লিট ইনসাইড

স্মৃতির পাতায় অমলিন কবি শামসুর রাহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২:৪৭ পিএম, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮


Thumbnail

‘বৃক্ষের নিকটে গিয়ে বলি, দয়াবান বৃক্ষ তুমি একটি কবিতা দিতে পারো’- তিনি এমন কবিতা চেয়েছেন বৃক্ষের কাছে, জরাজীর্ণ দেয়াল এবং কোনো এক নাম না জানা বৃদ্ধের সম্মুখে, তাঁরই ‘একটি কবিতার জন্য’ কবিতায়। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান। এই কবিতাই তাকে অনেককিছু দিয়েছে। খ্যাতি, সম্মান আর ভালোবাসায় আজও বার বার সিক্ত হন এই কবিতার রাজপুত্র। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় তাঁরই কলমে উঠে এসেছে অসংখ্য কালজয়ী কবিতা।

তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি যতোটা বড়, লেখার ব্যাপ্তিও ততো বেশি। ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মানো এই কবি ব্রিটিশ-পাকিস্তান-বাংলাদেশ, জীবদ্দশায় এই তিন শাসনকালই দেখেছেন। ব্রিটিশ আর পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন সমাজ ও রাজনীতি সচেতন এই কবি। সেই শাসন শেষে পাওয়া নিজের দেশমাতৃকার অনিয়মের বিরুদ্ধেও লিখে গেছেন শামসুর রাহমান।

শামসুর রাহমান আমৃত্যু কাব্য সাধনায় নিবেদিত ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের কবিতাঙ্গনে দীর্ঘকাল প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০৭ সালে মারা যাওয়ার পরও বাংলা কবিতাঙ্গনে তাঁর প্রভাব কমেনি। বরং যতই তাঁর কবিতা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, পর্যালোচনা হচ্ছে ততই তাঁর কবিত্ব শক্তির গভীরতা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে।

সমাজ তাকে ‘নাগরিক কবি’ অভিহিত করলেও তিনি মূলত জীবনবাদী লেখক। তাঁর লেখায় ছিল চিন্তার অপার স্বাধীনতা। মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে পছন্দ করতেন। আর এজন্য প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির ভয়-ভীতিও তাকে কখনো পিছু হটাতে পারেনি। তাই তিনি পেয়েছেন অকুতোভয় উপাধি। যা তাকে আমাদের অনুপ্রেরণার পাত্রে পরিণত করেছে।

শামসুর রাহমান লেখায় অনেক বিষয় উঠে এসেছে। তবে শহরে বেড়ে ওঠার কারণে সবচেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে আমাদের নগরজীবন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও তিনি প্রচুর লেখালেখি করেছেন। সেই সময়ে তাঁর লেখায় ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ, সমকালীন রাজনীতি সবই উঠে আসতো। আমরা সাধারণ জনগণ শামসুর রাহমানের নাম শুনলেই তাঁর কিছু অতি পরিচিত কবিতার কথা চোখের সামনে ফুটে ওঠে। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা’, ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতা দুটো আজীবন অমর থাকার মতো কবিতা। অবাক করার মতো বিষয় হলো তিনি একসঙ্গে বসেই এ দুটি কবিতা লিখেছেন। একসঙ্গে একই বিষয় নিয়ে দুটো কবিতা লেখা, আর সেগুলো তুমুল পাঠকপ্রিয়তা পাওয়ার নজির বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে খুব কমই আছে।

কবি হিসেবেই শামসুর রাহমান বেশি সফল। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে বিজ্ঞানমনস্ক ভাবনাকে সম্প্রসারিত করতে তিনি যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। পেশায় সাংবাদিক থাকায় সারাদেশের সমকালীন জীবন সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ছিল যা তাঁর লেখাতেও ফুটে উঠেছে।

মাত্র আঠারো বছর বয়সে তাঁর সাহিত্যচর্চা শুরু। তখন পাকিস্তানের শাসনে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের শাসনের বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জেল থেকে মুক্ত করতে যে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় সেই গণ-অভ্যুত্থানে মৃত্যুবরণ করেন আসাদ। তাকে স্মরণ করে শামসুর রাহমান লেখেন ‘আসাদের শার্ট’ কবিতাটি।

গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের

জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট

উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়

একটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বাংলার গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসগুলো ধারাবাহিকথাবেই তাঁর কবিতায় এসেছে। ভাষা আন্দোলন নিয়ে তিনি লিখেছেন, গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লিখেছেন, শোষক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, আর মুক্তিযুদ্ধ তো আছেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কবিতার উপজীব্য হয়েছে। স্বৈরাচারবিরোধিতায়ও তিনি থেমে থাকেননি। ইতিহাসের পাশাপাশি মিল্পের কদর করতেও তিনি ভোলেননি। আবার রাজনীতির পীড়নে অনাহারী মানুষগুলোকেও তিনি লেখায় এনেছেন। শামসুর রাহমানের কবিতায় সুখ-দুঃখের অনুভূতি ছিল, দুঃখবোধও ছিল।

তিনি অসংখ্য নন্দিত কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’, ‘কখনো আমার মাকে’, ‘দুঃসময়ের মুখোমুখি’, ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘রৌদ্র করোটিতে’, ‘নিজ বাসভূমে’, ‘বন্দি শিবির থেকে’, ‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে’, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’, ‘কবিতার সঙ্গে গেরস্তালি’, ‘মাতাল ঋত্বিক’, ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’, ‘নিরালোকে দিব্যরথ’, ‘ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা’ প্রভৃতি। আর ‘পণ্ডশ্রম’ কবিতাটির কথা আলাদাভাবে তো বলতেই হয়। কান নিয়েছে চিলে কবিতাটি শোনেননি, এমন লোক খুব কমই আছে।

স্বীকৃতি সম্মাননাও পেয়েছেন অনেক। আদমজী পুরস্কার (১৯৬৩), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), একুশে পদক (১৯৭৭)সহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন এ কালজয়ী কবি। তাঁর ৯০তম জন্মদিনে তাকে আমরা বিনম্র শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। তাঁর লেখার প্রতিটি কথা আজও মনে ধ্বনিত হতে থাকে। তিনি যেমন ‘তিনি এসেছেন ফিরে’ কবিতায় লিখেছিলেন ‘এখন তো তিনি নেই, তবু সেই ধ্বনি আজ শুধু তাঁরই কথা বলে।’

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

কবিতা

প্রকাশ: ০২:০৩ পিএম, ২৩ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

বিশ্বের সেরা এবং আকর্ষণীয় পাচ মসজিদ

প্রকাশ: ১১:০২ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

বিশ্বের এমন পাঁচটি মসজিদ সম্পর্কে জেনে নিন:


১. মসজিদুল হারাম, মক্কা, সৌদি আরব:

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ দেখতে যায়, এমন মসজিদের তালিকায় সবার প্রথমে আছে পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদুল হারাম। প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ এই মসজিদে যান। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ। একসঙ্গে ১৫ লাখ মানুষ এখানে প্রবেশ করে ঘুরে দেখতে পারেন। মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র তিন স্থানের একটি এই মসজিদুল হারাম। মুসলমানদের কিবলা পবিত্র কাবাশরিফ এখানেই অবস্থিত।

তবে যে কেউ চাইলেই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে পারেন না। অমুসলিমদের জন্য মক্কা নগরীতে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ।


২. শেখ জায়েদ মসজিদ, আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত:

২০০৭ সালে স্থাপিত এই মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদগুলোর একটি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঝাড়বাতি ও সবচেয়ে বড় গালিচাও আছে এই মসজিদে।

আরব আমিরাতে বসবাসকারীদের বেশির ভাগই প্রবাসী, যাঁরা মূলত শ্রমজীবী হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে যান। এই বৈচিত্র্যময়তাই মসজিদটির নকশার মূল ভিত্তি। ব্রিটিশ, ইতালীয় ও আমিরাতি স্থপতিরা মিসর, মরক্কো, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের মসজিদের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শেখ জায়েদ মসজিদের নকশা এঁকেছেন।

প্রতিবছর মসজিদটি দেখতে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। শুধু ২০১৭ সালেই এসেছেন প্রায় ৫৮ লাখ দর্শনার্থী। নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় অমুসলিম দর্শনার্থীরাও মসজিদ ঘুরে দেখতে পারেন। তবে শুক্রবার অমুসলিম দর্শনার্থীদের এই মসজিদে প্রবেশ নিষেধ।


৩. আয়া সোফিয়া, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক:

ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহরগুলোর একটি তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল। আর ইস্তাম্বুল বা গোটা ইউরোপের অন্যতম সুন্দর মসজিদ আয়া সোফিয়া। ৩৬০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে স্থাপিত এ স্থাপনা শুরুতে মসজিদ ছিল না। ১৪৬৩ সালে সুলতান মেহমেদ এটিকে মসজিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

১৯৩৪ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে তৎকালীন তুরস্ক সরকার। কিন্তু ২০২০ সালে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এটিকে আবার নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিদের কাছে উন্মুক্ত করে দেন। ১৯৮৫ সালে আয়া সোফিয়াকে বিশ্ব ঐতিহ্যর স্বীকৃতি দেয় ইউনেসকো।


৪. আল–আকসা মসজিদ, পূর্ব জেরুজালেম, ইসরায়েল:

মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর শুরুর দিককার অন্যতম নিদর্শন জেরুজালেমের আল–আকসা মসজিদ।

বলা হয়ে থাকে, খোলাফায়ে রাশিদিনের অন্যতম খলিফা হজরত উমর (রা.)–র শাসনামলে ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় মসজিদটির নির্মাণকাজ। তবে বর্তমানে আল-আকসা বলতে পুরো চত্বরটাকেই বোঝানো হয়। ‘হারাম আল শরিফ’ নামে পরিচিত এই চত্বরের চার দেয়ালের মধ্যে আছে কিবলি মসজিদ, কুব্বাতুস সাখরা (ডোম অব দ্য রক) ও বুরাক মসজিদ। মূল আল–আকসা বা কিবলি মসজিদ হলো ধূসর সীসার পাতে আচ্ছাদিত গম্বুজওয়ালা একটি স্থাপনা। তবে পর্যটকের কাছে আল–আকসা নামে বেশি প্রসিদ্ধ সোনালি গম্বুজের স্থাপনা কুব্বাতুস সাখরা।

জেরুজালেমের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় উঠে আসে ১৯৮১ সালে। এখানে প্রায় চার লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন । তবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। কোনো মুসল্লিকে তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকতে দিচ্ছে না। পবিত্র স্থানটির দায়িত্বে থাকা ইসলামিক ওয়াক্‌ফ বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।


৫. দ্বিতীয় হাসান মসজিদ, কাসাব্লাঙ্কা, মরক্কো:

আলজেরিয়ার জামা এল জাযের মসজিদের মিনার সবচেয়ে উঁচু, ৮৭০ ফুট। তারপরেই কাসাব্লাঙ্কার দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মিনার, উচ্চতা ৬৮৯ ফুট। মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় হাসানের তত্ত্বাবধানে নির্মিত মসজিদটির নকশাকার ফরাসি স্থপতি মিশেল পিনসু।

আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শৈলান্তরীপের মাথায় মসজিদটির অবস্থান। মেঝের একটা অংশ স্বচ্ছ কাচের বলে আটলান্টিকের নীল পানি দেখতে পান নামাজে যাওয়া মুসল্লিরা। দেয়ালে মার্বেলের চোখধাঁধানো কারুকাজ। ছাদ অপসারণযোগ্য বলে নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লিরা রাতের আকাশও দেখতে পান।

দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মিনার থেকে একটি লেজাররশ্মি মুসলমানদের কিবলা কাবাঘরের দিকে তাক করা। অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য জগৎ–খ্যাত এই মসজিদে একসঙ্গে ১ লাখ ৫ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায় করার সুবিধা আছে।


মসজিদ   সেরা  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

মুখের ঠিকানা

প্রকাশ: ১২:১৬ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

স্পর্শে তুমি

প্রকাশ: ০৪:৪৫ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন