নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ১৬ অক্টোবর, ২০২১
পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় তরুণ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ-র আজ জন্মদিন। ১৯৫৬ সালের এই দিনে(১৬ অক্টোবর) বরিশাল রেডক্রস হাসপাতালে কবি রুদ্র জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালের ২১ জুন তিনি আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে চির বিদায় নেন। কবি রুদ্রের অকাল মৃত্যু বাংলাদেশের জন্যে একটি অতি বিয়োগান্তক ঘটনা কারন জীবদ্দশায় তিনি ব্যক্তিগত জীবনে যেমন ব্যপক জনপ্রিয় ছিলেন তেমনি তাঁর সাহিত্য-কর্ম, বিশেষ করে কবিতা ছিল দেশপ্রেমের রাজনৈতিক চেতনায় ঋদ্ধ ও একটি আধুনিক ন্যায় সমাজের স্বপ্ন আকাঙ্খায় ভরপুর।
কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ বাগেরহাটের তৎকালীন রামপাল উপজেলার (পরবর্তীতে রামপাল ও মোংলা দুই ভাগে বিভক্ত) সাহেবেরমেঠ গ্রামের বিখ্যাত শেখ পরিবারে জন্ম নেন। তাঁর বাবা শেখ মুহম্মদ ওয়ালিউল্লাহ উক্ত অঞ্চলের একজন খ্যতনামা চিকিৎসক ছিলেন। মোংলা পোর্টের চিকিৎসক হিসেবে তিনি ‘৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষভাবে সহায়তা করেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি পাকিস্তান সেনাদের দ্বারা আটক হন ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত যশোর জেলে কারাবাস করেন।
রুদ্রের নানা শেখ মুহম্মদ ইসমাইল ছিলেন মোংলা অঞ্চলের একজন খ্যাতনামা ও ধনাঢ্য ব্যক্তিত্ব। এই পরিবারের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ছিল ব্যাপক। রুদ্রের জীবনেও নানাবাড়ির প্রভাব পড়েছিল। খুব দ্রুত বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানো বা দেশের অস্থির রাজনৈতিক বলয়ের নাগপাশ থেকে দেশের মানুষের মুক্তির চিন্তা সমভাবে রুদ্রের জীবনে উপস্থিত ছিল যা তাঁর কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ পড়াশুনা শুরু করেন মোংলার মিঠেখালি গ্রামের পাঠশালা থেকে। পরে তিনি মোংলার সেন্ট পলস স্কুলে কিছুদিন পড়াশুনা করে সবশেষে ঢাকার ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুল থেকে ১৯৭৩ সালে ৪টি বিষয়ে লেটারসহ বিজ্ঞানে প্রথম বিভাগে এস এস সি পাশ করেন। ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান)-সহ এম এ পাশ করেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে যথাক্রমে ১৯৮০ ও ১৯৮৩ সালে।
শিক্ষিত, মেধাবী, মার্জিত ও কোমল মনের মানুষ ছিলেন কবি রুদ্র। রাজনৈতিকভাবে ছিলেন গভীর সচেতন। ৭৫ পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাজনীতি যখন মৌলবাদী স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের উপর ক্রমশ নির্ভরশীল হয়ে উঠছিল, তখন শত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও রুদ্র তাঁর অমর একটি কবিতায় লিখেছিলেন, ‘জাতির পাতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুন’। এই লাইনটি আজও কতো প্রাসঙ্গিক, পাঠকমাত্রেই তা উপলব্ধি করবেন। তাঁর এই কবিতার অপর একটি চরণ, ‘ধর্ষিতা বোনের শাড়ি ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা’! আমাদের জাতীয় পতাকার এমন অবিস্মরণীয় চিত্রকল্প একজন অসধারন সৃজনশীল কবির পক্ষেই রচনা করা সম্ভব।
তরুণ সমাজের কাছে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তাঁর কবিতা ও ব্যবহারগুণে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কবি রুদ্র তাঁর রাজনৈতিক ভাবনা ও কাব্য চিন্তা মিলিয়ে সাহিত্যাঙ্গনে নেতৃত্বের আসন নেন। সেই সময়ে তাঁর চারপাশের বন্ধুদের কাছেও তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয়। তাঁকে ছাড়া কোন আড্ডাও যেন অপূর্ণ ছিল। বন্ধুদের নিয়ে তিনি গঠন করেন ‘রাখাল’ নামে একটি সংগঠন। রাখালের মূল চেতনা বক্তব্য ছিল, ‘কবিতা ও রাজনীতি একই জীবনের দুই রকম উৎসারণ’।
পরবর্তীকালে জাতীয় কবিতা উৎসব অনুষ্ঠানেরও অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি।
যদিও তাঁর সৃজনশীল রচনার বয়স খুব কম তবুও তাঁর রচনা সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তাঁর জীবদ্দশায় মোট বই বেরিয়েছে ৭টি। ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয় রুদ্রের প্রথম কবিতার বই ‘উপদ্রুত উপকূল’। পরবর্তী ৬টি কবিতার বই হল, ‘ফিরে চাই স্বর্ণ গ্রাম’ (১৯৮১), ‘মানুষের মানচিত্র’ (১৯৮৪), ‘ছোবল’ (১৯৮৬), ‘গল্প’ (১৯৮৭), ‘দিয়েছিলে সকল আকাশ’ (১৯৮৮), ‘মৌলিক মুখোশ’ (১৯৯০)। তাঁর মৃত্যুর পর পরেই প্রকাশিত হয় ‘এক গ্লাস অন্ধকার’ (১৯৯২) ও একটি নাট্যকাব্য ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ (১৯৯২)।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ-কে বলা হয় প্রেম ও দ্রোহের কবি। কবিতায় বিদ্রোহ, রাজনীতি, প্রেম ও সামাজিক অসঙ্গতি এলেও তিনি তাঁর কবিতার একটি বড় উপজীব্য করে তুলেছিলেন তাঁর নিজের এলাকা, রামপাল ও মোংলা অঞ্চলের উপদ্রুত জনজীবন, সামাজিক অস্থিরতা ও প্রেম যা হয়ে উঠেছিল এক গুরুত্বপূর্ণ কাব্য পটভূমি।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে মৃত্যুর কিছুকাল আগ পর্যন্ত রুদ্র মোংলায় থাকতেন। তিনি বেশ কিছু গানও রচনা করেছেন। মোংলা-রামপালের বেশ কয়েকজন স্থানীয় যুবকদের নিয়ে তিনি ‘অন্তর বাজাও’ নামে একটি গানের দল গঠন করেছিলেন। বেশিরভাগ গানে তিনি নিজেই সুর দিয়েছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম ‘ভালো আছি ভালো থেকো’–খ্যাত ‘আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে’। গানগুলি দুই বাংলায় বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ-র একটি জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। এছাড়া তাঁর রচনা সামগ্রীও প্রকাশিত হয়েছে। রুদ্রের কবিতা নিয়ে অনেক লেখক গবেষক কাজ করেছেন।
আজ এই বিশেষ দিনে কবির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।
রেজা সেলিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রুদ্রের সহপাঠী ও পরিচালক, আমাদের গ্রাম
ই-মেইল: rezasalimag@gmail.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।