এডিটর’স মাইন্ড

বেগম জিয়া কি শেখ হাসিনার নির্বাচনী চমক?

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখন বাংলাদেশের রাজনীতির মুখ্য আলোচ্য বিষয়। নির্বাচনে কে জিতবে তা নয়। বরং আগামী নির্বাচন কেমন হবে অথবা হবে কি না তা নিয়ে নানা মত, নানা ভাবনা। বিএনপি কি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে? বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে সেই নির্বাচন কি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে? বিএনপি এবং তার নেতৃত্বাধীন দলগুলো কি তাদের নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে পারবে?  ইত্যাদি নানা প্রশ্ন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক এখন সর্বত্র। এসব আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন না। এমনকি তার মুক্তির দাবিটিও বিএনপি নেতারা প্রায় ভুলতে বসেছেন। বিএনপিতে ‘রাজা’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া। তার একনায়কতান্ত্রিক সিদ্ধান্তেই দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি পরিচালিত হচ্ছে। বেগম জিয়ার নাম উচ্চারিত হয় কর্মীদের স্লোগানে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম জিয়া যেন আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাওয়া একটি নাম। কিন্তু গত কয়েক দিন পরিত্যক্ত, মেয়াদোত্তীর্ণ বেগম জিয়া দমকা বাতাসের মতো রাজনীতিতে উচ্চারিত হচ্ছেন। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেগম জিয়ার রাজনীতি করা বিষয়ে কিছু নতুন, চমকপ্রদ এবং ইঙ্গিতবাহী কথা বলেছেন। বেগম জিয়ার রাজনীতি করা প্রসঙ্গটি নিয়ে প্রথম কথা বলেন আইনমন্ত্রী। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সহকারী জজদের একটি অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটি শর্তে তাকে (বেগম জিয়া) মুক্ত করা হয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ রকম শর্ত সেটার মধ্যে ছিল না।’ আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তিনি একজন স্বাধীন মানুষ। কাজেই তিনি কী করবেন সেটা আমার বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু তাকে যখন ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায় অসুস্থ বলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে লিখে রাখিনি তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না। আইনি প্রক্রিয়ায় যদি কার্যক্রমের কথা বলি, তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কি না, তাহলে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘না’। তিনি পারবেন না।’ অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে- যদি নৈতিক স্খলনের দায়ে কেউ দুই বছর বা তার বেশি কারাদন্ডে দন্ডিত হন তাহলে তিনি সাজা ভোগের পর পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’

আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই একই প্রসঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় যান সেতুমন্ত্রী। সেখানে তিনি ছাত্রলীগের স্টল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। নির্বাচনে বিএনপি বেগম জিয়ার অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) দন্ডিত, এ অবস্থাটা তার নির্বাচন করার পক্ষে নয়। নির্বাচনের যোগ্য নন তিনি। বিএনপি নেতা হিসেবে তিনি যদি রাজনীতি করতে চান, তাহলে তাকে মুক্তির শর্ত অনুযায়ী করতে হবে।’

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রীর বক্তব্য একত্রিত করলে যা অর্থ দাঁড়ায় তা হলো- বেগম জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন। তবে সাংবিধানিক অযোগ্যতার কারণে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

বেগম জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত কর্তৃক দোষী প্রমাণিত হন। রায় ঘোষণার পরপর তাকে কারান্তরিন করা হয়। সেই থেকে ২৪ মার্চ ২০২০ সাল পর্যন্ত কারান্তরিন ছিলেন বেগম জিয়া। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া দোষী প্রমাণিত হন। দুটি মামলায় মোট ১৪ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত তিনি। এর মধ্যে এতিমদের টাকা আত্মসাতের মামলায় হাই কোর্ট নিম্ন আদালতের সাজা অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে বাড়িয়েছে। বেগম জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাগারে আটকে রাখার সাধ্য কারও নেই।’ আইনি লড়াই এবং আন্দোলনের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই বিএনপি সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। খালেদা জিয়ার জামিনের আইনি লড়াই আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়ায়। সর্বোচ্চ আদালত বিএনপি চেয়ারপারসনকে জামিন দেননি। বিএনপির আইনজীবীরা বেগম জিয়ার জামিনের ব্যাপারে কতটা নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তা নিয়ে বিএনপির মধ্যেই নানা আলোচনা শোনা যায়। সে বিতর্কে যেতে চাই না। বাস্তবতা হলো- আইনি পথে বেগম জিয়ার জামিন লাভের দুয়ার বন্ধ। আইনের চোখে খালেদা জিয়াকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে আদালতেই। প্রথম মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিএনপি। কিন্তু হাই কোর্টেও প্রমাণিত হয় বেগম জিয়া এতিমদের টাকা চুরি করেছেন। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। কিন্তু সেই আপিল নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেই বিএনপির আইনজীবীদের। আপিল পড়ে আছে বাক্সবন্দি হয়ে। বিএনপির আইনজীবীরা প্রকাশ্যে বলছেন, ভয় থেকেই তারা আপিলের ব্যাপারে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছেন। কারণ আপিল বিভাগে যদি অপরাধ প্রমাণিত হয় তাহলে সেটি হবে সর্বোচ্চ রায়। সর্বোচ্চ আদালত যদি হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে তাহলে আইনের দৃষ্টিতে বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতিবাজ, অর্থ আত্মসাৎকারী হিসেবে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হবেন। বিএনপি নেতারা প্রায়ই বলার চেষ্টা করেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দন্ড এবং মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই এসব সাজানো মামলা। এ প্রসঙ্গে দুটি কথা বলতে চাই। প্রথমত, বেগম জিয়া যে দুুটি মামলায় দন্ডিত হয়েছেন তার একটিও বর্তমান সরকার করেনি। এক-এগারোর সময় মামলাগুলো দায়ের করা। দ্বিতীয়ত, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ। সর্বোচ্চ আদালত থেকে বিএনপির বহু নেতাই প্রতিকার পেয়েছেন। জামিন পেয়েছেন। এই তো কদিন আগেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মির্জা আব্বাস সর্বোচ্চ আদালত থেকেই জামিন পেলেন। বিএনপির আইনজীবীদের আদালতের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে বেগম জিয়া নির্দোষ। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেননি। কিন্তু তা না করে বেগম জিয়াকে বিএনপি থেকে আস্তে আস্তে মাইনাস করা হচ্ছে। বেগম জিয়া বিএনপির ক্ষমতা কেন্দ্রের দ্বন্দ্ব এবং বিবাদের বলি কি না তা নিয়েও ইদানীং নানা আলোচনা হয়। বেগম জিয়াকে আইনি মারপ্যাঁচে বন্দি রেখে কে বা কারা বিএনপিকে কুক্ষিগত করেছে সেই বিতর্ক কান পাতলেই শোনা যায়। আমি সেসব বিতর্কে যেতে চাই না। তবে এটা ঠিক, আইনি লড়াইয়ে বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিএনপির আইনজীবীরা যেমন অনাগ্রহী, তারচেয়েও খালেদা মুক্তি আন্দোলনে অনীহা ছিল বিএনপির। বেগম জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে বিএনপির আন্দোলন ছিল লোকদেখানো, দায়সারা। বিএনপিতেই যখন বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার আয়োজন চূড়ান্ত, ঠিক তখনই ‘চমক’ দেখালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা প্রয়োগ করলেন প্রধানমন্ত্রী। কারাগার থেকে নির্বাহী আদেশে জামিনে মুক্তি দিলেন বেগম জিয়াকে। প্রথমে ছয় মাসের জন্য এ জামিন দেওয়া হয়েছিল। এরপর ছয় মাস করে বাড়িয়ে প্রায় তিন বছর খালেদা জিয়া ‘ফিরোজায়’ থাকছেন শেখ হাসিনার দয়ায়। ২০২০ এর মার্চে বেগম জিয়ার জামিন ছিল আকস্মিক। বিএনপি নেতারা প্রথমে এ সিদ্ধান্ত বিশ্বাসই করতে পারেননি। আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছেও এ সিদ্ধান্ত ছিল অবিশ্বাস্য। শেখ হাসিনা খুব ভালো করেই জানেন, বেগম জিয়া তার বিরুদ্ধে কী কী করেছেন। ২১ আগস্টের বীভৎসতা হয়েছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। বেগম জিয়া সে সময় প্রধানমন্ত্রী। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূলের এ নারকীয় ঘটনা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অজ্ঞাতে হয়েছে এটা বিশ্বাস করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে বেগম জিয়া সবকিছুই করেছেন। জজ মিয়া নাটক সাজানো, হামলার আলামত নষ্ট করাসহ নানা অপকর্ম করা হয়েছে তৎকালীন সরকারের মদদে। এমনকি এরকম একটি নৃশংসতম ঘটনার পর একে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার কুৎসিত তৎপরতা গোটা জাতিকে হতবাক করেছিল। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সমঝোতা এবং সহ-অবস্থানের সব দরজা বন্ধ করে দেয়। শুধু এ ঘটনা কেন, ১৫ আগস্ট বেগম জিয়ার বানোয়াট জন্মদিন পালন কোন যুক্তিতে? কিছুদিন আগেও শোকাবহ ওই দিনটিতে কেক কেটে বীভৎস উৎসব করতেন বেগম জিয়া। এসব কুরুচির চর্চা বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে সহনশীলতাকে বিদায় করে দিয়েছে। এসব ঘটনার পরও প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে বিশেষ বিবেচনায় জামিন দিয়ে যে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন তা বিরল। এ রকম উদারতা একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব।

বেগম জিয়ার সাময়িক মুক্তি আন্দোলনের ফসল নয়। আদালতের আদেশও নয়। তাই তিনি স্বাভাবিক মুক্ত নন। সাধারণত যারা বিভিন্ন সময় দন্ডিত হয়ে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন, তারা রাজনীতি বন্ধ করেননি। প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। নিম্ন আদালতে দন্ডিত হওয়ার পর এরশাদ আইনি লড়াই এবং রাজনীতি সমান্তরালভাবে চালিয়ে গেছেন। আদালত থেকে জামিন পেলে খালেদা জিয়া অবশ্যই রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারতেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন কি না এটা সম্পূর্ণ সরকারের ইচ্ছাধীন একটি বিষয়। গত প্রায় তিন বছর বিশেষ বিবেচনায় জামিনে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনীতি নিয়ে টুঁ শব্দটি করেনি। এমনকি ঈদে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তার বাসভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলেও কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি। সচেতনভাবেই রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। কেন? এ ব্যাপারে কি সরকারের পক্ষ থেকে তার ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে? এ প্রশ্নের আংশিক উত্তর পাওয়া গিয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্যে। গত ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে তিনি দাবি করেন, ‘বেগম জিয়া রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে জামিন নিয়েছেন।’ যদিও তার এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বিএনপি। কিন্তু বেগম জিয়া অন্য জামিনপ্রাপ্ত দন্ডিতদের মতো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে কেন অংশ নেন না, এ ব্যাপারে বিএনপি নেতারা কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। আইনমন্ত্রী অবশ্য বিষয়টি খোলাসা করে দিয়েছেন। বেগম জিয়া যে পদ্ধতিতে জামিন পেয়েছেন তাতে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন কি না তা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। সরকার চাইলে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন। সরকার না চাইলে পারবেন না। এখন কি সরকার বেগম জিয়াকে রাজনীতির মাঠে আনতে চাইছে? দুই মন্ত্রীর কথার মানে হচ্ছে- হ্যাঁ। বেগম জিয়াকে রাজনীতিতে আনলে কার লাভ, কার ক্ষতি? কদিন আগেও বিএনপি নেতারা বক্তৃতায় বললেন, ‘বেগম জিয়া মুক্ত হলে সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।’ বিএনপি মহাসচিব কিছুদিন আগেও এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার জন্য, জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই বেগম জিয়াকে জোর করে আটকে রেখেছে।’ বিএনপির প্রায় সব নেতাই ইনিয়ে-বিনিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন বেগম জিয়া রাজনীতির মাঠে নামলেই দেশে বিপ্লব হবে। দেশের জনগণ হুড়মুড় করে রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। সরকারের পতন হবে। আবার আইনমন্ত্রী যখন জানালেন বেগম জিয়ার রাজনীতি করতে বাধা নেই, তখন বিএনপি নেতারা নড়েচড়ে বসলেন। তারা মনে করলেন এটা ‘টোপ’। বিএনপিকে নির্বাচনে নেওয়ার ষড়যন্ত্র। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা সংবাদপত্রে বলেছেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে খালেদা জিয়াকে ব্যবহার করা হতে পারে বলে আমাদের সন্দেহ’। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা নিয়ে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব বিএনপির কাছে দুই কারণে সন্দেহজনক। প্রথমত, বিএনপির নেতারা মনে করেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার বিনিময়ে সরকার বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায়। বেশ কয়েক মাস ধরেই খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য দেনদরবার করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এ জন্য তাকে আগে সারেন্ডার করতে হবে। আগের জামিন বাতিল হবে। তারপর নতুন করে আবেদন করলে সরকার বিবেচনা করবে। বেগম জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি তার এবং পরিবারের বিষয়। এখানে দলের কোনো ভূমিকা নেই। এমনকি বেগম জিয়ার জামিনও হয়েছিল তার ভাই ও বোন যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তাহলে খালেদা জিয়া বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পেলেই বিএনপি কেন সুড়সুড় করে নির্বাচনে যাবে? দলের কোনো নীতি নেই, আদর্শ নেই! বিএনপির মধ্যে কারও কারও এ নিয়ে ভীতি আরও উদ্বেগজনক। বিএনপির কেউ কেউ মনে করেন, বেগম জিয়াকে ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে রাজনীতির মাঠে নামানো হবে। রাজনীতিতে এসেই তিনি দলকে নির্বাচনে যাওয়ার নির্দেশ দেবেন। তাদের মতে, বিএনপি চেয়ারপারসন এখনো দলে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি যদি সরকারের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির অবস্থার কথা অনেকে স্মরণ করিয়ে দেন। সে সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু রওশন এরশাদ স্বামীর বিপক্ষে অবস্থান নেন। শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদের দৃঢ় অবস্থানের কারণে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেয়। বিএনপির অনেকের শঙ্কা এবার কি তার দলেও মা-পুত্রের একই বিরোধ হতে যাচ্ছে। তারেকের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই কি বেগম জিয়াকে নির্বাচনে মাঠে নামানো হচ্ছে? তাকে রাজনীতি করার অনুমতি দেওয়া হবে সরকারের পক্ষে খেলার জন্য?

আগামী নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান বিদেশি কূটনীতিকরা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র তো এ নিয়ে রীতিমতো প্রচারণায় নেমেছে। একের পর এক যুক্তরাষ্ট্র থেকে কূটনীতিকরা ঢাকায় আসছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে তারা খোলামেলা কথাবার্তা বলেছেন। সর্বশেষ ঢাকা সফর করে গেলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবেই বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। অবাধ ও সুষ্ঠু। বিএনপির আন্দোলন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এখনো আওয়ামী লীগের কাছে গুরুত্বহীন। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই বিশ্বাস করেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে। বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। অবশ্য এর কোনো ব্যাখ্যা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে নেই। তারা মনে করেন শেখ হাসিনার কাছে ম্যাজিক আছে। সেই ম্যাজিকে সব সংশয়ের মেঘ কেটে যাবে। নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরেকটি ‘চমক’ দেখাবেন। সেই চমক কি ‘খালেদা জিয়া’? এই সন্দেহ এখন বিএনপির মধ্যেও পল্লবিত হয়েছে। বিএনপি নেতারা এখন খালেদা জিয়া আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন। প্রকাশ্যে না বললেও আড়ালে তারা বলছেন, বেগম জিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আপাতত দরকার নেই। কিন্তু রাজনীতি এমন সহজ সরল যোগ-বিয়োগের পাটিগণিত নয়। প্রধানমন্ত্রীর চমকও যদি এত সহজে অনুমেয় হতো তাহলে তো তা আর চমক থাকত না। সম্প্রতি নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর সবাই স্বীকার করবেন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভাবনা অনেক গভীর। কিছুদিন ধরেই তিনি শক্তিশালী বিরোধী দলের কথা বলছেন। বিরোধী দলের আন্দোলনে বাধা না দেওয়ার কথাও বলছেন। অনির্বাচিত এবং অগণতান্ত্রিক শক্তি যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে সে ব্যাপারেও তিনি সতর্ক। বিএনপি যেন সুশীলদের ফাঁদে না পড়ে। সুশীলদের প্ররোচনায় আরেকটি এক-এগারো ডেকে আনার জন্য সহযোগিতা না করে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী সজাগ। দলের নেতা-কর্মীদেরও এ ব্যাপারে বারবার সতর্ক করছেন। সে জন্যই কি রাজনীতিতে বেগম জিয়াকে মাঠে নামানো হচ্ছে?  বিএনপি যেন শেষ পর্যন্ত অগণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে হাত না মেলায়। সেই লক্ষ্যেই কি পরিত্যক্ত খালেদাকে সামনে আনার উদ্যোগ?  কারণ গ্রামে যখন ডাকাত পড়ে তখন গেরস্তরা ডাকাত তাড়াতে ছিঁচকে চোরকেও সঙ্গে নেয়। সুশীলরা তো গণতন্ত্রের জন্য ডাকাত। সুশীল ডাকাতদের হাত থেকে গণতন্ত্র রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী কি ছিঁচকে (এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী) চোরকে সঙ্গে নেবেন?

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com



মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

ভিসা নিষেধাজ্ঞা: প্রশাসনের মধ্যে উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

প্রথম পর্যায়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরপরই প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের মধ্যে খোঁজ খবর নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মহল টেলিফোনে একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছেন যে, কারা কিভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এলেন। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার জন্য এক ধরনের মরিয়া চেষ্টা দেখা গেছে। তবে লক্ষণীয় ব্যাপার যে প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ব্যক্তি ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর এক ধরনের ভয় এবং আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে বিচার বিভাগের কয়েকজন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এমন তথ্য পাওয়ার পর বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া প্রশাসনের মধ্যে এক ধরনের ভয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং তারা সামনে কি হয় এই নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে ভাষণের পর নিউইয়র্কের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। 

তিনি এটিও বলেছেন যে, বাংলাদেশে যারা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বাধা প্রদানের চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের উদ্বেগ কতটুকু নিরসন করতে পারবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলা ইনসাইডার বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে দেখেছে যে, ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব রাজনীতিবিদদের ওপর অনেক কম পড়েছে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নয়। বরং তারা মনে করছে যে, এই ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে মাথায় রেখেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামনে আরও চাপ দেবে, এটাকে মাথায় নিয়েই কাজ করতে হবে। 

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা মনে করছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছিলেন সেই অবস্থানটি সঠিক ছিল। কিন্তু মাঝখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিভিন্ন ব্যক্তিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের যে নাটক করেছিল সেটি সরকারের জন্য ক্ষতিকারক হয়েছে বলে তারা মনে করেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। বরং কঠোরভাবে নির্বাচনের রোড ম্যাপ বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে ভিসা নীতির যে প্রভাব প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের ওপর পড়েছে সেই প্রভাব নিরসন না করতে পারলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে বলে তারা মনে করছেন। 

আওয়ামী লীগের অনেক নেতা স্বীকার করেছেন যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসন সামনের দিনগুলোতে এক ধরনের অস্বস্তিতে কাটাবে এবং ভিসা নীতির ভয়ে সাধারণ কাজ করতে গিয়ে আতঙ্ক বোধ করবে। এর প্রভাব পড়বে প্রশাসনের ওপর। নির্বাচনের তিন মাস আগে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় সেক্ষেত্রে বিরোধী আন্দোলন আরও চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন যে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাড়াতে হবে এবং সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এই অবস্থানের বিপরীতে অবস্থান নিতে হবে। তা না হলে এই ভিসা নীতির আতঙ্ক প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করবে।

ভিসা নিষেধাজ্ঞা   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   বাংলাদেশের নির্বাচন   ভিসা নীতি  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আগামী ১০০ দিন বাংলাদেশে কি ঘটতে পারে?

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

আমি জ্যোতিষী নই। ভবিষ্যৎ গণনা আমার কাজ না। বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের আগে কি ঘটতে পারে কোন জ্যোতিষীর পক্ষেও এখন বলা সম্ভব কিনা আমার সন্দেহ । হয়তো তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আগামী দিনের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের একটি ধারণা পাওয়া যেতেই পারে। ১০০ দিনের মধ্যে দেশে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এ ব্যাপারে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন আগামী জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু দেশে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কিনা, তা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে কি বিএনপি অংশ নেবে? বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন করা কি আদৌ সম্ভব হবে? সেরকম একটি নির্বাচন কি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পাবে? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন এখন বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে। অফিসে, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে, চায়ের আড্ডায়, হাটে-বাজারে এসব নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। অজানা এক গন্তব্যে বাংলাদেশ।

নির্বাচন হবে কিনা, তা যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর অনেকখানি নির্ভরশীল। তেমনি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আগামী ১০০ দিন কতগুলো ‘এক্স ফ্যাক্টর’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দু’দলই রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ চাইছে। মাঠের দখলের লড়াই এখন দৃশ্যমান। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যত এখন শুধু আওয়ামী লীগ, বিএনপির শক্তি এবং নেতৃত্বের দক্ষতার উপর নির্ভরশীল নয়। পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুই দেশের নির্বাচন এবং রাজনৈতিক গতি প্রবাহের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই যেমন ধরা যাক, বেগম জিয়ার অসুস্থতা। কাগজে কলমে এখনও বেগম জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন। যদিও তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে আছেন গত পাঁচ বছর ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে ৭৮ বছর বয়সী এই প্রবীন মানুষটি নানা রোগ শোকে আক্রান্ত। হাসপাতালে আছেন বেশ কিছুদিন ধরে। দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে আছেন তিনি এবং তার দল। দুটি দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হয়ে কারান্তরীণ ছিলেন দুই বছরের বেশি সময়। সরকারের বিশেষ বিবেচনায় তিনি কারাগার থেকে ‘ফিরোজায়’ গেছেন বটে। কিন্তু নানা শারীরিক সমস্যা তাকে রীতিমতো গ্রাস করে ফেলেছে। বিএনপি নেতারা মাঝে মধ্যেই বলেন ‘বেগম জিয়া জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’ তার উন্নত চিকিৎসার দাবী বেশ পুরনো। বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা এনিয়ে সরকারের কাছেও দেন দরবার করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এব্যাপারে সরকার সায় দেয়নি। অনেকেই বেগম জিয়ার শেষ পরিণতির অপেক্ষায়। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলের মধ্যেই বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে। বেগম জিয়ার কিছু হলে দেশে কি হবে? আগামী ১০০ দিনের মধ্যে কি বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটবে? জীবন-মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার হাতে। কিন্তু নির্বাচনের আগে যদি এরকম কোন ঘটনা ঘটে তাহলে দেশের পরিস্থিতি কি হতে পারে? অনেকেই মনে করেন এরকম অবস্থায় বিএনপির কর্মীরা প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারেন। বিক্ষুদ্ধ কর্মীরা ভাঙ্গচুর, জ্বালাও পোড়াও ঘটিয়ে দেশে সৃষ্টি করতে পারে এক অশান্ত পরিবেশ। ঘেরাও, সন্ত্রাসী তান্ডব করে দেশে তৈরী হতে পারে এক অরাজক পরিস্থিতি। সরকার সেরকম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কিনা তা নিয়েও অনেকে শংকিত। নির্বাচনের আগে এরকম একটি নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা দেশে সাংবিধানিক ধারা ব্যাহত করতে পারে। নির্বাচনও বাধাগ্রস্থ করতে পারে। একটা সংকটময় পরিস্থিতিতে তৃতীয় শক্তি ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ পেতে পারে বলে অনেকের ধারনা। তবে আশাবাদী মানুষরা এনিয়ে শঙ্কিত নয় নানা কারণে। বেগম জিয়াকে যখন সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল, তখনও অনেকে শংকিত ছিলেন। অনেকেই মনে করেছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে। তেমন কিছুই শেষ পর্যন্ত হয়নি। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতের রায়ে বেগম জিয়া দোষী সাব্যস্ত হন। দন্ড কার্যকর করার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তখন বিএনপির অচল করে দেয়ার হুমকি কাজে দেয়নি। বেগম জিয়ার অনাকাঙ্খিত কিছু হলে, এবারও বিএনপির নেতা-কর্মীরা কতদূর কি করতে পারে তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে। কেউ কেউ মনে করেন চার/পাঁচদিন বড়জোড় এক সপ্তাহের একটা ঝড় তুলবে। তারপর সব কিছু ঠিকঠাক হবে। ঠিক হোক না হোক বাংলাদেশের আগামী ১০০ দিনের অনিশ্চয়তার যাত্রায় বেগম জিয়া একটা বড় ‘এক্স ফ্যাক্টর’। 

বেগম জিয়ার মতোই ড. ইউনূস ইস্যুও আগামী ১০০ দিনের অভিযাত্রার গতিপথ পাল্টে দিতে পারে যে কোন সময়ে। যেভাবে শ্রম আদালতে মামলা এগুচ্ছে তাতে ড. ইউনূসের রায় যে নির্বাচনের আগেই হবে তা  মোটামুটি নিশ্চিত। শ্রমিকদের এই মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে শান্তিতে নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবীদকে কারাগারে যেতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেগম জিয়ার মতো জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা নন। তার বিরাট দল, বিশাল কর্মী বাহিনীও নেই। কিন্তু বেগম জিয়ার চেয়েও ড. ইউনূস অনেক বেশি প্রভাবশালী। ড. ইউনূস ইস্যুতে ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট অবস্থান নিয়েছে। শতাধিক নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন। হিলারী ক্লিনটন এবং বারাক ওবামার মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ড. ইউনূস ইস্যুকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। এমনিতেই গত দুবছর ধরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট সম্পর্ক নানা অস্বস্তি এবং টানাপোড়েন চলছে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকা কি কি করবে তার তালিকা প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা, সহায়তা কমানোর হুমকি, সামরিক সহায়তা হ্রাস সহ নানা হুমকি আর ধমকের মধ্যে আছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে এক বাঁচাল পররাষ্ট্র মন্ত্রী একাই বেসামাল কথা বলে কূটনীতির মাঠকে কর্দমাক্ত করে ফেলছেন। এই অবস্থায় ড. ইউনূস ইস্যু কি যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ নিয়ে যাবে? কিছুদিন ধরেই সরকার প্রধান বলছিলেন ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাকে হয়তো ক্ষমতায় দেয়তে চায় না।’ প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন ‘এখানে কেউ কেউ তাবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’ যুক্তরাষ্ট্র যে তার স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারে এটা প্রমাণিত সত্য। বাংলাদেশে যেমন আমেরিকার অনেক স্বার্থ আছে, তেমনি ড. ইউনূসের ব্যাপারে তাদের আছে আলাদা আবেগ এবং পক্ষপাত। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের পরিকল্পনায় কি ঘি ঢালবে ড. ইউনূস ইস্যু? বাংলাদেশে আগামী ১০০ দিনের ঘটনা প্রভাব কোন দিকে মোড় নেবে তা অনেকটা নির্ভর করে ড. ইউনূসের মামলার রায়ের উপর। 

১০০ দিন পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেমন বাংলাদেশ দেখতে চায়? এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে সম্পূরক প্রশ্নও জুড়ে দেয়া যায় যুক্তরাষ্ট্র যা চায় সব সময় কি পায়? আগামী ১০০ দিনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েনের পরিণতিও বোঝা যাবে। 

দেশের দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম, পিয়াজ আলুর মূল্য নির্ধারণ করে আরেকটা অযোগ্যতার প্রমাণ রেখেছে। ঐ দামে কোথাও এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্তারা নির্লজ্জের মতো দায়িত্ব জ্ঞানহীন কথাবার্তা বলছে। মানুষ ফুঁসে উঠছে। অনেকেই মনে করেন, নির্বাচন, বিরোধী দল নয় সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ। গত ১৫ বছর মানুষ খুব বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছিল। ক্ষমতার পালা বদল, কিংবা বিরোধী দলের দাবী দাওয়া বিষয়ে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিল। প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে স্বপ্ন দেখতো। ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতো। কিন্তু পঁচা শামুকে পা কাটার মতো, ডেঙ্গু, দ্রব্যমূল্য, দূর্নীতি সরকারের উপর জনগনের আস্থা নষ্ট করছে প্রতিনিয়ত। সবচেয়ে দূর্ভাগ্যজনক হলো এসব সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেবল অযোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছেন না। অসত্য বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন। সংকটকে পাত্তা দিচ্ছেন না। অশান্ত, ক্ষুদ্ধ জনগণ কি করতে পারে, তা বাংলাদেশ বহুবার দেখেছে। নির্বাচনের আগে জনগণকে তাঁতিয়ে তুলতে অনেকেই চাইবে। সরকারের ভেতর কিছু অর্থব, দায়িত্ব জ্ঞানহীনরা সেই অস্ত্রই যেন তুলে দিচ্ছে বিরোধী পক্ষের হাতে। দেশে স্যালাইনের হাহাকার, দেখার কেউ নেই। মশা নিয়ন্ত্রণের নামে নজিরবিহীন জালিয়াতি এবং লুণ্ঠনের পরও কেউ কেউ দাঁত কেলিয়ে হাসেন। বাজারে আগুন নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী এবং সচিবের বক্তব্য মানুষকে ক্ষুদ্ধ করে তোলে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এসব ঘটনা বিস্ফোরণ সৃষ্টি করতে পারে। আগামী ১০০ দিনে এসব প্রতিকূলতার দূর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে সরকারকে। বিএনপি এখন এক দফা দাবীতে আন্দোলন করছে। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত দলটির টানা কর্মসূচী রয়েছে। বিএনপি নেতারা অক্টোবরের মধ্যে আন্দোলনকে একটা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু একা বা নাম সর্বস্ব কিছু সঙ্গী সাথীকে নিয়ে আন্দোলন করে বিএনপি এক দফা আদায় করতে পারবে, এটা বিএনপির নেতারাও বিশ্বাস করেন না। বিএনপি তাদের আন্দোলনের সাফল্যের জন্য এসব এক্স ফ্যাক্টরের উপরই নির্ভরশীল। বেগম জিয়ার কিছু হলে সারাদেশে আগুন জ্বলবে, বিএনপির একদফা আদায় সহজ হবে। কিংবা ড. ইউনূস ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উপর চূড়ান্ত নাখোশ হবে। বাংলাদেশের উপর নানা নিষেধাজ্ঞা দেবে। শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বন্ধ করবে। ব্যস। এক দফা আদায়ের পথ সুগম হবে। এরকম সব যদি, তবে, কিন্তুর উপর ভর করে বিএনপি আন্দোলন করছে। তাই জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সেলফি থেকে বিএনপির কর্মীরা হতাশ হন। আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী যখন গ্রামের চাওয়ালার মতো শিষ্টাচার বহির্ভূত ভাষায় সেলফির গল্প শোনান, তখন তারা উজ্জীবিত হন। তাই ১০০ দিনে দেশের বা বিএনপির গন্তব্য নির্ধারণে ক্ষমতা বিএনপির নেই। এটি পুরোপুরি নির্ভর করে চারপাশের ঘটনা প্রবাহের উপর। বিএনপি না পারলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কিন্তু ঠিকই পারে ১০০ দিনের ঘটানা প্রবাহের গতিপথ নির্ধারণ করতে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চায় সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা। সংবিধান সম্মুন্নত রাখা। সংবিধান অনুযায়ী এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে একটি নির্বাচন। আগামী ১০০ দিনে এই লক্ষ্যে অবিচল থেকে দূর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে দলটিকে। এজন্য প্রথম এবং প্রধান কাজ জনগণের আস্থা অর্জন। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। কিন্তু তার মন্ত্রী সভা এবং চারপাশে কিছু ব্যক্তির চেহারা দেখলেই সাধারন মানুষ ইদানিং ক্ষুদ্ধ হয়ে যায়। আগামী  ১০০ দিনের জন্য এসব অনাকাঙ্খিত ভাঁড় এবং দূর্বৃত্তদের ক্ষমতা কেন্দ্র থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে। সরকারের ভেতর থেকে বা সরকারের সুবিধাভোগী ১০০ জনকে বাদ দিলেই সরকারের চেহারাটা আবার চমৎকার হবে। এসব অযোগ্য চাটুকার লুটেরাদের ভার এখন আর কোন ভাবেই সরকারের পক্ষে বহন করা সম্ভব হবে না। 

দলেও একটা শুদ্ধি অভিযান করতে হবে। হাইব্রিড, উদ্বাস্তু, শেকড়হীনদের সরিয়ে ড্রাইভিং সীটে বসাতে হবে জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাসিম, মির্জা আযমের জনপ্রিয় নেতাদের। প্রকৃচি থেকে আওয়ামী লীগ নেতা কিংবা হঠাৎ বনে যাওয়া নাদুস নুদস জনবিচ্ছিন্ন নব্য নেতাদের ঘরবন্দী করতে হবে। ত্যাগী পরিক্ষীত দিতে হবে রাজপথের দায়িত্ব। জনগণের কাছে যেতে হবে পরিচ্ছন্ন নেতাদের। টিন চোর, কাবিখা চোর, নিয়োগ বাণিজ্য করা, টেন্ডারবাজ, মুখোশধারী রাজাকারদের বাদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে হবে পরিচ্ছন্ন, বিতর্কহীন, কলুষমুক্ত প্রার্থীদের। তাহলেই মানুষ আশাবাদী হবে। ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ভোট উৎসবে যোগ দেবে। আসলে ১০০ দিন পর বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে কিনা তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের উপরই। আওয়ামী লীগ কি পারবে, মুষ্টিমেয় কয়েকজন অর্থপাচারকারী, ব্যাংক লুটেরা, সিন্ডিকেট, দূর্নীতিবাজ, অযোগ্য, অর্থব চাটুকার, মুখোশধারী রাজাকারদের হাত থেকে দল এবং সরকারকে মুক্ত করতে। তাহলেই বন্দরে নিরাপদে নৌকা ভিড়বে। 


সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

প্রাক পর্যবেক্ষণের পরেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা?

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটুকু অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হবে, নির্বাচনের পরিবেশ কতটুকু আছে তা পর্যবেক্ষণ করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি প্রতিনিধি দল আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশে আসছে বলে জানা গেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এর যৌথভাবে স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষা (পিইএএম) পরিচালনা করবে। ছয় সদস্যের এই প্রতিনিধি দল আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানা গেছে। নানা কারণে এই প্রতিনিধি দলের সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। বিশেষ করে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অনড় অবস্থান বারবার পুনরুক্ত করছে। 

আগামী নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা চায়। আর এরকম নির্বাচন যদি না হয়, নির্বাচনকে যদি বাধাগ্রস্ত করা হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা সহ একাধিক নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে এমন ঘোষণা আসছে। তবে নির্বাচনের আগেও এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিনিধি দল আসছে সেই প্রতিনিধি দলের রিপোর্ট এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলেই কূটনৈতিক মহল মনে করছেন। এই প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল যদি সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে আলাপ-আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমে বাংলাদেশে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে একটা অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব তাহলে তারা প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাবে। আর যদি তারা দেখে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ সম্ভব নয় তাহলে তারা সরকারকে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাতে পারে। পাশাপাশি এই প্রতিনিধি দল যদি পর্যবেক্ষণ করে দেখে যে, নির্বাচনের পরিবেশ সংঘাতপূর্ণ এবং এখানে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার কোনো পরিবেশ নেই তাহলে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ব্যাপারে চূড়ান্ত অবস্থান কি হবে তা নির্ভর করছে এই স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের রিপোর্ট এর ওপর। এই রিপোর্টটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল এসে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, নির্বাচন কমিশন সহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কথা বলবেন এবং একটা মতামতের চেষ্টা করবেন। তবে একাধিক সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কতগুলো সরাসরি অবস্থান রয়েছে। তারা সরাসরি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সরাসরি সমর্থন করতে পারে না। তারা সরাসরি কোনো রাজনৈতিক আলোচনার মধ্যস্থতাও করতে পারে না। তবে বাংলাদেশে যেন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় এটি তাদের প্রত্যাশার জায়গা। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুটি কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। প্রথমত তারা মনে করছে, এমন একটি পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে। ফলে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে একটি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত, তারা মনে করছে, যদি এক তরফা নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অস্ত্রগুলো আছে সেই অস্ত্রগুলো প্রয়োগ করবে। এখন দেখার বিষয় পর্যবেক্ষণ দল ঢাকায় এসে কি মনোভাব নিয়ে যান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   বাংলাদেশের নির্বাচন   ভিসা নীতি   প্রাক পর্যবেক্ষণ দল  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

পাঁচ বিষয়ে অনড় যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

বাংলাদেশের ব্যাপারে পাঁচটি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনোরকম সমঝোতায় পৌঁছতে চাচ্ছে না। এ নিয়ে তাদের অনড় অবস্থানের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন। সেখানে তারা বিভিন্ন মার্কিন কূটনৈতিক কর্মকর্তার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলেট এর সাথে গত মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিব। এছাড়াও পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সাথেও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৈঠক করেছেন। উজরা জেয়ার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক কূটনৈতিকদের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এই সমস্ত কোন বৈঠকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে একমত হচ্ছে না। তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করছে না। যে সমস্ত বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনড় রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে;

১. নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক হতে হবে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো নির্বাচনে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো। এই জন্য রাজনৈতিক সংলাপ দরকার। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের রাজনৈতিক সংলাপে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবে না। সংলাপ প্রক্রিয়ার জন্য মধ্যস্থতার ভূমিকাতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবতীর্ণ হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারা রাজনৈতিক সমঝোতাকে স্বাগত জানায় এবং রাজনৈতিক সংলাপের প্রতিও তাদের আগ্রহ রয়েছে। 

২. ড. ইউনূস ইস্যু: ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান ফৌজদারী মামলার কার্যক্রম গুলোর স্থগিত চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার বিষয়ক ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি উজয়া জেয়া সরাসরি ভাবে পররাষ্ট্র সচিবকে জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। ড. ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার এমন একটি মন্তব্য করা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের পক্ষ থেকে। আর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর সেই বক্তব্যকে সমর্থন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ড. ইউনূস ইস্যুতে অনড় অবস্থানে রয়েছে। 

৩. মানবাধিকার ইস্যু: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আদিলুর রহমান খান এবং অধিকার সহ অন্যান্য মানবাধিকার ইস্যুতে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করেনি। বরং মানবাধিকার ইস্যুতে সরকারকে আরও দায়িত্বশীল সংবেদনশীল এবং যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে এবং এই ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন ছাড় দেবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে। 

৪. নিখোঁজ ৭০ জনের ব্যাপারে তদন্ত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ৭০ জন নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তির ব্যাপারে সরকার এখন পর্যন্ত কোনো গ্রহণযোগ্য সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। এই ৭০ জনের ব্যাপারে সঠিক তথ্য তারা নির্বাচনের আগে নিশ্চিত করতে চায়। আর এ ব্যাপারেও তারা কোন ছাড় দিতে আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে। 

৫. সাইবার সিকিউরিটি আইন: সাইবার সিকিউরিটি আইনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার পরিপন্থী। এই আইনের বিষয়েও তারা কোনো ছাড় দিতে রাজি না। তারা মনে করে, এ ধরনের আইন  সরকারের বাতিল করাই উচিত। 

এইসব বিষয়গুলো নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যে মতদৈত্যতা সেই মতদৈত্যতার জায়গা থেকে ২ দেশ এখনও একটা সম্মানজনক সমঝোতার জায়গায় আসতে পারেনি।

বাংলাদেশের নির্বাচন   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   নিউইয়র্ক   পররাষ্ট্রমন্ত্রী  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আরও যারা যাচ্ছে তৃণমূল বিএনপিতে

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

বিএনপি থেকে একঝাঁক নেতা তৃণমূল বিএনপিতে যাচ্ছে—এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপির ভিতর। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় নেতারা নন, বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী নেতারা এমনকি বিভাগীয় জেলা পর্যায়ের নেতারাও তৃণমূল বিএনপিতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপির মধ্যে যে সমস্ত নেতারা এখন নিষ্ক্রিয় রয়েছেন তাদের একটি বিরাট অংশ তৃণমূল বিএনপিতে যেতে পারেন বলে অনেকে ধারণা করছেন। 

সংশ্লিষ্ট গুলো বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন—এমন গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপির ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল সময় পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন—এমন কোথাও শোনা যাচ্ছে। খুলনার বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুও তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন এমন দাবি করছেন তৃণমূল বিএনপির নেতারা। এছাড়াও বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান সহ বেশ কয়েকজন নেতার তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিএনপির মধ্যে যে সমস্ত নেতারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চান এবং এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা আছে তাদের সঙ্গে তৃণমূল বিএনপির যোগাযোগ করা হচ্ছে। এই সংখ্যা দুইশো ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দেখা গেছে, তারাও স্বীকার করেছেন যে তাদের সাথে এখন যোগাযোগ বাড়ছে। হঠাৎ করেই তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক কেন বেড়ে গেল—এই নিয়ে বিএনপির মধ্যে দুই ধরনের মতামত পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির একটি অংশ বলছে যে, বিএনপিতে যারা নির্বাচন করতে চায় এমন নেতারা মনে করছেন যে আগামী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কোনো অবস্থাতেই অংশগ্রহণ করবে না। আর এ কারণেই তারা তৃণমূল বিএনপিতে যেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটাকেই নিরাপদ মনে করছেন। এই নির্বাচনে তারা ভালো ফলাফল করবেন এমনটি প্রত্যাশা করছেন। 

অন্যদিকে যে সমস্ত বিএনপির নেতারা বেশি আত্মবিশ্বাসী তারা বলছেন যে, এটা আসলে সরকারের পাতানো ফাঁদ। সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপিকে ছাড়াই করতে চায়। বিভিন্ন মহলের কাছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে চায়। আর এ কারণেই তৃণমূল বিএনপিকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র বিএনপি থেকেই নয় বরং এরকমও গুঞ্জন রয়েছে যে বিকল্প ধারা তৃণমূল বিএনপিতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এমনকি কর্নেল অলি আহমেদের নেতৃত্বে এলডিপি তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে পারে—এমন গুঞ্জনও রয়েছে। তবে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তারা কেউই তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের কথা স্বীকার করেননি। 

তারা বলেছেন, এটা নোংরা অপপ্রচার এবং মিথ্যাচার। এই মুহূর্তে বিএনপি ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো অভিপ্রায় নেই। কিন্তু বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, দলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ বেড়েছে এবং এই যোগাযোগের প্রধান কারণ হলো তাদেরকে তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করা। তৃণমূল বিএনপি শক্তিশালী হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের একটি পথ পরিষ্কার হয়ে যায় এবং নির্বাচনে যারা বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থানে আছে তাদের অংশগ্রহণের পথ সুগম হয়—এমন ভাবনা থেকেই তৃণমূলে যোগদানের হিড়িক বাড়বে বলেই মনে করছেন বিভিন্ন মহল। এমনকি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে যে কয়েকজন নির্বাচিত হয়ে ছিলেন তাদের মধ্যে অন্তত একজন তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করবেন—এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এখন দেখা যাক শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকে তৃণমূল বিএনপিতে কতজন, কিভাবে যোগদান করেন।


তৃণমূল বিএনপি   নির্বাচন   বিএনপি   বিএনপি থেকে বহিস্কৃত   সরকার   শওকত মাহমুদ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন