নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৭ পিএম, ০৩ অক্টোবর, ২০১৮
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের রাজনীতি নিয়ে বিশ্ব নেতারা আমাকে কোনো পরামর্শ দেননি। বরং সবাই আগামীতে আবারও আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। আমাকে তাঁরা স্বাগত জানিয়েছে।’ এ সময় উপস্থিত সবাই হাততালি দিলে তিনি বলেন, ‘তালি বাজানোর কিছু নেই। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই।’
জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণ বিষয়ে আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রায় ১০ বছরের মত আমরা ক্ষমতায় আছি। এমন কোনো অন্যায় কাজ করিনি যে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। ২০০৮ বন্দি থাকাকালীন সময়ে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়ে পরিকল্পনা করেছি। এটি এখন বাস্তবায়ন করছি। উন্নয়ন হচ্ছে। দেশের মানুষ মানুষ এখন শান্তিতে আছে।’
সুষ্ঠু নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকারের সময়ে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। সম্প্রতি সিলেট সিটি নির্বাচনে আমরা হেরেছি। ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। তাই আগামীতেও সুস্থ নির্বাচন হবে। আমি আশা করছি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে। আর যারা আসবে না সেটা তাদের বিষয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভয় পাবে তাঁরা যাঁরা অপরাধী। কারও যদি অপরাধী মন না থাকে, ভবিষ্যতে কিছু অপরাধ করবে এরকম পরিকল্পনা না থাকে, তার ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। আমরাও অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি। যারা এ ধরনের কাজ করে, এরা আসলে বিকৃতমনা। এদের কোনও নীতি নাই। এটা ঠেকাতে সমাজকেই আরও সচেতন হতে হবে। এই জন্যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই বিষয়ে সাংবাদিকদেরকেও ভূমিকা রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পদ্মাসেতু নিয়ে যখন আমাদের অপমানিত হতে হয়েছিল, তখন কারা বেশি উৎসাহিত ছিল। ২০০৭ সালে কাদের পত্রিকার বড় বড় হেডলাইন দিয়ে আমাকে দুর্নীতিবাজ বানানোর অপচেষ্টা করা হতো। একটার পর একটা করে ১৬ টা মামলা দেওয়া হয়েছে আমার নামে। বিশ্বব্যাংকও তদন্ত করে কিছু পায় নাই। এরপরেও কিছু লোক অপেক্ষা করে বসে থাকে যে সরকার চলে যাবে, কেউ আসবে যাদের চাল নেই, চুলা নেই, সংঘঠন করতে পারবে না, ভোটও চাইতে পারবে না। কিন্তু তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েস। তাদের খায়েস পূরণ করতে গিয়ে মানুষকে অনেক খেসারত দিয়ে হয়।’
সুশীল সমাজকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘যারা অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের দাঁরা উপকৃত হয়, তাদেরতো একটা আকাঙ্ক্ষা থেকেই যায়। সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে গিয়ে বারবার দেশকে বিপদে ফেলা হয়। আমি ভোটে যেতে পারবো না, সাহস নেই, কিন্তু আমার পতাকা ওয়ালা গাড়ি চাই। আর সেই পতাকা দেবে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী। যারা ব্যক্তি স্বার্থে ক্ষমতা দখল করতে চায়, তাদের সবসময় একটা অপচেষ্টা আছে।’
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে যখন আমার দেখা হয়েছিল তখন এ বিষয়ে তাকে বলেছি। তিনি বেশ আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং নোট নিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আমি আশাবাদী বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে পারবো।’
রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আমরা কাজ করছি। বিদেশি সংস্থাগুলোও সহযোগিতা করছে। ভাসানচরে ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের বসবাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তালিকাও করা হয়েছে। তারা যেন মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে সে ব্যবস্থাও আমরা করছি। মিয়ানমার হ্যাঁ-হ্যাঁ বলে কিন্তু কাজের বেলায় কিছু না।’
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানাই। তখন বিরোধী দল আমার আহ্বানে সাড়া দেয়নি। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারা (বিএনপি) নির্বাচন ঠেকানোর জন্য কাজ করেছে। তারা ৩৯০০ মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। যারা মানুষকে মানুষ মনে করে না তাদের জন্য এত মায়াকান্না কেন? যারা আগুনে পুড়েছে তাদের কখনো খোঁজ-খবর নিয়েছেন? তাদের পরিবার কীভাবে চলছে খোঁজ নিয়েছেন কোনদিন? যারা সামান্য এতিমের টাকার লোভ সামলাতে পারে না তাদের জন্য এত কান্না কেন? এরা কীভাবে স্বপ্ন দেখে ক্ষমতায় আসার? তারা কীভাবে দেশ চালাবে?’
এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে কি থাকছে এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবার আগামী ৮১ বছরের ডেল্টা প্ল্যান করেছি। ২১০০ সালে অর্থাৎ আগামী শতাব্দীতে বাংলাদেশ কেমন হবে সেই পরিকল্পনা করে ফেলেছি আমরা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। এরপর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে শেষে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় দেশে ফিরে আসেন।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যশোর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা
মন্তব্য করুন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ফরিদপুর
মন্তব্য করুন
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন দূতাবাস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী মে মাসে তার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এরপরও আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বাঁক বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- বাকিতে তেল-জ্বালানি পাওয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি তেলের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কোথাও এক বছরের বাকিতে, কোথাও তারও বেশি সময় বাকিতে জ্বালানি তেল আহরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কাতারের সঙ্গেও এমন একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাজার। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এই সব দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে। যুদ্ধের ফলে এই সমস্ত দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে। আর এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে, যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই শ্রমিক ছাঁটাই এর আওতায় না পড়ে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অদূর ভবিষ্যতে নগদ সহায়তা দরকার হতে পারে, দ্রুত ঋণ দরকার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সংকট নিরসনের একটা বড় ভরসাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যমুখী। বাংলাদেশের ঋণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অর্থনীতি ক্রমশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে থেকে উত্তরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দূরদর্শী কূটনৈতিক চিন্তা বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ দেনা মেটাতে হবে। এই কারণেই বাংলাদেশ কখনও যেন সংকটে না পরে সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে পরিচালিত। এই সম্পর্ক ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত নয়।
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।