নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ এএম, ০৭ জুলাই, ২০২০
করোনা সংক্রমণের চার মাসে বাংলাদেশ সব চেয়ে বড় যে চাপের মুখে পড়েছে সেটা হলো জনস্বাস্থ্যের চাপ। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মোটামুটি ভেঙে পড়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসা দেওয়ার নামে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলো সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও চিকিৎসা পাচ্ছে না। আর করোনা চিকিৎসা নিয়ে এক ধরনের আতংক এবং ভয়ার্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গত চার মাসে জনস্বাস্থ্য খাতে যে সঙ্কটগুলো সৃষ্টি হয়েছে সেটাই একটু দেখে নেওয়া যাক-
রোগী বাড়ছে হু হু করে
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখের কাছাকাছি চলে এসেছে। মৃত্যুও ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ভাইরাসের ব্যাপক সামাজিক সংক্রমণের কারণে এখন ঢাকার বাইরেও প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচুর রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তালিকায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আঠেরো নম্বরে। করোনার উৎপত্তিস্থল চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। গত বেশ কিছুদিন ধরে যে পরিমান টেস্ট করা হচ্ছে তার ২০-২৩ শতাংশ পর্যন্ত আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
বাড়িতে মৃত্যু বাড়ছে
প্রতিদিনই হাজারো মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় মারাত্মক চাপে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হচ্ছে প্রতিদিনই হাসপাতালের বাইরে বাড়িতে মারা যাচ্ছেন বেশকিছু রোগী। এর অর্থ হচ্ছে এই রোগীরা হাসপাতালে পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে বাসায় থাকতে বাধ্য হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ৮০ ভাগের বেশি এখন বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর একেবারে গুরুতর অবস্থা না হলে হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
চিকিৎসা ব্যবস্থায় শুধুই হাহাকার
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে অ্যাকটিভ কেইস প্রায় ৯০ হাজার। তার ৫ শতাংশের যদি আইসিইউ সুবিধা প্রয়োজন হয় তাহলে সেই সংখ্যাটা হবে সাড়ে চার হাজার। অথচ আমাদের দেশে কোভিড রোগীদের জন্য আইসিইউ আছে মাত্র ৩৪০টি। যা রোগীর অনুপাতে চাহিদার মাত্র ৯.৫ শতাংশ।
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন সংকটাপন্ন রোগীর জন্য আইসিইউ থেকে এখন বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে উচ্চচাপে অক্সিজেন সরবরাহ করা। ক্রিটিকাল রোগীদের জন্য জীবন রক্ষা করতে পারে এই ব্যবস্থা। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে দেশের মাত্র ২৩টি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। বাকী হাসপাতালে চাহিদা পূরণের জন্য রয়েছে ১৬ হাজারেরও কম অক্সিজেন সিলিন্ডার।
ঢাকার বাইরে আরও বেহাল দশা
আইইডিসিআর এর তথ্যে দেখা যায়, রাজধানী বাদে দেশের অন্তত ১০টি জেলায় করোনায় আক্রান্ত ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতেও হু হু করে বাড়ছে রোগী। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার বাইরে এখন স্বাস্থ্যসেবার ওপর চাপ বাড়ছে। ঢাকার বাইরে যে রোগীরা সংক্রমিত হচ্ছে - যেমন চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটে কিন্তু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সেই অনুপাতে সেখানকার হসপিটাল ফ্যাসিলিটি একেবারেই নগন্য। ক্রিটিক্যাল রোগীরাই কেবল হাসপাতালে যাচ্ছেন কিন্তু প্রয়োজনীয় সেবা চাহিদা মতো নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
বেড মাত্র ১১ হাজার
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ আছে ১১ হাজারের মতো হাসপাতাল বেড। সরকারি বেসরকারি সব হাসপাতালেই এখন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদিও বাস্তবতা হলো এ নির্দেশনা অনুযায়ী সব হাসপাতাল এখনো প্রস্তুতি শেষ করতে পারেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখন দেশের সব হাসপাতালে করোনা বেড ফাঁকা রয়েছে। কিন্তু সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লার মতো অধিক সংক্রমিত এলাকা এমনকি ঢাকার সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ঢাকার বাইরে বেশকিছু হাসপাতালের রোগীদের মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সুস্থ হওয়ার আগেই ছাড়পত্র
বাংলাদেশে করোনা থেকে সুস্থতার যে গাইডলাইন অনুসরণ করা হচ্ছে সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দেখা যাচ্ছে ওষুধ ছাড়া কোনো রোগী কয়েক দিন জ্বর কাশি মুক্ত থাকলেই তাকে সুস্থ বলে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে তার ভেতরে সংক্রমণ থেকে যাচ্ছে। ফলে সে আরও বহু মানুষকে আক্রান্ত করে ফেলছে।
ব্যহত হচ্ছে অন্য রোগের চিকিৎসা
করোনাভাইরাস মহামারিতে সংকট তৈরি হয়েছে সাধারণ রোগের চিকিৎসায়। কিছু কিছু হাসপাতালে ঘোষণা দিয়েই কয়েকটি রোগের চিকিৎসা বন্ধ রেখেছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে একেবারে জরুরি না হলে খুব কম রোগীরাই হাসপাতালে যাচ্ছেন। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ার অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছে।
যারা সেবা দেবেন তারাই আক্রান্ত
করোনাভাইরাস মহামারিতে আরেকটি বড় সংকট দেখা দিয়েছে ডাক্তার নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের একটা বড় অংশ আক্রান্ত হওয়ার কারণে। ডক্টরস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের তথ্যে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪শ ৩৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৬৬ জন। অন্তত ৬১ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৭৬ জন।
মন্তব্য করুন
বিএসএমএমইউ অধ্যাপক দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জাহিদ মালেক টিপু মুনশি ড. এ কে আব্দুল মোমেন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হক আজ দায়িত্ব নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক, অধ্যাপক, নার্স সহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন দিয়ে বরণ করে নেন। এটি একজন উপাচার্যের জন্য বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা উপাচার্য হয়েছেন তারা কেউ এরকম রাজসিক অভ্যর্থনা পাননি। তাকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদ অনেক উঁচুতে উঠে গেছে।