নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ১৭ এপ্রিল, ২০২১
দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার, কেন্দ্রীয় অনেক নেতার পদত্যাগ, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের হেফাজত বিরোধী বিক্ষোভ, মামুনুলে নারী কেলেঙ্কারি সহ সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে বিপাকে পড়েছে হেফাজত। এখন তারা সব দিক থেকেই চাপের মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থায় হেফাজতের অস্তিত্বই এক ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে তারা এখন কোণঠাসা। সরকারও হেফাজতে বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে গিয়েছে। ফলে তারা এখন এই সংকট থেকে বেড় হওয়ার জন্য নানা ধরনের কৌশল গ্রহণ করেছে। এখন হেফাজতের পক্ষ থেকে বিবৃতির মাধ্যমে নানা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের এই হুঁশিয়ারি হালে পানি পাচ্ছে না।
হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করে জুনায়েদ বাবুনগরী। জুনায়েদ বাবুনগরী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সরকারে সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে হেফাজতের। নানা ইস্যুতে তারা আন্দোলন সংগ্রাম করতে থাকে। তারা সরকারকে চাপে ফেলার চেষ্টা করে। সেই চেষ্টারই একটি ফল ছিলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে ২৬ এবং ২৭ মার্চ ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাণ্ডব। জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে একাত্তরের কায়দায় তাণ্ডব চালানো হয়। এ অবস্থায় সরকারের সামনে কঠোর অবস্থান গ্রহণ ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিলো না।
আর সরকারের কঠোর অবস্থান গ্রহণের ফলে এখন চার দিক থেকে বিপাকে পড়েছে হেফাজত। এখন হেফাজতের অবস্থা নাজুক। পদে পদে তারা বিপর্যস্ত হচ্ছে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় অনেক নেতা হেফাজত থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তারা সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেন। এবং তারা বলেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের কর্মকাণ্ড নীতি ও আদর্শের বিরোধী। ফলে তারা পদত্যাগ করছে। অন্যদিকে দেশের প্রায় ২৩ টি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাদের মধ্যে আলোচনা করে হেফাজতের আন্দোলনে আর যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে হেফাজতের মূল শক্তি যে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা, সেই মূল শক্তিই এখন ভেঙে পড়েছে। হেফাজতের উচ্চবাচ্য তাই এখন আর কাজে আসছে না।
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারি হেফাজতের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলো। নারায়ণগঞ্জের রয়েল রিসোর্টে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে প্রমোদবিহারে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়েন মামুনুল। এর পর এখন পর্যন্ত তার তিন স্ত্রীর খবর পাওয়া গেছে এবং অনেক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের খবর সামনে এসেছে। ফলে হেফাজত নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে এক ধরনের সহানুভুতির জায়গা ছিলো সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এ বিষয়েও বিপাকে পড়েছে হেফাজত। এরই মধ্যে মামুনুলে বিয়ের বিষয়ে হেফাজতের ভেতরে আলোচনা হয়েছে। যদিও জুনায়েদ বাবুনগরী আলোচনার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছিলেন, বিয়ের বিষয় মামুনুল হকের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে হেফাজেত কোনো কিছু বলার নেই। কিন্তু তারা ইতিমধ্যেই মানুষের কাছে এই বিষয়ে হেয় হয়ে গেছে।
হেফাজতের সামনে আরো একটি বড় সংকট দেখা দিয়েছে গ্রেফতার। একের পর এক হেফাজতের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার হচ্ছেন। হেফাজতের কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে যে, এখন পর্যন্ত হেফাজতের অর্ধ শতাধিক নেতা গ্রেফতার হয়েছে। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাই গ্রেফতার হয়েছেন ৫ জন। সামনে আরো গ্রেফতার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হেফাজতের শীর্ষ নেতাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে পুরনো মামলায়। বিশেষ করে ২০১৩ সালের মে মাসে যে ঢাকা চলো অভিযানের সময় সারাদেশে নাশকতা, সেই মামলাসহ পুরনো বিভিন্ন মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এই গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে গত বুধবার কয়েকজন আলেম-ওলামা একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেই বিবৃতিতে আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও মানহানিকর আচরণ করা হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হেফাজতের বর্তমান অবস্থার জন্য সম্পূর্ণ দায়ি হেফাজতের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। আল্লামা শফী যতদিন জীবিত ছিলো ততদিন হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক মোটামুটি প্রকাশ্য ছিলো। কিন্তু আল্লামা শফী অসুস্থ থাকা অবস্থায় হেফাজতের মধ্যে উগ্র মৌলবাদী একটি গোষ্ঠীর বিশেষ করে আওয়ামী বিরোধী একটি গোষ্ঠী সক্রিয় ছিলো। কিন্তু আল্লামা শফীর কারণে তারা তেমন প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করতে পারে নি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে এরা কাজ করেছিলেন এবং আল্লামা শফীর যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখনই হেফাজতের মূল নিয়ন্ত্রণ জুনায়েদ বাবুনগরীর মত উগ্রবাদীদের হাতে চলে যায়। আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতে আল্লামা শফী পন্থীরা, যারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে চলত তারা আর জায়গা পায়নি। বরং জুনায়েদ বাবুনগরীরা হেফাজত রীতিমতো দখল করে ফেলে। এই সময় বাবুনগরীর অনুসারীরাই হেফাজতের নতুন নেতৃত্বে সব পদগুলো দখল করে ফেলে।
আর জুনায়েদ বাবুনগরীর এই উগ্রমৌলবাদী আচরণের জন্যই তার কাছ থেকে একে একে সবই চলে যাচ্ছে এবং নানা দিক থেকে বিপাকে পড়েছে হেফাজত এমনটিই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যশোর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা
মন্তব্য করুন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ফরিদপুর
মন্তব্য করুন
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন দূতাবাস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী মে মাসে তার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এরপরও আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বাঁক বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- বাকিতে তেল-জ্বালানি পাওয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি তেলের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কোথাও এক বছরের বাকিতে, কোথাও তারও বেশি সময় বাকিতে জ্বালানি তেল আহরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কাতারের সঙ্গেও এমন একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাজার। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এই সব দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে। যুদ্ধের ফলে এই সমস্ত দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে। আর এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে, যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই শ্রমিক ছাঁটাই এর আওতায় না পড়ে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অদূর ভবিষ্যতে নগদ সহায়তা দরকার হতে পারে, দ্রুত ঋণ দরকার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সংকট নিরসনের একটা বড় ভরসাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যমুখী। বাংলাদেশের ঋণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অর্থনীতি ক্রমশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে থেকে উত্তরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দূরদর্শী কূটনৈতিক চিন্তা বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ দেনা মেটাতে হবে। এই কারণেই বাংলাদেশ কখনও যেন সংকটে না পরে সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে পরিচালিত। এই সম্পর্ক ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত নয়।
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।