নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩৬ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
এমন নয় যে তার আগে এই দেশে অফিস-আদালতে আসবাবপত্র বিক্রি হতো না বা প্রয়োজন পড়তো না। হতো, কিন্তু তা ছিল নেহায়েত প্রয়োজনের খাতিরেই। দুই-একটি ছোট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই কাজ সারা হয়ে যেত। কিন্তু তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের পথিকৃত যিনি বুঝিয়েছিলেন যে কেবল গৃহেই নয়, অফিস-আদালতেও রুচিসম্মত আসবাবের প্রয়োজন আছে।
বলছিলাম শিল্পী নিতুন কুণ্ডের কথা। আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) তার ১৫তম প্রয়াণদিবস। প্রয়াণদিবসে তার জন্য জানাই মনের অন্তঃস্থল থেকে গভীর শোক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন নিতুন কুন্ডু। পুরো নাম নিত্য গোপাল কুন্ডু। শিক্ষা জীবনে পড়ার খরচ মিটিয়েছেন আঁকাআঁকির কাজ করে। ইচ্ছা ছিল নিজ বিদ্যাপীঠেই নিয়োজিত হবেন শিক্ষকতায়। স্নাতকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ায় সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছিল। তার পরও পেশাজীবনের শুরুটা হয় মার্কিন একটি সংস্থায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় যোগ দেন মুজিবনগর সরকারের তথ্য ও প্রচার বিভাগে। সে সময় বিভাগটির ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন। ‘সদা জাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী’—এই স্লোগান সম্বলিত পোস্টারটি তারই ডিজাইন করা। স্বাধীনতার পর নির্মাণ করেছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভাস্কর্য। তবে এক পর্যায়ে শিল্পী থেকে হয়ে ওঠেন উদ্যোক্তা। শিল্পীর সৃজনশীলতাকে কাজে লাগান আসবাব শিল্পে। এক পর্যায়ে তার হাতেই আধুনিক রূপ নেয় দেশের আসবাব শিল্প।
আশির দশকের মাঝামাঝি অটবি প্রাইভেট লিমিটেড গড়ে তোলেন নিতুন কুন্ডু। অটবি এখন দেশের আসবাব শিল্পের অন্যতম বড় ব্র্যান্ড। এ শিল্পে নিতুন কুন্ডুর ব্যবসায়িক যাত্রা সত্তরের দশকের শেষভাগে। ভাস্কর হিসেবে নাম করার কারণে নানা মহলে পরিচিত হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ব্যক্তিগত পরিচয়গুলোর সূত্র ধরেই দেশের করপোরেট জগতের প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিদের ব্যবহার্য আসবাব বানানোর কাজও পেয়েছেন। সেখান থেকেই হয়ে উঠলেন আধুনিক আসবাব শিল্পের পথিকৃৎ।
আসবাব খাতে ফ্ল্যাটপ্যাক প্যাকেজিংয়ের মতো নতুন পদ্ধতির সূচনা নিতুন কুন্ডুর হাতেই। আসবাব নির্মাণের সনাতন পদ্ধতি হলো কাঠ কেটে একক উপাদান হিসেবে পূর্ণাঙ্গ আসবাব তৈরি করা। কিন্তু বৃহদায়তনে পৃথক উপাদান উৎপাদন ও তা সংযোজনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ আসবাব তৈরির পদ্ধতিটি অটবির অবদান। এতে করে আসবাব তৈরি থেকে শুরু করে পরিবহনসহ সবদিকেই ব্যয় কমে আসে। একই সঙ্গে আসে কাঠের পুনর্ব্যবহারেরও সুযোগ।
অটবির অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছিল তার মৃত্যুর পরও। ২০০৬ সালে ৭১ বছর বয়সে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান নিতুন কুন্ডু। ২০০৮ সালে সাভারে অটবির বৃহদায়তনের আরেকটি কারখানা গড়ে ওঠে। ৬ লাখ বর্গফুটের ওপর গড়ে তোলা হয় অটবির চতুর্থ ও পঞ্চম ইউনিট। ওই দুই ইউনিটে শুরু হয় কাঠের এবং পার্টিকেল বোর্ডের আসবাব, প্লাইউড, কাঠের দরজা, ফোম ও ম্যাট্রেস তৈরি।
শুরু থেকেই অটবির প্রমোশন বা বিপণন চিন্তাভাবনা ছিল সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ২০১২ এর দিকে বেশিরভাগ গণমাধ্যমে দেখা যেত অটবির বিজ্ঞাপন ও জয়জয়কার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছিল অটবির সগর্ব পদচারণা। এছাড়াও বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে সুরুচির পরিচয় দিয়েছিল অটবি। ২০০৬ সালে নিতুন কুণ্ডুর মৃত্যুর পর তার অটবির দায়িত্ব চলে যায় তার ছেলে অনিমেষ কুন্ডুর হাতে এবং প্রতিষ্ঠানের সিইও করা হয় সাব্বির হাসান নাসিরকে। মূলত নিতুন কুন্ডু মারা যাবার পরই দেশের শীর্ষ আসবাবপত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি প্রায় মৃতপ্রায় অবস্থা ধারণ করে। ২০০৭-০৮ সালের দিকে অটবির লেনদেনের অর্থমূল্য ছিল প্রায় ২১৮ কোটি টাকা। ধারণা করা হয়ে থাকে, পিতার মৃত্যুর পর তার ছেলে অনিমেষ কুন্ডু প্রতিষ্ঠানটিকে আগের চেয়েও বেগবান করতে খুব হিমশিম খাচ্ছিল। বিজ্ঞাপন কিংবা প্রচারণার দিকে অটবি বেশ পিছিয়ে পড়ে প্রতিযোগিতামূলক এই বাজারে। ফলে অন্যান্য প্লাইউড তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার ধরে ফেলতে খুব একটা সময় নেয় না। পণ্যে কোনো বৈচিত্র্য নেই, নিতুন কুন্ডের ট্রেডমার্ক নকশা না থাকায় ক্রেতারা আস্তে আস্তে অটবির প্রতি তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন। ফলে অটবির বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। অনেকে ধারণা করেন মূল ব্যবসা আসবাব নির্মাণ ছেড়ে তারা বিদ্যুত উৎপাদনের ব্যবসায় মনোযোগ দেয়ার কারণে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ে যায়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে বাজার ধরে ফেলছে, সেখানে অটবি অনেকটাই পিছিয়ে যায়। এমনকি বিদ্যুত প্রকল্পেও তারা খুব বেশি সুবিধে করতে পারেনি।
সামান্য কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে একটি প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতার এই বাজারে টিকা থাকতে হলে চাই নেতৃত্ব, নিত্যনতুন আইডিয়া এবং শ্রম। নিতুন কুন্ডুর প্রয়াণদিবসে আমরা তাই কামনা করি তার সাধের অটবি যেন দ্রুতই আবার শিখরে আরোহণ করতে পারে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যশোর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা
মন্তব্য করুন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ফরিদপুর
মন্তব্য করুন
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন দূতাবাস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী মে মাসে তার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এরপরও আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বাঁক বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- বাকিতে তেল-জ্বালানি পাওয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি তেলের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কোথাও এক বছরের বাকিতে, কোথাও তারও বেশি সময় বাকিতে জ্বালানি তেল আহরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কাতারের সঙ্গেও এমন একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাজার। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এই সব দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে। যুদ্ধের ফলে এই সমস্ত দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে। আর এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে, যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই শ্রমিক ছাঁটাই এর আওতায় না পড়ে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অদূর ভবিষ্যতে নগদ সহায়তা দরকার হতে পারে, দ্রুত ঋণ দরকার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সংকট নিরসনের একটা বড় ভরসাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যমুখী। বাংলাদেশের ঋণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অর্থনীতি ক্রমশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে থেকে উত্তরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দূরদর্শী কূটনৈতিক চিন্তা বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ দেনা মেটাতে হবে। এই কারণেই বাংলাদেশ কখনও যেন সংকটে না পরে সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে পরিচালিত। এই সম্পর্ক ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত নয়।
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।