ইনসাইড থট

বাংলাদেশের সমকালীন জীবনে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০৪ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১


Thumbnail

১. ভূমিকা
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখন শুধু একটি নাম নয়- তিনি একটি মহীরুহ প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছেন। নিজের একটি পরিচয় অতিক্রম করছেন অন্য পরিচয় দ্বারা। শুরুতে তিনি রাজনীতিবিদ থেকে রাষ্ট্রনায়ক পরিচয়ে পরিচিত হলেও এখন তিনি লেখক, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, ভ্রমণবিশারদ, দিনপঞ্জিলিপিকার, সমাজসংস্কারক এবং শিক্ষাবিদ। তিনি চিরসংগ্রামী, চিরবিপ্লবী। তিনি রাজনীতির কবি। তাঁর রাজাসন পাতা বাঙালি জাতির হৃদয়মূলে। তাঁর সম্মোহনী নেতৃত্ব, দুঃখী মানুষের কষ্ট বোঝার মত মমতামাখানো মন, বাঙালির অধিকার আদায়ে ক্লান্তিহীন কঠোর কন্ঠস্বর- বাংলা ও বাঙালির পরম পাথেয়। ‘বঙ্গবন্ধু’ এই অপরূপ অভিধায় তাঁেকে আর আটকে রাখা সম্ভব নয়-তিনি ‘বিশ্ববন্ধু’ উপাধীতে উন্নীত হয়েছেন। রাজনীতিবিদ হিসেবে তার প্রধান পরিচয় হলেও সময়ের পরিক্রমায় ‘শিক্ষাবিদ’ হিসেব তিনি একটি নতুন পরিচয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মাগ্র ৫৫ বছর আয়ুস্কালের একজন মানুষ তাঁর এক চতুর্থাংশ সময় কাটিয়েছেন জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। তবে জেলখানায় তিনি অলস সময় কাটাননি। তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুর ইসলাম, প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাস ও বিশ্ব সাহিত্যও শ্রেষ্ঠ বই পাঠ করতেন। তিনি ডায়েরীতে জীবন কথা লিখেছেন, রোজনামচা লিখেছেন,আকাশের দিকে তাকিয়ে দেশ-মাটি-মানুষ নিয়ে ভেবেছেন। তার এসব ভাবনাগুলোই তার শিক্ষাদর্শন নামে খ্যাত। একজন এমন একজন নেতার একটি বিশেষ দর্শন অর্থাৎ তাঁর শিক্ষাদর্শন নিয়ে আলোচনা করতে পারা অত্যন্ত সম্মানের বিষয়।

২. শিক্ষা ও শিক্ষাদর্শন
শিক্ষা প্রত্যয়টিকে বহুভাবে ব্যাখ্যা করা য দেশ-সমাজ-সময় ভেদে শিক্ষার কনসেপ্ট পরিবর্তিত হয়। শিক্ষা হচ্ছে প্রাষীরূপে জন্মনেয়া মানুষকে যৌক্তিক ও মানবিক মানুষ বানানো। যেকোন প্রাণী জীনের মাধ্যমে জন্মগতভাবে প্রাপ্ত বৈশিষ্টাবলি সারাজীবন বহন করে, এজন্য তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাগে না। কিন্তু মানুষ তা নয়। পরিবর্তিত রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম, সমাজ, দেশ, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি তার উপর নিত্য প্রভাব ফেলে। মানব সমাজে সর্বদা চলে লোভ-লাভ-ক্ষমতার লড়াই। এজন্য তাদেরকে শিখতে হয়, নিতে হয় প্রশিক্ষণ।

একাডেমিকভাবে, শিক্ষা হচ্ছে মানুষের শৈশবকাল থেকে পূর্ণবয়স্ক স্তর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন একটি প্রক্রিয়া। শিক্ষা বলতে কোনো নতুন জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জন করা বুঝায়। রেমন্ট (Raymont) তাঁর Principles of Education গ্রন্থে বলেছেন, “শিক্ষা হচ্ছে মানুষের শৈশবকাল থেকে পূর্ণবয়স্ক স্তর পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন বিকাশের একটি প্রক্রিয়া।” এ প্রক্রিয়ায় মানুষ তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশের সাথে সাথে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। শিক্ষাবিদ ম্যাকেঞ্জি (Mackenzie) শিক্ষার ব্যাপক অর্থে বলেছেন,‘শিক্ষা হচ্ছে একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া, জীবনের সব রকম অভিজ্ঞতাই এই শিক্ষাদানের ব্যাপারে সহায়তা করে।’ আবার শিক্ষাবিদ হোয়াইটহেডের (Whitehead) মতে, ‘শিক্ষার একটি মাত্র বিষয় আছে এবং সেটি হলো সর্বতোভাবে বিকশিত জীবন।’ দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, খেলাধুলা, ভাব বিনিময়, আদানপ্রদান, সাফল্য, ব্যর্থতা, হতাশা প্রভৃতির মাধ্যমে মানুষ সততই শিক্ষা লাভ করছে।

আবার উইকিপিডিয়ার মতে- Education is the process of facilitating learning, or the acquisition of knowledge, skills, values, morals, beliefs, and habits. 
শিক্ষা হচ্ছে ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, সামাজিক আধ্যাত্মিক অর্থাৎ সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধনের নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। 
শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোন ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেয়া হয় এবং সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের জন্য যে সকল দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলো অর্জনে সহায়তা করা হয়। সাধারণ অর্থে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই শিক্ষা। ব্যাপক অর্থে পদ্ধতিগতভাবে জ্ঞানলাভের প্রক্রিয়াকেই শিক্ষা বলে।

অন্যদিকে, মূলদর্শনের একটি শাখা শিক্ষাদর্শন। অর্থাৎ দর্শন হতেই শিক্ষা দর্শনের সৃষ্টি। দর্শনের কাজ প্রধানত বিজ্ঞানভিত্তিক। আর শিক্ষাদর্শন এমন একটি বিষয় যা জ্ঞানের বিভিন্ন দিক, বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা, যা শিক্ষার সাথে জড়িত তা নিয়ে আলোচনা করে। এ ক্ষেত্রে আধুনিক বাস্তববাদী ও প্রয়োগবাদী দার্শনিক জন ডিউই বলেন, ``A philosophy of education is based upon a philosophy of experience.` অর্থাৎ শিক্ষা দর্শনের ভিত্তি হচ্ছে অভিজ্ঞতার দর্শন। শিক্ষার স্বরূপ, জ্ঞানগত বিষয় হিসেবে শিক্ষার প্রকৃতি নির্ধারণ, শিক্ষার লক্ষ নির্ধারণ এবং শিক্ষার সমস্যাসমূহ নিরসনের যৌক্তিক কাঠামো সংক্রান্ত বিদ্যাই শিক্ষাদর্শন। এ ক্ষেত্রে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষা হলো তাই যা আমাদের কেবল তথ্য পরিবেশনই করে না, বরং বিশ্বসত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে’।

শিক্ষাদর্শন একটি সামগ্রিক দর্শন যা শিক্ষাকে সুশৃঙ্খল ও সুস্থির অভিমুখী করে তোলে। বাংলাদেশে প্রচলিত প্রধান শিক্ষাদর্শন হলো- ভাববাদ বা আদর্শবাদ (Idealism), বাস্তববাদ (Realism), প্রয়োগবাদ (Pragmatism), প্রকৃতিবাদ (Naturalism)। শিক্ষা ও শিক্ষাদর্শন নিয়ে উল্লিখিত একাডেমিক বিশ্লেষণ বিবেচনায় নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শিক্ষাদর্শনের আলোচনা করা হলো।

৩. বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের ভিত্তি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকৃত জাতীয়তাবাদী নেতা যিনি এদেশের জলবায়ু, প্রকৃতি, মাটি-মানুষ, ভাষা-পোশাক, খাদ্য ইত্যকার সবকিছু মনে-প্রাণে গ্রহণ করেছিলেন। আর তাঁর ভিতরে এর বীজ বুনেছিলেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও তাঁর শিক্ষকগণ। বঙ্গবন্ধুর জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী শিক্ষকগণ হলেন- মো. সাখাওয়াত উল্লাহ, কাজী আব্দুল হামিদ, রসরঞ্জন, মনোরঞ্জন বাবু, ড. ইৎরাত হোসেন জুবেরী, প্রফেসর সাইদুর রহমান, প্রফেসর নারায়ণ বাবু, প্রফেসর তাহির জামিল, প্রফেসর নাজির আহমেদ প্রমূখজন।

অন্যদিকে তাঁর রাজনৈতিক শিক্ষক বা গুরু ছিলেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান, যার একটি মূল্যবান বাক্য- Sincerity of purpose and honesty of purpose’ তিনি আজীবন মনে রেখেছেন। এছাড়া তাঁর স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শের-এ-বাংলা একে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া প্রমূখজন তাঁর রাজনৈতিক মানস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাছাড়াও বিভিন্ন লেখকদের লেখাও বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি সে সময়ের বিশ্বসাহিত্যের অনেক বই নিয়মিত পাঠ করতেন বিধায় দৃঢ়ভাবে বলতে পারেন-‘আমি দক্ষিণপন্থীও নই, বামপন্থীও নই। আমি দেশবাসীর স্বার্থের পক্ষে।’ অর্থাৎ মানুষের স্বার্থই তাঁর শিক্ষাদর্শনের মূল কথা।

৪. বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের মূলসূও ও সমকালীনতা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাদর্শনের মূল কথা হলো মানব কল্যাণ। এজন্য তিনি মানুষের মধ্যে সহনশীলতা, মানবিকতা, সত্যবাদিতা, সৌজন্যতা, আত্নসচেতনতা ও আত্নমূল্যায়ন, মহানুভবতা, শ্রদ্ধাবোধ,অন্যদের অবদানের স্বীকৃতি, পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা এবং পরিবেশ সচেতনতা ইত্যাদি গুণাবলী থাকা প্রয়োজন বলে মনে করতেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে-বঙ্গবন্ধু কী দার্শনিক বা শিক্ষাদার্শনিক? মনীষী সক্রেটিস বলেছেন-‘যারা সত্য দর্শনে আগ্রহী তারাই দার্শনিক।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সারা জীবনই সত্যানুসন্ধানী ছিলেন। মিথ্যাকে জীবনে তিনি কখনও প্রশ্রয় দেননি। কোন সিদ্ধান্ত ভূল হলে অকপটে স্বীকার করেছেন। দেশ-জাতি-মানুষ নিয়ে স্বপ্ন বুনেছেন। তাদের একক ভূখন্ড, পরিচয়, ভবিষৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছেন, এ বিচারে তিনি কী দার্শনিক নন? দার্শনিকরা তত্ত্ব প্রদান করেন, আর তিনি শুধু তত্ত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হননি, সেগুলোর বাস্তবায়নও করেছেন।

ড. ডি. এম. ফিরোজ শাহ, তাঁর রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন’ গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের বহুমাত্রিকতা’ শিরোনামে যে বিষয়গুলো চিহিৃত করেছেন তা প্রণিধানযোগ্য। তার নির্নয়করা বিষয়গুলো হলো- পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের প্রতি ভালোবাসা; বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন: ভদ্রতা ও সৌজন্য শিক্ষা, মানুষের প্রতি মমতা ও শিক্ষা, শিক্ষা ও আত্নমূল্যায়ন, ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন: মানুষের প্রসঙ্গে, শিক্ষার প্রতি বঙ্গবন্ধুর অনুরাগ, পুস্তকের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা, বঙ্গবন্ধু ও পরিবেশ শিক্ষা, মানুষকে মূল্যায়ন, বঙ্গবন্ধুর মহানুভবতা ও রসবোধ, নেতার গুণাবলী: অন্যদের স্বীকৃতি, বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুল এবং শিক্ষা ও বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্নজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, তাঁর রচিত ৫ টি প্রবন্ধ, বক্তৃতা-বিবৃতি ইত্যাদি থেকে শিক্ষামূলক বাছাই কথা করে সেগুলোর সাথে প্রখ্যাত দার্শনিকদের প্রদত্ত তত্ত্বেও সাথে যাচাই করে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের নির্ভরযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা ও কালোতীর্ণতা প্রমাণ করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাদর্শনের মূলসূরকে নিম্নরুপভাবে চিহিৃত করা যায়-
ক) মাতৃভাষা ও বাংলাভাষার প্রতি সুদৃঢ় অবস্থান
খ) শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের মূল্যায়ন
গ) প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ ও বাধ্যতামূলক করা
ঘ) জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন
ঙ) সংবিধানে শিক্ষা সংক্রান্ত ধারা সংযোজন
চ) শিক্ষার গতিধারা নির্ধারণ
ছ) গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতা ও গঠনমূলক শিক্ষার প্রবর্তন
জ) শিক্ষা ও সমাজকে দুর্নীতিমুক্তকরণ
ঝ) মানবিক শিক্ষধারার সূচনা
ঞ) যুগোপযোগী ও আধুনিক শিক্ষার 
ট) শিক্ষায় বিনিয়োগকে পুঁজি মনে করা
ঠ) শিক্ষাকে সুসংহত করার জন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা
ড) বাংলাভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করানো
ঢ) অসাম্প্রদায়িক শিক্ষার ভিত্তি গড়া

ক) মাতৃভাষা ও বাংলাভাষার প্রতি সুদৃঢ় অবস্থান
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন খাঁটি বাঙালি, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি যার ছিল অগাধ আস্থা, বিশ্বাস আর ভালোবাসা। এ জন্য তিনি বাংলাভাষা আন্দোলনের জন্য জেল খেটেছেন, পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে বাংলা ভাষায় সংসদ বিবরণী প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তাঁর জীবনে বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে বক্তৃতা করেননি। জাতিসংঘে বাংলাভাষায় বক্তৃতা করে এরম র্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। তাঁর একটি বানি থেকেই এর প্রমাণ মেলে-
‘যে বাংলার মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে বাংলার মানুষকে আমি এত ভালোবাসি,যত দূরেই যেখানেই আমি থাকি না কেন, একটি মুহূর্তের জন্য তাহাদের কথা আমি ভুলতে পারি না।’
এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তার দেওয়া ভাষনে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা ও টান ষ্পস্ট হয়েছে। যেমন-
 ‘একটি জাতিকে পঙ্গু ও পদানত করে রাখার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা তার ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করা।’
 ‘যে কোন জাতি তার মাতৃভাষাকে ভালোবাসে। মাতৃভাষার অপমান কোনো জাতিই কোন কালে সহ্য করে নাই।’
 ‘পাঞ্জাবের লোকেরা পাঞ্জাবি ভাষা বলে, সিন্ধুর লোকেরা সিন্ধি ভাষায় কথা বলে, সীমান্ত প্রদেশের লোকেরা পশতু ভাষায় কথা বলে, বেলুচরা বেলুচি ভাষায় কথা বলে। উর্দু পাকিস্তানের কোন প্রদেশের ভাষা নয়। তবুও যদি পশ্চিম পাকিস্তানের ভায়েরা উর্দু ভাষার জন্য দাবি করে, আমরা আপত্তি করব কেন? যারা উর্দু ভাষা সমর্থন করে তাদের একমাত্র যুক্তি হলো উর্দু ‘ইসলামিক ভাষা’। উর্দু কি করে যে ইসলামিক ভাষা হলো আমরা বুঝতে পারলাম না।’

খ) শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের মূল্যায়ন
তাঁর সময়ে তিনি শিক্ষাবিদদের যথার্থ সম্মান দিয়ে উপযুক্ত পদে পদায়ন করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনে শিক্ষাবিদরা থাকবেন এটা শিক্ষাবিদরা প্রত্যাশা করেন। তিনি এ প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। স্বাধীনতার পরে ক্ষমতায় বসেই ১৯৭২ সালের ১ অক্টোবর প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. এআর মল্লিককে (আজিজুর রহমান মল্লিক) শিক্ষাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। জনাব এআর মল্লিক ১১ মার্চ ১৯৭৩ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩, অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে শিক্ষাসচিব হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তিনি ১৮ জানুয়ারি ১৯৭৪ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তা ছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্বশাসন প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা তাঁর শিক্ষাদর্শনেরই প্রতিফলন।

এক জনসভায় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন-, ‘ছেলেদের মানুষ করতে হবে। ফেল করানোতে আপনাদের তেমন বাহাদুরি নাই, পাস করালেই বাহাদুরি আছে।’ এ কথায় শিক্ষকদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু কি প্রত্যাশা করেন তা প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর শিক্ষাদর্শন আপামর মানুষের শিক্ষা ও উন্নয়নের দর্শন। তিনি বড় তাত্ত্বিকদের মত পান্ডিত্যপূর্ণ কোন কথা বলেননি, যা করা সম্ভব বা করা সহজ তাই তিনি সহজ ভাষায় নিজের মত করে বলেছে। এক্ষেত্রে তিনি বাস্তববাদী ও প্রয়োগবাদী দর্শনদলের অন্তর্গত।

গ) প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ ও বাধ্যতামূলক করা
তাঁর শাসনামলে (১৯৭২-১৯৭৫) ২৫,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ও এর শিক্ষকদের চাকরী সরকারিকরণ করেন। এ ছাড়াও নতুন ১২,০০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করে সংবিধানে অনুচ্ছেদ যুক্ত করেছেন। তাঁর এ সাহসী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে এবং স্বাক্ষরতার হার বর্তমানে (২০২১ সালে) প্রায় ৭৪ শতাংশে পৌঁছেছে।

ঘ) জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন
বঙ্গবন্ধু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান রচনার কমিটি করেই ক্ষান্ত হননি, ২৬ জুলাই ১৯৭২ দেশবরেণ্য বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’ গঠন করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু এ কমিশনের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। তিনি কমিশনকে-‘বর্তমান শিক্ষার নানাবিধ অভাব ও ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণ, শিক্ষার মাধ্যমে সুষ্ঠুজাতি গঠনে নির্দেশ দান এবং দেশকে আধুনিক জ্ঞান ও কর্মশক্তিতে বলীয়ান করার পথ নির্দেশ দেবার নির্দেশনা দেন।’ ১৯৭৪ সালের মে মাসে কমিশন তাদেও রিপোর্ট জমা দেন।

ঙ) সংবিধানে শিক্ষা সংক্রান্ত ধারা সংযোজন
১৯৭২ সারের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাাদেশের মাটিতে পা রাখেন। কালবিলম্ব না করে তিনি নেমে পড়েন দেশ গড়ার কাজে। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর, স্বাধীনতার মাত্র এক বছরের মধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর করেন। প্রণীত সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-
‘ রাষ্ট্র। (ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য,
(খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই পরিচয় সিদ্ধ করিবার উদ্দেশে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য,
(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’

চ) শিক্ষার গতিধারা নির্ধারণ
স্বাধীন বাংলাদেশে শিক্ষার ধরণ ও গতিধারা কেমন হবে তা ১৯৭৪ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশনে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। এরপরও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বক্তৃতায় শিক্ষার ধরণ ও গতিধারা সম্পর্কে বলেন-
‘আমি চাই কৃষি কলেজ,কৃষি স্কুল,ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল,কলেজ ও স্কুল,যাতে সত্যিকারের মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে পারবে। কেরানী পয়দা করেই একবার ইংরেজ শেষ করে দিয়ে গেছে দেশটা। তোমাদের মানুষ হতে হবে ভাইরা আমার।’

ছ) গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতা ও গঠনমূলক শিক্ষার প্রবর্তন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন তাত্ত্বিক হিসেবে তার শিক্ষাদর্শন প্রদান করেননি-তিনি জনমানুষের মাঝে থেকে শিক্ষাদর্শনের অনুশীলন করেছেন। তাঁর দর্শন ছিল গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক। এ জন্য অতি সহজেই বলতে পারেন-
 ‘আত্মসমালোচনা করুন, আত্মশুদ্ধি করুন। তাহলেই হবেন মানুষ।’
 ‘আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমাকে সমালোচনা করতে আমি তাদের অনুমতি দিয়েছি। সমালোচনার ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি নেই। কেননা, আমি জনগণকে ভালোবাসি, জনগণও আমাকে ভালোবাসে।’
 ‘আমি সৎ সমালোচনাকে স্বাগত জানাই। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আমি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে বিশ্বাসী।’
 ‘যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজনও যদি হয় সে, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।’
জ) শিক্ষা ও সমাজকে দুর্নীতিমুক্তকরণ
পাকিস্তান আমলে রাজনীতি করতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন উন্নয়নের প্রধান শত্রু দুর্নীতি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ও দুর্নীতিকে সংঞ্জায়িত করে বলেন-
 ‘শুধু নিজেরা ঘুষ খাওয়াই করাপশন নয়। করান্ট পিপলকে সাহায্য করাও কিন্তু করাপশন। নেপোটিজমও কিন্তু এ টাইপ অব করাপশন।’
 ‘নেশন মাস্ট বি ইউনাইটেড এগেইনেস্ট করাপশন। পাবলিক ওপিনিয়ন মবিলাইজ না করলে শুধু আইন দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যাবে না এবং সেই সিস্টেমই পরিবর্তন করতে হবে। ঘুণে ধরা সিস্টেম দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যায় না। এই সিস্টেমই হলো করাপশনের পয়দা। এই সিস্টেম করাপশন পয়দা করে এবং করাপশন চলে।’
 ‘যে ফাঁকি দেয় সে দুর্নীতিবাজ। যে ঘুষ খায় সে দুর্নীতিবাজ। যে স্মাগলিং করে সে দুর্নীতবাজ। যে ব্লাকমার্কেটিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে হোর্ড করে সে দুর্নীতিবাজ। যারা কর্তব্যপালন করে না তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করে তারাও দুর্নীতিবাজ। যারা বিদেশের কাছে দেশকে বিক্রি করে তারাও দুর্নীতিবাজ। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম শুরু করতে হবে।’
ঘুষ ও দুর্নীতি বন্দ না হওয়ায় একসময় তাঁর কন্ঠে অসহায়ত্ব ফুটে উঠে। তিনি আক্ষেপ কওে বলেন-
‘করাপশন বন্ধ কর, আল্লাহর দোহাই, করাপশন বন্ধ করার চেষ্টা কর। তোমাদের ইচ্ছে মতো দেওয়া হয়েছে। তোমরা পারবে।’

ঝ) মানবিক শিক্ষাধারার সূচনা
শিক্ষাদর্শনের অন্যতম মূলসুর মানবিক শিক্ষার প্রয়োগ। মানবিকতা ছাড়া শিক্ষা অসম্পূর্ণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানীদের অন্যায়-অনায্য কাজকর্ম দেখে বাংলাদেশে মানবিক শিক্ষাধারার সূচনা করতে চেয়েছেন। এজন্য তিনি বলেন-
 ‘সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আত্মোৎসর্গ করুন।’
 ‘পাপ আর পুণ্য পাশাপাশি চলতে পারে না।’
 ‘দুনিয়ার নিয়মই ভালোবাসা পেতে হলে ভালোবাসতে হয়। এবং সে ভালোবাসা সিনসিয়ারলি হওয়া দরকার। তার মধ্যে যেন কোনো খুঁত না থাকে।’

ঞ) যুগোপযোগী ও আধুনিক শিক্ষার ধারণা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তাঁর সময়ের চেয়ে অনেক অনেক আধৃনিক একজন মানুষ। তাঁর পোশাক, চলন-বলন, চিন্তাচেতনার মধ্যে এর প্রকাশ ঘটেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও তার প্রমান পাওয়া যায়। তিনি সংবিধানের মাধ্যমে এর প্রমান রেখেছেন- ‘ রাষ্ট্র... (খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই পরিচয় সিদ্ধ করিবার উদ্দেশে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য, (গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’
‘সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করিবার জন্য’ বাক্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমাজ পরিবর্তনশীল, সেই পরিবর্তনকে ধারণ করে শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা জরুরী যে কাজটি বর্তমান সরকার করছে শিক্ষায় প্রক্তুক্তি ব্যবহার করে। শিক্ষা ও উন্নয়ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন-
‘সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছার সংক্ষিপ্ত কোনো সড়ক নেই। ইন্সিত সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সমাজের প্রতি স্তরের মানুষকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।’

ট) শিক্ষায় বিনিয়োগকে পুঁজি মনে করা
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ক্ষমতা গ্রহণের পর শিক্ষাক্ষেত্রে তার কার্যক্রম দেখে। তিনি শিক্ষায় জিডিপির ৪% বরাদ্দ করা করেন। এ ছাড়া তিনি প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করেন।

ঠ) শিক্ষাকে সুসংহত করার জন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাকে সুসংহত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা স্বায়ত্বশাসন দিয়ে অ্যাক্ট ও অর্ডার জারিকরণ, প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করা, ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারকরণ, ইসলামী ফাউন্ডেশন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন।

ড) বাংলাভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করানো
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বিশ্বব্যাপি বাংলাভাষাকে পরিচিতি করানো। এজন্য তিনি ১৯৭৪ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে প্রথম আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন করেন। এখানে বিশ্বের নামী-দামী শিক্ষাবিদ সাহিত্যকদের আমন্ত্রণ জানানো হয় যাদের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলা ভাষার পরিচিতি পায়। অন্যদিকে তিনি ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাভাষায় বক্তৃতা করে বিশ্বে নজীর স্থাপন করেন।

ঢ) অসাম্প্রদায়িক শিক্ষার ভিত্তি গড়া
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি। সারা জীবন তিনি মাটি ও মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করেছেন। তাঁর অসাম্প্রদায়িকতার প্রমাণ দিয়েছেন কথা ও কাজে। তাঁর ২/১ টি বানি উদ্ধৃত করলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। যেমন-
 ‘আমি মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। রাজনীতিতে আমার কাছে মুসলমান, হিন্দু ও খ্রিস্টান বলে কিছু নাই। সকলেই মানুষ।’
 ‘আমাদের বাঙালিদের মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হলো আমরা মুসলমান, আর একটা হলো আমরা বাঙালি। পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে।’

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে শিক্ষা সংক্রান্ত ধারা যোগ করে তিনি এর প্রমাণ দিয়েছেন। এছাড়া অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে তাঁর মন্তব্য এখনও প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেছেন-
‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান মুসলমানদের ধর্মপালন করবে। হিন্দু তার ধর্মপালন করবে। খ্রিস্টান তার ধর্মপালন করবে। বৌদ্ধও তার নিজের ধর্ম পালন করবে। এ মাটিতে ধর্মহীনতা নাই, ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। এর একটা মানে আছে। এখানে ধর্মের নামে ব্যবসা চলবে না। ধর্মের নামে মানুষকে লুট করে খাওয়া চলবে না। ধর্মের নামে রাজনীতি করে রাজাকার, আলবদর পয়দা করা বাংলার বুকে আর চলবে না। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে দেওয়া চলবে না।’

৫. উপসংহার 
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের মে মাসের ৩ তারিখের কোন এক সময় বিশেষ কোন মানসিক পরিস্থিতিতে তাঁর ব্যক্তিগত নোটখাতায় লিখেন-,‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’

‘সমগ্র মানবজাতি নিয়ে যিনি ভাবেন এবং বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত ও নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা’ যিনি বলতে পারেন তাঁর শিক্ষাদর্শন তো শুধু বাংলাদেশ নয়-সারা বিশ্বের জন্য অনুসরণীয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, দল ও শাসন নিয়ে কারো ভিন্নমত থাকতে পারে তবে শিক্ষাদর্শন মানব জাতির জন্য এক অমূল্য সম্পদ। শিক্ষাদর্শনের বিশেষত্ব হলো এটা জীবনানুশীলন দ্বারা অর্জিত-গবেষণা দ্বারা প্রাপ্ত নয়। বর্তমান বিশ্বে একটি আলোচিত শিখন দর্শন হলো ডেভিড কব (David Kolb) এর অভিজ্ঞতাবাদ (Experiential Learning) যা বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনে পাওয়া যায়।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে গঠিত ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদা বাংলাদেশে প্রথম শিক্ষা কমিশন যারা ভারতে ১ মাস সফর করে, প্রায় দুইবছর কাজ করে, বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও পেশাজীবিদের সাথে কথা বলে ১৯৭৪ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধুর নিকট রিপোর্ট জমা দেন। বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় পরিচালিত কমিশন যে রিপোর্ট প্রদান করেন তাতে ৩৬টি অধ্যায় ও ৮টি পরিশিষ্ট রয়েছে যার প্রথম অধ্যায়ে শিক্ষার লক্ষ ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো- দেশপ্রেম ও সুনাগরিকত্ব, মানবতা ও বিশ্ব-নাগরিকত্ব, নৈতিক মূল্যবোধ, সামাজিক রুপান্তরের হাতিয়ার রুপে শিক্ষা, প্রয়োগমুখী অর্থনৈতিক অগ্রগতির অনুকূল শিক্ষা, কায়িক শ্রমের মর্যাদা, বহুমুখী শিক্ষা ধারার প্রবর্তন, নেতৃত্ব ও সংগঠনের গুণাবলী, সৃজনশীলতা ও গবেষণা এবং শিক্ষানীতিকে গতিশীল করা। বঙ্গবন্ধু মানুষের কল্যাণের জন্য যে শিক্ষা নিয়ে ভেবেছেন তা প্রকাশিত হয়েছে শিক্ষার লক্ষ ও উদ্দেশ্যের ১.৩ ধারায়। এতে বলা হয়েছে- ‘জাতীয় কল্যাণের স্বার্থে শোষণহীন নূতন সমাজ সৃষ্টির মহৎ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ বিশ্বের সকল সংগ্রামী মানুষের প্রতি বন্ধুত্ব ও একতার হস্ত প্রসারিত করতে হবে। মানুষে মানুষে মৈত্রী, সৌহার্দ ও প্রীতি এবং মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে।’

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর শিক্ষাদর্শন মানুষ, মানবাধিকার, বিশ্বশান্তি ও সকল প্রাণীর সহঅবস্থান এবং কল্যাণের দর্শন। তিনি কোন ঘোরপ্যাাঁচ না করে সহজে বলেন- ‘সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়।’
‘ধ্বংস নয় সৃষ্টি, যুদ্ধ নয় শান্তি।’ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো বর্তমান বিশ্বে শান্তির প্রত্যাশায় যুদ্ধ চলছে যা একটি পরিহাস মাত্র। সেক্ষত্রে বিশ্বব্যাপি বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের প্রয়োগ হতে পারে শান্তি, মানবতা ও বৈশ্বিক মৈত্রির এক মহৌষধ। বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর আমা ও ক্ষোভের কথা বলেন-
‘সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি। এমন উর্বর জমি দুনিয়াতে খুব অল্প দেশেই আছে। তবুও এরা গরিব। কারণ যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজেকে এরা চেনে না। যারা যতদিন চিনবে না এবং বুঝবে না, ততদিন এদের মুক্তি আসবে না।’

উল্লিখিত আলোচনা ও তথ্য বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে এটাই বলা যায়, বাংলাদেশের সমকালীন জীবনে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন আজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন