নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১
দিন যত যাচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সময়ের পরিক্রমায় শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা যেন অনন্য উচ্চতায় উঠেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের রক্ত যার শরীরের বইছে সেই তো অনন্য মানুষ। সারাবিশ্বের নিপীড়িত জনতার সংগ্রামী নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান আমলে ভারত উপ মহাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আলোর দিশারী হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশ বিভাগোত্তর সময়কাল থেকে বাংলাদেশে স্বাধীনতা উত্তর সময়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন প্রবাহের প্রতিটি পরতে পরতে ছিল অসহায় নিপীড়িত জনতার নেতা শেখ মুজিব। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, পাক ভারত পৃথকীকরণ ও বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রতিটি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর একক আদর্শ ছিল দুস্থদের সেবা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার জীবন প্রবাহ একই সরল রেখায় চলমান।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পশ্চিম পাকিস্তানীদের অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের প্রথমদিকে পাকিস্তানীরা ভেবেছিল মানুষ হত্যার মধ্যে দিয়েই তারা বর্তমান বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে পারবে। কিন্তু যুদ্ধের তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও যখন পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আসেনি তখন তারা যুদ্ধের নীতি হিসেবে নারীদের ধর্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রতিদিন মানুষ হত্যা, গ্রামের পর গ্রাম আগুন লাগিয়ে শেষ করা যেমন পশ্চিম পাকিস্তানীদের বর্বরতার প্রতিদিনকার অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছিল, তেমনি আরেকটি বর্বরতা ছিল নারীদের ধর্ষণ করা। পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশকে জাতিগতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া, নারীদের ধর্ষণের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের জনগণের মনোবল ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ধর্ষণকে বেছে নেওয়া হয়। আর এ কারণেই পরিবারের সবার সামনেই নারীদের আক্রমণ করা হতো। পশ্চিম পাকিস্তানীদের ক্যাম্পে প্রতিদিন গাড়ি বোঝাই করে মেয়েদের ধরে নিয়ে যাওয়া হতো। কমান্ডারদের জন্য নতুন নতুন মেয়ের ব্যবস্থা করা হতো। সাধারণ সৈনিকেরা একই নারীকে ঢালাওভাবে ধর্ষণ করতো। নানা রকম নির্যাতনের পরেও তাদের বাঁচিয়ে রাখা হতো যেন তারা সন্তান জন্ম দিতে পারে।
নয় মাসের যুদ্ধে বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী ৪ লক্ষ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। সঠিক সংখ্যা হয়তো কখনোই জানা যাবে না। যুদ্ধ শেষে এই নারীদের যখন ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয়, তখন তাদেরকে ধর্ষিতা নামে ডাকাসহ বিভিন্ন অপমান করা হতো। বঙ্গবন্ধু এই ভাগ্যহত নারীদের নিজের মেয়ের স্বীকৃতি দেন এবং তাদের বীরাঙ্গনা উপাধিতে ভূষিত করেন। বীরাঙ্গনা শব্দের অর্থ বীর নারী। আসলেই তো তারা বীর ছিলেন, তাদের সম্ভ্রমের বিনিময়েই তো পেয়েছি এই স্বাধীন দেশ।
যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনের জন্য অনেকগুলো কেন্দ্র খোলেন যুদ্ধোত্তর দেশে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী দ্বারা নির্যাতিত মা বোনদের পরিবার গ্রহণ করে নি, সমাজ থেকে বিতাড়িত হয় তাইদের ঠাই হয় এসব পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
এসকল মা বোনদের একমাত্র অভিভাবক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাক হানাদার বাহিনী দ্বারা নির্যাতিত মা বোনদের ঠিকানা হল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি। নীলিমা ইব্রাহিমের ‘ আমি বীরাঙ্গনা বলছি’প্রবন্ধে গ্রন্থে এমন সব ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর মত কোমল হৃদয়ের অধিকারী একজন মানুষকে সপরিবারে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করে ক্ষমতা লোভী খন্দকার মোশতাক ও জিয়ারা। নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন জনতার রায়ে দেশে মাতৃকাকে স্বৈরশাসকদের হাত থেকে ক্ষমতা নেন। শুরু হয় পঁচাত্তর পরিবর্তী মৃত্যু উপত্যকা বাংলাদেশে বিনির্মাণের কাজ । শেখ হাসিনা বাবার মত দক্ষ নেতৃত্বে মানবিক গুণ নিয়ে দেশ পরিচালনায় মনোনিবেশ করেন।পিতা বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ রেখে জননেত্রী শেখ হাসিনা দরিদ্র,বৃদ্ধ, দুঃস্থ, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দিকে বিশেষ নজর দেন। শেখ হাসিনা পিতাকে দেখেছেন সমাজের অর্থহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে। পিতার মতই বর্ণিত জনতার কাছে গেলেন । তাদের দুঃখের কথা শুনলেন। এসব সুবিধা বঞ্চিতদের কথা মাথায় রেখে হাসিনা যুগান্তকারী মানবিক কর্মসূচী চালু করলেন। দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ দুস্থ ও স্বল্প উপার্জনক্ষম অথবা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে ও পরিবার ও সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে ‘বয়স্ক ভাতা’কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। প্রাথমিকভাবে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলাসহ ১০ জন দরিদ্র বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে প্রতিমাসে ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের আওতায় আনা হয়। পরবর্তীতে দেশের সকল পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত করা হয়।
যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের নারীদের প্রতি জাতির পিতার সম্মানের দেখতে জননেত্রী শেখ হাসিনাও অসহায় নারীদের প্রতি মমত্ব জন্ম নিয়েছে । শেখ হাসিনা চালু করলেন বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলা ভাতা। প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলাদের ভাতা কর্মসূচি প্রবর্তন করেন। ঐ অর্থ বছরে ৪ লক্ষ ৩ হাজার ১১০ জনকে এককালীন মাসিক ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়। ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে এ কর্মসূচিটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলা ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়নে অধিকতর গতিশীলতা আনয়নের জন্য বর্তমান সরকার পুনরায় ২০১০-১১ অর্থ বছরে এ কর্মসূচি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে প্রবর্তিত এ কর্মসূচি সমাজসেবা অধিদফতর সফলভাবে বাস্তবায়ন করছে। এ কর্মসূচির আওতায় ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২৪ লক্ষ ৭৫ হাজার জন ভাতা ভোগীর জন্য জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে মোট ১৪৯৫.৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হওয়ার পর এ কর্মসূচিতে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য শেখ হাসিনার নির্দেশে বিগত ৬ বছরে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা হলো, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত বাস্তবায়ন নীতিমালা সংশোধন করে যুগোপযোগীকরণ, উপকারভোগী নির্বাচনে স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্তকরণ, ডাটাবেইজ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ। এ ছাড়া ১০ টাকার বিনিময়ে সকল ভাতা ভোগীর নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খুলে ভাতার অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ভাতা ভোগীদের অনলাইন মাধ্যমে G2P বা গভর্নমেন্ট টু পারসন পদ্ধতিতে ভাতা প্রদান চালু করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের অঙ্গিকার হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে বয়স্কভাতা ভোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে ক্ষমতা গ্রহণোত্তর ২০০৯-১০ অর্থ বছরে বয়স্কভাতাভোগীর সংখ্যা ২০ লক্ষ জন থেকে বৃদ্ধি করে ২২ লক্ষ ৫০ হাজার জনে এবং জনপ্রতি মাসিক ভাতার হার ২৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩০০ টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫৭ লক্ষ ০১ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৪৪৪.৫৪ কোটি টাকা। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিবিড় তদারকি এবং সমাজসেবা অধিদফতরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমে বিগত ৪ বছরে বয়স্ক ভাতা বিতরণে প্রায় শতভাগ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ১০ টাকার বিনিময়ে সকল ভাতা ভোগীর নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খুলে ভাতার অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা গ্রহণের পর শেখ হাসিনা যেন আরো মানবিক মহীয়সী হয়ে ওঠেন। ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর ৪৩/১, নবাব কাটরা ৫তলা বাড়িতে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৩ জন মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন কয়েকশ’ মানুষ। ঘটনার পর চরম ক্ষতিগ্রস্ত স্বজন হারানো রুনা, রত্না ও শান্তা। এদের মধ্যে রুনা ও রত্না আপন দুই বোন। শান্তা পাশের বাসার মেয়ে। রত্নার আগেই বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। রুনার বিয়ের `পানচিনি` অনুষ্ঠানের দিন এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের পর পরিবার-পরিজন হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া রুনা, রত্না ও শান্তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুকে টেনে নেন। নিজের সন্তান পরিচয় দিয়ে ঘোষণা দেন তারা তার নিজের সন্তান। সৃষ্টি করেন এক নতুন ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রীর তদারকিতে গণভবনে ধুমধাম করে তিন কন্যার বিয়েও দেওয়া হয়। তাদের স্বামীদের দেওয়া হয় চাকরি।
খুব ছোট সময় থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন পরোপকারী ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তাঁর মতোই করে বড়ো হয়েছেন বর্তমান দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই প্রতিফলন আমরা নিত্য শেখ হাসিনার জীবনাচারে দেখতে পায় । সমাজের অবহেলিত ও দুস্থ মানুষের খবর যখনই শেখ হাসিনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা পত্রপত্রিকায় দেখতে পান তখনই তিনিই উদ্যোগ নিয়ে সেসবের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করেন। তাঁর এসব উদ্যোগের মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতা অন্যতম। বর্তমান সরকার প্রধান শেখের বেটি শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রদানে বদ্ধপরিকর। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের সুরক্ষা প্রদানের অনন্য দলিল। শুরুতে ১,০৪,১৬৬ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ২০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের আওতায় আনা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ জন এবং জনপ্রতি মাসিক ভাতার হার ২৫০ হিসেবে বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৬০.০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয়বার শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ২০০৯-১০ অর্থ বছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ ৬০ হাজার জনে, মাসিক ভাতার হার ৩০০ টাকায় এবং বার্ষিক বরাদ্দ ৯৩.৬০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০১০-১১ অর্থ বছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ ৮৬ হাজার জনে উন্নীত করা হয় এবং মাথাপিছু মাসিক ভাতা ৩০০ টাকা টাকা হিসেবে বার্ষিক বরাদ্দ ১০২.৯৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০ লক্ষ ০৮ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৭৫০ টাকা হিসেবে ১৮২০ কোটি টাকা প্রদান করা হচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নিবিড় তদারকিতে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা বিতরণে প্রায় শতভাগ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এদেরও ১০ টাকার বিনিময়ে সকল ভাতা ভোগীর নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খুলে জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতার অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
এছাড়ায় বিভিন্ন পত্রপিত্রকায় বিরল রোগীদের খবর শেখ হাসিনার চোখে পড়লেই তাদের চিকিৎসার দায় দায়িত্ব নিজেই থাকেন।
সম্প্রতি বছরে বৃক্ষ মানব আবুল বাছানদারের কথা নিশ্চয় আমরা ভুলে যাই। ভুলে যাইনি সাতক্ষীরায় মুক্তামনির কথা। সচেতন নাগরিক হিসেবে মহীয়সী নারী শেখ হাসিনার এসব বদান্যতামূলক কর্মকাণ্ড পাঠক সমাজে তুলে ধরায় দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ দেখে শেখ হাসিনা খুলনার বৃক্ষমানব হিসেবে পরিচিত আবুল বাজানাদারের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৬ সালে বৃক্ষমানব আবুল বাছানদেরকে খুলনা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে সপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। আড়াই বছর এখানেই তারা চিকিৎসা দেয় হয়।এখানকার চিকিৎসকরা তার হাতে ও পায়ে ২৫টি অস্ত্রোপচার করে। আবুল বাজানদার ১০ বছর ধরে হাত-পায়ে শেকড়ের মতো গজিয়ে ওঠা বিরল এক জেনেটিক রোগে ভুগছিলেন।
২০১৭ সালেরে জুলাই মাসে সাতক্ষীরার বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামনির সংবাদ শেখ হাসিনা দেখতে পান। সেই সংবাদের ভিত্তিতে বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামনির চিকিৎসার দায় দায়িত্বও শেখ হাসিনা নেন। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় মুক্তামনিকে। সেখানে মুক্তামনির চিকিৎসায় গঠিত হয় বোর্ড। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ধরা পড়ে মুক্তামনির হাত রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত। তারপর মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করা হয় তার হাতের অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড। সেখানে পচে দুর্গন্ধ ছড়াতো। কয়েক দফা অস্ত্রোপচার শেষে ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক মাসের ছুটিতে বাড়ি নেওয়া হয় মুক্তামনিকে। এরপর আর ঢামেকে যেতে রাজি হয়নি মুক্তামনি। বাড়িতেই চলছিলো তার চিকিৎসা। সেখানেই মুক্তামিন শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
জন্মের পর থেকে জোড়া লাগা অবস্থায় ১০ মাস একসঙ্গে বড় হয়েছে তোফা-তহুরা। তাদের পিঠের কাছ থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত পরস্পর যুক্ত ছিল। পরে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) দীর্ঘ ৯ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই জোড়া লাগা শিশু তোফা ও তহুরাকে পৃথক করেন চিকিৎসকরা। দেশে এ ধরনের অস্ত্রোপচার এটিই প্রথম। বর্তমানে ভালো আছে তারা। তাদের থাকার ঘরও নির্মাণ করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
সময়ের প্রবাহে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পাশাপাশি মানবতার হাত যেন প্রসারিত হচ্ছে। বিশ্ব মানবতার নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার প্রশংসা বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বারংবার বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার হৃদয়ের বদান্যতার কারণে বিশ্ববাসী আজ তাকে মাদার অব হিউম্যানটির মত হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার উচ্চাসনে বসিয়েছেন। যার প্রতিদান শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে বহুবার বিশ্ববাসীকে দিয়েছেন।
লেখক পরিচিতি: সাবেক সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৪
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।
কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।
আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।
রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।
মন্তব্য করুন
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে
এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের
সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে
কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of
Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of
them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে
দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর
এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে
সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের
হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত
দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার
বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা
একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের
গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত
‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি
সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল
বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক
আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন
মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার
দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।
আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ
ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন
ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা
বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে
লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা
শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি
সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ,
আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ
করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে
গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক
সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত
করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা
করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য
যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন
করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর
এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের
জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’
বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।
কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর। পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়। হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।
বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের
নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে
চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর
কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও
নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের
আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায়
বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের
২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’
হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই
দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।
সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।