নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০১ পিএম, ০৯ জুলাই, ২০২০
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিকল্প নির্বাহী পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেছেন, ‘অনতিবিলম্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজাতে হবে। ২০১৪ সাল থেকে যেই হাসপাতালটির অনুমোদন নেই, সেই হাসপাতালটিকেই করোনা পরীক্ষার অনুমতি দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আমি আমার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে, এ ধরনের অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর করার পূর্বে কিছু কাগজপত্র যেমন- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন আছে কিনা, ট্রেড লাইসেন্স আছে কিনা, এসব দেখা বাধ্যতামূলক দায়িত্ব। এসব না দেখেই কিংবা নাই জেনেও করোনা পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়ার মানে হলো অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার বিনিময়ে এটা করা হয়েছে।’ রিজেন্ট হাসপাতালের কেলেঙ্কারির বিষয়ে ‘বাংলা ইনসাইডার’ এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) এই চেয়ারম্যান সাম্প্রতিক একটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘কয়েক মাস আগে একজন আমাকে ফোন করে একটা ওষুধের বিষয়ে বললেন, ওষুধটি ব্যবহারে উপকার হচ্ছে। আমি যেন বিএমআরসি থেকে ওষুধটাকে রিকগনাইজ করে দিই। মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীও আমাকে এ বিষয়ে বললেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাকে ‘চাচা’ বলে ডাকেন। আমিও তাকে খুব স্নেহ করি। কিন্তু তারপরও সরাসরি আমি তাকে বললাম, ‘এটার কিছু নিয়ম কানুন আছে। সেগুলো পেরিয়ে না আসলে এ ধরনের অনুমোদন আমি দিতে পারবো না। নিয়মের বাইরে যাওয়া যাবে না’। এর দু’মাস পরে তখনকার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান আমাকে মন্ত্রীর কথা বলে আবার অনুরোধ করেন যে, একটু তাড়াতাড়ি যেন আমি অনুমোদনের ব্যবস্থা করি। আমি তখনও তাকে সরাসরি বলি যে, ‘এটা সম্ভব নয়। সব নিয়ম কানুন পেরিয়ে তবেই অনুমোদন পেতে হবে। এ ব্যাপারে আমাকে দ্বিতীয়বার আর অনুরোধ করবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে এখানে বসিয়েছেন। আমি আইনমাফিক সবকিছু করবো’। আমি এই উদাহরণটি এ কারণেই দিলাম যে, অনেক অনুরোধ, তদ্বির আসতেই পারে। কিন্তু অনুরোধ আসলেই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সেটা মানতে হবে, এটা কোনো কথা হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতালকে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়ার বিনিময়ে কে কতটা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন, তা আমি জানি না। কিন্তু অর্থের লেনদেন যে হয়েছে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। এটা স্বাভাবিক যে, সব ধরনের লাইসেন্স আছে কিনা সেটা মন্ত্রী মহোদয়ের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়ের অবশ্যই এগুলো দেখার দায়িত্ব। তিনি যদি সেটা না-ই করেন, তবে তিনি কি কাজ করেন- সেটা এক বড় প্রশ্ন।’
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সবাইকে কোনো দরকারে ফোন করলে পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে অনেক সময় তারা ফোন ধরতে না পারলেও পরবর্তীতে কলব্যাক করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, একান্ত সচিবও এটা করেন। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্তা ব্যক্তিদের কোনো কাজে ফোন দিলে পাওয়া যায় না। করোনা মোকাবেলার টেকনিক্যাল সব কাজগুলো এখান থেকে হওয়ার কথা। এই অফিসটার সবচেয়ে বেশি তৎপর থাকার কথা। অথচ এই অফিসটাই একেবারে অথর্ব হয়ে বসে আছে। একের পর মাস্ক, পিপিই নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে অভিযগ এলো। আরও বিভিন্ন বিষয়ে রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালে নানা অভিযোগ পাওয়া গেল। অথচ আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেউ হাসপাতালগুলোতে গেলেন না। করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত বিভিন্ন হাসপাতালে কোথায় কি হচ্ছে, সেটা তো তাদের গিয়ে দেখা দায়িত্ব। তারা বসে বসে কোন কাজটা করছেন, তা আমার বোধগম্য নয়। তবে আমি বিশ্বাস করি যে, এই অফিসের সবাই অসৎ নন, অনেকেই আছেন যারা সৎ। তবে এটা প্রমাণিত যে সবাই অথর্ব। না হলে এত এত কেলেঙ্কারি- দুর্নীতি হচ্ছে কি করে!’
ডা. মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে তো অভিযোগের পাহাড়। আগেও এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু তারপরও কেন কোনো তদন্ত হয়নি। এমনকি এখনও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে নমনীয় আচরণ করছে। এতে এটাই প্রমাণিত হয়ে যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেউ ওই হাসপাতালের সাথে যুক্ত, এমনকি ওই হাসপাতালে তাদের কারও মালিকানার অংশও থাকতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটা ছবিতে দেখলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির কামরায় তার উপস্থিতিতে রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদ পায়ের উপর পা তুলে খোশ গল্প করছেন। সেখানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলানকেও দেখা গেছে। শোনা যায়, ডা. এম ইকবাল আর্সলান নাকি দিনের অনেকটা সময় ডিজির অফিসেই থাকেন। তিনি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বললেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি পদে কোনো আমলাকে নিয়োগ দেওয়া হলে ফল ভালো হবে না। তার এই বক্তব্যের মানে কি? ডিজি’র কামরায় সাহেদের সঙ্গে তার থাকার মানে কি? এগুলোর তদন্ত হওয়া উচিৎ।’
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাত ভঙ্গুর বলে যে অভিযোগ করছে সাধারণ মানুষ, এটা সত্য বলে আমি মনে করি। আমি এটাও মনে করি যে, বর্তমান সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করার জন্যই স্বাস্থ্য খাতের কেলেঙ্কারিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হচ্ছে। সরকারবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদে জেঁকে বসেছেন। একের পর এক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাই এখনই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজাতে হবে।’
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যশোর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা
মন্তব্য করুন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ফরিদপুর
মন্তব্য করুন
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন দূতাবাস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী মে মাসে তার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এরপরও আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বাঁক বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- বাকিতে তেল-জ্বালানি পাওয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি তেলের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কোথাও এক বছরের বাকিতে, কোথাও তারও বেশি সময় বাকিতে জ্বালানি তেল আহরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কাতারের সঙ্গেও এমন একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাজার। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এই সব দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে। যুদ্ধের ফলে এই সমস্ত দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে। আর এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে, যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই শ্রমিক ছাঁটাই এর আওতায় না পড়ে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অদূর ভবিষ্যতে নগদ সহায়তা দরকার হতে পারে, দ্রুত ঋণ দরকার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সংকট নিরসনের একটা বড় ভরসাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যমুখী। বাংলাদেশের ঋণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অর্থনীতি ক্রমশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে থেকে উত্তরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দূরদর্শী কূটনৈতিক চিন্তা বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ দেনা মেটাতে হবে। এই কারণেই বাংলাদেশ কখনও যেন সংকটে না পরে সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে পরিচালিত। এই সম্পর্ক ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত নয়।
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।