গাইবান্ধা-৫
আসনের নির্বাচন ছিল নিস্তরঙ্গ। উত্তাপহীন। সাবেক ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি
মিয়ার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। যথারীতি বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগের
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জাতীয় পার্টি। ভোটের দিন নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ।
কোথাও কোনো গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি। ১২ অক্টোবরের এ উপনির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের ভিতরে
সিসিটিভি লাগানো হয়েছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনাররা নির্বাচন কমিশনে
বসে ভোটের অবস্থা সিসিটিভি ফুটেজের বদৌলতে দেখছিলেন। দেখতে দেখতেই সিইসি যেন ‘চোর’
ধরছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে ৫০টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাদে বাকি প্রার্থীরা ভোট
বর্জনের ঘোষণা দেন। যেন পরিকল্পিত চিত্রনাট্য। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেন অধীর আগ্রহে
এরকম একটি ‘শুভক্ষণের’ অপেক্ষা করছিলেন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বন্ধ করেন
কাজী হাবিবুল আউয়াল। গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে
গেছে।’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদটি সাংবিধানিক। জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষা তাঁর
সাংবিধানিক দায়িত্ব। তাই ভোট তিনি বন্ধ করতেই পারেন। কিন্তু ভোট বন্ধ করার পেছনে অবশ্যই
যুক্তিসংগত বাস্তব কারণ থাকতে হবে। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে আদৌ কি সেরকম পরিস্থিতি
তৈরি হয়েছিল? একটি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব রিটার্নিং অফিসারের। রিটার্নিং অফিসার
কি ভোট বন্ধের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন? বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব
পালন করেন প্রিসাইডিং অফিসাররা। তারা কি লিখিত কিংবা মৌখিকভাবে বলেছিলেন ভোট কেন্দ্রের
ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই? গাইবান্ধায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা হয়েছিল? কেউ আহত বা
নিহত হয়েছিল? না, রিটার্নিং অফিসার ভোট নিয়ে কোনো অভিযোগ পাননি। প্রিসাইডিং অফিসাররা
কেউ বলেননি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাহলে কেন এবং কীসের ভিত্তিতে সিইসি ভোট বন্ধ
করলেন? এর পেছনে কি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? গাইবান্ধায় ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৫।
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই ৫০টি কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে, তাহলে বাকি ৯৫টি কেন্দ্রের
ভোট বন্ধ হলো কেন?
এর ফলে গাইবান্ধার
একটি প্রায় গুরুত্বহীন উপনির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হলো। নির্বাচন
কমিশন এ ভোট বন্ধের মধ্য দিয়ে দেশে-বিদেশে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিল। আওয়ামী লীগ যে-কোনো
উপায়ে ভোটে জয়ী হতে চায়। ভোটে জিততে আওয়ামী লীগ এমন কারচুপি করে যে নির্বাচন কমিশন
নিরুপায় হয়ে ভোট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। কিছুদিন ধরে বিএনপি, সুশীলসমাজ, যুক্তরাষ্ট্রসহ
কয়েকটি পশ্চিমা দেশ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রায় একই সুরে কথা বলছে। বিএনপি
বলছে, এ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এ দাবিতে তারা আন্দোলন
জমিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। সুশীলরা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে।
অর্থাৎ বিএনপিকে নির্বাচনে আনতেই হবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের তো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে
মাথাব্যথার অন্ত নেই। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত একাধিকবার নির্বাচন কমিশনে
ছুটে গেছেন। কখনো একা, কখনো মিত্রদেশের কূটনীতিকদের নিয়ে। সিইসি তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
এসব বৈঠকের পর নতুন নির্বাচন কমিশন তাদের লক্ষ্য পরিবর্তন করে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ
নির্বাচন নয় বরং নির্বাচন কমিশন কাউকে কেয়ার করে না। নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতহীন এটা
প্রমাণে তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। নির্বাচনের দেড় বছর আগে নির্বাচন কমিশন ডিসি-এসপিদের নিয়ে
বৈঠক করে ৮ অক্টোবর। এ সময় কেন ডিসি-এসপিদের নিয়ে বৈঠক? একজন ডিসি বা এসপি একটি জেলায়
দু-তিন বছর থাকেন। এখন যারা বিভিন্ন জেলায় এসব পদে আছেন তাদের বেশির ভাগই আগামী নির্বাচনের
আগে অন্যত্র বদলি হবেন। এ ধরনের বৈঠক সাধারণত করা হয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময়।
নির্বাচন কমিশন বর্ষায় শীতের গান গাইল কেন? এ বৈঠকে আবার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের
বিরুদ্ধে হইচই করলেন। একজন নির্বাচন কমিশনার তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ আনলে
তাঁরা প্রতিবাদ করেন। একজন সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তি ঢালাওভাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের
বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ কীভাবে আনেন? হাততালি পাওয়ার জন্য? নাকি কাউকে খুশি করার
জন্য? নির্বাচনকালীন (যে নির্বাচনই হোক না কেন) যারা দায়িত্ব পালন করেন তারা নির্বাচন
কমিশনের অধীন। কেউ যদি সত্যি কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন তাহলে তা শৃঙ্খলাভঙ্গ। নির্বাচন
কমিশনের দায়িত্ব হলো যিনি বা যারা এ ধরনের কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
কিন্তু তা না করে ঢালাওভাবে এ ধরনের অভিযোগের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে।
ওই ঘটনার রেশ
কাটতে না কাটতেই গাইবান্ধার উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশন বীরত্ব দেখাল। মেরুদণ্ড আছে
এটা প্রমাণের চেষ্টা করল। নিজের মেরুদণ্ডের প্রমাণ করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন আসলে আওয়ামী
লীগকেই ‘ভোট চোর’ বানিয়ে ফেলল। এর উদ্দেশ্য কী তা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। এর অনেক রকম ব্যাখ্যা
দেওয়া যায়। বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ একে সাজানো নাটক বলছেন। তাঁদের মতে,
এই গুরুত্বহীন নির্বাচনে ভোট বন্ধ করে কমিশন আসলে ফাঁদ পাতল। নির্বাচন কমিশন জাতীয়
ও আন্তর্জাতিকভাবে দেখাল তারা কত ক্ষমতাবান। সরকারকে পরোয়া করে না। এক ঘোষণায় নির্বাচন
বন্ধ করে দেয়। কাজেই এটা রকিব বা হুদা কমিশন নয়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন
বলবে, বাঃ! বেশ তো। আউয়াল কমিশনের কোমর শক্ত। বিরোধী দলকে বোঝাবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার
দরকার নেই। এ কমিশনের অধীনেই তোমরা নির্বাচনে যেতে পারো। আমরা তো আছি। গাইবান্ধার নির্বাচন
দিয়ে আসলে বিএনপিসহ অন্য অবিশ্বাসী দলগুলোকে নির্বাচনের মাঠে আনার ফাঁদ পাতা হলো। তবে
বিএনপির অতি চতুর বুদ্ধিজীবীদের এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের
নেতাদের কথাবার্তায় মনে হয়েছে আওয়ামী লীগ হতবাক, বিস্মিত, স্তম্ভিত। নির্বাচন কমিশন
বিনা কারণে যেন আওয়ামী লীগের গালে কশে চড় মেরে দিয়েছে। ১৯৯১ সালে বিএনপি জমানায় মাগুরা,
মিরপুর নির্বাচন হয়েছে। ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ভোট পাল্টে দেওয়ার মতো
ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাগুরা থেকে হেলিকপ্টারে পালিয়ে
এসে বলেছেন, ‘আমি অসহায়’। বিচারপতি রউফের ওই এক কথায় বিএনপির যে ক্ষতি হয়েছিল, ২০২২
সালে গাইবান্ধায় ভোট বন্ধ করায় আওয়ামী লীগের ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ। কেউ কি জেনেশুনে
নিজের ক্ষতি করে?
এ ঘটনার পর
বিএনপি তাদের পক্ষে অনেক কথা বলার সুযোগ পাবে। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতারা যা বলা শুরু
করেছেন। গাইবান্ধায় নির্বাচন কমিশনের অ্যাকশনের পর বিএনপির জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
পক্ষে এক বড় প্রমাণিক যুক্তি হাজির হলো। আওয়ামী লীগের দখলে প্রায় পুরো সংসদ। সেখানে
একটি নির্বাচনে হার তারা হজম করতে চায় না। কারচুপি করে জয়ী হতে চায়। একটি আসনের জন্য
যদি আওয়ামী লীগ এত মরিয়া এবং বেপরোয়া হয় তাহলে এ সরকারের অধীনে ৩০০ আসনে কীভাবে নিরপেক্ষ
নির্বাচন সম্ভব? বিএনপি বলছে, দেখুন আওয়ামী লীগের একান্ত অনুগত নির্বাচন কমিশনও তাদের
ভোট কারচুপির বাড়াবাড়ি সহ্য করতে পারছে না। অসহ্য হয়ে তারা নির্বাচন বন্ধ করতে বাধ্য
হয়েছে। ৩০০ আসনে তাহলে কী হবে? তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার। বিএনপি এও বলছে, আওয়ামী
লীগ জোর করে ভোটে জিততে চায়, এটা গাইবান্ধায় প্রমাণিত হলো। ২০১৮ সালের পর বিভিন্নভাবে
ইনিয়ে-বিনিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোটের অধিকার হরণের যে অভিযোগগুলো করা হচ্ছিল,
গাইবান্ধায় ভোট বন্ধ করে নির্বাচন কমিশন যেন রায় তার ঘোষণা করল। জানিয়ে দিল সব সত্যি।
ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ দুর্বৃত্ত।
কিন্তু রাজনীতি
সরল অঙ্ক নয়। রাজনীতির জটিল হিসাব- নিকাশ অনেক সময় দুর্বোধ্য। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে
আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ‘নিরপেক্ষ’ তথাকথিত পরিচ্ছন্ন ব্যক্তির ওপর আস্থা রাখতে গিয়ে প্রতারিত
হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায়
আসে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পদটি নিরপেক্ষ রাখতে।
একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে। এজন্যই সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের
কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রয়াত বিচারপতি সাহাবুদ্দীন
কীভাবে পদে পদে আওয়ামী লীগকে বিব্রত করেছেন, নাজেহাল করেছেন ইতিহাস তার সাক্ষ্য দেবে।
করিৎকর্মা ও দক্ষ ভেবে সাবেক আমলা এম এ সাঈদকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করেছিল আওয়ামী
লীগ। কিন্তু ২০০১ সালের অক্টোবর নির্বাচনে তিনি যেভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে
সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিলেন তা ছিল অন্যায্য ও নজিরবিহীন। আওয়ামী লীগকে শায়েস্তা করাই
যেন নিরপেক্ষতা প্রমাণের একমাত্র মাপকাঠি। ২০০১ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক
সরকারপ্রধান করা হয়েছিল আরেক সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানকে। আওয়ামী লীগ আশা
করেছিল তিনি নির্মোহ ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু শপথ নেওয়ার আগেই তিনি
বিএনপিপিন্থি বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের ১৩ মিনিটের মধ্যে
১৩ সচিবকে বদলি করে প্রমাণ করেছিলেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করাই নিরপেক্ষতা। ২০০৭
সালে ওয়ান-ইলেভেনে মধুর লোভে আসা নব্য ব্যবসায়ীরাই আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিরুদ্ধে
অসত্য নোংরা মামলা করেছেন। হঠাৎ আওয়ামী লীগার হওয়া প্রভাবশালী আইনজীবীরাই শেখ হাসিনার
পক্ষে মামলা লড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেও বিস্ময়ের
মুখোমুখি হতে হয়েছিল আওয়ামী লীগকে। দুর্নীতির দায়ে এক বিচারপতিকে অপসারণ করার উদ্যোগ
নিয়েছিল ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সে সময় দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারপতিদের
বঙ্গভবনে চায়ের নিমন্ত্রণ জানানো হতো। সেখানে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হতো, এ পদ্ধতিটি
অগ্রহণযোগ্য, অন্যায়। কিন্তু বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে এরকমই এক চায়ের দাওয়াত
দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে সততার ফেরিওয়ালা এক ক্ষমতাবান আইনজ্ঞের হস্তক্ষেপে বিচারপতি
সিনহা বেঁচে যান। গোটা আদালতপাড়া জানত তিনি দুর্নীতিবাজ। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকেই
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়। বিচারপতি সিনহা তো একটি সাংবিধানিক ক্যু করে ফেলেছিলেন
প্রায়। বর্তমান সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে একটি রায়ও প্রস্তুত করে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অনেক জল ঘোলা করে সিনহা ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পায়। আওয়ামী লীগ
বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের আচরণে হতবাক হয়েছিল। লতিফুর রহমান, এম এ সাঈদ আওয়ামী লীগকে
বিস্মিত করেছিল। বিচারপতি সিনহা আওয়ামী লীগকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। সামনে এরকম কথিত
‘বিশ্বস্ত’ নীতিমানেরা আওয়ামী লীগের জন্য গোপনে ছুরি নিয়ে ঘুরছে। সুযোগ পেলেই মারবে।
সেরকমই কি একটা বার্তা আওয়ামী লীগ পেল গাইবান্ধায়?
গত রবিবার বাংলাদেশ
প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম এক অনন্য, অসাধারণ, মহামূল্যবান কলাম লিখেছেন ‘আওয়ামী লীগ
কি পারবে সব গুজব সামাল দিতে’ শিরোনামে। লেখার শুরুটাই ছিল এরকম- ‘আপনার পাশের মানুষটি
কতটা ভয়াবহ একবারও কি ভেবেছেন।... ক্ষতি আপনজনরাই করে।’ গাইবান্ধার ঘটনার পর আওয়ামী
লীগ নেতাদের বিপন্ন বিস্ময় দেখেশুনে বন্ধুবর নঈম নিজামের লেখাটি আবার পড়লাম। একটি লেখার
বাস্তব উদাহরণ এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেল। অনেকেই আমার সঙ্গে দ্বিমত হবেন। বলবেন, তাহলে কি
আওয়ামী লীগ অনুগত আস্থাভাজন একজনকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে চেয়েছিল? যিনি
আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করবেন? ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। আওয়ামী লীগ কাজী হাবিবুল আউয়ালকে
প্রধান নির্বাচন কমিশনার করেছিল নির্মোহ নিরপেক্ষতার প্রত্যাশা থেকে। কোনো চাপ, প্রলোভন,
ভীতির কাছে তিনি নতিস্বীকার করবেন না সেই আশাবাদ থেকে। কিন্তু নতুন কমিশন আওয়ামীবিরোধী
হয়ে নিজেকে শক্তিমান প্রমাণ করতে চাইছে। এখন দেখার বিষয় নির্বাচন কমিশন নিজেকে নিরপেক্ষ
প্রমাণ করার জন্য, পশ্চিমা দেশ, সুশীল এবং বিএনপির আস্থাভাজন ও প্রিয়পাত্র হতে আর কী
কী চমক দেখায়। এদের আস্থা অর্জনের জন্য সিইসি আওয়ামী লীগের ওপর কতটা চড়াও হন। গাইবান্ধার
উপনির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্যও একটা সতর্কবার্তা। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী
লীগে একঝাঁক আবর্জনার আবির্ভাব ঘটে। যে-কোনো উপায়ে জয়ী হতে গিয়ে এরা নির্বাচনব্যবস্থা
ধ্বংসের এক ভয়ংকর খেলা শুরু করে। এ সময়ের কয়েকটি উপনির্বাচন চমৎকার হয়েছে। কিছু স্থানে
মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার খায়েশ বেশ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল।
একজন প্রথিতযশা চিকিৎসক মনোনয়ন পান। মনোনয়ন পেয়েই তিনি সব প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়ার
প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করেন। কোথাও কোথাও জোর করে ভোটজয়ের মানসিকতাও দেখা যায়।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মানেই যেন লটারি জেতা। মনোনয়নের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ার এক
ব্যাধি আওয়ামী লীগে সংক্রমিত হয়েছে। এখান থেকে সরে আসাটা যে জরুরি সে বার্তা পাওয়া
গেল গাইবান্ধায়। নির্বাচনে জিততে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। এ চিন্তা কিছু নব্য আওয়ামী
লীগার ভুলেই গিয়েছিল। গাইবান্ধা উপনির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য সতর্কবার্তা। কিন্তু
আওয়ামী লীগ যতই সতর্ক হোক, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আগ্রহী হোক না কেন নির্বাচন কমিশন
যদি চায় সব ভণ্ডুুল করে দেবে। সেটা যে খুব সহজেই তারা পারে গাইবান্ধা তার এক ছোট্ট
উদাহরণ। সামনের নির্বাচন ও উপনির্বাচনগুলোয় কমিশন যদি গাইবান্ধার মতো একের পর এক ঘটনা
ঘটায় তাহলে কে কী করবে? নির্বাচন কমিশনই যদি বলে, আসলে এ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন চায়
না। তখন তো সুশীলসমাজ আর পশ্চিমারা ঝাঁপিয়ে পড়বে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অনেক ঘটনা ঘটবে।
তার ইঙ্গিত পাওয়া গেল গাইবান্ধায়। আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য আরও অনেক
বিস্ময় অপেক্ষা করছে।
তবে গাইবান্ধার
উপনির্বাচন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগের নৌকায়
বিচিত্র সুবিধাবাদীরা ঠাঁই নিয়েছেন। এঁরা শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার হয়ে গেছেন।
এঁদের কেউ কেউ যেন সরকারের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে গেছেন। মাঝেমধ্যে মনে হয় এঁরাই সর্বেসর্বা।
আমলাদের মধ্যে অনেকে এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো আচরণ করেন। পুলিশে অতি উৎসাহীরা অযথাই
বিরোধী দলকে উসকে দেন। মধ্যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে জামানত হারিয়ে এখন
সরকারের নীতিনির্ধারক হয়ে গেছেন এমন ব্যক্তিদের প্রভাব দেখে অনেকেই হতবাক। এঁদের ডিগবাজি
যে সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ বার্তাটা গাইবান্ধার ভোট বন্ধের মধ্য দিয়ে পাওয়া গেল। দেশে
সংকট বাড়ছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ হচ্ছে। হঠাৎ বনে যাওয়া কেউকেটারা এখন সংকট সমাধানে
দায়িত্ব নিচ্ছেন না। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার দায়িত্ব নিয়েছেন আমলারা। অর্থমন্ত্রীকে
দেশে রেখে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বৈঠকে যাচ্ছেন আমলারা! সরকারের চারপাশে উড়ে এসে জুড়ে
বসারাই খবরদারি করছেন। তাঁরাও কি সামনে ডিগবাজি দেবেন? এ প্রশ্নটা ক্রমে বড় হয়ে উঠছে।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, দুঃসময়ে মার খাওয়া, জেল খাটা, নির্যাতিত- নিপীড়িত আদর্শবান
তৃণমূল কর্মীরা ছাড়া দুঃসময়ে কেউই ‘মাই ম্যান’ থাকে না। সুসময়ের অতিথি পাখিরা দুঃসময়ে
আওয়ামী লীগের জন্য কেবল প্রতারণার চমক দিয়ে উধাও হয়ে যায়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গাইবান্ধা উপনির্বাচন ইসি ভোট কারচুপি
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা।
নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার।
শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন,
ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি
হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়,
দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা
ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা
রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে
সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা
হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী
বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ
অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে
উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার
যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের
প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির
পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না।
আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক
প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার
সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন
শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি,
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে
এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের
সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে
প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার
মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের
আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে
পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি
বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে
বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা
করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে
না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন।
এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার
জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি
স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে
ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়।
এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান
নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা
নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের
স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে
বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান
করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার
সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয়
নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ
কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের
বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা
তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত
করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে
স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে।
কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির
মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা
নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন
ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের
মতো উন্মোচিত করেছে।
উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয়
কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে
দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন
হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন,
সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার
পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার
না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ
দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা
স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা
শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।
উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং
এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায়
জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন
কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি।
যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত
ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন
স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের
এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে
ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী
হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব
নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান
সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা
করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা
নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ
অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে
তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের
প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান
হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী
লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র
তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার
নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার।
তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর
ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের
পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।
প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য
জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী
ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন
আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন।
নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার
সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী
লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের
মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা
বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন।
এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত,
পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই
ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে
না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।
এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির
সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে
মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা
ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি
নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন।
শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা
কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার
করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের
ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত
নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে
দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার
অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত
হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী
লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা
যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, ওবায়দুল কাদের যা বলছেন
তা হলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের অনুরণন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেভাবে তাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন সে বক্তব্যই
তিনি প্রচার করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন কোন এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী
আছেন তার তালিকা তৈরি করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ টি বিষয়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, কোন মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা তার নিকট আত্মীয় বা স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পারবে না। তৃতীয়ত, কোন মন্ত্রী এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। এই ৩ টির কোন একটির যদি ব্যত্যয় হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ৩ ধাপে যে তফসিল নির্বাচন
কমিশন ঘোষনা করেছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ জন মন্ত্রী এমপির স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন। ২য় ধাপে প্রার্থীতার সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এখানে ১৫২ টি উপজেলার মধ্যে
৮৭ জন মন্ত্রী-এমপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ জানিয়েছে, যারা মন্ত্রী-এমপিদের
নিকট আত্মীয়। আর ৩য় ধাপে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০-২৫০ জন মন্ত্রী-এমপির
আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন
যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাড়ান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয়
কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, এই বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী
লীগ সভাপতি। তবে সিদ্ধান্ত হবে ধাপে ধাপে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী
দিবেন তাদেরকে প্রথমত, দলের পদ হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে
তাদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী আছেন,
তারা মন্ত্রীত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত
কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হটকারী অবস্থান গ্রহন করে, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের
মতো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত
কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
কালো তালিকায় যদি থাকেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল শেখ হাসিনা শান্তির দূত জো বাইডেন ইরান
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা।