নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০০ পিএম, ২৬ জুলাই, ২০২১
একবিংশ শতাব্দিতে উন্নয়নের ধারণাগুলো এখন আর কেবল অবকাঠামো আর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে আটকে নেই। বরং ইতিবাচক পরিবর্তনগুলোকে আরও টেকসই তথা ‘সাসটেইনেবল’ করার প্রশ্নটিই এখন প্রধান ভাবনার জায়গায় চলে এসেছে। আর এই টেকসই উন্নয়নে রাষ্ট্রের পরিপূরক হিসেবে ব্যক্তি খাত ও অ-সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাও এখন আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কারণে উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রধানতম চালিকা শক্তি হিসেবে ব্যাংকিং সেক্টর বা আর্থিক সেবা খাত সামনে চলে এসেছে। আর্থিক সেবা খাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে এক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করার দায়িত্ব প্রতিটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপরই বর্তায়। ফলে আগের প্রচলিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের ধারণার জায়গায় চলে এসেছে উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং তথা ‘ডেভেলপমেন্টাল সেন্ট্রাল ব্যাংকিং’।
সকলের জন্য সমতার ভিত্তিতে উন্নয়নের সুফল নিশ্চিত করতে আর্থিক সেবা খাতের কার্যকর ভূমিকার কথা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশি বেশি করে বলছেন। ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টিন ল্যাগার্ড এ প্রসঙ্গে বলেছেন- “আর্থিক খাতকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যাতে এর গতিপথের সঙ্গে বৃহত্তর সামাজিক মূল্যবোধের একটি সাজুয্য রক্ষা করা যায়। এর মাধ্যমে যেনো গ্রাহক, কর্মী, শেয়ারহোল্ডার, স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে আগামী প্রজন্ম পর্যন্ত সকল অংশীজনের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়।” আজ ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের এসব কথার প্রাসঙ্গিকতা টের পাওয়া সহজ। এ সুযোগে স্মরণ করা যেতে পারে, বাংলাদেশে কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব বিষয় নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিলো এক দশকেরও বেশি সময় আগে, সেই ২০০৯-১০ থেকেই। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যথাযথভাবেই ব্যাপকভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। মূল লক্ষ্য ছিলো ‘রিয়েল ইকোনমি’তে অর্থায়ন। ফলে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিলো কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে। একই ধারায় তরুণ প্রজন্ম ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সরবরাহ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক সেবাদানকারীদের সবুজ অর্থায়নে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই এক্ষেত্রে উদাহরণ তৈরি করে গেছে একের পর এক। আর দ্রুত এবং কম খরচে নির্ভরযোগ্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের দিন বদলের শুরু ২০০৯ সাল থেকে। ‘দিন বদলের সনদ’ শিরোনামে নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি উন্নত দেশ, সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, একটি ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠীর রূপান্তরিত উৎপাদন ব্যবস্থার কথা ঘোষণা দেয়। যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করা সম্ভব। এমন সমাজ গঠনের প্রেরণা ও স্বপ্ন দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের নীতি-কৌশল বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যারা কাজ করেছেন, তাদের অন্যতম বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. আতিউর রহমান। সে সময় থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি উন্নয়নমূলক ও মানবিক ব্যাকিং ধারণা প্রবর্তিত হয়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে আর্থিক সেবায় অন্তর্ভুক্ত করতে উন্নয়নের বাস্তবভিত্তিক দুরন্ত এবং দুর্দান্ত অভিযান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন সে সময়ের গভর্নর। নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষত রিকশাওয়ালা, মহিলা পোশাক শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে তিনিই প্রথম বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং এবং এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ব্যাংকিং সেক্টরে- বিকাশ, ক্রেডিট কার্ড, এটিএম বুথ, অনলাইন ব্যাংকিং ইত্যাদির সফল রূপান্তর ঘটে। মহামারী করোনাকালে কেনাকাটা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। তৎকালে প্রবর্তিত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বর্তমান এপ্রিল ২০২১ মাস পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী গ্রাহক সংখ্যা ৯ কোটি ৬৪ লাখের অধিক। দৈনিক গড়ে লেনদেন প্রায় ২,১১৫ কোটি টাকা। একইভাবে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় খোলা মোট হিসাব সংখ্যা ১,১৪,৫৩, ১৩৯টি, যার মধ্যে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে খোলা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা প্রায় ৩.৬ গুণ বেশি। বিভিন্ন ব্যাংক সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দশ লাখেরও বেশি মানুষকে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে (ইএফটি) ভাতা প্রদান করছে।
গ্রিন ব্যাংকিং, কৃষি, এসএমই ও পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগে অর্থায়ন বেড়েছে। গত দশক জুড়েই বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষক-বান্ধব নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। কৃষকের ১০ টাকার অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় ৩৭ শতাংশ। এসব হিসেবে ৩,৬৭৫ কোটি টাকা জমা পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় গ্রীন ব্যাংকিং নীতিমালা প্রণয়ন ও বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘সাসটেইন্যাবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট’ ও সকল ব্যাংকে ‘গ্রীন ব্যাংকিং ইউনিট’ চালু রয়েছে। পরিবেশবান্ধব পণ্য-উদ্যোগের জন্য ২০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিলকে ৪০০ কোটিতে উন্নীত করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপনে এডিবি’র অর্থায়নে ৪০০ কোটি টাকার তহবিল চালু হয়েছে। রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল, চামড়া ও পাট শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করার জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলারের ‘গ্রীন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড’ গঠন করা হয়। ২০১৯ সালে সকল রপ্তানিমুখী শিল্পকে এই ফান্ডের আওতায় আনা হয়েছে। বলা যায় সবুজ অর্থায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক গোটা বিশ্বের জন্য অগ্রপথিক বা পাইওনিয়ার হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
গত এক দশক ধরেই বাংলাদেশের ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক সেবাদাতাদের মানবিক ব্যাংকিংয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে। সিএসআর নামে ব্যাংকিং খাতের অর্জিত মুনাফার একটি অংশ জনকল্যাণে ব্যয় করার নিয়ম চালু হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর স্কলারশীপ নিয়ে গ্রাম-গঞ্জের হাজার হাজার সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সাবেক গভর্নর সূচনা করেন স্কুল ব্যাংকিং। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭,৮৫,৫১৩টি এবং সঞ্চয়ের পরিমাণ ১,৯৮৬ কোটি টাকা। নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানকে উৎসাহিত করতে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। কুটির শিল্প, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি এসএমই ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। এই খাতের বিকাশ, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসএমই বিভাগ চালু এবং যুগোপযোগী এসএমই ঋণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। জুন ২০১১ থেকে জুন ২০২০ পর্যন্ত ১০,৯৬,৯৮৩ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এই ঋণের মধ্যে নারী উদ্যোক্তাদের ৪৫,৮৩৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
আর্থিক সেবা খাতে ডিজিটাইজেশন এবং প্রান্তজনমুখী নীতির ফলে একদিকে যেমন যুগান্তকারী ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে অন্যদিকে নতুন নতুন ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। সাইবার আক্রমণ এসব নতুন ঝুঁকিগুলোর মধ্যে অন্যতম। আন্তর্জাতিক সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ম্যাকাফির জরিপ বলছে ২০২০ সালে বৈশ্বিক জিডিপির ১ শতাংশ (১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) হারিয়েছে সাইবার আক্রমণের কারণে। কাজেই সাইবার আক্রমণ থেকে আর্থিক সেবা খাতকে নিরাপদ রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া কর্তব্য। তবে অনলাইন ব্যাংকিং এবং ডিজিটাইজেশনের পথ থেকে সরে আসা কিন্তু এ সমস্যার সমাধান নয়। গবেষকদের মতে, বাংলাদেশকে আরও সচেতন হতে হবে। যাতে আর্থিক সেবা খাতের ডিজিটাইজেশন বাঁধাগ্রস্ত না করেই পুরো ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ করে তোলা যায়। বর্তমান উন্নত বিশ্ব তাই করছে। সাইবার আক্রমণ মোকাবেলার জন্য ২০২০ সালে ১৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। কোথাও ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের গতি কমানো হয়নি। আশার কথা, বাংলাদেশ ব্যাংকও সে পথেই এগিয়েছে। উত্তর কোরিয়া সমর্থিত হ্যাকার গ্রুপের সাইবার আক্রমণের শিকার হওয়ার পরও, বাংলাদেশ ব্যাংক ও দেশের অন্যান্য কর্তৃপক্ষগুলো ডিজিটাল লেনদেনকে নিরুৎসাহিত করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বরং নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ এবং ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সাইবার অপরাধীদের অর্থ সরানো থামাতে মিলেমিশে কাজ করেছে। তাদের সুবিবেচনাভিত্তিক পদক্ষেপের কারণে হ্যাকাররা শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি সফল হতে পারেনি (হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাচার হওয়া টাকার একাংশ ফিরিয়ে আনা গেছে)। হারানো টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য এখন একটি আন্তর্জাতিক মামলা চলছে। তবে দুঃখের বিষয়, দেশের ভেতরেই কিছু ব্যক্তি বুঝে বা না-বুঝে এই সাইবার আক্রমণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে তথা পুরো আর্থিক খাতের ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়াকে অযথা দোষারোপ করে যাচ্ছেন। এতে করে একদিকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চলে যাওয়া টাকা পুনরুদ্ধারে করা মামলাটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনোবল ভেঙ্গে যাওয়ার শঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।
পরিকল্পিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৫ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫শ কোটি মার্কিন ডলার। বেড়েছে মাথাপিছু আয়ও। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিলো ৯২৮ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ২,২২৭ ডলার। মানুষের প্রকৃত আয়ও বেড়েছে। সর্বশেষ ২০১৯-২০ করোনা মহামারীর মধ্যেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.২৪ শতাংশ। সেই বিচারে পৃথিবীর তিনটি দ্রুততম প্রবৃদ্ধির দেশের একটির নাম বাংলাদেশ। মিথ্যা ভিত্তিহীন গুজব, নানান ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মোকাবেলা করেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ এবং দেশের ব্যাংকিং খাত। নির্দ্ধিধায় বলা যায়, আর্থিক অন্তর্ভূক্তি নীতি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনেই শুধু নয়, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করায় বড় অবদান রেখে চলেছে। মাত্র এক দশক সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রভাব ফেলেছে আর্থিক অন্তর্ভূক্তি। করোনা মহামারিকালে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রধানতম অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বহন করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমনটি করা সম্ভব হচ্ছে বড় আকারের রিজার্ভের কারণেই।
লেখক ও গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।