শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে
নিয়ে নতুন আলোচনা এবং বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশ্বের বরেণ্য ৪০ জন ব্যক্তিত্ব
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এক খোলা চিঠি
লিখেছেন। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রায় কোটি টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন আকারে গত ৭ মার্চ
এ খোলা চিঠিটি প্রকাশিত হয়। ওয়াশিংটন পোস্টের ওই খোলা চিঠি
পরে বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোতেও সংবাদ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। খোলা চিঠিতে বলা হয়—নোবেল পুরস্কারজয়ী
অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূসের
মতো একজন অনবদ্য পরিশুদ্ধ মানুষ এবং তার কার্যক্রমগুলো বাংলাদেশ সরকারের অন্যায় আক্রমণের শিকার হচ্ছে। বারবার হয়রানি এবং তদন্তের মধ্যে পড়ছে। এ অবস্থায় ‘গভীর
উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরদাতা বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ‘নোবেলজয়ী ইউনূসকে নিয়ে যা হচ্ছে, সে
বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি’ শিরোনামে এ পত্রে বেশ
কিছু প্রসঙ্গ উপস্থাপন করা হয়েছে। চিঠির অনেক বক্তব্য খণ্ডিত, অর্ধসত্য এবং তথ্য বিকৃতির দোষে দুষ্ট। যেমন—ড. ইউনূসের গ্রামীণ
ব্যাংক প্রসঙ্গে খোলা চিঠির বক্তব্যে বলা হয়েছে ‘তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস)
১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। এটাকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন, যার ঋণগ্রহীতা ৯০ লাখ এবং
এদের ৯৭ শতাংশ নারী।’
চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি লাখো মানুষকে দরিদ্র থেকে বের করে এনেছে। এ বক্তব্যটি খণ্ডিত
ও অর্ধসত্য। প্রকৃত বাস্তবতা হলো, শুধু ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। এটি গ্রামীণ ব্যাংকের গবেষণাতেই প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণের উচ্চসুদ বরং একজন গরিব মানুষকে নতুন নতুন ঋণের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে। এ ঋণ চক্র
থেকে বেরোতে পারে না। ড. ইউনূস যতদিন
পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (২ মার্চ ২০১১)
হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সেই সময়ে ঋণের কিস্তি শোধ না করতে পেরে
২৩৭ জন ঋণগ্রহীতা আত্মহত্যা
করেন, ১ হাজার ৮১৫
ঋণগ্রহীতা কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে জেলসহ
নানা আইনি জটিলতার মধ্যে পড়েন।
একইভাবে বিবৃতিতে ড. ইউনূসের গৃহঋণ প্রকল্প সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। ২০০ থেকে ৫০০ মার্কিন ডলারের গৃহঋণ দেওয়া শুরু করে যা দিয়ে ৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি গ্রামীণ পরিবার বাড়ি নির্মাণ করেছে বলে খোলা চিঠিতে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু গৃহঋণ সংক্রান্ত গ্রামীণ ব্যাংকের সমীক্ষাতেই পাওয়া যায় ভিন্ন তথ্য। ২০১২ সালে তৈরি ওই সমীক্ষা বলছে, গৃহঋণের টাকার ৬৭ শতাংশই ব্যয় হয়েছে অন্য খাতে। ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গৃহঋণের জন্য টাকা নিয়ে ঋণগ্রহীতারা তা অন্য খাতে বিনিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশে গৃহনির্মাণ বিপ্লব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ভাবিত আশ্রয়ণ প্রকল্প। ‘মুজিববর্ষে থাকবে না কেউ গৃহহীন’—এ স্লোগানের আওতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ গৃহহীনকে সরকার বিনামূল্যে ঘর দিয়েছে। আরও প্রায় ৫০ হাজার গৃহহীনকে ঘর দেওয়ার কাজ চলছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় একটি দুই কক্ষের বাড়ি নির্মাণ ব্যয় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মতো। মার্কিন ডলারে প্রায় আড়াই হাজার ডলার। এ মূল্যও অনেক কম বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। সেখানে ৫০০ ডলারের ঘর বানানো অবাস্তব। এটি আসলে বড় ঋণ বড় মুনাফার চিরায়ত ব্যাংকিং ফর্মুলার বাস্তবায়ন।
খোলা চিঠিতে ড. ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকমের গ্রামীণফোনে করা বিনিয়োগ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হিসেবে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকম নজিরবিহীন দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীকে লভ্যাংশের টাকা না দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা চলমান আছে। ড. ইউনূস আদালতের বাইরে মামলাটি মীমাংসার জন্য অনৈতিক পথ গ্রহণ করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে। একজন আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকা উৎকোচ দিয়ে তিনি মামলা বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কীভাবে অন্য অ্যাকাউন্টে গেছে যে প্রশ্নের উত্তরও ড. মুহম্মদ ইউনূস এখন পর্যন্ত দেননি। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে। অথচ বিচারাধীন বিষয় নিয়ে ড. ইউনূসের পক্ষে রীতিমতো সাফাই গেয়েছেন ৪০ জন বিশিষ্ট বিশ্বব্যক্তিত্ব। খোলা চিঠিতে তারা ড. ইউনূস সরকারের অন্যায় আক্রমণের শিকার এবং হয়রানি ও তদন্তের মধ্যে পড়ছেন বলে ‘বেদনা’ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের মূল মালিক নারী ঋণগ্রহীতাদের মালিকানা গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ নার্সিংসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কেন নেই—সে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। খোলা চিঠিটি পড়লেই বোঝা যায়, এটি ড. ইউনূস এবং তার প্রচারণা প্রতিষ্ঠান ইউনূস সেন্টার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত। বিভিন্ন সময়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তিনি বিক্ষিপ্তভাবে যেসব যুক্তি এবং বক্তব্য দিয়েছিলেন, এ খোলা চিঠি তারই এক সম্মিলিত রূপ। এ খোলা চিঠি যাদের নামে দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠজন। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরসহ যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম এ চিঠিতে দেওয়া হয়েছে তারা সবাই প্রভাবশালী। ড. মুহম্মদ ইউনূসের পক্ষে আগেও তারা খোলামেলা অবস্থান নিয়েছিলেন। বিশেষ করে হিলারি ক্লিনটন ড. ইউনূসকে ‘ফ্যামিলি ফ্রেন্ড’ হিসেবেই দাবি করেন। ২০১১ সালে যখন ড. ইউনূসকে বয়সজনিত কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অবসরে পাঠানো হয়, তখনো হিলারি ক্লিনটন এ ব্যাপারে দেন-দরবার করেছিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে রীতিমতো ধমক দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শান্ত, ধীর, স্থিরভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন এবং আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেন। প্রশ্ন হলো, এ সময়ে কেন ড. ইউনূসের পক্ষে এ রকম একটি চিঠি মার্কিন প্রভাবশালী গণমাধ্যমে পয়সা খরচ করে ছাপা হলো?
একটি কারণ স্পষ্ট। ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গ্রামীণ টেলিকম থেকে পাচারের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে, তা থেকে ড. ইউনূসকে বাঁচাতে এই খোলা চিঠি। ড. ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান। তিনি এ পদে থাকা অবস্থাতেই এ টাকা তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে গেছে। একটি কোম্পানির টাকা কীভাবে চেয়ারম্যানের অ্যাকাউন্টে যায়? এ নিয়ে নিরপেক্ষ এবং নির্মোহ তদন্ত প্রয়োজন। কিন্তু ড. ইউনূস বারবার এ তদন্ত বন্ধের চেষ্টা করছেন। এ তদন্ত বন্ধের জন্য তিনি উচ্চ আদালতেও গিয়েছিলেন। এ তদন্ত বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রকেও সরব দেখা গেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস কিছুদিন আগে দুর্নীতি দমন কমিশনে ছুটে গিয়েছিলেন। খোলা চিঠিতে এ তদন্তকেই ‘হয়রানি’ বলা হচ্ছে। তাহলে কি ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইন এবং বিচারের ঊর্ধ্বে? যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কথা বলে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান প্রত্যাশা করে। তাহলে ড. ইউনূসের ব্যাপারে তদন্তে আপত্তি কেন?
এ সময় এই খোলা চিঠির একটি গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। গত কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে খোলামেলা কথাবার্তা বলছে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা পালাক্রমে বাংলাদেশে আসছেন। তারা অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ দিচ্ছেন। এ দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেশেও এ নিয়ে একটি মতামত সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা অস্বস্তি দৃশ্যমান। বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রচ্ছন্ন একটি কঠোর বার্তা অব্যাহতভাবে দিয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি বলেছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে আগামী নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণযোগ্য মনে করবে কি না তা এক প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলছেন, আগামী নির্বাচনকে ঘিরে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার জন্য কেউ কেউ চক্রান্ত করছেন বলেও প্রধানমন্ত্রী একাধিক বক্তৃতায় বলেছেন। ‘নির্বাচন’ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টির একটি চেষ্টা দৃশ্যমান। নির্বাচন না হলেই দেশে একটি সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। এর ফলে এক-এগারো সরকারের মতো আরেকটি সুশীল নিয়ন্ত্রিত সরকার আসার পথ সুগম হবে। কিন্তু নির্বাচন বানচাল, কিংবা সুশীলদের মসনদে বসানো একা বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও মদত। সে চেষ্টাও বিএনপিসহ সরকারবিরোধী মহল দীর্ঘদিন করছে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই কি ড. ইউনূসকে মাঠে নামানো হয়েছে? সেই জন্য কি মার্কিন বিশ্বস্ত বন্ধুর পক্ষে এই খোলা চিঠি? ২০০৭ সালে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আনার পেছনে ড. ইউনূস নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছিলেন। এবারও কি সেই একই খেলায় নেমেছেন তিনি? কারণ তিনি ভালো করেই জানেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চলবেই। কোনো চাপেই নতিস্বীকার করার মানুষ নন বঙ্গবন্ধুকন্যা। আর সে জন্যই আগামী নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এ খোলা চিঠি? আবার অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আনতে এটা কি ড. ইউনূসের প্রথম চাল?
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনকে
যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল, তখন কে জানত তার বিএনএম কাহিনি।
কে জানত তিনি বিএনপি ছেড়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে অভিযুক্ত হতে যাচ্ছিলেন।
সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেট তারকাকেও তিনি বিএনএমে ভিড়িয়েছিলেন। এখন মেজর (অব.) হাফিজ
অনেক কিছুই বলতে পারেন। কিন্তু সবকিছুর পরও একটি কথা সত্যি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে
(বিএনএম) তার যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়া বহু দূরে এগিয়েছিল।
সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত ছবি প্রকাশ না
হওয়া পর্যন্ত এ ঘটনা মেজর (অব.) হাফিজ বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন। মেজর হাফিজ এখন যা বলছেন,
বিষয়টি যদি তেমনি সাদামাটাই হতো, তাহলে সাকিব নাটক তিনি এতদিন গোপন করতেন না। তিনি
যদি তখন এটাকে ‘সরকারের চক্রান্ত’ মনে করতেন, তাহলে তখনই তিনি ঢাকঢোল পিটিয়ে জানিয়ে
দিতেন সরকার তাকে কেনার চেষ্টা করছে। সরকারকে বেইজ্জত করার এমন সুযোগ তিনি হাতছাড়া
করবেন কেন? এ নিয়ে হৈচৈ করে তিনি বিএনপিতে তার অবস্থান পোক্ত করতেন। তারেক রহমানের
ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে বিএনএম কেলেঙ্কারি, সাকিবের সঙ্গে
ফটোসেশনের ঘটনা গোপন কুঠিরে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
এখন যখন দুষ্ট লোকেরা তার এসব গোপন
প্রণয়ের দুর্লভ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে তখন মেজর (অব.) হাফিজ এসবকে
চক্রান্ত বলছেন। এখন কেন? যখন এসব খেলা চলছিল তখন কেন হাফিজ মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন?
হাফিজ উদ্দিন যখন বিদেশ থেকে এসে স্বল্পমেয়াদে কারাবরণ করে ‘পবিত্র’ হলেন, তখন বিএনপি
নেতাদের উল্লাস চাপা থাকেনি। বিএনপির নেতারা মনে করলেন বিএনপিতে আরেক খাঁটি সোনা পাওয়া
গেল। নবরূপে আত্মপ্রকাশের পর নব্য জ্যোতিষীর মতো তিনি ঘোষণা করলেন, বিএনপি নাকি খুব
শিগগির ক্ষমতায় আসছে। অল্পদিনের মধ্যে সরকার পতনের বিষয়টিও তার জ্যোতিষী বিদ্যায় ধরা
পড়ল। বিএনপির আধমরা নেতাকর্মীরা খানিকটা হলেও উদ্ভাসিত হলেন। আবার কিছু একটা হবে, এই
স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন বিএনপির হতাশাগ্রস্ত কর্মীরা। নির্বাচনের আগে হাফিজ উদ্দিন
কী বলেছিলেন, তা ভুলে গেলেন অনেকে।
আসুন একটু পেছনে ফিরে যাই। ৭ জানুয়ারির
নির্বাচনের আগে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি
বিএনপির আন্দোলনের কৌশলের সমালোচনা করেন। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তও সঠিক
নয় বলে মন্তব্য করেন। মেজর (অব.) হাফিজের ইউটার্ন যে দেনা-পাওনার হিসাব না মেলাজনিত,
এটা বুঝতে সাকিবের সঙ্গে বিএনপি এই নেতার ছবি ভাইরাল হওয়া পর্যন্ত বিএনপির কর্মীদের
অপেক্ষা করতে হয়েছে। ওই ছবি প্রকাশের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা অনুধাবন করতে পারলেন যে,
তারা মেজর (অব.) হাফিজের কাছে ধোঁকা খেয়েছেন। ধোঁকা যে শুধু বিএনপি খেয়েছে এমন নয়।
মেজর (অব.) হাফিজও ‘ডাবল’ ধোঁকা খেয়েছেন। প্রথম ধোঁকা হলো, যে প্রলোভনে তাকে কিংস পার্টিতে
ভেড়ানোর কথা ছিল, শেষ পর্যন্ত সেই উপঢৌকন তাকে দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় ধোঁকা, বিএনপিতে
আবার যখন তিনি জাঁকিয়ে বসতে শুরু করলেন, তখনই গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়ে তাকে বেইজ্জত
করা হলো। বিএনপির জন্য এ ঘটনা ছোট ধোঁকা। গত কুড়ি বছর ধোঁকায় ধোঁকায় জর্জরিত বিএনপি।
বারবার ধোঁকা খেতে খেতে দলটি রীতিমতো গর্তে পড়েছে। ভুল লোককে বিশ্বাস করে বিএনপি ধোঁকা
খেয়েছে। ভুল বন্ধুকে বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়েছে। মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাস রেখে বিএনপি
বিপর্যস্ত হয়েছে।
২০০১ সালের অক্টোবরে জামায়াতকে সঙ্গে
নিয়ে ভূমিধস বিজয় লাভ করে বিএনপি। এ সময় বিএনপির নেতারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, আগামী ৪২
বছর আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আওয়ামী লীগ অচিরেই মুসলিম লীগে পরিণত হবে।
ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে বিএনপি নানামুখী পদক্ষেপ নেয়। প্রধান বিচারপতির চাকরির বয়সসীমা
বাড়াতে সংবিধানে সংশোধন করে। ভোটার তালিকায় দেড় কোটি ভুয়া ভোটারের নাম সংযোজন করে।
ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে বিএনপি চেয়ারপারসন তার পুত্রের পরামর্শে সাতজনকে ডিঙিয়ে
মঈন ইউ আহমেদকে সেনাপ্রধান করেন। মঈন ইউ আহমেদ বিএনপিকে চিরস্থায়ী ক্ষমতায় রাখতে সাহায্য
করবে, এমন ভাবনা থেকেই তাকে সেনাপ্রধান করা হয়। কিন্তু এই জেনারেল বিএনপিকে এমন ধোঁকা
দেয় যে, দলটির কোমরই ভেঙে যায়।
এখনো ক্ষমতার বাইরে দীর্ঘ ১৭ বছর থাকা
দলটি সেই ভাঙা কোমর আর সোজা করতে পারেনি। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথমে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা
চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছিল। কিন্তু এরকম ব্যক্তিত্ববান রাষ্ট্রপতি বিএনপির
পছন্দ নয়। বিএনপি বেছে নিল পদলেহী একান্ত অনুগত ব্যক্তিত্বহীন ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের
মতো রাষ্ট্রপতি। অধ্যাপক বদরুদ্দোজাকে সরিয়ে ইয়াজউদ্দিনের মতো জি হুজুর মার্কা রাষ্ট্রপতি
বানিয়ে বিএনপি খুশিতে আত্মহারা। এরকম একান্ত বাধ্যগত রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান
করে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান ক্ষমতার সুবাস পেতে শুরু করলেন। কিন্তু ইয়াজউদ্দিন
তাদের ধোঁকা দিলেন। বড় ধোঁকা। এই ধোঁকায় বিএনপির সাজানো বাগান তছনছ হয়ে গেল। বিএনপি
আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ইয়াজউদ্দিনের মতো ব্যক্তিত্বহীনরা যে কঠিন সময়ে কোনো সাহায্য
করতে পারে না, এটা বুঝতে বিএনপি অনেক দেরি করে ফেলেছিল। বিএনপির ‘ধোঁকা’ গল্পের এখানেই
শেষ নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর দলটি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।
২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি
নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিল উচ্ছ্বসিত। এ সময় ব্যাকফুটে থাকা আওয়ামী
লীগ, নির্বাচনকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেওয়ার
প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের
দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। সিটি নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের পর বিএনপি কেন জাতীয়
সংসদ নির্বাচন বর্জন করল? সেই ‘ধোঁকা’। বিএনপিকে কেউ কেউ বুঝিয়েছিল, কোনোভাবেই নির্বাচনে
যাওয়া যাবে না। নির্বাচনে না গেলেই সরকারের পতন ঘটবে। একতরফা নির্বাচন দেশে-বিদেশে
গ্রহণযোগ্য হবে না। ব্যস। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার খোয়াব দেখে, বিএনপি আন্দোলন
শুরু করল। অগ্নিসন্ত্রাস, গাড়ি ভাঙচুর, গান পাউডার দিয়ে গণপরিবহনে আগুন দিয়ে একটা ত্রাসের
রাজত্ব সৃষ্টি করল। জাতীয় পার্টিও মনে করল, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হবে না। এরশাদও নির্বাচন
থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন। রওশন এরশাদ থাকলেন নির্বাচনের পক্ষে। ১৫৩ আসনে বিনা ভোটে
নির্বাচিত হলেন সংসদ সদস্যরা। কিন্তু সরকারের পতন হলো না। আওয়ামী লীগ দিব্যি পাঁচ বছর
দেশ পরিচালনা করল।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের এক
বছর পর আবার ধোঁকা খেল বিএনপি। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবরোধের ডাক দিলেন
খালেদা জিয়া। তিনি নিজেও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন। দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অবস্থান
করে তিনি ধমক দিলেন, গাড়ি পোড়ালেন, বোমাবাজি আর আগুন সন্ত্রাস করে জনজীবন বিপর্যস্ত
করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু জনগণ প্রত্যাখ্যান করল এই সহিংস রাজনীতি। একপর্যায়ে বিএনপির
সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল সাধারণ জনগণ।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতি
মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল এক-এগারো সরকারের সময়। ড. ফখরুদ্দিনের সরকার ২০০৭ সালে
এই মামলা করে। বিএনপির আইনজীবীরা এই মামলা নিয়ে খালেদা জিয়াকে ধোঁকা দিলেন। বারবার
মামলার তারিখ নেন, কথায় কথায় হাইকোর্টে যান। মামলাটি বিএনপির আইনজীবীরা এমন নাজুক জায়গায়
নিয়ে যান যে, খালেদা জিয়ার শাস্তি পাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। ২০১৮ সালে মামলার
রায়ের আগে তিনি লন্ডনে গেলেন পুত্রের সঙ্গে দেখা করতে। শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকে পরামর্শ
দিলেন মামলার রায় পর্যন্ত তিনি (খালেদা জিয়া) যেন লন্ডনেই অবস্থান করেন। রায়ে দণ্ড
হলে একটা সমঝোতা করে দেশে ফেরার পরামর্শ দিলেন তারা। কিন্তু ধোঁকাবাজরা খালেদা জিয়াকে
দিলেন ভুল পরামর্শ। তারা বললেন, দেশেই ফিরতে হবে। সরকার খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টাও জেলে
রাখতে পারবে না। এর মধ্যেই সরকারের পতন ঘটবে। খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করলেই নাকি জনবিস্ফোরণ
ঘটবে। খালেদা জিয়া শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথা শুনলেন না, শুনলেন ধোঁকাবাজদের কথা। দেশে ফিরলেন।
মামলার রায়ে দণ্ডিত হলেন। তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হলো টানা দুই বছর। বিএনপি
একটা টুঁ শব্দ করতে পারল না। আইনি লড়াইয়েও খালেদা জিয়া হেরে গেলেন। ধোঁকাবাজদের খপ্পরে
পরে খালেদা জিয়ার রাজনীতি আজ শেষ হয়ে গেছে। এখন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য আবেদন-নিবেদন
হচ্ছে। তার ভাই সরকারের কাছে অনুকম্পা ভিক্ষা করছেন। বিএনপির আন্দোলন বা আইনি লড়াইয়ে
নয়, সরকারের করুণায় খালেদা জিয়া এখন তার সব রাজনৈতিক অর্জন বিসর্জন দিয়ে ফিরোজায় থাকছেন।
এই ধোঁকা বিএনপিকে কোমায় নিয়ে গেছে।
২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে ধোঁকা
খেয়েছিল বিএনপি। আর ২০১৮ সালে ধোঁকা খায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে
অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি কোনো শর্ত ছাড়াই। এমনকি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও
বিএনপি নেতারা উচ্চারণ করেননি সরকারের সঙ্গে সংলাপে। ওই নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই
‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করা হয়। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে লাথি দিয়ে বিদায় করে সারা
জীবন ‘বঙ্গবন্ধু’র আদর্শে বিশ্বাসী ড. কামাল হোসেনকে নেতা মানে বিএনপি। ড. কামাল হোসেনের
নেতৃত্বে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে। ওই নির্বাচনে মাত্র ছয় আসন পেয়ে লজ্জায়
ডুবে যায় দলটি। বিএনপি নেতারাই বলেন, এটা ছিল স্রেফ ধোঁকা। আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায়
আনতে সাজানো নাটকে বিএনপিকে বলির পাঁঠা করা হয়েছিল, এমন কথা বিএনপি নেতারাই প্রকাশ্যে
বলেন। ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে কীভাবে ধোঁকা দিল এ গল্প করে বিএনপি নেতারাই লজ্জায়
মুখ লুকান।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপি ‘তওবা’ করে। দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ২০২১ সালের শেষ থেকে শুরু করে আবার আন্দোলন। এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপির প্রতি সহানুভূতি দেখায়। আস্তে আস্তে পশ্চিমাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক গাঢ় হয়। বিএনপি নেতারা সকাল-সন্ধ্যা কূটনীতিকপাড়ায় ঘোরাঘুরি করেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রাতরাশ সারেন, নৈশভোজে যান ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দূতের বাসায়। বিএনপি ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। একতরফা নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবে না ইত্যাদি নানা আতঙ্ক বাণী চারদিকে উচ্চারিত হতে থাকে। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা, স্যাংশন ইত্যাদি নিয়ে চলে তুলকালাম তর্কবিতর্ক। বিএনপি নেতারা খুশিতে আত্মহারা। চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। অতি আত্মবিশ্বাসে ২৮ অক্টোবর সহিংস হয়ে ওঠে তারা। তারপর নির্বাচন। আবার ধোঁকা খায় বিএনপি। বিএনপি মনে করেছিল, একতরফা নির্বাচন করলেই মার্কিন অ্যাকশন শুরু হবে। নিষেধাজ্ঞা আসবে। কিন্তু কোথায় নিষেধাজ্ঞা। নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশ অভিনন্দন বাণীতে ভরিয়ে তুলল নতুন সরকারকে। একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ জানাল বিশ্বের প্রায় সব প্রভাবশালী দেশ। বিএনপি ধোঁকা খেল আবারও। এবার ধোঁকায় একেবারে গর্তে পড়ে গেছে দলটি। উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বারবার কেন ধোঁকা খায় বিএনপি? এর কারণ একটাই, আদর্শহীন রাজনীতি এবং যে কোনো ধরনের ক্ষমতায় যাওয়ার উদগ্র বাসনা। বিএনপিতে যদি ন্যূনতম আদর্শ চর্চা থাকত, তাহলে এভাবে বারবার প্রতারিত হতো না। ভুল মানুষের হাত ধরে ভুল পথে পা বাড়াত না। আদর্শহীন রাজনীতির পরিণতির উদাহরণ বিএনপি।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রম আদালত হাইকোর্ট
মন্তব্য করুন
বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনকে যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল, তখন কে জানত তার বিএনএম কাহিনি। কে জানত তিনি বিএনপি ছেড়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে অভিযুক্ত হতে যাচ্ছিলেন। সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেট তারকাকেও তিনি বিএনএমে ভিড়িয়েছিলেন। এখন মেজর (অব.) হাফিজ অনেক কিছুই বলতে পারেন। কিন্তু সবকিছুর পরও একটি কথা সত্যি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) তার যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়া বহু দূরে এগিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার পর এখন সবচেয়ে সুসময় কাটাচ্ছে। টানা ১৫ বছরের বেশী সময় ক্ষমতায়। বাঁধাহীন ভাবে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি। মাঠে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করার মতো কোন রাজনৈতিক শক্তি নেই। সংসদেও আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ। কোথাও আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কেউ নেই। আওয়ামী লীগের কোন চাপ নেই, নেই উৎকণ্ঠা। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলটি আরো নির্ভার। কিন্তু এই সুসময়ে আওয়ামী লীগের দিকে তাকালে একটু ভয়ও হয়। এই আওয়ামী লীগ কি সেই আওয়ামী লীগ?
আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাথী তারা। ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। কঠিন সময়ে লড়াকু ভূমিকা পালন করেছেন। আন্দোলন সংগ্রামে তাদের কখনও পিছপা হতে দেখা যায়নি। আদর্শের প্রশ্নে তারা কখনও আপস করেননি। কিন্তু তারপরেও আওয়ামী লীগে অনাহূত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তারা জায়গা পান না, এমপি হতে পারেন না। মন্ত্রিসভা তো অনেক দূরের কথা। অথচ তাদের চেয়ে কম উজ্জ্বল নেতারা এখন মন্ত্রী হয়েছেন, এমপি হয়েছেন। দলে এবং সরকারে প্রভাবশালী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাদের কি অপরাধ কেউ জানে না। অথচ কর্মীদের মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। আওয়ামী লীগের পরিচয় নিয়েই তারা থাকতে চান এবং আওয়ামী লীগের পরিচয় নিয়ে তারা গর্ববোধ করেন। হৃদয়ে ক্ষোভ হতাশা থাকলেও মুখে তাদের হাসি থাকে। তারা তাদের দুঃখ হতাশার কথা কাউকে বলেন না।