এডিটর’স মাইন্ড

বেগম জিয়া কি শেখ হাসিনার নির্বাচনী চমক?

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখন বাংলাদেশের রাজনীতির মুখ্য আলোচ্য বিষয়। নির্বাচনে কে জিতবে তা নয়। বরং আগামী নির্বাচন কেমন হবে অথবা হবে কি না তা নিয়ে নানা মত, নানা ভাবনা। বিএনপি কি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে? বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে সেই নির্বাচন কি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে? বিএনপি এবং তার নেতৃত্বাধীন দলগুলো কি তাদের নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে পারবে?  ইত্যাদি নানা প্রশ্ন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক এখন সর্বত্র। এসব আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন না। এমনকি তার মুক্তির দাবিটিও বিএনপি নেতারা প্রায় ভুলতে বসেছেন। বিএনপিতে ‘রাজা’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া। তার একনায়কতান্ত্রিক সিদ্ধান্তেই দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি পরিচালিত হচ্ছে। বেগম জিয়ার নাম উচ্চারিত হয় কর্মীদের স্লোগানে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম জিয়া যেন আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাওয়া একটি নাম। কিন্তু গত কয়েক দিন পরিত্যক্ত, মেয়াদোত্তীর্ণ বেগম জিয়া দমকা বাতাসের মতো রাজনীতিতে উচ্চারিত হচ্ছেন। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেগম জিয়ার রাজনীতি করা বিষয়ে কিছু নতুন, চমকপ্রদ এবং ইঙ্গিতবাহী কথা বলেছেন। বেগম জিয়ার রাজনীতি করা প্রসঙ্গটি নিয়ে প্রথম কথা বলেন আইনমন্ত্রী। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সহকারী জজদের একটি অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটি শর্তে তাকে (বেগম জিয়া) মুক্ত করা হয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ রকম শর্ত সেটার মধ্যে ছিল না।’ আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তিনি একজন স্বাধীন মানুষ। কাজেই তিনি কী করবেন সেটা আমার বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু তাকে যখন ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায় অসুস্থ বলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে লিখে রাখিনি তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না। আইনি প্রক্রিয়ায় যদি কার্যক্রমের কথা বলি, তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কি না, তাহলে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘না’। তিনি পারবেন না।’ অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে- যদি নৈতিক স্খলনের দায়ে কেউ দুই বছর বা তার বেশি কারাদন্ডে দন্ডিত হন তাহলে তিনি সাজা ভোগের পর পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’

আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই একই প্রসঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় যান সেতুমন্ত্রী। সেখানে তিনি ছাত্রলীগের স্টল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। নির্বাচনে বিএনপি বেগম জিয়ার অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) দন্ডিত, এ অবস্থাটা তার নির্বাচন করার পক্ষে নয়। নির্বাচনের যোগ্য নন তিনি। বিএনপি নেতা হিসেবে তিনি যদি রাজনীতি করতে চান, তাহলে তাকে মুক্তির শর্ত অনুযায়ী করতে হবে।’

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রীর বক্তব্য একত্রিত করলে যা অর্থ দাঁড়ায় তা হলো- বেগম জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন। তবে সাংবিধানিক অযোগ্যতার কারণে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

বেগম জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত কর্তৃক দোষী প্রমাণিত হন। রায় ঘোষণার পরপর তাকে কারান্তরিন করা হয়। সেই থেকে ২৪ মার্চ ২০২০ সাল পর্যন্ত কারান্তরিন ছিলেন বেগম জিয়া। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া দোষী প্রমাণিত হন। দুটি মামলায় মোট ১৪ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত তিনি। এর মধ্যে এতিমদের টাকা আত্মসাতের মামলায় হাই কোর্ট নিম্ন আদালতের সাজা অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে বাড়িয়েছে। বেগম জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাগারে আটকে রাখার সাধ্য কারও নেই।’ আইনি লড়াই এবং আন্দোলনের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই বিএনপি সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। খালেদা জিয়ার জামিনের আইনি লড়াই আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়ায়। সর্বোচ্চ আদালত বিএনপি চেয়ারপারসনকে জামিন দেননি। বিএনপির আইনজীবীরা বেগম জিয়ার জামিনের ব্যাপারে কতটা নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তা নিয়ে বিএনপির মধ্যেই নানা আলোচনা শোনা যায়। সে বিতর্কে যেতে চাই না। বাস্তবতা হলো- আইনি পথে বেগম জিয়ার জামিন লাভের দুয়ার বন্ধ। আইনের চোখে খালেদা জিয়াকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে আদালতেই। প্রথম মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিএনপি। কিন্তু হাই কোর্টেও প্রমাণিত হয় বেগম জিয়া এতিমদের টাকা চুরি করেছেন। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। কিন্তু সেই আপিল নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেই বিএনপির আইনজীবীদের। আপিল পড়ে আছে বাক্সবন্দি হয়ে। বিএনপির আইনজীবীরা প্রকাশ্যে বলছেন, ভয় থেকেই তারা আপিলের ব্যাপারে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছেন। কারণ আপিল বিভাগে যদি অপরাধ প্রমাণিত হয় তাহলে সেটি হবে সর্বোচ্চ রায়। সর্বোচ্চ আদালত যদি হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে তাহলে আইনের দৃষ্টিতে বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতিবাজ, অর্থ আত্মসাৎকারী হিসেবে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হবেন। বিএনপি নেতারা প্রায়ই বলার চেষ্টা করেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দন্ড এবং মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই এসব সাজানো মামলা। এ প্রসঙ্গে দুটি কথা বলতে চাই। প্রথমত, বেগম জিয়া যে দুুটি মামলায় দন্ডিত হয়েছেন তার একটিও বর্তমান সরকার করেনি। এক-এগারোর সময় মামলাগুলো দায়ের করা। দ্বিতীয়ত, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ। সর্বোচ্চ আদালত থেকে বিএনপির বহু নেতাই প্রতিকার পেয়েছেন। জামিন পেয়েছেন। এই তো কদিন আগেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মির্জা আব্বাস সর্বোচ্চ আদালত থেকেই জামিন পেলেন। বিএনপির আইনজীবীদের আদালতের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে বেগম জিয়া নির্দোষ। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেননি। কিন্তু তা না করে বেগম জিয়াকে বিএনপি থেকে আস্তে আস্তে মাইনাস করা হচ্ছে। বেগম জিয়া বিএনপির ক্ষমতা কেন্দ্রের দ্বন্দ্ব এবং বিবাদের বলি কি না তা নিয়েও ইদানীং নানা আলোচনা হয়। বেগম জিয়াকে আইনি মারপ্যাঁচে বন্দি রেখে কে বা কারা বিএনপিকে কুক্ষিগত করেছে সেই বিতর্ক কান পাতলেই শোনা যায়। আমি সেসব বিতর্কে যেতে চাই না। তবে এটা ঠিক, আইনি লড়াইয়ে বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিএনপির আইনজীবীরা যেমন অনাগ্রহী, তারচেয়েও খালেদা মুক্তি আন্দোলনে অনীহা ছিল বিএনপির। বেগম জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে বিএনপির আন্দোলন ছিল লোকদেখানো, দায়সারা। বিএনপিতেই যখন বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার আয়োজন চূড়ান্ত, ঠিক তখনই ‘চমক’ দেখালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা প্রয়োগ করলেন প্রধানমন্ত্রী। কারাগার থেকে নির্বাহী আদেশে জামিনে মুক্তি দিলেন বেগম জিয়াকে। প্রথমে ছয় মাসের জন্য এ জামিন দেওয়া হয়েছিল। এরপর ছয় মাস করে বাড়িয়ে প্রায় তিন বছর খালেদা জিয়া ‘ফিরোজায়’ থাকছেন শেখ হাসিনার দয়ায়। ২০২০ এর মার্চে বেগম জিয়ার জামিন ছিল আকস্মিক। বিএনপি নেতারা প্রথমে এ সিদ্ধান্ত বিশ্বাসই করতে পারেননি। আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছেও এ সিদ্ধান্ত ছিল অবিশ্বাস্য। শেখ হাসিনা খুব ভালো করেই জানেন, বেগম জিয়া তার বিরুদ্ধে কী কী করেছেন। ২১ আগস্টের বীভৎসতা হয়েছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। বেগম জিয়া সে সময় প্রধানমন্ত্রী। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূলের এ নারকীয় ঘটনা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অজ্ঞাতে হয়েছে এটা বিশ্বাস করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে বেগম জিয়া সবকিছুই করেছেন। জজ মিয়া নাটক সাজানো, হামলার আলামত নষ্ট করাসহ নানা অপকর্ম করা হয়েছে তৎকালীন সরকারের মদদে। এমনকি এরকম একটি নৃশংসতম ঘটনার পর একে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার কুৎসিত তৎপরতা গোটা জাতিকে হতবাক করেছিল। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সমঝোতা এবং সহ-অবস্থানের সব দরজা বন্ধ করে দেয়। শুধু এ ঘটনা কেন, ১৫ আগস্ট বেগম জিয়ার বানোয়াট জন্মদিন পালন কোন যুক্তিতে? কিছুদিন আগেও শোকাবহ ওই দিনটিতে কেক কেটে বীভৎস উৎসব করতেন বেগম জিয়া। এসব কুরুচির চর্চা বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে সহনশীলতাকে বিদায় করে দিয়েছে। এসব ঘটনার পরও প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে বিশেষ বিবেচনায় জামিন দিয়ে যে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন তা বিরল। এ রকম উদারতা একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব।

বেগম জিয়ার সাময়িক মুক্তি আন্দোলনের ফসল নয়। আদালতের আদেশও নয়। তাই তিনি স্বাভাবিক মুক্ত নন। সাধারণত যারা বিভিন্ন সময় দন্ডিত হয়ে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন, তারা রাজনীতি বন্ধ করেননি। প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। নিম্ন আদালতে দন্ডিত হওয়ার পর এরশাদ আইনি লড়াই এবং রাজনীতি সমান্তরালভাবে চালিয়ে গেছেন। আদালত থেকে জামিন পেলে খালেদা জিয়া অবশ্যই রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারতেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন কি না এটা সম্পূর্ণ সরকারের ইচ্ছাধীন একটি বিষয়। গত প্রায় তিন বছর বিশেষ বিবেচনায় জামিনে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনীতি নিয়ে টুঁ শব্দটি করেনি। এমনকি ঈদে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তার বাসভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলেও কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি। সচেতনভাবেই রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। কেন? এ ব্যাপারে কি সরকারের পক্ষ থেকে তার ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে? এ প্রশ্নের আংশিক উত্তর পাওয়া গিয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্যে। গত ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে তিনি দাবি করেন, ‘বেগম জিয়া রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে জামিন নিয়েছেন।’ যদিও তার এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বিএনপি। কিন্তু বেগম জিয়া অন্য জামিনপ্রাপ্ত দন্ডিতদের মতো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে কেন অংশ নেন না, এ ব্যাপারে বিএনপি নেতারা কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। আইনমন্ত্রী অবশ্য বিষয়টি খোলাসা করে দিয়েছেন। বেগম জিয়া যে পদ্ধতিতে জামিন পেয়েছেন তাতে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন কি না তা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। সরকার চাইলে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন। সরকার না চাইলে পারবেন না। এখন কি সরকার বেগম জিয়াকে রাজনীতির মাঠে আনতে চাইছে? দুই মন্ত্রীর কথার মানে হচ্ছে- হ্যাঁ। বেগম জিয়াকে রাজনীতিতে আনলে কার লাভ, কার ক্ষতি? কদিন আগেও বিএনপি নেতারা বক্তৃতায় বললেন, ‘বেগম জিয়া মুক্ত হলে সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।’ বিএনপি মহাসচিব কিছুদিন আগেও এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার জন্য, জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই বেগম জিয়াকে জোর করে আটকে রেখেছে।’ বিএনপির প্রায় সব নেতাই ইনিয়ে-বিনিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন বেগম জিয়া রাজনীতির মাঠে নামলেই দেশে বিপ্লব হবে। দেশের জনগণ হুড়মুড় করে রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। সরকারের পতন হবে। আবার আইনমন্ত্রী যখন জানালেন বেগম জিয়ার রাজনীতি করতে বাধা নেই, তখন বিএনপি নেতারা নড়েচড়ে বসলেন। তারা মনে করলেন এটা ‘টোপ’। বিএনপিকে নির্বাচনে নেওয়ার ষড়যন্ত্র। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা সংবাদপত্রে বলেছেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে খালেদা জিয়াকে ব্যবহার করা হতে পারে বলে আমাদের সন্দেহ’। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা নিয়ে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব বিএনপির কাছে দুই কারণে সন্দেহজনক। প্রথমত, বিএনপির নেতারা মনে করেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার বিনিময়ে সরকার বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায়। বেশ কয়েক মাস ধরেই খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য দেনদরবার করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এ জন্য তাকে আগে সারেন্ডার করতে হবে। আগের জামিন বাতিল হবে। তারপর নতুন করে আবেদন করলে সরকার বিবেচনা করবে। বেগম জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি তার এবং পরিবারের বিষয়। এখানে দলের কোনো ভূমিকা নেই। এমনকি বেগম জিয়ার জামিনও হয়েছিল তার ভাই ও বোন যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তাহলে খালেদা জিয়া বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পেলেই বিএনপি কেন সুড়সুড় করে নির্বাচনে যাবে? দলের কোনো নীতি নেই, আদর্শ নেই! বিএনপির মধ্যে কারও কারও এ নিয়ে ভীতি আরও উদ্বেগজনক। বিএনপির কেউ কেউ মনে করেন, বেগম জিয়াকে ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে রাজনীতির মাঠে নামানো হবে। রাজনীতিতে এসেই তিনি দলকে নির্বাচনে যাওয়ার নির্দেশ দেবেন। তাদের মতে, বিএনপি চেয়ারপারসন এখনো দলে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি যদি সরকারের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির অবস্থার কথা অনেকে স্মরণ করিয়ে দেন। সে সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু রওশন এরশাদ স্বামীর বিপক্ষে অবস্থান নেন। শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদের দৃঢ় অবস্থানের কারণে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেয়। বিএনপির অনেকের শঙ্কা এবার কি তার দলেও মা-পুত্রের একই বিরোধ হতে যাচ্ছে। তারেকের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই কি বেগম জিয়াকে নির্বাচনে মাঠে নামানো হচ্ছে? তাকে রাজনীতি করার অনুমতি দেওয়া হবে সরকারের পক্ষে খেলার জন্য?

আগামী নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান বিদেশি কূটনীতিকরা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র তো এ নিয়ে রীতিমতো প্রচারণায় নেমেছে। একের পর এক যুক্তরাষ্ট্র থেকে কূটনীতিকরা ঢাকায় আসছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে তারা খোলামেলা কথাবার্তা বলেছেন। সর্বশেষ ঢাকা সফর করে গেলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবেই বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। অবাধ ও সুষ্ঠু। বিএনপির আন্দোলন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এখনো আওয়ামী লীগের কাছে গুরুত্বহীন। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই বিশ্বাস করেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে। বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। অবশ্য এর কোনো ব্যাখ্যা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে নেই। তারা মনে করেন শেখ হাসিনার কাছে ম্যাজিক আছে। সেই ম্যাজিকে সব সংশয়ের মেঘ কেটে যাবে। নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরেকটি ‘চমক’ দেখাবেন। সেই চমক কি ‘খালেদা জিয়া’? এই সন্দেহ এখন বিএনপির মধ্যেও পল্লবিত হয়েছে। বিএনপি নেতারা এখন খালেদা জিয়া আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন। প্রকাশ্যে না বললেও আড়ালে তারা বলছেন, বেগম জিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আপাতত দরকার নেই। কিন্তু রাজনীতি এমন সহজ সরল যোগ-বিয়োগের পাটিগণিত নয়। প্রধানমন্ত্রীর চমকও যদি এত সহজে অনুমেয় হতো তাহলে তো তা আর চমক থাকত না। সম্প্রতি নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর সবাই স্বীকার করবেন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভাবনা অনেক গভীর। কিছুদিন ধরেই তিনি শক্তিশালী বিরোধী দলের কথা বলছেন। বিরোধী দলের আন্দোলনে বাধা না দেওয়ার কথাও বলছেন। অনির্বাচিত এবং অগণতান্ত্রিক শক্তি যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে সে ব্যাপারেও তিনি সতর্ক। বিএনপি যেন সুশীলদের ফাঁদে না পড়ে। সুশীলদের প্ররোচনায় আরেকটি এক-এগারো ডেকে আনার জন্য সহযোগিতা না করে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী সজাগ। দলের নেতা-কর্মীদেরও এ ব্যাপারে বারবার সতর্ক করছেন। সে জন্যই কি রাজনীতিতে বেগম জিয়াকে মাঠে নামানো হচ্ছে?  বিএনপি যেন শেষ পর্যন্ত অগণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে হাত না মেলায়। সেই লক্ষ্যেই কি পরিত্যক্ত খালেদাকে সামনে আনার উদ্যোগ?  কারণ গ্রামে যখন ডাকাত পড়ে তখন গেরস্তরা ডাকাত তাড়াতে ছিঁচকে চোরকেও সঙ্গে নেয়। সুশীলরা তো গণতন্ত্রের জন্য ডাকাত। সুশীল ডাকাতদের হাত থেকে গণতন্ত্র রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী কি ছিঁচকে (এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী) চোরকে সঙ্গে নেবেন?

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com



মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু: শেখ হাসিনাই হতে পারেন শান্তির দূত

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা। 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে শেখ হাসিনার বিশ্বশান্তির দর্শন জাতিসংঘ অনুমোদিত হয়েছে। এই বিশ্বশান্তি দর্শনের আলোকেই ইসরায়েল ইস্যুতে একটি রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে। 

বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে কঠোর এবং যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ গাজায় নিরীহ মানুষের ওপর অবিচার, হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সবসময় নিন্দা জানাচ্ছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার ঈদের শুভেচ্ছা ভাষণেও মধ্যপ্রাচ্যের মানবিক বিপর্যয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'মাদার অব হিউম্যানিটি' হিসেবে পরিচিত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্ব মানবতার কণ্ঠস্বর হয়েছেন। আর এ কারণেই বিশ্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। উদার মুসলিম দেশের নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে তিনি আলাদা একটি অবস্থানে রয়েছেন। বাংলাদেশ একদিকে যেমন ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা করে, অন্যদিকে ধর্মান্ধ মৌলবাদ এবং ধর্মের নামে উগ্র সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করে। আর এটি বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে। শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে বিশ্বের এমন একজন নেতা যিনি মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সংকট সমাধানের আলোকবর্তিকা হয়ে সামনে দাঁড়াতে পারেন। তার শান্তির মডেলকে সামনে রেখে যদি বিবদমান পক্ষগুলো আলোচনার টেবিলে বসে তাহলে ইসরায়েল ইস্যুতে শান্তি অসম্ভব নয়।

বিশ্বে যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা প্রায় অনেকেই বিতর্কিত এবং পক্ষপাতে দুষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্ব নেতার অবস্থানে থাকতে পারছেন না। চীন এই বিষয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবে পক্ষ করতে চায় না। তাছাড়া বিভাজিত বিশ্বে চীনের নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ মেনে নেবে না এটা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি রাশিয়া এখন নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে সমঝোতায় নেতৃত্ব দেওয়া পুতিনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এরদোয়ান ব্যাপারে ইসরায়েল সহ অন্যান্য দেশগুলোর একটি অবস্থান রয়েছে। তাছাড়া তুরস্ক এই বিতর্কে কতটুকু সহনীয় অবস্থায় থাকতে পারবে তা নিয়ে ব্যস্ত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এই অবস্থায় বিশ্বকে যুদ্ধাবস্থা থেকে সামাল দিতে পারেন একমাত্র শেখ হাসিনাই। তার শান্তির বার্তা যদি বিবাদমান পক্ষগুলো অনুধাবন করে তাহলে এই জটিল কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্ব শান্তি অসম্ভব নয়। আর এই শান্তির জন্য শেখ হাসিনাই হতে পারেন বিশ্ব নেতা। তার শান্তির দর্শন এবং তার শান্তির উদ্যোগের মাধ্যমে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি হতে পারে বিশ্ব।

ইরান-ইসরায়েল   শেখ হাসিনা   শান্তির দূত   জো বাইডেন   ইরান  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন যারা

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

পুরনোদেরকে অসম্মান না করে নতুনদের জন্য জায়গা করে দেওয়ার যে কৌশল সেটি রাজনীতিতে একটি শিক্ষণীয়। কিছু দিন আগেও যারা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাদের বদলে এখন আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন বেশ কিছু নেতা। যারা আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে ১১ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হওয়ার পর যাদেরকে বেশি পাদপ্রদীপে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন;

১. ড. হাছান মাহমুদ: ড. হাছান মাহমুদের পদোন্নতি ঘটেছে। এর আগে তিনি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী। এবার তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। স্পষ্টতই আওয়ামী লীগ সভাপতি তাকে পাদপ্রদীপে নিয়ে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও বটে। কোন কারণে সাধারণ সম্পাদকের পদ খালি হলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে। আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও ড. হাছান মাহমুদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই অনেকে মনে করছেন। আর এই সমস্ত বিবেচনা থেকেই আওয়ামী লীগে এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে সামনে আসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। 

২. জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন নিজ যোগ্যতায়। মাঠের নেতা হিসেবে তার দীর্ঘদিনের সুনাম ছিল। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। রাজনীতিতে চড়াই উতরাই এর মধ্য দিয়েই তিনি এগিয়ে গেছেন তার আদর্শের কারণে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার পর তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে গেছেন। তার পুরস্কার তিনি পেয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে উন্নীত হন। এবার নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের এই নেতা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এবং বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি এখন আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারক হয়ে উঠেছেন। 
৩. আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কর্মী বান্ধব হওয়ার কারণে তার অবস্থান আস্তে আস্তে দৃঢ় হচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের অন্যতম বাহাউদ্দিন নাছিম কর্মীদের কাছে আওয়ামী লীগ সংগঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত এবং সংগঠনের প্রশ্নে অকুতোভয় এবং একনিষ্ঠ এই নেতা মন্ত্রী না হয়েও আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন নীতি নির্ধারক হয়ে উঠছেন নিজ যোগ্যতায়। 

৪. আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক এর মতোই তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। কিন্তু তারপরও তিনি ভেঙে পড়েননি। সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। এবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থার প্রতিদান তিনি ভালো ভাবেই দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের একটি পালা বদল ঘটছে। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু কিংবা শেখ ফজলুল করিমের জায়গা আস্তে আস্তে এই সমস্ত নেতারা জায়গা করে নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের একটা পাইপলাইন তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। যেখানে পর্যায়ক্রমে নেতারা অপেক্ষমান অবস্থায় আছেন। নেতৃত্বের শূন্যতা আওয়ামী লীগে যেন না হয় সেজন্য একটি দূরদর্শী রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আব্দুর রহমান   জাহাঙ্গীর কবির নানক   ড. হাছান মাহমুদ   আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

অন্ধকার ছয়দিন

প্রকাশ: ১০:৩০ পিএম, ১২ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের লোডশেডিং চলছে। গত বুধবার থেকে সংবাদপত্র বের হচ্ছে না। টানা ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধের বিশ্ব রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। না কোন প্রতিবাদে নয়, দাবী আদায়ের জন্য নয়। ছুটির ফাঁদে সংবাদপত্র বন্ধ আছে। সংবাদপত্রকে বলা হয় জরুরী সেবা। চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন জরুরী সেবা দেন, তেমনি সংবাদকর্মীদের কাজও হলো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেয়া। বিশেষ করে ছুটির সময় এটার প্রয়োজন আরো বেশী। এবার দেশে একটা দীর্ঘ ছুটি। এসময় সংবাদপত্র অনেক জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো, ছয়দিন যদি হাসপাতালে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বলতো ছয়দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে না। তাহলে কি হতো? আমিতো মনে করি, সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিষয়টিও তেমনি আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের এনিয়ে বিকার নেই।  

এবার বাংলাদেশ দু’টি বড় উৎসব কাছাকাছি সময় উদ্যাপন করছে। ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করতে না করতেই, আগামীকাল (রোববার) ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ। বাঙালীর সবচেয়ে বড় উৎসব। এদেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। তবে বাংলাদেশে ঈদ-উল-ফিতর কেবল মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব নয়। এ অঞ্চলে বসবাসরত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এই উৎসবে আনন্দ করে। সম্প্রীতির বাংলাদেশে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’-এই রীতি চলে এসেছে দীর্ঘদিন। ইদানিংকার মতো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গিতে কোন ধর্মীয় উৎসবকেই দেখা হতো না। ঈদের দিন অন্য ধর্মের বন্ধুরাও বাসায় আসতো সেমাই মিষ্টি এক সাথে খাওয়া হতো। আবার হিন্দুদের পূজাতেও আমরা যেতাম। অনেক মজা হতো। যতো দিন যাচ্ছে আমাদের ধর্মীয় উদার নৈতিক চেতনাকে গ্রাস করে ফেলছে ধর্মান্ধ সংকীর্ণতা। এখন ঈদ উৎসব যেন অনেকটাই ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলিত। রমজান মাস জুড়ে এক ধরনের কঠোর বিধি নিষেধ থাকে যা স্বতঃস্ফূর্ত না। আরোপিত এবং লোক দেখানো। এই আরোপিত বিধি নিষেধ নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন কিছু ‘বক ধার্মিক’। এদের কারণে গত তিন ঈদে পহেলা বৈশাখ নির্বাসিত ছিলো। পবিত্র রমজানের সাথে পহেলা বৈশাখের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু তারপরও অতি উৎসাহী কট্টরবাদীদের দাপটে শৃঙ্খলিত হয় পহেলা বৈশাখ। অথচ বাঙালী হিসেবে পহেলা বৈশাখীই আমাদের প্রথম এবং প্রধান সর্বজনীন উৎসব। বাংলা বর্ষ বরণ বাঙালীর প্রাণের উৎসব। এই উৎসব অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বেশ কয়েক বছর পর এবার পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হবে বাঁধাহীন ভাবে। বাঙালী জাতি বর্ষবরণ করবে মুক্ত ভাবে। এটা আমাদের জন্য বড় আনন্দের উপলক্ষ্য তো বটেই। কিন্তু এত বড় উৎসব হবে সংবাদপত্রহীন! কি অদ্ভুত! সংবাদপত্র কি দায়িত্বহীন মালিকানার শিকার?

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে। সম্প্রীতির বন্ধনে অটুট। কিছু মানুষ যতোই কট্টর মৌলবাদী হোক না কেন, সাধারণ মানুষ এখনও উগ্র পন্থাকে সমর্থন করে না। এজন্য একই সময়ে একাধিক ধর্মাবলম্বীদের উৎসব এদেশে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয়। এবার রমজানের কথায় ধরা যাক না কেন। এবার রমজানের মধ্যেই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ‘ইস্টার সানডে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোজার মধ্যেই দোল উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায় রং উৎসবে মেতেছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কোথাও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা বলেননি যে, রোজার জন্য ইস্টার সানডে করা যাবে না কিংবা দোল উৎসব বন্ধ রাখতে হবে। ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায় কিছু উপরের তলার মানুষ। যারা ধর্ম প্রতিপালনের চেয়ে লোক দেখানোতে বেশী আগ্রহী। এদের হাতে ধর্ম এবং সংস্কৃতি কোনটাই নয়। এবার ঈদের পরপরই পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হচ্ছে-এজন্য আমি আনন্দিত। বাংলাদেশের মানুষের সামনে এটি এক অনন্য সুযোগ। এর মাধ্যমে প্রমাণ হতে পারে আমরা বাঙালী, আমরা অসাম্প্রদায়িক, আমরা উদার। এদেশের মানুষ যেমন ঈদ উৎসব করলো তেমনি বাংলা নববর্ষকেও বরণ করবে। এই বর্ষ বরণের উৎসব যেন ঢেকে দিচ্ছে সংবাদপত্রে ছুটি। এবার ঈদের ছুটিতে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিকরা। ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে মোট ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধ রাখার এক অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংবাদপত্র মালিকরা। পহেলা বৈশাখে কেন সংবাদপত্র বন্ধ থাকবে? কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ‘ঈদ সংখ্যা’ সাময়িকী প্রকাশ করেছে। এটা ভালো উদ্যোগ। সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে এই সব সাময়িকী গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি আশা করেছিলাম এবার যেহেতু কাছাকাছি সময়ে ঈদ এবং বর্ষবরণ তাই সংবাদপত্রগুলো পহেলা বৈশাখে একটা ছোট সাময়িকী করবে। আলাদা আলাদা সাময়িকী না করুক ঈদ সংখ্যা এবং নববর্ষ সংখ্যা মিলিতভাবে করবে। কিন্তু কোথায় কি, এবার পহেলা বৈশাখে কোন সংবাদপত্রই বেরুচ্ছে না। শুধু পহেলা বৈশাখ কেন? বাংলাদেশে এখন চলছে অন্ধকার সময়। ১০ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল দেশে কোন সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না। এটি নজীর বিহীন। 

অবশ্য কেউ বলতে পারেন, এ যুগে সংবাদপত্র ৬ দিন না ৬ মাস বন্ধ থাকলো কার কি? এখন সংবাদের জন্য কে আর দৈনিক পত্রিকার অপেক্ষা করে? অনলাইন, টেলিভিশন, সোশাল মিডিয়ার এই যুগে কেউ আর খবরের জন্য সকালের সংবাদপত্রের অপেক্ষা করে না। সকাল বেলা এক কাপ চায়ের সাথে একটি সংবাদপত্র এখন উত্তেজনাপূর্ণ রোমাঞ্চ নয়। এসব ঘটনা প্রিন্ট মিডিয়ার অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠারই ইঙ্গিত। কিন্তু তারপরও প্রিন্ট মিডিয়া এখনও বিশ্বস্ততা এবং আস্থার প্রতীক। একজন পাঠক টেলিভিশনে বা অনলাইনে যতো সংবাদই দেখুক বা পড়ুক না কেন, দিনের শেষে তার নির্ভরতা ছাপা কাগজ। অনলাইনে কোন সংবাদ পাঠ করার পর তার সত্যতা যাচাই করে ছাপা কাগজে। তাই এখনও সংবাদ, সঠিক তথ্যের জন্য প্রধান নির্ভরতার জায়গা হলো সংবাদপত্র। তথ্যের এই বিশ্বস্ত উৎস বন্ধ আছে। টানা ছয়দিনের জন্য দেশের মানুষ সংবাদপত্র পাবে না। এই ছয়দিনকে বলা যায় অন্ধকার সময়। সংবাদপত্র বিহীন একটা দিন মানে অন্ধকার দিন-রাত্রি। গত ১০ এপ্রিল থেকে অন্ধকার ছয়দিন শুরু হয়েছে। আমরা যারা সেকেলে মানুষ। ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকা খুঁজি তাদের জন্য এই ছয়দিন দূর্বিসহ, অবর্ননীয়। 

প্রশ্ন হলো সংবাদপত্রের মালিকরা কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিলো? এই সিদ্ধান্ত দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে আরো সংকটে ফেলবে। বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের মালিকানা শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীদের দখলে। প্রধান সব সংবাদপত্রই কোন না কোন শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। বড় শিল্পপতিদের কাছে সংবাদপত্র হলো মর্যাদার প্রতীক। মুক্ত সাংবাদিকতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, পাঠকের কাছে দায় বদ্ধতা ইত্যাদি ব্যবসায়ীদের কাছে মূখ্য বিষয় নয়। সংবাদপত্র এখনকার মালিকদের কাছে ‘ক্ষমতা’ এবং ‘অস্ত্র’। এই ক্ষমতা দেখিয়ে তারা তাদের ব্যবসাকে সম্প্রসারিত করে। সুদৃঢ় করে। সরকার সংবাদপত্র মালিকদের ভয় পায়। ব্যাংক তো তটস্থ থাকে। তাই পত্রিকা থাকা মানে ব্যবসায়ীদের সব মুশকিল আসান। কর্পোরেট হাউসে এখন সাংবাদিকতা নেই, এক ঝাঁক ক্রীতদাস আছে। যাদের একমাত্র কাজ মালিকদের মনোরঞ্জন করা। এদের মধ্যে যিনি সম্পাদক তিনি হলেন সবচেয়ে বড় ক্লাউন। মালিকদের খুশী করাই তার একমাত্র কাজ। পেশাগত উৎকর্ষতা চুলোয় যাক। যিনি মালিকের স্বার্থ যতো নিবিড়ভাবে সুরক্ষিত করেন তিনি ততো বড় সম্পাদক। এই অস্ত্র প্রয়োগ করে মালিকরা প্রতিপক্ষকে ভয় দেখায়। যারা তাদের কথা শোনে না তাদের এই অস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করে। সংবাদপত্রের মালিকানা ব্যবসায়ীদের কাছে একধরনের বর্মের মতো। নিজেদের অপকর্ম, স্বেচ্ছাচারিতা জায়েজ করার জন্য সংবাদপত্রকে তারা ব্যবহার করে। সংবাদপত্রের মালিক হবার কারণে কেউ তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করেনি। এভাবেই চলছে সংবাদপত্র শিল্প। সংবাদপত্র এখন কর্পোরেট ক্রীতদাস। তাই মালিকরা সংবাদপত্র দুই দিন বন্ধ থাকলো না ছয়দিন বন্ধ থাকলো তা নিয়ে ভাবেন না। তারা তাদের ব্যবসা সুরক্ষা পত্রিকা দিয়ে কতটা হলো তা নিয়েই ব্যস্ত। সংবাদপত্র মালিকরা পাঠকের কাছে জবাবদিহিতার বিশ্বাসী নন। তারা দেখেন এই সংবাদপত্র তাদের স্বার্থ কতটা রক্ষা করতে পারছে। ছাপা কাগজ একদিন বের না হলে অনেক সংবাদপত্রের অনেক টাকা সাশ্রয়। এসব বিবেচনা করেই মালিকরা মনে করেছেন পত্রিকা যদি কয়েকটা দিন বন্ধই থাকে, কি এমন ক্ষতি। কিন্তু এই ছয়দিন সংবাদপত্র বন্ধ যে এক ভয়ংকর বার্তা দিলো তাকি মালিকরা অনুধাবন করেন? সংবাদপত্র ছাড়াও যে দেশ চলে, এমন এক ঘোষণাই কি দিলেন না মালিকরা। ভবিষ্যতে এর মূল্য দিতে হবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেই। 

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

সরকারের তিন মাস: সেরা অর্জন

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রথম তিন মাস বর্তমান সরকারের জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করার ফলে এই নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়, নির্বাচনের পর কী ধরনের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সেটি ছিল সকলের কাছে একটি দেখার বিষয়। তবে সরকার প্রথম তিন মাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকট গুলোকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত সরকারের চেষ্টা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোন রকম অভিযোগ নেই। 

সরকার এই প্রথম তিন মাসে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে;

১. নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা আদায়: ৭ জানুয়ারি নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এটি সরকারের একটি প্রধান অর্জন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনকে কীভাবে দেখবেন? নির্বাচনের পরে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের নানা রকম আগাম পূর্বাভাস ছিল, সংশয় ছিল। কিন্তু এই সংশয় উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সফলতা অর্জন করেছে। নির্বাচনের পর প্রায় সব দেশই নতুন সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে। এটি সরকারের জন্য একটি বিরাট অর্জন। এই সরকার যে এত তাড়াতাড়ি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে এটা অনেকেই ভাবতে পারেননি। 

২ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর করার জন্যই সাঁড়াশি উদ্যোগ: নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কিছু বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে একাধিক শিশুর মৃত্যু, অবৈধ হাসপাতালে রোগীদের ভুল চিকিৎসার মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তার সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে হাসপাতালগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। অবৈধ বেশ কিছু ক্লিনিক হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে দুর্নীতির মধ্যে ডুবে ছিল তা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মানুষ সরকারের এই অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছে এবং আশা করছে যে, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধের ক্ষেত্রে তার অবস্থান অটুট রাখবেন এটাই সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে।

৩. সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি: এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি বটে, তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকার সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রির যে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে ভ্যান রমজান মাসে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিতরণ ব্যাপকভাবে ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকাগুলোর মানুষকে সুবিধা দিয়েছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে মিলে দেশের ৩৫ টি জেলায় রাজনীতিবিদ, প্রশাসন নিজস্ব উদ্যোগে সুলভ মূল্যে রমজানের পণ্য বিতরণ করার মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তরমুজ নিয়ে যখন কিছু মধ্যসত্ত্বভোগী লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছে তখন কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকের বাজারের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে তরমুজ বিক্রি করে একটি নজির স্থাপন করেছে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় শিক্ষা যে, বিকল্প চ্যানেলের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পণ্য দিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তা খুব উপকার দেয়।

৪. ব্যাংক একীভূত করা: ব্যাংক একীভূতকরণ উদ্যোগটি নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরেই করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, যে সমস্ত দুর্বল ব্যাংক আছে, সেই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সকল ব্যাংক একীভূত করবে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় সীমা বেঁধে দিয়েছে। এই নির্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যে পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রাজশাহী, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সহ একাধিক ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। এর ফলে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে সকলে প্রত্যাশা করেন এ সমস্ত ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া বানানোর ক্ষেত্রে যারা দায়ী তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে ছাড় দেওয়ার জন্য যেন ব্যাংক একীভূত না হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

৫. অবৈধ দালান-কোঠার বিরুদ্ধে অভিযান: বিশেষ করে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রণালয় অবৈধ দালান এবং অনুমোদিত ভবনের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারের নতুন গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন। তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। বিশেষ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা। এখন পর্যন্ত যে অভিযান চলছে সেই অভিযান সরকারের সফল উদ্যোগের একটি বলেই অনেকে মনে করছেন। এছাড়াও সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ভালো কাজ করছে, যে কাজগুলো ফলাফল পেতে সাধারণ মানুষকে অপেক্ষা করতে হবে। 


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

তোফায়েল আহমেদ: রাজনীতিতে অস্তমিত সূর্য

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ০৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

তোফায়েল আহমেদ কি রাজনীতিতে এক অস্তমিত সূর্য? তিনি কি নিভে যাচ্ছেন? বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তিনি কি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নগুলো এখন খুব বড় করে সামনে এসেছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যারা তোফায়েল আহমেদকে দেখেছেন তারা আগের তোফায়েল আহমেদের ছায়াকেও দেখতে পারেননি। যে তোফায়েল আহমেদ ছিল সরব, যার ভরাট কণ্ঠস্বরে জাতীয় সংসদ প্রকম্পিত হত, যিনি সবসময় সবাইকে চমকে দিতেন বিভিন্ন দিন তারিখের হিসেব মুখস্থ বলে দিয়ে, যার সবসময় শত শত টেলিফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা মুখস্থ থাকত, যা স্মৃতিশক্তি নিয়ে সকলে প্রশংসা করত, রাজনীতিতে যিনি একজন যুবরাজের মত পদচারণা করতেন, নানা রকম বিতর্কের পরও তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন সেই তোফায়েল আহমেদ এখন কোথায়? 

এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তোফায়েল আহমেদ জয়ী হয়েছেন। সংসদে তাকে দেখা যায় কদাচিৎ। তবে তিনি এখন শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকটাই বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন। বিশেষ করে একাধিক অসুস্থতা তাকে এখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটা চলা করতে দেয় না। তার কণ্ঠস্বরের তেজও কেড়ে নিয়েছে তার একের পর এক অসুখ। 

তোফায়েল আহমেদের এক পাশ অনেকটাই অবশ হয়ে গেছে। আর এ কারণেই তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তবে এখনও তিনি লেখালেখি করেন এবং নানারকম রাজনৈতিক আলোচনায় তাকে আগ্রহীও দেখা যায়। তবে আগের যে তোফায়েল আহমেদ, যিনি যে কোন রাজনৈতিক আড্ডা এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মধ্যমণি হিসেবে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন, যার দিকে তাকিয়ে থাকত লক্ষ লক্ষ জনতা সেই তোফায়েল আহমেদ এখন নেই। 

অনেকেই মনে করেন যে, রাজনৈতিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিক ভাবেই তোফায়েল আহমেদ বেশি বিপর্যস্ত। বিশেষ করে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরুর প্রেক্ষাপটেই রাজনীতিতে তিনি নিজেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন। 

গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শোক দিবসের স্মরণে এক লেখায় কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু যখন আক্রান্ত হন, ৩২ নম্বর যখন খুনিরা ঘিরে ফেলে তখন তিনি বেশ কয়েক জনকে ফোন করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন তোফায়েল আহমেদে। হতাশাজনক হলেও তোফায়েল আহমেদ সেই টেলিফোনের পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। এই লেখাটির পর আওয়ামী লীগের মধ্যে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। অনেকে এটা নিয়ে হৈ চৈ করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তোফায়েল আহমেদ এর প্রতিবাদও করতে পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগ সভাপতিকে যারা চেনেন তারা সকলেই জানেন যে, বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে তিনি তথ্য প্রমাণ ছাড়া কোন বক্তব্য দেন না। এই ঘটনার পর আকস্মিকভাবে তোফায়েল আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অনেকে মনে করেছিলেন তিনি হয়ত নির্বাচন করবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন অসুস্থ শরীর নিয়ে। 

এখন তিনি জাতীয় সংসদে আসেন বটে তবে আগের মত সরব উপস্থিতি তার নেই। হয়ত রাজনীতির জীবনে তিনি শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। তবে রাজনীতির ইতিহাসে তোফায়েল আহমেদ চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তার রাজনৈতিক জীবনের দুটি ভাগ সবসময় আলোচিত থাকবে। একটি হল স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর একান্ত বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে তরুণ তুখোড় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ। আরেকটি হল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে তার বিতর্কিত এবং রহস্যময় ভূমিকা। কোন তোফায়েল আহমেদ ইতিহাসে বেশি আলোচিত থাকবেন তা সময়ই বলে দেবে।



তোফায়েল আহমেদ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন