এডিটর’স মাইন্ড

যুক্তরাষ্ট্রই সরকারের একমাত্র মাথাব্যথা

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের জন্য একদিকে যেমন নিজেদের দলকে প্রস্তুত করছে অন্যদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিকসংখ্যক রাজনৈতিক দল যেন অংশগ্রহণ করে সেটিও নিশ্চিত করতে চাইছে। তবে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আশা বা বিএনপিকে ছাড় দিয়ে আগামী নির্বাচনের মাঠে যুক্ত করার কোনো দৃশ্যমান পরিকল্পনা এখনও নেই। যদিও পর্দার আড়ালে বিএনপির সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। বিএনপি যেমন বলছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না, ঠিক তেমনি ভাবে আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন হতে পারে না। যা কিছু হবে সংবিধানের আওতায় হবে।

প্রধানমন্ত্রী ১ ফেব্রুয়ারি বই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানলে, অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আনলে সংবিধান অশুদ্ধ হবে। তার এই বক্তব্যের পর থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার কোনো অবস্থাতেই বিএনপির মূল দাবি অর্থাৎ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন না। এরকম পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ কি আরেকটি একতরফা নির্বাচনের পথে যাচ্ছে? আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন যে, বিএনপি এখন রাজনীতিতে গুরুত্বহীন। আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে তিনটি কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে প্রথমত, তারা মনে করছে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবং সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে তারা নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে গ্রহণ করবে। এর ফলে আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক হবে এবং বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে। এটিই আওয়ামী লীগের প্রথম বিকল্প।

দ্বিতীয়ত বিকল্পে আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করেও তারপরও বিএনপির মধ্যে নির্বাচনে ইচ্ছুক বহু প্রার্থী রয়েছে তারা আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র হলেও বা দল ভেঙে অংশগ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে স্বাগত জানাবে। এরই একটি টেস্ট কেস হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে উকিল আব্দুস সাত্তারকে আওয়ামী লীগ ছাড় দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছে বিএনপিতে অনেক জনপ্রিয় প্রার্থী রয়েছেন যাঁরা তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকা ধরে রাখার জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। ফলে শেষ পর্যন্ত যদি দলগতভাবে বিএনপির একটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে আওয়ামী লীগ মনে করছে। 

আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে তৃতীয় বিকল্প হল বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন। শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি ২০১৪ পথে যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এই ব্যাপারে অটল অবস্থানে থাকে সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে ছাড় দিয়ে এবং প্রত্যেকের একক অবস্থান থেকে নির্বাচন করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বিভিন্ন ইসলামী দল সহ আরও কিছু রাজনৈতিক দলকে নিয়ে তারা একটি নির্বাচন করবে এবং এরকম নির্বাচন এবং অংশগ্রহণমূলক হবে বলে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা মনে করছেন। কিন্তু এই তিন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ সুষ্ঠু করার ব্যাপারে তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। এমনকি বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ  না করে সেই নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটি নিয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশ্ন রয়েছে।

অতীতে দেখা গেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত উপমহাদেশের বিষয়ে ভারতের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল থাকে। কিন্তু এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের ব্যাপারে আলাদা এজেন্ডা রয়েছে বলে কোনো কোনো কূটনৈতিক মনে করছেন। তারা মনে করছেন যে, নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশগ্রহণ না করে এবং নির্বাচন যদি বিশ্বাসযোগ্য না হয় সেক্ষেত্রে তারা এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে স্বীকৃতির নাও দিতে পারে। বিভিন্ন কূটনীতিক মেরুকরণ চলছে নির্বাচনকে ঘিরে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে বলে একাধিক মহল মনে করছেন। তাদের মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন যেভাবে করতে চায় সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা এখনও যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কি হবে তার ওপর নির্ভর করছে পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকা। কাজে শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে বাদ দিয়ে বা খন্ডিত বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটাই দেখার বিষয়। দফায় দফায় মার্কিন প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ করছেন এবং তারা মূলত নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। সর্বশেষ ডোনাল্ড লু’র সফরের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়েছে বলে অনেক কূটনীতিক মনে করছেন। তাই বিএনপিকে ছাড়া আগামী নির্বাচনের পথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান বাধা হলো এখন যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   আফরিন আক্তার   নির্বাচন কমিশন   ডোনাল্ড লু   পিটার ডি হাস   বিএনপি   সরকার  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

কী হবে এই অক্টোবরে

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০২ অক্টোবর, ২০২৩


Thumbnail

‘ব্ল্যাক অক্টোবর’ একটি সাড়া জাগানো কানাডীয় প্রামাণ্যচিত্র। সিবিসি ২০০০ সালে এই প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করে। ১৯৭০ সালে ব্রিটিশ ট্রেড কমিশনার এবং একজন প্রাদেশিক মন্ত্রীর অপহরণ নিয়ে নির্মিত এ প্রামাণ্য চিত্রে কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর সাক্ষাৎকারও রয়েছে। ৭০-এ এই অপহরণ ঘটনায় কানাডার রাজনীতি টালমাটাল হয়েছিল। কমিউনিস্ট শাসন অবসানের শেষপ্রান্তে রাশিয়ার (সোভিয়েত ইউনিয়ন) ক্ষমতার টানাপোড়েন নিয়েও ‘ব্ল্যাক অক্টোবর’ শিরোনামে একটি আলোচিত প্রামাণ্যচিত্র রয়েছে। ১৯৯৩ সালে নির্মিত ওই প্রামাণ্যচিত্রে দেখা যায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইলিয়েৎসিনের সঙ্গে রুশ পার্লামেন্টের প্রকাশ্য বিরোধের ঘটনা। একপর্যায়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট আক্রমণের জন্য সেনাবাহিনী তলব করেন। রুশ পার্লামেন্টের সব সদস্যকে গ্রেপ্তার করেন। এক ডিক্রি জারি করে পার্লামেন্ট (সুপ্রিম সোভিয়েত) ভেঙে দেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে রাশিয়া সোভিয়েত প্রথা বিলোপ হয়। রাশিয়ার জন্য ১৯৯৩-এর অক্টোবর ছিল এক দুর্যোগপূর্ণ সময়। এরকম বিশ্বের দেশে দেশে অক্টোবর নিয়ে এরকম নানা আতঙ্ক এবং ভয়াল গল্প আছে। বাংলাদেশে এবারের অক্টোবর কেমন হবে? তা নিয়ে রাজনীতির মাঠে উত্তাপ, শোরগোল শুরু হয়েছে। বিএনপি বলছে, অক্টোবরেই সরকারের পতন হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘আগামী কয়েকটা দিন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘এই অক্টোবরেই আছি, আগামী অক্টোবরেও থাকব।’ অক্টোবর নিয়ে এ পাল্টাপাল্টি অবস্থানের পর প্রশ্ন উঠেছে—বাংলাদেশে কি আবার এক অন্ধকারাচ্ছন্ন অক্টোবর আসছে? কী হবে এ অক্টোবরে?

বাংলাদেশে অক্টোবর মাসটা একটু অন্যরকম। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। হালকা বাতাসে দোল খায় কাশবনের শ্বেতশুভ্র ফুল। শারদীয় উৎসবের এক মোহনীয় মাস অক্টোবর। কিন্তু বাংলাদেশে মাঝেমধ্যেই এ অক্টোবর মাস ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ২০০১ সালের বিভীষিকাময় অক্টোবরের কথা ভুলি কী করে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে। এর আগে জুলাইয়ে দেশে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার হাতবদল হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের কাছে। লতিফুর রহমান দায়িত্ব নিয়েই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। শপথ নেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই ১৩ জন সচিবকে বদলি করে তিনি জাতিকে হতবাক করে দেন। সাফ বুঝিয়ে দেন আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেওয়াই তার একমাত্র লক্ষ্য। তার চেয়ে আরেক কাঠি সরস ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এমএ সাঈদ। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের শায়েস্তা করাই যেন তার কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের একমাত্র পূর্বশর্ত। অল্প সময়ের মধ্যেই আওয়ামী লীগের জন্য নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। তবুও আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে। গণতন্ত্রের স্বার্থে। ১ অক্টোবরের নির্বাচনে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল নির্লজ্জ পক্ষপাতপূর্ণ। আওয়ামী লীগকে পিটিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে হটিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা নিপুণ দক্ষতায় পালন করেন তারা। সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণায় কোনো চমক ছিল না। নিরঙ্কুশ বিজয়ের দিকে এগিয়ে যায় চারদলীয় জোট। বিএনপি-জামায়াতের অতি-উৎসাহী কর্মীদের আর তর সয়নি। সারা দেশে তারা শুরু করে তাণ্ডব। সারা দেশে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে আক্রমণ শুরু হয়। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। লুটপাট শুরু হয় নির্বিচারে। সারা দেশে মুহূর্তেই শুরু হয় সন্ত্রাসের রাজত্ব। সংখ্যালঘুরা আওয়ামী ভোটার। এ কারণে তাদেরও নির্মূল করা শুরু হয়। হত্যা, ধর্ষণের এক নারকীয় উৎসব চলে টানা ১০ দিন। বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন কয়েকশ সাধারণ জনগণ। পূর্ণিমা, ফাহিমা, শেফালীর মতো শত শত নারী ধর্ষিতা হন। সেই ভয়াল অক্টোবরের স্মৃতি ভুলি কী করে? সেই সময় দেশে কোনো আইন ছিল না, বিচার ছিল না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা দাঁড়িয়ে শুধু তামাশা দেখেছে। ২০০১-এর অক্টোবরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার হয়নি আজও।

২০০৬ সালের অক্টোবরও ছিল বাংলাদেশের জন্য আতঙ্কের। অগ্নিগর্ভ ওই অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা ছাড়ার আগে শেষ তাণ্ডব চালায়। ২৯ অক্টোবর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পল্টন, বিজয়নগর, বায়তুল মোকাররম এলাকা। জামায়াত-শিবিরের হিংস্ররূপ জাতি সেদিন দেখে ভয়ে শিউরে উঠেছে। অক্টোবর এলেই তাই অজানা আতঙ্ক মনে বাসা বাঁধে। এবার আতঙ্ক আরও বেশি। কান পাতলেই ফিসফাস আওয়াজ শুনি। কী হচ্ছে, কী হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৭ সেপ্টেম্বর ‘কিছু একটা ঘটার’ নাটকীয় ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিএনপির প্রয়াত নেতা হান্নান শাহর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে কি না, গণতান্ত্রিক অধিকার থাকবে কি না, জনগণ তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে কি না—সবকিছু নির্ভর করছে আগামী কয়েক দিনের ওপর।’ মির্জা ফখরুলের এ বক্তব্য বিচ্ছিন্ন কোনো কথা নয়। বিএনপি ভালো করেই জানে অক্টোবরেই বিএনপিকে কিছু করতে হবে। নির্বাচন কমিশন আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করবে। একবার তপশিল ঘোষণা হলে দেশের রাজনীতি নির্বাচনমুখী হবে। তখন বিএনপি আন্দোলন জমিয়ে তুলতে পারবে না। তা ছাড়া বিএনপি যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলছে, সেই দাবি একমাত্র সংসদের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। অন্য কোনোভাবেই নয়। বিএনপি নেতারাও তা-ই বলছেন। তারা দাবি করেছেন, ‘আওয়ামী লীগের যেহেতু দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংসদ সদস্য আছে, কাজেই তাদেরই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে পুনঃস্থাপন করতে হবে। তীব্র গণআন্দোলনে তারা এটা করতে বাধ্য হবে।’ বিএনপির দাবি হলো, ২০১১ সালের আগে সংবিধানে ‘নির্বাচনকালীন সরকারে’র যে ব্যবস্থা ছিল, তা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেটি সংসদ ছাড়া অসম্ভব। এই অক্টোবরে সংসদের শেষ অধিবেশন বসবে। তাই বিএনপি এবং তার মিত্রদের আন্দোলন এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে, যেখান থেকে সরকার বিএনপির দাবি মানতে বাধ্য হয়। এ কয়েক দিনের মধ্যে যদি তারা ‘গণবিস্ফোরণ’ ঘটাতে না পারে, তাহলে তাদের জন্য আরেকটি বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। এ কথা ঠিক, সম্প্রতি বিএনপির কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়ছে। তাদের হতাশা কিছুটা হলেও কেটেছে। এক ধরনের চাঙ্গাভাব লক্ষ করা যায় কর্মীদের মধ্যে। কিন্তু বিএনপির আন্দোলনের মূল সমস্যা অন্য জায়গায়। বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে জনগণ এখনো সম্পৃক্ত নয়। জনগণ এখন আর আগের মতো নেই। রাজনৈতিক দল ডাকল আর জনগণ রাস্তায় নামল—সেই দিন এখন শুধুই স্মৃতি। জনগণ সংবাদপত্র পড়ে, টেলিভিশনে টকশো শোনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বিস্ফোরক সব ব্রেকিং নিউজ’ এবং ‘অবিশ্রান্ত ধারার মিথ্যাচার’ উপভোগ করে। তারপর আকাশের ঠিকানায় গালি দিয়ে, বাতি নিভিয়ে ঘুমুতে যায়। আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত হয় না, এ আক্ষেপ মির্জা ফখরুলেরও। তিনি ইদানীং বারবার বলছেন, জনগণকে রাস্তায় নামতে হবে। জনগণ যদি রাস্তায় বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম না হয়, তাহলে আর যাই হোক, গণআন্দোলন হবে না। যেমনটি হয়েছিল ৯০ ও ৯৬ সালে। বিএনপির সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এখন ১৭ বছর ক্ষমতায় বাইরে থাকা দলটি কী করবে? জ্বালাও পোড়াও, ভাঙচুরের পথে হাঁটবে? হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিয়ে দেশ অচল করে দেবে, এই অক্টোবরে?

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে বেশ মনোযোগী। প্রায় প্রতিদিন ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে ম্যাথিউ মিলার বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলছেন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসও কম যান কীসে? প্রতিদিনই শুনি এই অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ওপর আরও চাপ দেবে। অর্থনীতির টুঁটি চেপে ধরবে। সরকার নাকি মার্কিন চাপে পদত্যাগে বাধ্য হবে। এমন বক্তব্য আজকাল প্রকাশ্যেই দিচ্ছেন মার্কিনপ্রেমী সুশীলরা। দেখা যাক অক্টোবরে মার্কিন চাপ কতটুকু তীব্র হয়। বিএনপির অনেক নেতাই বিশ্বাস করেন, তাদের কিছুই করতে হবে না। অক্টোবরেই যুক্তরাষ্ট্র এ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। আগে বিএনপির নেতারা এসব কথা আড়ালে-আবডালে বলতেন। এখন বলেন প্রকাশ্যে। শুধু নেতা নয়, বিএনপির পাতিনেতা, এমনকি কর্মীরাও এখন পকেটে ভিসা স্যাংশনের তালিকা নিয়ে ঘোরে। কে কে স্যাংশন পাবে তারা হিসাব করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। বিএনপির অনেকেই বিশ্বাস করে, অক্টোবরেই যুক্তরাষ্ট্র টর্নেডোর মতো বাংলাদেশে আঘাত হানবে। তাতে সরকার তছনছ হয়ে যাবে। অক্টোবর মাসটা সরকারের জন্যও চ্যালেঞ্জিং। সরকার দেশকে কি একটি নির্বাচনের দিকে নিয়ে যেতে পারবে কি না, তা বোঝা যাবে এ মাসেই। ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন। অক্টোবর জুড়ে আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন উৎসব করবে। বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে সমান্তরালভাবে কর্মসূচি পালন করবে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে মোকাবিলা করতে চাইবে। দেশকে নির্বাচনমুখী করাটাই অক্টোবরে আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, অক্টোবরে কিছুই হবে না। কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। আওয়ামী লীগ কি পারবে দেশ-বিদেশের চাপ সামাল দিতে?

২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো নয়, সত্যিকারের একটা অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপায় সরকারকে বের করতে হবে এ অক্টোবরেই। যে নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে। আমার বিবেচনায় রাজনৈতিক কারণে নয়, অর্থনৈতিক সংকটে সরকারের জন্য অক্টোবর মাস হতে পারে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও চ্যালেঞ্জিং। প্রতিদিন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। ২০ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে এখন রিজার্ভ। ডলার সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। খোলা বাজারে ডলারের জন্য রীতিমতো হাহাকার। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বহু আগেই। মানুষ হাঁসফাঁস করছে। মানুষের সীমাহীন কষ্ট আর আর্তনাদ নিয়ে রীতিমতো তামাশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ব্যাংকগুলোতে চলছে নৈরাজ্য। অর্থ পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য কমেনি। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে কোনো সুখবর নেই। তার চেয়েও উদ্বেগের বিষয় হলো, সংকট উত্তরণে কোনো দৃশ্যমান চেষ্টাও নেই। বরং তথ্য ধামাচাপা দিয়ে এক ধরনের আত্মতৃপ্তির ভয়াবহ প্রবণতা ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বাভাবিক সূত্র হলো, অর্থনীতি ঠিক না থাকলে রাজনীতি পথ হারাতে বাধ্য। অর্থনীতির চাপে আওয়ামী লীগ সরকার অক্টোবরে কি পথ হারাবে?

রাজনীতি গণিতের কোনো সূত্র নয়। রাজনীতির অঙ্কের সব হিসাব সবসময় মেলে না। অক্টোবরে কী হবে, তা হয়তো সামনের কয়টা দিনই বলে দেবে। তবে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, গণতন্ত্রের পথরেখা পরিষ্কার হবে এ অক্টোবরেই। দেখার বিষয় কেমন হয় অক্টোবর। শারদীয় শ্বেতশুভ্রতার উৎসবের অক্টোবর, নাকি সন্ত্রাস এবং সহিংসতার উত্তাপে বাংলাদেশ দগ্ধ হবে এই অক্টোবরে?

 

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ই-মেইল : poriprekkhit@yahoo.com


অক্টোবর   বাংলাদেশ   রাজনীতি  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

মালদ্বীপে বিপর্যয়, বাংলাদেশ নিয়ে আরও মরিয়া ভারত

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০১ অক্টোবর, ২০২৩


Thumbnail

মালদ্বীপের নির্বাচনে চীনপন্থীদের জয় হয়েছে। সেখানে ভারতের অনুগত প্রার্থীর পরাজয় ঘটেছে। এর ফলে এই উপমহাদেশে আরও একলা হয়ে পড়লো ভারত। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা চীনের দখলে চলে গেছে। পাকিস্তান ভারতের জন্মগত শত্রু। নেপালেও এখন ভারত বিরোধীতা আগের চেয়ে বেশি চাঙ্গা হয়েছে। আর সর্বশেষ মালদ্বীপও ভারতের হাত ছাড়া হয়ে গেল। এরকম অবস্থায় এই উপমহাদেশে বন্ধুহীন ভারত তার দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হস্তক্ষেপ বন্ধের জন্য বাংলাদেশের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে পড়লো। মালদ্বীপের এই নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারত আরও বেশি মনোযোগী হবে এবং বাংলাদেশে ভারত তার স্বার্থ রক্ষার জন্য আরও বেশি মরিয়া হবে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে এ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে একটা দ্বিমত সকলেই লক্ষ্য করেছেন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাচ্ছে এবং সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে সেখানে ভারত মনে করছে যে, গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হলে বা বর্তমান সরকারকে দুর্বল করলে এই অঞ্চলের ক্ষতি হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশে যদি সরকারের ওপর বেশি ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হয় তাহলে সরকার চীনের দিকে ঝুকে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করছে ভারত। আর এই বিষয়টি নিয়ে ভারত একাধিকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে দর কষাকষিও চলছে। এখন যখন মালদ্বীপের নির্বাচনে বিপর্যয় ঘটলো তখন ভারত নিশ্চয়ই বাংলাদেশের বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দেবে।

ঐতিহাসিক ভাবে বাংলাদেশ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত অনেক দীর্ঘ এবং কৌশলগত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৯ সালের আগে এই সীমান্ত দিয়েই ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশে আসতো এবং বিভিন্ন সীমান্ত অঞ্চলের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থাকতো। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর তারা ভারতে গিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী এবং নাশকতামূলক কর্ম তৎপরতা চালাতো। বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের তৎপরতার ব্যাপারে ভারত বাংলাদেশকে অভিযোগ করলেও বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিল। এই সময় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র সরবরাহের জন্য বাংলাদেশকে রুট হিসাবে ব্যবহার করা হতো। আর ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রবণতা বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি ভূখণ্ডও বিচ্ছিন্নতাবাদের জন্য ব্যবহার করা হবে না—এমন ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করেন। 

বর্তমান সরকারের প্রতি যে ভারতের সব রাজনৈতিক দলের আস্থা তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন। ভারত মনে করে যে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন জন্যই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে এরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। আর এ কারণেই তারা গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা চায় এবং আগামী নির্বাচনে যেন শেখ হাসিনা দুর্বল না হয় সেটি নিশ্চিত করতে চায়। আর এই রকম অবস্থানের সঙ্গে যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমত না পোষণ করে সেটি নিয়ে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছে। তবে এখন মালদ্বীপের নির্বাচনের ফলাফলের পর ভারত বিশ্বে এ বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দেবে এবং এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ভারতের অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান পাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

মালদ্বীপের নির্বাচন   ভারত   বাংলাদেশের নির্বাচন   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

অক্টোবরে যে পাঁচ ঘটনা রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারে

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

অক্টোবর মাস বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে অনেক কিছু ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন রাজনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিও বলছেন, এই মাসে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘অক্টোবরেই সরকারের পতন ঘটবে।’ অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, ‘এই অক্টোবরেও আছি, আগামী অক্টোবরেও থাকবো।’ অক্টোবর নিয়ে পাল্টাপার্টি ঘোষণার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে কি হতে যাচ্ছে আগামী অক্টোবরে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুরু হওয়া মাস আগামী অক্টোবরে পাঁচটি ঘটনা রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারে। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা: বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ এবং জটিল অসুখে তিনি ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন বলেই দাবি করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপির নেতারা বলছেন, এই মুহূর্তে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠানো হলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই নিয়ে বক্তৃতায় আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণাও করেছিলেন। তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আবেদন এখন আইন মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। আগামীকাল রোববার এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত জানাবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী আজ ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এই ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে গেলে আদালতের মাধ্যমে যেতে হবে বলেই তিনি দাবি করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার যদি কিছু হয় তাহলে রাজনীতি নতুন বাগ নেবে। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপি বড় ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা করতে পারে। আন্দোলন এর মাধ্যমে বেগবান হতে পারে এমনটি কেউ কেউ মনে করছেন। আবার অনেকের ধারণা বেগম খালেদা জিয়ার তেমন কিছু হলে খুব একটা বড় প্রভাব রাজনীতিতে পড়বে না। তবে সরকার যদি শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয় তাহলে সরকারের জন্য তা ইতিবাচক হতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। 

২. অর্থনৈতিক সংকট: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। অক্টোবরে এই অর্থনৈতিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে কোনো কোনো বিশ্লেষকের ধারণা। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভ ক্রমশ কমতে থাকা, ডলারের বাজারে হাহাকার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষকে দিশেহারা অবস্থায় নিয়ে গেছে। এই রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে অর্থনৈতিক সংকট রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। এই অক্টোবর মাসে বোঝা যাবে অর্থনীতিতে সরকার কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন এবং সেই পদক্ষেপ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা পালন করে কিনা।

৩. প্রধানমন্ত্রীর নাটকীয় ঘোষণা: অনেকেই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী অক্টোবরে একটি নাটকীয় ঘোষণা দিবেন। আগামী ৪ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা আছে। দেশে ফিরে তিনি নির্বাচন এবং বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো ঘোষণা দিতে পারেন এমন প্রত্যাশা করছেন অনেকে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব সময় একটা ম্যাজিক থাকে। যেকোনো সংকটে তিনি একটা সমাধান নিয়ে হাজির হন। প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচন নিয়ে যে অচল অবস্থা তা দূর করার জন্য কোন ধরনের সমাধান দেবেন সেটার দিকে তাকিয়ে আছে অনেকের।

৪. মার্কিন প্রভাব: বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কমতি নেই। একের পর এক বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা এবং শর্ত আরোপ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আগামী অক্টোবরে বোঝা যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কি ভাবছে এবং কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশে নির্বাচন বন্ধ করতে চায়? এখানে একটি অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কায়েম করতে চায় নাকি নির্বাচনের ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নমনীয় হবে তা স্পষ্ট হবে এই অক্টোবরে।

৫. ভারতের ভূমিকা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতি কিভাবে দেখতে চায়? বিশেষ করে নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের অবস্থান কি তা পরিষ্কার হবে অক্টোবরে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অক্টোবর মাসেই সবকিছু নির্ধারিত হবে। কারণ নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করার কথা। তার আগেই যেকোনো একটি ঘটনা বা বিভিন্ন ঘটনার সমন্বয় বাংলাদেশের রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে। কি হবে অক্টোবরে তা বোঝা যাবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই।


অক্টোবর   নির্বাচন   বিরোধী দলের আন্দোলন   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   ভারত   খালেদা জিয়া   মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর   রাজনীতির খবর  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

শেখ হাসিনার পর কে?

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

একজন বিদেশীর সাথে কথা হচ্ছিল কদিন আগে। ঢাকার এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ী চালিয়ে তিনি মুগ্ধতার কথা বলেছিলেন। কুড়ি বছর আগে একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন এই উন্নয়নকর্মী। কুড়ি বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া দৃশ্যপট দেখে তিনি উল্লাসিত, আপ্লুত। একটি দেশ কিভাবে এতো কম সময়ে এভাবে উন্নতি করতে পারে? প্রশ্নটা করে নিজেই উত্তর দিলেন। দুটি কারণ, এদেশের জনগণের অদম্য প্রাণশক্তি আর অসাধারন নেতৃত্ব। একজন যোগ্য এবং সঠিক নেতা যে জনগণের শক্তিতে কোথায় নিয়ে যেতে পারেন, তার প্রমাণ বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা। একটানা কথা গুলো বলে থামলেন ভদ্রলোক। একটু দম নিয়ে, আবার কথা শুরু করলেন। আচমকা আমাকে প্রশ্ন করলেন শেখ হাসিনার পর কে? নিজেই উত্তর দিলেন ‘আই ডোন্ট সি এনি ওয়ান’ (আমি কাউকে দেখিনা)। তার এই প্রশ্ন আমাকে কিছুটা হলেও ভাবনার সাগরে নিয়ে গেল। শেখ হাসিনা গত ২৮ সেপ্টেম্বর ৭৭ তম জন্মদিন পালন করলেন। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের বিবেচনায় তিনি অন্যতম প্রবীন রাজনীতিবিদ। এধরনের বয়সে অনেকে অবসর জীবন যাপন করেন। নাতি-নাতনী নিয়ে চুটিয়ে সময় কাটান। কারো কাটে নানা রোগ শোকের সঙ্গে যুদ্ধ করে। কিন্তু শেখ হাসিনা তার আশ্চর্য ব্যতিক্রম। এই বয়সেও তিনি প্রচন্ড ব্যস্ত। কর্মচাঞ্চলে ভরপুর এক উজ্জীবিত মানুষ। এখনও আমাদের চেয়ে তিনি বেশি কাজ করেন। নিজ যোগ্যতা, দক্ষতায় এবং মেধায় তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। রাষ্ট্রনায়ক থেকে হয়েছেন বিশ্বনেতা। দলে এবং দেশে তার কোন বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার বিকল্প একমাত্র শেখ হাসিনাই।

বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দল গুলো এখন এক দফা আন্দোলন করছে। এক দফার মূল দাবী হলো ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন নয়।‘ বিএনপি নেতারা ইদানিং সারাক্ষণ শেখ হাসিনার সমালোচনায় মুখর থাকেন। সব আক্রমনের কেন্দ্রবিন্দুতেই তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা বিদেশে বসে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচারের দোকান খুলে বসে নিয়মিত দূর্গন্ধযুক্ত কদর্য নর্দমার মতো বমি উগলাচ্ছেন, তাদেরও প্রধান লক্ষ্য বস্তু এখন ‘শেখ হাসিনা’। শেখ হাসিনাকে সরানোই তাদের জীবনের যেন একমাত্র আরাধ্য। কিন্তু শেখ হাসিনাকে সরিয়ে কাকে আনতে চান তারা? নির্বাচিত না অনির্বাচিত সরকার প্রধান? ধরা যাক, বিএনপির কথাই ঠিক। তারা দেশে একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা এটাও বিশ্বাস করে, ‘নিরপেক্ষ এবং অবাধ’ নির্বাচন হলে, বিএনপি জিতবেই জিতবে। খুব ভালো কথা। বিএনপি যদি নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? আমি না, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিকরাও বিএনপি নেতাদের হরহামেশাই এই প্রশ্ন করেন। এর জবাবে বিএনপি মহাসচিব এবং অন্যান্য নেতারা যে জবাব দেন, তা রীতিমতো কৌতুক। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারেও এর উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে বেগম জিয়াই প্রধানমন্ত্রী হবেন। তার অবর্তমানে তারেক জিয়া হবেন সরকার প্রধান।‘ কি সাংঘাতিক কথা। বেগম জিয়া দুটি মামলায় সাজা পেয়েছেন। একটি মামলায় হাইকোর্টে তার সাজা বহাল আছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়া তো দুরের কথা, সংসদ সদস্য হতে পারবেন না। তাকে বিএনপি মহাসচিব কিভাবে প্রধানমন্ত্রী বানাবেন বুঝলাম না। একই বাস্তবতা লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার বেলাতেও। এমনকি আইন ও সংবিধান পাল্টালেও আগামী সরকার প্রধান হওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব না। মির্জা ফখরুল এসব জানেন না, এমনটি নয়। জেনে শুনেই এই অসত্য উচ্চারণ তিনি করছেন। কারণ জনগণকে, বিশেষ করে দলীয় নেতা কর্মীদের উজ্জীবিত রাখা। কর্মীরা যেন হতাশ না হয়ে যান, এজন্যই এধরনের বক্তব্য। কারণ, বিএনপি মহাসচিব ভালো করেই জানেন, শেখ হাসিনার বিকল্প হিসেবে তিনি (মির্জা ফখরুল) জনগণের কাছে তো নয়ই, তার নিজের দলেও কাছেও গ্রহণযোগ্য নন। বেগম জিয়ার দন্ডের কথা যদি বাদও দেই, তারপর তিনি কি শেখ হাসিনার বিকল্প? বিএনপি নেতারাই বলছেন, বেগম জিয়া গুরুতর অসুস্থ। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাহলে কোনটা সত্য? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া এক কঠিন দায়িত্ব। শেখ হাসিনা যেভাবে দিনরাত একাকার করে এই দায়িত্ব পালন করছেন। বেগম জিয়া কি অসুস্থ শরীরে তার সিকি পরিমান দায়িত্ব পালন করতে পারবেন? বেগম জিয়া তাই কোন ভাবেই শেখ হাসিনার বিকল্প নন।

তারেক জিয়াকে নিয়ে যে আবেগ, উত্তাপ, তা শুধু বিএনপির তরুণ কর্মীদের মধ্যে। সাধারণ মানুষ তারেক জিয়াকে রাজনীতিবীদ বলে মনে করে না। একজন দূর্নীতিবাজ, দূর্বৃত্ত মনে করে। তারেক জিয়া যদি কোনদিন দূর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে দেশের কি হাল হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে ছায়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, দূর্নীতি কাকে বলে, কত প্রকার কি কি। সেই সময়ে হাওয়া ভবনের লুণ্ঠন কাহিনী আরব্য রজনীকেও হার মানায়। কাজেই তারেক জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর বিকল্প ভাবা এক ধরনের গর্হিত অপরাধ।

বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাধায়ক সরকার চায়। বিএনপির অনেক নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী কে হবে তা পরের বিষয়, আগে একজন তত্ত্বাধায়ক সরকার প্রধানের কথা ভাবুন। চোখ বন্ধ করে দেখুন তো শেখ হাসিনার কোন বিকল্প খুঁজে পান কি না? গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। একাই দেশ সামলাচ্ছেন। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার তিনি। সব কিছুর দিকে তার দৃষ্টি। এদেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন তিনি তিল তিল করে। সব কিছু উপেক্ষা করে। এই মুহুর্তে দেশে তার কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশকে তিনি যে সম্ভাবনার সোনালী বন্দরে নিয়ে গেছেন যেখান থেকে দেশকে এগিয়ে নেয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি কি এই মুহুর্তে বাংলাদেশে কেউ আছেন? গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক ভালো কাজ যেমন আছে, তেমনি এই সরকারের আছে অনেক দূর্বলতা এবং সমালোচনাও। গত ৩/৪ বছরে এই সমালোচনার ক্ষেত্রগুলো বেড়েছে। অর্থপাচার, খেলাপী ঋণ, দূর্নীতি সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পরেছে সমাজের সর্বত্র। কিছু মন্ত্রী অযোগ্যতা এবং ব্যর্থতায় মানুষ অসন্তুষ্ট হতাশ। সর্বত্র আমলাতন্ত্রে দৌরাত্মে মানুষ অস্থির। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষ আর সহ্য করতে পারছে না। এতো কিছুর পরও মানুষ যে আশা হারায়নি। এর একটি কারণ হলো শেখ হাসিনা। দেশের মানুষ তার উপর আস্থাশীল। জনগণ শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে। নিশ্চয়ই তিনি সংকট উত্তরণে সাহসী পদক্ষেপ নেবেন, এমনটা মনে করেন দেশের বেশির ভাগ মানুষ। দেশের সিংহভাগ জনগণের কাছে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই।

আওয়ামী লীগ সরকারকে নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্বস্তি এখন কোন নতুন বিষয় নয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার ইস্যুতে তাদের রয়েছে অনেক প্রশ্ন। কিন্তু একটি বিষয়ে এসে তারা আটকে যায়। শেখ হাসিনার বিকল্প কে? শেখ হাসিনাকে বাদ দিলে কে হাল ধরবে এই দেশের। শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ কি আরেকটি আফগানিস্তান হবে না? আমার তো মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যদি শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ থাকতো, তাহলে তারা এতোদিনে পাকিস্তানের মতো কোন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতো। তাই, দেশ পরিচালনা শেখ হাসিনা অবিসংবিদিত নেতা। শেখ হাসিনার পর কে? এই প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছে।

রাষ্ট্রে সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার বিকল্প যেমন কেউ নেই, তেমনি আওয়ামী লীগেও শেখ হাসিনার বাইরে কোন নেতা নেই। আওয়ামী লীগ আরো বেশী শেখ হাসিনা নির্ভর। কিংবা বলা যায় পুরোপুরি শেখ হাসিনা নির্ভর। আমার তো মনে হয় শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগ বিভ্রান্ত, মুমুর্ষ এবং প্রায় বিকলাঙ্গ। আওয়ামী লীগের কর্মীরা একমাত্র শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করেন, অন্য নেতাদের উপর তাদের আস্থা নেই। অন্যান্য নেতারা, প্রেসিডিয়াম সদস্য বলি আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলি, নিজেরা গৎবাঁধা বক্তৃতা দেয়া ছাড়া আর কোন কাজ করতে পারেন না। একটি সিদ্ধান্তের জন্য তারা তাকিয়ে থাকেন শেখ হাসিনার দিকে। রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারনের যোগ্যতাও নেই বেশির ভাগ নেতার। শেখ হাসিনা যেন আওয়ামী লীগকে এক সূত্রে গেঁথে রেখেছেন। তিনি না থাকলে এই দলটি ৭৫ এর পরবর্তী অবস্থায় মতো অবস্থায় চলে যাবে। ইদানিং প্রায় আওয়ামী লীগের মধ্যে শেখ হাসিনার উত্তরাধিকার নিয়ে আলোচনা শুনি। শেখ হাসিনার পর দলের হাল কে ধরবেন, তা এখনই ঠিক করা উচিত এমন মত অনেকের। শেখ হাসিনা ৭৭ বছরে পা রাখলেন। আগামী  কাউন্সিলে হয়তো তিনি দলের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেবেন, এমন শংকা অনেকের। তখন কে হাল ধরবেন আওয়ামী লীগের? শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নাকি রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি? কে ভালো হবে, এ নিয়ে প্রায়ই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন আড্ডায় নানা আলোচনা হয়। শেখ হাসিনা কেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতা এখনই নির্ধারণ করছেন না, এনিয়ে কারো কারো উৎকণ্ঠা কানে আসে। এই সব প্রশ্নের উত্তর দুভাবে দেয়া যায়। প্রথমত, বয়স প্রসঙ্গ। শেখ হাসিনা এখন ৭৭। এই বয়সে তিনি যে পরিশ্রম করেন, তা কজন তরুণ-যুবক করতে পারেন? এই নভেম্বরে জো বাইডেন ৮১ বছর পূর্ণ করবেন। দ্বিতীয় মেয়াদে অর্থাৎ ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার ঘোষণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট দিয়েছেন। কোথায় তার অবসরের কথা তো কেউ বলেন না। ৮২ বছর বয়সেও মন মোহন সিংহ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার ক্লান্তি কিংবা বার্ধক্য নিয়ে তো কোন প্রশ্ন তোলা হয়নি। কিছু কিছু মানুষের জীবন হয় কর্মমুখরতায় ভরপুর। আমৃত্যু তিনি কাজ করে যান। শেখ হাসিনা তেমনি একজন। তার রাজনীতি থেকে কিংবা সরকার প্রধানের পদ থেকে তার অবসরের ভাবনা অবান্তর। এ সিদ্ধান্তটা একান্তই শেখ হাসিনার। তার প্রতিটি মুহুর্ত জনগণের কল্যাণে নিবেদিত। তাই এখনই তার অবসরের চিন্তাটা না করাই শ্রেয়।

এবার আসা যাক আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে। আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। এই দলটির নেতৃত্ব কর্মীদের অভিপ্রায় থেকে উৎসারিত। আওয়ামী লীগ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে উত্তরাধিকারের রাজনীতি করেনি। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী থেকে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বে এসেছেন নিজ যোগ্যতায়। কর্মীদের উপর নেতৃত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়নি। শেখ হাসিনাও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এসেছেন দলের অস্তীত্বের প্রয়োজনে। দল বাঁচানোর আর কোন বিকল্প ছিলো না জন্যই শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি করা হয়েছিল। একথা ঠিক, জাতির পিতার কন্যা জন্যই তিনি কর্মীদের ভালোবাসা পেয়েছেন। দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছেন। কিন্তু গত ৪৩ বছরে আওয়ামী লীগকে তিনি আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছেন নিজ যোগ্যতায়, পরিশ্রম এবং প্রচন্ড ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে। যতো দিন তিনি কর্মক্ষম আছেন, ততোদিন আওয়ামী লীগে তার বিকল্প কেউ হবে না। শেখ হাসিনার পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব আসবে কর্মীদের স্বত:ফূর্ত আকাঙ্খা থেকে। কর্মীরাই পছন্দ করবেন, কে হবে আওয়ামী লীগের নেতা। উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্ব যে গ্রহণযোগ্য হয়না, ভারতের কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। তাই শেখ হাসিনার পর কে? এই প্রশ্নটা এখন বড্ড অসময়ের প্রশ্ন। এই রাষ্ট্র এবং জনগণকে শেখ হাসিনার এখনও অনেক কিছুই দেয়ার বাকী আছে।

 

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com



মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আমলারা হঠাৎ নিরপেক্ষ হয়ে যাচ্ছেন কেন?

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

বুধবার সচিবালয়।। একজন গুরুত্বপূর্ণ সচিবের কাছে গেলেন একজন জনপ্রতিনিধি। সংসদ সদস্য তার নির্বাচনী এলাকার  একটি কাজ সংক্রান্ত ফাইল সচিবের টেবিলে আটকে আছে বলে জানালেন এবং দ্রুত ফাইলটা নিষ্পত্তি করার জন্য অনুরোধ জানালেন। সচিব তার পূর্ব পরিচিত এবং ঘনিষ্ঠও বটে। কিন্তু এবার তিনি ভিন্ন অবয়বে দেখা দিলেন। সচিব জনপ্রতিনিধিকে বললেন, ‘ফাইল তার নিয়মেই যাবে। এটার জন্য আমাকে তদবির করে লাভ নেই। এখন অনেক ঝামেলায় আছি। দেশে কি হচ্ছে আমরা বুঝি না। এ ধরনের তদবির এখন আর গ্রহণ করতে পারছি না। দুঃখিত।’ 

সচিবের এই আচরণে হতবাক হয়ে গেলেন সংসদ সদস্য। সংসদ সদস্য বলছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই সচিবের সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি আগে এলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতেন। আমার কোন কাজ থাকলে সেই কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট ডেস্ককে ফোন করতেন, দ্রুত কাজ নিস্পত্তি করার জন্য তৎপরতা দেখাতেন। কিন্তু আজকে তিনি যে আচরণটা করলেন তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।

শুধু এই সচিব নয়, সচিবালয়ের চেহারা গত কিছুদিনে পাল্টে গেছে। বিশেষ করে ২২ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েকজনের ওপর যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারপর সচিবালয়ের দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। অনেকেই এখন নিরপেক্ষ হওয়ার প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। আওয়ামী লীগের নেতা বা আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরা আসলে তাদেরকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোনো বিতর্কিত ফাইল হলে সেই ফাইলটি নিচে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ফাইল অনুমোদন না করে ফাইলটিকে ঝুলিয়ে রাখার কৌশল নিয়েছেন অনেক আমলা।

বাংলাদেশে ২০০৯ এর পর থেকে আমলাতন্ত্রের মধ্যে আসতে আসতে রাজনীতিকরণ ঘটে থাকে এবং রাজনীতি প্রশাসনের মধ্যে এমন ভাবে জড়িয়ে যায় যে আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগের কর্মী হয়ে যান প্রশাসনের কর্মকর্তারা। প্রশাসনের কাজের চেয়ে রাজনীতিতে তাদের মনোযোগ ছিল বেশি। কিছুদিন আগেও আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কিভাবে জেতাতে হবে, কোন আসনে কে প্রার্থী হলে জয়যুক্ত হবেন ইত্যাদি নানা আলাপ-আলোচনা হতো সচিবালয়ে। কিন্তু এখন সেই আলাপ-আলোচনা বন্ধ হয়ে গেছে। উল্টো কারা ভিসা স্যাংশন খেল, কার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কে থাকেন বা কার কোন সম্পত্তি পশ্চিমা দেশগুলোতে আছে সে নিয়ে মৃদু আলাপ আলোচনা হয় বটে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে জেতাতে হবে এই ধরনের বক্তব্য এখন কান পাতলে আর শোনা যায় না।

সচিবালয়ে যখন এই অবস্থা তখন মাঠ প্রশাসনের চিত্র নয়। কয়েকদিন আগেই এক ডিসি আওয়ামী লীগকে আবার ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রত্যাহার হয়ে গেছেন। এরপর থেকেই প্রশাসনে মাঠ পর্যায়ে নিরপেক্ষতা দেখা যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক, এমনকি ইউএনওরা জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের এড়িয়ে চলছেন। আগে যে সমস্ত আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে চা না খেয়ে দিনের কাজ শুরু করতেন না ডিসি, ইউএনওরা এখন তার উল্টো চিত্র। চাকরি বাঁচানোর জন্য এখন তারা আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে কার্যালয়ে না আসার জন্য অনুরোধ করছেন। যারা সত্যি সত্যি আওয়ামী লীগের প্রতি অনুরক্ত বা আওয়ামী লীগকে পছন্দ করেন তারা ব্যক্তিগত ফোন ব্যবহার করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলার জন্য। প্রশাসনের মধ্যে একটা নিরপেক্ষতার আবহ তৈরি হচ্ছে ক্রমশ। এর একটা কারণ যেমন ভিসা নিষেধাজ্ঞা অন্যটা হল প্রশাসনের পক্ষপাত নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন। আর ফলে প্রশাসন হঠাৎ করেই যেন নিরপেক্ষ হয়ে গেছে।

সচিবালয়   প্রশাসন   নির্বাচন   ভিসা নিষেধাজ্ঞা   জনপ্রতিনিধি   সরকার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন