নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৪ এএম, ০৪ জুন, ২০১৭
মন্ত্রিসভায় একটি রদবদল হবে- এমন কথা শোনা যাচ্ছিল অনেকদিন ধরেই। তবে তা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে গত ৮ মে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথায়। মন্ত্রিসভায় এই রদবদল ঈদের আগে নাকি পরে হচ্ছে?
সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা ঈদে সাধারণত সরকারের সার্বিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরবেন ভোটারদের কাছে। তবুও তাদেরকে কাছে পেয়ে কিছু নেতিবাচক বিষয়ও ভোটাররা সামনে আনতে পারেন এই সময়। এগুলোর মধ্যে প্রাধান্য পেতে পারে চলতি বাজেট প্রস্তাব। বিশেষ করে ভ্যাট ও আবগারী শুল্ক নিয়ে। তাছাড়া আরও কিছু বিষয়ও সামনে আসতে পারে এ সময়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি ও রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে নারী নিপীড়নের ঘটনা। এবং সর্বোপরি সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডও সামনে আসবে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে। যা সরকারের ইতিবাচক কাজগুলোকে ভোটারদের সামনে পিছু টানতে পারে।
ঈদে ভোটারদের সামনে শতভাগ স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হলেও তা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে চায় সরকার তথা আওয়ামী লীগ। সেজন্যে অন্তত সমালোচিত মন্ত্রীদের বিষয়ে একটা ব্যবস্থা ঈদের আগেই নেয়ার যুক্তি দেখাচ্ছেন শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ। তবে এ ক্ষেত্রে মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ যাবেন কম, রদবদলই হবে বেশি বলে জানা গেছে।
আবার শীর্ষ নেতাদের কারও মতে, এখনই পরিবর্তন আনলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীরা সানন্দে ঈদ করতে পারবেন না। তাই এই পরিবর্তন ঈদের পরে আনাই উচিত বলে মত তাদের। তবে ঈদের পরে হলেও তা খুব বেশি সময় নেয়া হবে না বলেও জানা গেছে। কারণ আগস্ট মাসে সাধারণত মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা হয় না।
তবে কেবল নেতিবাচক নয়। এই রদবদলে ইতিবাচক পরিবর্তনও আসতে পারে মন্ত্রিসভায়। জানা গেছে, একাধিক নতুন মন্ত্রীও আসতে পারে এতে। দায়িত্ব পরিবর্তন হবে একাধিক মন্ত্রীর।
এছাড়া দুই-একজন প্রতিমন্ত্রীকে কাজের ইতিবাচক স্বীকৃতি হিসেবে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীও করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। আবার নেতিবাচক ভাবমূর্তির কারণে মন্ত্রীদের মতো একাধিক প্রতিমন্ত্রীও বাদ পড়তে পারেন এবারের রদবদলে ।
বর্তমান সরকারে থাকা জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন বলে মাঝেমধ্যেই কথা ওঠে। সরকার শপথ নেয়ার পর থেকে বহুবার এই কথা উঠলেও আসলেই তারা পদত্যাগ করবেন, নাকি সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত করবেন, তাও এই রদবদলে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এদিকে রদবদল প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যেসব মন্ত্রীর নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, ভূমি মন্ত্রী সামছুর রহমান শরীফ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ সায়েদুল হক ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীকে মন্ত্রণালয় নিয়ে সর্বশেষ সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে সাম্প্রতিক আগাম বন্যার সময়। ওই সময় হাওরাঞ্চলের মানুষের আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে কৃষকদের সচেতন করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। পারলে কৃষক হয়ত আগেই কিছু ফসল হলেও কেটে ঘরে তুলতে পারত।
তাছাড়া নারয়ণগঞ্জের ৭ খুন মামলার অন্যতম প্রধান আসামি তারেক সাঈদ তাঁর জামাতা। এই নিয়েও বিব্রত হতে হয়েছে সরকারকে। তাছাড়া মন্ত্রীর ছেলেকে নিয়েও বিভিন্ন সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে সরকারকে। ২০১১ সালে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর ছেলে দীপু চৌধুরীকে দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম আমলে দীপু চৌধুরীর নানা অপকর্মের কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার।
সম্প্রতি সরকার বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফকে নিয়েও। সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগে মন্ত্রীর ছেলেকে কারাগারে যেতে হয়েছে। মন্ত্রীর ছেলে শিরহান শরীফ তমালসহ ১১ জনকে কয়েকদিন আগে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাটের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ১৯ এপ্রিল তারা দুইটি বাড়ি ও তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ভূমি বেদখলের অভিযোগ আছে। চট্টগ্রামের চান্দগাঁও কমিউনিটি সেন্টার সংক্রান্ত ওই বিষয়ে গত বছর এপ্রিলের দিকে সরকারকে বেশ বিব্রত হতে হয়। তাছাড়া সৌদি আরবে কর্মী যেতে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও ৭-৮ লাখ টাকা খরচ হয় বলে অভিযোগ আছে। বহুদিনপর সৌদি আরবে শ্রম বাজার খুললেও এই বিষয়ে সমালোচনায় পড়তে হয় সরকারকে।
মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের কারণে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘরে মৌলবাদীরা আগুন দিয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। ওই সময় মন্ত্রী সংখ্যালঘুদের ‘মালাউন’ বলে গালি দিয়েছিলেন বলেও আছে অভিযোগ। এ কারণে সরকারকে কেবল দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল বলে মনে করছেন অনেকে।
ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে হজ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন সময়ে মসজিদ-মন্দিরে বরাদ্দ দেয়া সংক্রান্ত অনিয়ম নিয়ে। বিশেষ করে গত দুবারই হজ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয়েছে তাঁর মন্ত্রণালয়। এবারও সমস্যা সমাধানে আগাম তেমন কোন প্রস্তুতি না থাকায় এই ব্যর্থতার হ্যাটট্রিক হতে পারে বলে মনে করছেন অংশীজনেরা (স্টেকহোল্ডাররা)।
তাছাড়া মন্ত্রীপুত্র মুহিত উর রহমান মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজ দেখভাল করেন বলে অভিযোগ আছে। প্রধানত হজযাত্রীদের সরকারি তালিকা তৈরি, তাদের ব্যাগ তৈরি, পূজা ও ঈদের বিশেষ বরাদ্দ বণ্টনে তিনি প্রভাব রাখেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় এ যাবত তিনবার রদবদল হয়েছে। এরমধ্যে প্রথমবার রদবদল হয়েছিল শপথ গ্রহণের মাস দেড়েক পর ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে (এমএইচ মাহমুদ আলী) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং নজরুল ইসলামকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।
প্রায় দেড় বছর পর ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই মন্ত্রীসভায় যোগ হন নতুন পাঁচ জন। তাদের মধ্যে ওইদিন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। একই দিন মন্ত্রী হিসেবে আরও শপথ নেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তারানা হালিম (ডাক ও টেলিযোগাযোগ) এবং নুরুজ্জামান আহমেদ (খাদ্য)।
মন্ত্রিসভায় সর্বশেষ রদবদল হয় ২০১৫ সালের ৯ জুলাই। চমকপ্রদ ওই রদবদলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। একই দিন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বদলে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। এক সপ্তাহ পর সৈয়দ আশরাফ পান তার নতুন মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন।
বাংলা ইনসাইডার/এমএএম
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক বিএসএমএমইউ
মন্তব্য করুন
রাজার ভুটান ভুটান তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত
মন্তব্য করুন
ভালো চাকরির প্রলোভনে লিবিয়ায় গিয়ে জিম্মির শিকার চট্টগ্রামের চার তরুণ। সেখানে তাদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। আর সেই ভিডিও স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দাবি করা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ।
বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে জিম্মিদের অভিভাবকরা এ ঘটনায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ওসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
লিবিয়ায় মানব পাচার চক্রের হাতে জিম্মি চার তরুণ হলেন- আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মধ্যম গহিরা বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকার নুরুল আলমের ছেলে ওয়াসিম, একই এলাকার মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন, আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম ও জেবল হোসেনের ছেলে নাঈম উদ্দিন। এদের বয়স ১৯ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।
অপহৃতদের স্বজনরা জানান, রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম লিবিয়ায় নিয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ফেব্রুয়ারিতে জনপ্রতি ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। ওই তরুণরা ১৬ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ায় পৌঁছেন। লিবিয়ায় তাদের সংঘবদ্ধ একটি চক্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা দাবি করে তাদের নির্যাতন করা শুরু হয়। মানব পাচার চক্র এরপর নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো শুরু করে পরিবারের সদস্যদের কাছে।
স্বজনরা জানান, চট্টগ্রামের জহিরুল ভুক্তভোগীদের টুরিস্ট ভিসায় প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। সেখানে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার বাসিন্দা মো. মিজান নামে এক লোকের হাতে ওদেরকে তুলে দেয়া হয়। মিজান তিনদিন পর তাদের সবার পাসপোর্ট নিজের কাছে নিয়ে নেয়। সাতদিন পর দুবাই থেকে মিসর হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে মিজান ওই চার তরুণকে অন্য দালালের হাতে তুলে দেয়।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমন জানান, অপহৃতদের স্বজনদের কাছ থেকে তারা লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লিবিয়া বাংলাদেশি জিম্মি নির্যাতন ভিডিও মুক্তিপণ
মন্তব্য করুন
ভালো চাকরির প্রলোভনে লিবিয়ায় গিয়ে জিম্মির শিকার চট্টগ্রামের চার তরুণ। সেখানে তাদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। আর সেই ভিডিও স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দাবি করা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ। বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে জিম্মিদের অভিভাবকরা এ ঘটনায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ওসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।