মার্চ
মাস বাঙালির আবেগের মাস। স্বাধীনতার মাস। ৭ মার্চ জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। মুক্তি ও
স্বাধীনতা বলতে জাতির পিতা রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির কথাই বলেছিলেন। ৭ মার্চ জাতির
পিতার দেখানো পথেই বাঙালি এগিয়ে যায়। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি
হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে চালায় নির্মম, নৃশংসতম বর্বরতা। জ্বলে-পুড়ে ছারখার হওয়ার পরও মাথা নোয়ায়নি বীর বাঙালি। জাতির পিতার নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী
যুদ্ধের পর বাংলাদেশের অভ্যুদয়
ঘটে। আমরা পাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। রক্তে রঞ্জিত পতাকা, মানচিত্র। কিন্তু রাজনৈতিক স্বাধীনতাই জাতির পিতার একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন ‘সোনার বাংলা’। অর্থনৈতিক মুক্তি।
একটি স্বনির্ভর স্বাবলম্বী বাংলাদেশ। যেখানে সব মানুষ তার
মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারবে। বিশ্বে বাঁচবে সম্মানের সঙ্গে। মাথা উঁচু করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সে পথেই গড়ার
সংগ্রাম শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ৭৫-এর ১৫
আগস্টের জঘন্যতম ঘটনা সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। ঝাপসা হয়ে যায় অর্থনৈতিক মুক্তির পথ। বাংলাদেশ একটা পর মুখাপেক্ষী, পরনির্ভর
রাষ্ট্র হিসেবেই চিহ্নিত হতে থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যারা বলেছিল,
‘বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি’; কিংবা যেসব অর্থনীতিবিদ এ দেশ সম্পর্কে
বলেছিল, ‘বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যের মডেল’—তাদের ভবিষ্যদ্বাণী যেন সত্য প্রমাণিত হতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ হারে না। বাঙালি বিজয়ী জাতি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেই শেখ হাসিনা শুরু করেন জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার সংগ্রাম। শুরু করেন অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর সোনার
বাংলা বিনির্মাণের দ্বিতীয় যুদ্ধ। ২০০৯ সাল থেকে এই যুদ্ধে দৃঢ়ভাবে
লড়াই করছে বাংলাদেশ। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। এই যুদ্ধ একটু
অন্যরকম যুদ্ধ। শেখ হাসিনা এ যুদ্ধের সেনাপতি।
প্রবাসে থাকা রেমিট্যান্স পাঠানো কর্মী, গার্মেন্টসকর্মী, সোনার ফসল ফলানোর কৃষক, কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তারা হলেন এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা।
যে ভাই বা বোনটি প্রবাসে
কঠিন পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন, তিনি এ যুদ্ধে সাহসী
সৈনিক। গার্মেন্টসে যে বোনের নিপুণ
বুননে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, তিনি এই যুদ্ধের যোদ্ধা।
যাদের পরিশ্রমে আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে, আমরা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বানাচ্ছি, তারাই দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। আর এ যুদ্ধটা
অনেকটাই ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের
মতোই।
’৭১-এ যেমন রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীরা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ক্রীতদাস রাখার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করেছিল এ দেশের রাজাকার, আলবদর এবং যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। এ যুদ্ধেও বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতিপক্ষ আছে। এরাও ’৭১-এর মতো বর্তমান বাংলাদেশের মুক্তির প্রতিপক্ষ। এরা বাংলাদেশকে পরমুখাপেক্ষী রাখতে চায়। পরনির্ভর রাখতে চায়। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে পঙ্গু রাখতে চায়। গার্মেন্টসকর্মী, রেমিট্যান্সযোদ্ধা এবং দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ীরা যদি একালের মুক্তিযোদ্ধা হন, তাহলে তখনকার রাজাকার, আলশামস, আলবদর আর যুদ্ধাপরাধী কারা?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের উন্নয়নের চিত্রটা একটু বিশদ বিশ্লেষণ করতে হবে। এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে উন্নয়নের বিপ্লব হয়েছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল—বাংলাদেশের উন্নয়নের একেকটি স্বারক চিহ্ন। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন কেন? কমিউনিটি ক্লিনিক, আশ্রয়ণ প্রকল্প, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান পাল্টে দিয়েছে। বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু, প্রবৃদ্ধির হার সবকিছুই ঈর্ষণীয়। কিন্তু বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেতে পারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের অর্থনীতিতে যে শঙ্কা, তা থেকেও আমরা নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পারতাম। তিনটি কারণে আমাদের অর্থনীতি এখন সংকটে। তিন ত্রুটির জন্য এখনো আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি বা জাতির পিতার কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার দ্বিতীয় ধাপ অর্জন করতে পারিনি। এ তিন ব্যাধি হলো—দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও ঋণখেলাপি। এ তিনটি ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে পারলেই আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব। দুর্নীতি যে আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম শত্রু তা চিহ্নিত করেন জাতির পিতা। ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধু। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে পিরোজপুর শহরের গোপালকৃষ্ণ টাউন ক্লাব মাঠে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘কোনো অফিস-আদালতে দুর্নীতি হলে এবং আপনাদের নিকট ঘুষ চাইলে সঙ্গে সঙ্গে তিন পয়সার একটি পোস্ট কার্ডে লিখে আমাকে জানাবেন। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যাতে দুর্নীতি চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।’ দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ নীতি এবং আদর্শে অটল বঙ্গবন্ধুকন্যা। কিন্তু দুর্নীতিবাজরা এখনো সক্রিয়। দুর্নীতিবাজরা একালের রাজাকার। প্রশাসনে, রাজনীতির মধ্যে দুর্নীতিবাজরা শক্ত শেকড় দৃশ্যমান। এ শিকড় উপড়ে ফেলতে না পারলে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা সম্ভব নয়।
একটা ব্যাপারে সবাই একমত যে, বাংলাদেশ থেকে যদি বিপুল অর্থ পাচার না হতো তাহলে আমরা অর্থনীতিতে আরও শক্তিশালী অবস্থানে থাকতাম। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের ভয়াবহ তথ্য পাওয়া যায়। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় সুইস ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) ২০২১ সালের প্রতিবেদন বলছে, সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের মোট অর্থের পরিমাণ ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালে জমার পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক বা ৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরেই বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকেই পাচার হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য দেশে অর্থ পাচারের হিসাব যোগ করলে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। কারা বিদেশে অর্থ পাচার করে আমরা সবাই জানি। পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপার কেলেঙ্কারিতে এরকম ৪৩ জন অর্থ পাচারকারীর নাম এসেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ডলার সংকটের মুখে সরকার অর্থ পাচারকারীদের বিশেষ ছাড় দেয়। পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা হলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করাও ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। অর্থ পাচারকারীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরা একালের যুদ্ধাপরাধী। কারণ, আমরা যতই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি, যতই উপার্জন করি না কেন, অর্থ যদি পাচার হয়ে যায়, তাহলে কিছুতেই আমরা আমাদের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারব না। আমরা স্বাবলম্বী হতে পারব না। অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি থেকেই যাবে।
আমাদের মুক্তির সংগ্রামের তৃতীয় শত্রু হলো ঋণখেলাপি। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সম্প্রতি এক ভাষণে ঋণখেলাপিদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কেউ কেউ ইচ্ছে করেই ঋণখেলাপি হয়। ব্যাংক থেকে টাকা নেয় পরিশোধ না করার জন্য।’ তার এ বক্তব্য যে কতটা নির্মম বাস্তবতা, তা বোঝা যায় ব্যাংকের ঋণখেলাপির হিসাব থেকেই। গত বছর সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। গত তিন মাসে শুধু খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে কথাই হয়েছে শুধু। অর্থ উদ্ধারের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। খেলাপি ঋণ এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক ভয়ংকর রোগ। যারা ব্যাংকের টাকা মেরে দেওয়ার জন্যই ঋণ নেন, তারা একালের রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী। এদের জন্যই মুক্তির সংগ্রামে এখনো আমরা বিজয়ী হতে পারছি না।
মার্চ মাস আমাদের দ্রোহের মাস। সংকল্পের মাস। নতুন মুক্তিযুদ্ধে তাই এই তিন শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতেই হবে। নব্য রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধীদের পরাজিত না করতে পারলে অর্থনৈতিক মুক্তির যুদ্ধে আমরা জয়ী হতে পারব না। স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ কিংবা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ কোনোটাই অর্জন করা যাবে না।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনকে
যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল, তখন কে জানত তার বিএনএম কাহিনি।
কে জানত তিনি বিএনপি ছেড়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে অভিযুক্ত হতে যাচ্ছিলেন।
সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেট তারকাকেও তিনি বিএনএমে ভিড়িয়েছিলেন। এখন মেজর (অব.) হাফিজ
অনেক কিছুই বলতে পারেন। কিন্তু সবকিছুর পরও একটি কথা সত্যি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে
(বিএনএম) তার যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়া বহু দূরে এগিয়েছিল।
সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত ছবি প্রকাশ না
হওয়া পর্যন্ত এ ঘটনা মেজর (অব.) হাফিজ বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন। মেজর হাফিজ এখন যা বলছেন,
বিষয়টি যদি তেমনি সাদামাটাই হতো, তাহলে সাকিব নাটক তিনি এতদিন গোপন করতেন না। তিনি
যদি তখন এটাকে ‘সরকারের চক্রান্ত’ মনে করতেন, তাহলে তখনই তিনি ঢাকঢোল পিটিয়ে জানিয়ে
দিতেন সরকার তাকে কেনার চেষ্টা করছে। সরকারকে বেইজ্জত করার এমন সুযোগ তিনি হাতছাড়া
করবেন কেন? এ নিয়ে হৈচৈ করে তিনি বিএনপিতে তার অবস্থান পোক্ত করতেন। তারেক রহমানের
ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে বিএনএম কেলেঙ্কারি, সাকিবের সঙ্গে
ফটোসেশনের ঘটনা গোপন কুঠিরে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
এখন যখন দুষ্ট লোকেরা তার এসব গোপন
প্রণয়ের দুর্লভ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে তখন মেজর (অব.) হাফিজ এসবকে
চক্রান্ত বলছেন। এখন কেন? যখন এসব খেলা চলছিল তখন কেন হাফিজ মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন?
হাফিজ উদ্দিন যখন বিদেশ থেকে এসে স্বল্পমেয়াদে কারাবরণ করে ‘পবিত্র’ হলেন, তখন বিএনপি
নেতাদের উল্লাস চাপা থাকেনি। বিএনপির নেতারা মনে করলেন বিএনপিতে আরেক খাঁটি সোনা পাওয়া
গেল। নবরূপে আত্মপ্রকাশের পর নব্য জ্যোতিষীর মতো তিনি ঘোষণা করলেন, বিএনপি নাকি খুব
শিগগির ক্ষমতায় আসছে। অল্পদিনের মধ্যে সরকার পতনের বিষয়টিও তার জ্যোতিষী বিদ্যায় ধরা
পড়ল। বিএনপির আধমরা নেতাকর্মীরা খানিকটা হলেও উদ্ভাসিত হলেন। আবার কিছু একটা হবে, এই
স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন বিএনপির হতাশাগ্রস্ত কর্মীরা। নির্বাচনের আগে হাফিজ উদ্দিন
কী বলেছিলেন, তা ভুলে গেলেন অনেকে।
আসুন একটু পেছনে ফিরে যাই। ৭ জানুয়ারির
নির্বাচনের আগে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি
বিএনপির আন্দোলনের কৌশলের সমালোচনা করেন। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তও সঠিক
নয় বলে মন্তব্য করেন। মেজর (অব.) হাফিজের ইউটার্ন যে দেনা-পাওনার হিসাব না মেলাজনিত,
এটা বুঝতে সাকিবের সঙ্গে বিএনপি এই নেতার ছবি ভাইরাল হওয়া পর্যন্ত বিএনপির কর্মীদের
অপেক্ষা করতে হয়েছে। ওই ছবি প্রকাশের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা অনুধাবন করতে পারলেন যে,
তারা মেজর (অব.) হাফিজের কাছে ধোঁকা খেয়েছেন। ধোঁকা যে শুধু বিএনপি খেয়েছে এমন নয়।
মেজর (অব.) হাফিজও ‘ডাবল’ ধোঁকা খেয়েছেন। প্রথম ধোঁকা হলো, যে প্রলোভনে তাকে কিংস পার্টিতে
ভেড়ানোর কথা ছিল, শেষ পর্যন্ত সেই উপঢৌকন তাকে দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় ধোঁকা, বিএনপিতে
আবার যখন তিনি জাঁকিয়ে বসতে শুরু করলেন, তখনই গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়ে তাকে বেইজ্জত
করা হলো। বিএনপির জন্য এ ঘটনা ছোট ধোঁকা। গত কুড়ি বছর ধোঁকায় ধোঁকায় জর্জরিত বিএনপি।
বারবার ধোঁকা খেতে খেতে দলটি রীতিমতো গর্তে পড়েছে। ভুল লোককে বিশ্বাস করে বিএনপি ধোঁকা
খেয়েছে। ভুল বন্ধুকে বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়েছে। মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাস রেখে বিএনপি
বিপর্যস্ত হয়েছে।
২০০১ সালের অক্টোবরে জামায়াতকে সঙ্গে
নিয়ে ভূমিধস বিজয় লাভ করে বিএনপি। এ সময় বিএনপির নেতারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, আগামী ৪২
বছর আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আওয়ামী লীগ অচিরেই মুসলিম লীগে পরিণত হবে।
ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে বিএনপি নানামুখী পদক্ষেপ নেয়। প্রধান বিচারপতির চাকরির বয়সসীমা
বাড়াতে সংবিধানে সংশোধন করে। ভোটার তালিকায় দেড় কোটি ভুয়া ভোটারের নাম সংযোজন করে।
ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে বিএনপি চেয়ারপারসন তার পুত্রের পরামর্শে সাতজনকে ডিঙিয়ে
মঈন ইউ আহমেদকে সেনাপ্রধান করেন। মঈন ইউ আহমেদ বিএনপিকে চিরস্থায়ী ক্ষমতায় রাখতে সাহায্য
করবে, এমন ভাবনা থেকেই তাকে সেনাপ্রধান করা হয়। কিন্তু এই জেনারেল বিএনপিকে এমন ধোঁকা
দেয় যে, দলটির কোমরই ভেঙে যায়।
এখনো ক্ষমতার বাইরে দীর্ঘ ১৭ বছর থাকা
দলটি সেই ভাঙা কোমর আর সোজা করতে পারেনি। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথমে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা
চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছিল। কিন্তু এরকম ব্যক্তিত্ববান রাষ্ট্রপতি বিএনপির
পছন্দ নয়। বিএনপি বেছে নিল পদলেহী একান্ত অনুগত ব্যক্তিত্বহীন ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের
মতো রাষ্ট্রপতি। অধ্যাপক বদরুদ্দোজাকে সরিয়ে ইয়াজউদ্দিনের মতো জি হুজুর মার্কা রাষ্ট্রপতি
বানিয়ে বিএনপি খুশিতে আত্মহারা। এরকম একান্ত বাধ্যগত রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান
করে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান ক্ষমতার সুবাস পেতে শুরু করলেন। কিন্তু ইয়াজউদ্দিন
তাদের ধোঁকা দিলেন। বড় ধোঁকা। এই ধোঁকায় বিএনপির সাজানো বাগান তছনছ হয়ে গেল। বিএনপি
আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ইয়াজউদ্দিনের মতো ব্যক্তিত্বহীনরা যে কঠিন সময়ে কোনো সাহায্য
করতে পারে না, এটা বুঝতে বিএনপি অনেক দেরি করে ফেলেছিল। বিএনপির ‘ধোঁকা’ গল্পের এখানেই
শেষ নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর দলটি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।
২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি
নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিল উচ্ছ্বসিত। এ সময় ব্যাকফুটে থাকা আওয়ামী
লীগ, নির্বাচনকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেওয়ার
প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের
দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। সিটি নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের পর বিএনপি কেন জাতীয়
সংসদ নির্বাচন বর্জন করল? সেই ‘ধোঁকা’। বিএনপিকে কেউ কেউ বুঝিয়েছিল, কোনোভাবেই নির্বাচনে
যাওয়া যাবে না। নির্বাচনে না গেলেই সরকারের পতন ঘটবে। একতরফা নির্বাচন দেশে-বিদেশে
গ্রহণযোগ্য হবে না। ব্যস। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার খোয়াব দেখে, বিএনপি আন্দোলন
শুরু করল। অগ্নিসন্ত্রাস, গাড়ি ভাঙচুর, গান পাউডার দিয়ে গণপরিবহনে আগুন দিয়ে একটা ত্রাসের
রাজত্ব সৃষ্টি করল। জাতীয় পার্টিও মনে করল, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হবে না। এরশাদও নির্বাচন
থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন। রওশন এরশাদ থাকলেন নির্বাচনের পক্ষে। ১৫৩ আসনে বিনা ভোটে
নির্বাচিত হলেন সংসদ সদস্যরা। কিন্তু সরকারের পতন হলো না। আওয়ামী লীগ দিব্যি পাঁচ বছর
দেশ পরিচালনা করল।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের এক
বছর পর আবার ধোঁকা খেল বিএনপি। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবরোধের ডাক দিলেন
খালেদা জিয়া। তিনি নিজেও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন। দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অবস্থান
করে তিনি ধমক দিলেন, গাড়ি পোড়ালেন, বোমাবাজি আর আগুন সন্ত্রাস করে জনজীবন বিপর্যস্ত
করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু জনগণ প্রত্যাখ্যান করল এই সহিংস রাজনীতি। একপর্যায়ে বিএনপির
সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল সাধারণ জনগণ।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতি
মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল এক-এগারো সরকারের সময়। ড. ফখরুদ্দিনের সরকার ২০০৭ সালে
এই মামলা করে। বিএনপির আইনজীবীরা এই মামলা নিয়ে খালেদা জিয়াকে ধোঁকা দিলেন। বারবার
মামলার তারিখ নেন, কথায় কথায় হাইকোর্টে যান। মামলাটি বিএনপির আইনজীবীরা এমন নাজুক জায়গায়
নিয়ে যান যে, খালেদা জিয়ার শাস্তি পাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। ২০১৮ সালে মামলার
রায়ের আগে তিনি লন্ডনে গেলেন পুত্রের সঙ্গে দেখা করতে। শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকে পরামর্শ
দিলেন মামলার রায় পর্যন্ত তিনি (খালেদা জিয়া) যেন লন্ডনেই অবস্থান করেন। রায়ে দণ্ড
হলে একটা সমঝোতা করে দেশে ফেরার পরামর্শ দিলেন তারা। কিন্তু ধোঁকাবাজরা খালেদা জিয়াকে
দিলেন ভুল পরামর্শ। তারা বললেন, দেশেই ফিরতে হবে। সরকার খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টাও জেলে
রাখতে পারবে না। এর মধ্যেই সরকারের পতন ঘটবে। খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করলেই নাকি জনবিস্ফোরণ
ঘটবে। খালেদা জিয়া শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথা শুনলেন না, শুনলেন ধোঁকাবাজদের কথা। দেশে ফিরলেন।
মামলার রায়ে দণ্ডিত হলেন। তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হলো টানা দুই বছর। বিএনপি
একটা টুঁ শব্দ করতে পারল না। আইনি লড়াইয়েও খালেদা জিয়া হেরে গেলেন। ধোঁকাবাজদের খপ্পরে
পরে খালেদা জিয়ার রাজনীতি আজ শেষ হয়ে গেছে। এখন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য আবেদন-নিবেদন
হচ্ছে। তার ভাই সরকারের কাছে অনুকম্পা ভিক্ষা করছেন। বিএনপির আন্দোলন বা আইনি লড়াইয়ে
নয়, সরকারের করুণায় খালেদা জিয়া এখন তার সব রাজনৈতিক অর্জন বিসর্জন দিয়ে ফিরোজায় থাকছেন।
এই ধোঁকা বিএনপিকে কোমায় নিয়ে গেছে।
২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে ধোঁকা
খেয়েছিল বিএনপি। আর ২০১৮ সালে ধোঁকা খায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে
অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি কোনো শর্ত ছাড়াই। এমনকি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও
বিএনপি নেতারা উচ্চারণ করেননি সরকারের সঙ্গে সংলাপে। ওই নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই
‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করা হয়। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে লাথি দিয়ে বিদায় করে সারা
জীবন ‘বঙ্গবন্ধু’র আদর্শে বিশ্বাসী ড. কামাল হোসেনকে নেতা মানে বিএনপি। ড. কামাল হোসেনের
নেতৃত্বে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে। ওই নির্বাচনে মাত্র ছয় আসন পেয়ে লজ্জায়
ডুবে যায় দলটি। বিএনপি নেতারাই বলেন, এটা ছিল স্রেফ ধোঁকা। আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায়
আনতে সাজানো নাটকে বিএনপিকে বলির পাঁঠা করা হয়েছিল, এমন কথা বিএনপি নেতারাই প্রকাশ্যে
বলেন। ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে কীভাবে ধোঁকা দিল এ গল্প করে বিএনপি নেতারাই লজ্জায়
মুখ লুকান।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপি ‘তওবা’ করে। দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ২০২১ সালের শেষ থেকে শুরু করে আবার আন্দোলন। এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপির প্রতি সহানুভূতি দেখায়। আস্তে আস্তে পশ্চিমাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক গাঢ় হয়। বিএনপি নেতারা সকাল-সন্ধ্যা কূটনীতিকপাড়ায় ঘোরাঘুরি করেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রাতরাশ সারেন, নৈশভোজে যান ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দূতের বাসায়। বিএনপি ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। একতরফা নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবে না ইত্যাদি নানা আতঙ্ক বাণী চারদিকে উচ্চারিত হতে থাকে। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা, স্যাংশন ইত্যাদি নিয়ে চলে তুলকালাম তর্কবিতর্ক। বিএনপি নেতারা খুশিতে আত্মহারা। চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। অতি আত্মবিশ্বাসে ২৮ অক্টোবর সহিংস হয়ে ওঠে তারা। তারপর নির্বাচন। আবার ধোঁকা খায় বিএনপি। বিএনপি মনে করেছিল, একতরফা নির্বাচন করলেই মার্কিন অ্যাকশন শুরু হবে। নিষেধাজ্ঞা আসবে। কিন্তু কোথায় নিষেধাজ্ঞা। নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশ অভিনন্দন বাণীতে ভরিয়ে তুলল নতুন সরকারকে। একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ জানাল বিশ্বের প্রায় সব প্রভাবশালী দেশ। বিএনপি ধোঁকা খেল আবারও। এবার ধোঁকায় একেবারে গর্তে পড়ে গেছে দলটি। উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বারবার কেন ধোঁকা খায় বিএনপি? এর কারণ একটাই, আদর্শহীন রাজনীতি এবং যে কোনো ধরনের ক্ষমতায় যাওয়ার উদগ্র বাসনা। বিএনপিতে যদি ন্যূনতম আদর্শ চর্চা থাকত, তাহলে এভাবে বারবার প্রতারিত হতো না। ভুল মানুষের হাত ধরে ভুল পথে পা বাড়াত না। আদর্শহীন রাজনীতির পরিণতির উদাহরণ বিএনপি।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রম আদালত হাইকোর্ট
মন্তব্য করুন
বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনকে যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল, তখন কে জানত তার বিএনএম কাহিনি। কে জানত তিনি বিএনপি ছেড়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে অভিযুক্ত হতে যাচ্ছিলেন। সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেট তারকাকেও তিনি বিএনএমে ভিড়িয়েছিলেন। এখন মেজর (অব.) হাফিজ অনেক কিছুই বলতে পারেন। কিন্তু সবকিছুর পরও একটি কথা সত্যি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) তার যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়া বহু দূরে এগিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার পর এখন সবচেয়ে সুসময় কাটাচ্ছে। টানা ১৫ বছরের বেশী সময় ক্ষমতায়। বাঁধাহীন ভাবে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি। মাঠে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করার মতো কোন রাজনৈতিক শক্তি নেই। সংসদেও আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ। কোথাও আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কেউ নেই। আওয়ামী লীগের কোন চাপ নেই, নেই উৎকণ্ঠা। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলটি আরো নির্ভার। কিন্তু এই সুসময়ে আওয়ামী লীগের দিকে তাকালে একটু ভয়ও হয়। এই আওয়ামী লীগ কি সেই আওয়ামী লীগ?
আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাথী তারা। ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। কঠিন সময়ে লড়াকু ভূমিকা পালন করেছেন। আন্দোলন সংগ্রামে তাদের কখনও পিছপা হতে দেখা যায়নি। আদর্শের প্রশ্নে তারা কখনও আপস করেননি। কিন্তু তারপরেও আওয়ামী লীগে অনাহূত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তারা জায়গা পান না, এমপি হতে পারেন না। মন্ত্রিসভা তো অনেক দূরের কথা। অথচ তাদের চেয়ে কম উজ্জ্বল নেতারা এখন মন্ত্রী হয়েছেন, এমপি হয়েছেন। দলে এবং সরকারে প্রভাবশালী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাদের কি অপরাধ কেউ জানে না। অথচ কর্মীদের মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। আওয়ামী লীগের পরিচয় নিয়েই তারা থাকতে চান এবং আওয়ামী লীগের পরিচয় নিয়ে তারা গর্ববোধ করেন। হৃদয়ে ক্ষোভ হতাশা থাকলেও মুখে তাদের হাসি থাকে। তারা তাদের দুঃখ হতাশার কথা কাউকে বলেন না।