স্ট্যালিনের জমানায় এক লোক মস্কোর রেড স্কোয়্যারে দাঁড়িয়ে চেচাচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন স্ট্যালিন একটা গাধা। স্ট্যালিন একটা গাধা। পরে তাকে শত শত গুপ্তপুলিশ এসে ধরে নিয়ে আদালতে চালান দিলো। সোভিয়েত আদালত তাকে দিলো সতেরো বছরের কারাদন্ড। দণ্ডাদেশে লেখা রইলো জনৈক ব্যক্তির এক বছরের শাস্তি প্রকাশ্যে পাগলামী ও চিল্লাচিল্লি করার জন্য। আর ষোল বছর কারাদন্ড স্টেট সিক্রেট ফাঁস করে দেয়ার জন্য (নিশ্চয়ই হাসতে হাসতে তালি বাজানোর মতো লাগছে তাইনা?)
দেশ স্বাধীন হবার পরে ১৯৭২ সালে গণতান্ত্রিক এই বাংলাদেশে যে সংবিধানটি প্রণীত হয়েছিলো সেখানে তৃতীয় ভাগটি ছিলো জনগণের মৌলিক অধিকার। সংবিধানের ৩৯ নাম্বার অণুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে ছিলো চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা। একই সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়টিও। গণমাধ্যমকে বলা হয় একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গণমাধ্যম জনগণের কল্যাণে কাজ করবে এবং জনগণের জন্য ক্ষতিকর এমন বিষয়গুলোকে সামনে এনে গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সরকারকে সহায়তা করবে।
করোনা মহামারীর এই সময়ে যে মন্ত্রণালয়টির উপর গোটা দেশ তাকিয়ে ছিলো সেটি হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যার দায়িত্বে ছিলেন এবং আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের উপর ডিগ্রীধারী সম্মানিত মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় স্যার জনাব জাহিদ মালেক। দেশের যে কোনো শ্রেণী পেশার মানুষকে যদি চোখ বন্ধ করে বলতে বলা হয় দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে কোন মন্ত্রণালয়ে সব থেকে বেশি দুর্নীতি হয়েছে তাহলে এক বাক্যে উত্তর আসবে এটি অবশ্যই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। সংবিধানও বলে যে জনগণই এই রাষ্ট্রের মালিক। আমলারা হচ্ছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী যারা কেবলমাত্র এবং শুধুমাত্র জনগণ তথা দেশের মানুষের সেবায় নিযুক্ত থাকবেন। প্রজাতন্ত্রের এই কর্মচারীদের মাস শেষের বেতন, বছরে বছরে বোনাস সবই আসে এদেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। যে কনফিডেনশিয়াল যায়গাটিতে (সচিবালয়) তারা জনগণের সেবায় কাজ করার জন্য মাস গেলে টাকা পান সেটিও ওই জনগণের টাকাতেই নির্মিত।
এবার মূল গল্পে আসা যাক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এবার চলুন স্ক্রিনপ্লে শুরু করি। রোজিনা ইসলাম হছেন সেই সাংবাদিক যিনি ৫৭ ধারার ভয় ডর মগজে রেখে কলম চালানোর এই সময়টিতে উচ্চবাচ্য না করার অঘোষিত নিয়মের বৃত্তে বন্দী হয়েও এদেশের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির ক্যালকুলেশন ভাঙ্গা মন্ত্রণালয়ের কেঁচো খুঁড়ে খুঁড়ে একটা একটা করে সাপ বের করছিলেন। রোজিনা ইসলাম হচ্ছেন সেই সাংবাদিক যার কলমের গতি আর ডরহীনতায় টেবিল কাঁপা শুরু হয়েছিলো বিসিএস টেবিলে ঘন্টাখানেকের চেষ্টায় হন্ডুরাসের রাজধানী আর বজ্রপাতের পরিসংখ্যান উগরে দেওয়া প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী আমলাদের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে যখন আরো গভীরে রোজিনা ইসলাম ঠিক তখনি আতে ঘা লাগা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা শুরু করলেন চিরচেনা ধার করা তামিল তেলেগু মুভির গল্পে মিল রেখে অভিনয়। যেখানে নায়ক নায়িকার উপস্থিতিকে পেছনে ফেলে সামনে থেকে ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যের নেতৃত্বে ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গলাচিপা বিশেষজ্ঞ কাজী জেবুন্নেছা বেগম। কথিত আছে নবম শ্রেণীতে থাকাকালীন অবস্থায় বাল্যবিয়ের শিকার প্রজাতন্ত্রের এই কর্মচারী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যুক্ত হবার পরেই গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। যেখানে কানাডায় ৩ টি, পুর্ব লন্ডনে ১ টি এবং ঢাকায় ৪টি বাড়ী, গাজীপুরে ২১ বিঘা জমি সহ রয়েছে নামে-বেনামে আছে ৮০ কোটি টাকার এফডিআর।
এছাড়াও বিভিন্ন ভূমিকায় অবদান রাখতে শুরু করেন জিনিষপত্র কেড়ে নেওয়াতে বিশেষজ্ঞ জাকিয়া পারভীন, যিনি আবার সুপারপাওয়ারের জোরে হয়তো খানিক সময়ের জন্য নিজেকে আইনের লোক মনে করেই শুরু করে দিয়েছিলেন রোজিনা ইসলামের দেহ তল্লাশী। সম্মানিত জনাব স্বাস্থ্যসচিব মহোদয় স্যারের একান্ত সচিব সাইফুল ইসলাম ভুইঞা মহোদয়, হাল্ক হয়ে সাংবাদিক প্রবেশ ঠেকানোর জন্য গেটে দাঁড়িয়ে যাওয়া মোসাদ্দেক মেহেদী ইমাম, অফিস সহায়ক পদধারী দুই মাস্তান মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম স্যার ও সোহরাব হোসেন স্যার। সেইসাথে ছিলেন মোস্ট ইন্টারেস্টিং এবং সাসপেন্স রেখে যাওয়া চরিত্র কনস্টেবল মিজানুর রহমান। এছাড়াও প্রজাতন্ত্রের দুই বড় কর্মচারী মাননীয় লোকমান হোসেন মিয়া স্যার ও জনসংযোগের মাইদুল ইসলাম স্যার। এদের অভিযোগ আবার বেশ জটিল। এদের মতো সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম (যদিও তারা জনৈক নামক শব্দটি ব্যবহার করেছেন) তাদের সচিবের একান্ত সচিবে স্যারের রুমে ঢুকে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরি করেন এবং ছবি তোলেন। আচ্ছা বলেন তো, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে কি রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লি নির্মানের গবেষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো? গত ৫০ বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির নথি ছাড়া সিক্রেট একটা জিনিসও হয়তো হারিয়ে যাওয়া বিরোধীদলের গবেষণা সেলের এক্সপার্টরাও দেখাতে পারবেনা। কল্পনায় ভাসছে সচিবের একান্ত সচিব স্যারের রুমটা, মাননীয়র রুমটা অতি নিরীহদর্শন মনে হলেও এই সচিবের সচিব স্যারের রুমের নথি প্রকাশ পেলে রাশিয়া আর চীনের সাথে ভ্যাকসিন ভ্যাকসিন যুদ্ধ লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আহ বয়ান আহ। অথচ আপনারাই হয়তো ভুলে গিয়েছেন জনগণের টাকা দিয়ে বুকিং দেওয়া ভ্যাকসিনের ডোজ এখনো কিন্তু দেশে আসেনি পুরোটা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় স্যার আবার নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট বোঝালেন সাংবাদিকদের। যেখানে মহোদয় ভুলেই গিয়েছেন যে ফার্মাসিউটিক্যাল এসওপি বা কোনো ভ্যাকসিনের ফর্মুলা জনগণ জানলে ঘরে ঘরে ফার্মা প্ল্যান্ট খোলা ফার্মাসিস্ট (পড়ুন টেকনিশিয়ান) এই বাংলায় নাই। এছাড়াও জনগণের টাকার কেনা ভ্যাকসিনেও যে আপনারা দুর্নীতির আশ্রয় নেন নি বা নেবেন না সেটা কে বলতে পারে! জনগণের এখনো মনে আছে আপনার মন্ত্রণালয়ের সেই হাজারকোটি কামানো সেই ড্রাইভারের কথা, মাস্ক কেলেঙ্কারির কথা, হাসপাতাল হাওয়া করে দেবার কথা, জনগণের মনে আছে বালিশ আর ফরিদপুর মেডিকেলের পর্দা কেলেঙ্কারির কথা। আপনাদের নিজ হাতে তৈরী করা সাহেদ, সাবরিনা আর তাদের মামলার উন্নতি এখনো মানুষ খোজে এই সাংবাদিকদের কাছেই।
মাননীয় আজ বললেন “উনি সেখানে গেছেন কেনো”! হ্যা মাননীয় আপনি ঠিকই বলেছেন, ডাকাতের আখড়ায় চুরি করতে গেলে বাড়ির মালিক হিসাবে চোরকে যে ডন বানিয়ে দেননি সেটাই রোজিনা ইসলামের মতো সত্যান্বেষীর সাত জনমের ভাগ্য। রোজিনা ইসলাম হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন যে এখানে রুমে রুমে কনফিডেনশিয়াল দুর্নীতি হয়। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলা সচিবালয়ে আপনাদেরই সরবরাহকৃত প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড সাথে থাকার পরেও যে দেশে একজন সাংবাদিককে জনৈক ট্যাগ লাগিয়ে দেন, সে দেশে কিছুদিন পরে আপনারা কি কি ঘাটাবার অপেক্ষায় রয়েছেন সেই নথি জনগণের স্বার্থে রোজিনা ইসলামরা প্রকাশ করবেন এটা কি অস্বাভাবিক লাগছে মাননীয়!
তদন্ত হবে, তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এসব শুনে শুনে জনগণের বিশ্বাসের জায়গাতে ফাটল ধরিয়েছেন আপনারাই। সরকারের সব অর্জন ম্লান হয় আপনাদের মতো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী রুপী ডাকাতদের কারনেই। এই দেখেন একজন সত্যান্বেষীকে রুখে দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আর স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় কি সুন্দর সমন্বয়ের সাথে কাজ করছেন। অথচ কোভিড মোকাবেলার বেলাতেই শুনি আপনার মন্ত্রণালয় সমন্বয়হীন। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নামে যে নথির আড়ালে আপনারা আপনাদের দুর্নীতি লুকানোর চেষ্টা করেন সেটা তুলে ধরলেই যদি আপনাদের আতে ঘা লাগে তাহলে নিশ্চিত থাকেন জনগণের সাথে আপনাদের যুদ্ধ অনিবার্য।
মাননীয় চলেন আপনাকে ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের কনসেপ্টটা শোনাই। দুনিয়ার সকল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমই তথ্য চুরি করে। এই তথ্য এমনসব তথ্য যা জনগণের জন্য বয়ে আনে মঙ্গল। গোপন করে রাখা তথ্যের মুক্তি দিয়ে স্বার্থবাদীদের মুখোশ খুলে দেওয়াই ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম।
মাননীয়! প্রেসনোট আর টাকার বাণ্ডিলের বিনিময়ে দেওয়া তথ্য পত্রিকায় লিখে দিতে বিশেষজ্ঞ জার্নালিস্ট হতে হয় না। যুগে যুগে জুলিয়ান এসাঞ্জ, এডওয়ার্ড স্নোডেন আর রোজিনা ইসলামরা আপনাদের মনে ভয় ধরায়। কারন কখনো কখনো বন্দুকের গুলি থেকে কলমের কালি শক্তিশালী হয়ে দাঁড়ায়। লম্বা করে শ্বাস নিয়ে সময় থাকতে নিজেদের শুধরে নিন। নয়তো শঙ্কার সমরে কে জানে জয় পরাজয় কার হাতে!
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।