ইনসাইড থট

লকডাউন বা কোনও লকডাউন না সেটাই বড় প্রশ্ন 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ১০ এপ্রিল, ২০২১


Thumbnail

আমি স্বীকার করি, জেনেভাতে থাকাকালীন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র পড়ে বা সরাসরি টিভি সংবাদ বা টকশো দেখে, আমার সম্ভবত বাংলাদেশের আসল বর্তমান পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা নাও থাকতে পারে এবং বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে ভালো কি করা উচিত তা বলার বা পরামর্শ দেওয়ার অধিকার নাও থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা মাঠের পরিস্থিতি সবচেয়ে ভালো জানেন এবং সেই অনুযায়ী কোভিড -১৯ এর লড়াইয়ের পক্ষে রাজনৈতিক নেতাদের সময়োপযোগী ও সঠিক পরামর্শ প্রদান করেছেন এবং করছেন। তবুও, ভবিষ্যতের দেশব্যাপী লকডাউন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমি নিম্নলিখিত পরিস্থিতি বিবেচনার জন্য উত্থাপন করব:

১. ২০২০ সালের মার্চ মাসে যখন লকডাউন ঘোষণা করা হলো তখন এক মিলিয়নেরও বেশি লোক গাঁদা গাঁদি করে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সহ বিভিন্ন উপায়ে বাড়িতে গিয়েছিল। আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পক্ষে এটি বন্ধ করা অসম্ভব ছিল।

২. গার্মেন্টস কারখানাগুলি যখন আবার চালু হয়েছিল তখন হাজার হাজার কর্মীরা শহরে এসেছিলেন। লকডাউন প্রত্যাহার করার পর কয়েক শত হাজার লোক একই পদ্ধতিতে শহরগুলিতে ফিরে এসেছিল। ভাগ্য ভালো তখন ভাইরাসের রুপটা ছিল তুলনামূলকভাবে কম শক্তির। 

৩. যখন এপ্রিলে আবার লকডাউন ডাকা হয়েছিল, আমরা সেই একই ঘটনা ঘটতে দেখেছি। তা থামানো সম্ভব হয়নি বা আমাদের মানুয়ের মানসিকতা এবং আচরণ অন্যরকমের হবার জন্য তা সম্ভব নয়। বরং আমরা অন্যান্য বিভিন্ন গ্রুপ দ্বারা রাস্তায় এটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে দেখেছি।

৪. অর্থনৈতিক জটিলতা আর জীবিকা এবং জীবন বাচানোর  কারণে অনেক খাতের মানুয এপ্রিল লকডাউন মানতে চাননি এবং এর বিপক্ষে রাস্তায় নেমেছিল।

৫. দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের অর্জনগুলি আমাদের সকলের জন্য দারুন গর্বিত হবার কারণ। এটি ১৯৯১ সালে ৪৪% থেকে নেমে এসে ২০১৬ সালে ১৫% এ দাঁড়িয়েছে। তবুও বাংলাদেশের প্রায় ৪০.৩ শতাংশ লোকের নিজস্ব ছোটখাট ব্যাবসায় উদ্যোগ রয়েছে যেমন চায়ের দোকান থেকে শুরু করে স্ট্রিট রেস্তোঁরা, দোকান থেকে ছোট উদ্যোগের দোকান বা ব্যাবসা। জনসংখ্যার ৪০.৬ শতাংশের বেশি কৃষিক্ষেত্র এবং ১৯.১ শতাংশ মানুষ কলকারখানা সহ অন্যান্য উৎপাদন খাতে কাজ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আর্থিক সেবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রসারিত হওয়া সত্ত্বেও, ১৫ বছরের বা তার বেশি বয়সী বাংলাদেশের অর্ধেকই ব্যাংক বা মোবাইল মানি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াই রয়েছেন, বিশ্বব্যাংকের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় তা বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবই সর্বাধিক সাধারণ কারণ যে অনেক লোক এখনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা থেকে দূরে সরে আছে, বিশ্বব্যাংক বলেছিল। অনেকের নিয়মিত বেতন বা অবিচলিত আয় হচ্ছে না এবং এর ফলে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিনের আয়ের উপর নির্ভরশীল।

৬. ব্যাংক আমানত সহ মধ্যম আয়ের গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এখন তা ২৫-৩০% হতে পারে। এই গোষ্ঠীর বেশিরভাগের মাসিক বেতন এবং / অথবা কোভিড-১৯ সত্ত্বেও কিছু অবিচলিত আয় রয়েছে এবং লকডাউন দিয়ে কিছু সময়ের জন্য জীবন বাচাতে দাঁড়াতে সক্ষম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই লোকেরা তাদের বাড়ির দরজায় প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলি ঘরের বাহিরে না যেয়ে তা পেয়ে থাকেন।

৭. সরবরাহ ও চাহিদা ভারসম্য ব্যাহত হওয়ায় দৈনিক পণ্যের দাম বাড়ছে। রমজান, নতুন বছরের উদযাপন, এবং ঈদ শীঘ্রই আসছে এবং অনেক ছোট থেকে মাঝারি আকারের ব্যবসার মালিক তাদের গত বছরের ক্ষতিগুলো মেটাতে এই ব্যাবসার সুযোগের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ আয়ের চরম ইভেন্টগুলির দিকে চেয়ে রয়েছে। 

৮. ছোট ব্যবসায়ে সহায়তা, চাকরি হারা জনগণ ও বন্ধ হয়া কলকারখানার লোকদের সহায়তা করে জনগণ ও অর্থনীতির বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালে ৯০০ বিলিয়ন এবং ২০২১ সালে ১.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, ইউরোপেয়ান ইনিয়ন দেশগুলো ৭০০ বিলিয়ন ইউরো এবং যুক্তরাজ্য প্রায় ১ ট্রিলিয়ন পাউন্ড কর্জ নিয়ে তা বিতরণ বা ব্যয় করেছে। বাংলাদেশের প্রথম লকডাউনের সময় সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে যদিও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখযোগ্য আর্থিক সাহায্য দিয়ে বা কমদামে বা বিনা পয়সায় চাল দান করার মত কাজ করেছেন। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের অবশ্যই মানতে হবে, এই প্রসঙ্গে আমাদের সক্ষমতা বেশি নয়।
 
৯. গত সপ্তাহের মধ্যে আমরা দেখছি যে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সম্পত্তি ধ্বংস করছে এবং এখনও আন্দোলন করছে এবং ভবিষ্যতে ধর্মান্ধ কর্মগুলির কথা বলছে। বিরোধী শক্তিগুলি এই পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করছে, তারা সর্বনাশ সৃষ্টি করার কথা পরিকল্পনা করছে। দিনে দিনে পণ্যের দাম বাড়ছে এবং বেঁচে থাকার কারণে সম্ভবত আমরা চাই না যে লাখ লাখ মানুয রাস্তায় নেমে এসে আরও অশান্তি সৃষ্টি করবে। আমাদের মুক্তি ও বিশাল উন্নয়নের বিরুদ্ধের লোকেরা এই সুযোগটি নিতে আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছে এবং এর সুবিধা নিতে কোন দ্বিধা করবে না।
 
সুতরাং, যদি কোনও লকডাউন না হয়, তবে নতুন ভেরিয়েন্ট ভাইরাসগুলির দ্রুত সংক্রমণ কমাতে আমাদের কী করা উচিত অথবা এই রুপটি যা মনে হচ্ছে পূর্বের সংক্রামিত (যাদের কোন লক্ষন ছিল না) লোকদের কে আবার সংক্রামিত করছে তা কমাতে বা না হবার জন্য কি করা উচিত। আমাদের  উপলব্ধ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অনুসারে চিন্তা ভাবনা করা দরকার কীভাবে জীবনের কিছু ক্ষতি মেনে নিয়ে একটা ভারসাম্যপূর্ণ কৌশল আমরা নিতে পারি: 

১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইনস্টিটিউট অফ হেলথ মেট্রিক্স নেটওয়ার্ক, বিশ্বের একটি নামীদামী দল, যাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি এবং নামিবিয়ায় তাদের কাজের সাথে জড়িত ছিলাম।  তারা বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ছয়টি মহাদেশের দেশগুলির সম্পর্কে কোভিড-১৯ এর ভবিষ্যত নিয়ে কিছু মডেলিং করেছে। তারা ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে একমাত্র মাস্কের সার্বজনীন ব্যবহারই বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর ফলে ৩০% মৃত্যুর পরিমাণ হ্রাস করতে পারে এবং এর আরও অনেক বেশি এই রোগের সংক্রমণ কমাতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৫০% বা তার চেয়ে কম লোকেরা মুখোশ ব্যবহার করছেন বাইরে বেরোনোর সময় বলে মনে করছেন। সুতরাং, অকারণে বাহিরে যায়া কমিয়ে অফিস, মসজিদ, রেস্তোঁরা, দোকান ইত্যাদি সহ বাইরে বেরোনোর সময় মাস্কের সর্বজনীন ব্যবহারের কঠিন প্রয়োগ করুন।
 
২. বিবাহ, অন্যান্য উদযাপন, রাজনৈতিক সমাবেশ বা ওয়াজ-মাহফিল সহ কোনও গণ জমায়েত বন্ধ করুন। 

৩. যতদূর সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। ইউরোপে দোকানের আকারের উপর নির্ভর করে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট সংখ্যক লোককেই একসময় দোকানের ভিতরে যেতে দেওয়া হয়। যেমন ধরুন ৫জন দোকান থেকে বের হলে পরের ৫জনকে যারা দোকানের বাহিরে মাস্ক পড়ে অপেক্ষা করছেন তাদের কে ঢুকতে দেয়া হয়। আমাকেও তাই মানতে হচছে তাই বলে দোকান বন্ধ করা হয়নি। দোকানে ঢোকার আগে সবার মুখোশ পড়ার পাশাপাশি হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয়। উন্মুক্ত বাজার বা রাস্তার বিক্রেতাদের ক্ষেত্রে আমাদের কী করা উচিত তার প্রশ্ন আসবে। সেখানে আমাদের ক্লায়েন্ট এবং ব্যবসায়ীদের বুঝাতে হবে। আমি নিশ্চিত ব্যবসাহীদের লকডাউন বনাম আংশিক ব্যবসায়ের সুযোগ বিবেচনা করতে বললে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আংশিক সুযোগে একমত হবে।তারা এটা তাদের সামাজিক দায়িত্য বলে মেনে নেবে। 

৪. আমি আশা করি যখন মিঃ কেরি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিলেন, তিনি আমেরিকা থেকে, বিশেষত অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনগুলির থাকা সেই স্টক, যা তাদের প্রয়োজন নেই বা তারা ব্যাবহার ব্যাবহার করবেন না, সেই স্টক থেকে কিছু বাংলাদেশকে কেনার সয়হতা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পাশাপাশি জনসন ও জনসনের কিছু ভ্যাকসিন আনার জন্য আবেদন করেছেন। সেরাম ইনস্টিটিউট, রাশিয়ার স্পুটনিক ভি এবং চীন থেকে সিনোভ্যাকের সাথে আলোচনা করুন। মনে রাখবেন থাইল্যান্ড সিনোভ্যাক দিয়ে তাদের টিকা কার্যক্রম শুরু করেছে। এই ভ্যাকসিনগুলি দক্ষিণ আফ্রিকার কোভিড-১৯ বৈকল্পিকের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর। ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমের সাথে সাথে আমাদের সকল প্রচেষ্টা করতে হবে দৈনিক আরও টিকা দেয়ার ব্যাবস্থা করার জন্য। কমিউনিটি সেন্টারে টিকার  প্রোগ্রামটি প্রসারিত করে ভ্যাকসিন গ্রহণকারী সংখ্যক ব্যক্তিদের দ্রুত বৃদ্ধি করা নিশ্চিত করতে হবে। 

৫. এটি জাতীয় স্বাস্থ্য জরুরী হিসেবে ঘোষণা করা উচিত এবং সমস্ত খাত এবং দলকে সমানভাবে জড়িত হওয়া উচিত।

৬. দক্ষিণ আফ্রিকার বৈকল্পিক রুপ যা এখন বাংলাদেশে বেশ প্রভাবশালী বলে মনে হচ্ছে সেই পরিবর্তিত ভাইরাস টি অবশ্যই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ হয়ে বাংলাদেশি আসে এবং বিচ্ছিন্নতার কঠোর প্রয়োগের অভাব রোগটির ভয়ানক আঁকার ধারন করেছে আজ। আমরা এখনও জানি না যে ভারতীয় ডাবল মিউট্যান্ট রূপগুলি কতটা মারাত্মক বা প্রশস্ত। সেইজন্য আমদেরকে আমাদের বিমানবন্দর এবং সীমানা দিয়ে যাতায়াত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৭. দয়া করে আমাদের মহামারীবিজ্ঞান বুদ্ধিমান (Epidemiological intelligence) পরিষেবাগুলিকে শক্তিশালী করুন। সময়মত নতুন রূপগুলি সনাক্ত করুন এবং তাত্ক্ষণিকভাবে ট্র্যাক এবং ট্রেস করুন এবং সংক্রামিত লোকদের কঠোরভাবে বিচ্ছিন্ন করুন।

৮. কোভিড-১৯ পরীক্ষা আরও বাড়িয়ে নিন। তবে পরীক্ষার সুবিধাগুলির জায়গায় অবশ্যই মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্বের ব্যবহার অনুসরণ করা প্রয়োগ করতে হবে। এই জায়গা গুলোকে কোনভাবেই একটি সুপার স্প্রেডার সুবিধা হয়ে উঠতে দেয়া উচিত না। 

৯. স্বাস্থ্য সুবিধা ভিত্তিক পরিচালনা ও চিকিত্সার পাশাপাশি আরও অনলাইন পরামর্শ এবং চিকিৎসার সুবিধা জোরদার করুন।

পশ্চিমা দেশগললিতে দেশব্যাপী কঠোর ভাবে সম্পূর্ণ লকডাউনগুলি সম্ভব এবং তা সংক্রমণ কিছুটা হলেও হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশে যাতায়ত কারনে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখনও বিশ্বাস করতে পারেন এবং তারা আশাবাদী যে তারা সম্পূর্ণ লকডাউন কার্যকর করতে পারবেন।  তবে অতীত এবং স্থল বাস্তবতা থেকে শিক্ষা আমাকে অন্যথায় ভাবাতে বাধ্য করে। এটা সম্ভব নাও হতে পারে। লকডাউনের অর্ধেক পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা শহরগুলি থেকে গ্রামগুলিতে এই রোগ ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করতে পারি যে এলাকাগুলি তুলনামূলকভাবে এখনও আরও ভালো আছে। আরও ছড়িয়ে পড়া এবং সংক্রমণ বাড়ার মধ্যে নতুন রূপ জন্মাতে এবং একটি নুতন রূপে পরিনত হতে সহায়তা করবে যা আরো মারাত্মক হতে পারে এবং পরিস্থিতিকে আরো আনেক গুনে খারাপ করতে পারে। আমি কিয়ামতের দিনের কথা বলছি না বরং স্থল বাস্তবতার কথা বলছি।

যদি আমি ভুল প্রমাণিত হই তবে আমি মাথা নত করে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব। আমি ভুল প্রমাণিত হতে চাই, যেহেতু আমি আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের মতো দেশ ও জনগণের পক্ষে সবচেয়ে ভালো কামনা করি এবং চাই।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন