নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৬ মার্চ, ২০১৯
বাংলাদেশের অর্জন আজ সারাবিশ্বের জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আজ শুধু প্রতিষ্ঠিতই নয়, বাংলাদেশ আজ সফল দেশের গল্পও। বাংলাদেশের সাফল্য আজ সারাবিশ্বের রোল মডেল। কিন্তু তারপরেও আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, ৩০ লক্ষ শহীদ যে কারণে জীবন উৎসর্গ করেছিল, ২ লক্ষ মা-বোন তাঁদের সম্ভ্রম হারিয়েছিল- সেই স্বাধীনতার অনেকগুলো লক্ষ্যই আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি। এখনো আমাদের অনার্জিত স্বপ্নগুলো আমাদের স্বাধীনতার সুফলকে পৌঁছে দিতে পারেনি সবার জন্য। আমরা স্বাধীনতার সাফল্যগাঁথা যখন আলোচনা করি, বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে যখন আলোচনা করি তখন আমাদের ব্যর্থতাগুলো নিয়েও আলোচনা করা দরকার। যে অনার্জিত স্বপ্নগুলো আমরা আজও পূরণ করতে পারিনি, যে স্বপ্নগুলো থেকে আমরা বহুদূর বিচ্যুত হয়েছি- সেগুলোর কয়েকটি এরকম-
বৈষম্য বেড়েছে
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন একটা বাংলাদেশ। বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বৈষম্য। ধনী-গরিবের বৈষম্য বাংলাদেশের জন্য েএকটা বড় পীড়াদায়ক ঘটনা। বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর আমাদের বৈষম্য না কমে বরং বেড়েছে।
দুর্নীতি বেড়েছে
বঙ্গবন্ধু সবসময় ছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তিনি একাধিক বক্তৃতায় দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে দুর্নীতিকে মুক্তির জন্য ডাক দিয়েছিলেন। তিনি সবসময় বলতেন, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। স্বাধীন দেশে দুর্নীতি চলবে না। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এ কথা বলা যেতেই পারে যে আমরা এই দুর্নীতিবন্ধের স্বপ্ন থেকে আমরা অনেক দূরে। বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত তো হয়ই নি, কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতি আরও বেড়েছে। দুর্নীতি আমাদের উন্নয়ন আর ভালো কাজের মুখে কালিমা লেপন করে দিয়েছে।
ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চারটি স্তম্ভ ছিল ধর্ম নিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। যদিও বাংলাদেশ এখন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের একটি প্রতিচিত্র, সারাবিশ্বে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবেই চিহ্নিত। ৭২ এর সংবিধানে যে ধর্ম নিরপেক্ষতা রচিত হয়েছিল, তা আমরা রক্ষা করতে পারিনি। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আমাদের সংবিধান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে কেটে ফেলা হয়। এরপর ৭২ এর সংবিধান পুনরাত্থাপিত হলেও এখনো ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে আমরা এখনো সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত নই।
উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ রাজনীতি
বাংলাদেশে এখনো উগ্র মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ রাজনীতি রয়েছে। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একটি চেতনা ছিল উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক কোনো রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেবো না। আমাদের ৭২ এর সংবিধানে ঘোষিত ছিল যে, ধর্মভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক দল থাকতে পারবে না। সেভাবেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ৭৫ িএর ১৫ আগস্টের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আবার শুরু হয়েছে। ৪৮ বছর পর আমরা যদি দেখি বাংলাদেশে শতাধিক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এখনো বিদ্যমান। যে রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের স্বাধীনতার মৌলিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ঐক্যমতের গণতন্ত্র
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্যতম লক্ষ্য ছিল যে, একটা ঐক্যমতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। সব রাজনৈতিক দল যে মতাদর্শেরই হোক না কেন, মৌলিক জাতীয়তা ও গণতন্ত্রের বিষয়ে একমত হবে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর আমরা দেখি অনেক রাজনৈতিক দলই এখনো বাংলাদেশের অস্তিত্বেই বিশ্বাস করে না। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, মূল্যবোধ থেকে এখনো অনেক দূরে। গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা এবং শিষ্টাচার আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি। রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সৌহার্দ্য, পরমত সহিষ্ণুতার এখনো অভাব রয়েছে। এবং এখনো এই অসহিষ্ণুতা কমছে না, বাড়ছেই। এটাও আমাদের স্বাধীনতার আরেকটি অনার্জিত স্বপ্ন।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া দেশ। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে একটি সফল দেশ। কিন্তু আমাদের অনার্জিত স্বপ্নগুলো যদি আমরা পূরণ করতে না পারি, স্বাধীনতার সুফল যদি আমরা না পাই তাহলে সেই স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় না।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যশোর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা
মন্তব্য করুন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ফরিদপুর
মন্তব্য করুন
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন দূতাবাস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী মে মাসে তার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এরপরও আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বাঁক বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- বাকিতে তেল-জ্বালানি পাওয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি তেলের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কোথাও এক বছরের বাকিতে, কোথাও তারও বেশি সময় বাকিতে জ্বালানি তেল আহরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কাতারের সঙ্গেও এমন একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাজার। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এই সব দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে। যুদ্ধের ফলে এই সমস্ত দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে। আর এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে, যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই শ্রমিক ছাঁটাই এর আওতায় না পড়ে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অদূর ভবিষ্যতে নগদ সহায়তা দরকার হতে পারে, দ্রুত ঋণ দরকার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সংকট নিরসনের একটা বড় ভরসাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যমুখী। বাংলাদেশের ঋণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অর্থনীতি ক্রমশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে থেকে উত্তরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দূরদর্শী কূটনৈতিক চিন্তা বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ দেনা মেটাতে হবে। এই কারণেই বাংলাদেশ কখনও যেন সংকটে না পরে সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে পরিচালিত। এই সম্পর্ক ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত নয়।
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।