কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা ভাই আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। বদিউজ্জামান বাদশা শুধু একজন ব্যক্তি নন, একটি রাজনৈতিক প্রতিভার নাম, সকল কৃষিবিদের অনুভূতির নাম। তথ্যে-উপাত্তে সমৃদ্ধ অনর্গল বক্তৃতা দেওয়ায় সক্ষম বাদশা ভাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রাঞ্জল শব্দচয়নে বক্তৃতা দিয়ে দর্শক শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধের মত আকর্ষণ করার মত একজন ছাত্র নেতা ছিলেন। অত্যন্ত গণমুখী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী এবং জনবান্ধব ব্যক্তি হলেও, আজীবন সংগ্রামী এই নির্লোভ এবং ত্যাগী মানুষটি অনেকটা অবমূল্যায়িত হয়ে সকলের অগোচরে পাদপ্রদীপের নীচে থেকেই চলে গেলেন।
কৃষিবিদদের গর্ব বদিউজ্জামান বাদশা ভাই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এর আলোচনা সভায় সর্বশেষ বক্তৃতা করেছেন। সেদিনের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল তিনি অসুস্থ। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘বাদশা ভাই, আপনাকে বিধ্বস্ত লাগছে। আপনি কি অসুস্থ?’ উত্তরে বললেন,‘হ্যাঁ, শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। জ্বর জ্বর লাগছে, খুসখুসে কাশি আছে, ডাক্তার দেখাতে হবে’। তিনি সবসময় সকলকে বিদায় দিয়ে আমাদের কয়েকজনকে নিয়ে অনুষ্ঠানের চুলচেরা ভুলভ্রান্তি বিশ্লেষণসহ মূল্যায়ন করে সবার শেষে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতেন। কিন্তু সেদিন অনুষ্ঠান শেষে দ্রুত চলে গেলেন।
বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকগণ উপসর্গ দেখে ডেঙ্গু, করোনা ধারনা করে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। উনার শরীরে যে দুরারোগ্য ব্যাধি বাসা বেঁধেছিল, সেটা আঁচ করতেই পারেনি। জ্বর কমছিল না। খুব দ্রুত শরীরের ওজন লোপ পাচ্ছিল। কিছুতেই আরোগ্য লাভ না করায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। সেসময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ‘Dewali` চলমান থাকায় চিকিৎসার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। ফলে বাদশা ভাই এর চিকিৎসার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা বিলম্বিত হয়েছিল। এমনিভাবে অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। সর্বশেষে রোগ নির্ণয় হলো, Pancreatic carcinoma`, ৪র্থ ধাপে। তখন সব শেষ। অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসকরা আত্মসমর্পণ করলেন। পরিস্থিতি অনুধাবন করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে Critical অবস্থায় ঢাকার বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। নিয়তি কখন কার ভাগ্যে কি বিপর্যয় নিয়ে আসে বলা যায় না। বাদশা ভাই সবকিছুই অবগত ছিলেন। ICU তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি একে একে আমাদের সকলের নিকট থেকে ‘ক্ষমা’ চেয়ে বিদায় নিচ্ছেন। বড় হৃদয়বিদারক সেই দৃশ্য। শুধু বলছেন, ‘আমাকে ICU তে রেখ না। যে কয়দিন বেঁচে আছি সকলের সামনে থাকতে চাই। তোমাদের দেখতে চাই’। জীবনের অন্তিম মুহূর্তেও কৃষিবিদদের মনে রেখেছেন। মাত্র কয়েক দিন জীবন-মৃত্যু যুদ্ধ করে পরাজিত হয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
প্রাণহীন বাদশা ভাইকে নিয়ে আমিও গিয়েছিলাম শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, বাদশা ভাইর জন্মভূমি। নকলা-নালিতাবাড়ীর মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন তিনি। প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ঢল। এ দৃশ্য দেখে আমার মনে পরে যায় নাটোরের কালামানিক মমতাজউদ্দিন আহমেদের কথা। তাঁকে হত্যা করেছিল বিএনপির সন্ত্রাসীরা। জনপ্রিয় নেতা মমতাজ ভাই এর শোকসভায় উপস্থিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ঐ শোকসভায় যাওয়ার পথে মাননীয় নেত্রীর গাড়িতে আমিও ছিলাম। মাননীয় নেত্রী বলেছিলেন,‘বাহিরে তাকিয়ে দেখ, ধানক্ষেতের আইল বেয়ে পিঁপড়ার মত লাইন ধরে মানুষ আসছে। একেই বলে জননেতা’।
আমি গত ২২ নভেম্বর ২০২১ সোমবার শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে আরেক জননেতার জানাজা দেখলাম। লোকে লোকারণ্য উপজেলা সদর এলাকা। গ্রাম থেকে দলে দলে আসছে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। তারাগঞ্জ হাই স্কুলের বিশাল মাঠে তিল ধারণের ঠাঁই নাই। স্থানীয় নেতারা, জনপ্রতিনিধিরা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরছেন। বক্তারা বলছেন, ‘একজন মানুষের মৃত্যু হলে তার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশার মৃত্যুতে নকলা-নালিতাবাড়ীর সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলো। মানুষের সেবা করাই ছিল বাদশা‘র নেশা’।
গতকাল গিয়েছিলাম সচিবালয়ে। আওয়ামীলীগের শুভাকাঙ্ক্ষী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকলেই বাদশা ভাইর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছেন, একজন বদিউজ্জামান বাদশা দ্বিতীয়বার সৃষ্টি হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভাত ও ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য তৎকালীন স্বৈরাচার ও বিএনপি-জামাত বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে গড়ে উঠা ছাত্রনেতারা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। উনারা হাইব্রিডদের চাপে প্রতিভা বিকাশের সুযোগও পেল না’।
মেধাবী ছাত্র বদিউজ্জামান বাদশা ১৯৭৪ সালে ৫টি লেটারসহ এসএসসি পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ জামালের সহপাঠী ছিলেন। কিন্তু তিনি কখনো শেখ জামালের সহপাঠী পরিচয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে বিশেষ সুবিধা নেননি বা নেওয়ার চেষ্টাও করেননি, যা ইদানীং হচ্ছে। এইচএসসি পাশ করে সিলেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। নালিতাবাড়ীর অজপাড়াগাঁয়ের মেধাবী ছাত্র বদিউজ্জামান বাদশা গ্রামবাংলার কৃষি ও কৃষকদের সেবার ব্রত নিয়ে মেডিকেল কলেজ ছেড়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
বদিউজ্জামান বাদশা ৭৫ পরবর্তী কঠিন দিনগুলোতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুজিবীয় আদর্শের অগ্র সৈনিক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সমগ্র বাংলাদেশে তিনি সামরিক শাসন এবং স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
অকালে চির বিদায় নিলেও তার ছিল দীর্ঘ এক বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবন। বদিউজ্জামান বাদশা ভাই দলের দুর্দিনে বাকৃবি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেওয়া একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। অনেকেই হয়তো তাকে ভুলে যাব আবার অনেকেই ভুলতে পারব না। তিনি চমৎকার বক্তৃতা করতেন। বক্তৃতায় তার নিজস্ব স্টাইল ছিলো। ছাত্রজীবনে উনার বক্তব্য মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম। বক্তব্যে কণ্ঠের উঠানামা ছিল অসাধারণ। একজন পরিপূর্ণ রাজনীতিবিদ হওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে তিনি ফুলটাইম রাজনীতি করতেন। শেরপুর জেলার নলিতাবাড়ির উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির মহাসচিবেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সুবাদে সারা বাংলাদেশে বাদশা ভাই এর ব্যাপক পরিচিতি ছিল। বাংলাদেশ কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। আমাদের বিশ্বাস ছিল, গণমুখী চরিত্রের সাহসী মানুষ, তুলনাহীন জনপ্রিয় নেতা বাদশা ভাই একবার জাতীয় সংসদে যেতে পারলে এদেশের মানুষ বুঝতে পারত তৃণমূলের রাজনীতিবিদ কাকে বলে, রাজনৈতিক বক্তা কাকে বলে, এবং সাংগঠনিকভাবে গ্রামাটিক্যাল মাস্টার কাকে বলে। জাতির দুর্ভাগ্য, সে সুযোগ তিনি পাননি।
রাজনীতির বন্ধুর পথে তিনি হোঁচট খেয়েছেন বারবার। নিয়তিও তাকে নিরাশ করেছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের তুমুল জনপ্রিয় নেতা হয়েও তিনি বাকসু নির্বাচন পাননি, নালিতাবাড়ীর অপ্রতিরোধ্য নেতা হয়েও তিনি সংসদে বসতে পারেননি, আওয়ামী লীগের অবিচল আদর্শিক নেতা এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ১০০% আস্থাভাজন হয়েও অদৃশ্য কারণে (!) তিনি কেন্দ্রীয় কোনো পদ পাননি। অথচ এসকল পদের জন্য তর্কাতীত যোগ্যতা উনার ছিলো। এজন্য বুকচাপা কষ্ট থাকলেও প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক নেতার মত তিনি তা প্রকাশ করতেন না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্যে তিনি অনেক অপ্রিয় সত্য কথা বলেছেন, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কাউকে অশ্রদ্ধা করে কোনো কথা বলতে কোনোদিন শুনিনি। রাজনৈতিক নেতাদের পথ কুসুমাস্তীর্ণ হয় না। জনপ্রিয় হয়েও তিনি সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিলেন না। রাজনীতিতে ঘরে-বাইরে শত্রু থাকে, উনারও ছিলো। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আওয়ামী লীগের বা ছাত্রলীগের দুর্দিনে বাদশা ভাই এর ত্যাগ আর অবদানকে অস্বীকার করবে এমন শত্রুও তার ছিল না।
মানুষ মরণশীল। প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কিছু কিছু মৃত্যু মেনে নিতে বড় কষ্ট হয়।
নবীন প্রবীণ সকল কৃষিবিদদের আপনজন, বরেণ্য কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা ভাই এর মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। বাদশা ভাই নেই, কিছুতেই ভাবতে পারছি না । বড্ড বেশি রাজনৈতিক অবহেলায় নিঃশব্দে বিদায় নিলেন আমাদের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ছাত্রলীগের অবিসংবাদিত নেতা, কৃষিবিদদের প্রিয় ‘বাদশা’ ভাই ।
২৪ নভেম্বর ২০২১ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার উপসম্পাদকীয় কলামে পীর হাবিবুর রহমান সাহেব যথার্থই লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের বাদশাহরা দহনে দগ্ধ হয়েই চলে যায়‘।
জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠিত নেতারা নৌকা প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হন, এমনকি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের পদ-পদবীধারী হয়েছেন। কিন্তু স্কুল জীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগ করা অসংখ্য প্রথম সারির নেতারা বাদশা ভাইর মত অন্তদহনে দগ্ধ হয়ে, ভস্ম হয়ে হারিয়ে গিয়েও, আদর্শচ্যুত হয় নাই।
কিছু মানুষ গায়ের ঘাম ঝরিয়ে বাগান সাজায়, কিছু লোক সেই সাঁজানো বাগানের ফুলের সুবাস উপভোগ করে।
১৯৮০ থেকে ২০২১, দীর্ঘ ৪১ বছর এক সঙ্গে কাটানো কত স্মৃতি মনে পড়ছে আজ। একদিন রাতে বিভিন্ন হলে জনসংযোগ শেষে কোথাও রাতের খাবার না পেয়ে প্রফেসর ফয়সল স্যারের বাসায় গেলাম। ফয়সল স্যার এখন আর বেঁচে নেই। তিনি আমাদের দলীয় সমর্থক। রাত তখন ১০টা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি মফস্বলে অবস্থিত। রাত ১০টা গভীর রাত। সব দোকানপাট বন্ধ। কোথায়ও খাবার না পেয়ে কো-অপারেটিভ মার্কেট (বর্তমান কামাল-রনজিত মার্কেট) থেকে মুড়ি কিনে ফয়সাল স্যারের বাসায় গিয়ে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, সরিষার তেল দিয়ে মুড়ি মেখে রাতের খাবার খেয়েছি। ডঃ মনসুরুল আমিন স্যার ছিলেন ব্যাচেলর। রাতে খাবার না পেয়ে মনসুরুল আমিন স্যারের খাবার করে তিনজনে ভাগ করে খেয়েছি। আমরা দুজনেই শাহজালাল হলের একই বিল্ডিং এর আবাসিক ছাত্র ছিলাম। অসংখ্য স্মৃতি আজ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মনের অজান্তেই চোখের কোনে জমে উঠছে দু’ফোটা পানি-শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার।
আজ থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্বে শাসককুলের ষড়যন্ত্রে বিষপানে আত্মহত্যার পূর্বে গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন, ‘The time of departure has arrived. We go our ways. I to die, you to live but which is better only God knows‘. বাদশা ভাই তার রাজনৈতিক জীবন অসমাপ্ত রেখে নিজের জীবনের ইতি টেনে নীরবে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া দেখে কথাটি মনে পড়লো।
বাদশা ভাইর হাজারে হাজার ভক্তকুল আর লক্ষ লক্ষ এলাকাবাসী অশ্রুসিক্ত, বাকরুদ্ধ, হতবিহ্বল। বাদশা ভাইর জন্যে আমাদের সকলের প্রার্থনা- ‘আপনার হৃদয় শান্ত হোক। আপনি যেই নকলা-নালিতাবাড়ীর জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন, সেই জনগণের পাশেই নালিতাবাড়ীর মাটিতে আপনি শান্তিতে ঘুমান। মহান আল্লাহ বাদশা ভাইকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।’
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল শেখ হাসিনা শান্তির দূত জো বাইডেন ইরান
মন্তব্য করুন
আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক ড. হাছান মাহমুদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা।
আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের লোডশেডিং চলছে। গত বুধবার থেকে সংবাদপত্র বের হচ্ছে না। টানা ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধের বিশ্ব রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। না কোন প্রতিবাদে নয়, দাবী আদায়ের জন্য নয়। ছুটির ফাঁদে সংবাদপত্র বন্ধ আছে। সংবাদপত্রকে বলা হয় জরুরী সেবা। চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন জরুরী সেবা দেন, তেমনি সংবাদকর্মীদের কাজও হলো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেয়া। বিশেষ করে ছুটির সময় এটার প্রয়োজন আরো বেশী। এবার দেশে একটা দীর্ঘ ছুটি। এসময় সংবাদপত্র অনেক জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো, ছয়দিন যদি হাসপাতালে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বলতো ছয়দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে না। তাহলে কি হতো? আমিতো মনে করি, সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিষয়টিও তেমনি আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের এনিয়ে বিকার নেই।