ইনসাইড বাংলাদেশ

প্রতিকূলতাকে জয় করেই অপরাজেয় শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:০৫ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১


Thumbnail

বঙ্গবন্ধু তনয়া, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বয়স ৭৫ হতে চলেছে। মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে সংকল্পবদ্ধ মহীয়সী এই নারী গোটা জাতিকে উন্নততর হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। হত্যার হুমকিসহ হাজারো বাধা-বিপত্তি এবং নানান প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে আজকের এই অবস্থানে আসীন তিনি।

প্রথম প্রতিকূলতা হলো ৭৫ এর ১৫ আগস্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। এ সময় ভাগ্যগুণে প্রবাসে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পান তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।এর পর চরম এক প্রতিকূল পরিবেশ দেখতে হয় আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। 

দ্বিতীয় প্রতিকূলতা ছিল দেশে ফিরতে জিয়া কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা। গোটা পরিবার হারিয়ে যখন তিনি দেশে ফিরতে চাইছিলেন, তখন তার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। এসময় স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার জার্মান ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। পরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আতিথেয়তায় পরবাসী জীবন কাটান শেখ হাসিনা।

১৯৮১ সালের  ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন শেখ হাসিনা। জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও জিয়ার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ওই বছরেরই ১৭ মে বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে চড়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তাকে দেখার জন্য বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত এলাকাজুড়ে নামে লাখো মানুষের ঢল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সেদিন স্বদেশে এসেছিলেন দেশের প্রতি আকর্ষণ আর দেশবাসীর প্রতি ভালোবাসার টানে। তিনি জানতেন জাতির পিতার অধরা স্বপ্নগুলো তিনি ছাড়া আর কেউ পূরণ করবে না। লাখ লাখ লোকের সংবর্ধনায় তিনি জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,  ‘আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’

শেখ হাসিনা দেশে ফেরা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার অবর্তমানে আওয়ামী লীগ যখন আমাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করল, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরে আসবই। ১৯৮১ সালে আমি যখন দেশে ফিরে আসি তখন দেশের অবস্থা কেমন ছিল? জাতির পিতার খুনিরা অবাধে ঘোরাফেরা করত। দেশে জয়বাংলা শ্লোগান দেওয়া যেত না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নিষিদ্ধ ছিল। আমি মানুষের কাছে গেছি, আমি জানতাম, আমার তো অন্য কোনো জায়গা নেই। আমার জায়গা তো বাংলাদেশের মানুষের কাছে, জনগণের কাছে। আমি সভা-সমাবেশে যেতাম, পিতৃহত্যার বিচার চাইতাম।`

এদেশের গণতন্ত্র বিকাশে এবং রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনে তার রয়েছে প্রভূত ভূমিকা। দেশে ফিরেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে মনোনিবেশ করেন শেখ হাসিনা। এসময় রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের। এর জের ধরে শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন তিনি। কমপক্ষে ১৯ বার তাকে হত্যার জন্য সশস্ত্র হামলা করা হয়।
তবুও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের দাবিতে তিনি সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করেন। 

এই লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে গঠিত হয় ১৫ দলীয় জোট। এই জোট সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে তোলে শক্তিশালী আন্দোলন। ছাত্র আন্দোলন দমানোর জন্য সামরিক শাসনের পক্ষে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে নির্বিচারে লাঠিচার্জ ও গুলি বর্ষণ করতে থাকে। 

পরদিন ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে আটক করে ১৫ দিন কারাগারে রাখে সামরিক সরকার। এর পরের বছর ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসেও তাকে দুই বার গৃহবন্দি করা হয়। এর পর ১৯৮৫ সালের ২ মার্চ তাকে আবারো আটক করে জান্তা সরকার এবং প্রায় ৩ মাস গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন গৃহবন্দি ছিলেন। ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তাকে গ্রেফতার করে এক মাস কারাগারে রাখা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা গ্রেফতার হয়ে গৃহবন্দি হন। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু ভবনে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ৯০ এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে পতন হয় স্বৈরাচারের, বিজয় হয় গণতন্ত্রের।

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে একটা অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সরকার গঠন করতে না পারলেও ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত হয় সরকার। 

শেখ হাসিনার জীবনে আরো একটি বড় প্রতিকূলতা হলো ২১ আগস্ট। বিএনপি সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তার উপর সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয়। ওইদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাকে লক্ষ্য করে এক ডজনেরও বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোড়া হয়। লোমহর্ষক সেই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ তার দলের ২২ নেতাকর্মী নিহত হন এবং পাঁচশ’র বেশি মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান।

বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার করতেও নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ৪১ দিনের মাথায় এই হত্যাকাণ্ডের বিচার আজীবনের জন্য বন্ধ করার লক্ষ্যে ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ জারি করে খোন্দকার মোশতাকের সরকার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসলে মানবতাবিরোধী মোশতাকের করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল হয়। অধ্যাদেশটি বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতাবিরোধী এই ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ খুলে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডের রায় আংশিক কার্যকর হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ও দেশি-বিদেশি প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে তাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের রায় কার্যকরের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয় ও রায় হয়। তবে এখনো যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে এ সংগ্রাম চলমান। যুদ্ধাপরাধী পরিবারেরর সন্তানেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যপক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে দেশে-বিদেশে বসেই।

শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাঙলার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তার নিরন্তর সংগ্রাম চলছে। এতসব প্রতিকূলতার মধ্যেও শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তা দেখে সত্যিই বলতে হয় অপরাজেয় শেখ হাসিনা।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

মাঠ ছাড়তে নারাজ এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ২০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনার পরও উপজেলা নির্বাচনের মাঠ থেকে এখনই সরতে রাজি নন স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা। নানা কৌশলে ভোটের মাঠে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। সংশ্লিষ্ট এমপি-মন্ত্রীরাও তাদের পক্ষে সামনে আনছেন নানা ‘যুক্তি ও অজুহাত’। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলা বা সরাসরি তার কাছ থেকে নির্দেশনার অপেক্ষাও করছেন অনেকেই। এছাড়া নানাভাবে সময়ক্ষেপণ করতে চাইছেন তারা। বোঝার চেষ্টা করছেন দলের অবস্থান শেষ পর্যন্ত কতটা কঠোর হয়। এর পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চান তারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে আওয়ামী লীগের। বিএনপির ভোটে না আসার ঘোষণার মধ্যে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে ক্ষমতাসীন দল এমন সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এর পরই আলোচনায় আসে নির্বাচনে স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব বিস্তার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী করা নিয়ে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে হুমকি, তুলে নেওয়া এবং প্রচারণায় বাধা দেওয়াসহ নানা অভিযোগও ওঠে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। শুরু থেকেই এমপি-মন্ত্রীদের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার বা প্রার্থীদের সমর্থন না দেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু দলের কোনো নির্দেশনাই তোয়াক্কা করছিল না তারা।

জানা গেছে, বিভিন্ন উপজেলায় নিজেদের বলয়ের নেতাকর্মী, আত্মীয়স্বজনদের নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন কিছু এমপি ও মন্ত্রী। এতে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিষয়টিকে আমলে নিয়ে উপজেলা নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও আত্মীয়রা যাতে নির্বাচন থেকে সরে যায়, সেজন্য দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় এখনো দুদিন বাকি থাকায় দলের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চেষ্টাও চালানো হচ্ছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার এ সিদ্ধান্তকে অমান্য করলে খেসারত হিসেবে বহিষ্কারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। সিদ্ধান্ত মেনে নিলে তাদের পুরস্কৃত করা হবে বলেও জানিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা।

ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন চারটি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে ১৫০টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেড় ডজনেরও বেশি উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়রা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। বাকি তিন ধাপের নির্বাচনেও অনেক মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ‘আমরা চাই উপজেলা নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক। মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়রা নির্বাচনে অংশ নিলে ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রভাবিত করার শঙ্কা থাকে। সেজন্য নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। কেউ এই আদেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এমপি বা মন্ত্রিত্ব পদে আঁচ পড়বে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না—এটা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত। দলীয় সভাপতির সিদ্ধান্ত অমান্য করলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু তা-ই নয়, তাদের খেসারত দিতে হবে। যারা সিদ্ধান্ত মেনে নেবে, তাদের দল পুরস্কৃতও করবে।

গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির কার্যালয়ে এক অনির্ধারিত বৈঠকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের প্রভাবমুক্ত রাখতে তাদের নিকটাত্মীয় ও পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী না হতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রী-এমপিরা যেন খবরদারি করতে না পারে, সেজন্য দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এই নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করার জন্য দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান খান, নোয়াখালীর এমপি একরামুল করিম চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজনকে তাৎক্ষণিক বৈঠক থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।

নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী সুবর্ণচর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী, টাঙ্গাইল-১ আসনের এমপি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই ধনবাড়ি উপজেলায়, মাদারীপুর-২ আসনের এমপি ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান সদর উপজেলায়, নাটোর-৩ আসনের এমপি ও প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব সিংড়া উপজেলায়, নরসিংদী-২ আসনের এমপি আনোয়ার আশরাফ খানের শ্যালক শরিফুল হক পলাশ উপজেলা, বগুড়া-১ আসনের এমপি শাহদারা মান্নানের ভাই ও ছেলে দুই উপজেলায়, মানিকগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফুপাতো ভাই ইসরাফিল হোসেন সদর উপজেলায়, কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি মাহাবুব-উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা কুষ্টিয়া সদরে, পাবনা-৩ আসনের মো. মকবুলের বড় ছেলে রাসেল পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।

এ ছাড়া নোয়াখালী-৬ আসনের এমপি মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশীক আলী হাতিয়া উপজেলায়, পিরোজপুর-১ আসনের শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই নূর ই আলম নাজিরপুর উপজেলায়, বরিশাল-১ আসনের আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ছেলে আশিক আব্দুল্লাহ আগৈলঝাড়া উপজেলায়, মৌলভীবাজার-১ আসনের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের ভাগনে শোয়েব আহমদ বড়লেখা উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে এমপি মাজহারুল ইসলাম সুজনের দুই চাচাসহ তিনজন প্রার্থী হয়েছেন। বরিশাল-৬ আসনের এমপি আব্দুল হাফিজ মল্লিকের ভাই বাকেরগঞ্জ উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন।

এদিকে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে নিজ পুত্রের বিষয়ে অনড় এমপি একরাম চৌধুরী। তার অনুসারীরা ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিলেও তারা তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন না। দলীয় নীতিনির্ধারকদের নির্দেশ অমান্য করে একরামের ছেলে শাবাব চৌধুরী এখনো প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম সেলিম এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ খান সোহেলকেও নানা হুমকি দিচ্ছেন একরাম। সোহেলকে তার কার্যালয় থেকে বের হতে দেবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়নকাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিসহ এমপি একরামের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড এবং বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চরম ক্ষুব্ধ বলেও জানা গেছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে এমপি সুজনের পরিবারে তিনজন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এমপি সুজনের মেজো চাচা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ও তার ছোট ছেলে আলী আফসার রানা এবং আরেক ছোট চাচা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না বলে জানা গেছে।

কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের ভাই আতাউর রহমান আতাও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এ বিষয়ে আতাউর রহমান আতা বলেন, ‘আমাকে নির্দেশ করে বলা হয়নি যে, নির্বাচন করতে পারব না। আমি বর্তমান চেয়ারম্যান। আমাকে উদ্দেশ করে বলা হলে আমি বিবেচনা করব, যেহেতু আমি দলের রাজনীতি করি।’

নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ানোর একই মনোভাব পোষণ করছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফুফাতো ভাই মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ইসরাফিল হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে উদ্দেশ্যে বলেছেন আমি সেই ক্যাটাগরিতে পরি না। সেজন্য আমি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আমি পরপর দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান।’

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাচনে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই হারুনার রশিদ হিরাও অনড় অবস্থানে আছেন। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না—এ রকম কোনো বার্তা আমার কাছে এখনো আসেনি।’

এ বিষয়ে শাজাহান খানের বড় ছেলে আসিবুর রহমান খান বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা এবং ভোট প্রদান করা একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। আমার সে অধিকার তো কেউ ক্ষুণ্ন করতে পারে না। এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা নির্বাচন অংশগ্রহণ করতে না পারলে তো এখানে আর নির্বাচনই থাকে না। ঘোষণাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না, সেটিও ভাবার বিষয়। আমি আশা করছি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব।’

বগুড়া-১ আসনের এমপি সাহাদারা মান্নানের ছোট ভাই ও সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনহাদুজ্জামান লিটন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। লিটন বলেন, ‘এমপির স্বজন ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না—এমন নির্দেশনা এখনো পাইনি। এমপি আমার বোন হতে পারে, আমি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ভোট করছি। এমপি বোনের পরিচয়ে নয়। এজন্য সরে দাঁড়াব না।’

মাদারীপুর-২ আসনের এমপি ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান কালবেলাকে বলেছেন, ‘এই উপজেলায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে আমার ছেলে ও আমার এক ভাই। দলের সিদ্ধান্তে সরে যেতে হলে এই উপজেলায় তো নির্বাচনই হবে না। দলের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’

নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিমন্ত্রী আহত চেয়ারম্যান প্রার্থীকে দেখতে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। নিজের আত্মীয় হলেও ছাড় দেওয়া হবে না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

‘এখনো কিছু জায়গায় প্রার্থী অনড় রয়েছেন, তা শিগগিরই প্রত্যাহারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘শ্যালকের বিরুদ্ধে অভিযোগকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা জুনাইদ আহমেদ পলক আমাকে জানিয়েছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণাও দিয়েছেন প্রার্থী।’


উপজেলা নির্বাচন   এমপি-মন্ত্রীর স্বজন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

কুতবদিয়ায় সাংবাদিকের উপর হামলা


Thumbnail

কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ঈদ পুনর্মিলন অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবরের হামলার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিন ও এশিয়া টেলিভিশনের কুতুবদিয়া উপজেলা প্রতিনিধি এবং কুতুবদিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক মিজানুর রহমান।

 

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় মহেশখালী কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

 

জানা যায়, কুতুবদিয়া দ্বীপের কৈয়ারবিল মলমচর এলাকায় একটি অসহায় পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলাসহ তাদের ‘লাশের মাংস খুঁজে পাওয়া যাবে না’ প্রকাশ্যে এমন হুমকি প্রদানের একটি ভিডিও বাংলাদেশ প্রতিদিন ও এশিয়া টেলিভিশনের প্রতিনিধি মোঃ মিজানুর রহমানের হাতে পৌঁছায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ প্রকাশে জন্য ভিডিওটি যাচাই-বাছাই করতে জড়িতদের সাথে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) যোগাযোগ করলে মিজানুরকে হুমকি দেন সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর।

 

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ক্যামেরা, মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়।  

 

হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের নজর আলী মাতবর পাড়ার মৃত আবুল কাশেম মাতবরের তিন পুত্র, কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর, তার দুই ভাই আজমগীর মাতবর ও মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম। এছাড়া তাদের পুত্র আরিফ বিন রিনাস, সানজো রাকিব, মোঃ মোজাহিদ, মোঃ নিহাল উদ্দিনসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জন হামলায় অংশ নেয়।

 

আহত সাংবাদিক মিজানুর রহমান বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হঠাৎ কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ সময় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।

 

সাংবাদিক আব্বাস সিদ্দিকী বলেন, ‘হঠাৎ মিজানুর রহমানের ওপর হামলা দেখে আমরা কয়েকজন মিলে তাকে উদ্ধার করে কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাই। অবস্থার অবনতি হলে রাত ১২ টার পর আহত সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে কুতুবদিয়া থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’ 

 

কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো গোলাম কবির বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপর হামলার বিষয়টি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

সাংবাদিক মিজানের উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, সাধারণ সম্পাদক এইচ এম এরশাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমিন উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদ বেলাল, অর্থ সম্পাদক জাহেদ হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শামসুল আলম শ্রাবণ,পাঠাগার সম্পাদক রমজান আলী সিকদার, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইয়াসমিন মুন্নী নির্বাহী সদস্য শাকের বিন ফয়েজ  ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিবৃতি প্রদান করেন।

 

আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দোষীদের যথাযথ আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রেফতার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।


সাংবাদিকের উপর হামলা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তিন ধর্ষকের হাতে স্ত্রীকে তুলে দিলেন স্বামী

প্রকাশ: ১০:২৭ এএম, ২০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

কুমিল্লায় মাত্র ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে স্ত্রীকে ‘মাদক কারবারির’ হাতে তুলে দিয়েছেন স্বামী। ওই ব্যক্তির নাম আবুল খায়ের। পরে ওই নারীকে ফসলি জমির গভীর নলকূপের ঘরে নিয়ে ওই তিনজন ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় ওই স্বামী আবুল খায়েরসহ ৪ জনকে আটক করেছে থানা পুলিশ।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) জেলার বরুড়া উপজেলার শাকপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকালে ভুক্তভোগী নারী থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন। সন্ধ্যায় এ ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে আটক করে বরুড়া থানা পুলিশ। তারা হলেন বরুড়া উপজেলার শাকপুর এলাকার মাদক কারবারি নূরু, মনির ও মহিন।

বরুড়া থানার ওসি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, শাকপুর এলাকার তাজুল ইসলামের ছেলে আবুল খায়ের একজন মাদকাসক্ত। বুধবার একই এলাকার মাদক কারবারি নূরু, মনির ও মাহিনের কাছে মাত্র ৫ হাজার টাকায় স্ত্রীকে বন্ধক রেখে মাদকের টাকা নেন স্বামী আবুল খায়ের। পরে ওই নারীকে ফসলি জমির গভীর নলকূপের ঘরে নিয়ে পালাক্রমে ‘ধর্ষণ’ করেন নূরু, মনির ও মাহিন।

এ ঘটনা পর ভুক্তভোগী নারী তার বাবার বাড়ি এলাকা মুরাদনগর চলে যান। পরে শুক্রবার ভুক্তভোগী নারী তার পরিবারের লোকজন নিয়ে বরুড়া থানায় এসে অভিযোগ জানালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করে।
ওসি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে আদালতে তোলার প্রক্রিয়া চলছে।


কুমিল্লা   ধর্ষণ   স্ত্রী   স্বামী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে হলের সিট দখলের অভিযোগ

প্রকাশ: ১০:২০ এএম, ২০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে আবাসিক শিক্ষার্থীর সিট দখল হুমকি-ধমকির অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ হবিবুর রহমান হলে ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ইমরান ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী এবং শহিদ হবিবুর রহমান হলের ১৪৬ নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র।

অভিযুক্তরা হলেন, একই হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিনহাজ ইসলাম আইন বিষয়ক সম্পাদক আহসান হাবিব ফিরোজ।

ভুক্তভোগী ইমরানের অভিযোগ, ' বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে আমি হল প্রশাসনের বরাদ্দকৃত ১৪৬ নম্বর কক্ষে উঠি। রাতে খাওয়ার জন্য বাহিরে গেলে ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজের কয়েকজন নেতা-কর্মী এসে আমার বিছানাপত্র সড়িয়ে দেন এবং সেখানে সমাজকর্ম ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী মাহফুজুলকে তুলে দেন। রাতে হলে এসে অবস্থা দেখে প্রাধ্যক্ষকে জানাই।’

প্রাধ্যক্ষ এবিষয়ে ভুক্তভোগীকে বলেন, 'তুমি ছাত্রলীগকে জানাও প্রক্টর স্যারের সুপারিশে প্রাধ্যাক্ষ এই সিট তোমাকে বরাদ্দ দিয়েছে। এই দুই দিন তো ছুটি। রবিবার (২১ এপ্রিল) এসে এটা দেখব। তুমি এখান থেকে বের হবা না।'

 ইমরান আরও বলেন, শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকালে হলের ছাত্রলীগ নেতা ফিরোজ তার কক্ষে ডাকেন এবং সিট ছাড়ার জন্য হুমকি-ধমকি দেন।

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজ ইসলাম বলেন, 'ওই শিক্ষার্থী তার সিটেই থাকবে। তাছাড়া ছাত্রলীগের কেউ যেন কোন শিক্ষার্থীকে হল কক্ষে না ডাকে সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক করব।'

হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে আরেক নেতা আহসান হাবিব ফিরোজ জানান, 'প্রাধ্যক্ষকে জানিয়েই ওই সিটে আমি একজনকে উঠিয়েছি।'

ব্যাপারে হলের প্রাধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম জানান, 'ঘটনাটি অবগত হয়েছি। বিষয়টি আমি দেখছি। ওই শিক্ষার্থী তার জন্য বরাদ্দকৃত সিটেই থাকবে।'

আবাসিক ছাত্রকে হুমকি বিষয়ে কি ব্যবস্থা জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ জানান, 'আমি কথা বলেছি, আর সমস্যা হবে না। পরবর্তীতে যদি একই ঘটনা ঘটলে তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজের বিরুদ্ধে হলে সিট দখল, আবাসিক ছাত্রকে হুমকি-ধমকি ডাইনিং-ক্যান্টিনে খেয়ে টাকা পরিশোধ না করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ঘটনায় ছাত্রলীগের দখলকৃত সিটে ওঠা মাহফুজুল হলের আবাসিক ছাত্র নয়।

এদিকে হলগুলোতে ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডে কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবেই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে অ্যাখ্যা দিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস রাইটস এসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদি সজিব বলেন, 'হলে ছাত্রলীগের সিট দখল নতুন কিছু নয়। এমন ঘটনা ঘটিয়ে ক্ষমতা নামক বটবৃক্ষের নিচে আশ্রয় নিচ্ছে অভিযুক্তরা। একটি ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়ার মানে এমন অসংখ্য ঘটনার জন্ম নিতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করা।’ তাই অবিলম্বে এদের লাগাম টেনে ধরে হলে যথাযথ সিট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নিকট দাবি জানান তিনি।

ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, 'বিষয়গুলো আমারাও দেখছি। একটি কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চেষ্টা করছি।'


ছাত্রলীগ নেতা   হলের সিট দখল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

শিব নারায়ণের কর্নিয়ায় আলো ফুটবে দুই অন্ধের চোখে

প্রকাশ: ১০:০৮ এএম, ২০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

সদ্য প্রয়াত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার, জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের দান করা কর্নিয়ায় চেখে আলো ফিরে পাচ্ছেন দুই অন্ধ লোক।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে দুজন অন্ধ মানুষের মধ্যে কর্নিয়া দুটি প্রতিস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) এসব তথ্য নিশ্চিত করেন সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার শিব নারায়ণ দাশ শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান। তার ছেলে অর্ণব আদিত্য বাবার কথা অনুযায়ী কর্নিয়া দুটি দান করেন সন্ধানীতে। সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংকের টিম দুপুর সাড়ে ১২টায় কর্নিয়া দুটি সংগ্রহ করে।

ডা. লিটু বলেন, শনিবার সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে দুজন অন্ধ মানুষের মধ্যে কর্নিয়া দুটি প্রতিস্থাপন করা হবে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শিব নারায়ণ দাশ মননে চিন্তায় যে অবদান রেখেছিল মৃত্যুর পরেও দুজন অন্ধ মানুষকে পৃথিবীর সুন্দর রং রূপ দেখার সুযোগ করে দিয়ে গেছেন। সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি এই পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে।

জানা গেছে, শিব নারায়ণ এর আগে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে দ্রুত তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। পরে বিএসএমএমইউয়ের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

১৯৭০ সালের ছয় জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৬ নম্বর কক্ষে রাত ১১টার পর পুরো পতাকার নকশা সম্পন্ন করেন। এ পতাকাই পরবর্তীতে ১৯৭১-এর দুই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলিত হয়।

১৯৭০ সালের ৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশ গ্রহণের কথা ছিল। এজন্য ছাত্রদের নিয়ে একটি জয়বাংলা বাহিনী, মতান্তরে 'ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী' গঠন করা হয়। ছাত্র নেতারা এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে শিবনারায়ন দাশের নকশা করা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ন দাসের নকশা করা পতাকার মধ্যে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ, ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটুয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।


শিব নারায়ণ   কর্নিয়া   অন্ধ   চোখে  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন