লিট ইনসাইড

জীবন ও কবিতায় সমান লড়াকু কবি মোহন রায়হানের ৬৫-তম জন্মদিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ অগাস্ট, ২০২১


Thumbnail

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশে যে কয়জন নবীন কবির দীপ্ত আবির্ভাব হয়, কবি মোহন রায়হান তাদের অন্যতম। বাংলাদেশের কবিতার ধারায় কবি মোহন রায়হান এক তেজী কণ্ঠস্বর। ১৯৭১-এর রণাঙ্গন থেকে উঠে আসা দ্রোহ, প্রেম, স্বাধীনতা, সাম্য ও বিপ্লবের কবি মোহন রায়হান কবিতাকে কেবল শিল্প ভাবেন না বরং কবিতা তাঁর কাছে সমাজ বদলের শাণিত হাতিয়ার। জীবন ও কবিতায় সমান লড়াকু কবি মোহন রায়হান। কবি মোহন রায়হান আমাদের দেশের এক কিংবদন্তি পুরুষ। তাঁর জীবন ইতিহাস বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ঘাত-প্রতিঘাত ও উত্থান-পতনের জটিল আবর্তনের খতিয়ান। রাষ্ট্রিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সাহিত্য আন্দোলনের ইতিহাসে কবি মোহন রায়হান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

কবি মোহন রায়হান ১৯৫৬ সালের ১ আগস্ট সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিঁনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর বাবা মরহুম ফরহাদ হোসেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈনিক, সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের খোকশাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের অত্যন্ত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ছিলেন। তিঁনি একটানা ৩০ বছর চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে খোকশাবাড়ি হাসপাতাল, ব্রাহ্মণবয়ড়া গোয়েন বাঁধ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সিরাজগঞ্জের কওমী জুট মিলস লি. প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা। কবি মোহন রায়হানের মা মরহুমা মাহমুদা খাতুন ছিলেন আজীবন সমাজ হিতৈষিনী।

কবি মোহন রায়হান স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সকল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও কবিতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তিঁনি বাংলাদেশের একজন অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় কবিতা পরিষদের দুই বারের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ রাইটারস্ ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, স্ফুলিঙ্গ সাংস্কৃতিক সংসদ, সৃজন, আবৃত্তি সংসদ, বাংলাদেশ লেখক শিবির, প্রাক্সিস অধ্যয়ন সমিতি, অরণি সাংস্কৃতিক সংসদ, তাহের সংসদ, রাখাল, লেখক ইউনিয়ন, সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটিসহ অসংখ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনায় দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর সম্পাদিত পত্র-পত্রিকাগুলোর মধ্যে ঢেউ, সূর্য সৈকত, স্ফুলিঙ্গ, সমকণ্ঠ,  জনান্তিক, অরণি, সাহস, দুর্বিনীত এই মাটি জ্বলে প্রতিরোধে, লাল তোমার পতাকা, ইশতেহার, বিদ্রোহের পংক্তিমালা উল্লেখযোগ্য। তিঁনি সাপ্তাহিক দিকচিহ্ন, কবিতাপত্র দিকচিহ্ন এবং সাওল সময় পত্রিকার সম্পাদক।

তিঁনি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রপন্থি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য সম্পাদক ও জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল-জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে রাজপথে নেতৃত্ব দেন কবি মোহন রায়হান। তিঁনি ছিলেন সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দেশ-কাঁপানো সাহসী ছাত্রনেতা। আশির দশকে স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলনের সূচনাকারী ১৪টি ছাত্র সংগঠন নিয়ে যে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়, তিঁনি তার কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। ১৯৮৩ সালেরৈ ১১ জানুয়ারি ছাত্র-বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়ে প্রথম সামরিক শাসন ভঙ্গ করে ১০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মিছিল নিয়ে শিক্ষাভবন ঘেরাও করেন। এ অভিযোগে তাঁকে চোখ-হাত বেঁধে সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী তুলে নিয়ে ২১ দিন গুম করে রেখে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে মেরুদণ্ড ভেঙে পঙ্গু করে দেয়। পরে ভারতের চেন্নাইয়ে অপারেশন করায়ে তিঁনি চলাচলে সক্ষমতা লাভ করেন।

এই কবি সম্পর্কে কবি শামসুর রাহমান বলেছেন- ‘বাংলাদেশের প্রতিবাদী কবিতার ধারা যে ক’জন কবির অবদানে বেগবান হয়ে উঠেছে, মোহন রায়হান নিঃসন্দেহে তাঁদের অন্যতম। এ তেজী তরুণ কবি কবিতাকে ব্যবহার করেন সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে। তাই তাঁর কবিতা অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে অস্ত্রের মতো ঝলছে ওঠে, নতুন পৃথিবীর উদ্দেশ্যে।’

সৈয়দ শামসুল হক বলেছেন- ‘কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে অনেকেই বিক্রি হয়েছেন। মোহনকে আমি জানি, চিনি এবং বিশ্বাস করি সে তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম।’

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন- ‘মোহন জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছে, নির্যাতনও সহ্য করেছে কিন্তু কখনও নিজের স্থিরবিন্দু থেকে সরে যায় নি। তার কবিতার মধ্যে রয়েছে আগুন, যা অনেককে উদ্দীপ্ত করে। কবিতার আন্দোলনের সঙ্গে সে জড়িত। বাংলা কবিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই তাঁর আদর্শ। আমি দেখেছি, পশ্চিম বাংলাতেও সে বেশ জনপ্রিয়। অনেক তরুণ-তরুণী তার কবিতা আবৃত্তি করে।’

কবীর চৌধুরী বলেছেন- ‘মোহন রায়হান সমাজ-পরিবর্তনে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই পরিবর্তনের জন্য সে মার্ক্সীয় বস্তুবাদী দ্বান্দ্বিকতার দর্শনে আস্থাশীল। এবং সে একজন নিষ্ঠাবান কবি। তাঁর জীবন ও কবিতা একসূত্রে গাঁথা। বাংলা কাব্যের ইতিহাসে এই ধারার একটি দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আছে। মোহন রায়হান তাঁর স্বকীয়তা নিয়ে ওই ধারার একজন উল্লেখযোগ্য কবি। বিপ্লব ও বিদ্রোহ মোহনের কবিতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও তাঁর কবিতা একমুখী নয়। বেশকিছু প্রেমের কবিতা আছে তাঁর। ওই কবিতাগুলি কখনো গাঢ় আবেগে উত্তাল, কখনও স্নিগ্ধ মাধুর্যে কোমল। কখনও কখনও তিনি ছন্দ নিয়ে খেলা করেছেন, কখনও ভাষা নিয়ে।’

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন- ‘মোহন তাঁর লেখা একটি কবিতায় মাইকেল মধুসূদন ও নজরুল ইসলামকে স্মরণ করেছে। সেটা খুবই স্বাভাবিক। ওই দুই কবির মতোই সেও বিদ্রোহী, বলা যায় বিপ্লবী। তুলনার প্রশ্ন অবান্তর কিন্তু তাঁর কবিতায় মাইকেল মধুসূদনের উপস্থিতিটাই বিশেষভাবে গ্রাহ্য। মাইকেলের মতোই সে প্রথাবিরোধী এবং মনে-প্রাণে বাঙালি-পরিস্থিতি যাকে বিপরীত দিকে ঠেলতে চায় কিন্তু নিজ ভূমির প্রতি ভালবাসায় সে অনড়।’

কামাল লোহানী বলেছেন- ‘মোহন বিমোহিত করেছিল রাজপথকে একদিন, যখন রাজনীতির লোকযাত্রা খানিকটা উঁকি দিয়েছিল প্রিয় স্বদেশে, তখন তারুণ্যের রক্তিম উদ্ভাস তাঁকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছিল। মোহন রায়হানকে আমি সংগঠক হিসেবে চিনেছিলাম। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তাঁর দক্ষ সাংগঠনিক ভূমিকা নজর কেড়েছিল পূর্বসুরিদেরও। যমুনার কুলে বাস করে নিত্যই ভাঙন রোধ করেছে যে শক্তি পাঁজরের সংঘবদ্ধ বুকটা দিয়ে সেই এক তরুণের আবেগতাড়িত অথচ রাজনীতির আদর্শনিষ্ঠ রুদ্র শব্দাবলী শুনেছিলাম একদিন।’

বেলাল চৌধুরী বলেছেন- ‘মানবীয় ও অতিমানবীয় গুণাবলি থেকে শুরু করে দর্শনকাণ্ডের প্রায় সকল বিষয়ই কবিতার প্রাথমিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। আর কবিতার নতুন আগমন তো আরো রহস্যময়-আবিষ্কার প্রবণতাই কবির কলমের চলমানতা বা গতিপ্রবাহ। আরো জটিলতর হয়ে উঠেছে সমকালীন বিশ্ব কবিতা-সেখানেও মোহন রায়হান নিঃসন্দেহে একজন একাই একশোর মতো কবি। মোহন পাঠে এটাই আমার সিদ্ধান্ত।’

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন- ‘জন্মান্ধ উৎসাহ ওর রক্তগত। ওর ক্রোধ আর দ্রোহের উৎস প্রেম। একটা সুখী ও মানবিক পৃথিবীর স্বপ্ন ওকে উজ্জীবিত করে, তার বিপর্যয় ওর ভেতর ক্রোধ জাগায়। এজন্যেই ওর সারাজীবনের পদচারণা ভালবাসা থেকে বীর রসে, বীর রস থেকে রুদ্রে। ওর প্রধান পরিচিতি উচ্চকণ্ঠ কবিতায়, হয়ত ওর সচেতন অবচেতন আকুতিও তাই। কিন্তু ওর নিবিড় ও নিম্নকণ্ঠ কবিতার সিদ্ধিও যে বেশ গভীর তা অনেকেরই চোখে পড়ে না। ওর প্রেমের কবিতা, স্বপ্নের কবিতা পাঠকের বেঁচে থাকার ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয়। ওর ভয়-ধরানো আশাবাদ ও নৈরাশ্য, দুর্ধর্ষ ক্রোধ ও নিষ্ক্রিয়তা, পেলব প্রেম আর মানবতার স্বপ্ন সব নিয়ে ওকে শুভেচ্ছা।’

আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেছেন- ‘মোহন রায়হানের কবিতা মানুষের পোড় খাওয়া জীবনে এক অনির্বচনীয় স্বাদ বহন করে আনে। তাঁর কবিতার ভেতরে স্বাদেশিকতা ও আন্তর্জাতিকতার এক অপূর্ব মিশেল আমি লক্ষ করেছি। যে স্বদেশের প্রতি তাঁর বেদনাময় অর্ঘ কবিতার ছত্রে ছত্রে, সে অর্ঘ কত সহজেই বিশ্বের ভৌগোলিকতার ভেতরে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেলে। মাটি, মানুষ, সমাজ, প্রেম এবং প্রকৃতির রসায়ন হচ্ছে মোহনের কবিতা।’

সেলিনা হোসেন বলেছেন-‘মোহনের কবিতায় সাহস ও স্নিগ্ধতা একই সঙ্গে বয়ে যায়। প্রতিবাদ ও ভালবাসা একইসঙ্গে বয়ে রয়। জীবনের এপিঠ-ওপিঠ মোহন খুব কাছ থেকে দেখেন। দেখেন অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে। মোহন ঘুরে ঘুরে জীবনের অন্বেষনে ফিরে ফিরে দেখেন নতুন দরোজা। খোলা দরোজায় ঢুকে যায় আলো-বাতাস, ঢুকে যায় আগুন।’

হায়াৎ মামুদ বলেছেন- ‘মোহন রায়হানের কবিতা অনাগত ভবিষ্যতেও ক্রমাগত কুসুম ফোটাতে থাকবে। এটাই আমার বিশ্বাস। কারণ, তাঁর কবিতার উৎসবিন্দু বাংলাদেশের মাটিতে আরও দীর্ঘকাল শোণিতসিক্ত থেকে যাবে, শুকোবে না।’

কবি সাযযাদ কাদির বলেছেন- ‘নতুন ইতিহাসের বুকে এ রকম এক নতুন জন্মের ঘোষণা দিয়ে আত্মপ্রকাশ মোহনের। তারপর নতুন রণাঙ্গনের অঙ্গীকার তাঁকে নিয়ে যায় বীরের রক্ত আর মায়ের অশ্রুর কাছে-তাঁর পরিচয় হয়ে ওঠে আন্দোলন সংগ্রাম যুদ্ধ বিপ্লবের এক সোচ্চার অনুষঙ্গ; কত নামের সঙ্গে জড়িয়ে যায় তাঁর নাম-শহীদ মনিরুজ্জামান তারা, কমরেড শহীদ সিরাজ শিকদার, কর্নেল আবু তাহের, মার্কস, লেনিন, মাওসেতুং, থালমান, গ্রামসি, লুকসেমবার্গ, হো চি মিন, ফিদেল ক্যাস্ত্রো, চে গুয়েভারা, হোকাকু, শাহজাহান সিরাজ, ইলা মিত্র, বেনজামিন মলয়েজ, রউফুন বসুনিয়া, কফিল, উইনি, ডা. মিলন, অনুপ চেটিয়া, মধু দা, নূর হোসেন ... আরও কত নাম। আমি এই মোহনকে চিনি-সে কোনো ব্যক্তি নয়, এক শক্তি।’

মফিদুল হক বলেছেন- ‘মোহন রায়হানকে দেখে আমার মনে হতো অগাস্তঁ ব্লাঙ্কির কথা। কার্ল মার্কসের একটি রচনা ছিল ‘ব্লাঙ্কি দ্যা ইনসারেকশনিস্ট’। রচনার উদ্দিষ্ট সেই মানুষটি যিনি বিপ্লবী গণ-উত্থানের জন্যে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। ব্লাঙ্কির জীবন কেটেছে কারাগারে ও রাজপথে এবং ১৮৭১ সালের পারি কমিউনের তিনি ছিলেন অন্যতম নায়ক। ব্লাঙ্কি সম্পর্কে কার্ল মার্কসের ঐ অভিধা মনে পড়ে যায় মোহন রায়হানকে দেখে-মিছিলে যে যুবক থাকবে সবচেয়ে আগে, পুলিশের সামনে এগিয়ে যাবে নির্দ্বিধায় এবং সংঘাতের জন্যে যেন সব সময়ে মুখিয়ে আছে। আমার মনে হতো এরকম অকুতোভয় তরুণরাই তো পারি কমিউনের যুগ থেকে দেশে দেশে জনগণের বিপ্লবী উত্থানের অগ্রপথিক হয়ে থেকেছে। আগুন জ্বলে উঠতে যে স্ফুলিঙ্গের প্রয়োজন তার যোগানদাতা এঁরা। সেই থেকে আমি মোহন রায়হানকে চিনি। আর সবাই তাঁকে নানাভাবে চেনেন, আমার কাছে এই যুবক তখন থেকেই মোহন দ্যা ইনসারেকশনিস্ট।’

শাহরিয়ার কবির বলেছেন- ‘সত্তরের দশকের এক ব্যতিক্রমী কবি মোহন রায়হান। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলা কবিতায় প্রান্তিক মেহনতি মানুষের আনন্দ-বেদনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ক্ষোভ-যন্ত্রণা মোহনের কবিতায় যেভাবে বাক্সময় হয়েছে তাঁর সমসাময়িক অন্য কোনো কবির রচনায় আমরা তেমনটি প্রত্যক্ষ করিনি। মোহন আপাদমস্তক একজন রাজনৈতিক কবি-নেরুদা, লোরকা, নাজিম হিকমত, নজরুল, সুভাষ, সুকান্ত আর দীনেশের যোগ্য প্রতিনিধি। মোহনের মতো আর কোনো কবি সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কারানির্যাতনের শিকার হননি।’

সলিমুল্লাহ খান বলেছেন- ‘যে কবিতা আমি লিখিতে চাহিয়াছিলাম, কিন্তু পারি নাই। একদিন দেখিলাম আমার বন্ধু কবি মোহন রায়হান সেই কবিতা ‘সাহসী মানুষ চাই’ লিখিয়া ফেলিয়াছেন। তাহাকে অভিনন্দন জানানোই আমি আমার কর্তব্য বলিয়া সাব্যস্ত করিলাম। ভর্তি হইলাম তাহার অগুনতি ভক্তদের দলে।’

কামাল চৌধুরী বলেছেন- ‘একজন কবি প্রেমিক না হলে তার পক্ষে দ্রোহী হওয়াও সম্ভব নয়। দ্রোহ এক ধরনের প্রেমেরই নামান্তর। ইতোমধ্যে তাঁর অনেকগুলো গ্রন্থ বেরিয়েছে। লালটুপি মার্কা একটা রাগী চেহারা তাঁর দাঁড়িয়ে গেলেও শুধু দ্রোহী বা বিপ্লবী বললে তার কবিতার যথার্থ মূল্যায়ন হবে না। ভেতরে ভেতরে এক অসাধারণ প্রেমিক লুকিয়ে আছে তাঁর কবিতায়। তাঁর প্রেম, তাঁর ভালবাসা, তাঁর স্বদেশ- সেই সঙ্গে প্রিয় নারীর সান্নিধ্যের কুহকও জড়িয়ে আছে কবিতার পরতে পরতে।’

বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেন- ‘সঙ্ঘশক্তির জাগরণ দিয়ে, ঐতিহ্যের শক্তি দিয়ে, লোকজীবনের সাহস দিয়ে মোহন রায়হান নির্মাণ করতে চেয়েছেন একটি নতুন পৃথিবী। কবিতায় এই নতুন পৃথিবীর সন্ধান তাঁর উপনিবেশবাদ-বিরোধী মানসিকতারই আন্তরিক বহিঃপ্রকাশ। শোষণমুক্ত একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার বাসনায় তাঁর কবিতায় এসে মিশেছে সাম্যবাদী যুবক, গ্রামীণ কালো চাষা, সর্বহারা শ্রমিক। উপনিবেশবাদ-বিরোধী এই বৈশিষ্ট্যই বাংলাদেশের কবিতার ধারায় মোহন রায়হানকে এনে দিয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদা, প্রাতিস্বিক প্রতিষ্ঠা।’



মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

কবিতা

প্রকাশ: ০২:০৩ পিএম, ২৩ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

বিশ্বের সেরা এবং আকর্ষণীয় পাচ মসজিদ

প্রকাশ: ১১:০২ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

বিশ্বের এমন পাঁচটি মসজিদ সম্পর্কে জেনে নিন:


১. মসজিদুল হারাম, মক্কা, সৌদি আরব:

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ দেখতে যায়, এমন মসজিদের তালিকায় সবার প্রথমে আছে পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদুল হারাম। প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ এই মসজিদে যান। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ। একসঙ্গে ১৫ লাখ মানুষ এখানে প্রবেশ করে ঘুরে দেখতে পারেন। মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র তিন স্থানের একটি এই মসজিদুল হারাম। মুসলমানদের কিবলা পবিত্র কাবাশরিফ এখানেই অবস্থিত।

তবে যে কেউ চাইলেই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে পারেন না। অমুসলিমদের জন্য মক্কা নগরীতে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ।


২. শেখ জায়েদ মসজিদ, আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত:

২০০৭ সালে স্থাপিত এই মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদগুলোর একটি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঝাড়বাতি ও সবচেয়ে বড় গালিচাও আছে এই মসজিদে।

আরব আমিরাতে বসবাসকারীদের বেশির ভাগই প্রবাসী, যাঁরা মূলত শ্রমজীবী হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে যান। এই বৈচিত্র্যময়তাই মসজিদটির নকশার মূল ভিত্তি। ব্রিটিশ, ইতালীয় ও আমিরাতি স্থপতিরা মিসর, মরক্কো, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের মসজিদের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শেখ জায়েদ মসজিদের নকশা এঁকেছেন।

প্রতিবছর মসজিদটি দেখতে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। শুধু ২০১৭ সালেই এসেছেন প্রায় ৫৮ লাখ দর্শনার্থী। নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় অমুসলিম দর্শনার্থীরাও মসজিদ ঘুরে দেখতে পারেন। তবে শুক্রবার অমুসলিম দর্শনার্থীদের এই মসজিদে প্রবেশ নিষেধ।


৩. আয়া সোফিয়া, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক:

ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহরগুলোর একটি তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল। আর ইস্তাম্বুল বা গোটা ইউরোপের অন্যতম সুন্দর মসজিদ আয়া সোফিয়া। ৩৬০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে স্থাপিত এ স্থাপনা শুরুতে মসজিদ ছিল না। ১৪৬৩ সালে সুলতান মেহমেদ এটিকে মসজিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

১৯৩৪ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে তৎকালীন তুরস্ক সরকার। কিন্তু ২০২০ সালে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এটিকে আবার নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিদের কাছে উন্মুক্ত করে দেন। ১৯৮৫ সালে আয়া সোফিয়াকে বিশ্ব ঐতিহ্যর স্বীকৃতি দেয় ইউনেসকো।


৪. আল–আকসা মসজিদ, পূর্ব জেরুজালেম, ইসরায়েল:

মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর শুরুর দিককার অন্যতম নিদর্শন জেরুজালেমের আল–আকসা মসজিদ।

বলা হয়ে থাকে, খোলাফায়ে রাশিদিনের অন্যতম খলিফা হজরত উমর (রা.)–র শাসনামলে ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় মসজিদটির নির্মাণকাজ। তবে বর্তমানে আল-আকসা বলতে পুরো চত্বরটাকেই বোঝানো হয়। ‘হারাম আল শরিফ’ নামে পরিচিত এই চত্বরের চার দেয়ালের মধ্যে আছে কিবলি মসজিদ, কুব্বাতুস সাখরা (ডোম অব দ্য রক) ও বুরাক মসজিদ। মূল আল–আকসা বা কিবলি মসজিদ হলো ধূসর সীসার পাতে আচ্ছাদিত গম্বুজওয়ালা একটি স্থাপনা। তবে পর্যটকের কাছে আল–আকসা নামে বেশি প্রসিদ্ধ সোনালি গম্বুজের স্থাপনা কুব্বাতুস সাখরা।

জেরুজালেমের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় উঠে আসে ১৯৮১ সালে। এখানে প্রায় চার লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন । তবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। কোনো মুসল্লিকে তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকতে দিচ্ছে না। পবিত্র স্থানটির দায়িত্বে থাকা ইসলামিক ওয়াক্‌ফ বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।


৫. দ্বিতীয় হাসান মসজিদ, কাসাব্লাঙ্কা, মরক্কো:

আলজেরিয়ার জামা এল জাযের মসজিদের মিনার সবচেয়ে উঁচু, ৮৭০ ফুট। তারপরেই কাসাব্লাঙ্কার দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মিনার, উচ্চতা ৬৮৯ ফুট। মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় হাসানের তত্ত্বাবধানে নির্মিত মসজিদটির নকশাকার ফরাসি স্থপতি মিশেল পিনসু।

আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শৈলান্তরীপের মাথায় মসজিদটির অবস্থান। মেঝের একটা অংশ স্বচ্ছ কাচের বলে আটলান্টিকের নীল পানি দেখতে পান নামাজে যাওয়া মুসল্লিরা। দেয়ালে মার্বেলের চোখধাঁধানো কারুকাজ। ছাদ অপসারণযোগ্য বলে নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লিরা রাতের আকাশও দেখতে পান।

দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মিনার থেকে একটি লেজাররশ্মি মুসলমানদের কিবলা কাবাঘরের দিকে তাক করা। অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য জগৎ–খ্যাত এই মসজিদে একসঙ্গে ১ লাখ ৫ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায় করার সুবিধা আছে।


মসজিদ   সেরা  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

মুখের ঠিকানা

প্রকাশ: ১২:১৬ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

স্পর্শে তুমি

প্রকাশ: ০৪:৪৫ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন