নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:১২ পিএম, ২৬ মে, ২০১৯
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে চাকুরীচ্যূত কর্নেল শহিদ উদ্দিন খানের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। অস্ত্র ব্যবসা ও জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী এই বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া কর্ণেল ইংল্যান্ডের টোরি পার্টির ফান্ডে ২০ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন। রোববার (২৬ মে) ইংল্যান্ডের জাতীয় ‘দৈনিক দ্যা সানডে টাইম’ শহিদ উদ্দিন খানের টোরি পার্টিকে উৎকোচ প্রদান সংক্রান্ত সমালোচনা ও বাংলাদেশে তার অপরাধ এবং চলমান মামলার বিষয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও নৈতিক স্খলনের দায়ে বরখাস্তকৃত উক্ত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদে মদদ দেয়া, জঙ্গি অর্থায়ন, অস্ত্র ব্যবসা, প্রতারণা ও অর্থ পাচারের একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শহিদ উদ্দিনের ঢাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে দেশটির কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশ জিহাদি বই, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে।
২০০৯ সালে মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করে ইংল্যান্ডের গোল্ডেন ভিসা সংগ্রহ করে শহিদ উদ্দিন খান দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের উইম্বলডনে পরিবার সহ বসবাস শুরু করেন। শহিদ এই অঞ্চলের ক্ষমতাসীন এমপি এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে ২০ হাজার পাউন্ড উৎকোচ তথা অনুদান দিয়েছেন বলেও নানা গুঞ্জন শোনা যায়।
এদিকে পলাতক শহিদ উদ্দিনের বিষয়ে বাংলাদেশের আদালতকে পুলিশ লিখিতভাবে জানিয়েছে যে, গত বছর তার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক, অস্ত্র, আল-কায়েদার সম্পৃক্ত জিহাদি বই এবং জাল মুদ্রা উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদ্রাসা ও ইসলামি শিক্ষার প্রসারের আড়ালে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ ৫৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে। এছাড়া তথ্য-উপাত্ত বলছে, বাংলাদেশে এক সময়ে উচ্চ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী শহিদ উদ্দিন খান এখন যুক্তরাজ্যে জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত রয়েছেন বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।
তবে শহিদ উদ্দিন খান জোর দাবি জানিয়ে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা ও সাজানো। শহিদ উদ্দিন খান বাংলাদেশ সরকারকে স্বৈরচারী, অপহরণকারী এবং দুর্নীতিপরায়ণ বলেও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি জঙ্গি অর্থায়ন করার মতো গুরুতর অভিযোগও অস্বীকার করেছেন। এছাড়া শহিদ উদ্দিন খান অভিযোগ করেন যে, গত বছর তার ঢাকার বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের নামে ভাঙচুর করা হয়েছে এবং তার কর্মচারীদের অপহরণ করা হয়েছে। এমনকি তার আইনজীবীদেরও অপহরণ করার অভিযোগ করেছেন তিনি। যদিও দেশটির গণমাধ্যমে শহিদ উদ্দিনের এমন অভিযোগ নিয়ে কোন সংবাদ প্রচার করা হয়নি। সেক্ষেত্রে শহিদ উদ্দিনের এই অভিযোগ একপেশে এবং পক্ষপাতমূলক বলেই মনে করেছে ইংল্যান্ডের জাতীয় দৈনিক দ্যা সানডে টাইমস।
প্রায় দশ বছর পূর্বে শহিদ উদ্দিন খান বিনিয়োগ ভিসা ক্রয় করে পরিবারসহ বসবাস শুরু করেন। এই ভিসার বিশেষত্ব হলো, ২ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করলে ইউরোপের বাইরের যেকোন দেশের নাগরিক ইংল্যান্ডে তিন বছর ৪ মাস মেয়াদের ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া দুবছর পর বাড়তি আরো ১০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে পারবেন যেকোন বিনিয়োগকারী। যদিও তথ্য-উপাত্ত বলছে, বাংলাদেশে অপরাধ করে অর্জিত অর্থ দিয়ে উইম্বলডন এলাকায় সম্পদ ক্রয় করেছেন শহিদ।
জানা গেছে, চাকুরীচ্যূত সেনা কর্মকর্তা শহিদ উদ্দিন খানের শেহতাজ নামের মেয়ে রয়েছে, যিনি ২০১৭ সালে ব্যারিস্টারি পাশ করেন। সম্প্রতি তার ফেসবুক পেজে শেহতাজ বাংলাদেশে কাতার ভিত্তিক আল-জাজিরা চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ সরকার জোরপূর্বক নাগরিকদের অধিকার খর্ব করছে। সরকার জোরপূর্বকভাবে দেশটির নাগরিকদের অত্যাচার করছে এবং নাগরিকদের বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।
যদিও বাংলাদেশের একটি সরকারি নথি দাবি করছে যে, বিগত ১০ বছরে ভূমি জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি আয় করেছেন শহিদ। এই অভিযোগে বিগত মাসে একটি জালিয়াতি মামলায় তার অনুপস্থিতিতে ৫ বছরের সাজা ঘোষণা করেন আদালত।
বাংলাদেশের পুলিশ বলছে, শহিদ উদ্দিন খানের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫০টি বিস্ফোরক দ্রব্য, ২টি বন্দুক, ২টি শটগান, ৭টি জিহাদি বই যার মধ্যে একটি আল-কায়েদা নেতা আইমান আল-জাওয়াহিরির সম্পর্কিত। এছাড়া বাকি বইগুলো বাংলাদেশে তথাকথিত খলিফার সম্পর্কিত লেখা।
রাজনৈতিক অনুদানের বিষয়ে দ্যা সানডে টাইমস এর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শহিদ উদ্দিন খান। যদিও টোরি পার্টির অনুদানের রেজিস্টারে তার নামে অনুদানের অঙ্ক দেখালে শহিদ বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে তিনি পছন্দ করেন। করণ হ্যামন্ড তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়। এছাড়া তার ছোট মেয়ের স্কুলে কাগজপত্র সংক্রান্ত ঝামেলায় একবার হ্যামন্ড সহায়তা করেছিলেন, যার কারণে খুশি হয়ে পার্টি ফান্ডে ২০ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়েছিলেন শহিদ।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যশোর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা
মন্তব্য করুন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ফরিদপুর
মন্তব্য করুন
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন দূতাবাস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী মে মাসে তার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এরপরও আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বাঁক বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- বাকিতে তেল-জ্বালানি পাওয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি তেলের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কোথাও এক বছরের বাকিতে, কোথাও তারও বেশি সময় বাকিতে জ্বালানি তেল আহরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কাতারের সঙ্গেও এমন একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাজার। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এই সব দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে। যুদ্ধের ফলে এই সমস্ত দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে। আর এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে, যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই শ্রমিক ছাঁটাই এর আওতায় না পড়ে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অদূর ভবিষ্যতে নগদ সহায়তা দরকার হতে পারে, দ্রুত ঋণ দরকার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সংকট নিরসনের একটা বড় ভরসাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যমুখী। বাংলাদেশের ঋণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অর্থনীতি ক্রমশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে থেকে উত্তরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দূরদর্শী কূটনৈতিক চিন্তা বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ দেনা মেটাতে হবে। এই কারণেই বাংলাদেশ কখনও যেন সংকটে না পরে সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে পরিচালিত। এই সম্পর্ক ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত নয়।
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।