ইনসাইড থট

অবিচ্ছিন্ন ভুল, ব্যর্থতা আর গ্রহণযোগ্য নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ১১ জুন, ২০২১


Thumbnail

আমরা দেখছি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজশাহী হাসপাতাল ও অন্যান্য সীমান্ত অঞ্চলের হাসপাতালগুলি কোভিড-১৯ রোগীদের দ্বারা অভিভূত। দ্রুত কোভিড রোগীদের সংখ্যা বাড়ার কারণে রাজশাহী হাসপাতালের বিছানা সক্ষমতা ১৩৫ টি নিবেদিত কোভিড-১৯ বিছানা থেকে ২৭৭ শয্যা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে হয়েছে তবুও অনেকে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার জন্য মেঝেতে রয়েছেন। গত পরশু ৩৫ জন নতুন রোগী ২৪ ঘন্টা সময় কালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কোভিড-১৯ এর কারণে অপেক্ষাকৃত মৃত্যুর সংখ্যাও উদ্বেগজনক। সেখানে মাত্র দুটি কোভিড পিসিআর পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে যেখানে গতকাল ৪৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪০.৬১% কোভিড পজিটিভ রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। জুনের শুরুতে এই হার ছিল ৫০.২০%। ইতিবাচকতার এই দ্রুত কিন্তু ধীরে ধীরে বৃদ্ধির হার আমরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। প্রশ্নটি অবশ্যই আমাদের জিজ্ঞাসা করতে হবে যে উদ্বেগজনক এই বৃদ্ধি দেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও স্থানীয় প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিয়েছে বা এখন নিচ্ছেন। হ্যাঁ, আমরা স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক স্থানীয় লকডাউন চাপিয়ে দেওয়ার মত কিছু দুর্দান্ত উদ্যোগ দেখেছি, কিন্তু প্রশ্ন হল আর কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? যেমন টেস্টিং, বিচ্ছিন্নতা / পৃথকীকরণ, যোগাযোগের সন্ধান (contact tracing) এবং সংক্রামিত লোকদের যথাযথ হাসপাতালের যত্নের প্রয়োজন এবং সময়োপযোগী যত্ন নেওয়ার কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় কি আকস্মিক ও দ্রুততর অবনতিজনিত পরিস্থিতি পরিচালনায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করার জন্য রাজধানী বা যেখানে সংক্রমণের হার খুব কম, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় মহামারী নির্বাপক দল (মহামারী পরিচালনায় অভিজ্ঞ দল) পাঠিয়েছেন?

এই বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণের হার ২% নেমে আঁশে, আত্মতুষ্টির এবং স্বাস্থ্য পরামর্শ অমান্যের কারণে এটি বেড়ে ২৩শে এপ্রিল ২৩% হয়ে যায়। তারপরে এটি নেমে আসতে শুরু করে এবং ১৬ই মেতে ৬.৬% এ নেমে এসেছিল। সংক্রমণ তার পর থেকে ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়ে গতকাল আবার হয় ১৩.২৫%। বর্তমান তরঙ্গটি কেন্ট বা আলফা বৈকল্পিক রুপ দিয়ে শুরু হয়েছিল তবে এখন এটি বেশিরভাগই ভারতীয় বা ডেল্টা বৈকল্পিক রূপে রয়েছে। সীমান্ত অঞ্চলের কয়েকটি জেলাতে খুব বেশি সংক্রমণের হারের কারণের জন্য জাতীয় গড়ের সংক্রমণের হারের এই উচ্চ বৃদ্ধি। এটি উদ্বেগজনক এবং আমাদের জিজ্ঞাসা করা দরকার যে আমরা তথাকথিত হাস্যকর দেশ প্রশস্ত লকডাউন নিয়ে ব্যস্ত থাকাকালীন কেন আমরা আমাদের সীমান্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সমন্বিত সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করলাম না? এটি প্রধানমন্ত্রী বা তার কার্যালয়ের একমাত্র দায়িত্ব নয়, এটি প্রাসঙ্গিক মন্ত্রালয়ের প্রধান দায়িত্ব। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যখন আমরা মহামারী মোকাবেলায় অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলির চেয়ে খুব ভাল করছিলাম ঠিক তখন প্রাসঙ্গিক মন্ত্রালয়ের সময় মত উপযগি পদক্ষেপ না নেওয়া আর অদক্ষতার কারণে আমরা এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পৌঁছেছি। এমনকি আমেরিকাতেও যখন তাদের পর্যাপ্ত এবং কার্যকর জিনোম সিকোয়েন্সিং ক্রিয়াকলাপ নেই, তখন বাংলাদেশ জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের পাশাপাশি দেশব্যাপী স্থানীয় মহামারী পরিস্থিতি বিশ্লেষণও করা হয়েছে এবং প্রতি সপ্তাহে সেই তথ্য সবার সাথে উপলব্ধ করা হয়েছে। আমরা সেই মূল্যবান তথ্যগুলি ব্যাবহার করে সময়োচিত পদক্ষেপ নেইনি। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি তার নাগরিককে বাংলাদেশকে এড়াতে এবং না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে (যার সাথে আমি একমত নই এবং মনে করি সেই পরামর্শ স্থানীয় তথ্য ভিত্তিক নয়), দুর্ভাগ্যক্রমে এটি বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিক এবং অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রধানমন্ত্রী পরীক্ষা-নিরীক্ষার ও হাসপাতালের যত্নের উন্নতি করার তাত্ক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন এবং অর্থমন্ত্রী জরুরি ব্যবস্থার সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করেন। অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন দেশ থেকে প্রয়োজনীয় টিকা গ্রহণের জন্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেন। জনগণ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে সর্বোত্তম যত্ন, সমর্থন এবং নির্দেশাবলী পেতে অপেক্ষা করছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ব্যর্থতার বিষয়ে কয়েকজন প্রবীণ মন্ত্রীর প্রকাশ্যে সমালোচনা করা দেখে আমি অবাক হইনি। হ্যাঁ, আমি বলব যে তারা টিকা উদ্যোগ শুরু করতে চিত্তাকর্ষক ভাল কাজ করছিল।

আমার আগের নিবন্ধগুলি পর্যালোচনা করা যাক:

১। এটি প্রস্তাবিত হয়েছিল যে জাতীয় লকডাউন কাজ করবে না, লোকেরা ছুটির দিন হিসাবে গ্রহণ করবে (আমরা অতীতের অবস্তা থেকে শিখেছি) এবং হাজার হাজার মানুয জনাকীর্ণ ট্রান্সপোর্টে তাদের গ্রামে ভ্রমণ করবে এবং এই রোগটি গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে দেবে। সামাজিকভাবে বাংলাদেশিরা শহরাঞ্চলের মানুষ নন। বেশীর ভাগ জনগন শহর এবং তাদের গ্রামের মধ্যে ঘন ঘন ভ্রমণ করেন। লকডাউন ও বড় ধর্মীয় উৎসবকালে লোকজনকে শহরে বন্ধ করে রাখা এবং তাদের বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করা অসম্ভব। পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, ট্রেন, বাস ও নদী পরিবহনের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর জন্য যাতে লোকদের তারাহুরি করে ছুটে যেতে না হয় এবং ভিড়ের পরিবহণ ব্যবহার করতে বাধ্য না হয়। কিন্তু কি দেখতে পেলাম বিপরীতে ঘটেছিল এবং সমস্ত পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হল। সম্ভবত আমরা কিছু ছোট শহর এবং গ্রামীণ অঞ্চলে এখন এর খারাপ প্রভাব পর্যবেক্ষণ করছি। ভাগ্যক্রমে, হয় বেশিরভাগই ইতিমধ্যে সংক্রামিত হয়েছিল এবং অনেক কে টিকা দেওয়া হয়েছিল, তাই আমরা ঢাকা এবং ছোট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলিতে বিরূপ প্রভাব দেখতে পাইনি।

২। অনুরোধ করা হয়েছিল, নজরদারি ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং স্থানীয় পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সে অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। যদি এবং যখন প্রয়োজন হয়, কঠোর স্থানীয় লকডাউন চাপিয়ে দিওয়া। ভাল ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ার স্থানীয় লকডাউন, স্থানীয়ভাবে পরীক্ষা বৃদ্ধি, বিচ্ছিন্নতা এবং পৃথকীকরণ এবং সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা কে সনাক্ত করা অনেক সহজ এবং প্রয়োগযোগ্য।

৩। ভারতের সাথে সীমান্ত বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল এবং সমস্ত প্রত্যাবর্তনকারীকে অবশ্যই কোভিড পরীক্ষা করা আর তাদের কমপক্ষে ১০ দিনের মতো কোয়ারান্টাইন করা যেমনটি ইউরোপ এবং অন্য দেশে করা হয়।

৪। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ ২০২০ সালের নভেম্বরে ভ্যাকসিনটি সুরক্ষিত করতে পারে এবং ফেব্রুয়ারিতে অনেক ইউরোপীয় দেশের চেয়ে অনেক আগে ভাল টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করতে পারে। এটি আরও এবং অন্য ভ্যাকসিনগুলি পাওয়ার জন্য অন্যান্য উত্সগুলির সন্ধানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পর্যাপ্ত সময় সরবরাহ করেছিল। আমি নিশ্চিত না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এপ্রিল পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নিয়েছিল কিনা। অন্যদিকে আমরা দেখেছি যে তৃতীয় পর্যায়ের ভ্যাকসিন পরীক্ষা করার জন্য চীনা অনুরোধের সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিলম্বিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী যখন জানতে পেরে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন, ইতিমধ্যে তা দেরি হয়ে গিয়েছিল এবং চীন এই গবেষণাটি অন্য দেশে সরিয়ে নিয়েছিল। আমরা একটি সুবর্ণ সুযোগ মিস করি। স্পুটনিক ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য আমরা রাশিয়ার সাথে সময় থাকতে আলোচনা করিনি। ড্রাগ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ অকারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছিল। শেষে যখন আমরা বড় সমস্যায় পড়লাম তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য অপেক্ষা না করে এটি অনুমোদিত করে। যখন ইউরোপ এবং জাপান এবং আরও অনেক দেশ তাদের স্টকড অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন বিদেশ মন্ত্রালয়ের সহায়তায় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় কি এই টিকাগুলির কিছু পাওয়ার চেষ্টা করেছিল? আমরা কি ডাব্লুএইচও বা ইউনিসেফের সাথে সময়মত যোগাযোগ করেছি? বোধগম্য, অসাধারণ কোল্ড চেইনের সুবিধার না থাকার কারণে হয়ত আমরা ফাইজার বা মোডার্না ভ্যাকসিন পাওয়ার উদ্দোগ নেইনি।

৫। গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা কয়েক মাস আগে তাদের বঙ্গোভ্যাক্সের প্রথম, ২ য় এবং তৃতীয় মানব পরীক্ষার গবেষণা চালানোর জন্য তাদের অনুরোধ এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিয়েছে তবে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।

৬। ইপিডেমিওলজি, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অনুসারে জিনোম সিকোয়েন্স করে প্রকাশ করে ভারতীয় বৈকল্পিক বা ডেল্টা ভেরিয়েন্ট কয়েক মাস আগে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। তবে ভারতে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের দ্রুত এবং ভয়াবহ সঞ্চালনের সংবাদ জানার পরেও ভারতীয় সীমানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত বিলম্বিত হয় এবং উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। ভারতীয় পণ্য পরিবহণকারী চালকদের বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ট্রানজিট করার সময় কি ধরনের নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তা জানা নেই। ভারত থেকে ফিরে আশা বাংলাদেশী লোকেরা, এমনকি সংক্রামকরাও খুব বেশি বিচ্ছিন্ন ছিল না। কিছু সংক্রামিত ব্যক্তি পৃথকীকরণ সুবিধা থেকে পালিয়ে যায়। সেখানে কি কোন সমন্বিত অগ্রিম জরুরি প্রস্তুতির পরিকল্পনা ছিল?

৭। যখন গত কয়েক সপ্তাহ আমরা জানতে পারি রাজশাহী এবং সিমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে প্রচুর লোক সংক্রামিত হচ্ছে, কেন আমরা সেখানে পরীক্ষার সুবিধা বাড়িয়ে তুলিনি? হ্যাঁ, আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পরীক্ষার সুবিধা না থাকতে পারে। কেন আমরা জরুরী ভিত্তিতে সংক্রমণের হার খুব কম এমন জায়গা থেকে মেশিন এবং প্রযুক্তিবিদ লোকদের স্থানান্তর করতে পারিনি? সময়ের প্রয়োজন এবং সংকট পরিস্থিতির দাবি হিসাবে আমরা পরিষেবার এই উদ্যোগকে সেবা পুনর্গঠন বলি। এর জন্য সাহস ও নেতৃত্বের প্রয়োজন।

৮। কেন হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য সুবিধাগুলি বর্ধিত বোঝা সামলাতে বেশি সরবরাহ ও জনবল পাচ্ছে না?

৯। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি

যে কোনও যুদ্ধের জন্য, সামগ্রিক জেনারেল কমান্ডিং অফিসার, কৌশল এবং দিকনির্দেশনা সরবরাহ করেন, লড়াইয়ের জন্য অর্থ আর সমস্ত প্রয়োজনীয় সরবরাহ খাত আছে কিনা তা নিশ্চিত করেন, তবে তার অধিনায়ক এবং লেফটেন্যান্টরা হলেন তারা যারা মাঠে আছেন, তারা একে অপরের সাথে সহযোগিতা করেন এবং পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে ক্রমাগত স্থানীয় তথ্য এবং বুদ্ধি সংগ্রহ করে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন। এবং সময় মত পদক্ষেপ নেন। কখনও কখনও তারা কিছু ভুল করেন কিন্তু ভুল থেকে শিখে যুদ্ধ জয়ের জন্য এগিয়ে যাওয়া কখনও থামায় না। মাঠে লড়াইয়ের সময় অধিনায়ক এবং লেফটেন্যান্টরা সর্বদা কমান্ডার জেনারেলের কাছ থেকে দিকনির্দেশ বা পরামর্শ চাইতে পরেন, তবে তাদের অবশ্যই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা এবং সক্ষম হতে হবে, এবং হ্যাঁ, কিছু সময় তারা কৌশলগত পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিন্তু কখনই এগিয়ে যাবার লড়াই বন্ধ করতে পারেন না। তবে বিদ্যমান প্রসঙ্গটি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে কোভিড-১৯ যুদ্ধে মনে হচ্ছে আমাদের মন্ত্রীরা এবং সচিবরা সকলেই সাধারণ বিষয়গুলির জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন। আমরা ভুলে যাচ্ছি যে বিরোধীদল এবং বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখার সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য আরো বিভিন্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। মন্ত্রীরা তাদের মন্ত্রকের জন্য দায়বদ্ধ এবং প্রধানমন্ত্রী পুরো দেশের জন্য দায়বদ্ধ। তাই মন্ত্রীর এবং সচিবদের নিরাপত্তাহীনতা এবং অক্ষমতা জাতীয় ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে, যা প্রধানমন্ত্রীর কাজগুলি আরও কঠিন এবং অসম্ভব করে তোলে। আমি দুঃখের সাথে বলতে পারি যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নেতৃত্বের অক্ষমতা উদ্বেগজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক। কোভিড-১৯ যুদ্ধ তাদের অক্ষমতা এবং নেতৃত্বের অভাব নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে। আমি জানি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে বহু খুব ভাল এবং অত্যন্ত প্রতিভাবান লোক রয়েছে যারা নিরলস পরিশ্রম করে এবং নিরলসভাবে কাজ করতে আগ্রহী। বেশীরভাগ কর্মচারী দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করছেন। অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা এবং পরামিতিগুলিতে আমাদের অর্জনগুলি তাত্পর্যপূর্ণ এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং সে সব ঘটেছিল সেই সাহসী, কঠোর পরিশ্রমী মেধাবী তৃণমূল কর্মী এবং প্রোগ্রাম স্বাস্থ্য নেতাদের কারণে। আমাদের অবশ্যই তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং কৃতিত্বকে হ্রাস করা এবং হ্রাস করতে দেওয়া উচিত নয়।

আমি দয়া করে প্রস্তাব দিতে পারি, যদি এটি ইতিমধ্যে না করা হয়ে থাকে, কোভিড-১৯ যুদ্ধ জয়ের জন্য একটি যুদ্ধের মন্ত্রিপরিষদ এবং কক্ষ স্থাপনের জন্য। এই পরিষদ আগত সপ্তাহ এবং মাসগুলিতে প্রতিদিন মিলিত হয়ে প্রতিদিনের ক্রমাগত অবস্তা পর্যালোচনা করবেন, সমস্ত ক্ষেত্র পর্যায়ের ডেটা বিশ্লেষণ করবেন এবং অগ্রগতি নিরীক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন। প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত রাখা হবে এবং কমিটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ এবং তাঁর পরামর্শ ও নির্দেশনা কমিটির সদস্যদের অবগত করবেন। এই কমিটির সভাপতিত্ব করবেন একজন সর্বাধিক প্রবীণ মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উচ্চ আধিকারিক এবং প্রাসঙ্গিক মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে সাথে স্বাস্থ্য ও প্রশাসনের সাথে সম্পর্কিত জেলা থেকে উচ্চ আধিকারিক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, গবেষক, ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক সরকারী ও বেসরকারী খাতের বিশেষজ্ঞরা, নাগরিক সমাজ এবং এনজিও প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট জেলার রাজনৈতিক ও সম্প্রদায়ের নেতারা এই কমিটির সদস্য হবেন। এই উচ্চ পর্যায়ের কমিটি জরুরীভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে পারে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এবং সময় মতো পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে। অতিত আর বর্তমানের ভুল থেকে শিখে আমাদের অবশ্যই ভবিষ্যতের মহামারী ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য এখনি সমস্ত প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে।

কোভিড-১৯ আমাদের একটি অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে ফেলেছে, আমরা এখন হয়ত কিছুটা কঠিন সময় পার করছি তবে আমাদের আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়। আমাদের অবশ্যই এই যুদ্ধ জিততে হবে এবং আমার চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের সাথে আমরা অবশ্যই শেষ পর্যন্ত এবং অচিরে এই যুদ্ধে জিতব।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে কেন এই বিতর্ক


Thumbnail

স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ঘোষক বিষয়ে মাঝামাঝে কেউ কেউ অহেতুক বিতর্ক করেন। অথচ ইতিহাসের বাস্তবতা, সংবিধান এবং সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, স্বীকৃত এবং মীমাংসিত সত্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এবং স্বাধীনতার ঘোষক।

কয়েকদিন আগে বিএনপি নেতা মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম দাবি করেছেন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা না করলে এদেশ নাকি আজও স্বাধীন হতো না। বঙ্গবন্ধুর ২৬ শে মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার দাবি নাকি কল্পকাহিনী! কত বড় ধৃষ্টতা! চিন্তা করা যায়? তিনি দাবি করেছেন ২৩ শে মার্চ থেকে ইপিআর পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে। তাহলে ইপিআরের কন্ট্রোল রুম থেকে কিভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিট করা সম্ভব? স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে মেজর হাফিজের এই মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং অসত্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ইতিহাসের সত্য পাঠ থেকে তার বক্তব্য খন্ডন করছি। 

বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সেটি দেশ-বিদেশে প্রচারিত হয়েছিলো সেটি প্রমাণের জন্য একটি তথ্যই যথেষ্ট। পাকিস্তানের জেনারেল টিক্কা খান এবং জেনারেল নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক রচিত "উইটনেস টু সারেন্ডার " গ্রন্থে তিনি লিখেছেন - " ২৫ শে মার্চ রাতে যখন প্রথম গুলিটি বর্ষিত হলো ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ঐ কণ্ঠের বাণী মনে হয় আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তান কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করলেন।" বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে সিদ্দিক সালিক এর মন্তব্যের পর আর প্রমাণের কিছু বাকি থাকে? তারপরও আমরা আরো কয়েকটি ঘটনা দিয়ে প্রমাণ করবো মেজর হাফিজের বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। 

আসুন দেখা যাক, ইতিহাস কি বলে? বঙ্গবন্ধু আসলেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন কি না? ইপিআরের সিগন্যাল কোরের সেন্ট্রাল সুবেদার মেজর শওকত আলি ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাত সাড়ে এগারোটা থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআর এর ওয়্যারলেসে তার নিজস্ব ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ইপিআর প্রধানের মাস্ট ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিটরত অবস্থায় তিনি নাবিস্কো বিস্কুটের একটি টিনের কৌটা সহ রাত সোয়া বারোটায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন এবং নির্মমভাবে নিহত হন। মেজর শওকতের সাথে সে রাতে আটক হওয়া ইপিআরের সিগন্যালম্যান আব্দুল মোত্তালিব ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। তার সাক্ষাৎকার থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন মেজর শওকতের কন্যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিনা পারভীন। যিনি দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত তার নিবন্ধে এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সুতরাং মেজর হাফিজের দাবি যে, ভিত্তিহীন, মনগড়া এবং বায়বীয় তা স্পষ্ট। 

এবার আসা যাক বেতারে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা প্রসঙ্গে। ২৫ শে মার্চ বেতার কেন্দ্র পাকিস্তানীদের দখলে থাকলেও বঙ্গবন্ধু গোপনে তিনটি রেডিও ট্রান্সমিটার তিন জায়গায় প্রস্তুত রেখেছিলেন বলে বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায়। তিনটি ট্রান্সমিটারের একটি বঙ্গবন্ধুর  ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাসভবনে অতি গোপনে স্থাপন করা হয়েছিলো। বুয়েটের অধ্যাপক ডক্টর নূরুল উল্লাহ্'র সাক্ষাৎকার থেকে এ বিষয়টি জানা যায়। বঙ্গবন্ধু ডক্টর নূরুল উল্লাহ্কে তার বাসভবনে ডেকে একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে বলেন। ঐ ট্রান্সমিটারের সাহায্যে বঙ্গবন্ধু শেষবারের মতো দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কিছু বলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরবর্তীতে ডক্টর নূরুল তড়িৎ কৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাথে কথা বলে একটি ট্রান্সমিটার তৈরির ব্যবস্থা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে স্থাপন করেন। এটির সম্প্রচার ক্ষমতা ছিল প্রায় বাংলাদেশব্যাপী। এই ট্রান্সমিটারের সাহায্যে বঙ্গবন্ধু তার স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করান। ডক্টর মোহাম্মদ হান্নান রচিত "বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" গ্রন্থে এ বিষয়ের উল্লেখ আছে। 

আরেকটি ট্রান্সমিটার ছিলো বেতার বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল হকের কাছে। বঙ্গবন্ধু তাকে একটি ট্রান্সমিটার জোগাড় করার কথা বললে তিনি খুলনা থেকে সেটি নিয়ে আসেন। ২৫ শে মার্চ রাত বারোটার আগে আগে সেটির সাহায্যে আগেই রেকর্ড করে রাখা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ কন্যা শারমিন আহমদ তার রচিত তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা" গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর পার্সোনাল এইড হাজী গোলাম মোর্শেদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিষয়টি উল্লেখ করেন। জনাব মোর্শেদ ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে তাকেও সে রাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ছাড়া পান। 

হাজী গোলাম মোর্শেদ শারমিন আহমদ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন- "২৫ শে মার্চ রাত বারোটার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাসায় একটা টেলিফোন আসে। আমি সেটা রিসিভ করি।" ফোনকলে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, "আমি বলধা গার্ডেন থেকে বলছি, মেসেজ পাঠানো হয়ে গেছে। মেশিন নিয়ে কি করব?" পাশে থাকা বঙ্গবন্ধু কে জনাব মোর্শেদ বিষয়টি জানালে বঙ্গবন্ধু জনাব মোর্শেদের মাধ্যমে তাকে ট্রান্সমিটারটি ভেঙে ফেলে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। গোলাম মোর্শেদের সাক্ষাৎকার এবং ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলামের লেখা থেকে ফোনকলের অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল হক হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। ২৯ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে তার মহাখালীর সরকারি বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর তার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিটারের সাহায্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কারণেই তাকে গুম করা হয়। উল্লেখ্য জনাব নুরুল হক ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের আত্মীয় এবং তার বাড়ি ছিলো কুষ্টিয়ায়। 

তাছাড়া বিবিসি বাংলা, ভয়েস অব আমেরিকা, দি ডেইলি টেলিগ্রাফ লন্ডন পত্রিকা, দি গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস সহ বিশ্বের প্রায় পঁচিশ টি গণমাধ্যম ফলাও করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার খবর প্রকাশ করে ২৬ এবং ২৭ মার্চে। উপরের ঘটনাপ্রবাহ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। মেজর হাফিজ দাবি করেছেন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। অথচ ইতিহাসে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায় না। মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাটস্থ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ শে মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন মাত্র। 

ঘোষণাটি ছিল এরুপ " আই মেজর জিয়া অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার্ড দি ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ, জয় বাংলা।"

একই বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ শে মার্চ আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান, বেতার কেন্দ্রের প্রধান সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, বেতার ঘোষক আব্দুল্লাহ্ আল ফারুক, মাহমুদ হোসেন, সুলতানুল আলম সহ আটজন স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। অর্থাৎ মেজর জিয়াউর রহমানের আগে আরও ৮ জন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। মেজর হাফিজের দাবি সঠিক হলে তারা প্রত্যেকেই হবেন স্বাধীনতার ঘোষক! সেক্ষেত্রে জিয়াউর হবেন স্বাধীনতার নবম ঘোষক!! 

জিয়াউর রহমান ২৫ শে মার্চ ষোলশহর স্টেশন হেডকোয়ার্টারে ছিলেন। ২৫ শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনারা নতুনপাড়া সেনানিবাসের ঘুমন্ত বাঙালি সৈন্যদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় ২৫০ বাঙালি সৈন্যকে হত্যা করে। শতশত বাঙালি সৈন্য আহত এবং আটকে পড়েন। জিয়াউর রহমান এই খবর পেয়ে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সদস্যদের প্রতিরোধ কিংবা আটকে পড়া আহত বাঙালি সৈন্যদের উদ্ধারে এগিয়ে না গিয়ে রাত তিনটার দিকে ষোলশহর স্টেশন হেডকোয়ার্টার থেকে তার সঙ্গে থাকা প্রায় আড়াইশো সৈন্য, গোলাবারুদ এবং যানবাহন নিয়ে বোয়ালখালী পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে পটিয়া চলে যান। চট্টগ্রামের বিখ্যাত গেরিলা যোদ্ধা সিরু বাঙালি'র লেখা "যুদ্ধের ময়দান থেকে মেজর জিয়ার পলায়ণ" গ্রন্থে এ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। 

২৭ শে মার্চ বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ এবং আবুল কাশেম সন্দ্বীপ সহ কয়েকজন পটিয়ায় গিয়ে তাকে বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি ২৭ শে মার্চ ঠিক সন্ধ্যায় তাদের সাথে তার অধীনে থাকা ফোর্স সহ আসেন এবং বেলাল মোহাম্মদের অনুরোধে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। অবশ্য পরদিন ২৮ শে মার্চ তিনি হঠাৎ করেই বেতার ঘোষণায় নিজেকে সরকার প্রধান হিসেবে দাবি করেন। ঘোষণাটি ছিল- "আই হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার্ড মাইসেল্ফ প্রভিশনাল হেড অব দ্যা গভর্নমেন্ট  অব বাংলাদেশ।""

এই ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ সহ বেতারের সবাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান তাকে টেলিফোন করেন। শমসের মোবিন চৌধুরী টেলিফোন কলটি রিসিভ করলে জিয়ার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর নাম না থাকায় হান্নান সাহেব বিস্ময় প্রকাশ করেন। শমসের মোবিন ও তার সাথে একমত পোষণ করেন। পরে রাতে জনাব মোবিন জিয়াউর রহমান কে এই বিষয়ে জানালে তিনি বলেন অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণায় থাকতে হবে। পরদিন ২৯ শে মার্চ জিয়াউর রহমান তার ঘোষণাপত্র সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। 

সবচেয়ে মজার ঘটনা ঘটে ৩০ শে মার্চ। এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর স্যাবর জেট থেকে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের উপর গোলাবারুদ বর্ষণ করলে ভীতসন্ত্রস্ত মেজর জিয়া এক ঘন্টার নোটিশে ভারতে যাওয়ার কথা বলে রামগড়ে পালিয়ে যান! যার বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা তিনি তা না করে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গেলেন! অথচ তাকেই আজকে স্বাধীনতার মহানায়ক বানানোর কতই না অপচেষ্টা! 

বাংলাদেশের দীর্ঘ ২৩ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ এতো ঠুনকো বিষয় নয় যে একজন সামান্য মেজর স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন আর দেশ স্বাধীন হয়ে গেল। স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের বিশালতা সমূদ্রসম এবং বঙ্গবন্ধু হলেন এককভাবে সেই সমূদ্র। জিয়াউর রহমানরা সেই সমূদ্রের কয়েকটি নুড়িপাথর মাত্র, তাকে বড় বানাতে চাইলে বড়জোর কয়েক বালতি পানি পর্যন্ত বিবেচনা করা যায়। এর বেশি নয়। 

যারা জিয়াউর রহমান কে স্বাধীনতার ঘোষক বানাতে চান কিংবা ঘোষক হিসেবে মনে করেন তাদেরকে মস্তিষ্কহীন মনে না করার কোনো কারন দেখি না। মেজর জিয়াউর রহমান  পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদের  নির্বাচিত ৪৬৭ জনেরও একজন ছিলেন না। তাদের নেতা তো দূরের কথা। জাতীয় পরিষদের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং প্রাদেশিক পরিষদের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। সুতরাং স্বাধীনতা ঘোষণার এখতিয়ার একমাত্র এই দু'জনের ছিল। এমনকি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দীন আহমদ সাহেবেরও ছিলো না, সরকারের কর্মচারী মেজর জিয়াউর রহমান তো দূরের কথা!

বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দ। বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি যদি ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের একটি স্বাধীন, সার্বভৌম এবং স্বীকৃত ভূখন্ড, ১৭ কোটি মানুষ এবং একটি সরকারের সমষ্টি হয় তাহলে বঙ্গবন্ধু একাই হচ্ছেন সেই ভূখণ্ড, ১৭ কোটি মানুষ এবং সরকার। তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবরা হচ্ছেন সেই ভূখণ্ড, জনতা এবং সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জিয়াউর রহমান হলেন একজন ব্যক্তি যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনো অংশ নন। দৈবক্রমে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ভাগ্যক্রমে বীরউত্তম খেতাব পেয়েছেন। এমন বীরউত্তম আছেন আরও ৬৮ জন। জিয়াউর রহমানের তুলনা হতে পারে সেই ৬৮ জনের সাথে। জিয়াউর রহমান এগারো সেক্টর কমান্ডারের একজন। সুতরাং তার তুলনা হতে পারে ঐ এগারো জনের সাথে। সেক্ষেত্রে ও অবদানের বিবেচনায় তার অবস্থান হবে নিচের দিকেই।

মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, খুলনা মহানগর।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

ভারতীয় পণ্য বর্জন: রাজনীতির কানাগলিতে প্রবেশ বিএনপির


Thumbnail

যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।

কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।

আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।

রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।


ভারতীয় পণ্য   রাজনীতি   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রির গণহত্যা

প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ২৫ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।

এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত ‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।

আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ, আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’

বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।

কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর।  পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়।  হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের  সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।     

বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায় বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের ২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।


২৫ মার্চ   গণহত্যা দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিএমআরসি আজ গবেষণায় পথিকৃৎ


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে শুধুমাত্র রাজধানী কেন্দ্রিক ছিল এমনটা না, এটা ছিল জেলা বা ওই সময় মহকুমা, থানা, ইউনিয়ন, এমনকি গ্রাম পর্যায়ে। যেটা আজকের কমিউনিটি ক্লিনিক এবং এটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। ওই সময় বঙ্গবন্ধু কমিউনিটি ক্লিনিক বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। কিন্তু আজ তারই উত্তরসূরি তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই এই কমিউনিটি ক্লিনিক পূর্ণতা পেয়েছে। যা সারা পৃথিবীর জন্য একটা রোল মডেল। জাতিসংঘ এটাকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ স্বীকৃতি দিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে জাতিসংঘে কোন ব্যক্তির নামে এরকম রেজ্যুলেশন নাই। 

স্বাধীনতার পর যে স্বাস্থ্য তা সম্পূর্ণ একটা নড়বড়ে ও ভঙ্গুর ছিল। বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার পরপর ডাক্তারদের প্রথম শ্রেণির মযার্দা দেন। এমবিবিএস করার পর উচ্চশিক্ষা ছিলো না, গবেষণারও কোন সুযোগ ছিলো না। বঙ্গবন্ধু তখনই আইপিজিএমআর প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ হাসিনার হাত ধরে আজ তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যতম বিদ্যাপীঠ হিসেবে সুপরিচিত। বিশ্বেও এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। 

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিএমআসি ছিল নখহীন, দন্তহীন ঘুমন্ত একটি প্রতিষ্ঠান। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিলে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর হাতে তিনি দায়িত্ব দেন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিএমআরসি আজ গবেষণায় পথিকৃৎ। তবে আমাদের আত্মতৃপ্তির সুযোগ নাই। কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক্তারদের গবেষণার কাজের মনোনিবেশ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নিজেই খবু আগ্রহী। সবক্ষেত্রে গবেষণা হচ্ছে শুধু ডাক্তাররাই মনে হয় এক্ষেত্রে একটু দুর্বল। গবেষণা আমরা এখনও পিছিয়ে। এটা আমাদের আরও এগিয়ে নিতে হবে। এর জন্য যা যা দরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা করতে প্রস্তুত আছেন। এখন আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এভিডেন্স বেসড ইনফরমেশন ছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করা কঠিন


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের এই নির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন যে, একটি রাষ্ট্রকে যদি অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত করতে হয়, একটি রাষ্ট্রকে যদি সঠিকভাবে মেরুদণ্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাহলে ওই রাষ্ট্রের জনগণের স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে হবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে উনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি সূচনা করেছিলেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যাতে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায় তার একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। তারই বহিপ্রকাশ বাংলাদেশের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জনগণের যে মূল কয়েকটি বিষয় তার ভিতরে স্বাস্থ্য একটি মূল বিষয়। বঙ্গবন্ধুর এই দর্শনকে সামনে রেখে আমাদের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও উন্নতির দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আমাদের গবেষণালদ্ধ এভিডেন্স বেসড ইনফরমেশন ছাড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন করা কঠিন। আমি যদি না জানি আমাদের চ্যালেঞ্জ কোথায়, অপরচুনিটি কোথায় তাহলে আমরা কোনোভাবেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে পারব না। এই উন্নয়নের জন্য দরকার গবেষণা। এই গবেষণা আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করি। একটি মৌলিক গবেষণা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য এভিডেন্স বেসড ইনফরমেশন কালেকশন এর জন্য গবেষণা, আরেকটি পাবলিক হেলথ গবেষণা। এই তিনটি গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য যে কতটুকু প্রয়োজন সেই প্রয়োজনটুকু বিএনপি সরকার কখনও উপলব্ধি করেনি, উপলব্ধি করেনি বলেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হয়েছিল একটি জুয়া খেলার আড্ডার জায়গা। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজকে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আমাদের এই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া মাত্র কমিউনিটি ক্লিনিককে উজ্জীবিত করেছে, কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমকে উজ্জীবিত করেছে। আমাদের এখন দরকার গবেষণা। তাহলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এক্ষেত্রে বিএমআরসির শক্ত ভূমিকা থাকা উচিত। আমরা যদি গবেষণালব্ধ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে না পারি তাহলে উন্নয়ন করতে পারব না। আমাদের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার কিন্তু পরিবর্তনটা কোথায় দরকার, কেন দরকার, কীভাবে দরকার এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের একান্ত গবেষণা করা দরকার। আমি বিশ্বাস করি বর্তমান সরকার দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সেরকম গবেষণার কাজ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের কার্যক্রমও আর বৃদ্ধি পাবে, আরও সুদৃঢ় হবে।
 


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন