নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০১ পিএম, ১০ জুন, ২০২১
আমার চট্টগ্রাম নিবাসী কন্যার একটি শল্য চিকিৎসার প্রয়োজনে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হল। আমাদের অনুরোধে পরিবারের অন্যতম সুহৃদ অনুজপ্রতীম বিশিষ্ট এক চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসার উদ্যোগ নিলেন। তার সহযোগিতায় আমি যখন আমার মেয়েকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালের সার্জারী বিভাগের এক নারী চিকিৎসকের কাছে যাই, তিনি কাগজ-পত্র পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত ভর্তির পরামর্শ দিলেন ও আমাদের সেই বন্ধুর কল্যাণে কেবিন-সহ অন্যান্য ব্যবস্থাদি সম্পন্ন হলো। এক পর্যায়ে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত একজন উর্ধতন কর্মকর্তার রুমেও কিছু সময় আমাদের বসার সৌভাগ্য হলো। তিনি তখন তার একজন সহকর্মীকে বলছিলেন, “আমরা হাসপাতালের এক বছরের সব ওষুধ কিনে ফেলেছি এখন দেখছি রাখার জায়গা নিয়ে অসুবিধা হচ্ছে”!
নির্ধারিত দিনে, যথারীতি সকল কর্ম সম্পাদন শেষে আমার কন্যাকে যখন সকাল সাড়ে সাতটায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবার সময় হলো তখন আমি ও জামাতা সেখানে উপস্থিত। আগেরদিন রাত ১২টা থেকে রোগীর সকল খাবার, এমনকি পানি পানও বন্ধ। হাতে লাগানো স্যালাইন নিয়ে যথাসময়ে হুইল চেয়ারে তাকে উঠিয়ে একজন নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মী অপারেশন থিয়েটারের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সাথে আমরাও, আমাদের হাতে কাগজ-পত্রের ফাইল। কেবিনের কাছেই একটি লিফট যার কোন নির্দেশক বাতি জ্বলছিল না ও জানা গেল এটা না থাকলেও লিফট কাজ করে। আমরা মিনিট দশেক অপেক্ষার পরেও যখন লিফট ওই তলায় এলো না তখন পাশের সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসা একজন জানালেন লিফট নষ্ট, উনি নীচে দেখে এসেছেন। সহযোগী নারী কর্মী আমাদের নিয়ে অন্য একটি লিফটের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন, চক্ষু বিভাগের কাছে সেই লিফটের কাছে এসে জানা গেল সেটি লকড, এটা যিনি খুলে দেবেন তিনি নেই বা তাকে এখনও কেউ দেখেনি। সেখানে আরও মিনিট দশেক অপেক্ষার পরে জানা গেল পূর্বের লিফট চালু হয়েছে। আমরা যেয়ে সেই লিফটে উঠলাম, কিন্তু তার দরোজা বন্ধ হচ্ছে না। একজন তরুণ জানা গেল তিনি লিফটম্যান নন, একটি ঝুলন্ত তার টানাটানি করলে দরোজাটি বন্ধ হলো কিন্তু আবার খুলে গেল। এরকম বেশ কয়েকবার হবার পরে আমরা কিছুটা বিচলিতবোধ করলাম ও বের হয়ে যেয়ে বিকল্প উপায়ে যাবার আলোচনা শুরু করলাম। হঠাৎ লিফটের দরোজা বন্ধ হয়ে গেলো কিন্তু লিফট উপরে উঠছে না, মুহুর্তে আবার দরোজা খুলে এলো। আমরা দ্রুত বেরিয়ে এলাম। আমার নিরীহ, শান্ত স্বভাবের মেয়েটির চোখে মুখে তখন আতঙ্ক, আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম, ‘বাবা, আমরা চলো হেঁটেই যাবো’। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার অনেক দূর তাই হুইল চেয়ারে বসে যাওয়াই ভালো বলে সেই নারী কর্মীর পরামর্শে আমরা সেটাই শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর জানা গেল সিড়ি দিয়ে নীচে নামতে হবে। আমরা ধরে-ধরে মেয়েকে নিয়ে সিড়ি ভেঙ্গে নীচে গেলাম ও এক পর্যায়ে শত শত শুয়ে-বসে থাকা চিকিৎসাকামী বা চিকিৎসাধীন নারী পুরুষের ভীড় ও বিছানা ঠেলে গন্তব্যে পৌছালাম। মেয়ে যখন অপারেশন থিয়েটারে গেল তখন আমাদের কাছ থেকে তাকে আলাদা করে ফাইল ও আগে থেকে ধরিয়ে দেয়া তালিকা অনুযায়ী ওষুধের ব্যাগটা নিয়ে ভেতরের কর্মীরা নিষ্ক্রান্ত হল তখন সকাল ৮.১৫ মিনিট।
নানা চেষ্টায় আমরা জানতে পেরেছিলাম এই শল্য চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সময় লাগবে এক ঘন্টা। কিন্তু ভেতরে যাবার পর থেকে দুই ঘন্টা অর্থাৎ ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত আমরা জানতে পারিনি আমাদের মেয়ের কি হাল হয়েছে ও সে কোথায় আছে। আমাদের সুহৃদ চিকিৎসক আমাদের উৎকণ্ঠিত ফোন পেয়ে খোঁজ করে ফিরতি ফোনে জানালেন মেয়ে ভেতরে আছে ও যথাসময়ে তার অপারেশন হবে, আমাদের ভাবনার কিছুই নেই! আমরা দেখছিলাম তখন অন্যান্য শল্যপ্রার্থীদের আসা যাওয়া ও উদ্বেগে কাতর পরিবারের মুখগুলো যারা আমাদের মতোই বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে আবর্জনাময় স্থানে কিছু চেয়ার পাতা আছে কিন্তু কেউই যেন বসতে চাইছে না। বাইরে তখন অঝোর বৃষ্টি ও ভেতরে অস্বস্তিকর গরম।
সাড়ে দশটার দিকে দেখলাম আমার মেয়ের মতো একটি অজ্ঞান মুখের মানুষকে সশব্দে ট্রলিতে করে নিয়ে যাচ্ছে ও আমরা দৌড়ে গিয়ে বিধ্বস্ত মুখখানা নিরীক্ষণ করে দেখি সে আমাদেরই মেয়ে। লালা জামা পড়া দুইজন মানুষ ট্রলির দুই ধারে টেনে নিচ্ছেন, বললাম, ভাই কোথায় নেবেন? তারা খুব বিরক্তির সাথে উত্তর দিল, দেখেন কই যাই!
তাদের পিছু পিছু প্রায় দৌড়ে যেয়ে আমরা যেখানে পৌঁছালাম সেটি পোস্ট-অপারেটিভ অবজারভেশন রুম। আমাদের বলা হল মেয়েকে বিছানায় নামিয়ে নিতে, কিন্তু আমি বিছানার চাদর অপরিচ্ছন্ন বিধায় এটি পাল্টে দিতে অনুরোধ করি যদিও তা প্রত্যাখ্যাত হয় ও তারা আমার অজ্ঞান মেয়েকে নামাবার চেষ্টা শুরু করে। বাধ্য হয়ে আমি ও জামাতা দুই পাশে ধরে তাকে বিছানায় শুইয়ে দেই। নার্স এসে ফাইল দেখে রেগে গেলেন, এই রোগী এখানে আনলেন কেন? এই রোগী নীচের রুমেই নিলেই হতো। আমি বিনয়ের সাথে জানাই এটা তো আমাদের জানা নাই ও ওই লাল জামা মানুষদের দেখিয়ে বলি তারাই এখানে এনেছে। যা হোক, মেনে নিয়ে তারা তাকে পর্যবেক্ষণে থাকবে বলে আমাদের সেখান থেকে বাইরে চলে যেতে বলেন। বেলা পৌনে এগারোটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমার মেয়েকে সেখানে রাখা হয় ও শেষে কেবিনে পাঠানো হয়। এর মধ্যে দুপুরের দিকে আমাদের সুহৃদ চিকিৎসক বন্ধু এসে তাকে দেখে যান ও বলেন এখান থেকে যথাসময়ে তাকে কেবিনে দিয়ে দেয়া হবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে।
কেবিনে নেবার পরে সংযুক্ত একজন নার্সের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি তাকে স্যালাইনেই থাকতে হবে, কিছুই খাওয়া যাবে না, এমনকি পানিও না। কতদিন? তিনি জানালেন আজ রাত তো বটেই, তবে আগামীকাল সকালে ডাক্তার ম্যাডাম এসে জানাবেন কি খাবে ও কখন থেকে খাবে। আমরা ধৈর্য ধরে থাকলাম।
হাসপাতালের বড়কর্তার মাধ্যমে আমরা যে কেবিনখানা বরাদ্দ পাই তার দরোজার উপরে লাল রঙ দিয়ে লেখা ভি আই পি। কেন এর নাম এরকম করা হল আমরা জানিনা বা কেনই বা আমাদের এই কেবিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা-ও জানিনা। ভেতরে বিদঘুটে গন্ধ ও পরিচ্ছন্ন কর্মী জানালেন বেশ কিছু ইঁদুর এই রুমে, সেগুলো বের করে জানালা বন্ধ করে রুম পরিষ্কার করতে হবে। আমরা লক্ষ্য করলাম জানালায় একটি কাঁচ নেই ও স্প্লিট এসি-র নীচের দেয়ালে একটি পুরনো উইন্ডো টাইপ এসি-র ফাঁকা বা শূন্যস্থান যেটি একটি কার্টুনের টুকরো অংশ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বাথরুমের দরোজার নীচে বেশ খানিক অংশ ফাঁকা ফাঁকা হয়ে আছে ও পাশে একটি ছোট রুম সম্ভবত ড্রেসিং রুম, সেটি এখন একটি স্টোর রুমে করে রাখা হয়েছে। আমাদের উদ্যোগে ও আর্থিক তাগিদে রুমটি পরিষ্কার করা হলো, জানালায় একটি কাঁচ লাগানো হলো যাতে কয়েকদিনের জন্যে এটি বসবাসের উপযোগী হয়।
অপারেশনের পরেরদিন সকাল ৯টার দিকে দলবেঁধে একদল ডাক্তার এসে রোগী দেখে গেলো ও জানিয়ে গেল ম্যাডাম কিছুক্ষণ পরে এসে জানাবেন কখন ছুটি হবে ও কখন থেকে কী খাবে। আরও ঘন্টা দেড়েক অপেক্ষার পরে ম্যাডাম চিকিৎসক এলেন ও মিনিটখানেক পর্যবেক্ষণ করে খাবারের পরিকল্পনা জানিয়ে গেলেন। সেই মতে আমরা আমাদের প্রায় ৩০ ঘন্টা না খেয়ে থাকা ক্ষুধার্ত মেয়েকে খাবারের ব্যবস্থা করলাম।
খুঁটিনাটি আরও কথা লিখতে হলে একটি বৃহৎ রচনা হবে কিন্তু যে যে প্রসঙ্গগুলো এখানে উল্লেখ করা হলো সেসব আমার মতো একজন নগণ্য নাগরিক যে কীনা গত ৩৪ বছর হেলথ কমিউনিকেশন নিয়ে দেশে-বিদেশে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি তার কাছে এই চিত্র নতুন নয়। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এইসব ঘটনাবলী নৈমিত্তিক ও মিডিয়ায় সরব। কিন্তু আফসোস হলো, বাবার পরামর্শে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা নিতে এসে আমার মেয়েটি যে ট্রমার মধ্যে দিয়ে গেল তার জন্যে আমি অপরাধী কী না। এই দেশে যেসব বাণিজ্যিক স্বার্থবুদ্ধির সমান্তরাল চিকিৎসা ব্যবস্থা আমরা করে রেখেছি তার কাছে যেতে আমার মেয়ের, মেয়ের শ্বশুর বাড়ির বা আমার সে খরচ বহন করে চিকিৎসা সেবা নেবার সামর্থ্য আছে কিন্তু দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এখানে এলেও আমার প্রতিটি মুহুর্ত বারবার মনে হয়েছে কেন আমি এই ভুল করলাম। আমার দু’টো মেধাবী ও সমাজের কল্যাণ অবদানে ভূমিকা রাখার জন্যে যথা উপযুক্ত বিনয়ী সন্তান যারা আমার ও আমার দেশের প্রিয় সম্পদ, তাদের কেন এইরকম অপমানের মধ্যে দিয়ে দেশের কথিত সর্বোচ্চ চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে চিকিৎসা সেবার বিড়ম্বনায় পড়তে হলো!
এইসব ঘটনাবালী ঘটতে দেখে আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে ও আমি প্রত্যক্ষদর্শী হবার সুযোগ পেয়েছি বলে যে শিক্ষা আমি অর্জন করতে পেরেছি তাতে আমার প্রত্যয় জন্মেছে-
১। দেশের এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মোটেই নাগরিকের জন্যে গৌরবের নয়। আমরা এই ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে রেখেছি কারণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমাদের কোন দায় নেই। আমাদের সমাজের যে অংশের মানুষ চিকিৎসা সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করে রেখেছেন তাঁদের বেশিরভাগেরই সমাজের প্রতি কোন দায় নেই। যে কারণে আমরা প্রফেসর ইব্রাহিম বা প্রফেসর এম আর খানের মতো খুব বেশী কাউকে স্মরণ করতে পারি না। না হয়, যারা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রধান কান্ডারী তাঁদের বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকেই ওই পদে যান, তারা কেমন করে সে পদে বসে গৌরববোধ করেন? যেসব হাল হকিকত তারা দেখে যান তার পরিবর্তন বা রূপান্তরের কি উদ্যোগ তারা নেন? তাহলে একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সঠিক পথে চলতে পঞ্চাশ বছরেও পারে না? একটি উদাহরণও নেই যে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সমূলে ঠিকঠাক করতে যেয়ে কোন মহাপরিচালকের পদ থেকে কাউকে কোনদিন অপসারিত হতে হয়েছে। এমনকি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রশাসনিক পরিকল্পনা নিয়ে পড়াশুনা করে ওই পদে কেউ যেয়ে বসেছেন বা বসানো হয়েছে এমন নজীরও খুব কম। যারা গেছেন রাজনীতির কাছে সরকারকে হার মানিয়েই গেছেন আর কাড়ি কাড়ি টাকা কামাই করেছেন বলে প্রচলিত বিশ্বাস। যে কারণে হয়তো আমরা উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন এমন উদ্যোগী কাউকে খুঁজে পাইনা।
২। সরকারের এখানে কোন দায় নাই কারণ সরকার এই সেদিনও কাগজে দেখলাম স্বাস্থ্য সেবার জন্যে যে টাকা বরাদ্দ করে রেখেছেন তার ২৪ ভাগও নাকি স্বাস্থ্যখাত খরচ করতে পারেনি। কিন্তু মেয়ের চিকিৎসা করাতে যেয়ে আমি তো দেখলাম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেই টাকা খরচ করে দায়িত্ব পালনের অসংখ্য কাজ পড়ে আছে। বারান্দায় পানি, ওয়ার্ডের মেঝে জুড়ে রোগী আর রোগী, যেন এরা কেউই মানুষ নয় এমন কি নাগরিকও নয়। অথচ এদের টাকা কুড়িয়ে নিয়েই এই ব্যবস্থাকে সরকার নিশ্চিত করে দিয়েছে যে তুমি উদ্যোগ নাও, সব ঠিক কর। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বৃষ্টির পানি ছাঁদ চুইয়ে হাসপাতালের রোগীর মাথায় পড়বে কেন? আবর্জনা আর দুষ্টের ক্ষত নিয়েই ব্যস্ত থাকবে পুরো ব্যবস্থা? যে হাসপাতালে বছরের সব ওষুধ এক সাথে কিনে ফেলা হয়েছে আর রাখবার জায়গাই নেই সেই হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের ভেতর থেকে ঘন্টায় পাচ-ছ’বার কেন এসে এসে বিহ্বল দরিদ্র চিকিৎসা প্রার্থীর স্বজনের হাতে একটি চিরকূট ধরিয়ে দেয়া হবে, ‘যান এই ওষুধ নিয়ে আসেন’?
৩। যারা চিকিৎসা সেবা দেন তাঁদের আচরণগত সমস্যা অনেকটা মানসিক রোগের মতো। আমি আমার মেয়েকে এখনও জিগ্যেস করিনি এক ঘণ্টার কাজে তোমাকে ওরা কেন ভেতরে নিয়ে আড়াই ঘন্টা সময় রাখল? কারণ আমি জানি তারা আমার মেয়ের সাথে খুব ভালো আচরণ করেনি। যদি করতো তাহলে তার কি অপারেশন হবে, বা কেন দেরী হচ্ছে বা হয়েছে ইত্যাদি তাকে জানানো হতো বা আমরা বাইরে থেকেও জানতে পারতাম। শুধু একবার কানে ভেসে এলো আমার মেয়ে ওখানে বসে থাকতে থাকতে ঘেমে নেয়ে উঠেছে ও একজন চিকিৎসককে বলেছিল, ‘আমার ভয় লাগছে’। যথারীতি উপেক্ষা ছাড়া সেই আকুল উদ্বেগের কোন অনু্কম্পা উত্তর আমাদের মেয়েটার ভাগ্যে জুটেনি। কেন তারা এমন করেন? কেন রোগীর সাথে এমন আচরণ করেন? কেন তারা রোগীর পরিবার-পরিজন-কে ব্রীফ করেন না? রোগী কখন কী খাবে কেন তারা ভালো করে বুঝিয়ে বলেন না? কী তাঁদের অসুবিধা? আমার জানামতে মেডিক্যাল এথিক্স বলে একটা বিষয় আছে, কেন আমাদের চিকিৎসক সমাজ তার জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে সেই বিদ্যা অর্জন করতে ও ধরে রাখতে চান না?
প্রশাসনিক নির্বুদ্ধিতা নিয়ে যতো গল্প আছে সেসব বেশীরভাগই সেবাপ্রার্থী ও সেবাদানকারীর সম্পর্ক নিয়ে। এই কাজে অন্তত আমাদের দেশে প্রচলিত চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থার লোকজন যথেষ্ট পারদর্শী। বিশেষ করে যখন তারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটাকে গড়ে তুলতেই চান না উল্টো একে গড়তে গেলে বাধা দেন বেশী। যে দেশে একটি অনুপম স্বাস্থ্য নীতি পর্যন্ত আমলে নেয়া গেল না সেখানে এদের কাছ থেকে কিছু আশা করা উচিত নয়। সরকারের এই নিয়ে প্রচুর ভাবা উচিত ও এর গভীরে হাত দেয়া উচিত।
আমার সেই সুহৃদ বন্ধুর জন্যে শুভ কামনা যেন তার সরল সহযোগিতায় আর কোন মানুষ নিজেকে প্রতারিত মনে না করেন। আর সেই কর্তা ব্যাক্তি যিনি এক বছরের ওষুধ কিনে এখন রাখবার জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না, তাকে বলি এটা কোন গৌরবের গাঁথা হবে না, এটা হবে অপচয়ের ব্যবস্থাপনা। আর সদাশয় সরকারকে বলি, আরও একবার ভাবতে হবে। যারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অচল রেখে সরকারকে টাকা খরচ করতে দেয় না আর যেটুকু করে তা-ও অপচয় ও অদৃশ্য হয়, দয়া করে নাগরিকের করের টাকায় আর এসব করতে দেবেন না। একজন মানুষ রোগী হয়ে হাসপাতালে যেতে পারে কিন্তু সে এই দেশের নাগরিক। সরকার কোন নাগরিকের অসম্মান কেন মেনে নেবে? হাসপাতাল আক্ষরিক অর্থে হসপিটালিটি বা আথিতেয়তার স্থান হবার কথা কিন্তু সেখানে শুধু অপমান আর অপমান। আর এই অপমান সরকারকেই বিব্রত করতে করা বা করানো হয় কী না সেটাও খুঁজে দেখা দরকার।
রেজা সেলিম, পরিচালক, আমাদের গ্রাম
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।