নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০১ এএম, ১৭ জুলাই, ২০২১
আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য, কোরবানির পশু পরিবহন ও কেনা-বেচা, পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামে যাওয়া, ঈদের জামাত, কোরবানিসহ অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত সব ধরনের বিধিনিষেধ শিথিল করে। আবার ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগষ্ট রাত ১২ পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর হবে। এবারের কঠোর বিধিনিষেধের সময় সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধে কলকারখানা বন্ধ রাখা হলে রপ্তানি খাতে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি হবে বলে পোষাক ও বস্ত্র খাতের মালিকরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে গত বুধবার পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাঁচটি ব্যবসায়িক সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বিটিটিএলএমইএ ও বিজিএপিএমই’র সভাপতিগণ গুলশানে বিজিএমইএ ভবনে এক সভায় মিলিত হন। সভায় এফবিসিসিআই’র সভাপতিও উপস্থিত ছিলেন। সভায় সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাঁচটি ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতারা চিঠিটি প্রদান করেন। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে তাঁরা ২৩ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে দেশের বৃহত্তর রপ্তানি আয়ের পোশাক ও বস্ত্র কারখানাসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাগুলো খোলা রাখার দাবি জানান।
দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের কর্মস্থলে ধরে রাখা যাবে না। তাঁরা ছুটে যাবেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে ব্যাপকহারে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। শ্রমিকরা ওই সব অঞ্চল থেকে কর্মস্থলে ফিরে এলে করোনা সংক্রমণের মাত্রা আরও বেড়ে যাওযার আশঙ্কা থাকবে। এছাড়া বন্ধের পর কারখানা খুললে জুলাই মাসের বেতন পরিশোধে করার প্রসঙ্গ আসবে। তখন বেতন পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যাবে।
গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এফবিসিসিআই’র সভাপতি ঈদের পর দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধে সব ধরনের শিল্পকারখানা চালু রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রপ্তানি খাতের কারখানা বন্ধ থাকলে নির্ধারিত সময়ে পণ্য রফতানি করা সম্ভব হবে না। এতে রপ্তানির ক্রয়াদেশ বাতিলের আশঙ্কা তৈরি হবে। ঈদের ছুটিসহ প্রায় ১৮-২০ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে গ্রীষ্ম ও বড়দিন এবং আগামী শীতের বস্ত্র খাতের ক্রয়াদেশ হাতছাড়া হতে পারে। এক মাসের রফতানি শিডিউল বিঘ্নিত হলে পরবর্তী ছয় মাসের রফতানি শিডিউলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কঠোর বিধিনিষেধে শিল্পকারখানা চালু চান। আপনি কি তাঁর সঙ্গে একমত? এই বিষয়ে প্রথম আলোর অনলাইন ভোটে দেখা যাচ্ছে যে, ৭৪ শতাংশ তাঁর সঙ্গে একমত নন, ২৪ শতাংশ একমত এবং ১ শতাংশ মন্তব্য নেই।
করোনার উর্ধ¦মুখী সংক্রমণ সামাল দেওয়ার লক্ষ্যে এপ্রিল মাসে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও রপ্তানিমুখী পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা চালু রাখে। গত ২৮ জুন শুরু হওয়া সীমিত ও পরে ১ জুলাই শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধে পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা চালু রাখা হয়।
গত মে মাসে রমজানের ঈদে ছুটি সংক্ষিপ্ত করা এবং সকলকে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করার নির্দেশনা দেয়া হলেও তা প্রতিপালিত হয়নি। বিশেষ করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারিদেরকে তাদের চাহিদা মতো ছুটি প্রদান করতে তারা কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে। এছাড়াও রমজানের ঈদে গণপরিবহন- বাস, রেল, নৌযান বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে মানুষ গ্রামের বাড়িতে ছুটে যায় এবং সারা দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে করোনা আক্রান্তের হার ও মৃত্যু প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। বর্তমান এবং কোরবানির ঈদ পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে অবশ্যই জনগণের জীবনরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেই বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে কঠোর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন খাতে ২৩টি আর্থিক প্যাকেজে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৩শ` ৩ কোটি প্রণোদনা ঘোষণা করে। প্যাকেজ ঘোষণার পর ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মোট বরাদ্দের প্রায় ৮৩ শতাংশ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজের প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লক্ষ।
রপ্তানিমুখী পোশাক খাতে শুধুমাত্র শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য মালিকদের দুই শতাংশ সুদে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। যেসব কারখানা তাদের উৎপাদনের ৮০ শতাংশ রপ্তাননি করে তারাই এই প্রণোদনার টাকা পাবেন। প্রায় ১৮শ` কারখানা মালিক এ ঋণ সুবিধা নিয়ে শ্রমিকদের বেতন দিয়েছেন বলে জানা যায়। ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে জুন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে।
গণপরিবহন, শপিংমল, দোকানপাঠ, পশুর হাট কোথায়ও স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দুরত্ব মানা হচ্ছে না। সড়ক, নৌ ও রেলপথে ঘরমুখো যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব মেনে চলার শর্তে এবং ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ায় ঈদকে সামনে রেখে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে গণপরিবহন চালানোর অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা মানছে না গণপরিবহনগুলো। অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার কথা থাকলেও সব আসনে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। দাঁড়িয়েও যাচ্ছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ার স্থলে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে এবং যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে তিনগুণ।
বর্ধিত ভাড়া আদায় এবং স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মেনে গণপরিবহন, শপিংমল, দোকানপাঠ, পশুর হাট পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে সচেতনতা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এই বিষয়ে গণপরিবহন, শপিংমল, দোকানপাঠ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি এফবিসিসিআইও নিরব।
এফবিসিসিআই এবং পোষাক ও বস্ত্র খাতের পাঁচটি ব্যবসায়িক সংগঠনের সভাপতিগণসহ অন্যান্য নেতারা ঈদ পরবর্তী করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি অবশ্যই অনুধাবন করেন। এরপরও তাঁরা আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিসহ বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে ঈদের পর দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধে দেশের বৃহত্তর রপ্তানি আয়ের পোশাক ও বস্ত্র কারখানাসহ সব ধরনের শিল্পকারখানা চালু রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দেশের পোশাক ও বস্ত্র খাতসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানার অগ্রগতি এবং বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সাফল্যের দাবিদার শুধুমাত্র শিল্পকারখানার মালিকগণই নন। এখানে শ্রমিকদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা। তিনটি পক্ষের সম্মিলিত প্রয়াসই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে সংক্রমণের গতি আরও বেড়ে যাবে। তাদের আশঙ্কা আগষ্টের প্রথমার্ধ্বে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমান সংখ্যার দ্বিগুনেরও বেশি হবে। যা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক ঘটনা হবে।
ঈদের পর দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে পোষাক, বস্ত্রসহ রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা চালু থাকবে কি না, সেই বিষয়ে আজ শনিবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হওয়ার কথা। সেই বৈঠকে ঈদ পরবর্তী ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কোনো ধরনের শিথিলতা প্রদর্শন জনস্বার্থে কাম্য নয়। তবে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদন কারখানা এবং কোরবানির ঈদে সংগৃহীত চামড়া সংরক্ষণের সাথে জড়িত ট্যানারি কঠোর বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখার বিষয়ে বিবেচনা করা যেতে পারে।
এফবিসিসিআই এবং পোষাক ও বস্ত্র খাতের পাঁচটি ব্যবসায়িক সংগঠনের সভাপতিগণ রপ্তানি বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরেছেন। এছাড়াও তাদের পক্ষে জুলাই মাসের বেতন পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যাবে। আমাদের শ্রমিকেরা অত্যন্ত কর্মঠ। তাদের অনুপ্রাণিত করে, সামান্য আর্থিক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলে তাঁরা স্বল্পতম সময়ে ১০-১২ দিনের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন মালিক শ্রমিক একের অন্যের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধ। মালিকগণ সামাজিক দ্বায়বদ্ধতার পাশাপাশি ব্যবসা করেন। ব্যবসায় যখন লাভ লোকসান হয় তখন তিনি তাঁরাই ভোগ করেন। তাই ছুটিকালিন সময়ের বেতন দেওয়া তাদের উপরই বর্তায়।
প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান
সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং
সাধারণ সম্পাদক, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর