নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১৬ অক্টোবর, ২০২০
ফরিদপুর ৪ আসনের এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীর ঘটনার পর প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা এবং অস্থিরতা সবার সামনে এসেছে। এ ঘটনাটি যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং জনপ্রতিনিধি এবং মাঠ প্রশাসনের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের এক বহিঃপ্রকাশ, সেটা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। এই নিয়ে এখন কথাবার্তা হচ্ছে। পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন যেমন নিক্সন চৌধুরীর বিচার চেয়েছেন এবং নিরাপত্তা চেয়েছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের, ঠিক তেমনি জনপ্রতিনিধিরাও এলাকাগুলোতে জনগণের উন্নয়ন কর্মকান্ডে তাদের ভূমিকার স্বীকৃতি চেয়েছেন। আর এই নিয়ে মাঠ প্রশাসনে একরকম অস্থিরতা চলছে । দেখা যাচ্ছে যে একটি জেলার দায়িত্বে থাকেন একজন জেলা প্রশাসক। একজন জেলা প্রশাসক উপসচিব পদমর্যাদার। সরকারের যে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সে অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্যের পদমর্যাদা সচিবের ওপরে। সেই হিসেবে জেলার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে সে নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের দ্বন্দ্বের গল্পটি পুরনো ।
অনেকদিন ধরেই জেলা প্রশাসকরা জেলায় তাদের নিয়ন্ত্রণ এবং কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় । এই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অনেক সময় তাকে স্থানীয় এমপির সঙ্গে মতবিরোধ এবং মতপার্থক্যে জড়াতে হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন যে, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এবং গণতন্ত্রের এই চেক ইন ব্যালেন্স গণতন্ত্রকে টেকসই করে। গণতন্ত্রেকে এগিয়ে নিয়ে যায় । অনেক সময় এই চেক ইন ব্যালেন্স ঠিক থাকেনা। জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। সাম্প্রতিক সময়ে জেলা প্রশাসকদের হাতে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে করোনা মোকাবেলার জেলা সমন্বয় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের এবং জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা সেখানে দর্শকদের মত । শুধু তাই নয় গত ঈদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যে ত্রাণ বিতরণের জন্য শাড়ি-লুঙ্গি ইত্যাদি দেয়া হয়েছিল সেটিও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিতরণ করা নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। আর এখানে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা ছিল শুধুমাত্র দর্শকের।
জেলাগুলোতে এখন যে উন্নয়ন কর্মকান্ড গুলো হচ্ছে সে উন্নয়ন কর্মকান্ড ক্রমশই জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে । এর একটি বড় কারণ হলো প্রতিটি জেলায় একজন করে সচিবকে সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যার ফলে সচিবদের কাছেই জেলা প্রশাসকরা জবাবদিহি করছেন। এবং জেলার সামগ্রিক কর্মকান্ড দেখাশোনা করছেন জেলা প্রশাসক । কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা বলছেন যে, একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় সুনির্দিষ্ট কিছু অঙ্গীকারের মাধ্যমেই তারা নির্বাচনে জয়লাভ করেন এবং জনগণের কাছে তারা দায়বদ্ধ। তাদের প্রধান দায়িত্ব হলো জনগণের কাছে তারা যে অঙ্গীকারগুলো করেছেন সে অঙ্গীকারগুলো পূরণ করা। কিন্তু এই অঙ্গীকারগুলো পূরণ করতে গিয়ে যদি প্রশাসনের সহযোগিতা না পান তাহলে জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হয়। পরবর্তী নির্বাচনে তার প্রভাব পড়ে । এজন্যই জেলা এবং মাঠ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা কর্তৃত্বচান। বিশেষ করে উন্নয়ন কর্মকান্ড, ত্রাণ বিতরণ সহ নানা রকম সরকারি কার্যক্রমে তাদের নেতৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চান। এ নিয়ে শুধু ফরিদপুর নয় সারাদেশেই কমবেশি দ্বন্দ্ব-সংঘাতের খবর পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য জেলা প্রশাসন এবং এমপি মিলেমিশে কাজ করেন । এমন নজির আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। সংকটের এখানেই শেষ নয়, জেলায় প্রশাসনের মধ্যেও রয়েছে সমন্বয়হীনতা। সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় পুলিশ প্রশাসন জেলা প্রশাসকের কাছে দায়বদ্ধ নয়। পুলিশ প্রশাসনকে পৃথক করা হয়েছে । যেটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান করেছিলেন যে জেলায় প্রশাসনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসকদের হাতে। কিন্তু সেটি জিয়াউর রহমান এসে পাল্টে ফেলেন এবং এসপিদের পৃথক করে ফেলেন। যার ফলে একটি জেলায় পুলিশ প্রশাসন জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেই। আর এর ফলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি বা কোন রকম অঘটন ঘটলে তার দায় দায়িত্ব যেমন জেলা প্রশাসনের থাকে না তেমনি জেলা প্রশাসন এগুলো নজরদারী বা দেখভালও করতে পারেন না।
এখানেই শেষ নয়, জেলার যে বিচার ব্যবস্থা আছে সেই বিচার ব্যবস্থায় একজন জেলা জজের পদমর্যাদা সচিব সমমানের । এটি হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে সবোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী করা হয়েছে। এর ফলে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তাহলো জেলা সমন্বয় সভা গুলোতে বিচার বিভাগের যিনি প্রধান তিনি আসেন না। তিনিও জেলা প্রশাসকের কর্তৃত্বাধীন নন । আর এরকম সমন্বয়হীনতার মাঝে আবার জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা নতুন করে যুক্ত হয়েছে । ফলে এখন সকলেই মনে করেন যে মাঠ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর দরকার এবং জনপ্রতিনিধি বিশেষ করে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, কার কি ভূমিকা তা সুনির্দিষ্ট করা দরকার। বিশেষ করে একটি জেলায় পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং প্রশাসন তিনটির মধ্যে একটি সমন্বয় জরুরী। না হলে এ ধরনের ঘটনা ভবিষতে আরো বাড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যশোর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা
মন্তব্য করুন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ফরিদপুর
মন্তব্য করুন
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন দূতাবাস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী মে মাসে তার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এরপরও আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বাঁক বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- বাকিতে তেল-জ্বালানি পাওয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি তেলের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কোথাও এক বছরের বাকিতে, কোথাও তারও বেশি সময় বাকিতে জ্বালানি তেল আহরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কাতারের সঙ্গেও এমন একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাজার। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এই সব দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে। যুদ্ধের ফলে এই সমস্ত দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে। আর এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে, যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই শ্রমিক ছাঁটাই এর আওতায় না পড়ে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অদূর ভবিষ্যতে নগদ সহায়তা দরকার হতে পারে, দ্রুত ঋণ দরকার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সংকট নিরসনের একটা বড় ভরসাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যমুখী। বাংলাদেশের ঋণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অর্থনীতি ক্রমশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে থেকে উত্তরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দূরদর্শী কূটনৈতিক চিন্তা বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ দেনা মেটাতে হবে। এই কারণেই বাংলাদেশ কখনও যেন সংকটে না পরে সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে পরিচালিত। এই সম্পর্ক ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত নয়।
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।