নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২০ এএম, ২১ জুলাই, ২০২১
১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ভোর চারটা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যান্তরে ঘটে যায় ইতিহাসের এক কলঙ্কময় ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে পা হারানো একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম বীর সেনানায়ক কর্নেল আবু তাহের, বীর উত্তমকে তারই মুক্ত করা স্বদেশভূমিতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। সেদিন প্রহসনের বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছিল কর্নেল আবু তাহেরকে।
কর্নেল তাহের, সময়ের সাহসী পুরুষ। যাঁর কাছে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটির মানে হচ্ছে সামগ্রিক মুক্তি। যিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি, বরং মুক্তিকামী একটি নিপীড়িত জাতির মুক্তিচেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকে তিনি দেখেছিলেন ঔপনিবেশিক শোষণমুক্তির লক্ষ্যে পরিচালিত একটি জনযুদ্ধ হিসেবে। সেনানায়ক হিসেবে তিনি সে দৃষ্টিকোণ থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন, সম্মুখসমরে একটি পা হারিয়েছেন, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে, নিরাপদ স্থানে বসে নির্দেশ প্রদান করেননি। স্বাধীন গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার পূর্বশর্ত হিসেবে তিনি আমলাতান্ত্রিক, উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কহীন, শাসকের হাতিয়ার বাহিনীর ঔপনিবেশিক কাঠামো ভেঙে জনতার বাহিনী প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু আমরা দেখলাম স্বাধীনতা, গণতন্ত্র আর জনতার পক্ষ নিয়ে সামরিক শাসন, আমলাতন্ত্রের হাতে কর্নেল তাহেরকে এক নির্মম পরিণতি বরণ করতে হলো। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়। ১৭ জুলাই মামলার রায়ে কর্নেল তাহেরের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তাঁর পরিবারের কেউ আগে দেখা করতে পারেনি। তখন স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন পাকিস্তানপন্থী জনাব সালাউদ্দিন। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন স্বয়ং জেনারেল জিয়াউর রহমান।
শোষণমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে তাহের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে যখন তিনি দেখতে পেলেন, সেনাবাহিনীতে থেকে তার ভাবনা ও এর বাস্তবায়নের সব পথ রুদ্ধ, তখন তিনি সেনাবাহিনীর উচ্চপদ ছেড়ে দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হতে এক মুহূর্তও দেরি করেননি। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান অবশ্যই এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
কর্নেল তাহের সব সময় সংগ্রামের ওপরই জোর দিয়েছেন, আপসের কথা বলেননি। বন্দী হওয়ার পর এমন একটা নজিরও নেই যে ক্ষমতাসীন জেনারেল জিয়ার কাছে উনি কোনো ধরনের দেনদরবার করেছেন। উনি খুব পরিষ্কার ধারণা রাখতেন জেনারেল জিয়া সম্পর্কে। উনি নিশ্চিত হয়েছিলেন, তার আর জেনারেল জিয়ার পথ এক নয়। জেনারেল জিয়ার চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করার কথা বলেছেন। মৃত্যু জেনেও তাই কর্নেল তাহের একটুও টলেননি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি প্রিজনের অফিস কক্ষে সামরিক আদালত বসিয়ে কর্নেল আবু তাহেরকে ফাঁসি ও অন্যদের যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। এ নিয়ে তখন সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা আন্দোলন শুরু করলে আ স ম আবদুর রব, মেজর জলিলসহ অন্যদের সঙ্গে মেজর জিয়াউদ্দিনও ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি লাভ করেন।
আজ আমাদের সামনে প্রশ্ন, তাহেরকে জেনারেল জিয়া হত্যা করেছিলেন, কিন্তু তাঁর আদর্শ, তাঁর চেতনা কি হত্যা করতে পেরেছেন? ১৯৭৬ সালে জেনারেল জিয়া ক্ষমতার সিংহাসনে এবং কর্নেল তাহের ফাঁসির মঞ্চে—কোনটা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক, তার রায় ইতিহাসই দেবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যশোর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা
মন্তব্য করুন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ফরিদপুর
মন্তব্য করুন
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন দূতাবাস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী মে মাসে তার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এরপরও আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বাঁক বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- বাকিতে তেল-জ্বালানি পাওয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি তেলের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কোথাও এক বছরের বাকিতে, কোথাও তারও বেশি সময় বাকিতে জ্বালানি তেল আহরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কাতারের সঙ্গেও এমন একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাজার। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এই সব দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে। যুদ্ধের ফলে এই সমস্ত দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে। আর এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে, যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই শ্রমিক ছাঁটাই এর আওতায় না পড়ে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অদূর ভবিষ্যতে নগদ সহায়তা দরকার হতে পারে, দ্রুত ঋণ দরকার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সংকট নিরসনের একটা বড় ভরসাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যমুখী। বাংলাদেশের ঋণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অর্থনীতি ক্রমশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে থেকে উত্তরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দূরদর্শী কূটনৈতিক চিন্তা বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ দেনা মেটাতে হবে। এই কারণেই বাংলাদেশ কখনও যেন সংকটে না পরে সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে পরিচালিত। এই সম্পর্ক ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত নয়।
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।