লিট ইনসাইড

ফুঁ এর গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২:৩৩ এএম, ১১ জুন, ২০২১


Thumbnail

প্রতিরাতেই সে আসে। আমাকে ভয় পাইয়ে খুব মজা পায়। গলাটা টিপে ধরে। আকুলি বিকুলি করতে থাকি আমি। তৃষ্ণায় গলাটা শুকিয়ে যায় আমার। 
 
“পানি,পানি” বলে হাঁক ছাড়তে থাকি। স্ত্রী আমার পাশেই মরার মত ঘুমিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় ওকে রাস্তায় রেখে মাথার নিচে যদি একটা থান ইটও রেখে দেই ঘুমিয়ে পড়ার জন্য, তাতেও ওর কোনো সমস্যা হবে না। টেরই পাবে না ও, কোথায় শুয়ে আছে। যত যন্ত্রণা হয় আমার। ওকে ডাকতেও পারি না। নিজেও কিছু করতে পারি না। করব কি করে? আমার গলা যে সে চেপে ধরে রাখে। আমার দিকে তাকিয়ে বিটকেলে দাঁতগুলো বের করে হি হি করে হাসতে থাকে। ওর দাঁতের দিকে তাকাই আমি। 
 
এ মা! কি হলুদ! এত হলুদ কারো দাঁত হয় নাকি? ইচ্ছে করে ওকে একটা টুথব্রাশ আর পেস্ট দিই। দাঁতগুলো একটু ভালো করে মেজে আসুক পরের বার। আমি আবার ডেন্টিস্ট তো, তাই দাঁতের অযত্ন একদম দেখতে পারি না। কিন্তু ওকে কিছু বলার সুযোগ আমাকে দিলে তো! গলাটা ইচ্ছেমত চেপে, সদ্য গজিয়ে ওঠা তুলতুলে ভুঁড়িটার ওপর খানিক নেচেকুদে ও চলে যায়। আর আমাকে প্রতিরাতেই করে যায় আধমরা।
 
আজ রাতের কথা অবশ্য ভিন্ন। মিলির সাথে ঝগড়া হয়েছে আমার। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। ওর সাথে আমার ঝগড়া প্রায় প্রতি সপ্তাহান্তেই হয়। এবারের ঝগড়ার বিষয় ছিল ডাল। রাতেরবেলা খাবার খেতে যেয়ে দেখি মাছের আঁশ ছাড়ানো হয় নি, মুরগীর ঝাল মুসল্লম করা হয়েছে কিন্তু মুরগীর পায়ের নখ ছাড়ানো হয়নি। খাবার মধ্যে ছিল শুধু ডাল। আমি আবার পোলাওয়ের সাথে ডাল খেতে পারি না। কিন্তু ঘরে কোনো ভাত নেই। কী আর করা। ডালের বাটিটা উপুড় করে প্লেটে ঢেলে দিলাম। প্লেটের দিকে তাকিয়েই মেজাজ খারাপ হলো। মিলির চুল সেখানে নুডুলসের মত জড়িয়ে আছে। আমি খুব মধুর স্বরে মিলিকে বললাম,
 
“দেখ দেখ মিলি, তোমার মাথাকে আমি যাতে কোনভাবে মিস না করি, তাই আমার খাবারের মাঝেও চুল এসে পড়েছে।”
 
“কই দেখি?” ভ্রু কুঁচকে মিলি বলল। তারপর চুলটাকে হাতে নিয়ে ফেলে দিলো। শেষবার ওকে দেখেছিলাম নাক খুঁটতে ঐ হাত দিয়ে। তারমানে ও হাত না ধুয়েই আমার প্লেট থেকে চুল সরিয়েছে। খাবারের রুচিটাই নষ্ট হয়ে গেল। প্লেট রেখে উঠে গেলাম। হাত ধুয়ে রুমে যাব এমন সময় মিলি পেছন থেকে চিৎকার করছে,
 
“এত বাছাবাছি করলে ঘরে একটা রাঁধুনি রাখলেই তো পারো। তাহলেই তো আমার খাবার সহ্য করতে হয় না।” বলেই ফোঁসফোঁস করে কান্না শুরু করে দিল। আমি ওকে আর কিছু বললাম না। টিভি ছেড়ে এটিএন বাংলায় ডিএ তায়েবের “ডিবি” নাটক দেখতে বসলাম। খুব শখ করে যে দেখি তা নয়। মেজাজ যখন চরমমাত্রায় খারাপ থাকে তখন এটা দেখি। তায়েব সাহেব নিশ্চয়ই মিলির চাইতে বেশি মেজাজ খারাপ করতে পারবেন না আমার। কিন্তু আজকে বিধি বাম। তায়েব সাহেব মিলিকেও অতিক্রম করে গেলেন। আমার জানামতে তিনি বাস্তব জীবনেও একজন পুলিশ। তিনি নাটক করার সময় কিভাবে পান তা আমার মাথায় আসে না। আমি লাইট অফ করে শুয়ে রইলাম চুপচাপ। একটা সময় শুনি দরজা খোলার আওয়াজ। মিলি তারমানে ওর বাবার বাড়ি যাচ্ছে। আমি ঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলাম,
 
“আমি কি গাড়ি ড্রাইভ করব নাকি নিজেই চালিয়ে যেতে পারবে?”
 
“লাগবে না তোমার ড্রাইভ করা। আর কোনো স্বামী হলে এতক্ষণে পা জড়িয়ে ধরে বসে থাকত। আর তুমি? বাবার বাড়ি যাব বলে একবার মানাতেও এলে না।”
 
বলা বাহুল্য, মিলি বাবার বাড়ি গেলে তিন চারদিনের আগে আসে না। এই তিন চারটা দিন আমি খুব মজায় থাকি। নিজের ইচ্ছামত খাবার কিনে এনে খাই। বই পড়ি, রাতের বেলা পপকর্ন খেতে খেতে গল্পের বই পড়ি। তাই মিলিকে মানাতে যাবার মানে হল তিন চারদিন নিজের স্বাধীনতা নষ্ট করা। সাধে কি কেউ নিজের পায়ে কুড়াল মারতে চায়? আমি বোকা মানি। কিন্তু এতো বোকাও না। চুপচাপ ঘাপটি মেরে পড়ে রইলাম। মিলি কিছুক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করবে আমি আসছি নাকি। তারপর চলে যাবে। হলোও তাই। কিছুক্ষণ পর দরজা দড়াম করে লাগিয়ে চলে গেল মিলি।
 
বর্তমান
 
২ ঘণ্টা হলো মিলি চলে গিয়েছে। রাত এখন ১২টা বেজে ১৫। ঘড়িতে টিক টক টিক টক শব্দ হচ্ছে। আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছি। এখনো সে আসছে না। কেন আসছে না? মিলি আজ সাথে নেই বলে? কে জানে। হঠাত মনে পড়ল লাইট জ্বালানো। এই রে! বাতিটা তো নিভিয়ে দেয়া হয় নি। উঠে গিয়ে বাতিটা নিভিয়ে দিলাম।
 
শুয়ে আছি। হঠাত টের পেলাম পেটের ওপর আস্তে আস্তে চাপ বাড়ছে। সাথে সাথে বুঝে গেলাম সে এসেছে। তৈরি হলাম আমি। প্রতিদিন আমাকে সে প্রস্তুত অবস্থায় পায় না। আজকে তো সে জানে না আমি তার জন্য রেডি হয়ে আছি। সামনে পেলেই ক্যাঁক করে ধরব আজ।
 
এলো সে! আপনাদের ভাষায় যাকে আপনারা বলেন “বোবা ভূত”। আমার পেটের ওপর বসে দাঁত বের করে হাসছে। প্রতিদিনের মত। কিন্তু আজ থমকে গেল। ভাবতে পারেনি আমি ড্যাব ড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে থাকব। সে মুখটা বন্ধ করে ফেলল। মাথা চুলকাতে লাগল। বুঝতে পারছে না কি করা উচিত। হঠাত করে আমার গলায় দুইহাত চেপে ধরল সে। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আমার। আমার গলায় কেউ হাত দিক, এটা আমার পছন্দ না। আর এটা তো একটা কেলো ভূত।
 
প্রচন্ড থাবড়া বসিয়ে দিলাম ওর গালে। ইতিহাসে এটাই বোধহয় প্রথম! কোন মানুষ বোবা ভূতকে থাবড়া মেরে গায়ের উপর থেকে সরিয়ে দিতে পারে নি। নিজেকে একজন কেউকেটা মনে হতে লাগল আমার। চড় খেয়ে আমার পাশে শুয়ে পড়ল ওটা। গালে হাত চেপে আছে। হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। বুঝতে পারে নি যে আমার হাতে চড় খেতে হবে ওকে।
 
“স্যার, এটা কোন কাজ করলেন আপনি? আমার সম্মানটা আপনি রাখলেন স্যার?” কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠল ওটা।
 
“চোপ!” প্রচন্ড শব্দ করে গর্জে উঠলাম আমি। “প্রতিদিন আমার ওপর উঠে তুই এভাবে লাফিয়ে কুদিয়ে খেলে চলে যাস। আমার শরীর কি আবাহনীর মাঠ পেয়েছিস, যে যা ইচ্ছা তাই করবি? অনেক সহ্য করেছি। আর না।”
 
“কি করব স্যার বলুন? আপনারা অনেক এডভান্সড হয়ে গেছেন। ভূতকে আর ভয় পান না। ভূত সমাজে বোবা ভূতের আলাদা একটা সম্মান ছিল। এরাই মানুষের গায়ে উঠে একদম ফর্দাফাই করে ছেড়ে দিতে পারত। আজ আপনি সে সম্মানটাও রাখলেন না স্যার।” বলে আবার কান্না করে দিল ওটা।
 
আমি একটু থমকে গেলাম। ঠিকই তো বলেছে ওটা। ওটা হল ভূত। ওদের কাজ হচ্ছে আমাকে ভয় দেখানো। ও তো ওর কাজ ঠিকই করছিল। আমারই ভুল হয়েছে ওকে মারতে যাবার। ছি ছি! কি করে বসলাম আমি? নিজের ওপর প্রচন্ড লজ্জা করতে লাগল।
 
আমতা আমতা করে বললাম, দুঃখিত ভাই। যা হবার তা তো হয়ে গেছে। এখন আর এসব বলে লাভ কি বল? আমি তোমার কাছে অনেক সরি। আর এমন হবে না।”
 
“সরি মানে? আপনি জানেন আপনি আমার কত বড় ক্ষতি করেছেন? আমার আজকে একটা রেকর্ড হয়ে যেত। টানা ২৮ দিন আমি আপনার গলা টিপে ধরেছি। আজ ভালোমত টিপে দিতে পারলেই আমাদের বোবা ভূত সমাজে আমার একটা আলাদা প্রতিপত্তি হত। আপনি আজকে আমার পুরো কষ্টটাই মাটি করে দিলেন।” আবার ভ্যা করে কেঁদে দিল ভুতটা।
 
আমি ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। যে করেই হোক এটাকে আমার এখন শান্ত করে বুঝিয়ে সুজিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হবে। তা না হলে আজ রাতে আমাকে বেশ বেগ পেতে হবে বুঝতে পারছি। চট করে একটা বুদ্ধি এলো মাথায়।
 
“তুমি একটু বসো। আমি আসছি। আচ্ছা তোমার নাম কি?”
 
নাক ঝেড়ে ওটা আমার বেডের চাদরে মুছল। রাগে আমার পিত্তি জ্বলে গেল কিন্তু কিছু বললাম না ওটাকে। বেচারা চড় খেয়ে ঠোঁট ভালোই ফুলিয়েছে দেখলাম।
 
“আমার নাম ফুঁ।”
 
“ফুঁ? এটা কারো নাম হয় নাকি?” বেশ অবাক হলাম আমি।
 
“ফুঁ তো খুব সুন্দর নাম। জানেন স্যার এটার মানে কি? আমার দাদা খুব শখ করে আমার নাম রেখেছিলেন ফুঁ।”
 
মাথা নাড়লাম আমি। ফুঁ নামের মানে কি আমি জানি না। জিজ্ঞাসা করব ভাবছিলাম। এমন সময় ও নিজে থেকেই বলে উঠল,
 
“ফুঁ মানে হচ্ছে উড়ে যাও।” বেশ গদগদ কন্ঠে বলে উঠল ফুঁ। “স্যার, আমার খুব খিদে পেয়েছে। আপনি কি আমাকে কিছু খাওয়াতে পারবেন?”
 
আমি ওকে মিলির রান্না করা সব খাবার এনে দিলাম। ও সব শেষ করে ফেলল নিমিষেই। আমি অবাক হয়ে গেলাম। মানুষ কখনো মিলির খাবার খেতে পারে না, এটাই আমার ধারণা। ফুঁ এর কথা আলাদা। ও একটা বোবাভূত। ওর ওপর আমার একটা ভক্তি এসে গেল।
 
খাওয়া শেষ করে ফুঁ একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলল। এরপর আমার বালিশে মাথা রেখে পা নাচাতে নাচাতে টিভির রিমোটটা নিয়ে ছবি দেখতে লাগল। আমিও টিভির দিকে তাকালাম। মাই টিভিতে বাংলা ছবি দেখাচ্ছে। প্রয়াত রাজীব মেয়ের বাবা। তিনি নায়ক রিয়াজকে শাসাচ্ছেন এই বলে যে তার মেয়েকে যদি সে আর উত্ত্যক্ত করে তাহলে তিনি তাকে গুন্ডা পেটা করে ছাড়বেন।
 
রিয়াজ বলছে, “আপনার মত বড়লোকরা মানুষকে মানুষ মনে করেন না। মনে রাখবেন, গরীবেরাও মানুষ।”
 
ফুঁ কে দেখলাম খুব সমঝদারের মত মাথা দুলাচ্ছে। এমন সময় বলল, “স্যার আপনি নাকি ডেন্টিস্ট। আমার দাঁতগুলো একবার দেখে দিন না কি অবস্থা।”
 
সে রাতে আমি ফুঁ এর দাঁত দেখে দিই। একসাথে পপকর্ণ খেতে খেতে লিয়াম নিসনের “টেকেন ২” ছবিটা দেখি। মাঝরাতে আবার খিদে পায় ফুঁ এর। আমি ওকে ফ্রিজ থেকে আইসক্রীম বের করে দেই। শেষরাতের দিকে ও বলল, “স্যার এবার আমার যাবার সময় হয়েছে। আপনার মোবাইলের সামনে কি ক্যামেরা আছে?”
 
আমি ওর সাথে একটা সেলফি তুললাম। হাজার হোক, একটা ভূত তো। বোবা ভূত মানুষের গায়ের ওপর উঠে লম্ফঝম্ফ করতেই এতোদিন মানুষ শুনেছে। তার সাথে কেউ কি কোনদিন সেলফি তুলতে পেরেছে? মনে হয় না। ফুঁ কে আমার চেম্বারের একটা কার্ড দিয়ে দিলাম। বললাম যখন খুশি চলে আসতে। আড্ডা দেয়া যাবে। ওর আমার চেম্বারের কার্ডের আদৌ কোন দরকার পড়বে কি না তা কে জানে। দিয়ে রাখলাম। কার্টেসি বলেও তো একটা ব্যাপার আছে, নাকি?
 
পরদিন সকালেই মিলি চলে আসে। আমাকে ছেড়ে যেতে তার নাকি আর ভালো লাগে না। ওকে ফুঁ এর কথা বললাম। আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাতে লাগল। ওকে মোবাইলটা বের করে আমার আর ফুঁ এর সেলফিটা দেখাতে চাইলাম। আমার ছবি ছাড়া আর কিছু নেই পাশে। মিলি মুখ ঝামটা মেরে কাজ করতে চলে যায় রান্নাঘরে।
 
আমি হাসি। বোবাভূতের সাথে একজন ডেন্টিস্টের বন্ধুত্বের একরাত। তাই বা কম কিসে? অপেক্ষা করতে থাকি আবার কবে আসবে ফুঁ।


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

কবিতা

প্রকাশ: ০২:০৩ পিএম, ২৩ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

বিশ্বের সেরা এবং আকর্ষণীয় পাচ মসজিদ

প্রকাশ: ১১:০২ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

বিশ্বের এমন পাঁচটি মসজিদ সম্পর্কে জেনে নিন:


১. মসজিদুল হারাম, মক্কা, সৌদি আরব:

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ দেখতে যায়, এমন মসজিদের তালিকায় সবার প্রথমে আছে পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদুল হারাম। প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ এই মসজিদে যান। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ। একসঙ্গে ১৫ লাখ মানুষ এখানে প্রবেশ করে ঘুরে দেখতে পারেন। মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র তিন স্থানের একটি এই মসজিদুল হারাম। মুসলমানদের কিবলা পবিত্র কাবাশরিফ এখানেই অবস্থিত।

তবে যে কেউ চাইলেই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে পারেন না। অমুসলিমদের জন্য মক্কা নগরীতে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ।


২. শেখ জায়েদ মসজিদ, আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত:

২০০৭ সালে স্থাপিত এই মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদগুলোর একটি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঝাড়বাতি ও সবচেয়ে বড় গালিচাও আছে এই মসজিদে।

আরব আমিরাতে বসবাসকারীদের বেশির ভাগই প্রবাসী, যাঁরা মূলত শ্রমজীবী হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে যান। এই বৈচিত্র্যময়তাই মসজিদটির নকশার মূল ভিত্তি। ব্রিটিশ, ইতালীয় ও আমিরাতি স্থপতিরা মিসর, মরক্কো, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের মসজিদের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শেখ জায়েদ মসজিদের নকশা এঁকেছেন।

প্রতিবছর মসজিদটি দেখতে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। শুধু ২০১৭ সালেই এসেছেন প্রায় ৫৮ লাখ দর্শনার্থী। নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় অমুসলিম দর্শনার্থীরাও মসজিদ ঘুরে দেখতে পারেন। তবে শুক্রবার অমুসলিম দর্শনার্থীদের এই মসজিদে প্রবেশ নিষেধ।


৩. আয়া সোফিয়া, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক:

ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহরগুলোর একটি তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল। আর ইস্তাম্বুল বা গোটা ইউরোপের অন্যতম সুন্দর মসজিদ আয়া সোফিয়া। ৩৬০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে স্থাপিত এ স্থাপনা শুরুতে মসজিদ ছিল না। ১৪৬৩ সালে সুলতান মেহমেদ এটিকে মসজিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

১৯৩৪ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে তৎকালীন তুরস্ক সরকার। কিন্তু ২০২০ সালে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এটিকে আবার নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিদের কাছে উন্মুক্ত করে দেন। ১৯৮৫ সালে আয়া সোফিয়াকে বিশ্ব ঐতিহ্যর স্বীকৃতি দেয় ইউনেসকো।


৪. আল–আকসা মসজিদ, পূর্ব জেরুজালেম, ইসরায়েল:

মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর শুরুর দিককার অন্যতম নিদর্শন জেরুজালেমের আল–আকসা মসজিদ।

বলা হয়ে থাকে, খোলাফায়ে রাশিদিনের অন্যতম খলিফা হজরত উমর (রা.)–র শাসনামলে ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় মসজিদটির নির্মাণকাজ। তবে বর্তমানে আল-আকসা বলতে পুরো চত্বরটাকেই বোঝানো হয়। ‘হারাম আল শরিফ’ নামে পরিচিত এই চত্বরের চার দেয়ালের মধ্যে আছে কিবলি মসজিদ, কুব্বাতুস সাখরা (ডোম অব দ্য রক) ও বুরাক মসজিদ। মূল আল–আকসা বা কিবলি মসজিদ হলো ধূসর সীসার পাতে আচ্ছাদিত গম্বুজওয়ালা একটি স্থাপনা। তবে পর্যটকের কাছে আল–আকসা নামে বেশি প্রসিদ্ধ সোনালি গম্বুজের স্থাপনা কুব্বাতুস সাখরা।

জেরুজালেমের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় উঠে আসে ১৯৮১ সালে। এখানে প্রায় চার লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন । তবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। কোনো মুসল্লিকে তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকতে দিচ্ছে না। পবিত্র স্থানটির দায়িত্বে থাকা ইসলামিক ওয়াক্‌ফ বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।


৫. দ্বিতীয় হাসান মসজিদ, কাসাব্লাঙ্কা, মরক্কো:

আলজেরিয়ার জামা এল জাযের মসজিদের মিনার সবচেয়ে উঁচু, ৮৭০ ফুট। তারপরেই কাসাব্লাঙ্কার দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মিনার, উচ্চতা ৬৮৯ ফুট। মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় হাসানের তত্ত্বাবধানে নির্মিত মসজিদটির নকশাকার ফরাসি স্থপতি মিশেল পিনসু।

আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শৈলান্তরীপের মাথায় মসজিদটির অবস্থান। মেঝের একটা অংশ স্বচ্ছ কাচের বলে আটলান্টিকের নীল পানি দেখতে পান নামাজে যাওয়া মুসল্লিরা। দেয়ালে মার্বেলের চোখধাঁধানো কারুকাজ। ছাদ অপসারণযোগ্য বলে নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লিরা রাতের আকাশও দেখতে পান।

দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মিনার থেকে একটি লেজাররশ্মি মুসলমানদের কিবলা কাবাঘরের দিকে তাক করা। অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য জগৎ–খ্যাত এই মসজিদে একসঙ্গে ১ লাখ ৫ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায় করার সুবিধা আছে।


মসজিদ   সেরা  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

মুখের ঠিকানা

প্রকাশ: ১২:১৬ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

স্পর্শে তুমি

প্রকাশ: ০৪:৪৫ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন