এডিটর’স মাইন্ড

জিয়া এনেছিলেন স্যুট পিস, এরশাদ গাভী, মইন ঘোড়া, বেগম জিয়া পুশইন

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২


Thumbnail জিয়া এনেছিলেন স্যুট পিস, এরশাদ গাভি, মইন ঘোড়া, বেগম জিয়া পুশইন

চার দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী ভারত গিয়েছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর। ৬ সেপ্টেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জ্বালানি এবং খাদ্যে সহায়তার অঙ্গীকারসহ দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে বিনাশুল্কে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে। ২০২০ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। রীতি অনুযায়ী সে সময়ই তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানান। এ ধরনের বৈঠকের আগে দুই দেশের মধ্যে আলোচ্যসূচি নিয়ে নানা ধাপে নানা বৈঠক হয়। এসব বৈঠকের চূড়ান্ত রূপ হলো দুই নেতার শীর্ষ বৈঠক। এসব বৈঠকে দেওয়া-নেওয়ার কিছু থাকে না। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। এর অনেকটির সমাধান হয়েছে। অনেক বিষয় নিয়ে দুই দেশের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের ’৭৫-পরবর্তী যেসব সমস্যা ছিল তার মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন, স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন, বিচ্ছিন্নতাবাদী দমন, সীমান্ত হত্যা, সমুদ্রসীমা বিরোধ, অভিন্ন নদীর পানির হিস্সা নির্ধারণ ইত্যাদি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। গত এক যুগে এসব অনিষ্পন্ন বিষয়ের অনেকটিরই সমাধান হয়েছে। এখনো সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি চুক্তির মতো কিছু বিষয় রয়ে গেছে। এর মধ্যে সীমান্ত হত্যা অনেকখানি কমে এসেছে। এবারের সফরেও সীমান্ত হত্যা বন্ধে অঙ্গীকার করেছে দুই দেশ। তিস্তার পানি চুক্তি আটকে আছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে। কিন্তু দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্কের মাপকাঠি কখনো দেওয়া-নেওয়ার হিসাবে হয় না। একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের অনেকখানি নির্ভর করে প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের ওপর। প্রতিবেশী বড় না ছোট তা মুখ্য বিষয় নয়। দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগিতা দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। দুটি দেশের সম্পর্ক ভালো হলে একে অন্যের উন্নয়নের পরিপূরক হতে পারে। প্রতিবেশীর সঙ্গে বৈরিতা কখনই একটি রাষ্ট্রকে স্বস্তি দেয় না। ভারত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধু। দুই দেশের সম্পর্ক রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তির সংগ্রামে ভারতের সর্বাত্মক সহযোগিতা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে, তারা এজন্য ভারতের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কার্পণ্য করে না কখনো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ’৭১-এ ভারত এবং শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর অকৃপণ সহযোগিতাকে স্মরণ করেছিলেন গভীর শ্রদ্ধায়। পাশাপাশি তিনি এক আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ব্যাপারে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ভারতের অনুগত নয় বরং জাতির পিতা চেয়েছিলেন একটি সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক। এ কারণেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরপরই ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা ভারত সফর করেন। এ সফরেই তিনি শ্রীমতী গান্ধীকে সেনা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুর অনুরোধ রক্ষা করেন। জাতির পিতার জন্মদিনে, ১৯৭২-এর ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের আগেই ১৫ মার্চ ভারতীয় সেনাবাহিনী ফেরত নেওয়া সমাপ্ত হয়। বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফরের সময় ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ এ ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়; যা দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তিমূল। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এসব চুক্তির মাধ্যমে জাতির পিতা বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতা’ নতুন উচ্চতায় উপনীত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু দুই দেশের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। ’৭১-এ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, বিজয়ের পর তারাই বাংলাদেশে সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় ভারতবিরোধিতার জিকির শুরু করে। ’৭৫-এ যে অপশক্তি জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তারাই ভারতবিদ্বেষ ছড়িয়ে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছিল। ’৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি ‘ভারতবিরোধিতা’ ছিল সস্তা এক প্রবণতা। ‘ভারত জুজু’র ভয় দেখিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত ধারার পুনর্বাসন হয়। ভারতবিরোধিতা, আওয়ামী লীগ-বিরোধিতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বিরোধিতা ধীরে ধীরে পরিকল্পিতভাবে একবিন্দুতে মেলানো হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই বাংলাদেশ ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে। ফেনী পর্যন্ত ভারত হবে। মসজিদে আজান হবে না। ইত্যাদি বক্তব্য গোয়েবলসীয় কায়দায় ছড়ানো হয়। জিয়া, এরশাদ এবং বেগম জিয়া লাগাতারভাবে এসব সস্তা বুলি আওড়িয়েই জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। এসব বক্তব্য দিয়ে ধর্মান্ধ, মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ডালপালা মেলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

১৯৭৫ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে চটকদার ইস্যু ছিল ‘ভারত’। এমনকি ’৯৬-এর নির্বাচনী প্রচারণায় বেগম জিয়া ফেনীর এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতলে ফেনী ভারতের দখলে চলে যাবে।’ (সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক ৩০ মে ১৯৯৬)। কিন্তু ভারত জুজু ওই নির্বাচনে কাজে আসেনি। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে শেখ হাসিনা গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি করতে সক্ষম হন। পার্বত্য শান্তিচুক্তি ছিল তাঁর আরেকটি অনন্য অর্জন। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আবার একটি স্বাভাবিক সড়কে এগোতে থাকে। এ সময় ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাপারে ‘নতুন কূটনীতি’ শুরু করে। ‘শুধু এক দলের সঙ্গে সম্পর্ক নয়’ এ নীতিতে ভারত বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী হয়। এ আগ্রহ থেকেই বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে নৈকট্য বাড়ায় ভারত। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ভারত সফর করে। সে সফরে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতির ডালি সাজিয়ে নিয়ে যায় বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর একাধিক বক্তৃতায় সোজাসাপটা এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে র নির্বাচনে বিএনপিকে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়।’

২০০১ সালের নির্বাচনে এক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বিরল এক ঐক্য হয় বিএনপির পক্ষে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান আদালতে জবানবন্দিতে স্বীকার করেন, ওই নির্বাচনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বিএনপিকে টাকা দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর ভারতের মোহভঙ্গ ঘটে। পাকিস্তানি মদদে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অঞ্চল হয়ে ওঠে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভয়ারণ্য। ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনার পর ভারত বুঝতে পারে ‘লোভী, অবিশ্বস্ত বন্ধুর চেয়ে ভয়ংকর আর কিছু হতে পারে না।’ বিএনপি এ সময় টাটা নাটক করে। টাটা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে বলে উল্লাসে পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকেন তৎকালীন জ্বালানি উপদেষ্টা। টাটা এলো, টাটা এলো বলে বিএনপি নেতারা কোরাস গাইতে থাকেন। কিন্তু হঠাৎ করে টাটার বেলুন চুপসে গেল। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো, ‘গ্যাসের দাম নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় টাটার সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে না।’ কিন্তু ভারতের প্রভাবশালী সাময়িকী ফ্রন্টলাইন হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিল। তারা এক এক্সক্লুসিভ রিপোর্টে জানাল, ‘বিএনপি সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তার বন্ধু টাটার কাছে বিপুল পরিমাণ উৎকোচ দাবি করেন। টাটার বিনিয়োগ গাইডলাইনে এ ধরনের উৎকোচ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এজন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ থেকে টাটা সরে এসেছে।’
অর্থাৎ বিএনপি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করেনি। নিজেদের ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে তারা ভারতবিদ্বেষ ছড়িয়েছে। আবার ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারতের কাছে নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছে।

এবার প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের শুরু থেকেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তারস্বরে চিৎকার করেছেন। মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘প্রতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফরে গিয়ে দিয়ে আসেন, কিন্তু নিয়ে আসতে পারেন না।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। আমাদের পেছনে একটা তিক্ত এবং হত্যাশার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা প্রতিবার আশা করেছি যে এবার বুঝি তিনি কিছু নিয়ে আসবেন। প্রতিবার দেখেছি দিয়ে এসেছেন, নিয়ে আসেননি।’ বন্ধুত্ব মানে কি দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক? আপনি আপনার বন্ধুর বাসায় গেলেন, গিয়ে বললেন, আমার টিভি নেই, তোমার টেলিভিশনটা দাও। কিংবা আমার পকেটে টাকা নেই। কিছু টাকা দাও। এ রকম গিভ অ্যান্ড টেকের সম্পর্কে আর যা হোক বন্ধুত্ব হয় না। মির্জা ফখরুলের চেয়ে আর এক কাঠি সরস বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বললেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে এসেছেন।’ রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপার বিনোদন। তাঁর কথায় হাস্যরস করা যায়। সিরিয়াস চিন্তা করা যায় না। মির্জা ফখরুল একজন জ্ঞানী মানুষ। রাজনীতিতে আসার আগে শিক্ষকতা করেছেন। এমপি ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন। কাজেই তাঁর মন্তব্য তো আমাদের ভাবাবেই। জাতির পিতা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে একটা সম্মান এবং সমতার ভিত্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু ’৭৫-এর পর বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ফখরুদ্দীন-মইন উ আহমেদের সরকার ভারত থেকে কী কী এনেছিল? আমি খানিকটা খুঁজে দেখার চেষ্টা করলাম।

জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে প্রথম ভারত সফর করেছিলেন ১৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৭। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ সফর সম্পর্কে বলা হয়েছিল, ‘প্রতিবেশীর সঙ্গে সর্বোত্তম সম্পর্ক উন্নয়ন’। দুই দিনের এ সফরে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। কোনো সমঝোতা স্বাক্ষরও হয়নি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের সঙ্গে জিয়া এক চা চক্রে মিলিত হন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জিয়াকে একটি স্যুট পিস উপহার দেন। এ নিয়ে ২০ ডিসেম্বরের ‘আনন্দবাজার’ একটি চমৎকার ইঙ্গিতবাহী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘জিয়াকে উর্দি ছাড়তেই স্যুট পিস দিলেন মোরারজি’। জিয়া তখন একাধারে সেনাপ্রধান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং রাষ্ট্রপতি। তুখোড় রাজনীতিবিদ দেশাই স্যুট পিস দিয়ে তাঁকে বুঝিয়ে দিলেন উর্দি পরা স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয় না। জিয়া তাঁর শাসনামলে আরও দুই দফা ভারত সফর করেছিলেন। ১৯৮০ সালের ২১ জানুয়ারি ইউনিডো সম্মেলনে যোগ দিতে জিয়া ভারত সফরে যান। জিয়ার ভারত সফরের মাত্র সাত দিন আগে ১৪ জানুয়ারি ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে রাজসিক প্রত্যাবর্তন ঘটে ইন্দিরা গান্ধীর। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তিনি আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শত চেষ্টা করেও মিসেস গান্ধীর সঙ্গে জিয়ার একটি সৌজন্য সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে পারেনি। জিয়ার শেষ ভারত সফর ছিল ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৮০। আঞ্চলিক কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে জিয়া ভারতে যান। এবার তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি ফটোসেশনে অংশ নিতে সক্ষম হন। গঙ্গার পানি, সীমান্ত হত্যা ইত্যাদি কোনো বিষয়েই জিয়া টুঁশব্দ করেননি।

জিয়ার মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতা দখল করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদ ক্ষমতায় এসেই ভারতের মনজয়ের চেষ্টা করেন। ৬ অক্টোবর, ১৯৮২ সালে রওশন এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে ভারত সফরে যান এরশাদ। ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র খবর অনুযায়ী এরশাদের সামরিক আইন জারি এবং তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন ভারত সরকারের কাছে। ‘আনন্দবাজার’ জানায়, ভারতের পক্ষ থেকে এরশাদকে এক জোড়া গাভি উপহার দেওয়া হয়। পরের বছর জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এরশাদ আবার দিল্লি যান। এবার তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে একটি বৈঠক করতে সক্ষম হন। কিন্তু বাংলাদেশের অমীমাংসিত ইস্যু আলোচনার টেবিলেই আনতে পারেননি এরশাদ। ’৮৪-এর ৩ নভেম্বর এরশাদ ভারতে গিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর শেষকৃত্যে যোগ দিতে। এরশাদের শেষ ভারত সফর ছিল ১৯৮৬ সালের ১৬ জুলাই। এটি ছিল এরশাদের প্রথম এবং একমাত্র রাষ্ট্রীয় সফর। রাজীব গান্ধীর সঙ্গে এ বৈঠকে গঙ্গার পানি বণ্টন কিংবা স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।

বেগম জিয়া ক্ষমতায় এসে ১৯৯২-এর ২৫ মে তিন দিনের সফরে ভারতে যান। এটি ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় সফর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মূল আলোচনার বিষয় ছিল অবৈধ বাংলাদেশিদের ভারতে অনুপ্রবেশ বন্ধ। বেগম জিয়া-নরসিমা রাওয়ের বৈঠকের পর ভারত থেকে পুশইন শুরু হয়। তিন দিনের সফর শেষে ঢাকায় ফিরে বেগম জিয়া বিমানবন্দরেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় একজন সাংবাদিক জানতে চান ‘গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না।’ বেগম জিয়া বলেন, ‘আমি তো এ বিষয়টি ভুলেই গিয়েছিলোম।’ যা-ই হোক, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর শুরু হয় পুশইন। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো শুরু করে ভারত। বেগম জিয়া তাঁর সফরেই এ-সংক্রান্ত মুচলেকা দিয়ে এসেছেন বলে সেখানকার গণমাধ্যম দাবি করে। বেগম জিয়া দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ২০০৬ সালের ২০ মার্চ ৪০ ব্যবসায়ীসহ ৯৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে দিল্লি যান। বেগম জিয়ার সঙ্গে মনমোহন সিংয়ের বৈঠকটি ছিল তিক্ততাপূর্ণ। ভারত বাংলাদেশের ভূখন্ডে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। সংখ্যালঘু নিপীড়ন এবং হিন্দুদের দেশত্যাগ নিয়েও কথা হয় দুই প্রধানমন্ত্রীর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থে জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে বাংলাদেশের স্পষ্ট ভূমিকা দাবি করেন। এ বৈঠক এতটাই তিক্ততাপূর্ণ ছিল যে দুই দেশ যৌথ ইশতেহার পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। একটি যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিরাপত্তা, বাণিজ্যসহ সব বিষয়ে একত্রে কাজ করার অঙ্গীকার করা হয়। বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয় এক ভয়ংকর রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এ প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় আসে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে এক-এগারো সরকার। সেনাসমর্থিত এ সরকারের মূল কর্তৃত্ব ছিল তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের হাতে। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের সেনাপ্রধানের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের সফরে জেনারেল মইন উ আহমেদ ভারত সফরে যান। ওই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সঙ্গে। পাঁচ দিনের সফর শেষে ছয়টি ঘোড়া নিয়ে ফেরেন জেনারেল মইন।

সব আমলের সরকারপ্রধানের ভারত সফরের ইতিবৃত্ত খুঁজে বের করলাম আসলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথার পরিপ্রেক্ষিতে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া ভারত থেকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আর কি কেউ কিছু আনতে পেরেছেন? প্রথম মেয়াদে শেখ হাসিনা গঙ্গার পানি বণ্টনের চুক্তি করেছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি বঙ্গবন্ধুর সময় স্বাক্ষরিত স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেন। ’৭৪-এ ওই চুক্তি স্বাক্ষর হলেও ভারতের পার্লামেন্টে অনুমোদিত না হওয়ায় বাস্তবায়ন হয়নি। জিয়া, এরশাদ, বেগম জিয়া কেউই তা বাস্তবায়নের চেষ্টাও করেননি। শেখ হাসিনার সফল কূটনীতির কারণে ছিটমহলবাসীর বন্দিজীবনের অবসান হয়। শেখ হাসিনাই সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তি করেন। সীমান্ত হত্যা বন্ধে উদ্যোগ নেন। এবার কুশিয়ারা নদীর পানির হিস্সা আদায় করেছেন। এনেছেন ট্রানজিট সুবিধা। অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করে দুই দেশের সম্পর্কে বিশ্বাস— আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বিশ্ব যখন এক মহামন্দার দিকে দ্রুত ধাবমান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে এ দেশের জনগণের জন্য আপৎকালীন খাদ্য ও জ্বালানির নিশ্চয়তা নিয়ে এলেন। এটা যে কত বড় অর্জন, কত বিশাল প্রাপ্তির তা যারা বোঝেন না, তারা আসলে জ্ঞানপাপী।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

জিয়া   এনেছিলেন   স্যুট পিস   এরশাদ গাভি   মইন ঘোড়া   বেগম জিয়া   পুশইন  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগে স্ত্রী-পুত্র, ভাই, শালাদের উৎপাত

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২২ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।

এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না। আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন। এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।

শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়। এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে। কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের মতো উন্মোচিত করেছে।

উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয় কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন, সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।

উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায় জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি। যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।

সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।

অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার। তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।

প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন। নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি। ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন। এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত, পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।

এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী। তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন। শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

 

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


আওয়ামী লীগ   রাজনীতি   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে

প্রকাশ: ১০:৩০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।

আকর্ষণহীন, উত্তেজনাহীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন শুরু হয়েছে উপজেলা নির্বাচনের প্রক্রিয়া। যথারীতি উপজেলা নির্বাচনেও বিরোধী দল নেই। শেষ মুহুর্তে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে বিএনপি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। স্বতন্ত্রভাবেও উপজেলা নির্বাচনে কেউ অংশ নিলে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে তিন ধাপে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। প্রথম ধাপের মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে দেখা গেল বিএনপির বেশ কিছু স্থানীয় পর্যায়ের নেতা উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু এর পর পরই এলো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তাদের বেশীর ভাগই মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলেই ধারণা করা যায়।। উপজেলা নির্বাচন এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের স্ত্রী, সন্তান, ভাই-ভাতিজা, শালা-মামাদের নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। আবারও আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই। মানুষের সামনে বিকল্প নেই। সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে কেন যাবে? বিএনপির এই ‘ভোট বর্জন’ কৌশল কি বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ারই অংশ? 

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। নির্বাচন বর্জন, অসহযোগ আন্দোলনও সফল হয়নি। শুধুমাত্র ভোটাররা নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়েছেন। যে নির্বাচনের ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত, সেখানে ভোট দিয়ে কি হবে-এরকম একটি মানসিকতা পল্লবিত হয় ভোটারদের মধ্যে। নির্বাচনের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের আগ্রহ নষ্ট হতে শুরু করে ২০১৪ সাল থেকেই। ঐ নির্বাচনও বিএনপি বর্জন করেছিল। সে সময় ১৫৩ টি আসনে জনগণ ভোটই দিতে পারেনি। বিএনপির বর্জন দেশের নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। ২০১৮’র নির্বাচনেও জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এবারও অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী ভোট দিতে যাননি। জনগণের সামনে কোন বিকল্প ছিলো না। অথচ ঐতিহ্যগত ভাবেই এই অঞ্চলের মানুষ নির্বাচন পাগল। ভোটকে তারা উৎসব মনে করে। সেই উৎসব এখন ভাঙ্গা হটের মতো। দেশের অর্ধেকের বেশী নাগরিক জীবনে ভোটই দেননি। একটি ভোট যে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগের হাতিয়ার, এটিই এদেশের মানুষ এখন ভুলতে বসেছে। এটি বিরাজনীতিকরণের সবচেয়ে বড় উপসর্গ। তাবৎ পন্ডিতরা জনগণের ভোটের অধিকার হরণের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে। বিএনপি তো প্রতিদিন মুখস্থ বুলীর মতো, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার নিয়ে আওয়ামী লীগকে গালাগালি করছে। কিন্তু গণতন্ত্র রক্ষা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির কি কোন দায়িত্ব নেই? বিএনপি কি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে? নাকি তৃতীয় পক্ষের কাছে ক্ষমতা তুলে দেয়ার মিশনে বিএনপি একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। সে প্রসঙ্গে এখন যেতে চাই না। 
এবছরের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি কি পেল? এবার অবাধ, সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উপর প্রচন্ড চাপ ছিলো। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ, হুশিয়ারির প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীনদের অবাধ, সুষ্টু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করতেই হতো। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর জনগণের কাছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিলো। পশ্চিমা দেশ গুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীর মনোযোগ দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছিল। সব কিছু মিলিয়ে এবার ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করা ছিলো অসম্ভব, অলীক কল্পনা। কিন্তু বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলো। জনগণ ভোটের মাঠে নানা চিন্তা, মত ও পথের প্রার্থী পেলেন না। বিএনপি বলতেই পারে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না- এটা নিশ্চিত হয়েই তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া বিএনপির এই অনুমান কে মানবে? বিএনপির নির্বাচন বর্জনে দলটির ক্ষতি হয়েছে। জনগণের ক্ষতি হয়েছে। লাভ হয়েছে সুশীল সমাজের। এই নির্বাচন জনগণের মধ্যে রাজনীতি ও নির্বাচন সম্পর্কে অনীহা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা দখলের পটভূমি তৈরীর কাজ হয়েছে আরো ত্বরান্বিত। ২০০৭ সালে এরকম রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি করেই সুশীলরা ক্ষমতা দখল করেছিল। 

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সংবিধান থেকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। তারপর থেকেই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে সুশীল সমাজ। এজন্য বিএনপির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলারও চেষ্টা করছেন সম্মানিত কিছু সুশীল। কিন্তু বিএনপি যদি রাজনীতির পথেই থাকতো, তাহলে নির্বাচনে যেতো। তাদের অভিযোগ জনগণের সামনে তুলে ধরতো। ভারতে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনেও বিরোধী দল বিজেপির বিরুদ্ধে দমন পীড়ন, নিপীড়নের অভিযোগ উত্থাপন করেছে। আম-আদমী পার্টির প্রধান নেতা কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রকে সাসপেন্ড করা হয়েছে পার্লামেন্ট থেকে। কংগ্রেস অভিযোগ করছে, বিজেপি নির্বাচনে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। কিন্তু তাই বলে কংগ্রেস, আম-আদমী পার্টি কিংবা তৃণমূল কি নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছে? না, বরং তারা এই অভিযোগ গুলোকেই নির্বাচনে ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছে, জনগণের কাছে। বিএনপির জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর যে হতাশা এবং অস্থিরতা তা দেখে আমার মতো অনেকেই মনে করছিল, দলটির ভুল ভাঙ্গবে, আত্ম উপলব্ধি হবে বিএনপির। ভুল শোধরানোর জন্য হলেও উপজেলা নির্বাচনে তারা অংশ নেবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে অংশগ্রহণের জন্য অনবদ্য এক সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি সিদ্ধান্ত নেয় যে, উপজেলা নির্বাচনে তারা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবে না। ফলে বিএনপিও এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ছাড়া অংশগ্রহণ করলে ভোটে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ তৈরী হতো। বিএনপি এবং তার গোপন এবং প্রকাশ্য মিত্ররা নির্বাচনে অংশ নিলে গণতন্ত্রের রক্তশূন্য শরীরে রাজনীতির রক্ত সঞ্চালিত হতো। উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ‘রাজনীতি’ কে আরো দুর্বল এবং মুমূর্ষু করলো। বিএনপি দেশে গণতন্ত্র চায় না। জনগণের অধিকারও চায়না। তারা শুধুমাত্র চায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে। এটা যেমন সত্য, তেমনি এর বিপরীতে প্রশ্ন উঠতেই পারে আওয়ামী লীগ কি মুক্ত, সুস্থ রাজনীতি চায়? আওয়ামী লীগ কি গণতন্ত্রের বিকাশ চায়? রাজনীতি হত্যার উৎসবে কি আওয়ামী লীগও সামিল নয়? 

টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কৌশল যেভাবে রপ্ত করেছে, ঠিক সেভাবে কি সংগঠনকে নীতি ও আদর্শের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে? আওয়ামী লীগের ভেতরে কি কোন রাজনীতি আছে? আদর্শ চর্চা আছে? প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেই কি নিজেকে হত্যা করছে না? সারা দেশে এখন আওয়ামী লীগ কয়েক ভাগে বিভক্ত। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন দলটি কোন্দল বিভক্তিকে সাংগঠনিক স্বীকৃতি দেয়। দেশে এখন কোন বিরোধী দল নেই। কোথাও সরকারের সমালোচনা নেই। সবাই সরকারকে ‘সাধু সাধু’ করে। আওয়ামী লীগ এখন একাধিক টীম হয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে খেলছে। কোন্দলকে দেয়া হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগ একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। বিএনপি-জামায়াতের দরকার নেই, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাই একে অন্যের চরিত্র হনন করছে, রক্ত ঝরাচ্ছে, খুন করছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। তারা এসব কোন্দলকে পাত্তা দিতেই রাজি নন। আওয়ামী লীগ নেতারা এখন আত্ম তুষ্টির সর্বোচ্চ চূড়ায়। কোন বাস্তবতা উপলব্ধি করে না। তাদের মতে, বিরোধী দল নেই, তাই একাধিক গ্রুপ থাকলে দল শক্তিশালী হবে। কর্মী বাড়বে। দলে ভারসাম্য থাকবে। একজন এমপি বলছিলেন, সবাই তো শেখ হাসিনার। যে জিতবে, সেই আপন। যে হারবে, সে জয়ীকে চাপে রাখবে। এরকম ‘চেক এ্যান্ড ব্যালেন্স’ কৌশল চলছে আওয়ামী লীগ। এটাই নাকি ভালো। কিন্তু এটি যে কি ভয়ংকর দর্শন তা বুঝতে আওয়ামী লীগকে আরেকটি দুঃসময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এর ফলে বিশ্বস্ত, ত্যাগী, দল ও নেতার জন্য সব কিছু উৎসর্গ করার মতো নেতা-কর্মী শূন্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ। নেতা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, নেতার জন্য জীবন দেবো-এই মনোভাব আওয়ামী লীগ থেকে উঠে গেছে বহু আগেই। আওয়ামী লীগে এখন ‘নব্য মোশতাক’ তৈরী হচ্ছে মাশরুমের মতো। নেতার সামনে স্তুতি, আড়ালে সমালোচনা-এটাই এখন আওয়ামী সংস্কৃতি। সব নেতা, পাতি নেতা জানেন, মূল নেতা তার বিকল্প রেখেছেন। তিনি দলে অপরিহার্য নন। কাল নেতার হাত সরে গেলেই সে ‘জিরো’। মূল নেতার তিনি একান্ত আপন নন। এই উপলব্ধি তাকে লোভী করে। দুর্নীতিবাজ করে। আদর্শহীন এক সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদে পরিণত করে। এই উপলব্ধির কারণেই সে সংগঠন ভালোবাসেনা, দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে না। আওয়ামী লীগের ক’জন নেতা এখন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন? কাজের চেয়ে মূল নেতার নেক নজরে থাকাটাই তাদের জন্য লাভজনক। এজন্য আওয়ামী লীগে চলছে আখের গোছানোর উৎসব। যে যেভাবে পারছে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। দলের ত্যাগী, পরীক্ষিতরা হয় বৈষয়িক হয়ে উঠেছেন। টাকা-কড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য মনোযোগী হচ্ছেন, অথবা দূরে, নিভৃতে চলে যাচ্ছেন অবহেলায়, হতাশায়। দল করো, পদ দখল করো, নির্বাচন করো, টাকা বানাও-আওয়ামী লীগের এই অধ্যায় সমাপ্ত প্রায়। এরপর শুরু হয়েছে, ছেলে, বউ, শালা, মামা, ভাগিনাদের প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিযোগিতা। যার এক ঝলক দেখা যাচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের নেতাদের একটা বড় অংশ এখন সাধারণ মানুষকে ‘মানুষ’ মনে করে না। তাদের পাত্তাও দেয় না। নেতারা চার পাশে রাখেন স্তাবকদের। কিছু একটা বলেই চাটুকারদের দিকে তাকান। তারা অনুগত ভৃত্যের মতো মাথা নাড়েন এবং হাসেন। 

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও আজ বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীদের মতো। এরা জনসম্পৃক্তহীন, উদ্বাস্তু। জনবিচ্ছিন্নতার শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে স্বৈরাচারের গর্ভে জন্ম নেয়া জাতীয় পার্টি। এই সুযোগে রাজনীতির মরা লাশ কুড়ে কুড়ে খাওয়ার অপেক্ষায় মৌলবাদী শকুন। তরুণদের মধ্যে রাজনীতির আগ্রহ নেই। আরো সোজা সাপটা বললে, তরুণরা রাজনীতিকে রীতিমতো ঘৃণা করে। একারণেই ‘রাজনীতি মুক্ত’ ক্যাম্পাসের দাবী এখন জনপ্রিয় হচ্ছে। যারা ছাত্র রাজনীতি করেন, তাদের মানুষ শ্রদ্ধার চোখে দেখেন না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র নেতাদের ভয় পান বটে, কিন্তু সম্মান করেন না। রাজনীতি এখন সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। এভাবেই সর্বত্র রাজনীতিকে কলংকিত করার উৎসব চলছে। রাজনীতি মানেই খারাপ-এটা প্রমাণের এক ভয়ংকর খেলা শুরু হয়েছে। যার মূল লক্ষ্য হলো গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো। আবার অগণতান্ত্রিক, অনির্বাচিত একটি সরকার প্রতিষ্ঠা। কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে ক্ষমতার চাবি তুলে দেয়া। তেমন পরিস্থিতির দিকেই কি ছুটছে বাংলাদেশ?     

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

পদ হারানোর ঝুঁকিতে আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য

প্রকাশ: ০২:০০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন। 

আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদকের টেলিআলাপের পরপরই ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডির ৩ নম্বর কার্যালয়ে যান এবং সেখানে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে তিনি যারা যারা নিকট আত্মীয় স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছে, তাদের তালিকা তৈরি করার জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দেন। 

একই সাথে তিনি এটাও জানান যে, যদি কেউ দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে নিজের নিকট আত্মীয় স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরকম একটি বক্তব্যের পরপরই আওয়ামী লীগের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। 

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যমে শুধু বিষয়টি অবহিত করেননি, তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকের পর অন্তত তিনজন আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং কথা বলে তাদের নিকট আত্মীয় স্বজনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। 

উল্লেখ্য, ড. আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই  হারুন অর রশীদ হীরা টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা থেকে এবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তার এই প্রার্থীতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। তারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতির সাথেও টেলিফোনে কথা হয়েছে বলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। তার সাথেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কথা বলেন এবং তাকেও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য পরামর্শ দেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গেও আলাপ করেছেন বলে জানা গেছে। তার ছেলে আতাহার ইসরাক শাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন। 

এই সমস্ত স্বজনরা যদি শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করে সে ক্ষেত্রে কী করা হবে? এ রকম প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন এবং এদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানা গেছে।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সংস্থা প্রেসিডিয়াম এবং এই প্রেসিডিয়ামের দুজন সদস্য যখন দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাদের নিজেদের আত্মীয় স্বজনকে প্রার্থী করেছেন তখন অন্যরা সেটা মানবে কীভাবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে সামনে এসেছেন। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে একটি দৃষ্টান্তমূলক অবস্থান গ্রহণ করতে চায় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেক হাসিনা বলেছেন, যারাই এ সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, এর আগেও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদেরকে দল থেকে পদ হারানো বা বহিষ্কারের নজির রয়েছে। আওয়ামী লীগের এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী যখন দল থেকে বহিষ্কৃত হন তখন তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। কাজেই শেষ পর্যন্ত যদি এই উপজেলা নির্বাচনে স্বজনদের অবস্থান নিয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না নেয়া হয় তাহলে এই দুই নেতা বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন।

আওয়ামী লীগ   উপজেলা নির্বাচন   ড. আব্দুর রাজ্জাক   শাহজাহান খান  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু: শেখ হাসিনাই হতে পারেন শান্তির দূত

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা। 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে শেখ হাসিনার বিশ্বশান্তির দর্শন জাতিসংঘ অনুমোদিত হয়েছে। এই বিশ্বশান্তি দর্শনের আলোকেই ইসরায়েল ইস্যুতে একটি রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে। 

বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে কঠোর এবং যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ গাজায় নিরীহ মানুষের ওপর অবিচার, হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সবসময় নিন্দা জানাচ্ছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার ঈদের শুভেচ্ছা ভাষণেও মধ্যপ্রাচ্যের মানবিক বিপর্যয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'মাদার অব হিউম্যানিটি' হিসেবে পরিচিত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্ব মানবতার কণ্ঠস্বর হয়েছেন। আর এ কারণেই বিশ্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। উদার মুসলিম দেশের নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে তিনি আলাদা একটি অবস্থানে রয়েছেন। বাংলাদেশ একদিকে যেমন ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা করে, অন্যদিকে ধর্মান্ধ মৌলবাদ এবং ধর্মের নামে উগ্র সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করে। আর এটি বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে। শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে বিশ্বের এমন একজন নেতা যিনি মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সংকট সমাধানের আলোকবর্তিকা হয়ে সামনে দাঁড়াতে পারেন। তার শান্তির মডেলকে সামনে রেখে যদি বিবদমান পক্ষগুলো আলোচনার টেবিলে বসে তাহলে ইসরায়েল ইস্যুতে শান্তি অসম্ভব নয়।

বিশ্বে যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা প্রায় অনেকেই বিতর্কিত এবং পক্ষপাতে দুষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্ব নেতার অবস্থানে থাকতে পারছেন না। চীন এই বিষয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবে পক্ষ করতে চায় না। তাছাড়া বিভাজিত বিশ্বে চীনের নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ মেনে নেবে না এটা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি রাশিয়া এখন নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে সমঝোতায় নেতৃত্ব দেওয়া পুতিনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এরদোয়ান ব্যাপারে ইসরায়েল সহ অন্যান্য দেশগুলোর একটি অবস্থান রয়েছে। তাছাড়া তুরস্ক এই বিতর্কে কতটুকু সহনীয় অবস্থায় থাকতে পারবে তা নিয়ে ব্যস্ত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এই অবস্থায় বিশ্বকে যুদ্ধাবস্থা থেকে সামাল দিতে পারেন একমাত্র শেখ হাসিনাই। তার শান্তির বার্তা যদি বিবাদমান পক্ষগুলো অনুধাবন করে তাহলে এই জটিল কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্ব শান্তি অসম্ভব নয়। আর এই শান্তির জন্য শেখ হাসিনাই হতে পারেন বিশ্ব নেতা। তার শান্তির দর্শন এবং তার শান্তির উদ্যোগের মাধ্যমে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি হতে পারে বিশ্ব।

ইরান-ইসরায়েল   শেখ হাসিনা   শান্তির দূত   জো বাইডেন   ইরান  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন যারা

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

পুরনোদেরকে অসম্মান না করে নতুনদের জন্য জায়গা করে দেওয়ার যে কৌশল সেটি রাজনীতিতে একটি শিক্ষণীয়। কিছু দিন আগেও যারা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাদের বদলে এখন আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন বেশ কিছু নেতা। যারা আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে ১১ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হওয়ার পর যাদেরকে বেশি পাদপ্রদীপে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন;

১. ড. হাছান মাহমুদ: ড. হাছান মাহমুদের পদোন্নতি ঘটেছে। এর আগে তিনি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী। এবার তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। স্পষ্টতই আওয়ামী লীগ সভাপতি তাকে পাদপ্রদীপে নিয়ে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও বটে। কোন কারণে সাধারণ সম্পাদকের পদ খালি হলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে। আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও ড. হাছান মাহমুদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই অনেকে মনে করছেন। আর এই সমস্ত বিবেচনা থেকেই আওয়ামী লীগে এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে সামনে আসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। 

২. জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন নিজ যোগ্যতায়। মাঠের নেতা হিসেবে তার দীর্ঘদিনের সুনাম ছিল। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। রাজনীতিতে চড়াই উতরাই এর মধ্য দিয়েই তিনি এগিয়ে গেছেন তার আদর্শের কারণে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার পর তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে গেছেন। তার পুরস্কার তিনি পেয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে উন্নীত হন। এবার নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের এই নেতা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এবং বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি এখন আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারক হয়ে উঠেছেন। 
৩. আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কর্মী বান্ধব হওয়ার কারণে তার অবস্থান আস্তে আস্তে দৃঢ় হচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের অন্যতম বাহাউদ্দিন নাছিম কর্মীদের কাছে আওয়ামী লীগ সংগঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত এবং সংগঠনের প্রশ্নে অকুতোভয় এবং একনিষ্ঠ এই নেতা মন্ত্রী না হয়েও আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন নীতি নির্ধারক হয়ে উঠছেন নিজ যোগ্যতায়। 

৪. আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক এর মতোই তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। কিন্তু তারপরও তিনি ভেঙে পড়েননি। সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। এবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থার প্রতিদান তিনি ভালো ভাবেই দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের একটি পালা বদল ঘটছে। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু কিংবা শেখ ফজলুল করিমের জায়গা আস্তে আস্তে এই সমস্ত নেতারা জায়গা করে নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের একটা পাইপলাইন তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। যেখানে পর্যায়ক্রমে নেতারা অপেক্ষমান অবস্থায় আছেন। নেতৃত্বের শূন্যতা আওয়ামী লীগে যেন না হয় সেজন্য একটি দূরদর্শী রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আব্দুর রহমান   জাহাঙ্গীর কবির নানক   ড. হাছান মাহমুদ   আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন