নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৯ পিএম, ০৮ মে, ২০২১
গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্লাটে মারা যান মুনিয়া। মুনিয়ার মৃত্যুর পরপরই মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত গুলশান থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। সেই অপমৃত্যুর মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে প্রধান এবং একমাত্র আসামি করা হয়েছে। এখন পুলিশ এই মামলার তদন্ত করছে। কিন্তু একাধিক আইনজীবী, আইনজ্ঞ এবং সুপ্রিম কোর্টের আত্মহত্যার প্ররোচনার বিভিন্ন রেফারেন্স মামলায় দেখা গেছে যে মুনিয়ার যে আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলাটি করা হয়েছে সেই মামলাটি আইন সংগতভাবে করা হয়নি। আইনের রীতিনীতি অনুসরণ করা হয়নি। সে কারণে আইনের দৃষ্টিতে এই মামলাটি অবৈধ এবং বেআইনি বলে মনে করছেন একাধিক আইনজীবী।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একটি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার রেফারেন্সে বলা হয়েছে যে, মামলা করতে হবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর। অনেক সময় হত্যাকাণ্ডকেও আত্মহত্যা বলে চালানো হয়। সেজন্য আত্মহত্যা করেছেন এটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলা দাখিল করা যাবে না। কিন্তু মুনিয়ার মরদেহ সিলিং ফ্যান থেকে নামানো হয় ২৬ এপ্রিল রাতে এবং ওই রাতেই তার বোন নুসরাত মামলা করেন। আইনজ্ঞদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলা করার জন্য এতো তাড়াহুরো কেন। মুনিয়ার যে আত্মহত্যা করেছে তা কীভাবে বাদি নিশ্চিত হলেন।
এই প্রশ্নটি আরও গভীরভাবে উঠেছে যখন মুনিয়ার বড় ভাই সবুজ সিএমএম আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন কিছু ব্যক্তি তার বোনকে হত্যা করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছেন এবং তিনি চট্টগ্রামের সাবেক হুইপ পুত্র শারুনের নাম উল্লেখ করেছেন। এখানে প্রশ্ন উঠেছে যে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি হওয়ার আগেই আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করা হলে সেই মামলাটি আইনের দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধ হবে। সুপ্রিম কোর্টের আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় কেন একজন মানুষ কীভাবে প্ররোচিত হবেন সে ব্যাপারে ৫টি বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। যে বিষয়গুলো আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে।
১. শেষ কথা কার সাথে হলো: আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় একটি বিষয় সুপ্রিম কোর্ট উপজিব্য মনে করছে শেষ কথা কার সাথে হলো। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একটি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার রায়ে হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন ব্রেঞ্জ এই অভিমতে পৌছেছিলো যে শেষ কথা কার সঙ্গে হলো এবং এই অভিমতের ভিত্তিতেই শেষ কথা আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলার একটি তথ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু এখন মুনিয়ার কললিস্ট এবং অন্যান্য যোগাযোগ উপায়গুলো খুঁজে দেখা মুনিয়ার শেষ কথা বসুন্ধরা এমডির সাথে হয়নি অন্য কারও সাথে হয়েছে।
২. ডেথ নোট: হাইকোর্ট বিভাগের ওই রায়ে এটাও বলা হয়েছিলো যে আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলায় ডেথ নোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি ডেথ নোটে কারও নাম উল্লেখ করা থাকে তাহলে তিনি এই মামলায় অভিযুক্ত হতে পারেন। ডেথ নোটটি হতে হবে আত্মহত্যাকারীর শেষ লেখা। অতীতে তিনি কি লিখেছেন আবার আবেগপ্রবন হয়ে স্বাভাবিক জীবনে এসেছেন এটি বিবেচ্য বিষয় হবে না। ডেথ নোট হলো মৃত্যুর পূর্বে লেখা এবং এর পরে তিনি আর কোনোকিছু লেখেননি। কিন্তু সেরকম কোনো ডেথ নোট মুনিয়ার আত্মহত্যার পর পাওয়া যায়নি।
৩. শেষ সাক্ষাৎ কার সাথে: মনিয়ার এই আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মুনিয়া শেষ সাক্ষাৎ কার সঙ্গে করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে যে যাকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তার সাথে মুনিয়ার দীর্ঘদিন সাক্ষাৎ ছিলো না।
৪. কোনো চাপ: একটি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় এটি হলো সবচেয় বড় বিষয়। এটি প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ এবং পারপাশ্বিক চাপ হতে পারে। এই চাপগুলো যখন থাকবে তখন সেটি তদন্ত করার দায়িত্ব হলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। কোনো বাদি নিশ্চিতভাবে আত্মহত্যা প্ররোচনাকারী হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করতে পারবেন না।
৫. আসামির নাম কেন?: আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলায় যখন কোনো ডেথ নোট থাকবে না, আত্মহত্যাকারীর সুনির্দিষ্ট বয়ান থাকবে না, পারিপাশ্বিক অবস্থা থাকবে না বা কোনো সাক্ষাতের সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকবে না তখন আত্মহত্যা মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করার বিধান নাই। তখন আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলায় আসামি করবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত সাপেক্ষে। আর সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং আইনজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে মুনিয়া আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য, কাউকে খুশি করার জন্য বা কাউকে ব্লাকমেইলিংয়ের জন্য। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে নিশ্চই তদন্তে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে।
মন্তব্য করুন
মাধ্যপ্রাচ্য শেখ হাসিনা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এস ওয়াই রামাদান
মন্তব্য করুন
কাতারের আমির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি
মন্তব্য করুন
চুয়াডাঙ্গা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিট এলার্ট জারি
মন্তব্য করুন
নাটোর সিংড়া উপজেলা পরিষদ ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি জুনায়েদ আহমেদ পলক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন