নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৩৪ পিএম, ০৩ নভেম্বর, ২০১৭
যুথবদ্ধ মানব সমাজ সভ্যতার শুরু থেকেই সামাজিক জীবন যাপনে অভ্যস্থ ছিল। আমরা কেউই কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। একে অপরের সহযোগীতায় মানুষ দাঁড়িয়েছে সেই আদিম কাল থেকেই।
একটা খবর আমাকে ভীষণ ভাবে ঝাঁকুনি দিয়েছে। ফরিদপুরে একজন যুবক গনপিটুনিতে নিহত হলে, তাঁর জানাজা পড়তে ও দাফনে এলাকাবাসী বাঁধা দেয়। নিহতের বাবা এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, জানাজা আর দাফন যেহেতু করতে দিবা না তোমরা তাইলে ওর লাশ নদীতে ফেলে দাও...
ঘটনাটি এই পর্যন্ত হলে ঠিক ছিলো, কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো অতি উৎসাহী একদল তরুণ যুবা নিহতের লাশ সত্যিই নদীতে ফেলে দেয়। যথারীতি ঘটনার শেষে পুলিশের আগমন! তবে এখানে পুলিশ মানবিকতা ও মহানুভতার পরিচয় দিয়েছেন, তারা লাশ নদী থেকে তুলে এনে জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করেছেন।
তিনটি আদিবাসী পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে গত ছয় মাস যাবত। সমাজচ্যুত এই তিনটি পরিবারের সঙ্গে গ্রামের কেউ কথা বললে তাকে দশ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। আর হ্যাঁ, সঙ্গে দশখানা (একটাও কম নয়) জুতার পিটুনি। তাদের অপরাধ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে এই তিনটি দুষ্টু পরিবার ভোট দেয়নি। ঘটনাস্থলঃ তারান ইউনিয়ন, তাড়াস উপজেলা, জেলাঃ সিরাজগঞ্জ। স্থানীয় পর্যায়ে দেশের আনাচে কানাচে এই ধরনের অনেক অমানবিক কর্মকাণ্ড হয়তো প্রতিনিয়তই ঘটছে। কিন্তু এই ঘটনার শিকার পরিবারের দাবি এই চেয়ারম্যানের দৃষ্টি নাকি আগে থেকেই ছিলো তাঁদের সম্মিলিত পুকুরটির ওপর। পরিবারগুলোর দাবি এই পুকুরের আয় দিয়ে আদিবাসীদের জন্য একটি মন্দির পরিচালনা করা হয়। দুঃখের বিষয় এই বিষয়ে স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিছুই জানেন না।
খুলনায় শিশু রাকিব পেটের দায়ে একটি মটর গ্যারেজে কাজ করতো। একদিন ভরদুপুরে এই রাকিবকে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো, কারণ তার পেট ফুলে উঠেছে অস্বাভাবিক ভাবে! কারন ওর গ্যারেজের মালিক তার পায়ুপথে গাড়ির চাকায় হাওয়া দেওয়ার যন্ত্রটি চেপে ধরেছিল। রাকিব নাকি কেঁদে কেঁদে বলছিলো আমি মরে যাবো তো... কে শুনে কার কথা দুই পয়সার কামলা একটু এক্সপেরিমেন্ট তো করাই যায়, তাই না? মারা গেলো সেই ছেলেটি। ফুঁসে উঠলো খুলনা, ধিক্কার জানালো সারাদেশ। দ্রুত বিচারে দোষীদের শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে মূল অপরাধীর শাস্তি কমে হলো যাবজ্জীবন, কারণ সে তো তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল এবং হাসপাতালেও নিয়ে গিয়েছিল! আমি না বিচার আচার খুব একটা বুঝি না...
আমরা কি তবে আমদের মানবীয় মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছি? হাজার বছরের সামাজিক মানুষের এ কেমন বিপর্যয়? আমরা কেউ কি ভেবে দেখেছি, আমরা কোন পথে ধাবিত হচ্ছি? কথায় আছে, আগুন দেবালয় চেনে না। দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে, আপনি আমি রক্ষা পাবো? সেইফহোম, ভিভিআইপি প্রটোকল বাঁচাতে পারবে আমাদের? আমি আমার জীবনের অর্ধেকের (গড় আয়ুষ্কাল অনুযায়ী) বেশী সময় পার করে ফেলেছি। চল্লিশের ঘরে প্রবেশ করবো শীঘ্রই। ঘন কালো চুলে রূপোলী আভা উঁকি দিচ্ছে। কিছু বলতে চাই, এতে যদি আপনার আমার একবিন্দু সচেতনতা বাড়ে এতেই আমি সার্থক।
কিছু বিষয় একটু ভেবে দেখা যাক...
যৌথ পরিবারের বিলোপ ও একক পরিবারের উত্থানঃ এটা আমাদের ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য করেছে, বিশেষ করে পরিবারের নবীন সদস্যদের জন্য। ব্যাস্ত আমরা বাবা মায়েরা দিনের সিংহ ভাগ অফিস ও ব্যবস্যা নিয়েই কাটিয়ে দিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারি ঠিকমতো? যৌথ পরিবারে দাদা, দাদী, চাচা, চাচী বা বড় ভাই বোনেরা কিন্তু পারস্পরিক যহযোগীতায় এই অভাব বুঝতে পারতো না।
আলগা সামাজিক বন্ধনঃ পাড়ায় যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা বা সিগারেট ফোঁকা ছিল এক কথায় অসম্ভব। কারন মুরুব্বীরা সেটা মেনে নিতেন না, কেউ চাচা, কেউ বা মামা, কেউ বা বাবা বা বড় ভাইয়ের বন্ধু কারো না কারোর চোখে পড়ার ভয় ছিল। আগে মুরুব্বীদের দেখলে ছেলেরা অন্যপাশে সরে দাঁড়াত এমন কি সালামও দিতো। এখন পাড়ায় মুরুব্বীদের দেখি মাথা নত করে হাঁটতে, পাছে কারো বেয়াদবি চোখে পড়ে! অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ইদানীং কালের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী আমরাই।
দ্রুত নগরায়ন ও অবৈধ প্রতিপত্তিঃ ক্রমবর্ধমান নগরায়ন আমাদের ব্যস্থতা ও আর্থিক সচ্ছলতা দিলেও অসম প্রতিযোগীতা, অস্বচ্ছ আয়ের বন্টন ও অর্থনৈতিক মেরুকরণ নিয়ে ভাবছি না কেউ। বিশেষত আইন কানুন নিয়মের তোয়াক্কা করছে না এক শ্রেণির মানুষ, যারা ক্ষমতা ও অবৈধ প্রতিপত্তির জোরে যা খুশি তাই করে যাচ্ছেন।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও অন্যায় সুযোগ সুবিধাঃ আপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। এটাই সাভাবিক, কিন্তু কেউ দেখা যায় শাস্তিটাও আরামেই ভোগ করছেন। যেমন বছরের পর বছর দাগী কয়েদীরা জেলখানার বদলে হসপিটালের সুসজ্জজিত কেবিনের নরম বিছানায় বন্ধু বান্ধব এমনকি রাজনৈতিক কর্মী সমর্থকদের সাথে মিটিং বা আড্ডা দিয়ে সময় অতিবাহত করছেন। তাহলে আপনার অর্থ বিত্ত কিংবা প্রতিপত্তি থাকলে শাস্তিও হবে আনন্দময়...
মুক্ত সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাবঃ বিজ্ঞানের আশীর্বাদে গোটা পৃথিবী আমাদের হাতের মুঠোয় রিমোট কন্ট্রোলে বন্দী। যা বা যারা টিভিতে অনুষ্ঠান সমূহ তৈরি করেন, তারা তাদের নিজেদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি করেন। সকল দর্শকের সামজিক মূল্যবোধ এক নয়। এমতাবস্থায় সামাজিক বিশৃঙ্খলা আসন্ন। কিছুদিন আগে একটি সিরিয়াল দেখাকে কেন্দ্র করে একটি গ্রামে দুই দলের সংঘাত রক্তপাতে গড়িয়েছে পর্যন্ত। আমাদের দেশে কিছু টিভি সিরিয়াল এখন এতোটাই আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, এর জন্য বিবাহ বিচ্ছে এমক কি খুন, পারিবারিক কলহ লেগেই আছে। একাধিক বিবাহ, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের দুর্বোধ্য মারপ্যাচের সিরিয়ালগুলো সত্যিই কি আমাদের রুচি কিংবা সংস্কৃতির সাথে যায়?
মাদকের নানা রুপঃ হেরোইন, পেথিড্রিনের পর ফেন্সিডিল ছিলো সবচেয়ে বড় মাদক। এখন মাদকের ধরনের সীমা পরিসীমা নেই। ইয়াবা এখন সবচেয়ে বড় মাদকের নাম। শিশা লাউঞ্জের ছড়াছড়ি গোটা নগর জুড়ে। পথশিশুরা পর্যন্ত ডান্ডিতে (জুতা ছেঁড়া অংশের জোড়া লাগাতে ব্যবহৃত গ্লু বা আটা) আসক্ত হয়ে প্রকাশ্যে রাস্থায় ঝিমায়।
অনলাইনের বিড়ম্বনাঃ ঢাকা শহরে জনসংখ্যা পৌনে দুই কোটি, কিন্তু আশ্চর্যের বিহয় হলো এই নগরে ফেইসবুক আইডি আছে সোয়া দুই কোটির উপর! তার মানে আমরা নাম পরিচয় গোপন করে সক্রিয় আছি অনলাইনে। এটা কি প্রতারণা নয়? কেন করছি আমরা? কারন আমরা আমাদের মানসিকতাকে বিকৃতির নোংরা স্থরে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা পাশে দাঁড়িয়ে কিংবা একই আড্ডায় বসেও অনলাইনে প্রতারণা করছি স্বজন বন্ধুদের।
ঘোরের মধ্যে বসবাসঃ নিজেদের যোগ্যতা কিংবা নানা কারনে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে কিংবা নিজের সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষন করে একটা ঘোরের মধ্যে বসবাস করে কেউ কেউ। এখানে বাস্তবতা অনুপস্থিত থাকায়, যে কোন প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে যা সমাজের জন্য শভনীয় হয় না বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই।
ভুঁইফোঁড় সংগঠন এবং রাজনৈতিক লেজুর বৃত্তিঃ জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ছবির সাথে নিজেদের বিশাল আকারের ছবি যুক্ত করে কারনে অকারনে নানা অজুহাতে পোষ্টার বা ব্যানার টানিয়ে আসলে লোকজনদের জানান দেয়া হয়, তাদের যেন সমীহ করা হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই চাঁদাবাজির সুবিধার্থে। এক শ্রেণীর দুষ্টু রাজনৈতিক ব্যক্তি এই সব অপকর্মের সাথে যুক্ত থেকে সেই সব লোকদের আস্কারা দিয়ে থাকেন। এই সুযোগে তারা সমাজে যা খুশি তাই করার চেষ্টা করে।
বস্তি বসতি ও পথশিশুঃ সুরম্য অট্টালিকার পাশেই বিবর্ণ ধুষর বস্তিগুলো নিয়ে আমরা ভেবেছি কখনো? কিভাবে তারা বাঁচে? তাদের নূন্যতম নাগরিক সুবিধা কি আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি? স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধা কি তারা পায়? পথশিশুরা, যাদের শিকড়ের সন্ধানে তারা ব্যর্থ, আর আমরাও পারিনি তাদের জন্য নিরাপদ একটা পরিবেশ নিশ্চিত করতে। স্মাগলিং, ড্রাগ ট্রাফিকিং, পিকেটিং এমনকি সন্ত্রাসের হাতিয়ার হচ্ছে তারা, কারন পিছুটান ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তার নেই।
ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাঃ বাচ্চাদের স্কুলব্যাগ বাবা মায়ের বোঝা, কারণ এতো ভার বইতে প্রস্তুত নয় আমাদের শিশুদের কোমল কাঁধ। ক্লাসের চেয়ে বেশি দৌড়াতে হয় কোচিং এর জন্য। দেশে এখন উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে, কারন ক্ষেত্র প্রস্তুন নয় এমন শিক্ষাও আছে এই দেশে। আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছাত্র ছাত্রীদেরও ডীগ্রী দেয়া হচ্ছে। হতাশা থেকেও মানুষ ভুল আচরন করে থাকে।
বাচ্চাদের খেলার মাঠ ও পার্কের অভাবঃ মাটির মানুষ বড় হচ্ছে মাটির সংস্পর্শ ছাড়া। নগরে একের পর এক হাউজিং কোম্পানী বসতি গড়ে তুলছেন, কিন্তু বাচ্চাদের জন্য নেই নূন্যতম একটি খেলার মাঠ। ফ্ল্যাটের চারদেয়ালে বন্দী শিশুরা বেড়ে উঠছে অসাভাবিক প্রক্রিয়ায়।
আমরা কোথায় যাচ্ছি, ভাবতে হবে এখনই...
অনুপম মাহমুদ
উন্নয়ন ও অধিকার কর্মী
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।