ইনসাইড থট

একাত্তরের ক্ষতচিহ্ন এবং চীনের ক্ষমা চাওয়ার যৌক্তিকতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১:০৮ পিএম, ২৭ অক্টোবর, ২০২১


Thumbnail

একাত্তরের ক্ষতচিহ্ন স্বাধীন বাংলাদেশে এখনও দগদগে ঘা হয়ে বিরাজ করছে। এবারে ২০২১ সালের দুর্গাপূজার সময় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলা আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী এবং তাদের অনুসারীদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের দিকে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। আর সেসময় পাকিস্তানী সেনারা চীনের সরবরাহকৃত বুলেট দিয়ে বাঙালিদের হত্যা করেছে। এই পরিস্থিতিতে চীন যখন তার সব ঋতুর বন্ধু পাকিস্তানের উপর ভর করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বলয় বৃদ্ধি করতে চাইছে তখন এ ব্যাপারে দ্বিতীয়বার চিন্তা তথা বাংলাদেশের নিকট চীনের ক্ষমা চাওয়ার যৌক্তিকতা এই লেখায় তুলে ধরা হচ্ছে। 

ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে চীনের নেক্ড়ে-যোদ্ধা কূটনীতি দক্ষিণ এশিয়ায় তার বন্ধু খুঁজে বেড়াচ্ছে। চীন এক্ষেত্রে তার সব ঋতুর বন্ধু পাকিস্তান, নতুন দোসর নেপাল, ঋণফাঁদে বন্দী শ্রীলঙ্কাকে পেয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের সাথে সাথে সেদেশও চীনের ক্ষমতার অধীনে চলে গিয়েছে। যদিও তালেবান শাসিত বর্তমান আফগানিস্তান সরকারি পর্যায়ে ভারতের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চাইছে। দৃশ্যত বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য চীন উদ্গ্রীব হয়ে আছে। 

উন্নয়ন অংশীদার চীন

সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল হত্যাকারী এবং হত্যার শিকারে পরিণত হওয়া দু’টি রাজনৈতিক সত্ত্বার মধ্যকার মিথ্ষ্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। হত্যাকারী পাকিস্তান বাহিনী বাঙালিদের চীনা বুলেট দিয়েই হত্যা করেছিল। চীনের বিরোধীতা সত্ত্বেও ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি চীন। বঙ্গবন্ধু চীনের সাথে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চীন তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরেই কেবল চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর এবং ১৯৯১ সালে দ্বিতীয় গণতান্ত্রিক পালাবদলের প্রেক্ষপটে বাংলাদেশ সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চীনের সাথে অংশীদারিত্ব শুরু করে। খালেদা জিয়ার ইসলামপন্থী শাসনামলে ভারতীয় প্রভাবমুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে চীনের দ্বারস্থ হওয়া শুরু করে। যা উভয় দেশের জন্য সম্প্রসারিত কৌশলগত লাভ ছিল। চীন ও পাকিস্তান তখন (১৯৯১-১৯৯৬) বাংলাদেশে সর্বাধিক সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী ছিল। জতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের জন্য এগুলো প্রয়োজন হয়েছিল। চীন-পাকিস্তান অক্ষ শক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাব দেশের রাজনীতি, আমলাতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গভীরে প্রবেশ করেছিল। 

পরবর্তী বছরগুলোতে, বাংলাদেশে মেগা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে চীন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হিসাবে আবির্ভূত হয়। এই সাথে আনন্দে বিগলিত হয়ে কিছু রাজনীতিক কিংকং-এর মত লাফাতে শুরু করে। সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী পরপর চতুর্থবারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে চীনের সাথে বহুকোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে। দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত তৃতীয় বিশে^র কয়েকটি দেশে ঋণ-ফাঁদে ধরা খাওয়া সম্পর্কে বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোর প্রতি বাংলাদেশের নেতাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। যা ঘটেছে তা হলো মেগা প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগকৃত বিশাল অঙ্কের টাকা এসব দেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগার পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ঋণের ফাঁদে বন্দী হওয়া সরকারগুলোকে ঋণমুক্ত করার জন্য চীন মেরিটাইম বন্দর এবং অন্যান্য ফ্যাসিলিটিজগুলো ৯৯ বছরের লিজ নিয়েছে। এভাবেই কাহিনীটির পরিসমাপ্তি ঘটে!

বাংলাদেশের গণহত্যায় চীনের সক্রিয় সহযোগিতা

১৯৭১ সালের পাকিস্তানের জল্লাদ সেনাবহিনী ও তাদের ইসলামী মিলিশিয়া যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে গণহত্যা ও ধর্ষণের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ঘনিষ্ঠ সহযোগী পাকিস্তান তখন বাঙালিদের দমনের জন্য সীমাহীন সামরিক সরঞ্জাম এবং রাজনৈতিক মদদ লাভ করেছে। পাকিস্তানী সংবাদ মাধ্যমের মত চীনা গণ মাধ্যমও তখন বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানী বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার ব্যাপারে নীরব থেকেছে। বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানীদের দ্বারা পরিচালিত গণহত্যার জন্য প্রয়োজনীয় গুলি-গোলা ও অস্ত্র সরবরাহের জন্য চীনের উচিৎ দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমা চাওয়া। গণহত্যার প্রতিটি শিকারের জন্য রাওয়ালপিন্ডির যুদ্ধবাজদের নিকট উপহার হিসাবে ’মেইড ইন চায়না’ লেখা বুলেট সরবরাহ করত চীন। এই বুলেটগুলো স্বাধীন বাংলাদেশ যারা চাইতেন তাদের হত্যার জন্য ব্যবহার করা হতো। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিশ্ব জনমত চীন উপেক্ষা করে চলত। জীবন বাঁচানোর জন্য যে এক কোটি বাঙালি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের কান্না এবং দুর্বিসহ অবস্থার কথা চীনের কানে তখন পৌঁছায় নাই। বিশে^র অনেক দেশে এক কোটি লোকসংখ্যাও নাই। অপরপক্ষে, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে চীনা-পন্থী বামপন্থী রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা মওলানা ভাসানী বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে অনুরোধ করলেও তারা এর কোন উত্তর দেয় নাই। এর পরিবর্তে, চীন অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহ বৃদ্ধি করেছে। স্বাধীনতা লাভের পর চীন সদ্যজাত স্বাধীন বাংলাদেশকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে হয়রানি করা অব্যাহত রেখেছে। 

স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদাতা সর্বশেষ দেশ চীন

১৯৭২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, গ্রেট ব্রিটেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও অনেক দেশ একটির পর একটি করে যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সমস্যা শুরু হয় যখন ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য বাংলাদেশ আবেদন করে তখন। বাংলাদেশের যখন আন্তর্জাতিক খাদ্য সাহায্য এবং পুনর্বাসনের জন্য বাজেট প্রয়োজন ছিল তখন চীন স্বতস্ফূর্তভাবে দুইবার জাতিসংঘে বাংলাদেশে সদস্যপদের বিরোধীতা করেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে চীন কর্তৃক বাংলাদেশের আবেদনের বিরোধীতা করার কারণ ভারতের হাতে পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী এবং বেসামরিক ব্যক্তিবর্গেও প্রত্যাবর্তণ বাস্তবায়ন না হওয়া। নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানকে ভালো রাখার উদ্দেশ্যেই চীন এই কাজটি করেছে। এশীয় মহীরুহ চীনা তৎপরতায় সামনে টিকে থাকা এবং দেশের কূটনৈতিক সামর্থ্য বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (এন এ এম), কমনওয়েলথ এবং ইসলামী সম্মেলন সংস্থা(ওআইসি)য় যোগদান করেন। যা বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করে।

ওআইসি সম্মেলনের আগে ইসলামী নেতাদের চাপে ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এমনকি পাকিস্তান কর্তৃক স্বীকৃতি দেয়ার পরেও চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় নাই। সেসময় বাংলাদেশে সক্রিয় চীনাপন্থী কমিউনিস্ট পার্টিগুলো চীনা কমিউনিস্ট পার্টিও আশীর্বাদ লাভ করত। কয়েকটি ভাগে বিভক্ত বামপন্থী দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল, স্বাধীন বাংলাদেশকে বাতিল করতে চেয়েছিল, ভারতপন্থী বলে নিন্দা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের বিরোধীতা করেছিল।চীনাপন্থী চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো তখন আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকত এবং তাদের দলগুলোর নামের আগে ইচ্ছাকৃতভাবে “পূর্ব পাকিস্তান“  “পূর্ব বাংলা“ শব্দবন্ধগুলো ব্যবহার করত। অবাক করার কোন বিষয় নয় যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর চরম বামপন্থী দলগুলো মাটির নীচ থেকে তাদের মাথা উঁচু করে এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মদতে সশস্ত্র যুদ্ধ বাতিল করে। বঙ্গবন্ধু তাঁর “আমার দেখা নয়াচীন“ এ লিখেছেন যে তিনি দু’বার চীন সফর করেছিলেন। প্রথম ১৯৫২ সালে এবং পরে ১৯৫৭ সালে। তাঁর এই সফরের সময় তিনি মাও জে দং, জৌ এন লাই প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য তাঁর অনুরোধে চীন সম্মত হবে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থন আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক চ্যানেল উন্মুক্ত করেছিলেন। বেইজিংয়ে সেসময় পাকিস্তানের ঝানু কূটনীতিক (১৯৬৯-১৯৭২), পুরাতন ঢাকার নবাব বংশের সদস্য খাজা মোহাম্মদ কায়সারকে তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার পর দেশে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। 

রাষ্ট্রদূত কায়সারকে চীনা প্রধানমন্ত্রী জৌ এন লাই এই মর্মে অবহিত করেন যে তিনি তাঁর অসুবিধাটা বোঝেন। যা হোক, কায়সার ১৯৮৪ সালে দুই বছরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হয়ে বেইজিংয়ে ফিরে আসেন। সাংবাদিক ও কবি ফয়েজ আহমদকেও বঙ্গবন্ধু চীনে পাঠিয়েছিলেন। ১৯৬০এর দিকে রেডিও বেইজিং এর বাংলা সার্ভিসে ফয়েজ যখন কাজ করতেন তখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টিও উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল। ১৯৬৬-১৯৬৯ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর সাথে ফয়েজ-এর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল। তখনই চীনা রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ফয়েজএর ঘনিষ্ঠতার কথা বঙ্গবন্ধু জানতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমত ফয়েজ হংকং হয়ে বেইজিং যান এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টিও জ্যেষ্ঠ্য নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। দুর্ভাগ্যবশত, তিনি বেইজিং থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসেন। চীনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মিশনগুলো একের পর এক ব্যর্থ হবার পরেও বঙ্গবন্ধু আশা ছাড়েন নাই। শেষ পর্যন্ত চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, তবে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধু সরকার থাকতে নয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী অভ্যুত্থানের নেতাদের সরকারের শাসনকে চীন স্বীকৃতি দেয়। স্বাধীন হবার চার বছর এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। খুনি মোশতাকের নেতৃত্বে খুনি সেনা কর্মকর্তারা ৮৪ দিন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেছে। এসময় তারা চার জাতীয় নেতাকেও কারা অভ্যন্তরে হত্যা করেছিল। বাংলাদেশের রক্তাক্ত অভ্যুদয়ের সময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির গণ-বিরোধী নীতি, পাকিস্তান কর্তৃক গণহত্যা অভিযান শক্তিশালী করার লক্ষ্যে চীনা বুলেট ও সামরিক সরঞ্জাম যোগান দেয়ার জন্য চীনের উচিৎ ক্ষমা চাওয়া। বঙ্গবন্ধুকে হয়রানি করার জন্যও চীনের ক্ষমা চাওয়া যৌক্তিক। 
 

লেখক: ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন