১৯৭৪-৭৫ সালের সংবাদপত্রগুলোতে
তাকালে কিছু খবরে চোখ আটকে যায়। পাটের গুদামে আগুন, কারখানায় রহস্যজনক বিস্ফোরণ, ডাকাতি, ঈদের জামাতে সংসদ সদস্যকে গুলি করে হত্যা, বিভিন্ন স্থানে গণবাহিনীর সন্ত্রাস, নাশকতা, এর সঙ্গে পাল্লা
দিয়ে দুর্নীতি, চোরাকারবারিদের উৎপাত। বঙ্গবন্ধু নিজেই এসব ঘটনায় বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ ছিলেন। এদের সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী
লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু এসব নাশকতার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন- ‘যারা মনে করেন রাতের অন্ধকারে গুলি করে কিংবা রেললাইন তুলে দিয়ে টেররিজম করে বিপ্লব হয়, তারা কোথায় আছেন জানেন না। এ পন্থা বহু
পুরনো। এ পন্থা দিয়ে
দেশের মানুষের কোনো মঙ্গল করা যায় না।’
কিছু দিন ধরে বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা আমাকে আবার সেই ’৭৪ এবং ’৭৫ সালের কথা মনে করিয়ে দিল। ৭ মার্চ বিকালে রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। প্রাণহানি হয়েছে বেশ কয়েকজনের। আহত হয়েছেন শতাধিক। ৫ মার্চ ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সায়েন্সল্যাব এলাকায় একটি ভবনে প্রায় একই রকম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ বিস্ফোরণেও কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। ৫ মার্চ কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ধ্যায় আগুন লাগে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্রায় ৫০০ ঘরবাড়ি পুড়ে যায়। স্থানীয়দের দাবি, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়। পরিকল্পিত নাশকতা। ৪ মার্চ শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় প্রাণ হারান বেশ কজন। আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ। ৩ মার্চ পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ২৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতায় নান্নু স্পিনিং মিলে আগুন লাগে। প্রায় একই সময়ে আগুন লাগে আড়াইহাজারের এসপি কেমিক্যালে। ওইদিন সন্ধ্যায় গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে ঝুট গুদামে আগুন লাগে। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে কে বা কারা আগুন লাগায় রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সবচেয়ে অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত গুলশান-২ এর একটি আবাসিক ভবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাগুলো কি নিছক দুর্ঘটনা? এসব ঘটনা কি বিচ্ছিন্ন? কাকতালীয়? আমার তা মনে হয় না। এসব ঘটনার পেছনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে বলেই আমার ধারণা। জনমনে আতঙ্ক, সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা সৃষ্টির জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার। ’৭৪ এবং ’৭৫ সালেও এ ধরনের ঘটনাগুলোকে স্রেফ বিচ্ছিন্ন বলে হালকা করা হয়েছিল। সরকারের ভিতরের লোকজনই সে সময় সত্যকে আড়াল করেছিল। এখনো ঘরের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা শত্রুরা কি একই কান্ড করছে? এ প্রশ্ন করছি এই কারণে যে, সরকারের মধ্যেই একটি শক্তি সরকারের সব অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যেন আদাজল খেয়ে নেমেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের উল্টো কাজ করার প্রকাশ্য প্রচেষ্টা এখন দৃশ্যমান। গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অবিশ্বাস্য উন্নতি হয়েছে। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, মানব উন্নয়নেও বাংলাদেশ আজ বিশ্বে অনুকরণীয় উদাহরণ। মানব উন্নয়নের মধ্যে অন্যতম হলো- ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’। প্রান্তিক পর্যায়ে তৃণমূল মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি অনন্য মডেল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ ব্যবস্থা একটি দৃষ্টান্ত। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে জনগণের জন্য সহজ করা। তিনি চেয়েছিলেন গ্রামের দরিদ্রতম মানুষটিও স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসবে। এ কারণেই স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন জাতির পিতা। ’৭২-এর সংবিধানে এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। সংবিধানের ১৫(ক), ১৬ এবং ১৮ (১) এ বঙ্গবন্ধু সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছিলেন। সংবিধানের ১৫ (ক)তে বলা হয়েছে- ‘নাগরিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব।’ জাতির পিতার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব গ্রহণ করে যে কটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ তিনি নিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য প্রান্তিক পর্যায়ে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এক নীরব বিপ্লবের সূচনা হয়। গরিব মানুষ স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এই এক নিকৃষ্টতম উদাহরণ। অনাদরে অবহেলায় অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়ে থাকে কমিউনিটি ক্লিনিক। শেখ হাসিনার সৃষ্টি, তাই এখানে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যায়। কমিউনিটি ক্লিনিকে তালা ঝুলে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হয়ে ওঠে গরু-ছাগলের বিচরণক্ষেত্র। পরবর্তীতে অবশ্য বিএনপির তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ সিদ্ধান্তকে ভুল স্বীকার করলেও আওয়ামী লীগের ‘নব্য মোশতাক’রা বিএনপি-জামায়াতের পথেই হাঁটছে। কমিউনিটি ক্লিনিক হত্যার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আগামী অর্থবছর থেকে যে ‘অপারেশন প্ল্যান’ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তাতে কমিউনিটি ক্লিনিককে বিএনপি-জামায়াত আদলে ছেঁটে ফেলার ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত প্রায়। এটি বাস্তবায়িত হলে কমিউনিটি ক্লিনিক আলাদা কোনো ‘অপারেশন প্ল্যান’ বা ওপি দ্বারা বাস্তবায়িত হবে না। এটি ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’ নামে নতুন কর্মসূচির পেটে ঢুকে যাবে। সংকুচিত হবে এর কার্যক্রম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘যেহেতু সরকারের অর্থ সংকট তাই কমিউনিটি ক্লিনিকে অর্থ কাটছাঁট করা হয়েছে।’ তার মতে, এটি নাকি সাময়িক ব্যবস্থা। কী সাংঘাতিক কথা। সরকারের অর্থ সংকটের প্রথম বলি হবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ? মনে হলো বিএনপি-জামায়াতের প্রেতাত্মা ভর করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের ঘাড়ে। এ ভদ্রলোক মহাভাগ্যবান। সম্প্রতি সরকার তাকে আবারও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। ভাবখানা এমন যে, তাকে ছাড়া দেশের স্বাস্থ্য খাত অচল হয়ে যাবে। ‘মহাভাগ্যবান’ এসব ব্যক্তি কীভাবে ‘নাজিল’ হন তা আমার কাছে এক বিস্ময়। ২০০১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চিকিৎসকদের ত্রাহি অবস্থা তখন তিনি ছিলেন নিরাপদ দূরত্বে, বহাল তবিয়তে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, প্রাণ গোপাল দত্ত, অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান কিংবা ডা. আবদুল আজিজের অনন্য ভূমিকার কথা আমরা জানি। আহতদের চিকিৎসার জন্য তারা হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটে বেড়িয়েছেন। সে সময় কোথায় ছিলেন এই দেবদূত? ২০০৭ সালে এক-এগারোর সময় ‘নায়ক’ হয়ে উঠেছিলেন কয়েকজন চিকিৎসক ব্যক্তিত্ব। শেখ হাসিনার চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুনের অসাধারণ তৎপরতা জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। এ অকুতোভয় চিকিৎসকদের আমরা ঝুঁকি নিতে দেখেছি। তখন দুরবিন দিয়েও এ দুষ্প্রাপ্য ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের যোদ্ধা। কী বিচিত্র! কী ভয়াবহ! এরকম ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর মহান উদ্যোগের গলা টিপে ধরবেন এটাই তো স্বাভাবিক। অর্থ সংকটের কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কার্যক্রম বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় কমিউনিটি ক্লিনিককে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পকেটে ঢুকিয়ে দেওয়ার যুক্তি কেবল অযৌক্তিক নয়, হাস্যকরও বটে। কমিউনিটি ক্লিনিক সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞানহীন মূর্খরাই কেবল এ ধরনের উদ্ভট আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কারণ কমিউনিটি ক্লিনিক কেবল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয় না। কমিউনিটি ক্লিনিক জবাবদিহিতা এবং জনগণের ক্ষমতায়নের একটি রূপকল্প। কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ কর্তৃক পরিচালিত এ অসাধারণ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কোথাও কোথাও এখন নিরাপদ ডেলিভারি হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর রেফারেল পদ্ধতি এখন স্বাস্থ্য খাতের এক দৃষ্টান্ত। মজার ব্যাপার হলো- নতুন প্রস্তাবিত সেক্টর পরিকল্পনায় এমন কিছু খাত অব্যাহত রাখা হয়েছে যেগুলো অগুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থহীন। শুধু তাই নয়, এসব আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও বটে। যেমন ‘উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা’। আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারে স্বাস্থ্য খাতের প্রাণভোমরা কমিউনিটি ক্লিনিক। উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা নয়। বরং উপজেলা স্বাস্থ্যসেবার ওপর চাপ কমানোর কথা বলা হয়েছে। অপারেশনাল প্ল্যানে যক্ষ্মা, এইডস এবং এসটিডিকে আলাদা একটি সেক্টর হিসেবে রাখা হয়েছে। অথচ এক্ষেত্রে বাংলাদেশে মূল কাজটি করে ব্র্যাক, আইসিডিডিআর,বি। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে আলাদা করা হয়েছে বটে অথচ ‘লাইফ স্টাইল অ্যান্ড হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড প্রমোশনাল’কে (যেটি পুরোপুরি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়) আলাদা ওপি হিসেবে রাখা হয়েছে। চমৎকার! স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো বলে একটি বিভাগ আছে। এটিকে বলা হয় দুর্নীতির আখড়া। এ ব্যুরোর প্রধান এবং একমাত্র কাজ হলো সরকারি অর্থ লুটপাট। একজন করে বাছাই করা মহাদুর্নীতিবাজকে এখানে লাইন ডিরেক্টর পদে বসানো হয়। এ ব্যুরোর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে শতাধিক মামলা রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের আগের লাইন ডিরেক্টর দুর্নীতির দায়ে সাসপেন্ড হন। বর্তমান লাইন ডিরেক্টর এসে দুর্নীতির অতীত রেকর্ড তছনছ করে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছেন। কাজেই এই ওপি কেন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে বিলুপ্ত হবে? এটি বিলুপ্ত হলে স্বাস্থ্যের নাদুসনুদুস কর্মকর্তাদের পকেট ভরবে কীভাবে? অথচ স্বাস্থ্যবিষয়ক যে কোনো সচেতনতাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অংশ বলে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অযোগ্যতার কারণে অপারেশনাল প্ল্যানে এসব জগাখিচুড়ি হচ্ছে, এটি আমি বিশ্বাস করি না। এ সেক্টর প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য আবার কনসালট্যান্ট ভাড়া করা হয়েছে। সেই তালিকা দেখে ভিরমি খেতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক বিতর্কিত সচিবকে পরামর্শক হিসেবে ভাড়া করা হয়েছে। এ আমলা স্বাস্থ্য খাতে শাহেদ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত। তিনি স্বাস্থ্য সচিব থাকা অবস্থায় পিপিই কেলেঙ্কারি, মাস্ক কেলেঙ্কারির মতো ঘটনাগুলো ঘটেছিল। শাহেদ, সাবরিনা, আরিফ তারই আবিষ্কার। শিয়ালের কাছে মুরগি বন্ধক দেওয়ার মতোই স্বাস্থ্য খাতে পঞ্চম সেক্টর প্রোগ্রাম প্রস্তুতকরণে তাকেই দেওয়া হয়েছে পরামর্শকের দায়িত্ব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বহু যোগ্য সাবেক সচিব রয়েছেন, যারা এ মন্ত্রণালয়ে সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীল কাজের জন্য এখনো প্রশংসিত। সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, সিরাজুল হক খান, মো. আবদুল মান্নান এ মন্ত্রণালয়ে আলোচিত সৎ সচিব ছিলেন। কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে কেন দুর্নীতির কাদামাখা বিতর্কিত আমলাকে পরামর্শক নিয়োগ করা হলো সে-ও এক রহস্যময় প্রশ্ন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক দাবি করেছেন- সেক্টর প্রোগ্রাম এখনো প্রস্তাবিত, এটি চূড়ান্ত নয়। শেষ পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক আলাদা সেক্টর হিসেবে থাকতেও পারে। কিন্তু তাতে কী? এ অভিপ্রায় প্রমাণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বড় কর্তারা কমিউনিটি ক্লিনিককে কী চোখে দেখেন প্রধানমন্ত্রীও ভালো করেই জানতেন, বিএনপি-জামায়াতই তাঁর স্বপ্ন বিনষ্টের একমাত্র প্রতিপক্ষ। দলের ভিতরও এরকম ‘বিভীষণ’ আছে। ভবিষ্যতে কেউ যেন কমিউনিটি ক্লিনিককে ধ্বংস করতে না পারে সে কারণেই তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক সহায়তা ট্রাস্ট আইন করেন। এ আইনের আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিক দেখভালের জন্য ট্রাস্ট গঠিত হয়েছে। কিন্তু এ ট্রাস্টকেও অকার্যকর এবং বিকলাঙ্গ করে রেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ভাগ্যবান এবং প্রবল ক্ষমতাবানও বটে। তিনি নিজেকে সবচেয়ে সফল স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেন। সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। ভাগ্যিস এ দেশের মানুষের ‘গোল্ড ফিশ’ মেমোরি। আমার মনে হয় এ দেশের মানুষের স্মরণশক্তি গোল্ড ফিশের চেয়েও স্বল্প। আলতো ঘুমে এক কাত থেকে অন্য কাত হলে যেমন মানুষ স্বপ্ন ভুলে যায়, ঠিক তেমনি এ দেশের মানুষও দ্রুত অতীত ভুলে যায়। বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন দেশের মানুষের স্মৃতি থেকে ঝাপসা হয়ে গেছে। তেমনি আবছা, অস্পষ্ট হয়ে গেছে স্বাস্থ্য খাতে ২০২০ সালের সীমাহীন অনিয়ম এবং দুর্নীতি। ভুলে গেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সীমাহীন অযোগ্যতা এবং ব্যর্থতার কথাও। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী এখনো অবলীলায় বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়ান। আশির দশকে শেখ হাসিনা যখন স্বৈরাচারের পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, গ্রেফতার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন নূর হোসেন, জয়নাল, জাফর দিপালী, কাঞ্চন, সেলিম-দেলোয়ার, সেই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বৈরাচারের একান্ত দোসরের আদুরে সন্তান হিসেবে বিলাসী জীবনযাপনে সময় কাটিয়েছেন। ২০০৮-এর আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সম্পর্কই ছিল না বলতে গেলে। তিনিই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৯ বছর মন্ত্রী। ইদানীং আবার আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটিতেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এভাবেই স্বৈরাচারের ভূত আওয়ামী লীগের সঙ্গে লতাপাতার মতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে। এরকম হঠাৎ আওয়ামী লীগাররা কমিউনিটি ক্লিনিকের বিপক্ষে হাঁটবেন এ তো অনিবার্য। খন্দকার মোশতাক যেমন বঙ্গবন্ধুর নাম জপতেন সারাক্ষণ তেমনি এ সরকারের কিছু হঠাৎ গজিয়ে ওঠা প্রভাবশালী মন্ত্রী সারাক্ষণ শেখ হাসিনার নাম জপেন। অবশ্য কাজ করেন ঠিক উল্টো। প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি যুগান্তকারী উদ্যোগ ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’। ’৯৬ সালে এ মানব উন্নয়ন উদ্ভাবনটি শুরু হয়েছিল। তখন তার নাম ছিল- ‘একটি বাড়ি একটি খামার।’ ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো এ দরিদ্রবান্ধব কর্মসূচিও বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আবার শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে এ কর্মসূচি চালু করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এক প্রভাবশালী আমলার হাতে এর সর্বনাশ হয়। তিনি তার প্রিয়ভাজন এক দুর্নীতিবাজ আমলাকে দেন এর দায়িত্ব। ওই প্রভাবশালী কর্মকর্তার আগ্রহে ওই দুর্নীতিবাজ সচিব পর্যন্ত হয়েছিলেন। এ সময় তার দুর্নীতির প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল- ‘একটি বাড়ি একটি খামার’। সে সময় ওখানে দুর্নীতি এমনই ওপেন সিক্রেট ছিল যে, প্রকল্পের নামই হয়- ‘একটি বাড়ি, একটি খামার, অর্ধেক আমার অর্ধেক তোমার।’ এখন প্রধানমন্ত্রীর ১০টি উদ্যোগের একটি এ প্রকল্পটি উপেক্ষিত। এটিকেও হত্যার চেষ্টা চলছে নীরবে। ‘আশ্রয়ণ’ প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। মুজিববর্ষে থাকবে না কেউ গৃহহীন- সংকল্পে আশ্রয়ণ প্রকল্প নতুন গতি পায়। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে দেখা যায়, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সৎ এবং আদর্শবান মাঠ কর্মকর্তারা কাজ করেছেন, সেখানে গৃহহীনদের ঘরগুলো ঠিকঠাক মতো হয়েছে। আর যেখানে নব্য মোশতাকের দোসররা মাঠ প্রশাসনে আওয়ামী লীগ সেজে কাজ করেছে, সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বারোটা বেজেছে। প্রশাসনের সর্বত্র এখন নব্য মোশতাকদের আধিপত্য দৃশ্যমান। রাজাকার পরিবার, বিএনপি-জামায়াত আদর্শে বেড়ে ওঠা কিংবা ‘যখন যার তখন তার’ গোছের সুবিধাবাদীরা আমলাতন্ত্রে প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছেন। জাহাঙ্গীর আলম, খাজা মিয়ার মতো দুঃসময়ে আদর্শ বিকিয়ে না দেওয়া আমলারা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে কোনোমতে টিকে আছেন।
’৭৪-৭৫ এর মতো যে নিয়ম করে বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগছে তা নয়, ওই সময়ের মতোই চাটুকার সুবিধাবাদীরা ঘিরে ফেলেছেন সরকারের চারপাশ। ত্যাগী, পরীক্ষিত, দুঃসময়ের কান্ডারিরা আজ অবহেলিত, কোণঠাসা। অনেকটাই তাজউদ্দীনের মতো। এটা শুধু সরকার এবং প্রশাসনে নয়, আওয়ামী লীগেও ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। আর এ কারণেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বিপরীত পথে অনেক ক্ষেত্রেই হাঁটছে আওয়ামী লীগ ও সরকার। অর্থ পাচারকারীরা এ কারণেই ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের সঙ্গে সরকারের কাদের প্রকাশ্য ও গোপন সম্পর্ক আছে সবাই জানে। ব্যাংকের টাকা লুট করছে কারা? নব্য আওয়ামী লীগের হয়ে যারা চাটুকারিতায় চ্যাম্পিয়ন তারাই। এরাই নব্য মোশতাক। এরা সরকারের ও প্রধানমন্ত্রীর সব অর্জনকে ম্লান করে দেওয়ার ভয়ংকর খেলায় মেতেছে। আওয়ামী লীগ বাইরের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারে। কিন্তু ঘরের ষড়যন্ত্রকারীদের কাছেই হেরে যায়। তাই যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, শেখ হাসিনাকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করেন, লালন করেন, তাদের সতর্ক হতে হবে। নির্ঘুম অতন্দ্র প্রহরীর মতো বারবারই বলতে হবে- ‘নব্য মোশতাকরা মাঠে নেমেছে। সাবধান, হুঁশিয়ার।’
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা।
নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার।
শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন,
ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি
হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়,
দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা
ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা
রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে
সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা
হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী
বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ
অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে
উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার
যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের
প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির
পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না।
আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক
প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার
সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন
শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি,
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে
এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের
সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে
প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার
মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের
আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে
পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি
বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে
বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা
করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে
না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন।
এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার
জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি
স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে
ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়।
এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান
নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা
নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের
স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে
বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান
করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার
সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয়
নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ
কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের
বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা
তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত
করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে
স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে।
কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির
মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা
নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন
ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের
মতো উন্মোচিত করেছে।
উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয়
কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে
দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন
হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন,
সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার
পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার
না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ
দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা
স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা
শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।
উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং
এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায়
জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন
কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি।
যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত
ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন
স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের
এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে
ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী
হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব
নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান
সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা
করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা
নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ
অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে
তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের
প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান
হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী
লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র
তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার
নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার।
তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর
ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের
পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।
প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য
জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী
ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন
আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন।
নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার
সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী
লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের
মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা
বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন।
এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত,
পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই
ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে
না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।
এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির
সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে
মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা
ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি
নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন।
শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা
কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার
করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের
ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত
নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে
দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার
অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত
হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী
লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা
যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, ওবায়দুল কাদের যা বলছেন
তা হলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের অনুরণন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেভাবে তাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন সে বক্তব্যই
তিনি প্রচার করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন কোন এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী
আছেন তার তালিকা তৈরি করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ টি বিষয়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, কোন মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা তার নিকট আত্মীয় বা স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পারবে না। তৃতীয়ত, কোন মন্ত্রী এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। এই ৩ টির কোন একটির যদি ব্যত্যয় হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ৩ ধাপে যে তফসিল নির্বাচন
কমিশন ঘোষনা করেছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ জন মন্ত্রী এমপির স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন। ২য় ধাপে প্রার্থীতার সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এখানে ১৫২ টি উপজেলার মধ্যে
৮৭ জন মন্ত্রী-এমপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ জানিয়েছে, যারা মন্ত্রী-এমপিদের
নিকট আত্মীয়। আর ৩য় ধাপে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০-২৫০ জন মন্ত্রী-এমপির
আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন
যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাড়ান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয়
কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, এই বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী
লীগ সভাপতি। তবে সিদ্ধান্ত হবে ধাপে ধাপে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী
দিবেন তাদেরকে প্রথমত, দলের পদ হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে
তাদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী আছেন,
তারা মন্ত্রীত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত
কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হটকারী অবস্থান গ্রহন করে, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের
মতো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত
কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
কালো তালিকায় যদি থাকেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল শেখ হাসিনা শান্তির দূত জো বাইডেন ইরান
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা।