ইনসাইড থট

এখনো শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র চলছে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৭ জুলাই, ২০২১


Thumbnail

২০০৭ সালের ১৬ জুলাই। মাঝরাত থেকেই অঝর ধারায় বৃষ্টি। প্রকৃতি যেন কান্নায় কাতর। ১৫ জুলাই সন্ধ্যার পরই ধানমন্ডির সড়কগুলোয় ব্যারিকেড দেওয়া শুরু হয়। রাতেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। ভোররাতে বুটের আওয়াজে জেগে ওঠে ‘সুধা সদন’। বাড়ির মালিক পরমাণুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া অসুস্থ। এর মধ্যেই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করতে আসে যৌথ বাহিনী। শেখ হাসিনা ছিলেন ভয়হীন, স্বাভাবিক। গ্রেফতার প্রক্রিয়া শেষ করে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তাঁকে আদালতে নেওয়া হয়। সকাল ৮টারও আগে মহানগর হাকিম কামরুন্নাহারের আদালতে হাজির করা হয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে। ১৩ জুন ঢাকার গুলশান থানায় ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরীর করা একটি তথাকথিত চাঁদাবাজির মামলা দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে জাতীয় সংসদে হুইপদের জন্য নির্ধারিত একটি বাসায় রাখা হয়। সরকার ওই বাড়িটিকে সাবজেল ঘোষণা করে। এখানেই দীর্ঘ ১১ মাস কাটান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। ২০০৮ সালের ১১ জুন শেখ হাসিনা কারামুক্ত হন। গতকাল (শুক্রবার) তাঁর কারাবরণের ১৪ বছর পূর্তি হলো। ১৪ বছর পর ওই ঘটনার স্মৃতি সামনে এলো কিছু প্রশ্ন নিয়ে। কিছু প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি, কিছু জানি না। কেন সেদিন শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল? দুর্নীতির জন্য নাকি বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার জন্য? ওই সময়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যারা মামলা করেন তার দুজনই (আজম জে চৌধুরী এবং নূর আলী) পরে স্বীকার করেন চাঁদাবাজির কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তৎকালীন অনির্বাচিত সরকারের চাপে এ মামলা করা হয়েছিল। পরে সর্বোচ্চ আদালত এ মামলাগুলো খারিজ করে দেয়। শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাঁর চরম প্রতিপক্ষও তাঁকে দুর্নীতিবাজ বলতে পারেনি। সাধারণ মানুষও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সততা নিয়ে নিশ্চিত। তাহলে এটা বলতেই হয়, ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর গ্রেফতার স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া ছিল না। একটি রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের প্রয়াশ। এ চেষ্টা শুরু হয়েছিল ওয়ান-ইলেভেনের আগেই। ক্ষমতায় থাকতে বিএনপির মরিয়া চেষ্টার পরিণাম ছিল ওয়ান-ইলেভেন। ২০০১ সালের অক্টোবর নির্বাচনে বিপুল ভোটে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর শুরু হয় হাওয়া ভবন ও জঙ্গিবাদীদের যুগপৎ তাণ্ডব। একদিকে লুটপাট, অন্যদিকে বাংলা ভাইদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান। একদিকে দুর্নীতিবাজদের উল্লাসনৃত্য, অন্যদিকে সারা দেশে একযোগে বোমা বিস্ফোরণ, ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার। জনজীবন হয়ে ওঠে অস্থির। বিএনপি বুঝতে পারে জনগণের ভোটে তাদের বিজয় অসম্ভব। তাই ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের নীলনকশা তৈরি হয়। বিচারপতি কে এম হাসান যেন প্রধান বিচারপতি থেকে অবসরের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন তা নিশ্চিত করতে সংবিধান সংশোধন করা হয়। নির্বাচন কমিশনকে বানানো হয় ভাঁড়দের আড্ডাখানা। দেড় কোটি ভুয়া ভোটার তালিকাভুক্ত করা হয়। প্রশাসনে দলীয় অনুগত, দলবাজদের তিন স্তরে সাজানো হয়। নয়জনকে ডিঙিয়ে সেনাপ্রধান করা হয় জেনারেল মইন উ আহমেদকে। কিন্তু বেহুলার নিñিদ্র বাসরঘরে যেমন সাপ ঢুকেছিল তেমনি খালেদা জিয়ার সাজানো বাগান তছনছ হয়ে যায় ওয়ান-ইলেভেনের ঝড়ে। বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী ও সুশীলদের একটি বড় অংশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অপছন্দ করেন। এর প্রধান কারণ গণতন্ত্র থাকলে এদের কদর থাকে না। এজন্য এই সুশীলরা সব সময় অনির্বাচিত, অগণতান্ত্রিক এবং অবৈধ সরকার ক্ষমতা দখল করলে উল্লাসে ফেটে পড়েন। এ সময় তাদের কদরও বাড়ে। নানা পদে এরা অলঙ্কৃত হন। ২০০৬ সাল থেকেই সুশীলরা সুযোগ খুঁজতে থাকেন ক্ষমতা দখলের। ইয়াজ উদ্দিনের তামাশার নির্বাচন নিয়ে গোঁয়ার্তুমি সেই সুযোগ সামনে এনে দেয়। ওয়ান-ইলেভেন কেবল সুশীলদের পরিকল্পনা নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রভাবশালীরা এতে সায় দেয়। দেশের কিছু আমলা, সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তি নীলনকশা বাস্তবায়নে নিবেদিত হয়ে কাজ করেন। ওয়ান-ইলেভেনের মূল পরিকল্পনা ছিল সুশীল নিয়ন্ত্রিত একটি সরকার অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকবে। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে দেশে যে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয় তা এক-এগারোর যৌক্তিক পটভূমি তৈরি করে। তাই সেনাসমর্থিত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন গঠিত হয় তখন সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। সুশীল আমলা-বিদেশিরাও খুশি হয়। তারা নিশ্চিত হয়েছিল অন্তত কয়েক বছর কেউ নির্বাচন নিয়ে কথা বলবে না। এ সময়ের মধ্যে তারা দেশকে রাজনীতিশূন্য করবে।

বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় ‘বিরাজনীতিকরণ’ বহুল চর্চিত একটি বিষয়। উচ্চাভিলাষী কিছু মহল, পদলেহী কিছু বুদ্ধিজীবী ক্ষমতা দখলের জন্য বিরাজনীতিকরণ ফরমুলা ব্যবহার করে। আর এ ফরমুলা বাস্তবায়নের সহজতম উপায়টি হলো রাজনীতিবিদদের চরিত্রহনন। ওয়ান-ইলেভেনের আগেই সে প্রক্রিয়ার নীরব বাস্তবায়ন শুরু হয়। ওয়ান-ইলেভেনের পর এ প্রক্রিয়াই যেন মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায়। রাজনীতিবিদদের চরিত্রহনন শুরু হয়। সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো রাজনীতিবিদদের নিয়ে চানাচুর মুখরোচক চটুল খবর প্রকাশ করতে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় মারণাস্ত্রটি প্রয়োগ করা হয় ২০০৭ সালের ১১ জুন। ওই দিন সে সময় দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী বাংলা দৈনিকের সম্পাদক স্বনামে প্রথম পৃষ্ঠায় এক মন্তব্য প্রতিবেদন লেখেন। ‘দুই নেত্রীকে সরে দাঁড়াতে হবে’ শিরোনামে ওই মন্তব্য প্রতিবেদনে লেখা হয়- ‘আমরাও একইভাবে বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে বলতে পারি, গত ১৬ বছরে আপনাদের দুজনের ক্ষমতা ও প্রতিহিংসার রাজনীতির অনেক অত্যাচার দেশবাসী নীরবে সহ্য করতে বাধ্য হয়েছে। দয়া করে আপনারা রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান।’ তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এ দৈনিকটির মন্তব্য প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এজেন্ডা পরিষ্কার হয়ে যায়। শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া সে সময় প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতা। তাঁদের বিপুল জনসমর্থন। কাজেই তাঁদের সরিয়ে দিতে পারলেই নির্বাচন গণতন্ত্র ইত্যাদি থেকে আপাতত জনগণকে দূরে রাখা যায়। বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে অবশ্য ড. ফখরুদ্দীন আহমদের সরকারের খুব একটা সমস্যা হয়নি। তিনি দেশের চেয়ে দল, দলের চেয়ে পরিবার এবং পরিবারের চেয়ে তাঁর দুই সন্তানকে ভালোবাসেন। তাঁর দুই সন্তানের সীমাহীন দুর্নীতিকে প্রবল মাতৃস্নেহে ‘দুষ্টুমি’ বলেই মনে করেন। তাই তাঁর দুই ছেলের বিনিময়ে বেগম জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব শুধু নয় রাজনীতি ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু সুশীল নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরাজনীতিকরণ এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাই বাংলাদেশে প্রথম রাজনীতিবিদ যিনি এক-এগারো সরকারের দুরভিসন্ধি বুঝতে পারেন। তিনিই প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অযথা কালক্ষেপণ না করে দ্রুত নির্বাচন দিতে বলেন। এ সময় ঘরে-বাইরে তুমুল প্রতিরোধের মুখে পড়েন শেখ হাসিনা। দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতা শেখ হাসিনার দ্রুত নির্বাচনের দাবিকে অযৌক্তিক বলে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন। কিন্তু ১৯৮১ সাল থেকে শেখ হাসিনার রাজনীতি কৌশলে অকপটে স্পষ্ট কথা বলার অভ্যাসটা ছিল। একসময় যাকে মনে করা হতো তাঁর রাজনীতির জন্য নেতিবাচক, পরে সেই স্পষ্টবাদিতাই তাঁর রাজনীতির সবচেয়ে বড় শক্তিতে পরিণত হয়। ১৯৮১ সাল থেকেই দলে এবং দলের বাইরে প্রতিকূল স্রোতে সাঁতার কেটেই তিনি আজকের জায়গায় এসেছেন। তাই প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেই শেখ হাসিনা গণতন্ত্র এবং নির্বাচনের দাবি উচ্চারণ করতে থাকেন। রাজনীতি থেকে শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়ার প্রথম উদ্যোগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেয় ২০০৭-এর মার্চে। সে সময় শেখ হাসিনা তাঁর ছেলে ও মেয়েকে দেখতে যুক্তরাষ্ট্র যান। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁর দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এটি দেশে-বিদেশে ধিকৃত এবং সমালোচিত হয়। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কাছে পরাজিত হয় ড. ফখরুদ্দীনের সরকার। শেখ হাসিনা লড়াই করেই দেশে ফেরেন। তখনই বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার লোকজন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে উদ্ভট মামলা করার চেষ্টা চালান। আমি ১৬ জুলাইকে দেখি গণতন্ত্র, নির্বাচনের সঙ্গে বিরাজনীতিকরণের প্রত্যক্ষ যুদ্ধ হিসেবে। ১৬ জুলাই স্পষ্ট হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলে মাইনাস টু নয়, মাইনাস ওয়ান ফরমুলা বাস্তবায়ন করতে চায়। ১৬ জুলাই পরিষ্কার হয়ে যায় শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে পারলেই অনির্বাচিত সরকার অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্ষমতায় থাকতে পারবে। যা খুশি তা করতে পারবে। শেখ হাসিনাকে যদি গ্রেফতার করার পর রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া যেত তাহলে হয়তো বাংলাদেশে বহুদিন আর গণতন্ত্র, নির্বাচন হতো না। রাজনীতিবিদরা থাকতেন নক্ষত্রের দূরত্বে। কিন্তু ১১ মাসের যুদ্ধে শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত জয়ী হন। তিনি মুক্ত হন। ২০০৮-এর নির্বাচনে বিপুলভাবে বিজয়ী হয় তাঁর নেতৃত্বে মহাজোট। টানা ১২ বছরের বেশি সময় দেশ পরিচালনা করছেন শেখ হাসিনা।

কিন্তু ১৪ বছর পর আজকের পরিস্থিতি যদি আমরা নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে কি আমরা বলতে পারব বিরাজনীতিকরণ নেই? ওয়ান-ইলেভেনের লক্ষ্য অর্জনের নিবিড় চেষ্টা এখনো চলছে না? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কি রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে, তাঁর বিশ্বস্ত ও কাজের মানুষদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার নিঃশব্দ প্রয়াশ চলছে না? ১৬ জুলাই শেখ হাসিনা গ্রেফতারের পর যাঁরা তাঁর জন্য তাঁর পক্ষে বিভিন্নভাবে কাজ করেন তাঁরা এখন কোথায়? জিল্লুর রহমান, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাহারা খাতুন, এইচ টি ইমাম নেই। যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদেরও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার এক প্রাণান্ত চেষ্টা আমরা দেখি। বেগম মতিয়া চৌধুরী না আছেন সরকারে না দলে। ড. গওহর রিজভী যেন থেকেও নেই। সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী কোথাও নেই। তাহলে শেখ হাসিনার পাশে কারা? এরা কি প্রধানমন্ত্রীকে রাজনীতিমুক্ত করার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন?

অনুজপ্রতিম শাবান মাহমুদ এখন দিল্লিতে। বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেস মিনিস্টার। ওয়ান-ইলেভেনে শাবান দ্বারে দ্বারে ঘুরত। সবার কাছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর পক্ষে যুক্তিপূর্ণ লেখার অনুরোধ করত। সে সময় শেখ হাসিনার পক্ষের কলমযোদ্ধারা আজ কোথায়? তাদের খবর কি কেউ রাখে? এখন প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে ঘুরপাক খাওয়া এসব সংবাদকর্মী কি শেখ হাসিনার পক্ষে এক লাইন সে সময় লিখেছিলেন? ভবিষ্যতে লেখার যোগ্যতা এবং মানসিকতা কি তাদের আছে?

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর গ্রেফতারের সময় তাঁর প্রধান শক্তি ছিল তৃণমূল। সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগের মতো তরুণ প্রাণে ভরপুর সহযোগী সংগঠন। এরাই সংস্কারপন্থিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। সংস্কারপন্থিদের এক উঠতি নেতাকে ধোলাই দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ এক অভিন্ন সত্তা। এ তৃণমূলের জন্যই আওয়ামী লীগ সেই কঠিন সময়ে বিভক্ত হয়নি। সংস্কারপন্থিরা পিছু হটতে বাধ্য হন। এখন আওয়ামী লীগের তৃণমূল কোথায়? হাইব্রিড আর অনুপ্রবেশকারীরাই যেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের হর্তাকর্তা। ত্যাগী-পরীক্ষিত কর্মীরা যেন দুর্ভাগা। তাদের খবর কে নেয়? আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যতবার বলছেন দলের ভিতর সুবিধাবাদী, অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে হবে ততবার যেন এক অশুভ শক্তি তাদের শক্তিশালী করতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের বদলে এখন এমপি লীগের রাজত্ব। সেদিন দেখলাম আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এক এমপিকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছেন। ওই এমপি দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় পকেট কমিটি করেছেন। মির্জা আজম সাহসী, দলের জন্য অন্তঃপ্রাণ, তাই তিনি চিঠি দিয়ে ওইসব কমিটি বিলুপ্ত করেছেন। ওই এমপি জীবনেও আওয়ামী লীগ করেননি। ছাত্রজীবনে জাসদ করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনে পুলিশের সর্বোচ্চ পদে ছিলেন। ভাগ্যবান ব্যক্তি। দলের আদর্শের প্রতি এতটুকু অনুগত না থেকে তিনি এমপি হয়েছেন। এখন বিকল্প আওয়ামী লীগ গড়েছেন তাঁর নির্বাচনী এলাকায়। জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাছিমের মতো পোড় খাওয়া, নির্যাতিত-নিপীড়িতরা সংসদে নেই। গার্মেন্ট ব্যবসায়ী, হঠাৎ বনে যাওয়া বড়লোকেরা সংসদে বসেছেন। সংসদে বসে তাঁরা তাঁদের নিত্যনতুন ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছেন। তাতেও আমি শঙ্কিত হতাম না। কিন্তু এ নব্য উড়ে এসে জুড়ে বসা আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হওয়া ব্যক্তিরাই এখন প্রকাশ্যে বিকল্প আওয়ামী লীগ বানাচ্ছেন। এরা কি কোনো দুঃসময়ে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াবেন? ছাত্রলীগ, যুবলীগের চরিত্রহনন করতে করতে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে এ সংগঠন দুটোর কর্মীরা এখন কিছু করতেই ভয় পান। ছাত্রলীগের কর্মীরা যখন ধান কাটেন তখন তা গুরুত্বপূর্ণ খবর হয় না। ছাত্রলীগের কর্মীরা যখন ত্রাণ দেন তখন কেউ বলে না ‘খুব ভালো কাজ’। কিন্তু একদা ছাত্রলীগ করতেন কিংবা ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে কেউ একটা অপকর্ম করলেই তাকে ছাত্রলীগের নেতা বানিয়ে দেওয়া হয়। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তার অপকর্মের ফিরিস্তি ছড়িয়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আর যুবলীগকে তো ‘ক্যাসিনো লীগ’-এর তকমা দিয়ে জাদুঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনে শেখ হাসিনার পক্ষে যে ব্যক্তিরা কাজ করেন তাঁদের বড় অংশ আজ ক্ষমতা কেন্দ্র থেকে ছিটকে পড়েছেন। আর তৃণমূল আজ বিভক্ত। তাহলে শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়াবে কে? এই আমলারা? ভাড়াটে এমপিরা? নাকি এরাই ঘরের শত্রু বিভীষণ। নিশ্চিত করে বলছি, এঁরা একজনও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর জন্য দাঁড়াবেন না। বরং এঁদের কেউ কেউ হয়তো আজম জে চৌধুরী কিংবা নূর আলীর মতো ভয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবেন। অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক। ওয়ান-ইলেভেনে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর নেতৃত্বে শেখ হাসিনার চিকিৎসক টিমের অন্যতম সদস্য ছিলেন। প্রায়ই তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি সব সময় একটি কথা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আমাদের আর কোনো আস্থার জায়গা নেই। তাঁকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চলছে কি না আমার সন্দেহ হয়।’ যখন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ধসে পড়ে। যখন দেখি সমন্বয়হীন উদ্ভট লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি হয়। যখন দেখি হতাশ তৃণমূলের কর্মীটি উদ্বিগ্ন। ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পর হাত হারানো কর্মীটি আক্ষেপে বলেন, ‘এবার কিছু হলে আর বাঁচতে পারব না’। যখন হাইব্রিড এমপি এলাকায় গিয়ে জাতির পিতার নামটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেন না। তখন মনে হয় শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার চক্রান্তটা তাহলে এখনো চলছে। সেই চক্রান্তের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে সর্বত্র। ক্রমে মাইনাস ফরমুলার উত্তরাধিকারীরাই ক্ষমতাবান হয়ে উঠছে। আর শেখ হাসিনার পক্ষের শক্তিগুলোকে নিঃশেষিত করার কাজটা যেন চলছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।
ইমেইল : poriprekkhit@yahoo.com
সৌজন্যে : বাংলাদেশ প্রতিদিন



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন