এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগের বিপন্ন বিস্ময়

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৫ অক্টোবর, ২০২২


Thumbnail আওয়ামী লীগের বিপন্ন বিস্ময়

গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচন ছিল নিস্তরঙ্গ। উত্তাপহীন। সাবেক ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। যথারীতি বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জাতীয় পার্টি। ভোটের দিন নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। কোথাও কোনো গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি। ১২ অক্টোবরের এ উপনির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের ভিতরে সিসিটিভি লাগানো হয়েছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনাররা নির্বাচন কমিশনে বসে ভোটের অবস্থা সিসিটিভি ফুটেজের বদৌলতে দেখছিলেন। দেখতে দেখতেই সিইসি যেন ‘চোর’ ধরছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে ৫০টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাদে বাকি প্রার্থীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। যেন পরিকল্পিত চিত্রনাট্য। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেন অধীর আগ্রহে এরকম একটি ‘শুভক্ষণের’ অপেক্ষা করছিলেন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বন্ধ করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদটি সাংবিধানিক। জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষা তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব। তাই ভোট তিনি বন্ধ করতেই পারেন। কিন্তু ভোট বন্ধ করার পেছনে অবশ্যই যুক্তিসংগত বাস্তব কারণ থাকতে হবে। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে আদৌ কি সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল? একটি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব রিটার্নিং অফিসারের। রিটার্নিং অফিসার কি ভোট বন্ধের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন? বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেন প্রিসাইডিং অফিসাররা। তারা কি লিখিত কিংবা মৌখিকভাবে বলেছিলেন ভোট কেন্দ্রের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই? গাইবান্ধায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা হয়েছিল? কেউ আহত বা নিহত হয়েছিল? না, রিটার্নিং অফিসার ভোট নিয়ে কোনো অভিযোগ পাননি। প্রিসাইডিং অফিসাররা কেউ বলেননি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাহলে কেন এবং কীসের ভিত্তিতে সিইসি ভোট বন্ধ করলেন? এর পেছনে কি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? গাইবান্ধায় ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৫। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই ৫০টি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে, তাহলে বাকি ৯৫টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ হলো কেন?

এর ফলে গাইবান্ধার একটি প্রায় গুরুত্বহীন উপনির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হলো। নির্বাচন কমিশন এ ভোট বন্ধের মধ্য দিয়ে দেশে-বিদেশে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিল। আওয়ামী লীগ যে-কোনো উপায়ে ভোটে জয়ী হতে চায়। ভোটে জিততে আওয়ামী লীগ এমন কারচুপি করে যে নির্বাচন কমিশন নিরুপায় হয়ে ভোট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। কিছুদিন ধরে বিএনপি, সুশীলসমাজ, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রায় একই সুরে কথা বলছে। বিএনপি বলছে, এ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এ দাবিতে তারা আন্দোলন জমিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। সুশীলরা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। অর্থাৎ বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেই হবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের তো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মাথাব্যথার অন্ত নেই। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত একাধিকবার নির্বাচন কমিশনে ছুটে গেছেন। কখনো একা, কখনো মিত্রদেশের কূটনীতিকদের নিয়ে। সিইসি তাদের আশ্বস্ত করেছেন। এসব বৈঠকের পর নতুন নির্বাচন কমিশন তাদের লক্ষ্য পরিবর্তন করে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নয় বরং নির্বাচন কমিশন কাউকে কেয়ার করে না। নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতহীন এটা প্রমাণে তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। নির্বাচনের দেড় বছর আগে নির্বাচন কমিশন ডিসি-এসপিদের নিয়ে বৈঠক করে ৮ অক্টোবর। এ সময় কেন ডিসি-এসপিদের নিয়ে বৈঠক? একজন ডিসি বা এসপি একটি জেলায় দু-তিন বছর থাকেন। এখন যারা বিভিন্ন জেলায় এসব পদে আছেন তাদের বেশির ভাগই আগামী নির্বাচনের আগে অন্যত্র বদলি হবেন। এ ধরনের বৈঠক সাধারণত করা হয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময়। নির্বাচন কমিশন বর্ষায় শীতের গান গাইল কেন? এ বৈঠকে আবার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের বিরুদ্ধে হইচই করলেন। একজন নির্বাচন কমিশনার তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ আনলে তাঁরা প্রতিবাদ করেন। একজন সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তি ঢালাওভাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ কীভাবে আনেন? হাততালি পাওয়ার জন্য? নাকি কাউকে খুশি করার জন্য? নির্বাচনকালীন (যে নির্বাচনই হোক না কেন) যারা দায়িত্ব পালন করেন তারা নির্বাচন কমিশনের অধীন। কেউ যদি সত্যি কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন তাহলে তা শৃঙ্খলাভঙ্গ। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো যিনি বা যারা এ ধরনের কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু তা না করে ঢালাওভাবে এ ধরনের অভিযোগের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে।


ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গাইবান্ধার উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশন বীরত্ব দেখাল। মেরুদণ্ড আছে এটা প্রমাণের চেষ্টা করল। নিজের মেরুদণ্ডের প্রমাণ করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন আসলে আওয়ামী লীগকেই ‘ভোট চোর’ বানিয়ে ফেলল। এর উদ্দেশ্য কী তা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। এর অনেক রকম ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ একে সাজানো নাটক বলছেন। তাঁদের মতে, এই গুরুত্বহীন নির্বাচনে ভোট বন্ধ করে কমিশন আসলে ফাঁদ পাতল। নির্বাচন কমিশন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দেখাল তারা কত ক্ষমতাবান। সরকারকে পরোয়া করে না। এক ঘোষণায় নির্বাচন বন্ধ করে দেয়। কাজেই এটা রকিব বা হুদা কমিশন নয়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলবে, বাঃ! বেশ তো। আউয়াল কমিশনের কোমর শক্ত। বিরোধী দলকে বোঝাবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার নেই। এ কমিশনের অধীনেই তোমরা নির্বাচনে যেতে পারো। আমরা তো আছি। গাইবান্ধার নির্বাচন দিয়ে আসলে বিএনপিসহ অন্য অবিশ্বাসী দলগুলোকে নির্বাচনের মাঠে আনার ফাঁদ পাতা হলো। তবে বিএনপির অতি চতুর বুদ্ধিজীবীদের এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতাদের কথাবার্তায় মনে হয়েছে আওয়ামী লীগ হতবাক, বিস্মিত, স্তম্ভিত। নির্বাচন কমিশন বিনা কারণে যেন আওয়ামী লীগের গালে কশে চড় মেরে দিয়েছে। ১৯৯১ সালে বিএনপি জমানায় মাগুরা, মিরপুর নির্বাচন হয়েছে। ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ভোট পাল্টে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাগুরা থেকে হেলিকপ্টারে পালিয়ে এসে বলেছেন, ‘আমি অসহায়’। বিচারপতি রউফের ওই এক কথায় বিএনপির যে ক্ষতি হয়েছিল, ২০২২ সালে গাইবান্ধায় ভোট বন্ধ করায় আওয়ামী লীগের ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ। কেউ কি জেনেশুনে নিজের ক্ষতি করে?

এ ঘটনার পর বিএনপি তাদের পক্ষে অনেক কথা বলার সুযোগ পাবে। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতারা যা বলা শুরু করেছেন। গাইবান্ধায় নির্বাচন কমিশনের অ্যাকশনের পর বিএনপির জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে এক বড় প্রমাণিক যুক্তি হাজির হলো। আওয়ামী লীগের দখলে প্রায় পুরো সংসদ। সেখানে একটি নির্বাচনে হার তারা হজম করতে চায় না। কারচুপি করে জয়ী হতে চায়। একটি আসনের জন্য যদি আওয়ামী লীগ এত মরিয়া এবং বেপরোয়া হয় তাহলে এ সরকারের অধীনে ৩০০ আসনে কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব? বিএনপি বলছে, দেখুন আওয়ামী লীগের একান্ত অনুগত নির্বাচন কমিশনও তাদের ভোট কারচুপির বাড়াবাড়ি সহ্য করতে পারছে না। অসহ্য হয়ে তারা নির্বাচন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ৩০০ আসনে তাহলে কী হবে? তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার। বিএনপি এও বলছে, আওয়ামী লীগ জোর করে ভোটে জিততে চায়, এটা গাইবান্ধায় প্রমাণিত হলো। ২০১৮ সালের পর বিভিন্নভাবে ইনিয়ে-বিনিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোটের অধিকার হরণের যে অভিযোগগুলো করা হচ্ছিল, গাইবান্ধায় ভোট বন্ধ করে নির্বাচন কমিশন যেন রায় তার ঘোষণা করল। জানিয়ে দিল সব সত্যি। ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ দুর্বৃত্ত।

কিন্তু রাজনীতি সরল অঙ্ক নয়। রাজনীতির জটিল হিসাব- নিকাশ অনেক সময় দুর্বোধ্য। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ‘নিরপেক্ষ’ তথাকথিত পরিচ্ছন্ন ব্যক্তির ওপর আস্থা রাখতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পদটি নিরপেক্ষ রাখতে। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে। এজন্যই সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রয়াত বিচারপতি সাহাবুদ্দীন কীভাবে পদে পদে আওয়ামী লীগকে বিব্রত করেছেন, নাজেহাল করেছেন ইতিহাস তার সাক্ষ্য দেবে। করিৎকর্মা ও দক্ষ ভেবে সাবেক আমলা এম এ সাঈদকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু ২০০১ সালের অক্টোবর নির্বাচনে তিনি যেভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিলেন তা ছিল অন্যায্য ও নজিরবিহীন। আওয়ামী লীগকে শায়েস্তা করাই যেন নিরপেক্ষতা প্রমাণের একমাত্র মাপকাঠি। ২০০১ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করা হয়েছিল আরেক সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানকে। আওয়ামী লীগ আশা করেছিল তিনি নির্মোহ ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু শপথ নেওয়ার আগেই তিনি বিএনপিপিন্থি বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের ১৩ মিনিটের মধ্যে ১৩ সচিবকে বদলি করে প্রমাণ করেছিলেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করাই নিরপেক্ষতা। ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনে মধুর লোভে আসা নব্য ব্যবসায়ীরাই আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিরুদ্ধে অসত্য নোংরা মামলা করেছেন। হঠাৎ আওয়ামী লীগার হওয়া প্রভাবশালী আইনজীবীরাই শেখ হাসিনার পক্ষে মামলা লড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেও বিস্ময়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল আওয়ামী লীগকে। দুর্নীতির দায়ে এক বিচারপতিকে অপসারণ করার উদ্যোগ নিয়েছিল ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সে সময় দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারপতিদের বঙ্গভবনে চায়ের নিমন্ত্রণ জানানো হতো। সেখানে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হতো, এ পদ্ধতিটি অগ্রহণযোগ্য, অন্যায়। কিন্তু বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে এরকমই এক চায়ের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে সততার ফেরিওয়ালা এক ক্ষমতাবান আইনজ্ঞের হস্তক্ষেপে বিচারপতি সিনহা বেঁচে যান। গোটা আদালতপাড়া জানত তিনি দুর্নীতিবাজ। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়। বিচারপতি সিনহা তো একটি সাংবিধানিক ক্যু করে ফেলেছিলেন প্রায়। বর্তমান সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে একটি রায়ও প্রস্তুত করে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অনেক জল ঘোলা করে সিনহা ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পায়। আওয়ামী লীগ বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের আচরণে হতবাক হয়েছিল। লতিফুর রহমান, এম এ সাঈদ আওয়ামী লীগকে বিস্মিত করেছিল। বিচারপতি সিনহা আওয়ামী লীগকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। সামনে এরকম কথিত ‘বিশ্বস্ত’ নীতিমানেরা আওয়ামী লীগের জন্য গোপনে ছুরি নিয়ে ঘুরছে। সুযোগ পেলেই মারবে। সেরকমই কি একটা বার্তা আওয়ামী লীগ পেল গাইবান্ধায়?

গত রবিবার বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম এক অনন্য, অসাধারণ, মহামূল্যবান কলাম লিখেছেন ‘আওয়ামী লীগ কি পারবে সব গুজব সামাল দিতে’ শিরোনামে। লেখার শুরুটাই ছিল এরকম- ‘আপনার পাশের মানুষটি কতটা ভয়াবহ একবারও কি ভেবেছেন।... ক্ষতি আপনজনরাই করে।’ গাইবান্ধার ঘটনার পর আওয়ামী লীগ নেতাদের বিপন্ন বিস্ময় দেখেশুনে বন্ধুবর নঈম নিজামের লেখাটি আবার পড়লাম। একটি লেখার বাস্তব উদাহরণ এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেল। অনেকেই আমার সঙ্গে দ্বিমত হবেন। বলবেন, তাহলে কি আওয়ামী লীগ অনুগত আস্থাভাজন একজনকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে চেয়েছিল? যিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করবেন? ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। আওয়ামী লীগ কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করেছিল নির্মোহ নিরপেক্ষতার প্রত্যাশা থেকে। কোনো চাপ, প্রলোভন, ভীতির কাছে তিনি নতিস্বীকার করবেন না সেই আশাবাদ থেকে। কিন্তু নতুন কমিশন আওয়ামীবিরোধী হয়ে নিজেকে শক্তিমান প্রমাণ করতে চাইছে। এখন দেখার বিষয় নির্বাচন কমিশন নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করার জন্য, পশ্চিমা দেশ, সুশীল এবং বিএনপির আস্থাভাজন ও প্রিয়পাত্র হতে আর কী কী চমক দেখায়। এদের আস্থা অর্জনের জন্য সিইসি আওয়ামী লীগের ওপর কতটা চড়াও হন। গাইবান্ধার উপনির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্যও একটা সতর্কবার্তা। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগে একঝাঁক আবর্জনার আবির্ভাব ঘটে। যে-কোনো উপায়ে জয়ী হতে গিয়ে এরা নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংসের এক ভয়ংকর খেলা শুরু করে। এ সময়ের কয়েকটি উপনির্বাচন চমৎকার হয়েছে। কিছু স্থানে মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার খায়েশ বেশ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল। একজন প্রথিতযশা চিকিৎসক মনোনয়ন পান। মনোনয়ন পেয়েই তিনি সব প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়ার প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করেন। কোথাও কোথাও জোর করে ভোটজয়ের মানসিকতাও দেখা যায়। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মানেই যেন লটারি জেতা। মনোনয়নের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ার এক ব্যাধি আওয়ামী লীগে সংক্রমিত হয়েছে। এখান থেকে সরে আসাটা যে জরুরি সে বার্তা পাওয়া গেল গাইবান্ধায়। নির্বাচনে জিততে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। এ চিন্তা কিছু নব্য আওয়ামী লীগার ভুলেই গিয়েছিল। গাইবান্ধা উপনির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য সতর্কবার্তা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যতই সতর্ক হোক, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আগ্রহী হোক না কেন নির্বাচন কমিশন যদি চায় সব ভণ্ডুুল করে দেবে। সেটা যে খুব সহজেই তারা পারে গাইবান্ধা তার এক ছোট্ট উদাহরণ। সামনের নির্বাচন ও উপনির্বাচনগুলোয় কমিশন যদি গাইবান্ধার মতো একের পর এক ঘটনা ঘটায় তাহলে কে কী করবে? নির্বাচন কমিশনই যদি বলে, আসলে এ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না। তখন তো সুশীলসমাজ আর পশ্চিমারা ঝাঁপিয়ে পড়বে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অনেক ঘটনা ঘটবে। তার ইঙ্গিত পাওয়া গেল গাইবান্ধায়। আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য আরও অনেক বিস্ময় অপেক্ষা করছে।

তবে গাইবান্ধার উপনির্বাচন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগের নৌকায় বিচিত্র সুবিধাবাদীরা ঠাঁই নিয়েছেন। এঁরা শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার হয়ে গেছেন। এঁদের কেউ কেউ যেন সরকারের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে গেছেন। মাঝেমধ্যে মনে হয় এঁরাই সর্বেসর্বা। আমলাদের মধ্যে অনেকে এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো আচরণ করেন। পুলিশে অতি উৎসাহীরা অযথাই বিরোধী দলকে উসকে দেন। মধ্যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে জামানত হারিয়ে এখন সরকারের নীতিনির্ধারক হয়ে গেছেন এমন ব্যক্তিদের প্রভাব দেখে অনেকেই হতবাক। এঁদের ডিগবাজি যে সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ বার্তাটা গাইবান্ধার ভোট বন্ধের মধ্য দিয়ে পাওয়া গেল। দেশে সংকট বাড়ছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ হচ্ছে। হঠাৎ বনে যাওয়া কেউকেটারা এখন সংকট সমাধানে দায়িত্ব নিচ্ছেন না। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার দায়িত্ব নিয়েছেন আমলারা। অর্থমন্ত্রীকে দেশে রেখে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বৈঠকে যাচ্ছেন আমলারা! সরকারের চারপাশে উড়ে এসে জুড়ে বসারাই খবরদারি করছেন। তাঁরাও কি সামনে ডিগবাজি দেবেন? এ প্রশ্নটা ক্রমে বড় হয়ে উঠছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, দুঃসময়ে মার খাওয়া, জেল খাটা, নির্যাতিত- নিপীড়িত আদর্শবান তৃণমূল কর্মীরা ছাড়া দুঃসময়ে কেউই ‘মাই ম্যান’ থাকে না। সুসময়ের অতিথি পাখিরা দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের জন্য কেবল প্রতারণার চমক দিয়ে উধাও হয়ে যায়।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন


বাংলাদেশ   আওয়ামী লীগ   গাইবান্ধা উপনির্বাচন   ইসি   ভোট কারচুপি  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু: শেখ হাসিনাই হতে পারেন শান্তির দূত

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা। 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে শেখ হাসিনার বিশ্বশান্তির দর্শন জাতিসংঘ অনুমোদিত হয়েছে। এই বিশ্বশান্তি দর্শনের আলোকেই ইসরায়েল ইস্যুতে একটি রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে। 

বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে কঠোর এবং যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ গাজায় নিরীহ মানুষের ওপর অবিচার, হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সবসময় নিন্দা জানাচ্ছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার ঈদের শুভেচ্ছা ভাষণেও মধ্যপ্রাচ্যের মানবিক বিপর্যয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'মাদার অব হিউম্যানিটি' হিসেবে পরিচিত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্ব মানবতার কণ্ঠস্বর হয়েছেন। আর এ কারণেই বিশ্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। উদার মুসলিম দেশের নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে তিনি আলাদা একটি অবস্থানে রয়েছেন। বাংলাদেশ একদিকে যেমন ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা করে, অন্যদিকে ধর্মান্ধ মৌলবাদ এবং ধর্মের নামে উগ্র সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করে। আর এটি বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে। শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে বিশ্বের এমন একজন নেতা যিনি মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সংকট সমাধানের আলোকবর্তিকা হয়ে সামনে দাঁড়াতে পারেন। তার শান্তির মডেলকে সামনে রেখে যদি বিবদমান পক্ষগুলো আলোচনার টেবিলে বসে তাহলে ইসরায়েল ইস্যুতে শান্তি অসম্ভব নয়।

বিশ্বে যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা প্রায় অনেকেই বিতর্কিত এবং পক্ষপাতে দুষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্ব নেতার অবস্থানে থাকতে পারছেন না। চীন এই বিষয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবে পক্ষ করতে চায় না। তাছাড়া বিভাজিত বিশ্বে চীনের নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ মেনে নেবে না এটা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি রাশিয়া এখন নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে সমঝোতায় নেতৃত্ব দেওয়া পুতিনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এরদোয়ান ব্যাপারে ইসরায়েল সহ অন্যান্য দেশগুলোর একটি অবস্থান রয়েছে। তাছাড়া তুরস্ক এই বিতর্কে কতটুকু সহনীয় অবস্থায় থাকতে পারবে তা নিয়ে ব্যস্ত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এই অবস্থায় বিশ্বকে যুদ্ধাবস্থা থেকে সামাল দিতে পারেন একমাত্র শেখ হাসিনাই। তার শান্তির বার্তা যদি বিবাদমান পক্ষগুলো অনুধাবন করে তাহলে এই জটিল কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্ব শান্তি অসম্ভব নয়। আর এই শান্তির জন্য শেখ হাসিনাই হতে পারেন বিশ্ব নেতা। তার শান্তির দর্শন এবং তার শান্তির উদ্যোগের মাধ্যমে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি হতে পারে বিশ্ব।

ইরান-ইসরায়েল   শেখ হাসিনা   শান্তির দূত   জো বাইডেন   ইরান  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন যারা

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

পুরনোদেরকে অসম্মান না করে নতুনদের জন্য জায়গা করে দেওয়ার যে কৌশল সেটি রাজনীতিতে একটি শিক্ষণীয়। কিছু দিন আগেও যারা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাদের বদলে এখন আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন বেশ কিছু নেতা। যারা আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে ১১ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হওয়ার পর যাদেরকে বেশি পাদপ্রদীপে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন;

১. ড. হাছান মাহমুদ: ড. হাছান মাহমুদের পদোন্নতি ঘটেছে। এর আগে তিনি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী। এবার তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। স্পষ্টতই আওয়ামী লীগ সভাপতি তাকে পাদপ্রদীপে নিয়ে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও বটে। কোন কারণে সাধারণ সম্পাদকের পদ খালি হলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে। আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও ড. হাছান মাহমুদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই অনেকে মনে করছেন। আর এই সমস্ত বিবেচনা থেকেই আওয়ামী লীগে এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে সামনে আসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। 

২. জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন নিজ যোগ্যতায়। মাঠের নেতা হিসেবে তার দীর্ঘদিনের সুনাম ছিল। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। রাজনীতিতে চড়াই উতরাই এর মধ্য দিয়েই তিনি এগিয়ে গেছেন তার আদর্শের কারণে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার পর তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে গেছেন। তার পুরস্কার তিনি পেয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে উন্নীত হন। এবার নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের এই নেতা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এবং বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি এখন আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারক হয়ে উঠেছেন। 
৩. আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কর্মী বান্ধব হওয়ার কারণে তার অবস্থান আস্তে আস্তে দৃঢ় হচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের অন্যতম বাহাউদ্দিন নাছিম কর্মীদের কাছে আওয়ামী লীগ সংগঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত এবং সংগঠনের প্রশ্নে অকুতোভয় এবং একনিষ্ঠ এই নেতা মন্ত্রী না হয়েও আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন নীতি নির্ধারক হয়ে উঠছেন নিজ যোগ্যতায়। 

৪. আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক এর মতোই তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। কিন্তু তারপরও তিনি ভেঙে পড়েননি। সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। এবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থার প্রতিদান তিনি ভালো ভাবেই দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের একটি পালা বদল ঘটছে। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু কিংবা শেখ ফজলুল করিমের জায়গা আস্তে আস্তে এই সমস্ত নেতারা জায়গা করে নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের একটা পাইপলাইন তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। যেখানে পর্যায়ক্রমে নেতারা অপেক্ষমান অবস্থায় আছেন। নেতৃত্বের শূন্যতা আওয়ামী লীগে যেন না হয় সেজন্য একটি দূরদর্শী রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আব্দুর রহমান   জাহাঙ্গীর কবির নানক   ড. হাছান মাহমুদ   আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

অন্ধকার ছয়দিন

প্রকাশ: ১০:৩০ পিএম, ১২ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের লোডশেডিং চলছে। গত বুধবার থেকে সংবাদপত্র বের হচ্ছে না। টানা ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধের বিশ্ব রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। না কোন প্রতিবাদে নয়, দাবী আদায়ের জন্য নয়। ছুটির ফাঁদে সংবাদপত্র বন্ধ আছে। সংবাদপত্রকে বলা হয় জরুরী সেবা। চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন জরুরী সেবা দেন, তেমনি সংবাদকর্মীদের কাজও হলো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেয়া। বিশেষ করে ছুটির সময় এটার প্রয়োজন আরো বেশী। এবার দেশে একটা দীর্ঘ ছুটি। এসময় সংবাদপত্র অনেক জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো, ছয়দিন যদি হাসপাতালে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বলতো ছয়দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে না। তাহলে কি হতো? আমিতো মনে করি, সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিষয়টিও তেমনি আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের এনিয়ে বিকার নেই।  

এবার বাংলাদেশ দু’টি বড় উৎসব কাছাকাছি সময় উদ্যাপন করছে। ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করতে না করতেই, আগামীকাল (রোববার) ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ। বাঙালীর সবচেয়ে বড় উৎসব। এদেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। তবে বাংলাদেশে ঈদ-উল-ফিতর কেবল মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব নয়। এ অঞ্চলে বসবাসরত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এই উৎসবে আনন্দ করে। সম্প্রীতির বাংলাদেশে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’-এই রীতি চলে এসেছে দীর্ঘদিন। ইদানিংকার মতো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গিতে কোন ধর্মীয় উৎসবকেই দেখা হতো না। ঈদের দিন অন্য ধর্মের বন্ধুরাও বাসায় আসতো সেমাই মিষ্টি এক সাথে খাওয়া হতো। আবার হিন্দুদের পূজাতেও আমরা যেতাম। অনেক মজা হতো। যতো দিন যাচ্ছে আমাদের ধর্মীয় উদার নৈতিক চেতনাকে গ্রাস করে ফেলছে ধর্মান্ধ সংকীর্ণতা। এখন ঈদ উৎসব যেন অনেকটাই ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলিত। রমজান মাস জুড়ে এক ধরনের কঠোর বিধি নিষেধ থাকে যা স্বতঃস্ফূর্ত না। আরোপিত এবং লোক দেখানো। এই আরোপিত বিধি নিষেধ নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন কিছু ‘বক ধার্মিক’। এদের কারণে গত তিন ঈদে পহেলা বৈশাখ নির্বাসিত ছিলো। পবিত্র রমজানের সাথে পহেলা বৈশাখের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু তারপরও অতি উৎসাহী কট্টরবাদীদের দাপটে শৃঙ্খলিত হয় পহেলা বৈশাখ। অথচ বাঙালী হিসেবে পহেলা বৈশাখীই আমাদের প্রথম এবং প্রধান সর্বজনীন উৎসব। বাংলা বর্ষ বরণ বাঙালীর প্রাণের উৎসব। এই উৎসব অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বেশ কয়েক বছর পর এবার পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হবে বাঁধাহীন ভাবে। বাঙালী জাতি বর্ষবরণ করবে মুক্ত ভাবে। এটা আমাদের জন্য বড় আনন্দের উপলক্ষ্য তো বটেই। কিন্তু এত বড় উৎসব হবে সংবাদপত্রহীন! কি অদ্ভুত! সংবাদপত্র কি দায়িত্বহীন মালিকানার শিকার?

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে। সম্প্রীতির বন্ধনে অটুট। কিছু মানুষ যতোই কট্টর মৌলবাদী হোক না কেন, সাধারণ মানুষ এখনও উগ্র পন্থাকে সমর্থন করে না। এজন্য একই সময়ে একাধিক ধর্মাবলম্বীদের উৎসব এদেশে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয়। এবার রমজানের কথায় ধরা যাক না কেন। এবার রমজানের মধ্যেই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ‘ইস্টার সানডে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোজার মধ্যেই দোল উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায় রং উৎসবে মেতেছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কোথাও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা বলেননি যে, রোজার জন্য ইস্টার সানডে করা যাবে না কিংবা দোল উৎসব বন্ধ রাখতে হবে। ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায় কিছু উপরের তলার মানুষ। যারা ধর্ম প্রতিপালনের চেয়ে লোক দেখানোতে বেশী আগ্রহী। এদের হাতে ধর্ম এবং সংস্কৃতি কোনটাই নয়। এবার ঈদের পরপরই পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হচ্ছে-এজন্য আমি আনন্দিত। বাংলাদেশের মানুষের সামনে এটি এক অনন্য সুযোগ। এর মাধ্যমে প্রমাণ হতে পারে আমরা বাঙালী, আমরা অসাম্প্রদায়িক, আমরা উদার। এদেশের মানুষ যেমন ঈদ উৎসব করলো তেমনি বাংলা নববর্ষকেও বরণ করবে। এই বর্ষ বরণের উৎসব যেন ঢেকে দিচ্ছে সংবাদপত্রে ছুটি। এবার ঈদের ছুটিতে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিকরা। ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে মোট ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধ রাখার এক অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংবাদপত্র মালিকরা। পহেলা বৈশাখে কেন সংবাদপত্র বন্ধ থাকবে? কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ‘ঈদ সংখ্যা’ সাময়িকী প্রকাশ করেছে। এটা ভালো উদ্যোগ। সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে এই সব সাময়িকী গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি আশা করেছিলাম এবার যেহেতু কাছাকাছি সময়ে ঈদ এবং বর্ষবরণ তাই সংবাদপত্রগুলো পহেলা বৈশাখে একটা ছোট সাময়িকী করবে। আলাদা আলাদা সাময়িকী না করুক ঈদ সংখ্যা এবং নববর্ষ সংখ্যা মিলিতভাবে করবে। কিন্তু কোথায় কি, এবার পহেলা বৈশাখে কোন সংবাদপত্রই বেরুচ্ছে না। শুধু পহেলা বৈশাখ কেন? বাংলাদেশে এখন চলছে অন্ধকার সময়। ১০ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল দেশে কোন সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না। এটি নজীর বিহীন। 

অবশ্য কেউ বলতে পারেন, এ যুগে সংবাদপত্র ৬ দিন না ৬ মাস বন্ধ থাকলো কার কি? এখন সংবাদের জন্য কে আর দৈনিক পত্রিকার অপেক্ষা করে? অনলাইন, টেলিভিশন, সোশাল মিডিয়ার এই যুগে কেউ আর খবরের জন্য সকালের সংবাদপত্রের অপেক্ষা করে না। সকাল বেলা এক কাপ চায়ের সাথে একটি সংবাদপত্র এখন উত্তেজনাপূর্ণ রোমাঞ্চ নয়। এসব ঘটনা প্রিন্ট মিডিয়ার অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠারই ইঙ্গিত। কিন্তু তারপরও প্রিন্ট মিডিয়া এখনও বিশ্বস্ততা এবং আস্থার প্রতীক। একজন পাঠক টেলিভিশনে বা অনলাইনে যতো সংবাদই দেখুক বা পড়ুক না কেন, দিনের শেষে তার নির্ভরতা ছাপা কাগজ। অনলাইনে কোন সংবাদ পাঠ করার পর তার সত্যতা যাচাই করে ছাপা কাগজে। তাই এখনও সংবাদ, সঠিক তথ্যের জন্য প্রধান নির্ভরতার জায়গা হলো সংবাদপত্র। তথ্যের এই বিশ্বস্ত উৎস বন্ধ আছে। টানা ছয়দিনের জন্য দেশের মানুষ সংবাদপত্র পাবে না। এই ছয়দিনকে বলা যায় অন্ধকার সময়। সংবাদপত্র বিহীন একটা দিন মানে অন্ধকার দিন-রাত্রি। গত ১০ এপ্রিল থেকে অন্ধকার ছয়দিন শুরু হয়েছে। আমরা যারা সেকেলে মানুষ। ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকা খুঁজি তাদের জন্য এই ছয়দিন দূর্বিসহ, অবর্ননীয়। 

প্রশ্ন হলো সংবাদপত্রের মালিকরা কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিলো? এই সিদ্ধান্ত দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে আরো সংকটে ফেলবে। বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের মালিকানা শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীদের দখলে। প্রধান সব সংবাদপত্রই কোন না কোন শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। বড় শিল্পপতিদের কাছে সংবাদপত্র হলো মর্যাদার প্রতীক। মুক্ত সাংবাদিকতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, পাঠকের কাছে দায় বদ্ধতা ইত্যাদি ব্যবসায়ীদের কাছে মূখ্য বিষয় নয়। সংবাদপত্র এখনকার মালিকদের কাছে ‘ক্ষমতা’ এবং ‘অস্ত্র’। এই ক্ষমতা দেখিয়ে তারা তাদের ব্যবসাকে সম্প্রসারিত করে। সুদৃঢ় করে। সরকার সংবাদপত্র মালিকদের ভয় পায়। ব্যাংক তো তটস্থ থাকে। তাই পত্রিকা থাকা মানে ব্যবসায়ীদের সব মুশকিল আসান। কর্পোরেট হাউসে এখন সাংবাদিকতা নেই, এক ঝাঁক ক্রীতদাস আছে। যাদের একমাত্র কাজ মালিকদের মনোরঞ্জন করা। এদের মধ্যে যিনি সম্পাদক তিনি হলেন সবচেয়ে বড় ক্লাউন। মালিকদের খুশী করাই তার একমাত্র কাজ। পেশাগত উৎকর্ষতা চুলোয় যাক। যিনি মালিকের স্বার্থ যতো নিবিড়ভাবে সুরক্ষিত করেন তিনি ততো বড় সম্পাদক। এই অস্ত্র প্রয়োগ করে মালিকরা প্রতিপক্ষকে ভয় দেখায়। যারা তাদের কথা শোনে না তাদের এই অস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করে। সংবাদপত্রের মালিকানা ব্যবসায়ীদের কাছে একধরনের বর্মের মতো। নিজেদের অপকর্ম, স্বেচ্ছাচারিতা জায়েজ করার জন্য সংবাদপত্রকে তারা ব্যবহার করে। সংবাদপত্রের মালিক হবার কারণে কেউ তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করেনি। এভাবেই চলছে সংবাদপত্র শিল্প। সংবাদপত্র এখন কর্পোরেট ক্রীতদাস। তাই মালিকরা সংবাদপত্র দুই দিন বন্ধ থাকলো না ছয়দিন বন্ধ থাকলো তা নিয়ে ভাবেন না। তারা তাদের ব্যবসা সুরক্ষা পত্রিকা দিয়ে কতটা হলো তা নিয়েই ব্যস্ত। সংবাদপত্র মালিকরা পাঠকের কাছে জবাবদিহিতার বিশ্বাসী নন। তারা দেখেন এই সংবাদপত্র তাদের স্বার্থ কতটা রক্ষা করতে পারছে। ছাপা কাগজ একদিন বের না হলে অনেক সংবাদপত্রের অনেক টাকা সাশ্রয়। এসব বিবেচনা করেই মালিকরা মনে করেছেন পত্রিকা যদি কয়েকটা দিন বন্ধই থাকে, কি এমন ক্ষতি। কিন্তু এই ছয়দিন সংবাদপত্র বন্ধ যে এক ভয়ংকর বার্তা দিলো তাকি মালিকরা অনুধাবন করেন? সংবাদপত্র ছাড়াও যে দেশ চলে, এমন এক ঘোষণাই কি দিলেন না মালিকরা। ভবিষ্যতে এর মূল্য দিতে হবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেই। 

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

সরকারের তিন মাস: সেরা অর্জন

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রথম তিন মাস বর্তমান সরকারের জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করার ফলে এই নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়, নির্বাচনের পর কী ধরনের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সেটি ছিল সকলের কাছে একটি দেখার বিষয়। তবে সরকার প্রথম তিন মাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকট গুলোকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত সরকারের চেষ্টা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোন রকম অভিযোগ নেই। 

সরকার এই প্রথম তিন মাসে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে;

১. নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা আদায়: ৭ জানুয়ারি নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এটি সরকারের একটি প্রধান অর্জন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনকে কীভাবে দেখবেন? নির্বাচনের পরে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের নানা রকম আগাম পূর্বাভাস ছিল, সংশয় ছিল। কিন্তু এই সংশয় উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সফলতা অর্জন করেছে। নির্বাচনের পর প্রায় সব দেশই নতুন সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে। এটি সরকারের জন্য একটি বিরাট অর্জন। এই সরকার যে এত তাড়াতাড়ি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে এটা অনেকেই ভাবতে পারেননি। 

২ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর করার জন্যই সাঁড়াশি উদ্যোগ: নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কিছু বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে একাধিক শিশুর মৃত্যু, অবৈধ হাসপাতালে রোগীদের ভুল চিকিৎসার মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তার সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে হাসপাতালগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। অবৈধ বেশ কিছু ক্লিনিক হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে দুর্নীতির মধ্যে ডুবে ছিল তা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মানুষ সরকারের এই অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছে এবং আশা করছে যে, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধের ক্ষেত্রে তার অবস্থান অটুট রাখবেন এটাই সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে।

৩. সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি: এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি বটে, তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকার সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রির যে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে ভ্যান রমজান মাসে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিতরণ ব্যাপকভাবে ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকাগুলোর মানুষকে সুবিধা দিয়েছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে মিলে দেশের ৩৫ টি জেলায় রাজনীতিবিদ, প্রশাসন নিজস্ব উদ্যোগে সুলভ মূল্যে রমজানের পণ্য বিতরণ করার মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তরমুজ নিয়ে যখন কিছু মধ্যসত্ত্বভোগী লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছে তখন কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকের বাজারের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে তরমুজ বিক্রি করে একটি নজির স্থাপন করেছে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় শিক্ষা যে, বিকল্প চ্যানেলের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পণ্য দিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তা খুব উপকার দেয়।

৪. ব্যাংক একীভূত করা: ব্যাংক একীভূতকরণ উদ্যোগটি নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরেই করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, যে সমস্ত দুর্বল ব্যাংক আছে, সেই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সকল ব্যাংক একীভূত করবে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় সীমা বেঁধে দিয়েছে। এই নির্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যে পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রাজশাহী, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সহ একাধিক ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। এর ফলে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে সকলে প্রত্যাশা করেন এ সমস্ত ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া বানানোর ক্ষেত্রে যারা দায়ী তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে ছাড় দেওয়ার জন্য যেন ব্যাংক একীভূত না হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

৫. অবৈধ দালান-কোঠার বিরুদ্ধে অভিযান: বিশেষ করে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রণালয় অবৈধ দালান এবং অনুমোদিত ভবনের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারের নতুন গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন। তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। বিশেষ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা। এখন পর্যন্ত যে অভিযান চলছে সেই অভিযান সরকারের সফল উদ্যোগের একটি বলেই অনেকে মনে করছেন। এছাড়াও সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ভালো কাজ করছে, যে কাজগুলো ফলাফল পেতে সাধারণ মানুষকে অপেক্ষা করতে হবে। 


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

তোফায়েল আহমেদ: রাজনীতিতে অস্তমিত সূর্য

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ০৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

তোফায়েল আহমেদ কি রাজনীতিতে এক অস্তমিত সূর্য? তিনি কি নিভে যাচ্ছেন? বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তিনি কি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নগুলো এখন খুব বড় করে সামনে এসেছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যারা তোফায়েল আহমেদকে দেখেছেন তারা আগের তোফায়েল আহমেদের ছায়াকেও দেখতে পারেননি। যে তোফায়েল আহমেদ ছিল সরব, যার ভরাট কণ্ঠস্বরে জাতীয় সংসদ প্রকম্পিত হত, যিনি সবসময় সবাইকে চমকে দিতেন বিভিন্ন দিন তারিখের হিসেব মুখস্থ বলে দিয়ে, যার সবসময় শত শত টেলিফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা মুখস্থ থাকত, যা স্মৃতিশক্তি নিয়ে সকলে প্রশংসা করত, রাজনীতিতে যিনি একজন যুবরাজের মত পদচারণা করতেন, নানা রকম বিতর্কের পরও তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন সেই তোফায়েল আহমেদ এখন কোথায়? 

এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তোফায়েল আহমেদ জয়ী হয়েছেন। সংসদে তাকে দেখা যায় কদাচিৎ। তবে তিনি এখন শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকটাই বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন। বিশেষ করে একাধিক অসুস্থতা তাকে এখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটা চলা করতে দেয় না। তার কণ্ঠস্বরের তেজও কেড়ে নিয়েছে তার একের পর এক অসুখ। 

তোফায়েল আহমেদের এক পাশ অনেকটাই অবশ হয়ে গেছে। আর এ কারণেই তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তবে এখনও তিনি লেখালেখি করেন এবং নানারকম রাজনৈতিক আলোচনায় তাকে আগ্রহীও দেখা যায়। তবে আগের যে তোফায়েল আহমেদ, যিনি যে কোন রাজনৈতিক আড্ডা এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মধ্যমণি হিসেবে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন, যার দিকে তাকিয়ে থাকত লক্ষ লক্ষ জনতা সেই তোফায়েল আহমেদ এখন নেই। 

অনেকেই মনে করেন যে, রাজনৈতিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিক ভাবেই তোফায়েল আহমেদ বেশি বিপর্যস্ত। বিশেষ করে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরুর প্রেক্ষাপটেই রাজনীতিতে তিনি নিজেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন। 

গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শোক দিবসের স্মরণে এক লেখায় কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু যখন আক্রান্ত হন, ৩২ নম্বর যখন খুনিরা ঘিরে ফেলে তখন তিনি বেশ কয়েক জনকে ফোন করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন তোফায়েল আহমেদে। হতাশাজনক হলেও তোফায়েল আহমেদ সেই টেলিফোনের পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। এই লেখাটির পর আওয়ামী লীগের মধ্যে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। অনেকে এটা নিয়ে হৈ চৈ করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তোফায়েল আহমেদ এর প্রতিবাদও করতে পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগ সভাপতিকে যারা চেনেন তারা সকলেই জানেন যে, বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে তিনি তথ্য প্রমাণ ছাড়া কোন বক্তব্য দেন না। এই ঘটনার পর আকস্মিকভাবে তোফায়েল আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অনেকে মনে করেছিলেন তিনি হয়ত নির্বাচন করবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন অসুস্থ শরীর নিয়ে। 

এখন তিনি জাতীয় সংসদে আসেন বটে তবে আগের মত সরব উপস্থিতি তার নেই। হয়ত রাজনীতির জীবনে তিনি শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। তবে রাজনীতির ইতিহাসে তোফায়েল আহমেদ চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তার রাজনৈতিক জীবনের দুটি ভাগ সবসময় আলোচিত থাকবে। একটি হল স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর একান্ত বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে তরুণ তুখোড় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ। আরেকটি হল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে তার বিতর্কিত এবং রহস্যময় ভূমিকা। কোন তোফায়েল আহমেদ ইতিহাসে বেশি আলোচিত থাকবেন তা সময়ই বলে দেবে।



তোফায়েল আহমেদ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন