নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩৪ পিএম, ০৯ মে, ২০২১
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবার থেকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দিতে বিদেশ (বাংলাদেশের বাইরে) নিতে মানবিক কারনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নিকট আবেদন করা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকার আন্তরিকতা দেখালেও শেষ পর্যন্ত আজকে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনগত সুযোগ না থাকায় আইনমন্ত্রনালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে উক্ত বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা সংক্রান্ত দরখাস্তটি না মঞ্জুর করেন, এতে দন্ডিত আসামীদের দন্ড স্থগিত অবস্থায় বিদেশ যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এইবার আসি আইনগত বিষয়ে:
সাধারনত দন্ডিত আসামীদের দণ্ড স্থগিত, মওকুফ, আংশিক মওকুফ বা কমানোর বিষয়টি বর্ণিত আছে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধিতে, এই আইনটি আমাদের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কিত আদি আইন বা মূল আইন। এইবার আসি দণ্ড স্থগিতকরন সম্পর্কিত বিধানটি রয়েছে এই আইনের ৪০১ ধারায়। প্রথমেই বলে নেই এই আইনটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রযোজ্য এবং বাংলাদেশের সীমানার বাইরে যেহেতু বাংলাদেশ সরকারের কোন কর্তৃত্ব নাই তাই এই আইনটি শুধু বাংলাদেশের সীমানার ভিতরেই প্রযোজ্য {ধারা- ১(২)}। এই আইনটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ফৌজদারি বিচার বা তদন্ত সম্পর্কিত প্রতিটি নাগরিক বা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিদেশী নাগরিকদের উপরও প্রযোজ্য।
এই আইনটি বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি দেশের বাইরে গিয়েও কোন অপরাধ করে থাকে তাঁর উপর প্রযোজ্য অথবা বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি বাংলাদেশে রেজিস্টার্ড কোন জাহাজ যা অন্য কোন দেশের জলসীমার উপর অবস্থিত, বা বিমান যা অন্যদেশের আকাশে বা বন্দরে থাকা এর ভীতর কোন অপরাধ সংগঠন করে থাকে তবে তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, তাদের এইদেশেই বিচার করা সম্ভব এবং তাদের এমন ভাবে বিচার করা হবে যেন তারা উক্ত অপরাধটি বাংলাদেশের সীমারা ভিতরেই সংগঠন করেছেন ( ধারা-৪, দন্ডবিধি, ১৮৬০, তৎসহ ধারা- ১৮৮,১৮৯ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮)। এবং এই আইনে কোন অপরাধীকে বিচারের জন্য অন্য দেশের হাতে তুলে দেয়া বা অন্য দেশে পালিয়ে যেতে অথবা বিচার বা দণ্ড এড়ানোর সুযোগ করে দেয়ার সুযোগ নাই।
৪০১ ধারার উপধারা- ১ এ বলা হয়েছে:
# কোন ব্যাক্তি যিনি আদালত কর্তৃক দন্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন সরকার চাইলে তাঁর দণ্ড স্থগিত, মওকুফ বা কমিয়ে দিতে পারেন।
# এইক্ষেত্রে চাইলে সরকার শর্ত আরোপ করতে পারেন অথবা শর্তহীনও হতে পারে তবে সরকার যদি কোন শর্ত আরোপ করে সেইটা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট আসামীকে মানার ঘোষনা দিতে হবে, মানতে না চাইলে তাঁর আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।
তবে সরকারের দণ্ড স্থগিত, কমানো বা মওকুফ সংক্রান্ত এই বিধানটি সরকারের একছত্র নয়, এই ধারার ক্ষমতাটি প্রয়োগ করতে হলে সরকারকে অবশ্যই ফৌজদারি কার্যবিধির অন্যান্য ধারা সমূহের আলোকে প্রয়োগ করতে হবে এবং পাশাপাশি ৪০১ ধারার উপধারা ২-৫ তে বর্ণিত পদ্বতি অনুসরন করতে হবে।
আমার মতে ৪০১ ধারা মতে দন্ড মওকুফ, স্থগিত এবং কমানো সংক্রান্ত সরকারের ক্ষমতাটি একচ্ছত্র নয়, এই ক্ষেত্রে সরকারকে দেশীয় আইন, সংবিধান, পথা (কাস্টমস) সর্বোপরি ন্যায়নীতি এবং সুবিবেচনার উপর নির্ভর করতে হয়। এই বিষয়গুলো কেন আসছে? তাঁর একটাই কারন সরকারের কাছে এই সংক্রান্ত দরখাস্ত আসলে তা সরকারকে অবশ্যই ৪০১ (২) ধারা মতে দণ্ড প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট বিচারকের কাছে তাঁর মতামতের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং উক্ত বিচারক অবশ্যই এই আবেদনটি নিষ্পত্তিতে দেশীয় আইন, সংবিধান, পথা (কাস্টমস) সর্বোপরি ন্যায়নীতি এবং সুবিবেচনার উপর নির্ভর করে মতামত দিবেন, বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রনালয় বিচারকের মতামত নিয়ে দিয়েছেন কিনা আমি বলতে পারছিনা হয়তো তারা এইটা নিয়েছেন। এবং মতামত যদি নেতিবাচক আসে উক্ত দরখাস্ত মঞ্জুর করার কোন সুযোগ আছে বলে আমি মনে করিনা। এবং বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে হয়েছেও তাই।
বেগম খালেদা জিয়া একজন দন্ডপ্রাপ্ত জেলে অন্তরীন একজন কয়েদী, তাঁর বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করা আবেদন না মঞ্জুর হওয়াটা অবশ্যই যৌক্তিক এবং আইনগত ছিল কারনঃ
# তাঁর মুক্তির ক্ষেত্রে সরবোচ্চ আদালতের নেতিবাচক দৃষ্টি ভংগী ছিল, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ তাঁর জামিনের আবেদন কয়েকবার নামঞ্জুর করেছেন।
# সরকার একবার তাঁর ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ সুবিধা দিয়ে দুইটি মামলায় আরোপিত তাঁর সাজা স্থগিত করেছেন এবং একই ব্যাক্তির ক্ষেত্রে ৪০১ ধারার পুনরায় সুবিধা দেয়ার সুযোগ নাই।
# সরকার বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করেছেন এবং দণ্ড স্থগিত অবস্থায় একজন জেলে অন্তরীন কয়েদীর বিদেশ যাওয়ার কোন সুযোগ আইনে নাই, এখন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে হলে একটাই পথ আছে সেইটা হলো খালেদা জিয়ার দুই মামলায় আরোপিত সাজা মওকুফ করে দেয়া, বেগম খালেদা জিয়ার মতো একজন দন্ডপ্রাপ্ত কয়েদীর সাজা মওকুফ করে দেয়া কার্যত বে আইনী হবে কারন, উক্ত সাজা ছিল একজন প্রধানমন্ত্রীর বিরদ্বে দুর্নীতির মতো নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ, যা একটা জাতির জন্য লজ্জার এবং শুধুমাত্র সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিবেচনায় সাজা মওকুফ করার বিষয়টি সমাজে ঠিক ম্যাসেজ দিবেনা।
# বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্বে মোট মামলার সংখ্যা হলো ৩৪ টি, দুটি মামলায় তিনি দন্ডপ্রাপ্ত হলেও মূলত তাঁর বিরুদ্বে আরও ৩২ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে, এখন তাঁর দণ্ড মওকুফ করা হলে তাঁর বিরুদ্বে থাকা বাকী ৩২টা মামলার বিচার অনিশ্চিত হয়ে যাবে।
# এমনকি সরকার যদি তাঁকে এই দুটি মামলায় আরোপিত দণ্ড মওকুফ করেও থাকেন তারপরও তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না, প্রথমত তাঁর পাসপোর্ট এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে এবং এই পাসপোর্ট নবায়ন করতে গেলে অবশ্যই পাসপোর্ট সম্পর্কিত আইন অনুসরন করেই তাঁর পাসপোর্ট নবায়ন করতে হবে সেইক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্বে থাকা ৩৪ টি মামলার রেকর্ড তাঁর পাসপোর্ট নবায়নে বাঁধা হতে পারে।
# সরকার যদি তাঁকে এই দুটি মামলায় আরোপিত দণ্ড মওকুফ করেও থাকেন তারপরও তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না কারন তাঁর বিরুদ্বে থাকা বাকী ৩২ টা মামলায় তিনি জামিন না পেয়ে থাকলে বা উক্ত ৩২ টি মামলাতেই তাঁকে জামিন নিয়ে তবেই বিদেশে যেতে হবে।
# সর্বশেষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যেও কোন দন্ডপ্রাপ্ত কয়েদীর দন্ড স্থগিত অবস্থায় বিদেশে যাওয়ার কোন নজীর এই দেশে নাই, সুতরাং তাঁর আবেদন নামঞ্জুর করাই আইনসিদ্ব ছিল।
সুতরাং এই কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ৪০১ ধারা মতে দণ্ড মওকুফ করা ছাড়া শুধুমাত্র সাজা স্থগিত থাকা অবস্থায় একজন দন্ডপ্রাপ্ত কয়েদীর কোন অবস্থাতেই বিদেশ যাওয়া সম্ভব নয়।
লেখক: এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর