিষ্টির দোকানদাররা দুধ ক্রয় না করলে খামারীরা বিপাকে পরে যায়।
২০১৫ সালে টানা অবরোধ-হরতালে পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার দুগ্ধ খামারিরা চরম বিপাকে পড়েছিল। ক্রয়কেন্দ্রগুলো নিয়মিত দুধ না কেনায় ৫০ টাকা দরের প্রতি লিটার দুধ বিক্রি করতে হয়েছিল ১২ থেকে ১৫ টাকায়। ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিক্ষুব্ধ খামারিরা প্রায় দুই হাজার লিটার দুধ মহাসড়কে ঢেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
২০১৮ সালে একটি আন্তর্জাতিক গুড়াদুধ কোম্পানী বাংলাদেশে গুড়া দুধের নামে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ভ্যাজিটেবল ফ্যাট মিশ্রিত নকল গুড়াদুধের ব্যবসা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। গণমানুষের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আন্তর্জাতিক গুড়াদুধ কোম্পানীর ঐ গণস্বার্থ বিরোধী প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে ঐ আন্তর্জাতিক গুড়াদুধ ব্যবসায়ীদের সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে জনৈক অধ্যাপকের নেতৃত্বে গবেষকরা মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ং, ইগলু, ফার্ম ফ্রেশসহ অন্যান্য কোম্পানিগুলোর দুধের নমুনা পরীক্ষা করেন এবং দুধে মানবদেহে ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক এর উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছিল। ঐ ষড়যন্ত্রমূলক গবেষণার ফলাফল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি শেষে রুলসহ আদেশ আসে হাইকোর্ট থেকে। সেই আদেশে মহামান্য হাইকোর্ট দুধে এন্টিবায়োটিক উপস্থিতির প্রেক্ষিতে বিএসটিআই’র অনুমোদনপ্রাপ্ত ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিপণনে পাঁচ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো খামারিদের কাছ থেকে দুধ ক্রয় করা বন্ধ করে দেয়। ফলে পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলায় রাস্তায় দুধ ঢেলে প্রতিবাদ করেছেন দুগ্ধ খামারিরা।
উল্লেখ্য, ডিম ও মাংসে আয়োডিন বা ভিটামিন বা অন্য কোনো উপাদান বৃদ্ধির প্রয়োজনে হাঁস-মুরগি পালনকালে আয়োডিন বা ভিটামিন বা প্রয়োজনীয় উপাদান মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো হয়। অধিক পরিমাণ কেরোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ানো হলে ডিমের কুসুমের রং গাঢ় হলুদ হয়। অসুস্থ দুধাল গাভীকে চিকিৎসার জন্য এন্টিবায়োটিক বা ঔষধ সেবন করানো হলে, ঐ গাভীর দুধে সেবনকৃত এন্টিবায়োটিক বা ঔষধের নির্যাসের উপস্থিতি অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এ বিষয়ে বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা গবেষণালব্ধ ফলাফল নিয়ে এমন ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃষ্টি করা অন্যায় ও বাংলাদেশে দুগ্ধশিল্পের বিরূদ্ধে সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিবিএস এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে ২,৬২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১,৩৮,০০০ মেট্রিক টন গুড়া দুধ আমদানী করা হয়েছে। যাতে একদিকে যেমন দেশের ডেইরী শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এছাড়া আমদানি করা এসব দুধের মান (quality/ standard) নিয়ে জনমনে সংশয় আছে। এমনি বাস্তবতায় বর্তমানে দেশের দুধ উৎপাদনকারী খামারীরা ৮১% তরল দুধের যথাযথ মূল্য পাচ্ছে না। প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সামাজিক অস্থিরতার কারণে বা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে বা যে কোন কারণে দুধ বিক্রি করতে বাধাগ্রস্ত হয়।
আমার স্পষ্ট মনে পরে, আশির দশকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব (মরহুম) ডাঃ ফজলুল হক সাহেবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের দুগ্ধশিল্প বিকাশের স্বার্থে গুড়াদুধ আমদানি নিরুৎসাহিত করার জন্য গুড়া দুধ আমদানীতে ট্যাক্স বৃদ্ধি করার দাবিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে দেখা করি। উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘শুধু ট্যাক্স কমানো কেন, আমিতো চাই গুড়াদুধ আমদানি বন্ধ করতে। কিন্তু পারি না। আমার উপর অনেক চাপ’। বর্তমানেও সরকার কর্তৃক পরিচালিত সমবায় প্রতিষ্ঠান ‘মিল্ক ভিটা’ কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রস্তুতকৃত গুড়াদুধ বাজারজাত করা এবং চাহিদামত উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। বিদেশ থেকে গুড়াদুধ আমদানি নিরুৎসাহিত করতে, সরকারের কাছে বার বার অনুরোধ করছেন এ খাতে ট্যাক্স বৃদ্ধি করার জন্য, সফলকাম হতে পারছেন না।
কৃষিবান্ধব নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রানীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের নেতৃত্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাংলাদেশের দুগ্ধশিল্প বিকাশের জন্য নিরলস কাজ করছেন। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন চলাকালে প্রান্তিক খামারীদের উৎপাদিত দুধ বিক্রি ব্যহত হলে, প্রান্তিক খামারীদের বিনিয়োগের নিরাপত্তায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে প্রানীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে খামারীদের অবিক্রিত দুধ ক্রয় করা হয় এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি ত্রাণ হিসাবে দুধ দেওয়া হয়। দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ছোট ছোট খামারীদের প্রণোদনা স্বরূপ নগদ অর্থ প্রদান করছেন। শুধু তাই নয়, প্রান্তিক কৃষকদের উৎপাদিত দুধ ক্রয়কারী ছোট ছোট ব্যবসায়ীদেরও উৎসাহিত করার জন্য নগদ অর্থ প্রদান করছেন। কিন্তু এরপর কি?
এই ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের ক্রয় করা দুধ সমন্বয় করে বৃহৎ দুগ্ধশিল্প স্থাপন করে চাহিদা অনুযায়ী অধিক পরিমাণ দুধ পাস্তরিত করে প্যাকেটজাত করা যেতে পারে এবং অধিক সংখ্যক গুড়াদুধ উৎপাদনের শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণ করা যায়। এই গুড়াদুধ দিয়ে মিষ্টি তৈরির মূল উপাদান ‘দুধের ছানা‘ তৈরি করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক খামারীদের উৎপাদিত দুধ উপযুক্ত মূল্যে বিক্রি নিশ্চিত হবে, প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সামাজিক অস্থিরতার কারণে বা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে বা যে কোন কারণে দুগ্ধ খামারীদের ব্যবসা, বিনিয়োগ, বিপনন মিষ্টির দোকানদারদের মর্জির উপর নির্ভরশীল হবে না। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে দুধের ‘মূল্য সংযোজন‘ (Value Add) হবে, দুধের অতিরিক্ত মূল্য পেয়ে খামারীরা গাভী পালনে আরও উৎসাহিত হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। নিজের দেশে উৎপাদিত মানসম্মত গুড়াদুধ দিয়ে চাহিদা মিটাতে পারলে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
অথচ ‘দেশে গুড়াদুধ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় পরিমাণ তরল দুধ নাই‘ বলে বা বিভিন্ন অজুহাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করছেন না। দুগ্ধশিল্প স্থাপনে ঋণ গ্রহণ সহজতর না করায় উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ টিভি নিউজে প্রচারিত হয়েছে, দুদক সচিব মহোদয় বলেছেন, ‘কয়েকজন গার্মেন্টস মালিক ইনভয়েস জালিয়াতির মাধ্যমে বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে’। এই ‘ইনভয়েস জালিয়াতি‘তো ব্যাংকের মাধ্যমেই হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে দুগ্ধশিল্প স্থাপনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ গ্রহণে যত জটিলতা। প্রানীসম্পদ মন্ত্রনালয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করলেও প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলোর সৃষ্ট জটিলতা উদ্যোক্তা সৃষ্টির সরকারি প্রচেষ্টা ব্যহত হচ্ছে। ফলে দুগ্ধশিল্প বিকশিত হতে পারছে না। এই সুযোগে সফল হচ্ছে বিদেশি গুড়াদুধের অবাধ বাজার প্রতিষ্ঠার সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।