নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৮ পিএম, ২১ জুলাই, ২০২১
ঈদের আগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ঈদের মধ্যে জঙ্গি সন্ত্রাসী হামলার কোনো শঙ্কা নেই, সরকার প্রস্তুত রয়েছে। এর আগেও বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদীরা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার, তারা সংগঠিত নয় এবং বড় ধরনের কোনো হামলা করার মতো তাদের শক্তি-সামর্থ্য কোন কিছুই নেই। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের নতুন করে উত্থানের শঙ্কা রয়েছে এবং বাংলাদেশের জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলো এখনো বিলুপ্ত হয়ে যায়নি, নিঃশেষ হয়ে যায়নি বরং তারা নতুন করে সংঘটিত হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী রাজনীতির একটা বড় ধরনের উত্থান ঘটারও আশঙ্কা কেউ কেউ উড়িয়ে দিচ্ছেন না। কেন বাংলাদেশে এখনও জঙ্গিবাদের শঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ব্যাপারে সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতা নীতির পরও কেন এখনো বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের কথা বলা হয় -এটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা একাধিক কারণ দেখছেন। এর মধ্যে যে কারণগুলো প্রধান কারণ সেগুলো হলো:
১. মূল ধারার রাজনীতির ব্যর্থতা: বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর এবং গত এক দশকে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। জাতীয় সংসদে বিরোধী দল নেই বললেই চলে। দেশের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দাবি করা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি কেবল তাদের নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে এবং চিকিৎসার দাবিতেই সীমাবদ্ধ। কোন যৌক্তিক কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলন করার শক্তি সামর্থ্য এবং আদর্শিক ভিত্তি বিএনপির নেই। এরকম একটি রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যে একটা এক ধরনের অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান ঘটে, এটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে একটি স্বতঃসিদ্ধ ধারণা। আর এই কারণেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের শঙ্কা করা হচ্ছে।
২. অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্বলতা: বাংলাদেশে মনে করা হয়েছিল যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর বাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিগুলো শক্তিশালী হবে, তারা সংঘবদ্ধ হবে এবং অসাম্প্রদায়িক একটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক চেতনা দ্বারা বিকশিত হবে। অনেকেরই আকাঙ্ক্ষা ছিল, প্রত্যাশা ছিল যে বাংলাদেশের রাজনীতি হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে এবং যে দল সরকারে থাকুক যে দল বিরোধী দলে থাকুক তারা সকলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করবে। কিন্তু বাম দলগুলো জন আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বরং তারা নিজেরাই অনুকূল পরিবেশে নিজেদেরকে বিকশিত করতে পারেনি। আর এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটছে বলে মনে করছেন অনেকে।
৩. আফগানিস্তানের ঘটনা: সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ছেড়ে দেওয়ার পর এখন তালেবানরা আফগানিস্তান দখল করে নিচ্ছেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আফগানিস্তান আবার একটি তালেবান রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এই তালেবান রাষ্ট্র হিসেবে আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তারা মনে করছেন যে, এটি বাংলাদেশই জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করবে এবং তারা জঙ্গিবাদী বিভিন্ন তৎপরতায় আফগানিস্তানের সাহায্য সহযোগিতা নিবে। এর আগে যখন আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থান ঘটেছিল তখন বাংলাদেশ থেকে বহু সন্ত্রাসী মৌলবাদী গোষ্ঠী আফগানিস্তানে গিয়েছিল এবং তারা সেখানে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে। সেখান থেকে ফিরে আসার পর এখন তারা জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।
আর এরা এখন নতুন করে প্রাণ শক্তি পাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়াও বাংলাদেশে যে ধর্মান্ধ মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা এবং একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর সঙ্গে মৌলবাদী গোষ্ঠীর গোপন যোগাযোগ ইত্যাদি নানা কারণেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান রয়েছে। মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো যত দুর্বল হয়ে যাবে ততো বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ এবং উগ্রবাদী রাজনীতির বিকশিত হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন