নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:১৩ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
গত বেশ কিছুদিন হলো পত্রপত্রিকার পৃষ্ঠার দিকে আর তাকানো যাচ্ছে না। মানুষের নিষ্ঠুরতার কথা পড়তে ভালো লাগে না। এরকম খবর পত্রপত্রিকায় ছাপা হলে নিজের অজান্তেই চোখ ফিরিয়ে নেই। একাত্তর সালে আমাদের এরকম নিষ্ঠুরতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিল তখন চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো উপায় ছিল না। আমাদের চারপাশেই ঘটনাগুলো ঘটেছিল। মনে হচ্ছে সেই দিনগুলো বুঝি আবার ফিরে এসেছে, আমি না চাইলেও আবার সেরকম ঘটনাগুলো দেখতে হচ্ছে, শুনতে হচ্ছে। একজন মা তাঁর মৃত সন্তানের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এরকম দৃশ্য সহ্য করা কঠিন। কিন্তু এখন আমরা সবাই জানি খবরের কাগজের এরকমই একটা ছবির পেছনে এর চাইতেও ভয়ংকর নির্মম আরও হাজারটি কাহিনী আছে। রোহিঙ্গাদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মেয়েদের নিপীড়ন, গণ নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে, নারী পুরুষ শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ভয়ংকর অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবার জন্য একজন দুজন নয়, চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এত অল্প সময়ে এত বেশি শরণার্থী আর কোথাও প্রাণ বাঁচানোর জন্যে হাজির হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থাকতো। এই মুহূর্তে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কমে হাতে গোনা পর্যায়ে চলে এসেছে। তাদের বেশিরভাগই সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। বহুদিন থেকে মিয়ানমার এটিই করতে চেয়েছিল তারা শেষ পর্যন্ত এটি করতে পেরেছে। পৃথিবীর মানুষের সমালোচনা কিংবা ধিক্কার এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিতে পারলে মিয়ানমার তাদের বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত চূড়ান্ত সমাধানই শেষ পর্যন্ত করে ফেলতে পেরেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম চূড়ান্ত সমাধানের কোনো আভাস নেই। ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রটি এর সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ। জোর করে একটি জায়গা থেকে সব অধিবাসীকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে ইসরায়েল রাষ্ট্রটি তৈরি করা হয়েছে, বিশ্ব বিবেকের তাতে একটি আচড়ও পড়েনি। কাজেই হঠাৎ করে রোহিঙ্গাদের জন্য পৃথিবীর মানুষ ব্যাকুল হয়ে উঠবে আমি একবারও সেটি মনে করি না।
আমার নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি আমাদের পাশের দেশ ভারতবর্ষের এই রোহিঙ্গা বিপর্যয় নিয়ে কোনো মাথাব্যাথ্যা নেই। চীন এবং রাশিয়া মোটামুটি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে তারা মিয়ানমারের পক্ষে। একাত্তরে যখন বাংলাদেশে গণহত্যা চলছিল, আমাদের চোখের সামনে যখন শুধু মানুষের লাশ এবং লাশ ঠিক তখন আমরা শুনতে পেতাম এটি ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ এতদিন পর সেই একই ভাষায় একইভাবে আমরা শুনতে পাচ্ছি-রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টি হচ্ছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়! ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ আমেরিকা ‘রিফিউজি’ বা শরণার্থী নিয়ে রীতিমতো এলার্জি আছে তাই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে তাঁদের কোনো গরজ থাকার কথা নয়। নিউইয়র্ক থেকে শেখ হাসিনা সেটা সোজা ভাষায় আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। সদা হাস্যময় মিয়ানমারের জেনারেল সাহেব ইউরোপে খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব-‘তিনি সারা পৃথিবীতে খুবই দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অং সান সুচিকে সাধারণ মানুষজন ইন্টারনেটে একটু গালমন্দ করেছে, চোখ মুখ বন্ধ করে এই সময়টা পার করে দিলেই পৃথিবীর মানুষ এর কথা ভুলে যাবে। আমি প্রত্যেকদিন ইন্টারনেটে বিবিসিতে একবার চোখ বুলিয়ে দেখি, এর মাঝেই প্রত্যেহিক খবরে এখন রোহিঙ্গাদের কোনো খবর নেই! প্রাণ বাঁচানোর জন্য লাখ লাখ নারী শিশু পুরুষের নিজ বাসভূমি ছেড়ে অন্যদেশে আশ্রয় নেওয়ার খবরটির গুরুত্ব বিশেষ অবশিষ্ট নেই। কাজেই মোটামুটি অনুমান করা যায় মিয়ানমার তাঁদের রাখাইন রাজ্যটি মোটামুটি ঝামেলা মুক্ত করে ফেলেছে, সেখানে আর কোনো রোহিঙ্গা নেই। কাজটি করতে হয়তো অনেক সময় লাগতো কিন্তু অনেক দ্রুত করে ফেলা গেছে। রোহিঙ্গাদের চরমপন্থী দল আরসা পুলিশ মিলিটারির ঘাঁটি আক্রমণ করে অল্প কিছু পুলিশ মিলিটারিকে মেরে পুরো কাজটি খুব সহজ করে দিয়েছে। এখন মিয়ানমারের বিশাল মিলিটারি বাহিনী খুবই ‘যৌক্তিক’ ভাবে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা করতে পারছে। এভাবে যে গণহত্যা করা যায় আমরা আমাদের চোখের সামনেই অনেক বার হতে দেখেছি।
২
শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলা অং সান সুচি সেদিন তাদের টেলিভিশনে একটা বক্তৃতা দিয়েছেন। বক্তৃতায় তিনি কী বলবেন মোটামুটি অনুমান করা যেতো- এবং মোটামুটি সেটাই বলেছেন। একাত্তরে বাংলাদেশে এক কোটি শরণার্থী ভারতবর্ষে আশ্রয় নিয়েছিল, পৃথিবীর বেশ কিছু দেশ যখন সেটা নিয়ে পাকিস্তানের ওপর চাপ দিয়েছিল তখন কোনো এক পর্যায়ে পাকিস্তান মিলিটারি শরণার্থীদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছিল। সেই আহ্বান শুনে একজন শরণার্থীও ফিরে যায়নি। কেন যাবে? পাকিস্তান মিলিটারিরাও জানতো সেই ফাঁকাবুলি। শরণার্থীরাও জানতো সেটা ধাপ্পাবাজি। নিজের জীবন নিয়ে কে ধাপ্পাবাজির ফাঁদে পা দেবে? মিলিটারির গুলি খেয়ে মারা যাওয়া থেকে অনাহারে রোগে শোকে কলেরায় মারা যাওয়াটাই তাদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছিল। শরণার্থী ক্যাম্পে তখন প্রায় আট থেকে ১০ লাখ লোক মারা গিয়েছিল।
এবারে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলা পাকিস্তান মিলিটারি থেকে এক কাঠি সরেস। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যাচাই বাছাই করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নেওয়া হবে।’ করার প্রক্রিয়া কী আমরা এখনো জানি না। যাঁরা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছে তাদের কাছে কী কাগজপত্র প্রমাণ হিসেবে আছে আমার জানা নেই। সবচেয়ে বড় কথা এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির কোনো নাগরিক্ত নেই। ব্যাপারটা আমি বুঝতেই পারি না, একজন মানুষ একটি দেশে থাকে কিন্তু সে এই দেশের নাগরিক নয়। দেশের সংবিধানের কথাগুলো লেখা থাকে সেই দেশের নাগরিকের জন্য-কাজেই যারা সেই দেশের নাগরিক নয় তাঁদের জন্য রাষ্ট্রের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। যার অর্থ রোহিঙ্গা শিশু লেখাপড়া করতে পারবে না। অসুস্থ হলে চিকিৎসা পেতে পারবে না। বাসে ট্রেনে উঠতে পারবে না- দেশের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবে না। সবচেয়ে ভয়ংকর কথা দেশের সুনাগরিকেরা যদি কিছু রোহিঙ্গা কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলে সেটা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে না? রোহিঙ্গা মেয়েরা যেহেতু নাগরিক নয় কাজেই তাদের নিপীড়ন করাও নিশ্চয়ই গুরুতর অপরাধ নয়! যে রাষ্ট্রে কিছু মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয় সেই দেশের সংবিধানটি দেখার আমার খুবই কৌতুহল!
শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলা শরনার্থীদের যাচাই বাছাই করে ফিরে যাওয়ার প্রকিওয়ার কথা বলে অবশ্যি স্বীকার করে ফেলেছেন যে শরনার্থী বলে কিছু একটা আছে। আমি ভেবেছিলাম তিনি সেটাই অস্বীকার করবেন। চীন রাশিয়া এবং ভারতবর্ষ পাশে থাকলে যে কোন মিথ্যে খুব জোর দিয়ে বলা যায়। নাফ নদীর এপার থেকে যখন দেখা যায় রাখাইন রাজ্যের গ্রামে গ্রামে আগুন জ্বলছে তখন আগুনটাকে অস্বীকার করা একটু কঠিন হয়ে যায় তখন রাখাইন রাজ্যের কর্মকর্তারা বলেছে মানুষগুলো নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। এর চাইতে নিষ্ঠুর কৌতুক আর কী হতে পারে!
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলার বক্তব্যের সবচেয়ে চমকপ্রদ বক্তব্য হচ্ছে যে তাদের দেশের মিলিটারিরা সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখের পর আর কিছু করেনি। বক্তব্যটিকে সোজা বাংলা অনুবাদ করলে এরকম শোনাবে ‘আগস্টের ২৪ তারিখ থেকে আমাদের মিলিটারি রোহিজ্ঞাদের নির্বিচারে হত্যা করেছে , মেয়েদের নিপীড়ন করেছে ,বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচানোর জন্য বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। মোটামুটি সবাইকে যেহেতু তাড়িয়ে দেওয়া গেছে এখন হত্যা করার জন্য আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাই সেপ্টেম্বরের পাঁচ তারিখ থেকে হত্যা ধর্ষণ বাড়ি জ্বালানো বন্ধ আছে। তবে এই কথাটি মিথ্যা, সেপ্টেম্বরের পাঁচ তারিখের পরেও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রাম পোড়ানো হয়েছে, তাদের ওপর হামলা হয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলার বক্তব্য শুনে মনে হলো, সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখে মিলিটারি অ্যাকশন বন্ধ করার জন্য তিনি সারা পৃথিবী থেকে এক ধরনের বাহবা কিংবা সম্ভব হলে শান্তির জন্যে দ্বিতীয় আরেকটি নোবেল পুরস্কার আশা করছেন। তা না হলে এতো বড় গলায় এতো বড় একটা মিথ্যা কীভাবে বলা হয়?
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমারে ছুটে গিয়েছিলেন, সামরিক শাসন শেষ হয়ে মিয়ানমার গণতান্ত্রিক দেশ হয়ে সেই আনন্দে সারা পৃথিবী উদ্বাস্তু হয়ে নৃত্য করেছে। রোহিঙ্গা বিপর্যয়ের কারণে আমরা এখন মিয়ানমারের প্রকৃত গণতন্ত্রের ছবিটা দেখতে পাচ্ছি। তাদের সংসদের শতকরা ২৫ ভাগ সিট মিলিটারিদের জন্যে,শুধু তাই নয় তিনি বিল পাশ করতে হলে শতকরা ৭৫ ভাগ ভোট পেতে হয়। যার অর্থ কোনো বিল পাশ হবে এবং কোনো বিল পাশ হবে না সেটি সেই দেশের মিলিটারি ঠিক করে দেয়। মজা এখানেই শেষ না। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে মিলিটারি কিন্তু দেশটাকে পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করার জন্য রয়েছে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া সারা পৃথিবীর শ্রদ্ধা এবং ভালবাসায় সিক্ত ফটোজেনিক একজন ভদ্রমহিলা। কি মজা!
আমি দেশ, রাজনীতি, অর্থনীতি কিছুই বুঝি না সাধারণ মানুষের কমনসেন্স দিয়ে সবকিছু বোঝার চেষ্টা করি। একেবারে মৌলিক যে বিষয়গুলো কমনসেন্স দিয়ে বুঝতে হবে সেটি হচ্ছে এই পৃথিবীতে সব মানুষের সম্মাণ নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। পৃথিবীটাকে নানান দেশে ভাগ করা আছে। সব দেশের দায়িত্ব নিজের দেশের মানুষকে সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য করা। গায়ের রং মুখের ভাষা কিংবা ধর্মের জন্য কাউকে পছন্দ না হলেই তাঁকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া যাবে না। ইসরায়েল কিংবা মিয়ানমার সেটা করতে পারবে না। তাদের যত বড় খুঁটির জোরই থাকুক। কিনা সেটা অন্যায় সেই কথাটি আমরা উচ্চ কণ্ঠে বলতে পারব। আমার ‘উচ্চকন্ঠ’ আমার চারপাশের মানুষের কান পর্যন্ত পৌছায় কিন্তু একজন নোবেল পুরস্কার পাওয়া মানুষ সেই একই কথা বলেন তখন সেই কথাটা সারা পৃথিবীর বিবেককে নাড়া দেয়। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যখন বলা হয় এটি হচ্ছে একটা জাতিকে নি:শেষ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া তখন একটুখানি হলেও পৃথিবীর সব মানুষের উপর বিশ্বাস আরও একটুখানি ফিরে আসে।
এর মানে আরও একটি ব্যাপার আছে। পৃথিবীতে বৈচিত্র হচ্ছে সৌন্দর্য। একটা দেশের মানুষের ভেতর যত বৈচিত্র থাকবে সেই দেশটি হবে তত সম্ভাবনাময়। এর সবচেয়ে বড় উদাহরন হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এই দেশে পৃথিবীর সব দেশের, সব জাতির মানুষ রয়েছে, সত্যি কথা বলতে কী এটি একটি বড় দেশ নয়, এটি একটি ছোট পৃথিবী। সে কারণে এই দেশটি এতো উন্নত হতে পেরেছে। এই মূর্হুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য দেশটির প্রকৃত সৌন্দর্যকে অঙ্গীকার করে এটাকে বৈচিত্রহীন দেশে পরিচিত করার চেষ্টা করছে। আমাদের দেশের মানুষের মাঝে বৈচিত্র খুব বেশি নয়, সে জন্যে যে কয়েকজন আদিবাসী বা ভিন্ন কালচারের মানুষ রয়েছে তাদেরকে আমাদের বুক আগলে রাখার চেষ্টা করতে হয়। মিয়ানমারের জন্যেও সেই কথাটা সত্যি, তাদের দেশের শতকরা নব্বইভাগ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মালস্বী, কাজেই যে কয়জন ভিন্ন ধর্মের মানুষ রয়েছে তাদের মূল্যবান সম্পদের মত বুক আগলে রক্ষা করার কথা ছিল। মিয়ানমারের জেনারেলদের সেই সৌন্দর্য অনুভব করার ক্ষমতা নেই, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের কাছে আপদ বালাই। তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে তাদের শান্তি। বলতে কোনো দ্বিধা নেই তারা আধুনিক পৃথিবীর মানুষ এখনো হতে পারেনি। তাদের জন্যে আমাদের করুণা হয়।
বাংলাদেশি হিসেবে আমি অনেক গর্ব অনুভব করি যখন দেখতে পাই আমাদের দেশটি হতভাগ্য রোহিঙ্গাদের বুক আগলে রক্ষা করার জন্যে এগিয়ে এসেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাদের দেখতে শরনার্থীদের শিবিরে গিয়েছিলেন, তখন একজন বিদেশী সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘এই রোহিঙ্গাদের আপনি কতোদিন রাখবেন’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন,‘কতোদিন; এরা সবাই মানুষ পৃথিবীর সবাই লাভ ক্ষতির হিসেব করছে’। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী সেই লাভ ক্ষতির হিসেব করেননি, একেবারে পরিস্কারভাবে বলছেন, তিনি মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।