নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০২ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেও ক্ষমতা হাতে পাননি। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জনমত তৈরি করে ১৯৭১ সাল ২৫ মার্চ দিবাগত রাতের মধ্য প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। বাংলার দামাল ছেলেরা মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়। মেহেরপুরের মুজিবনগরে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। এই সরকারের নেতৃবৃন্দও ভারতে গমন করেন এবং সেখান থেকে নেতৃবৃন্দ সরকার ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। ১৯৭১-এ ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন। কোন ব্যক্তির বাঁশির হুইসেলে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি।
ভারত সরকার প্রায় এক কোটি লোকের আহার, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ সবই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুত রেখেছিল। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে মহান স্বাধীনতা অর্জিত হলেও এর পেছনেও অনেক ঘটনা রয়েছে, কিছু ইতিহাস রয়েছে যা নতুন প্রজন্মকে জানানো উচিত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বিভিন্ন দেশ ও ব্যক্তির অবদান অনস্বীকার্য। তন্মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ব্রেজনেভ এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সারাবিশ্ব চষে বেড়িয়েছেন । এরকমই একটি ঘটনা বর্নিত আছে আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের জীবনীতে।
নভেম্বর ১৯৭১, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী হোয়াইট হাউসে পরস্পর মুখোমুখি বসে পাকিস্তানের বর্বর বাহিনী দ্বারা বাংলাদেশে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়ে কথা বলছিলেন। প্রত্যুত্তরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বলেছিলেন, ‘ভারত যদি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায়, আমেরিকা তার ফাঁদ বন্ধ রাখবে না। ভারতকে উচিত শিক্ষা পেতে হবে’। (If India pokes its nose in Pakistan, US will not keep its trap shut. India will be taught a lesson`- Richard Nixon.)
আমেরিকার হুমকিকে তোয়াক্কা না করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী জবাবে বলেছিলেন, ‘ ভারত আমেরিকাকে বন্ধু মনে করে, প্রভু নয়। ভারত নিজের ভাগ্য নিজেই রচনা করতে পারে। পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রত্যেকের সাথে কীভাবে আচরণ করতে হয় তা আমরা জানি এবং সচেতন‘। (`India regards America as a friend, Not a boss. India is capable of writing its own destiny. We know and are aware how to deal with each one according to circumstances` -Indira Gandhi.)
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সাথে বসে চোখের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখে এই সঠিক শব্দগুলি প্রকাশ করেছেন। সেটা ছিল এমন একটি ঐতিহাসিক দিন, যেদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এর উপস্থিতিতে হোয়াট হাউসে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ভারত-আমেরিকা যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল করেছিলেন এবং যিনি তার নিজস্ব ব্যতিক্রমধর্মী বিশেষ স্টাইলে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেছিলেন।
আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়ার পথে মন্তব্য করেছিলেন, ‘ম্যাডাম প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি মনে করেন না যে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সাথে আপনার আরও সহিষ্ণুতা দেখানো উচিত ছিল?’
উত্তরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ‘ধন্যবাদ মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনার মূল্যবান পরামর্শের জন্য। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের মেরুদন্ড সোজা রয়েছে এবং এই সকল ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ মোকাবেলা করতে আমাদের যথেষ্ট ইচ্ছা শক্তি ও রিসোর্স রয়েছে। আমরা প্রমাণ করবো, হাজার মাইল দূর থেকে কোন শক্তি একটি জাতিকে শাসন ও নিয়ন্ত্রন করার দিন শেষ‘।‘।(`Thank you, Mr. Secretary, for your valuable suggestion. Being a developing country, we have our backbones straight & enough will and resources to fight all atrocities. We shall prove that days are gone when a power can rule and often control any nation from thousands of miles away”.-Indira Gandhi.)
ইন্দিরা গান্ধীকে বহনকারী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং উড়োজাহাজটি দিল্লীর পানাম বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করা মাত্র ভারতের তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ীকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আসতে বললেন। বাজপেয়ী আসলেন, এক ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর বাজপেয়ীকে ব্যস্ত মনে হচ্ছিল। পরবর্তিতে জানা গেছে যে, বাজপেয়ী জাতিসংঘে ভারত সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
বিবিসির সাংবাদিক ডোনাল্ড পল বাজপেয়ীর কাছে একটি প্রশ্ন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, "ইন্দিরা জি আপনাকে একজন কট্টর সমালোচক বলে মনে করেন। তা সত্ত্বেও, আপনি কি নিশ্চিত যে আপনি জাতিসংঘে বর্তমান সরকারের পক্ষে আপনার গলা (আওয়াজ) চেঁচিয়ে উঠবেন? "
উত্তরে বাজপেয়ী বলেছিলেন, ‘গোলাপ বাগানের সৌন্দর্য বর্ধন করে। পদ্মফুলও তাই করে। বাগানের প্রতিটি ফুল ধারনা করে সে নিজেই খুব সুন্দর। কিন্তু বাগান যখন বিপদাপন্ন হয়, এটা কোন গোপনীয় বিষয় নয় যে, তখন প্রত্যেকের দ্বায়িত্ব নিজ নিজ সৌন্দর্য রক্ষা করা। আমি আজ এসেছি বাগান রক্ষা করতে। এটাই ভারতের গণতন্ত্র’।
এই বৈঠকের ফলশ্রুতিতে আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে বাংলাদেশের নিরীহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করার জন্য পাকিস্তানের বর্বর বাহিনীকে ২৭০টি অত্যাধুনিক ট্যাংক পাঠালেন। বিশ্ব মিডিয়ায় বার্তা দিলেন, এই ট্যাংকগুলো বিশেষ কারিগরী ক্ষমতায় তৈরী করা হয়েছে, যে কারণে এগুলো ধ্বংস করা সম্ভব নয়। এই বার্তায় এটা বুঝতে বাকি রইলো না যে, এটা ছিল অবশিষ্ট বিশ্বের কাছে সতর্ক বার্তা, যাতে কোন দেশ ভারতকে সহায়তা না করে।
আমেরিকা এখানেই থেমে থাকেনি, আমেরিকার একমাত্র জ্বালানী কোম্পানি ‘বার্মা-শেল’ কে বলা হলো ভারতে জ্বালানী সরবরাহ না করার জন্য। এরপরে ভারতের ইতিহাস ছিল কেবল রুখে দাঁড়ানোর বিষয়। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর উদ্দীপক কুটনীতি (incisive diplomacy) দিয়ে ঐ মূহুর্তে ইউক্রেন থেকে তৈল আমদানি নিশ্চিত করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হয়েছিল। মাত্র ১ দিনের যুদ্ধে আমেরিকার পাঠানো বেশীরভাগ ট্যাংক ধ্বংস হয়েছিল। ধ্বংস করা এই ট্যাংকগুলো ভারতের বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যালে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে ডিসপ্লে করে রাখা হয়েছে।
রাজস্থানের গরম মরুভূমি এখনও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে আমেরিকার অহংকার পদদমিত হয়েছিল।
পরবর্তি ১৮ দিনের যুদ্ধে পাকিস্তানের ৯৩,০০০ প্রশিক্ষিত সৈনিক বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে মাথানত করেছিল, আত্মসমর্পণ করেছিল।
বাঙালি জাতির বিজয় সূচিত হওয়ার পর পাকিস্তানের লাহোর কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পেয়েছিলেন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্যও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের বর্তমান প্রজন্মের সঠিক ইতিহাস জানা উচিৎ। এ জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এ সকল অজানা তথ্য সংগ্রহ করে কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর