এডিটর’স মাইন্ড

আরেকটি এক-এগারো ঘটাতে চায় কারা

প্রকাশ: ০৯:৫৯ এএম, ২২ অক্টোবর, ২০২২


Thumbnail আরেকটি এক-এগারো ঘটাতে চায় কারা

অন্যান্য দিনের মতোই রবিবার নিজ দফতরে গিয়েছিলেন তথ্য সচিব মকবুল হোসেন। সেখানে একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করছিলেন। আকস্মিকভাবে তার একজন ব্যক্তিগত কর্মচারী সভাকক্ষে প্রবেশ করেন। সচিবের কানে কানে কিছু বলেন। এর পরই তথ্য সচিব সভা থেকে উঠে যান। নিজেই খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সরকারি কর্মচারী আইনের ৪৫ ধারাবলে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

৪৫ ধারায় বলা হয়েছে: একজন সরকারি কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে সরকার তাকে অবসরে পাঠাতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোনো কারণ ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। আবার যে-কোনো সরকারি কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে তিনিও স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন করতে পারেন। বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক অবসরের রীতি অনেক পুরনো। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার এর যথেচ্ছ প্রয়োগ করেছে। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে ’৭৩-এর ব্যাচ নির্মূল করেছে এ বিধানবলে। এদিক থেকে অবশ্য আওয়ামী লীগ অনেক উদার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এ আইনের তেমন প্রয়োগ করেনি। বরং বিএনপি-জামায়াতপন্থি হিসেবে পরিচিত ও চিহ্নিত অনেককে সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে প্রশাসনে ও পুলিশে আওয়ামীপন্থিদের বেছে বেছে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। এ নিয়ে সে সময় কেউ প্রতিবাদ করেনি। অনেক আমলাই নীরবে এ আইনের সমালোচনা করেন। কিন্তু প্রকাশ্যে মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। কিন্তু এবার মকবুল হোসেনের অবসর নিয়ে যেন আকাশ ভেঙে পড়ল! চারদিকে হুলুস্থুল। যেন তথ্য সচিবই প্রথম ব্যক্তি যিনি বাধ্যতামূলক অবসরের কাঁচিতে কাটা পড়লেন। সরকার তথ্য সচিবকে কেন বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছে তার কারণ ব্যাখ্যা করেনি। এটা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন বা বাধ্যবাধকতাও নেই। কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসনে, রাজনৈতিক আড্ডায় চলে অস্থির আলোচনা। মার্চে তিনি লন্ডনে গিয়েছিলেন। নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের পাশে কোনো অফিসে যেতেন। দুর্নীতিসহ নানা মুখরোচক আলোচনায় টইটম্বুর দেশ। এ নিয়ে যখন আড্ডা জমে উঠেছে, ঠিক সে সময় মঙ্গলবার রাতে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবসরে পাঠাল। ব্যস, শুরু হয়ে গেল নানা গুঞ্জন, আলোচনা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতো ‘মৌনব্রত’ পালন করেনি। মন্ত্রী এবং সিনিয়র সচিব দুজনই তাদের বিরুদ্ধে ‘অন্তহীন’ অভিযোগ আছে বলে উল্লেখ করেছেন। যে কারণেই করা হোক না কেন, এ চারজন কর্মকর্তাকে অবসরের মধ্য দিয়ে সরকার সুস্পষ্ট কিছু বার্তা দিয়েছে। প্রথম বার্তাটি হলো- সরকারের বিরুদ্ধে সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে। দ্বিতীয় বার্তা হলো- সরকার এ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এবং তৃতীয়ত- এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে।

শুধু এ চার কর্মকর্তা নয়, বর্তমানে চাকরিতে আছেন কিংবা অবসরে গেছেন এরকম বেশকিছু কর্মকর্তার তৎপরতা রহস্যময়। সচিবালয়ে কান পাতলেই নানা কথা শোনা যায়। বিএনপি-জামায়াতপন্থি আমলা এবং পুলিশ প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তি এখন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন। তাদের মুখোশ খুলে যাচ্ছে। এতদিন যারা নিজেকে আওয়ামী লীগ প্রমাণের প্রাণান্ত চেষ্টা করে সফল হয়েছিলেন, সেসব ভাগ্যবান সরকারি কর্মকর্তা এখন গোপনে গোপনে আওয়ামী লীগের সমালোচনায় মুখর। দেশ রসাতলে যাওয়া নিয়ে তাদের বেদনা দীর্ঘ হচ্ছে। আর বিএনপির বিভিন্ন সাবেক আমলার সঙ্গে তারা এখন কুশল বিনিময় বাড়িয়েছেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে একটু আড়ালে বিএনপিপন্থি কাউকে একান্তে বলছেন, ‘আমি তো আপনাদেরই’।

প্রশাসনে মুষ্টিমেয় কিছু ‘দায়িত্বশীল’ কর্মকর্তার মধ্যে এ প্রবণতা চলছে কয়েক মাস ধরে। ১৫ বছরের নিদ্রা ভঙ্গ করে বিএনপি নেতারা মাঠে নেমেছেন। তাঁরা হুংকার দিচ্ছেন। সরকারকে ফেলে দেওয়ার দিন-তারিখ পর্যন্ত ঘোষণা করছেন। দু-একটি কর্মসূচি সফল হওয়ায় বিএনপি নেতারা দিশাহারা। একজন নেতা বললেন, সমাবেশে লাঠি নিয়ে যেতে হবে। আরেক নেতা আরও এককাঠি সরেস। বললেন, লাঠি আরও বড় হতে হবে। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্য হলো জনমত সংগঠিত করে ক্ষমতায় যাওয়া। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিরোধী আন্দোলনকে পরোক্ষভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিরোধী দলের কাজই হলো আন্দোলন করা’। কিন্তু সেই আন্দোলন হতে হবে শান্তিপূর্ণ। গত দুই মাসে বিএনপির মধ্যে আন্দোলনকে সহিংস করে তোলার এক উগ্র প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিএনপি যেন চাইছে লাশ পড়ুক। মানুষ মারা যাক। সহিংসতা হোক। কারণ কী? তাহলে কি অন্যতম বিরোধী দলটি দেশে অশান্তি-বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়? একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা বদলের একমাত্র উপায় হলো নির্বাচন। বিএনপি বলছে, তারা নির্বাচনে যাবে না। আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাগবে। তার আগে এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। বিএনপির অবশ্য নির্বাচনে না যাওয়ার যৌক্তিক কারণ আছে। দলটির শীর্ষ দুই নেতাই নির্বাচনের অযোগ্য। তাই তর্কের খাতিরে আমরা যদি ধরেও নিই, ভোটে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল, তবু তো শীর্ষ দুই নেতার কেউই সরকারপ্রধান হতে পারবেন না। তাই অন্যকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য বিএনপি নির্বাচনে যাবে কোন দুঃখে। তার মানে, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায় না, নির্বাচনও চায় না। বিএনপি একটি নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আবার একটি এক-এগারো ঘটাতে চায়। এই তো চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহের পর খুলনার সমাবেশ নিয়ে বিএনপির আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তারা গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চায়। দেশে একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে চায়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেদিন রাখঢাক না করেই বলছেন, ‘বিএনপি আবার একটি এক-এগারো আনার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’

ওবায়দুল কাদের যা-ই বলুন না কেন, বিএনপি যে তৃতীয় পক্ষকে ক্ষমতায় আনতে মরিয়া তা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে কবর থেকে তুলে আনার চেষ্টার মধ্য দিয়েই প্রমাণিত। ২০০৭ সালে এক অসহনীয় ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই এক-এগারো এসেছিল। ১১ জানুয়ারি একটি জগদ্দল পাথরের মতো অনির্বাচিত সরকার চেপে বসেছিল জনগণের বুকের ওপর। শুরু হয়েছিল বিরাজনীতিকরণ। রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্রহননের এক কুৎসিত নোংরা খেলা। ২০০৭ সালের এক-এগারো সরকার ছিল আসলে সুশীলদের নীলনকশার বাস্তবায়ন। যারা নিজেদের বাইরে আর কিছুই বোঝে না। নিজেদের স্বার্থে সবকিছু করতে পারে। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ওই সুশীল নিয়ন্ত্রিত সরকার দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা বেসরকারি খাত ধ্বংসের উৎসব শুরু হয়েছিল। স্বনামধন্য ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের গ্রেফতার, হয়রানির নজিরবিহীন তাণ্ডব শুরু করেছিল সুশীল সরকার। শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী উদ্যোগে অবৈধভাবে অভিযানের নামে চাঁদাবাজির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। দুই বছরে বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে চাঁদাবাজি করা হয়েছিল। লুট করা হয়েছিল। এসবের খুব কমই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়েছিল তখন। আতঙ্কে, ভয়ে, লজ্জায়, অপমানে অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যাঁরা প্রতিবাদ করেছেন তাঁরা নিগৃহীত হয়েছেন। নির্যাতন ভোগ করেছেন। শুধু সুশীলরা ভালো আর সবাই খারাপ- এরকম একটি উদ্ভট তত্ত্বে দেশকে এক গভীর সংকটের অতল গহ্বরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রশাসনে, বিচারালয়ে সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়ে সুশীলরা অনন্তকাল দেশের মালিক হতে চেয়েছিলেন। দুই বছরে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ভাতের বদলে আলু খাওয়ার নসিহত নিয়ে এসেছিলেন সুশীল অধিপতি। কিন্তু কৃষক ন্যায্য দাম না পেয়ে রাস্তায় আলু বিছিয়ে এক অভিনব প্রতিবাদ করেছিলেন। শিক্ষাঙ্গনে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছিল। সম্মানিত শিক্ষকদের কোমরে দড়ি বেঁধে জেলে ঢোকানোর মতো অমার্জনীয় অপরাধ করেছিল এক-এগারো সরকার। এক অনিশ্চিত আতঙ্কের জীবন থেকে মুক্তি পেতে হাঁসফাঁস শুরু করে জনগণ। বিদেশি প্রভু, যারা এ সুশীলদের কথায় গদগদ হয়ে এক-এগারো আগমনে পথ প্রশস্ত করেছিলেন, খুব শিগগিরই বুঝতে পারেন ‘ব্যাটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়’। একসময় বিদেশি প্রভুরাও প্রশ্রয়ের ছাতা সরিয়ে নেন। অবশেষে নির্বাচন দিয়ে কেটে পড়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম অথর্ব ও বিভীষিকাময় সরকারটি।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো সেই সময়কেই ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘আবার যেন অযোগ্যদের হাতে ক্ষমতা না যায় সেজন্য সজাগ থাকতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী জেনে-বুঝেই কথাটা বলেছেন। ২০০৭ সালের ফখরুদ্দীন সরকার ছিল অনেকটাই ‘হীরক রাজার’ মতো। কয়েকজন তথাকথিত পণ্ডিতের খামখেয়ালিপনা যে দেশকে কী ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে পারে ড. ফখরুদ্দীনের সরকার তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এ প্রেক্ষাপটেই সে সময় বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই না’। ড. আকবর আলি খান বলেছিলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে’। মূলত ২০০৭ সালে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারই এ ব্যবস্থা সম্পর্কে গণ-অনাস্থা তৈরি করে। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অনির্বাচিত অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে ঐকমত্যে পৌঁছে। ড. ফখরুদ্দীনের সুশীল-শোভিত ‘এক-এগারো ফেরেশতা’ প্রমাণ করে দেয়, এ দেশের সুশীলরা একটি কাজই পারে, তা হলো অন্যের নিন্দা। সবার সমালোচনা। ওই বিভীষিকার দুই বছরে মানুষ ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠেছিল। বিরক্তির মাত্রা এমন ছিল যে ‘সুশীল’ শব্দটাই এখন এক গালিতে পরিণত হয়েছে। সে সময়ই ‘আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার না’- এ ব্যাপারে এক জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানেই কিছু সুশীলের রাতারাতি দেবতা বনে যাওয়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানেই সাধারণ মানুষকে যন্ত্রণায় দাহ করা। বিএনপির প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলাম ছিলেন এক-এগারোর একজন ভুক্তভোগী। সে সময় তিনি নির্যাতিত হয়েছিলেন, কারাবরণ করেছিলেন। জেল থেকে বেরিয়ে বলেছিলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে তিন তালাক’। সেই বিএনপিই এখন আবার ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ফিরিয়ে আনার দাবিতে রাস্তায় লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানেই এক-এগারো। বিএনপি কি তাহলে আবার একটি এক-এগারো ঘটাতে চায়? আবার বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র চায়? নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘নিকৃষ্ট গণতন্ত্রও অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো’। বিএনপি কেন আবার সেই অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চায়? বিএনপির অপরিণামদর্শী নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই ২০০৭ সালে এক-এগারো এসেছিল। এখন আবার দায়িত্বহীন রাজনীতির মাধ্যমে তারা তেমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করতে চাইছে।

পাঠক লক্ষ করুন, ২০০৭ সালে এক-এগারো ঘটানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল কূটনৈতিকপাড়া। বিএনপি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছিল ক্ষমতালিপ্সায়। এজন্যই বিচারপতি কে এম হাসানকে তারা প্রধান বিচারপতি করে। সংবিধান সংশোধন করে প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে নিশ্চিত করা হয় তিনি যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হন। এরপর ‘একান্ত অনুগত’ রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করে এই ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়। দেড় কোটি ভুয়া ভোটার আর আজিজের মতো ভাঁড়কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে কার্যত নির্বাচনব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দেয়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনীতির মাঠ। বিদেশি দূতাবাসগুলো তৎপর হয়। পশ্চিমা দেশগুলো আজ্ঞাবহ সুশীল সরকার গঠনে উৎসাহ দেয়। কারণ এতে তাদের খবরদারি করার সুযোগ বাড়ে। এবারও বিএনপি কথায় কথায় ধরনা দিচ্ছে কূটনৈতিকপাড়ায়। বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একঝাঁক দুর্বৃত্ত তোতাপাখির মতো বকবক করে যাচ্ছে বিরামহীন। পশ্চিমা দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। তারা যেন আবার একটি অনির্বাচিত সরকারকে আনার সবুজ সংকেত দেয়। এমনকি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন! দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ কীভাবে এত আত্মঘাতী হতে পারেন? এক-এগারো আনতে বিএনপির কোনো কোনো নেতা ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিয়ে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের ‘শহীদ’ বলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন।

এক-এগারো ছিল সুশীলদের মাস্টারপ্ল্যান। দুই বছর নয়, ১০ বছর জনগণের ঘাড়ে চড়ে মধু খাওয়ার নীলনকশা। সে সময় সুশীলরা যেমন নিদ্রাহীন রাত কাটাতেন দেশের কথা ভাবতে ভাবতে, এখনো তারা তেমনি অবস্থায়। দীর্ঘদিন স্যুট-টাই সেলফে। সফেদ শার্টে জং ধরেছে। আগে তো পাঁচ বছর পরপর কিছু না করেই সবকিছু পাওয়া যেত। এখন ১৪ বছরের অপেক্ষা। এজন্য সুশীলরা কখনো অর্থনৈতিক সংকটের ভয় দেখাচ্ছেন। কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিহরণ শোনাচ্ছেন। ২০০৭ সালে এ সুশীলদের নেতৃত্বে পরামর্শে টিএফআই সেলে কি নারকীয়তা হতো। কীভাবে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল সে সময়। তখন কোথায় ছিল মানবাধিকার? এখন আবার সুশীলরা ওত পেতে আছেন। বিএনপির আন্দোলনে তাদের দেহমনে চনমনে এক ভাব এসেছে দারুণভাবে। বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগাতে তারাও এখন মাঠে নেমেছেন। এক-এগারোর অঘটন ঘটাতে আমাদের কিছু ভ্রষ্ট রাজনীতিবিদও কসরত করেছিলেন। ক্ষমতার হালুয়া-রুটি খেতে তারা নিজেদের আদর্শ, লজ্জা সব বিসর্জন দিয়েছিলেন ২০০৭ সালে। তাদের ‘সংস্কার’ ‘সংস্কার’ উল্লাস এখন ওই শব্দটিকেই করেছে দুর্গন্ধময়। এখনো রাজনীতিতে দেখুন। বিএনপি যেমন অহর্নিশ লাশের জন্য অপেক্ষা করছে, অনাসৃষ্টি প্রার্থনা করছে, আওয়ামী লীগের একটি অংশও সেই ষড়যন্ত্রের খেলায় বুঝে না বুঝে যোগ দিয়েছে। আওয়ামী লীগের হঠাৎ বনে যাওয়া কিছু মন্ত্রী বেশুমার লুটপাট, দুর্নীতি, অনিয়ম করে বেহেশতি সুখ উপভোগ করছেন। এদের ওপর মানুষের অসন্তুষ্টি, ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। এরা যেন মনে করছেন ‘অদ্যই শেষ রজনী’। যা করার এখনই করে নিই।

আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নিজেদের মারামারি, খুনোখুনি এখন নিত্যকার ব্যাপার। কদিন আগে জেলা পরিষদ নির্বাচন হলো। কাগজে কলমে এটা নির্দলীয় নির্বাচন। কিন্তু আওয়ামী লীগই যেন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ। আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশ অমান্য করে যাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাঁরাও দেশে এক-এগারো আনতে চান। এঁরাই গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তি। গত এক যুগে আওয়ামী লীগে ব্যাপকভাবে অনুপ্রবেশ করেছে বিএনপি-জামায়াত। এরা এতদিন নানা সুযোগ নিয়েছে। এখন ষড়যন্ত্রের অংশীদার। বিএনপির আন্দোলনে নানাভাবে বাতাস দিচ্ছে তথাকথিত এসব নব্য আওয়ামী লীগার।

দেশি-বিদেশি এ সম্মিলিত ষড়যন্ত্রই বাংলাদেশকে তুলে দিয়েছিল স্বার্থপর কিছু সুশীলের হাতে। এখন বিএনপি আন্দোলনের নামে তেমন একটি ফরমুলার পেছনেই ঘুরছে। এতে দেশের ভালো হবে না খারাপ হবে, সে চিন্তা চুলায় যাক। আওয়ামী লীগকে বিদায় করতে পারলেই যেন বিএনপি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বিএনপি, আওয়ামী লীগের একটি অংশ, সুশীলসমাজ, সুশীল নিয়ন্ত্রিত কিছু গণমাধ্যম, প্রশাসনের একটি অংশ এবং কয়েকটি পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকের সর্বনাশা বিরাজনীতিকরণ ও উন্নয়নবিরোধী ফরমুলা এক-এগারো। ২০০৭ সালের সেই ক্রিয়াশীল শক্তিগুলো আবার সক্রিয় হয়েছে। কিন্তু ২০০৭ আর ২০২২ তো এক নয়। এ দেশের জনগণ কখনো সেই অযোগ্য, অপদার্থ শাসনে ফিরে যাবে না। ইতিহাসে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় না। তা ছাড়া আমাদের আছেন একজন বিশ্বনেতা। বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতায় যিনি অনন্য, অসাধারণ। তাঁর নাম শেখ হাসিনা।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com


বাংলাদেশ   রাজনীতি   এক-এগারো   বিএনপি   সরকার   নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু: শেখ হাসিনাই হতে পারেন শান্তির দূত

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা। 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে শেখ হাসিনার বিশ্বশান্তির দর্শন জাতিসংঘ অনুমোদিত হয়েছে। এই বিশ্বশান্তি দর্শনের আলোকেই ইসরায়েল ইস্যুতে একটি রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে। 

বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে কঠোর এবং যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ গাজায় নিরীহ মানুষের ওপর অবিচার, হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সবসময় নিন্দা জানাচ্ছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার ঈদের শুভেচ্ছা ভাষণেও মধ্যপ্রাচ্যের মানবিক বিপর্যয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'মাদার অব হিউম্যানিটি' হিসেবে পরিচিত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্ব মানবতার কণ্ঠস্বর হয়েছেন। আর এ কারণেই বিশ্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। উদার মুসলিম দেশের নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে তিনি আলাদা একটি অবস্থানে রয়েছেন। বাংলাদেশ একদিকে যেমন ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা করে, অন্যদিকে ধর্মান্ধ মৌলবাদ এবং ধর্মের নামে উগ্র সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করে। আর এটি বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে। শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে বিশ্বের এমন একজন নেতা যিনি মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সংকট সমাধানের আলোকবর্তিকা হয়ে সামনে দাঁড়াতে পারেন। তার শান্তির মডেলকে সামনে রেখে যদি বিবদমান পক্ষগুলো আলোচনার টেবিলে বসে তাহলে ইসরায়েল ইস্যুতে শান্তি অসম্ভব নয়।

বিশ্বে যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা প্রায় অনেকেই বিতর্কিত এবং পক্ষপাতে দুষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্ব নেতার অবস্থানে থাকতে পারছেন না। চীন এই বিষয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবে পক্ষ করতে চায় না। তাছাড়া বিভাজিত বিশ্বে চীনের নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ মেনে নেবে না এটা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি রাশিয়া এখন নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে সমঝোতায় নেতৃত্ব দেওয়া পুতিনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এরদোয়ান ব্যাপারে ইসরায়েল সহ অন্যান্য দেশগুলোর একটি অবস্থান রয়েছে। তাছাড়া তুরস্ক এই বিতর্কে কতটুকু সহনীয় অবস্থায় থাকতে পারবে তা নিয়ে ব্যস্ত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এই অবস্থায় বিশ্বকে যুদ্ধাবস্থা থেকে সামাল দিতে পারেন একমাত্র শেখ হাসিনাই। তার শান্তির বার্তা যদি বিবাদমান পক্ষগুলো অনুধাবন করে তাহলে এই জটিল কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্ব শান্তি অসম্ভব নয়। আর এই শান্তির জন্য শেখ হাসিনাই হতে পারেন বিশ্ব নেতা। তার শান্তির দর্শন এবং তার শান্তির উদ্যোগের মাধ্যমে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি হতে পারে বিশ্ব।

ইরান-ইসরায়েল   শেখ হাসিনা   শান্তির দূত   জো বাইডেন   ইরান  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন যারা

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

পুরনোদেরকে অসম্মান না করে নতুনদের জন্য জায়গা করে দেওয়ার যে কৌশল সেটি রাজনীতিতে একটি শিক্ষণীয়। কিছু দিন আগেও যারা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাদের বদলে এখন আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন বেশ কিছু নেতা। যারা আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে ১১ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হওয়ার পর যাদেরকে বেশি পাদপ্রদীপে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন;

১. ড. হাছান মাহমুদ: ড. হাছান মাহমুদের পদোন্নতি ঘটেছে। এর আগে তিনি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী। এবার তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। স্পষ্টতই আওয়ামী লীগ সভাপতি তাকে পাদপ্রদীপে নিয়ে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও বটে। কোন কারণে সাধারণ সম্পাদকের পদ খালি হলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে। আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও ড. হাছান মাহমুদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই অনেকে মনে করছেন। আর এই সমস্ত বিবেচনা থেকেই আওয়ামী লীগে এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে সামনে আসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। 

২. জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন নিজ যোগ্যতায়। মাঠের নেতা হিসেবে তার দীর্ঘদিনের সুনাম ছিল। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। রাজনীতিতে চড়াই উতরাই এর মধ্য দিয়েই তিনি এগিয়ে গেছেন তার আদর্শের কারণে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার পর তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে গেছেন। তার পুরস্কার তিনি পেয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে উন্নীত হন। এবার নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের এই নেতা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এবং বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি এখন আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারক হয়ে উঠেছেন। 
৩. আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কর্মী বান্ধব হওয়ার কারণে তার অবস্থান আস্তে আস্তে দৃঢ় হচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের অন্যতম বাহাউদ্দিন নাছিম কর্মীদের কাছে আওয়ামী লীগ সংগঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত এবং সংগঠনের প্রশ্নে অকুতোভয় এবং একনিষ্ঠ এই নেতা মন্ত্রী না হয়েও আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন নীতি নির্ধারক হয়ে উঠছেন নিজ যোগ্যতায়। 

৪. আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক এর মতোই তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। কিন্তু তারপরও তিনি ভেঙে পড়েননি। সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। এবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থার প্রতিদান তিনি ভালো ভাবেই দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের একটি পালা বদল ঘটছে। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু কিংবা শেখ ফজলুল করিমের জায়গা আস্তে আস্তে এই সমস্ত নেতারা জায়গা করে নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের একটা পাইপলাইন তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। যেখানে পর্যায়ক্রমে নেতারা অপেক্ষমান অবস্থায় আছেন। নেতৃত্বের শূন্যতা আওয়ামী লীগে যেন না হয় সেজন্য একটি দূরদর্শী রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আব্দুর রহমান   জাহাঙ্গীর কবির নানক   ড. হাছান মাহমুদ   আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

অন্ধকার ছয়দিন

প্রকাশ: ১০:৩০ পিএম, ১২ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের লোডশেডিং চলছে। গত বুধবার থেকে সংবাদপত্র বের হচ্ছে না। টানা ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধের বিশ্ব রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। না কোন প্রতিবাদে নয়, দাবী আদায়ের জন্য নয়। ছুটির ফাঁদে সংবাদপত্র বন্ধ আছে। সংবাদপত্রকে বলা হয় জরুরী সেবা। চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন জরুরী সেবা দেন, তেমনি সংবাদকর্মীদের কাজও হলো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেয়া। বিশেষ করে ছুটির সময় এটার প্রয়োজন আরো বেশী। এবার দেশে একটা দীর্ঘ ছুটি। এসময় সংবাদপত্র অনেক জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো, ছয়দিন যদি হাসপাতালে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বলতো ছয়দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে না। তাহলে কি হতো? আমিতো মনে করি, সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিষয়টিও তেমনি আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের এনিয়ে বিকার নেই।  

এবার বাংলাদেশ দু’টি বড় উৎসব কাছাকাছি সময় উদ্যাপন করছে। ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করতে না করতেই, আগামীকাল (রোববার) ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ। বাঙালীর সবচেয়ে বড় উৎসব। এদেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। তবে বাংলাদেশে ঈদ-উল-ফিতর কেবল মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব নয়। এ অঞ্চলে বসবাসরত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এই উৎসবে আনন্দ করে। সম্প্রীতির বাংলাদেশে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’-এই রীতি চলে এসেছে দীর্ঘদিন। ইদানিংকার মতো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গিতে কোন ধর্মীয় উৎসবকেই দেখা হতো না। ঈদের দিন অন্য ধর্মের বন্ধুরাও বাসায় আসতো সেমাই মিষ্টি এক সাথে খাওয়া হতো। আবার হিন্দুদের পূজাতেও আমরা যেতাম। অনেক মজা হতো। যতো দিন যাচ্ছে আমাদের ধর্মীয় উদার নৈতিক চেতনাকে গ্রাস করে ফেলছে ধর্মান্ধ সংকীর্ণতা। এখন ঈদ উৎসব যেন অনেকটাই ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলিত। রমজান মাস জুড়ে এক ধরনের কঠোর বিধি নিষেধ থাকে যা স্বতঃস্ফূর্ত না। আরোপিত এবং লোক দেখানো। এই আরোপিত বিধি নিষেধ নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন কিছু ‘বক ধার্মিক’। এদের কারণে গত তিন ঈদে পহেলা বৈশাখ নির্বাসিত ছিলো। পবিত্র রমজানের সাথে পহেলা বৈশাখের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু তারপরও অতি উৎসাহী কট্টরবাদীদের দাপটে শৃঙ্খলিত হয় পহেলা বৈশাখ। অথচ বাঙালী হিসেবে পহেলা বৈশাখীই আমাদের প্রথম এবং প্রধান সর্বজনীন উৎসব। বাংলা বর্ষ বরণ বাঙালীর প্রাণের উৎসব। এই উৎসব অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বেশ কয়েক বছর পর এবার পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হবে বাঁধাহীন ভাবে। বাঙালী জাতি বর্ষবরণ করবে মুক্ত ভাবে। এটা আমাদের জন্য বড় আনন্দের উপলক্ষ্য তো বটেই। কিন্তু এত বড় উৎসব হবে সংবাদপত্রহীন! কি অদ্ভুত! সংবাদপত্র কি দায়িত্বহীন মালিকানার শিকার?

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে। সম্প্রীতির বন্ধনে অটুট। কিছু মানুষ যতোই কট্টর মৌলবাদী হোক না কেন, সাধারণ মানুষ এখনও উগ্র পন্থাকে সমর্থন করে না। এজন্য একই সময়ে একাধিক ধর্মাবলম্বীদের উৎসব এদেশে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয়। এবার রমজানের কথায় ধরা যাক না কেন। এবার রমজানের মধ্যেই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ‘ইস্টার সানডে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোজার মধ্যেই দোল উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায় রং উৎসবে মেতেছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কোথাও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা বলেননি যে, রোজার জন্য ইস্টার সানডে করা যাবে না কিংবা দোল উৎসব বন্ধ রাখতে হবে। ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায় কিছু উপরের তলার মানুষ। যারা ধর্ম প্রতিপালনের চেয়ে লোক দেখানোতে বেশী আগ্রহী। এদের হাতে ধর্ম এবং সংস্কৃতি কোনটাই নয়। এবার ঈদের পরপরই পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হচ্ছে-এজন্য আমি আনন্দিত। বাংলাদেশের মানুষের সামনে এটি এক অনন্য সুযোগ। এর মাধ্যমে প্রমাণ হতে পারে আমরা বাঙালী, আমরা অসাম্প্রদায়িক, আমরা উদার। এদেশের মানুষ যেমন ঈদ উৎসব করলো তেমনি বাংলা নববর্ষকেও বরণ করবে। এই বর্ষ বরণের উৎসব যেন ঢেকে দিচ্ছে সংবাদপত্রে ছুটি। এবার ঈদের ছুটিতে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিকরা। ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে মোট ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধ রাখার এক অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংবাদপত্র মালিকরা। পহেলা বৈশাখে কেন সংবাদপত্র বন্ধ থাকবে? কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ‘ঈদ সংখ্যা’ সাময়িকী প্রকাশ করেছে। এটা ভালো উদ্যোগ। সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে এই সব সাময়িকী গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি আশা করেছিলাম এবার যেহেতু কাছাকাছি সময়ে ঈদ এবং বর্ষবরণ তাই সংবাদপত্রগুলো পহেলা বৈশাখে একটা ছোট সাময়িকী করবে। আলাদা আলাদা সাময়িকী না করুক ঈদ সংখ্যা এবং নববর্ষ সংখ্যা মিলিতভাবে করবে। কিন্তু কোথায় কি, এবার পহেলা বৈশাখে কোন সংবাদপত্রই বেরুচ্ছে না। শুধু পহেলা বৈশাখ কেন? বাংলাদেশে এখন চলছে অন্ধকার সময়। ১০ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল দেশে কোন সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না। এটি নজীর বিহীন। 

অবশ্য কেউ বলতে পারেন, এ যুগে সংবাদপত্র ৬ দিন না ৬ মাস বন্ধ থাকলো কার কি? এখন সংবাদের জন্য কে আর দৈনিক পত্রিকার অপেক্ষা করে? অনলাইন, টেলিভিশন, সোশাল মিডিয়ার এই যুগে কেউ আর খবরের জন্য সকালের সংবাদপত্রের অপেক্ষা করে না। সকাল বেলা এক কাপ চায়ের সাথে একটি সংবাদপত্র এখন উত্তেজনাপূর্ণ রোমাঞ্চ নয়। এসব ঘটনা প্রিন্ট মিডিয়ার অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠারই ইঙ্গিত। কিন্তু তারপরও প্রিন্ট মিডিয়া এখনও বিশ্বস্ততা এবং আস্থার প্রতীক। একজন পাঠক টেলিভিশনে বা অনলাইনে যতো সংবাদই দেখুক বা পড়ুক না কেন, দিনের শেষে তার নির্ভরতা ছাপা কাগজ। অনলাইনে কোন সংবাদ পাঠ করার পর তার সত্যতা যাচাই করে ছাপা কাগজে। তাই এখনও সংবাদ, সঠিক তথ্যের জন্য প্রধান নির্ভরতার জায়গা হলো সংবাদপত্র। তথ্যের এই বিশ্বস্ত উৎস বন্ধ আছে। টানা ছয়দিনের জন্য দেশের মানুষ সংবাদপত্র পাবে না। এই ছয়দিনকে বলা যায় অন্ধকার সময়। সংবাদপত্র বিহীন একটা দিন মানে অন্ধকার দিন-রাত্রি। গত ১০ এপ্রিল থেকে অন্ধকার ছয়দিন শুরু হয়েছে। আমরা যারা সেকেলে মানুষ। ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকা খুঁজি তাদের জন্য এই ছয়দিন দূর্বিসহ, অবর্ননীয়। 

প্রশ্ন হলো সংবাদপত্রের মালিকরা কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিলো? এই সিদ্ধান্ত দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে আরো সংকটে ফেলবে। বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের মালিকানা শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীদের দখলে। প্রধান সব সংবাদপত্রই কোন না কোন শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। বড় শিল্পপতিদের কাছে সংবাদপত্র হলো মর্যাদার প্রতীক। মুক্ত সাংবাদিকতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, পাঠকের কাছে দায় বদ্ধতা ইত্যাদি ব্যবসায়ীদের কাছে মূখ্য বিষয় নয়। সংবাদপত্র এখনকার মালিকদের কাছে ‘ক্ষমতা’ এবং ‘অস্ত্র’। এই ক্ষমতা দেখিয়ে তারা তাদের ব্যবসাকে সম্প্রসারিত করে। সুদৃঢ় করে। সরকার সংবাদপত্র মালিকদের ভয় পায়। ব্যাংক তো তটস্থ থাকে। তাই পত্রিকা থাকা মানে ব্যবসায়ীদের সব মুশকিল আসান। কর্পোরেট হাউসে এখন সাংবাদিকতা নেই, এক ঝাঁক ক্রীতদাস আছে। যাদের একমাত্র কাজ মালিকদের মনোরঞ্জন করা। এদের মধ্যে যিনি সম্পাদক তিনি হলেন সবচেয়ে বড় ক্লাউন। মালিকদের খুশী করাই তার একমাত্র কাজ। পেশাগত উৎকর্ষতা চুলোয় যাক। যিনি মালিকের স্বার্থ যতো নিবিড়ভাবে সুরক্ষিত করেন তিনি ততো বড় সম্পাদক। এই অস্ত্র প্রয়োগ করে মালিকরা প্রতিপক্ষকে ভয় দেখায়। যারা তাদের কথা শোনে না তাদের এই অস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করে। সংবাদপত্রের মালিকানা ব্যবসায়ীদের কাছে একধরনের বর্মের মতো। নিজেদের অপকর্ম, স্বেচ্ছাচারিতা জায়েজ করার জন্য সংবাদপত্রকে তারা ব্যবহার করে। সংবাদপত্রের মালিক হবার কারণে কেউ তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করেনি। এভাবেই চলছে সংবাদপত্র শিল্প। সংবাদপত্র এখন কর্পোরেট ক্রীতদাস। তাই মালিকরা সংবাদপত্র দুই দিন বন্ধ থাকলো না ছয়দিন বন্ধ থাকলো তা নিয়ে ভাবেন না। তারা তাদের ব্যবসা সুরক্ষা পত্রিকা দিয়ে কতটা হলো তা নিয়েই ব্যস্ত। সংবাদপত্র মালিকরা পাঠকের কাছে জবাবদিহিতার বিশ্বাসী নন। তারা দেখেন এই সংবাদপত্র তাদের স্বার্থ কতটা রক্ষা করতে পারছে। ছাপা কাগজ একদিন বের না হলে অনেক সংবাদপত্রের অনেক টাকা সাশ্রয়। এসব বিবেচনা করেই মালিকরা মনে করেছেন পত্রিকা যদি কয়েকটা দিন বন্ধই থাকে, কি এমন ক্ষতি। কিন্তু এই ছয়দিন সংবাদপত্র বন্ধ যে এক ভয়ংকর বার্তা দিলো তাকি মালিকরা অনুধাবন করেন? সংবাদপত্র ছাড়াও যে দেশ চলে, এমন এক ঘোষণাই কি দিলেন না মালিকরা। ভবিষ্যতে এর মূল্য দিতে হবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেই। 

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

সরকারের তিন মাস: সেরা অর্জন

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রথম তিন মাস বর্তমান সরকারের জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করার ফলে এই নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়, নির্বাচনের পর কী ধরনের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সেটি ছিল সকলের কাছে একটি দেখার বিষয়। তবে সরকার প্রথম তিন মাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকট গুলোকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত সরকারের চেষ্টা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোন রকম অভিযোগ নেই। 

সরকার এই প্রথম তিন মাসে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে;

১. নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা আদায়: ৭ জানুয়ারি নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এটি সরকারের একটি প্রধান অর্জন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনকে কীভাবে দেখবেন? নির্বাচনের পরে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের নানা রকম আগাম পূর্বাভাস ছিল, সংশয় ছিল। কিন্তু এই সংশয় উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সফলতা অর্জন করেছে। নির্বাচনের পর প্রায় সব দেশই নতুন সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে। এটি সরকারের জন্য একটি বিরাট অর্জন। এই সরকার যে এত তাড়াতাড়ি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে এটা অনেকেই ভাবতে পারেননি। 

২ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর করার জন্যই সাঁড়াশি উদ্যোগ: নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কিছু বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে একাধিক শিশুর মৃত্যু, অবৈধ হাসপাতালে রোগীদের ভুল চিকিৎসার মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তার সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে হাসপাতালগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। অবৈধ বেশ কিছু ক্লিনিক হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে দুর্নীতির মধ্যে ডুবে ছিল তা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মানুষ সরকারের এই অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছে এবং আশা করছে যে, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধের ক্ষেত্রে তার অবস্থান অটুট রাখবেন এটাই সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে।

৩. সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি: এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি বটে, তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকার সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রির যে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে ভ্যান রমজান মাসে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিতরণ ব্যাপকভাবে ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকাগুলোর মানুষকে সুবিধা দিয়েছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে মিলে দেশের ৩৫ টি জেলায় রাজনীতিবিদ, প্রশাসন নিজস্ব উদ্যোগে সুলভ মূল্যে রমজানের পণ্য বিতরণ করার মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তরমুজ নিয়ে যখন কিছু মধ্যসত্ত্বভোগী লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছে তখন কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকের বাজারের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে তরমুজ বিক্রি করে একটি নজির স্থাপন করেছে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় শিক্ষা যে, বিকল্প চ্যানেলের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পণ্য দিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তা খুব উপকার দেয়।

৪. ব্যাংক একীভূত করা: ব্যাংক একীভূতকরণ উদ্যোগটি নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরেই করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, যে সমস্ত দুর্বল ব্যাংক আছে, সেই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সকল ব্যাংক একীভূত করবে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় সীমা বেঁধে দিয়েছে। এই নির্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যে পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রাজশাহী, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সহ একাধিক ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। এর ফলে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে সকলে প্রত্যাশা করেন এ সমস্ত ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া বানানোর ক্ষেত্রে যারা দায়ী তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে ছাড় দেওয়ার জন্য যেন ব্যাংক একীভূত না হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

৫. অবৈধ দালান-কোঠার বিরুদ্ধে অভিযান: বিশেষ করে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রণালয় অবৈধ দালান এবং অনুমোদিত ভবনের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারের নতুন গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন। তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। বিশেষ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা। এখন পর্যন্ত যে অভিযান চলছে সেই অভিযান সরকারের সফল উদ্যোগের একটি বলেই অনেকে মনে করছেন। এছাড়াও সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ভালো কাজ করছে, যে কাজগুলো ফলাফল পেতে সাধারণ মানুষকে অপেক্ষা করতে হবে। 


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

তোফায়েল আহমেদ: রাজনীতিতে অস্তমিত সূর্য

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ০৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

তোফায়েল আহমেদ কি রাজনীতিতে এক অস্তমিত সূর্য? তিনি কি নিভে যাচ্ছেন? বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তিনি কি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নগুলো এখন খুব বড় করে সামনে এসেছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যারা তোফায়েল আহমেদকে দেখেছেন তারা আগের তোফায়েল আহমেদের ছায়াকেও দেখতে পারেননি। যে তোফায়েল আহমেদ ছিল সরব, যার ভরাট কণ্ঠস্বরে জাতীয় সংসদ প্রকম্পিত হত, যিনি সবসময় সবাইকে চমকে দিতেন বিভিন্ন দিন তারিখের হিসেব মুখস্থ বলে দিয়ে, যার সবসময় শত শত টেলিফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা মুখস্থ থাকত, যা স্মৃতিশক্তি নিয়ে সকলে প্রশংসা করত, রাজনীতিতে যিনি একজন যুবরাজের মত পদচারণা করতেন, নানা রকম বিতর্কের পরও তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন সেই তোফায়েল আহমেদ এখন কোথায়? 

এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তোফায়েল আহমেদ জয়ী হয়েছেন। সংসদে তাকে দেখা যায় কদাচিৎ। তবে তিনি এখন শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকটাই বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন। বিশেষ করে একাধিক অসুস্থতা তাকে এখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটা চলা করতে দেয় না। তার কণ্ঠস্বরের তেজও কেড়ে নিয়েছে তার একের পর এক অসুখ। 

তোফায়েল আহমেদের এক পাশ অনেকটাই অবশ হয়ে গেছে। আর এ কারণেই তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তবে এখনও তিনি লেখালেখি করেন এবং নানারকম রাজনৈতিক আলোচনায় তাকে আগ্রহীও দেখা যায়। তবে আগের যে তোফায়েল আহমেদ, যিনি যে কোন রাজনৈতিক আড্ডা এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মধ্যমণি হিসেবে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন, যার দিকে তাকিয়ে থাকত লক্ষ লক্ষ জনতা সেই তোফায়েল আহমেদ এখন নেই। 

অনেকেই মনে করেন যে, রাজনৈতিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিক ভাবেই তোফায়েল আহমেদ বেশি বিপর্যস্ত। বিশেষ করে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরুর প্রেক্ষাপটেই রাজনীতিতে তিনি নিজেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন। 

গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শোক দিবসের স্মরণে এক লেখায় কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু যখন আক্রান্ত হন, ৩২ নম্বর যখন খুনিরা ঘিরে ফেলে তখন তিনি বেশ কয়েক জনকে ফোন করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন তোফায়েল আহমেদে। হতাশাজনক হলেও তোফায়েল আহমেদ সেই টেলিফোনের পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। এই লেখাটির পর আওয়ামী লীগের মধ্যে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। অনেকে এটা নিয়ে হৈ চৈ করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তোফায়েল আহমেদ এর প্রতিবাদও করতে পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগ সভাপতিকে যারা চেনেন তারা সকলেই জানেন যে, বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে তিনি তথ্য প্রমাণ ছাড়া কোন বক্তব্য দেন না। এই ঘটনার পর আকস্মিকভাবে তোফায়েল আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অনেকে মনে করেছিলেন তিনি হয়ত নির্বাচন করবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন অসুস্থ শরীর নিয়ে। 

এখন তিনি জাতীয় সংসদে আসেন বটে তবে আগের মত সরব উপস্থিতি তার নেই। হয়ত রাজনীতির জীবনে তিনি শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। তবে রাজনীতির ইতিহাসে তোফায়েল আহমেদ চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তার রাজনৈতিক জীবনের দুটি ভাগ সবসময় আলোচিত থাকবে। একটি হল স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর একান্ত বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে তরুণ তুখোড় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ। আরেকটি হল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে তার বিতর্কিত এবং রহস্যময় ভূমিকা। কোন তোফায়েল আহমেদ ইতিহাসে বেশি আলোচিত থাকবেন তা সময়ই বলে দেবে।



তোফায়েল আহমেদ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন