ইনসাইড থট

কেবল কোভিড-১৯ টেস্টিং বাড়নো নয়,জনগণের টিকা নিশ্চিত করাই সঠিক উওর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:৫৯ এএম, ০২ মে, ২০২১


Thumbnail

২০২০ সালের শুরুতে এবং তার পর থেকে দেশের এবং দেশের বাহিরের অনেক বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করছিলেন যে কেন বাংলাদেশ তার প্রতিদিনের কোভিড-১৯ এর সনাক্তকরণ পরীক্ষার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিচ্ছে না এবং আরও বেশি লোক পরীক্ষা করছে না।  তখন আমি বলেছিলাম যে কেবল বেশী বেশী পরীক্ষার ফলে কোনও পরিবর্তন আনা যায় না যদি আমাদের কাছে কার্যকর কোন সংক্রামিত ব্যক্তির কন্টাকের সন্ধান এবং সংক্রামিত ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন/ পৃথকীকরণ করার যথাযত ক্ষমতা না থাকে।  উদাহরণস্বরূপ, যদি দরুন বাংলাদেশ একদিনে ১০০,০০০ লোক পরীক্ষা করলো যখন সংক্রমণের হার ২০%, তাহলে কথার কথায় ধরা যাক প্রায় ২০,০০০ জন ইতিবাচক সংক্রামিত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যেত।  আমাদের কি মনে হয় যে তখন ২০,০০০ সংক্রামিত ব্যক্তির কন্টাকের সন্ধান করতে বা তাদের বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য করতে বাংলাদেশের সক্ষমতা ছিল বা থাকবে (এমনকি যুক্তরাজ্যেরও সেই ক্ষমতা ছিল না)? আমাদের কি মনে হয় যে এই ২০,০০০ লোক স্বেচ্ছায় তাদেরকে ১০-১৪দিনের জন্য আলাদা করবে বা তাদের সংক্রামিত ব্যক্তির কন্টাকের সন্ধান দেবে? বা আমরা কি মনে করি যে প্রতিদিন এতগুলি সংক্রামিত লোককে সনাক্ত করার ফলে মানুষ ভয় পেয়ে কোভিড সনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দৌড়ে যাওয়া শুরু করবে এবং লোকেরা স্বাস্থ্যের পরামর্শ মেনে চলবে? নাকি আমরা কেবল মাএ জানার জন্য জানতে চেয়েছিলাম অথবা পরিসংখ্যানগত কারণে বা পূর্বাভাসের মডেলিং বিকাশের জন্য কত লোক সংক্রামিত হয়েছে বা ভবিষ্যতে হতে পারে তার কারনে? বাংলাদেশের স্থল বাস্তবতা ভিন্ন বলেই আমি মনে করি। আমি আশা করবো আমাদের আপামর জনগনের আচরণগত নিদর্শনগুলি এবং এই জাতীয় আচরণগুলিতে কী কী কারণগুলি প্রভাবিত করে সে সম্পর্কে আরও সঠিক ভাবে জানতে আমাদের সমাজ বিজ্ঞানীদের গবেষনা করবেন।  আমরা দেখেছি কীভাবে বাংলাদেশে লোকেরা স্বাস্থ্য পরামর্শ বা লকডাউন অনুসরণ করে বা করে না। যখন তাদেরকে তাদের এবং দেশের জনগনকে বিপদ মুক্ত রাখার জন, কঠোরভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়, তখন তারা কীভাবে বাজে অকথ্য ভাষায় চিৎকার করে। আমরা ভবিষ্যতে যাই করি বা যাতে সময় এবং অর্থ বিনিয়োগ করি না কেন, আমাদের তা অবশ্যই একটি শক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে প্রয়োগযোগ্য হতে হবে। আমাদের কেবল কতজনের বা সংখ্যার জ্ঞান বা সক্ষমতা থাকলে চলবে না, তবে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতাও আমাদের থাকা দরকার। তা নাহলে সংখ্যা শুধু সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে, জীবন বা জীবিকার উপকারে আসবে না। 

অনেকে শুধু অভিযোগ করার স্বার্থে আরও বলেছিলেন যে প্রারম্ভে কেন বাংলাদেশে কোভিড রোগ সনাক্তকরণ পরীক্ষাগুলি কেবলমাত্র একটি কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত রাখলো! কেন আরও বেশি বেশি কেন্দ্রে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে না। আমি একমত, আমাদের SARS এবং MERS মহামারী থেকে শিখা উচিত ছিল। অনেক প্রশংসিত বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে কার্যকর প্রস্তুতির মতো, ভবিষ্যতে আসতে পারে যেকোন মহামারির ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত ছিল। আমরা একই প্রশ্নটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য বা অন্যান্য অনেক ইউরোপীয় দেশের কর্তৃপক্ষকেও জিজ্ঞাসা করতে পারি। সেখানে কোন কার্যকর প্রস্তুতি ছিল না।  কোভিড নগ্নভাবে বিশ্বকে দেখিয়েছিল যে তথাকথিত ধনী দেশগুলি কতটা অপ্রস্তুত ছিল। এই মহামারীটি আমাদের সকলকে হঠাৎ অবাক করে পিছনে ঠেলে দিয়েছিল। আমরা জানি পিসিআর টেস্টিং কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিতকরণের স্বর্ণের মান (good standard)। এই ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ব্যবস্থাটি সঠিক মানের ফলাফল পেতে ব্যয়বহুল অত্যন্ত প্রযুক্তিগত যন্ত্র এবং প্রশিক্ষিত লোকের উপর নির্ভরশীল।  নমুনা সংগ্রহের জন্যও প্রশিক্ষিত লোকের দরকার। রাতারাতি কেউ সেই সক্ষমতা বাড়াতে পারে না।  কয়েক মাস ধরে সময়োচিত বিনিয়োগের কারণে বাংলদেশে এখন ১২০ টি টেস্টিং সেন্টার রয়েছে। বাংলাদেশ অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সুবিধাও শুরু করেছে। 

তারপরে কিছু লোক বলতে শুরু করে যে পরীক্ষিত পজিটিভ রেট নির্ভরযোগ্য নয় কারণ অনেকে বলে মোট সনাক্তকরণে পরীক্ষিত লোকদের মধ্যে ১৫-২০%  হ`ল তারা যারা বিদেশ যাচ্ছেন।  তাই এটি একটি অবমূল্যায়ন, সত্য হার অবশ্যই বেশি হতে হবে। সুতরাং, কম সনাক্তকরণ পরীক্ষার কারনে যখন আমরা বলি পরীক্ষার ইতিবাচকতা ১৫% হয় তখন এটি সম্প্রদায় সংক্রমণের হারের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি হিসাবে গ্রহণ করা যায় না।  আমি ঐ বুদ্ধিজীবীদেরকে জিজ্ঞাসা করতে চাই আর জানতে চাই যারা বিদেশে যাচ্ছেন তারা কি বিভিন্ন সমাজে বাস করেন বা থেকে আসছেন? বা তাদের আচরণের ধরন বা জীবনযাত্রার অবস্থা বা সামাজিকীকরণ কি অন্য, আর সবার থেকে আলাদা? যদি তা না হয় তবে তাদের সনাক্তকরণ পরীক্ষা করার ফলাফল প্রকৃত সংক্রমণের হারকে প্রতিফলিত করবে না কেন?অন্যদিকে, পরীক্ষার জন্য আগত বাকী ৮০-৮৫% লোক যাদের হয়ত কিছু কোভিডের মত লক্ষণ থাকায় বা সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে মনে করে বা বিশ্বাস করার জন্য পরিক্ষা কেন্দ্রে এসেছিলেন। যদি তাই হয় তবে তাদের পরীক্ষার ইতিবাচকতার হার স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে। তাহলে বলতে পারি সেই বেশী হার সম্প্রদায় সংক্রমণের হারের সঠিক মান প্রতিফলিত করতে পারে না। সুতরাং, আমি বলব যে এই পৃথক জনগোষ্ঠীর লোকগুলির মিশ্রণটি আমাদের সম্ভবত সংক্রমণের বর্তমানের সঠিক হার প্রতিফলিত করে। আমার ১৯৮৮৭/৮৮ সালের  বোতসোয়ানার একটি গল্পের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এইচআইভি (HIV/AIDS) মহামারীর শুরুতে ১৯৮০এর দশকের সময়কালে দেখা গেছে যে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা এইচআইভিতে (HIV) সংক্রামিত হয়ে, কাজের জায়গা সম্পর্কিত বিপদ বলে দাবি করতে শুরু করেছিল। এরপরে সমাজ বিজ্ঞানীরা স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীদের (নার্স এবং চিকিৎসক) মধ্যে একটি গবেষণা চালিয়ে দেখতে পেয়েছিলেন যে তাদেরও হাসপাতালের বাইরে থাকাকালীন সেই সমাজের অন্যদের মত একই রকম যৌন আচরণগত আচরণের ধরণ রয়েছে এবং যার ফলে সমাজের অন্যদের মতো তারাও একই কারনে HIV রোগে দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের আক্রান্তের হার অন্যান্য সেই সম্প্রদায়ের সদস্যদের মতোই ছিল। 

অনুরোধ করছি আরেকটি বিষয় দিকে তাকানোর জন্য।  এটি বৈজ্ঞানিক না হলেও বাংলাদেশের জনগনের আচরণগত প্যাটার্নের একটি আকর্ষণীয় পর্যবেক্ষণ হতে পারে।  সমাজ বিজ্ঞানীরা এই বিষয় নিয়ে গবেষনার করতে পারেন এবং এর পিছনে তথ্যগুলি খুঁজে পেতে পারেন।  আমি প্রতিদিনের সংক্রমণের হারের সাথে বাংলাদেশের কোভিড সনাক্তকরণ পরীক্ষার ধরণটির কথা বলছি। 

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সনাক্তকরণ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক নয় (যারা বিদেশ ভ্রমণ বা কাজ করতে যাচ্ছেন তাদের ব্যতীত) বরং এটি একটি স্বেচ্ছা স্ব প্রাপ্ত পদক্ষেপ। চীনের মতো বাংলাদেশে কখনও কোনও টেস্টিং ড্রাইভ ছিল না, যেখানে দুই তিন দিনের মধ্যে একটি শহরের লক্ষ লক্ষ লোকদের পরীক্ষা করানো হয়েছিল।  অতএব, বেশিরভাগ লোকেরা তাদের চলমান লক্ষণগুলি কোভিডের লক্ষণ কিনা বা বিশ্বাস করেছেন যে তারা কোনও সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন তা জানতে পরীক্ষা করতে আসেন বা পরিক্ষা করান। যদি আমরা সেই অনুমানগুলির সাথে একমত হই, তবে প্রতিদিন যে সংখ্যায় পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং এর উত্থান-পতন ঘটনাগুলো ঘনিষ্ঠভাবে দেখুন।  গত বছর যখন সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে এবং পরীক্ষার সুবিধাগুলি আরও বেশি হল তখন আরও বেশি লোক পরীক্ষার জন্য আসতে শুরু করলো। তার কারনে পরীক্ষার সংখ্যা দিন দিন আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করে।  তারপরে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছিলাম যখন সংক্রমণের হার কমতে শুরু করলো, তখন কম এবং কম লোক আসছিল।  আপনি বলতে পারেন এটি লকডাউন এবং লোকজন গ্রামাঞ্চলে যাওয়ার কারণে হয়তো হতে পারে। কিন্তু যখন সবাই শহরে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে কম সংখ্যক লোক ভাইরাসের সাথে ধরা পড়েছে তখন কম লোক পরীক্ষা করার জন্য আসছিল।  ১৩ ই ফেব্রুয়ারিতে ১২৮৭১ পরীক্ষিত লোকের মধ্যে ২৯১ জনকে ইতিবাচক সনাক্ত করা হয়েছিল।  ২২শে ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা করা লোকের সংখ্যা নেমে এসে ১১১০৩ হয়। তারপরে মার্চ মাসে সংক্রমণের উত্থানের সাথে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছিলাম যে আরও বেশি বেশী লোক পরীক্ষার জন্য আসতে শুরু করেছিলো। ৯ই এপ্রিল সর্বাধিক সংখ্যক লোক পরীক্ষার জন্য এসেছিলেন (৩৪৯৬৪ পরীক্ষিত লোক) যখন ৭২০১ সংক্রামিত ব্যক্তি সনাক্ত করা হয়েছিল।  তারপরে সংক্রমণের হার কমার সাথে সাথে, আমি বিশ্বাস করি কম লোকের কোভিড লক্ষণগুলির লক্ষন থাকায়, পরীক্ষার চাহিদাও কমতে শুরু করে।  আজ ১ম মে যখন সংক্রমণ ৯.৬১% হয় কেবল ১৫১১৭ জন পরীক্ষার জন্য এসেছিলেন।  আমরা হয়ত দেখবো সংক্রমণের হার কমার সাথে সাথে পরীক্ষা করার চাহিদাও কমে আসবে। এই পরীক্ষা করতে আসার আচরন বা স্বাস্থ্য খুঁজার আচরণ কি বাংলাদেশে কোভিডের তৎকালীন অবস্থার প্রতিফলন করে একটি গল্প বলে? এই আচরন কি রোগের সম্প্রদায়ের সম্প্রচার এবং সমস্যাটির তীব্রতার প্রতিফলন করে?  যেমনটি আমি আগেই বলেছি এটি বৈজ্ঞানিক নয় কেবল একটি পর্যবেক্ষণ।  আমি মনে করি সামাজিক বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাটি দেখবেন যা হয়ত আমাদের সংক্রমণের প্রবণতা / পূর্বাভাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারে এবং প্রোগ্রাম পরিকল্পনায় আমাদের সহায়তা করতে পারে।  আমি এখনও বিশ্বাস করি যে কন্টাক ট্রেসিং এবং বিচ্ছিন্নতার সুযোগ না থাকলে অথবা মানুষের আচরণের  পরিবর্তন না হলে, জনগন স্বাস্থ্য পরামর্শ অনুসরণ না করলে শুধু মাএ বেশী বেশী পরীক্ষা করাটা কোভিড-১৯ যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল হবার একমাএ উত্তর না বা এই যুদ্ধে কোনও অতিরিক্ত মূল্য আনবে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতায় এই যুদ্ধে জিততে হলে আমাদের কোভিড রোগ সনাক্তকরণ পরীক্ষার সব সুবিধা থাকার পাশাপাশি জনগনের স্বাস্থ্যের পরামর্শ মেনে চলতে হবে এবং জনগন যাতে খুব শীঘ্রই টিকা নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

 এখনই বিজয়ের গান যেন না  শুরু করি বা আত্মতুষ্টতে আবার আগের মত একই ভুলগুলির পুনরাবৃত্তি যেন না করি। আসুন আমরা ধৈর্য ধরে থাকি এবং স্বাস্থ্য পরামর্শগুলি অনুসরণ করি সামনের আরো কয়েক মাস, দরুন আগামী ডিসেম্বর শেষ পর্যন্ত, যেমন আমরা গত আনেক মাস যাবত সমস্ত সমস্যা থাকা সত্তেও অনুসরন করেছি। ততক্ষণে আমরা বেশিরভাগ লোককে টিকা দিতে পারবো বলে বিশ্বাস করি এবং তারপরে আমরা যুক্তরাজ্য, ইস্রায়েল বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লোকদের মত আবার আমাদের জীবন উপভোগ করতে পারবো, আমাদের দেশ গঠনে আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে পারবো। আমি  দৃ .়ভাবে বিশ্বাস করি যে আমরা খুব শীঘ্রই আমাদের যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি তা কাটিয়ে উঠে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যাকসিন সংগহ এবং দেশে আনতে পারবো। আমরা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত লোককে টিকা দিতে শীঘ্রই সক্ষম হব। বাহ্যিক দক্ষতার আর নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন এবং কারও জন্য অপেক্ষা না করে, দেশ এবং তার নাগরিকের জীবন আর জীবিকার  রক্ষণাবেক্ষণে সময়মত সিদ্ধান্ত নিতে কোন দ্বিধা করবেন না। আমাদের অবশ্যই সর্বোচ্চ জীবন এবং জীবিকা বাঁচাতে ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন