নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০১ এএম, ১৮ জুন, ২০২১
২০২০ সালের ২ জুলাই বাংলাদেশের প্রথম সংস্থা, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনটি বিকাশের ঘোষণা দেয়। একমাত্র বাংলাদেশি সংস্থাটি বিভিন্ন প্রযুক্তিসহ তিনটি কোভিড-১৯ টি ভ্যাকসিন প্রার্থী তৈরি করে। সংস্থাটি এমআরএনএ ভিত্তিক ভ্যাকসিনটির নাম অনেক আলোচনার পর নামকরণ করে বঙ্গভ্যাক্স। বঙ্গভ্যাক্সের প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালিং পরিচালনার জন্য নৈতিক অনুমোদনের অনুমতি পাওয়ার জন্য গ্লোব বায়োটেক ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টার অন্যতম একটি হিসাবে এই ভ্যাকসিনটির নিবন্ধন করে বলে এটি বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। ২৮ ডিসেম্বর, মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন (ডিজিডিএ) ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য গ্লোব বায়োটেককে ভ্যাকসিনটি তৈরি করার অনুমতি দেয়। এই বছরের ১৭ই জানুয়ারি সংস্থাটি ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য বিএমআরসির কাছে নৈতিক অনুমোদন চেয়েছিল। ২০২১ সালের মে মাসে মর্যাদাপূর্ণ পিয়ার রিভিউ জার্নাল “ভ্যাকসিন জার্নালে” তাদের সম্পূর্ণ প্রাণী গবেষণার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে (আপনার সহজ রেফারেন্স জন্য: Nag K, Baray JC, Khan MR, Mahmud A, Islam J, Myti S, et al. (18 May 2021). "An mRNA-based vaccine candidate against SARS-CoV-2 elicits stable immuno-response with single dose". Vaccine X. 39 (23).
মনে হচ্ছে পাঁচ মাসের ব্যাপক পর্যালোচনা শেষে ১৫ জুন বৈঠকের পরে বিএমআরসি পরিচালক ডাঃ মোঃ রুহুল আমিন বলেছেন যে, গ্লোব বায়োটেক সহ তিনটি ভ্যাকসিন প্রার্থী সংস্থার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করার অনুমতি দেওয়ার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিদেশি সংস্থাগুলির একটি ভারত থেকে, অন্যটি চীন থেকে। তার নাম প্রকাশ না করেই একজন কর্মকর্তা বলেন, “কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য প্রথমে বানর বা শিম্পাঞ্জির ওপর ট্রায়াল সহ সমস্ত সংস্থাকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে আমরা সিআরও সংস্থাগুলি কর্তৃক জমা দেওয়া বানর পরীক্ষার নথিও পর্যালোচনা করব।”
বিএমআরসি কর্মকর্তারা এই বিষয়ে একটি সভার পরে বলেছিলেন, দু`জন বিদেশী ভ্যাকসিন প্রার্থী যারা মানবিক পরীক্ষা পরিচালনার নৈতিক অনুমোদনের জন্য বিএমআরসিতে আবেদন করেছিলেন তাদেরও একই শর্ত পূরণ করতে হবে। চীন এবং ভারতীয় গোষ্ঠী কখন এবং কি ধরণের টিকার মানব পরীক্ষা করার জন্য বিএমআরসিতে তাদের অনুরোধ জমা দিয়েছে তা আমরা জানি না।
জনস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার প্রধান হিসাবে, জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দফতরে থাকাকালিন, আমরা লক্ষ করেছি যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরও পরীক্ষাগারভিত্তিক টক্সিকোলজি পরীক্ষার করার আহ্বান সত্ত্বেও বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রধানত হাজার হাজার দরিদ্র মহিলাদের মধ্যে বিচারাধীন মানববন্ধন পদ্ধতি (contraceptive method) কুইনাক্রাইন ট্রায়াল পরিচালিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্লেষণে প্রাথমিকভাবে এই ধরনের পরীক্ষাগুলি কুইনাক্রাইন নির্বীজন এবং ক্যান্সারের বিকাশের মধ্যে একটি সংযোগ পাওয়ার পর সেই উপদেশ দেয়। এ কারণেই আমি খুশি যে বাংলাদেশ নৈতিক কমিটি ভ্যাকসিনের মানবিক পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে খুব সতর্ক ছিল। তবুও গ্লোব বায়োটেক ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পর্কে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে এত দেরি হওয়া সম্পর্কে অনেক বিজ্ঞানীদের মনে অনেক উত্তরহীন প্রশ্ন রয়ে গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভারতের দিল্লিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের একজন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিভাগ পরিচালক হিসাবে গবেষণার আমার অন্যতম একটি দায়িত্ব ছিল। আমরা লক্ষ্য করেছি যে অনেক বিদেশী সংস্থাগুলি যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই মানুষের ওপর নতুন ড্রাগ পরীক্ষা চালানোর জন্য এই অঞ্চলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে কয়েক মিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছিল। সুতরাং, আমার বিভাগের দলটি আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে তা নিশ্চিত করার জন্য নৈতিক কমিটিগুলিকে আরও জোরদার করতে সদস্য দেশগুলিকে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। এটি বিজ্ঞানকে এগিয়ে যাওয়া থামাতে নয় বরং মানুষের ওপর অযৌক্তিক বিরূপ প্রভাব রোধ করতে পারে সেকারণেই অগ্রাধিকার পায়। সম্প্রতি, যখন আমি ৮টি দেশে (আফ্রিকা এবং এশিয়াতে) গবেষণা প্রোগ্রামের সমন্বয় করছিলাম যখন গর্ভবতী মহিলাদের থেকে ডেটা এবং নমুনা সংগ্রহ করার প্রস্তাব ছিল। তখন তাদের বিবেচনা এবং অনুমোদনের জন্য প্রতিটি দেশের নৈতিক কমিটিগুলির কাছে আমাদেরকে গবেষণা প্রস্তাব জমা দিতে হয়েছিল। জমা দেওয়া প্রস্তাবগুলো মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করতে কমিটির সভাপতি এবং সদস্যরা তাদের সভা মাসে একবার বা দু`বার করেন। আমরা প্রতিটি নৈতিক কমিটিতে গবেষণাপত্র সময়মত জমা দিয়েছি। তবে নৈতিক কমিটির অনুমতি পেতে মাসের পর মাস দেরি হয়নি। আমরা তাদের মতামত এবং পরামর্শ পেয়ে, তাদের নির্দেশাবলী অনুসরণ করে পুনরায় আমাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছিলাম এবং আমাদের জমা দেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে নৈতিক ছাড়পত্র পেয়েছি। গবেষণার গুরুত্ব এবং জরুরীতার কথা বিবেচনা করে কমিটি কখনও কখনও জরুরি অধিবেশন ডাকেন। কোভিড-১৯ এর গুরুত্ব বিবেচনা করে আনেক আগেই বিএমআরসি জরুরী ভিত্তিতে গ্লোবের প্রস্তাব বিবেচনা করবে, তাদের পরামর্শ সরবরাহ করবে এবং প্রয়োজনে আরও তথ্যের দাবি করবে বলে আমি আশা করেছিলাম।
আমি অত্যন্ত খুশি যে বিএমআরসি সদস্যরা বাংলাদেশের জনগণের নিরাপদ সুরক্ষা নিশ্চিত করে অবশেষে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা বঙ্গভ্যাক্সের মানবিক পরীক্ষার অগ্রগতি গ্রহণের জন্য তাদের সুপারিশ ও শর্ত নিয়ে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত দিতে যাচ্ছেন। আমি পত্রিকায় পড়েছি, শর্তগুলির মধ্যে একটি হলো ইঁদুরের অধ্যয়ন ছাড়াও বানর বা শিম্পাঞ্জির সঙ্গে গবেষণার বিচার করা। আমি এখনও এই সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য বুঝতে চেষ্টা করছি কেন কমিটি পাঁচ মাসের বেশি সময় নিয়েছিল? গ্লোব বায়োটেকের প্রধান নির্বাহী এখনও কমিটিগুলির শর্ত ও অনুমোদনের চিঠি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। আমি আশা করি তিনি শীঘ্রই এটি পাবেন এবং এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলি শুরু করতে পারবেন। আমি আরও খুশি যে কমিটি কোনও বিলম্ব ছাড়াই এবং স্বল্প সময়ে দুটি বিদেশি সংস্থার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
আমাদের জানা উচিত ভ্যাকসিন বা অন্য কোনও ওষুধের গবেষণার জন্য যেকোন একটি বানর ব্যবহার করা যায় না। এই বানরগুলি অবশ্যই সমস্ত রোগ মুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর হতে হবে। তাই ফ্লোরিডার অন্তত পাঁচটি সত্ত্বা, মিয়ামি-ডেডের একটি সহ, গবেষণা এবং পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বানর প্রজনন বা আমদানি করে। মার্কিন কৃষি বিভাগের এক প্রতিবেদনে ২০১৭ সালে ফ্লোরিডায় কমপক্ষে ১৭২৯ বানর ল্যাব সেটিংসে ব্যবহৃত হয়েছিল। বায়োমেডিকাল গবেষণায় বানর ব্যবহারকারী গবেষকদের জন্য সহায়তা প্রদানকারী একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক বলে যে, এখন পরীক্ষাগত বিষয়ের আকাশচুম্বী পরীক্ষার ফলে পরীক্ষাগত বানরগুলির মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যদিও এর জন্য অতিরিক্ত ব্যয় হবে (আমি আশা করি অনেক পশ্চিমী দেশগুলির মতো বাংলাদেশ সরকার কোম্পানির ঝুঁকি এড়ানো জন্য আগাম আর্থিক সহায়তা দিতে পারবে, যেমন ২০২০ সালের নভেম্বরে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটকে যথাযথভাবে অগ্রিম ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সরবরাহ করেছিল বাংলাদেশ), গ্লোব বায়োটেক স্বল্প সময়ে এশীয় বাজার থেকে পরীক্ষার বানর পেতে সক্ষম হবে।
উপরের চাহিদা এবং বানরগুলির অভাব বিবেচনা করে, বিএমআরসি তাদের প্রকৃত উদ্বিগ্ন গবেষণা প্রস্তাবের ঘাটতি বিতান করে, তারা বানরের বিষয়ে আরও গবেষণা চালাতে ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে গ্লোবকে জানাতে পারত। এটি গ্লোবকে প্রয়োজনীয় তাত্পর্যপূর্ণ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো চালানোর জন্য এবং তত্ক্ষনাৎ তাদের বিএমআরসি চাহিদা পূরণের জন্য অতিরিক্ত তহবিল এবং বানরগুলির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট সময় দিত। সময়মত এই পদক্ষেপটি নিলে মানব পরীক্ষা করা অনেক আগে হওয়া নিশ্চিত ও সহায়তা করতো। যেমনটি আমি আগেই বলেছি, আমরা নিশ্চিত নই যে এই ভ্যাকসিনটির আকাঙ্ক্ষার কার্যকারিতা থাকবে তবে অধ্যয়ন করার আগে আমরা কখনই তা জানতে পারি না। কমিটির পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করার সময় বৈজ্ঞানিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করা। আমি নিশ্চিত যে বিএমআরসি এবং গবেষণা কমিটি মানবিক পরীক্ষার তদারকি করবে এবং গবেষণা বন্ধ করবে, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন পরীক্ষার ক্ষেত্রে করেছিল, যদি কোনও গুরুতর জটিলতা দেখা দেয়।
আমরা জানি না যে বিএমআরসি মানবিক পরীক্ষার জন্য চীনা এবং ভারতীয় ভ্যাকসিনের জন্য একই উদ্বেগ উত্থাপন করতে কত সময় নিয়েছিল। হ্যাঁ, আমি খুব সতর্ক ও সজাগ থাকার জন্য বিএমআরসির সাথে সম্পূর্ণ একমত আছি, তবে যখন হাজার হাজার মানুষ ভুগছেন এবং মহামারীজনিত কারণে অনেকে মারা যাচ্ছেন সেই মুহূর্তে পাঁচ মাসের বিলম্ব বুঝতে এবং গ্রহণ করা সত্যিই কঠিন। সময় এখানে সারাংশ। কোভিডের কারণে জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে বাংলাদেশের হাতে আনেক বিকল্প নেই। ভ্যাকসিনগুলি প্রধান ভূমিকা পালন করবে। সুতরাং, যখন আমি দেখেছি যে কোনও বাংলাদেশি সংস্থা ভ্যাকসিন উত্পাদনের নতুন পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন উদ্ভাবনী পদ্ধতির সাথে এগিয়ে এসেছিল, তখন আমি আবার বাঙালি এবং বাংলাদেশি হতে পেরে গর্ববোধ করেছি। আমরা যখন এইরকম জটিল মূহুর্তে থাকি তখন নিখুঁত পরিপূর্ণতা ভালোর শত্রু হতে দেওয়া উচিত নয়। ঝুঁকি ছাড়া ভালো কিছু হয় না। আমি তাই ভালো ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছি। আপনাদের সমর্থন এবং দুর্দান্ত প্রচেষ্টার জন্য অনেক ধন্যবাদ বিএমআরসি। আরও দেরি না করে শীঘ্রই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে, আমি তাই আশাবাদী এবং গর্বিত।
আমি ঘোষণা করতে চাই আমার বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উন্নয়ন এবং উত্পাদন নিয়ে গ্লোব বায়োটেকের সাথে আমার স্বার্থের কোনও দ্বন্দ্ব নেই।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।