এডিটর’স মাইন্ড

চিন্তা কী, শেখ হাসিনা আছেন না

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০৭ মে, ২০২২


Thumbnail চিন্তা কী, শেখ হাসিনা আছেন না

এবার মানুষের ঈদযাত্রা অনেকটাই স্বস্তিদায়ক হয়েছে। মহাসড়কে চিরচেনা যানজট ছিল না। ঘরমুখো মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে নাকাল হতে হয়নি। রেলে শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। নৌপথেও মানুষের কষ্টের গল্প গণমাধ্যমে শোনা যায়নি। এত বছর ধরে সরকার মহাসড়ক, রেল ও নৌপরিবহনের জন্য নিবিড় এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছে, তার ফল সম্ভবত এবার ঈদে আমরা পেতে শুরু করলাম। কিন্তু এ স্বস্তির মধ্যে অস্বস্তির ছোট ছোট বুদবুদ। ঈদের দুই দিন আগে (২ মে) কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে চারজন মারা গেলেন। আহত হলেন বেশ কজন। রোজার মধ্যেই (২২ এপ্রিল) কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে পেটালেন আওয়ামী লীগের আলোচিত-সমালোচিত সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণে এক থানার নেতা আওয়ামী লীগ কর্মীদের পিটিয়েছেন। জেলায় জেলায়, থানায় থানায়, গ্রামে গ্রামে আওয়ামী লীগে বিভক্তি। এ বিভক্তি এখন আর রাজনৈতিক বিতর্কের পর্যায়ে নেই। ক্রমে সহিংস হয়ে উঠছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর নিষ্ঠুর, নির্মম হচ্ছে। ইদানীং প্রতিটি বিশেষ দিবসে দেশের কোথাও না কোথাও আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর দুই পক্ষের সহিংসতার ঘটনা উৎসবের আমেজকে খানিকটা হলেও ম্লান করে দিচ্ছে। শুধু আওয়ামী লীগ কেন, সরকারের ভিতরও অনাসৃষ্টির ভূত হঠাৎ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। হঠাৎ কেউ কেউ এমন কান্ড করে বসেন, যার দায় বর্তায় ১৩ বছর বয়সী আওয়ামী লীগের ওপর। এই তো কদিন আগে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সরকারের কিছু ব্যক্তির নজিরবিহীন দাম্ভিকতায় মানুষ যখন ক্ষুব্ধ-বিরক্ত, তখন পরিস্থিতি সামাল দিলেন প্রধানমন্ত্রী। মাঠ রক্ষায় শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর এবং জনগণের কণ্ঠস্বর একাকার হয়ে গেল। আওয়ামী লীগ এবং সরকারকে সম্ভাব্য নাগরিক সমালোচনার হাত থেকে উদ্ধার করলেন। গত এক যুগে শেখ হাসিনা একাই যেন দল এবং সরকারের ত্রাতা। তিনি আছেন বলেই আওয়ামী লীগের ক্ষতগুলো চোখে পড়ে না। তাঁর জন্যই সরকারের ব্যর্থতাগুলো কেটে যায়।

শেখ হাসিনা একাই যেন দাঁড়িয়ে আছেন মানবতা, ন্যায়বিচার, জনকল্যাণের প্রতীক হয়ে। দলে এবং সরকারে অন্যদের সেই উচ্চতায় ওঠার যোগ্যতা ও বিচক্ষণতা নেই। এটা সত্যি। কিন্তু তাঁরা ভালো কাজে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে সহযোগিতা করছেন না। উপরন্তু নিজেরা এমন সব কান্ড ঘটাচ্ছেন যার ফলে দল এবং সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছে প্রতিনিয়ত। আওয়ামী লীগ এবং সরকারের কিছু ব্যক্তির কর্মকান্ড দুষ্ট বালকের মতো। তারা যেন সব অর্জনে কাদা মাখছে। আর শেখ হাসিনা সবকিছু পরিষ্কার করছেন। সার্ফ এক্সেলের বিজ্ঞাপনের মতো সবাই চিন্তাহীন। বলছে ‘চিন্তা কী, শেখ হাসিনা আছেন না’। পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে, আওয়ামী লীগ এবং সরকারের ভিতর বেশির ভাগ ব্যক্তিই যেন চিন্তাশূন্য। সামনে কী হবে, এ নিয়েও তাঁদের কোনো ভাবনা নেই। সব চিন্তার ভার তাঁরা শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের এক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সামনে গম-আটার সংকট হতে পারে। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা। জানতে চাইলাম কী ভাবছেন? জবাব দিলেন, ভাই এসব চিন্তার বিষয় না। শেখ হাসিনা সব ম্যানেজ করবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর অবিরত চাপ দিচ্ছে। মানবাধিকার, সুশাসন, গুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখন খোলামেলা। র‌্যাবের বর্তমান এবং সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা তারা নাকচ করে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র এমন কেন হলো? সামনের দিনগুলোয় কি যুক্তরাষ্ট্র আরও চাপ দেবে? আগামী নির্বাচনে কি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে? যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাংলাদেশ কীভাবে সামলাবে? এ রকম অনেক প্রশ্ন এখন রাজনীতির আড্ডায় উচ্চারিত হয়। আওয়ামী লীগ বা সরকারের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেন দেখবেন তিনি ভাবনাহীন। চিন্তার লেশমাত্র নেই। কেন? ওই যে শেখ হাসিনা। সেদিন একজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বেশ দাপটের সঙ্গেই বলছিলেন, ‘নেত্রী এসব ম্যাজিক দিয়ে উড়িয়ে দেবেন’। বললাম আপনিও তো আওয়ামী লীগের বড় নেতা। আপনার দায়িত্ব আছে না? তিনি চুপসে গেলেন।

বিএনপি বলেছে ঈদের পর তারা আন্দোলন করবে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি আগামী নির্বাচনে যাবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে। আগামী নির্বাচন এবার নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনের প্রায় দুই বছর বাকি। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সবারই কথা আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতারাও ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় স্বীকার করেন আগামী নির্বাচন কঠিন হবে। ২০১৪ কিংবা ২০১৮-এর মতো হবে না। কিন্তু এ কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন আওয়ামী লীগ কীভাবে পাড়ি দেবে? আওয়ামী লীগের কোনো নেতার কাছেই এর উত্তর নেই। যে কোনো নেতা একান্ত আলাপে বলবেন, এসব আমাদের চিন্তার বিষয় না। নেত্রী সব ম্যানেজ করবেন।

আওয়ামী লীগে কোন্দল বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন স্থানে খুনাখুনি হচ্ছে। দলের চেন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। তৃণমূলের নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সমালোচনা করছেন। দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিতরা কোণঠাসা। হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীদের দখলে চলে যাচ্ছে দল। কিছু নেতা-কর্মী যেন আওয়ামী লীগের সব অর্জন বিলীন করতে এক আত্মঘাতী খেলায় মেতেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিভক্তি তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা আছে কিন্তু উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নেই। কেন? শেখ হাসিনা আছেন না! আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতা বলবেন, শেখ হাসিনা নিমেষেই কোন্দল, অন্তঃকলহ বন্ধ করে দেবেন। এ কথা অনস্বীকার্য, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দলে নিরঙ্কুশ জনপ্রিয়। দলের সব নেতা-কর্মী তাঁকে বিশ্বাস করেন। তাঁর ওপর আস্থা রাখেন। তাঁকে মানেন। কিন্তু তাই বলে কি সবকিছু শেখ হাসিনাকেই সামলাতে হবে? অন্যদের কোনো ভূমিকা থাকবে না, এ কী করে হয়?

এ কথা ঠিক, রাষ্ট্র এবং দলের মৌলিক নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীকেই দেখতে হয়। তিনি একাধারে সরকার ও দল প্রধান। কিন্তু তিনি যেন নীতিনির্ধারণী এবং স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর দিকে গভীর মনোযোগ দিতে পারেন সেজন্য সরকার ও দলের কাউকে কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলো পালন করতে হবে। কেউ কোনো দায়িত্ব পালন না করে শুধু শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে থাকা কোনো শুভলক্ষণ নয়। আওয়ামী লীগের শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি আছে। প্রেসিডিয়াম আছে। আছে সম্পাদকমন্ডলী। কজন দায়িত্ব পালন করেন? একসময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মানে ছিল বিরাট ব্যাপার। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে। কিন্তু একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এলাকায় গেলে তিনি মন্ত্রীর চেয়েও বেশি মর্যাদা পেতেন। তার চেয়ে বেশি পেতেন জনগণের ভালোবাসা। এখন প্রেসিডিয়ামের অনেক সদস্য যেন পদটাকে সান্ত্বনা পুরস্কার মনে করেন। আওয়ামী লীগের মতো দলে প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন এতেই খুশিতে আটখানা। তাঁকে যে দায়িত্ব দেওয়া হলো তার মর্যাদা রক্ষার কোনো তাগিদ নেই। নেত্রী যে আস্থা তাঁর ওপর রাখলেন তারও প্রতিদান দিতে তাঁরা অক্ষম।

সরকারেও একই অবস্থা। ২০০৯ ও ২০১৯ সালে শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা গঠনে চমক দেখান। অনেক নতুন আনকোরা দলে এবং দেশে অপরিচিত ব্যক্তিকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে তাঁদের সুযোগ দেন। কিন্তু কজন হলফ করে বলতে পারবেন এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। কজন দেশের জন্য, দলের জন্য নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন।

অধিকাংশ মন্ত্রী ছোটখাটো সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকেন। হাওরের বন্যা রক্ষাবাঁধ, ধান কাটার ব্যবস্থার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত দিতে হয়। বাজারে ভোজ্য তেল উধাও হলে প্রধানমন্ত্রীকে সমাধানের পথ বাতলে দিতে হয়। মাঠে থানা নির্মাণের জনবিরোধী সিদ্ধান্তের সমাধানের পথ বাতলে দিতে হয়। তাহলে মন্ত্রীদের কাজ কী? কাজ অবশ্য আছে। ‘দুষ্টমি’ করে বিতর্ক সৃষ্টি করা। কোনো মন্ত্রী বিদেশ যান আত্মীয়স্বজন জ্ঞাতিগোষ্ঠী চৌদ্দপুরুষ নিয়ে। কোনো মন্ত্রী যেন অদৃশ্য মানব। তিন মেয়াদে মন্ত্রী থাকা এক বিরল সৌভাগ্যবান মন্ত্রীকে বছরে তিনবারও জনসমক্ষে দেখা যায় না। তিনি কী কাজ করেন তা-ও কেউ জানে না। বাংলাদেশে এখন এক অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী একাই সব করবেন। জনগণের জন্য স্বস্তির এক পরিবেশ তৈরি করবেন। আর কয়েকজন অনাসৃষ্টি করবেন। সব অর্জনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবেন। সাজানো গোছানো পরিপাটি পরিবেশ ল-ভ- করে দেবেন। শেখ হাসিনা কঠোর পরিশ্রমী। মানুষের জন্য তিনি সবকিছু উৎসর্গ করেছেন। সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি সব কাজ করেন। সব সময় জনগণের কথা ভাবেন বলেই তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ জনকল্যাণমুখী। কিন্তু তিনি এখন একাকী, নিঃসঙ্গ। তাঁর চিন্তা, সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত দরকার। এ সহযোগিতা তাঁর ‘ম্যাজিক’কে পূর্ণতা দেয়। ধরা যাক, শেখ হাসিনার ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের একাগ্রতা এবং কঠোর পরিশ্রমের কারণে এটি এখন একটি সাফল্যের দৃষ্টান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর চিন্তার বাস্তবায়নে দরকার এ রকম নিবেদিতপ্রাণ টিম। যেমনটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে আমরা দেখেছি। টিম ছিল বলেই এবার ঈদযাত্রায় সড়ক, রেল ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তিন মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা শুনেছেন। সেই নির্দেশনা মাঠে বাস্তবায়ন করেছেন। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সড়কপথে তদারকি করেছেন। রেলপথমন্ত্রী স্টেশনে ছুটে গেছেন। নৌপরিবহনমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিখুঁত বাস্তবায়ন করেছেন। এটাই হলো টিমওয়ার্ক।

এবার ঈদযাত্রার ঘটনাটি সরকারের জন্য একটি বড় শিক্ষা। প্রধানমন্ত্রীর দর্শন সুবিন্যস্তভাবে মাঠে বাস্তবায়ন করলেই যে দেশ ভালো থাকে তা এবার প্রমাণ হয়েছে। সরকারে যেমন টিমওয়ার্ক দরকার তেমনি টিমওয়ার্ক দরকার দলেও। শেখ হাসিনা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে, দলের আদর্শ অটুট রাখতে দিনরাত একাকার করছেন। কজন শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন? আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করলে যে কী অসাধ্য সাধন করা যায় তা দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিতে ১ হাজার ৪০২টি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। দেখা যাচ্ছে, যেখানে শেখ হাসিনার চিন্তা, পরিকল্পনা নিখুঁতভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেখানেই সংগঠন পাল্টে যাচ্ছে। উদ্দীপ্ত এক আওয়ামী লীগ উদ্ভাসিত হচ্ছে। আর যেখানে শুধু তৈলমর্দন ও স্তুতি সেখানে সংগঠন হতচ্ছিরি অবস্থায় হাবুডুবু খাচ্ছে। শুধু মুখে শেখ হাসিনার জয়ধ্বনি দিলে হবে না; কাজে শেখ হাসিনার আদর্শ, নীতি, চিন্তা বাস্তবায়ন করতে হবে। শেখ হাসিনাকে যারা কাছ থেকে চেনেন তারা জানেন, তিনি যুক্তিবাদী একজন মানুষ। যুক্তিপূর্ণ যে কোনো পরামর্শ জনগণের স্বার্থে মানতে তিনি এতটুকু দ্বিধান্বিত হন না। মুন্সীগঞ্জে বিমানবন্দর স্থাপন থেকে সরে আসা। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল। নিরাপদ সড়ক আইন প্রণয়ন। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করে আইন সংশোধন। ইত্যাদি অনেক কিছুই প্রধানমন্ত্রী করেছেন জনগণের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের জন্য। যুক্তিপূর্ণ ভিন্নমত তিনি গ্রহণ করেন। এ ব্যাপারে একটি উদাহরণ দিতে চাই।

সম্প্রতি সরকার জেলা পরিষদ আইন সংশোধন করেছে। সংশোধিত আইনে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা প্রশাসনে সরকার কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগ করার বিধান রাখা হয়। আইন পাসের পরপরই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদায়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বলা হয়। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগে হতাশা ও অস্থিরতা তৈরি হয়। জেলা পরিষদগুলোয় প্রশাসক হিসেবে আমলাদের বসানোর গুঞ্জন পল্লবিত হয়। মাঠ পর্যায়ে আমলাতন্ত্রের বিস্তৃতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথাও আলোচিত হতে থাকে। আবার সংশোধিত আইনে যেহেতু ‘প্রশাসক’ হিসেবে গণমান্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে, ফলে এ নিয়ে শুরু হয় নজিরবিহীন দৌড়ঝাঁপ, লবিং। নির্বাচনের আগে সারা দেশে কোন্দলে জর্জরিত আওয়ামী লীগ এক নতুন সংকটের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। নতুন প্রশাসক নিয়োগ রাজনৈতিকভাবে ‘বুমেরাং’ হতে পারে বলেও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিদায়ী চেয়ারম্যানদেরই আপাতত পরামর্শক হিসেবে রাখার প্রস্তাব করেন নানক। প্রধানমন্ত্রী এ পরামর্শ গ্রহণ করেন। জেলা পর্যায়ে অনিবার্য এক কোন্দল ও হানাহানি থেকে রক্ষা পায় সরকার। শেখ হাসিনা এ রকমই। জনস্বার্থে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করেন না। কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন না।

শেখ হাসিনার চিন্তা ও সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দলে এবং সরকারে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের। কিন্তু তাঁর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে যদি তাঁরা স্তুতিতেই আত্মপ্রসাদ লাভ করেন তাহলে তা দেশ ও জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে না। শেখ হাসিনা আছেন না- এ চিন্তা করে মন্ত্রী এবং নেতারা যদি নিজেদের আখের গোছানোয় ব্যস্ত থাকেন তাহলে দলে সংকট বাড়বে। সরকারের অর্জনগুলোও অনাকাক্সিক্ষত কালিতে নোংরা হবে।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।

শেখ হাসিনা   সরকার   আওয়ামী লীগ  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু: শেখ হাসিনাই হতে পারেন শান্তির দূত

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা। 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে শেখ হাসিনার বিশ্বশান্তির দর্শন জাতিসংঘ অনুমোদিত হয়েছে। এই বিশ্বশান্তি দর্শনের আলোকেই ইসরায়েল ইস্যুতে একটি রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে। 

বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে কঠোর এবং যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ গাজায় নিরীহ মানুষের ওপর অবিচার, হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সবসময় নিন্দা জানাচ্ছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার ঈদের শুভেচ্ছা ভাষণেও মধ্যপ্রাচ্যের মানবিক বিপর্যয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'মাদার অব হিউম্যানিটি' হিসেবে পরিচিত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্ব মানবতার কণ্ঠস্বর হয়েছেন। আর এ কারণেই বিশ্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। উদার মুসলিম দেশের নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে তিনি আলাদা একটি অবস্থানে রয়েছেন। বাংলাদেশ একদিকে যেমন ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা করে, অন্যদিকে ধর্মান্ধ মৌলবাদ এবং ধর্মের নামে উগ্র সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করে। আর এটি বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে। শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে বিশ্বের এমন একজন নেতা যিনি মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সংকট সমাধানের আলোকবর্তিকা হয়ে সামনে দাঁড়াতে পারেন। তার শান্তির মডেলকে সামনে রেখে যদি বিবদমান পক্ষগুলো আলোচনার টেবিলে বসে তাহলে ইসরায়েল ইস্যুতে শান্তি অসম্ভব নয়।

বিশ্বে যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা প্রায় অনেকেই বিতর্কিত এবং পক্ষপাতে দুষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্ব নেতার অবস্থানে থাকতে পারছেন না। চীন এই বিষয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবে পক্ষ করতে চায় না। তাছাড়া বিভাজিত বিশ্বে চীনের নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ মেনে নেবে না এটা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি রাশিয়া এখন নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে সমঝোতায় নেতৃত্ব দেওয়া পুতিনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এরদোয়ান ব্যাপারে ইসরায়েল সহ অন্যান্য দেশগুলোর একটি অবস্থান রয়েছে। তাছাড়া তুরস্ক এই বিতর্কে কতটুকু সহনীয় অবস্থায় থাকতে পারবে তা নিয়ে ব্যস্ত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এই অবস্থায় বিশ্বকে যুদ্ধাবস্থা থেকে সামাল দিতে পারেন একমাত্র শেখ হাসিনাই। তার শান্তির বার্তা যদি বিবাদমান পক্ষগুলো অনুধাবন করে তাহলে এই জটিল কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্ব শান্তি অসম্ভব নয়। আর এই শান্তির জন্য শেখ হাসিনাই হতে পারেন বিশ্ব নেতা। তার শান্তির দর্শন এবং তার শান্তির উদ্যোগের মাধ্যমে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি হতে পারে বিশ্ব।

ইরান-ইসরায়েল   শেখ হাসিনা   শান্তির দূত   জো বাইডেন   ইরান  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন যারা

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

পুরনোদেরকে অসম্মান না করে নতুনদের জন্য জায়গা করে দেওয়ার যে কৌশল সেটি রাজনীতিতে একটি শিক্ষণীয়। কিছু দিন আগেও যারা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাদের বদলে এখন আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন বেশ কিছু নেতা। যারা আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে ১১ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হওয়ার পর যাদেরকে বেশি পাদপ্রদীপে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন;

১. ড. হাছান মাহমুদ: ড. হাছান মাহমুদের পদোন্নতি ঘটেছে। এর আগে তিনি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী। এবার তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। স্পষ্টতই আওয়ামী লীগ সভাপতি তাকে পাদপ্রদীপে নিয়ে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও বটে। কোন কারণে সাধারণ সম্পাদকের পদ খালি হলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে। আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও ড. হাছান মাহমুদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই অনেকে মনে করছেন। আর এই সমস্ত বিবেচনা থেকেই আওয়ামী লীগে এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে সামনে আসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। 

২. জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন নিজ যোগ্যতায়। মাঠের নেতা হিসেবে তার দীর্ঘদিনের সুনাম ছিল। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। রাজনীতিতে চড়াই উতরাই এর মধ্য দিয়েই তিনি এগিয়ে গেছেন তার আদর্শের কারণে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার পর তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে গেছেন। তার পুরস্কার তিনি পেয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে উন্নীত হন। এবার নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের এই নেতা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এবং বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি এখন আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারক হয়ে উঠেছেন। 
৩. আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কর্মী বান্ধব হওয়ার কারণে তার অবস্থান আস্তে আস্তে দৃঢ় হচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের অন্যতম বাহাউদ্দিন নাছিম কর্মীদের কাছে আওয়ামী লীগ সংগঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত এবং সংগঠনের প্রশ্নে অকুতোভয় এবং একনিষ্ঠ এই নেতা মন্ত্রী না হয়েও আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন নীতি নির্ধারক হয়ে উঠছেন নিজ যোগ্যতায়। 

৪. আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক এর মতোই তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। কিন্তু তারপরও তিনি ভেঙে পড়েননি। সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। এবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থার প্রতিদান তিনি ভালো ভাবেই দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের একটি পালা বদল ঘটছে। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু কিংবা শেখ ফজলুল করিমের জায়গা আস্তে আস্তে এই সমস্ত নেতারা জায়গা করে নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের একটা পাইপলাইন তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। যেখানে পর্যায়ক্রমে নেতারা অপেক্ষমান অবস্থায় আছেন। নেতৃত্বের শূন্যতা আওয়ামী লীগে যেন না হয় সেজন্য একটি দূরদর্শী রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আব্দুর রহমান   জাহাঙ্গীর কবির নানক   ড. হাছান মাহমুদ   আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

অন্ধকার ছয়দিন

প্রকাশ: ১০:৩০ পিএম, ১২ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের লোডশেডিং চলছে। গত বুধবার থেকে সংবাদপত্র বের হচ্ছে না। টানা ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধের বিশ্ব রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। না কোন প্রতিবাদে নয়, দাবী আদায়ের জন্য নয়। ছুটির ফাঁদে সংবাদপত্র বন্ধ আছে। সংবাদপত্রকে বলা হয় জরুরী সেবা। চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন জরুরী সেবা দেন, তেমনি সংবাদকর্মীদের কাজও হলো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেয়া। বিশেষ করে ছুটির সময় এটার প্রয়োজন আরো বেশী। এবার দেশে একটা দীর্ঘ ছুটি। এসময় সংবাদপত্র অনেক জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো, ছয়দিন যদি হাসপাতালে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বলতো ছয়দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে না। তাহলে কি হতো? আমিতো মনে করি, সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিষয়টিও তেমনি আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের এনিয়ে বিকার নেই।  

এবার বাংলাদেশ দু’টি বড় উৎসব কাছাকাছি সময় উদ্যাপন করছে। ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করতে না করতেই, আগামীকাল (রোববার) ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ। বাঙালীর সবচেয়ে বড় উৎসব। এদেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। তবে বাংলাদেশে ঈদ-উল-ফিতর কেবল মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব নয়। এ অঞ্চলে বসবাসরত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এই উৎসবে আনন্দ করে। সম্প্রীতির বাংলাদেশে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’-এই রীতি চলে এসেছে দীর্ঘদিন। ইদানিংকার মতো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গিতে কোন ধর্মীয় উৎসবকেই দেখা হতো না। ঈদের দিন অন্য ধর্মের বন্ধুরাও বাসায় আসতো সেমাই মিষ্টি এক সাথে খাওয়া হতো। আবার হিন্দুদের পূজাতেও আমরা যেতাম। অনেক মজা হতো। যতো দিন যাচ্ছে আমাদের ধর্মীয় উদার নৈতিক চেতনাকে গ্রাস করে ফেলছে ধর্মান্ধ সংকীর্ণতা। এখন ঈদ উৎসব যেন অনেকটাই ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলিত। রমজান মাস জুড়ে এক ধরনের কঠোর বিধি নিষেধ থাকে যা স্বতঃস্ফূর্ত না। আরোপিত এবং লোক দেখানো। এই আরোপিত বিধি নিষেধ নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন কিছু ‘বক ধার্মিক’। এদের কারণে গত তিন ঈদে পহেলা বৈশাখ নির্বাসিত ছিলো। পবিত্র রমজানের সাথে পহেলা বৈশাখের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু তারপরও অতি উৎসাহী কট্টরবাদীদের দাপটে শৃঙ্খলিত হয় পহেলা বৈশাখ। অথচ বাঙালী হিসেবে পহেলা বৈশাখীই আমাদের প্রথম এবং প্রধান সর্বজনীন উৎসব। বাংলা বর্ষ বরণ বাঙালীর প্রাণের উৎসব। এই উৎসব অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বেশ কয়েক বছর পর এবার পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হবে বাঁধাহীন ভাবে। বাঙালী জাতি বর্ষবরণ করবে মুক্ত ভাবে। এটা আমাদের জন্য বড় আনন্দের উপলক্ষ্য তো বটেই। কিন্তু এত বড় উৎসব হবে সংবাদপত্রহীন! কি অদ্ভুত! সংবাদপত্র কি দায়িত্বহীন মালিকানার শিকার?

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে। সম্প্রীতির বন্ধনে অটুট। কিছু মানুষ যতোই কট্টর মৌলবাদী হোক না কেন, সাধারণ মানুষ এখনও উগ্র পন্থাকে সমর্থন করে না। এজন্য একই সময়ে একাধিক ধর্মাবলম্বীদের উৎসব এদেশে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয়। এবার রমজানের কথায় ধরা যাক না কেন। এবার রমজানের মধ্যেই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ‘ইস্টার সানডে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোজার মধ্যেই দোল উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায় রং উৎসবে মেতেছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কোথাও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা বলেননি যে, রোজার জন্য ইস্টার সানডে করা যাবে না কিংবা দোল উৎসব বন্ধ রাখতে হবে। ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায় কিছু উপরের তলার মানুষ। যারা ধর্ম প্রতিপালনের চেয়ে লোক দেখানোতে বেশী আগ্রহী। এদের হাতে ধর্ম এবং সংস্কৃতি কোনটাই নয়। এবার ঈদের পরপরই পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হচ্ছে-এজন্য আমি আনন্দিত। বাংলাদেশের মানুষের সামনে এটি এক অনন্য সুযোগ। এর মাধ্যমে প্রমাণ হতে পারে আমরা বাঙালী, আমরা অসাম্প্রদায়িক, আমরা উদার। এদেশের মানুষ যেমন ঈদ উৎসব করলো তেমনি বাংলা নববর্ষকেও বরণ করবে। এই বর্ষ বরণের উৎসব যেন ঢেকে দিচ্ছে সংবাদপত্রে ছুটি। এবার ঈদের ছুটিতে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিকরা। ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে মোট ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধ রাখার এক অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংবাদপত্র মালিকরা। পহেলা বৈশাখে কেন সংবাদপত্র বন্ধ থাকবে? কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ‘ঈদ সংখ্যা’ সাময়িকী প্রকাশ করেছে। এটা ভালো উদ্যোগ। সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে এই সব সাময়িকী গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি আশা করেছিলাম এবার যেহেতু কাছাকাছি সময়ে ঈদ এবং বর্ষবরণ তাই সংবাদপত্রগুলো পহেলা বৈশাখে একটা ছোট সাময়িকী করবে। আলাদা আলাদা সাময়িকী না করুক ঈদ সংখ্যা এবং নববর্ষ সংখ্যা মিলিতভাবে করবে। কিন্তু কোথায় কি, এবার পহেলা বৈশাখে কোন সংবাদপত্রই বেরুচ্ছে না। শুধু পহেলা বৈশাখ কেন? বাংলাদেশে এখন চলছে অন্ধকার সময়। ১০ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল দেশে কোন সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না। এটি নজীর বিহীন। 

অবশ্য কেউ বলতে পারেন, এ যুগে সংবাদপত্র ৬ দিন না ৬ মাস বন্ধ থাকলো কার কি? এখন সংবাদের জন্য কে আর দৈনিক পত্রিকার অপেক্ষা করে? অনলাইন, টেলিভিশন, সোশাল মিডিয়ার এই যুগে কেউ আর খবরের জন্য সকালের সংবাদপত্রের অপেক্ষা করে না। সকাল বেলা এক কাপ চায়ের সাথে একটি সংবাদপত্র এখন উত্তেজনাপূর্ণ রোমাঞ্চ নয়। এসব ঘটনা প্রিন্ট মিডিয়ার অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠারই ইঙ্গিত। কিন্তু তারপরও প্রিন্ট মিডিয়া এখনও বিশ্বস্ততা এবং আস্থার প্রতীক। একজন পাঠক টেলিভিশনে বা অনলাইনে যতো সংবাদই দেখুক বা পড়ুক না কেন, দিনের শেষে তার নির্ভরতা ছাপা কাগজ। অনলাইনে কোন সংবাদ পাঠ করার পর তার সত্যতা যাচাই করে ছাপা কাগজে। তাই এখনও সংবাদ, সঠিক তথ্যের জন্য প্রধান নির্ভরতার জায়গা হলো সংবাদপত্র। তথ্যের এই বিশ্বস্ত উৎস বন্ধ আছে। টানা ছয়দিনের জন্য দেশের মানুষ সংবাদপত্র পাবে না। এই ছয়দিনকে বলা যায় অন্ধকার সময়। সংবাদপত্র বিহীন একটা দিন মানে অন্ধকার দিন-রাত্রি। গত ১০ এপ্রিল থেকে অন্ধকার ছয়দিন শুরু হয়েছে। আমরা যারা সেকেলে মানুষ। ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকা খুঁজি তাদের জন্য এই ছয়দিন দূর্বিসহ, অবর্ননীয়। 

প্রশ্ন হলো সংবাদপত্রের মালিকরা কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিলো? এই সিদ্ধান্ত দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে আরো সংকটে ফেলবে। বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের মালিকানা শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীদের দখলে। প্রধান সব সংবাদপত্রই কোন না কোন শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। বড় শিল্পপতিদের কাছে সংবাদপত্র হলো মর্যাদার প্রতীক। মুক্ত সাংবাদিকতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, পাঠকের কাছে দায় বদ্ধতা ইত্যাদি ব্যবসায়ীদের কাছে মূখ্য বিষয় নয়। সংবাদপত্র এখনকার মালিকদের কাছে ‘ক্ষমতা’ এবং ‘অস্ত্র’। এই ক্ষমতা দেখিয়ে তারা তাদের ব্যবসাকে সম্প্রসারিত করে। সুদৃঢ় করে। সরকার সংবাদপত্র মালিকদের ভয় পায়। ব্যাংক তো তটস্থ থাকে। তাই পত্রিকা থাকা মানে ব্যবসায়ীদের সব মুশকিল আসান। কর্পোরেট হাউসে এখন সাংবাদিকতা নেই, এক ঝাঁক ক্রীতদাস আছে। যাদের একমাত্র কাজ মালিকদের মনোরঞ্জন করা। এদের মধ্যে যিনি সম্পাদক তিনি হলেন সবচেয়ে বড় ক্লাউন। মালিকদের খুশী করাই তার একমাত্র কাজ। পেশাগত উৎকর্ষতা চুলোয় যাক। যিনি মালিকের স্বার্থ যতো নিবিড়ভাবে সুরক্ষিত করেন তিনি ততো বড় সম্পাদক। এই অস্ত্র প্রয়োগ করে মালিকরা প্রতিপক্ষকে ভয় দেখায়। যারা তাদের কথা শোনে না তাদের এই অস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করে। সংবাদপত্রের মালিকানা ব্যবসায়ীদের কাছে একধরনের বর্মের মতো। নিজেদের অপকর্ম, স্বেচ্ছাচারিতা জায়েজ করার জন্য সংবাদপত্রকে তারা ব্যবহার করে। সংবাদপত্রের মালিক হবার কারণে কেউ তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করেনি। এভাবেই চলছে সংবাদপত্র শিল্প। সংবাদপত্র এখন কর্পোরেট ক্রীতদাস। তাই মালিকরা সংবাদপত্র দুই দিন বন্ধ থাকলো না ছয়দিন বন্ধ থাকলো তা নিয়ে ভাবেন না। তারা তাদের ব্যবসা সুরক্ষা পত্রিকা দিয়ে কতটা হলো তা নিয়েই ব্যস্ত। সংবাদপত্র মালিকরা পাঠকের কাছে জবাবদিহিতার বিশ্বাসী নন। তারা দেখেন এই সংবাদপত্র তাদের স্বার্থ কতটা রক্ষা করতে পারছে। ছাপা কাগজ একদিন বের না হলে অনেক সংবাদপত্রের অনেক টাকা সাশ্রয়। এসব বিবেচনা করেই মালিকরা মনে করেছেন পত্রিকা যদি কয়েকটা দিন বন্ধই থাকে, কি এমন ক্ষতি। কিন্তু এই ছয়দিন সংবাদপত্র বন্ধ যে এক ভয়ংকর বার্তা দিলো তাকি মালিকরা অনুধাবন করেন? সংবাদপত্র ছাড়াও যে দেশ চলে, এমন এক ঘোষণাই কি দিলেন না মালিকরা। ভবিষ্যতে এর মূল্য দিতে হবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেই। 

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

সরকারের তিন মাস: সেরা অর্জন

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রথম তিন মাস বর্তমান সরকারের জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করার ফলে এই নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়, নির্বাচনের পর কী ধরনের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সেটি ছিল সকলের কাছে একটি দেখার বিষয়। তবে সরকার প্রথম তিন মাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকট গুলোকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত সরকারের চেষ্টা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোন রকম অভিযোগ নেই। 

সরকার এই প্রথম তিন মাসে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে;

১. নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা আদায়: ৭ জানুয়ারি নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এটি সরকারের একটি প্রধান অর্জন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনকে কীভাবে দেখবেন? নির্বাচনের পরে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের নানা রকম আগাম পূর্বাভাস ছিল, সংশয় ছিল। কিন্তু এই সংশয় উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সফলতা অর্জন করেছে। নির্বাচনের পর প্রায় সব দেশই নতুন সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে। এটি সরকারের জন্য একটি বিরাট অর্জন। এই সরকার যে এত তাড়াতাড়ি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে এটা অনেকেই ভাবতে পারেননি। 

২ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর করার জন্যই সাঁড়াশি উদ্যোগ: নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কিছু বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে একাধিক শিশুর মৃত্যু, অবৈধ হাসপাতালে রোগীদের ভুল চিকিৎসার মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তার সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে হাসপাতালগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। অবৈধ বেশ কিছু ক্লিনিক হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে দুর্নীতির মধ্যে ডুবে ছিল তা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মানুষ সরকারের এই অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছে এবং আশা করছে যে, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধের ক্ষেত্রে তার অবস্থান অটুট রাখবেন এটাই সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে।

৩. সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি: এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি বটে, তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকার সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রির যে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে ভ্যান রমজান মাসে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিতরণ ব্যাপকভাবে ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকাগুলোর মানুষকে সুবিধা দিয়েছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে মিলে দেশের ৩৫ টি জেলায় রাজনীতিবিদ, প্রশাসন নিজস্ব উদ্যোগে সুলভ মূল্যে রমজানের পণ্য বিতরণ করার মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তরমুজ নিয়ে যখন কিছু মধ্যসত্ত্বভোগী লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছে তখন কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকের বাজারের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে তরমুজ বিক্রি করে একটি নজির স্থাপন করেছে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় শিক্ষা যে, বিকল্প চ্যানেলের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পণ্য দিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তা খুব উপকার দেয়।

৪. ব্যাংক একীভূত করা: ব্যাংক একীভূতকরণ উদ্যোগটি নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরেই করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, যে সমস্ত দুর্বল ব্যাংক আছে, সেই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সকল ব্যাংক একীভূত করবে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় সীমা বেঁধে দিয়েছে। এই নির্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যে পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রাজশাহী, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সহ একাধিক ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। এর ফলে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে সকলে প্রত্যাশা করেন এ সমস্ত ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া বানানোর ক্ষেত্রে যারা দায়ী তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে ছাড় দেওয়ার জন্য যেন ব্যাংক একীভূত না হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

৫. অবৈধ দালান-কোঠার বিরুদ্ধে অভিযান: বিশেষ করে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রণালয় অবৈধ দালান এবং অনুমোদিত ভবনের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারের নতুন গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন। তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। বিশেষ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা। এখন পর্যন্ত যে অভিযান চলছে সেই অভিযান সরকারের সফল উদ্যোগের একটি বলেই অনেকে মনে করছেন। এছাড়াও সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ভালো কাজ করছে, যে কাজগুলো ফলাফল পেতে সাধারণ মানুষকে অপেক্ষা করতে হবে। 


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

তোফায়েল আহমেদ: রাজনীতিতে অস্তমিত সূর্য

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ০৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

তোফায়েল আহমেদ কি রাজনীতিতে এক অস্তমিত সূর্য? তিনি কি নিভে যাচ্ছেন? বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তিনি কি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নগুলো এখন খুব বড় করে সামনে এসেছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যারা তোফায়েল আহমেদকে দেখেছেন তারা আগের তোফায়েল আহমেদের ছায়াকেও দেখতে পারেননি। যে তোফায়েল আহমেদ ছিল সরব, যার ভরাট কণ্ঠস্বরে জাতীয় সংসদ প্রকম্পিত হত, যিনি সবসময় সবাইকে চমকে দিতেন বিভিন্ন দিন তারিখের হিসেব মুখস্থ বলে দিয়ে, যার সবসময় শত শত টেলিফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা মুখস্থ থাকত, যা স্মৃতিশক্তি নিয়ে সকলে প্রশংসা করত, রাজনীতিতে যিনি একজন যুবরাজের মত পদচারণা করতেন, নানা রকম বিতর্কের পরও তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন সেই তোফায়েল আহমেদ এখন কোথায়? 

এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তোফায়েল আহমেদ জয়ী হয়েছেন। সংসদে তাকে দেখা যায় কদাচিৎ। তবে তিনি এখন শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকটাই বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন। বিশেষ করে একাধিক অসুস্থতা তাকে এখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটা চলা করতে দেয় না। তার কণ্ঠস্বরের তেজও কেড়ে নিয়েছে তার একের পর এক অসুখ। 

তোফায়েল আহমেদের এক পাশ অনেকটাই অবশ হয়ে গেছে। আর এ কারণেই তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তবে এখনও তিনি লেখালেখি করেন এবং নানারকম রাজনৈতিক আলোচনায় তাকে আগ্রহীও দেখা যায়। তবে আগের যে তোফায়েল আহমেদ, যিনি যে কোন রাজনৈতিক আড্ডা এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মধ্যমণি হিসেবে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন, যার দিকে তাকিয়ে থাকত লক্ষ লক্ষ জনতা সেই তোফায়েল আহমেদ এখন নেই। 

অনেকেই মনে করেন যে, রাজনৈতিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিক ভাবেই তোফায়েল আহমেদ বেশি বিপর্যস্ত। বিশেষ করে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরুর প্রেক্ষাপটেই রাজনীতিতে তিনি নিজেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন। 

গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শোক দিবসের স্মরণে এক লেখায় কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু যখন আক্রান্ত হন, ৩২ নম্বর যখন খুনিরা ঘিরে ফেলে তখন তিনি বেশ কয়েক জনকে ফোন করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন তোফায়েল আহমেদে। হতাশাজনক হলেও তোফায়েল আহমেদ সেই টেলিফোনের পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। এই লেখাটির পর আওয়ামী লীগের মধ্যে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। অনেকে এটা নিয়ে হৈ চৈ করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তোফায়েল আহমেদ এর প্রতিবাদও করতে পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগ সভাপতিকে যারা চেনেন তারা সকলেই জানেন যে, বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে তিনি তথ্য প্রমাণ ছাড়া কোন বক্তব্য দেন না। এই ঘটনার পর আকস্মিকভাবে তোফায়েল আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অনেকে মনে করেছিলেন তিনি হয়ত নির্বাচন করবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন অসুস্থ শরীর নিয়ে। 

এখন তিনি জাতীয় সংসদে আসেন বটে তবে আগের মত সরব উপস্থিতি তার নেই। হয়ত রাজনীতির জীবনে তিনি শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। তবে রাজনীতির ইতিহাসে তোফায়েল আহমেদ চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তার রাজনৈতিক জীবনের দুটি ভাগ সবসময় আলোচিত থাকবে। একটি হল স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর একান্ত বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে তরুণ তুখোড় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ। আরেকটি হল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে তার বিতর্কিত এবং রহস্যময় ভূমিকা। কোন তোফায়েল আহমেদ ইতিহাসে বেশি আলোচিত থাকবেন তা সময়ই বলে দেবে।



তোফায়েল আহমেদ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন