নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১০ এপ্রিল, ২০২১
চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলো পশ্চিমবাংলার বিধানসভার নির্বাচনে। এখন পর্যন্ত এই নির্বাচন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। এই নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যে জরিপ এবং পূর্বাভাস তাতে অনেকেই মনে করছেন যে মমতা ব্যানার্জি এবারে নির্বাচনে কিছুটা হলেও এগিয়ে আছেন। শেষ পর্যন্ত নবান্নের চাবি কার সাথে যাবে সেটি এখনও বড় প্রশ্ন। তবে এবার নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক হলো বিজেপি চোখে চোখ রেখে কথা বলছে তৃণমূলের এবং এই নির্বাচনে পশ্চিমবাংলায় দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে বিজেপি আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এমনকি কেউ কেউ এরকমও পূর্বাভাস দিচ্ছেন যে শেষ পর্যন্ত সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা হয়তো মমতা ব্যানার্জির নাও পেতে পারেন। তখন তাকে কংগ্রেস বা বামফ্রন্টের সহায়তা নিয়ে সরকার গঠন করতে হতে পারে। অনেকেই আবার মনে করছেন যে, নির্বাচনে বড় ধরনের চমক হতে পারে। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার মসনদে বিজেপিও বসতে পারে। বিশেষ করে এই নির্বাচন নিয়ে নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ পশ্চিমবাংলায় যেভাবে প্রচারণা করছেন তা নজিরবিহীন। একটা বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছেন তিনি তৃণমূলের উপর। এই নির্বাচন যে উত্তেজনাপূর্ণ এবং হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচন সেই পূর্বাভাসই দিচ্ছে।
কিন্তু এই নির্বাচনের এই নির্বাচনে বাংলাদেশ একটি ফ্যাক্টর, বড় ইস্যু হিসেবে এসেছে। ভোটের রাজনীতিতে বাজিমাত করার জন্য নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করেছেন। মাতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানে তিনি বক্তৃতাও দিয়েছেন। এই নির্বাচনের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ও জড়িত রয়েছে। বিশেষ করে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিটি এই নির্বাচনের উপর অনেকখানি নির্ভর করছে বলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন। মনমোহন সিং যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী তখনই এই পানিচুক্তি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণেই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। মমতা ব্যানার্জি তিস্তার পানিচুক্তির প্রকাশ্য বিরোধিতা করছেন এবং তিনি বলছেন যে পশ্চিমবাংলায় পানি না দিয়ে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে পানিচুক্তি করার বিরোধী। আইন অনুযায়ী এ ধরনের চুক্তি করতে গেলে রাজ্য সরকারের অনুমোদন লাগে, অনাপত্তি লাগে। রাজ্য সরকারের অনাপত্তির কারণে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।
এখন পশ্চিমবাংলা নির্বাচনের দিকে তাই বাংলাদেশেও তাকিয়ে আছে। পশ্চিমবাংলায় যদি বিজেপি সরকার শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় আসে তাহলে পানিচুক্তির পথ প্রশস্ত হতে পারে বলে কোন কোন কূটনীতিক মনে করছেন। তারা মনে করছেন যে, বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে তিস্তার পানিচুক্তির বিষয়টি নাই। বিজেপি উন্নয়ন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে দিদির তন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি ম্যান্ডেট চাইছে। সেখানে তারা তিস্তার পানির বিষয়টিকে প্রচারণায় আনছে না। অন্যদিকে মমতা ব্যানার্জির নির্বাচনের অন্যতম প্রধান ইস্যু হলো তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যু এবং এই নির্বাচনে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন নিজের দেশের পানির সমস্যা সমাধান না করে তিনি বাংলাদেশকে পানি দেবেন না। কাজেই এই বিষয়টিকে ঘিরে মনে করা হচ্ছে যে, নির্বাচনের যদি শেষ পর্যন্ত মমতা ব্যানার্জি জয়ী হন তাহলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পানিচুক্তি আরো প্রলম্বিত হবে। কিন্তু এই পানিচুক্তির বাইরেও কিছু স্পর্শকাতর বিষয় আছে যে বিষয়গুলোর সাথে বাংলাদেশ প্রভাবিত। বিশেষ করে নতুন নাগরিকপঞ্জি এবং নাগরিক আইন যদি পশ্চিমবাংলাতে শুরু হয় তাহলে বাংলাদেশে একটা চাপে পড়তে পারে। বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে আসামের মতো বহিরাগত খেতাবের নামে একটি আতঙ্ক তৈরি হতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকেই নিশানা করা হবে। যার কারণে দু`দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটা টানাপোড়ন তৈরি হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
কিন্তু অনেকেই কূটনৈতিক মনে করেন যে, বাঙালি খেদাও বা বাংলাদেশী খেদাও বলে যে কথাবার্তা বিজেপির উগ্রবাদীরা বলছে সেটি নেহায়েত রাজনীতির মাঠের বক্তৃতা। আসামের যেমন কাউকেই বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়নি তেমনি পশ্চিমবাংলায় এটা করা অসম্ভব হবে। এই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য বিজেপি সবকিছুই করছে। আর সেজন্যই তারা উগ্র, ধর্মান্ধ এবং মৌলবাদী ইস্যুগুলোকে সামনে আনছে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যেই জয়ী হোক না কেন বাংলাদেশের সাথে তাকে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। কারণ কৌশলগত কারণে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে বাংলাদেশ ভারতের জন্য একটি বড় ফ্যাক্টর।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যশোর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা
মন্তব্য করুন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ফরিদপুর
মন্তব্য করুন
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন দূতাবাস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী মে মাসে তার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এরপরও আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বাঁক বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- বাকিতে তেল-জ্বালানি পাওয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি তেলের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কোথাও এক বছরের বাকিতে, কোথাও তারও বেশি সময় বাকিতে জ্বালানি তেল আহরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কাতারের সঙ্গেও এমন একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাজার। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এই সব দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে। যুদ্ধের ফলে এই সমস্ত দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে। আর এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে, যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই শ্রমিক ছাঁটাই এর আওতায় না পড়ে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অদূর ভবিষ্যতে নগদ সহায়তা দরকার হতে পারে, দ্রুত ঋণ দরকার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সংকট নিরসনের একটা বড় ভরসাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যমুখী। বাংলাদেশের ঋণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অর্থনীতি ক্রমশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে থেকে উত্তরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দূরদর্শী কূটনৈতিক চিন্তা বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ দেনা মেটাতে হবে। এই কারণেই বাংলাদেশ কখনও যেন সংকটে না পরে সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে পরিচালিত। এই সম্পর্ক ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত নয়।
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।