২৬ নভেম্বর ২০০৬। একই সাথে রাষ্ট্রপতি এবং তত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন ড: ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। সংবিধানের সব বিকল্প শেষ না করেই রাষ্ট্রপতির প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হলো হাইকোর্টে। একই সাথে উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শ ছাড়াই রাষ্ট্র পরিচালনার বৈধতা এবং চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে নির্বাচনী তফসীল ঘোষনা না করার সিদ্ধান্ত চেয়ে তিনটি রীট মামলা দায়ের করা হলো হাইকোর্টে। তিনটি রীট আবেদনের শুনানী চললো তিনদিন ধরে। শুনানী শেষে ৩০ নভেম্বর তিনটি রীটের উপর আদেশ দেয়ার কথা। এসময় বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আর্শীবাদ পুষ্ট তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এক নজীর বিহীন কান্ড করে বসলেন। তিনি তিনটি রীটের শুনানীর কার্যক্রম স্থগিত করে, মামলার সব নথি তলব করলেন। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিচার বিভাগের উপর সরাসরি হস্তক্ষেপের এটি ছিলো বিএনপি-জামাতের আরেকটি বাজে দৃষ্টান্ত। সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল এই ‘ভয়ংকর’ কান্ড সম্পর্কে বলেছিলেন ‘আমার ২০ বছরের ওকালতি এবং ২০ বছরের বিচারক জীবনে যে মামলার শুনানী হয়ে গেছে এবং কেবল আদেশের অপেক্ষায় আছে সেখানে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ দেখিনি।” এটি প্রথম এবং একমাত্র বিচার বিভাগের কার্যক্রমে বিএনপির হস্তক্ষেপ ছিলোনা। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়ে ‘বিএনপির ভাবমূর্তি’ রক্ষার জন্য অন্তত ১২ বার বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছিল।
প্রধান বিচারপতির ঐ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতির এজলাসে গিয়ে প্রতিবাদ জানান। কিন্তু সেই সময় বিএনপি এবং জামাতপন্থী আইনজীবীরা সহিংস হয়ে ওঠেন। তারা শুরু করেন ভাঙ্গচুর। চড়াও হন আইনজীবীদের উপর। বাইরে থেকে ভাড়া করা লোক এনে সন্ত্রাস চালালো সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গনে। ভাঙ্গচুর এবং অগ্নি সংযোগ করা হয় গাড়ী এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ। সুপ্রীম কোর্টের এই নারকীয় তান্ডব বাংলাদেশে এক-এগারোর অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ঠিক ১৭ বছর পর আবার সুপ্রীম কোর্টকে কলংকিত করলো বিএনপি-জামাত। সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে আবার তান্ডব হলো সুপ্রীম কোর্টে। ১৫ ও ১৬ মার্চ ছিলো সুপ্রীম কোর্টের নির্বাচন। ১৪ মার্চ, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত সাবেক বিচারপতি সৈয়দ মনসুর চৌধুরী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর রাত আটটার দিকে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী সমিতির কনফারেন্স কক্ষে যান বিএনপি জামাতপন্থী শতাধিক আইনজীবী। তারা ভাঙ্গচুর এবং ব্যালট পেপার ছিনতাই করে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এই আশংকায় নির্বাচনের দিন ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গনে। এর মধ্যেই ১৫ মার্চ সকালে বিএনপি-জামাত পন্থী আইনজীবীরা নির্বাচন বানচালের জন্য শুরু করেন আক্রমনাত্মক আচরন। তারা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। বিকেল ৩টার দিকে শুরু হয় সহিংসতা। গত ১৫ মার্চ আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনা ২০০৬ সালের নভেম্বরের ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিলো। তাহলে কি আবার একটি এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যই সুপ্রীম কোর্ট আক্রান্ত হলো?
শুধু সুপ্রীম কোর্ট কেন? এক-এগারোর কুশীলবরা ২০০৬ এবং ২০০৭ সালের শুরুতে যা যা ঘটিয়েছিল, এখন বাংলাদেশে তার পূনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা করছে। এই প্রক্রিয়া এখন দৃশ্যমান। এক-এগারোর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা কূটনীতিকদের তৎপরতা ছিলো চোখে পড়ার মতো। তারা বৈঠকের পর বৈঠক করতেন। রাজনৈতিক সমঝোতার আড়ালে দুপক্ষের বিরোধকে উস্্কে দিতেন। সুশীল সমাজের সাথে নিয়মিত পরামর্শ করতেন। এখন সেই একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কদিন আগেই বিএনপির নেতারা দল বেঁধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তাদের কাছে গিয়ে নালিশের সুরে বললেন ‘বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি যাবে না।’ তাদের নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী পূণ:ব্যক্ত করলেন। কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনেও নিয়মিত ধর্না দিচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে হিতোপদেশ দিচ্ছেন প্রায় নিয়মিত। একথা সঠিক যে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক এটা সব নাগরিকের প্রত্যাশা। তারা এক উৎসব মূখর পরিবেশে ভোট দিতে চান। কিন্তু একটি দল যদি নির্বাচনে আসতে না চায় তাহলে জনগন আশাহত হওয়া ছাড়া আর কি বা করতে পারে। নির্বাচন কমিশন কি কাউকে টেনে হিঁচড়ে বা হাতে পায়ে ধরে নির্বাচনে আনতে পারে? নাকি ক্ষমতাসীন দলই বিরোধী দলকে আদর আপ্যায়ন করে ক্ষমতায় বসাতে পারে? একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটি দলের নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া সেই দলের একান্ত দলীয় সিদ্ধান্ত। বিএনপি ২০১৪ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে ভোট বর্জন করেছিল। আবার ২০১৮ সালে দলীয় সরকারের অধীনে কোন শর্ত ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। কাজেই বিএনপি তাদের তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী ২০১৮ সালেই পরিত্যাগ করেছে। এখন তারা কেন নতুন করে এই দাবী উত্থাপন করছে? বিএনপি কি নির্বাচন করার জন্য এই দাবী করছে, নাকি নির্বাচন বন্ধ করতে? দেশে আরেকটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার রাজনৈতিক পটভূমি সৃষ্টির জন্যই কি বিএনপির আন্দোলন? বর্তমান সময়ে এই প্রশ্ন গুলো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
২০০৭ সালে এক-এগারো আনার আগে অত্যন্ত তৎপর ছিলেন ড: ইউনূস এবং সুশীল সমাজ। ২০০৬ সালে ড: মুহাম্মদ ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরুস্কার পান। এর পরপরই তিনি শুরু করেন রাজনৈতিক দলগঠনের প্রক্রিয়া। কিন্তু এই উদ্যোগ অংকুরেই বিনষ্ট হয়। কিন্তু ড: ইউনূস এতে থেমে থাকেননি। তিনি ‘নাগরিক সংলাপে’র আড়ালে অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য মাঠে নামেন। ‘যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন’ শিরোনামে এক সুশীল প্রেসক্রিপশন দেন ড: মুহম্মদ ইউনূস। মূলত: ড: ইউনূসের নেতৃত্বে অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার প্রক্রিয়াই ছিলো এক-এগারোর প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু শেষ মুহুুর্তে ড: ইউনূস তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হননি। তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের লিখিত গ্রন্থ ‘শান্তির স্বপ্নে, সময়ের স্মৃতি চারন’ থেকে জানা যায়; ড: মুহম্মদ ইউনূসকে তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি স্বল্প সময়ের জন্য নয় বরং ১০ বছরের জন্য দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন। এজন্যই তার পছন্দের ব্যক্তি ড: ফখরুদ্দিন আহমেদকে তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করা হয়েছিল। এখন আবার আলোচনায় ড: ইউনূস। তার পক্ষে ৪০ জন বিশ্ব ব্যক্তিত্বের বিবৃতির পর এটা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, ড: ইউনূস হাত পা গুটিয়ে নেই। আগামী নির্বাচনে তিনি একটা ফ্যাক্টর। অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তিনি যে চেষ্টা তদ্বির শুরু করেছেন, সেটি আর গোপন নেই। এক-এগারোর সময় বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ছিলেন খুবই তৎপর। তাদের কথা-বার্তা, আর্তনাদ, আকুতি বলেই দিচ্ছিল যে, তারা তৃষ্ণার্ত। ক্ষমতায় আসতে চান। কিন্তু ভোট করে ক্ষমতায় যাওয়ার সক্ষমতা তাদের ছিলো না। তাই একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন তারা। এখনও সুশীলদের তৎপরতা ২০০৬-০৭ সালের মতোই। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, সুশাসন নিয়ে তাদের বেদনা যেন অন্তহীন। এখন যে সব সুশীরা গণতন্ত্র এবং সুশাসন নিয়ে কথা বলেন, এদের কেউ কেউ এক-এগারো সরকারের উপদেষ্টা, স্থায়ী প্রতিনিধি কিংবা নীতি নির্ধারক ছিলেন। তখন তারা কি করেছিলেন, যদি একটু স্মৃতির ঝাপসা হয়ে যাওয়া আয়নাটা পরিস্কার করে দেখতেন। তখন কোথায় ছিলো মানবাধিকার, সুশাসন, ন্যায় বিচার, আইনে শাসন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা? এখন সেই সুশীলদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয় তারা দায়িত্ব না নিলে শিগ্্গীরই দেশটা রসাতলে চলে যাবে।
এক-এগারো আনতে যারা সক্রিয় ছিলেন সে সময় তারা আবারও তৎপর। একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই কি আবার সুপ্রীম কোর্টের ঘটনা? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমাদের খুঁজে বের করতেই হবে। গত ১৩ মার্চ কাতার সফরের উপর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আত্মপ্রত্যয়ী, দৃঢ়। তিনি চাপে আছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন ‘কোন চাপ নেই যা শেখ হাসিনাকে দেয়া যায়’। দেশের মানুষ জানে, কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার করার মানুষ শেখ হাসিনা নন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ঐ সংবাদ সম্মেলনে এটাও বলেছেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’ সেই ষড়যন্ত্রের আলামত দেখা যাচ্ছে। সুপ্রীম কোর্টের ঘটনা বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকান্ড, পশ্চিমা কূটনীতিকদের তৎপরতা, সুশীলদের দৌড়ঝাপ সব একই সূত্রে গাঁথা। সম্মিলিত শক্তি চেষ্টা করবে নির্বাচন বানচাল করতে। তাহলেই অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পথ তৈরী হবে। ২০০৮ এর নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ধারা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলমান। বাংলাদেশে এখন যে গণতন্ত্র আছে তাতে অনেক দূর্বলতা দেখা যায়। অনেক সমস্যা, ত্রুটি বিচ্যুতি আছে। কিন্তু এটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, সবচেয়ে খারাপ গণতন্ত্রও অনির্বাচিত এবং অসাংবিধানিক সরকারের চেয়ে ভালো। তাই গণতন্ত্রকে বোতল বন্দী করার নীলনক্সা রুখতে হবে। যারা এক-এগারোর মঞ্চ বানানোর কাজে আদা জল খেয়ে নেমেছেন, তাদের থামাতেই হবে। অবশ্য এক-এগারোর কুশীলব দের জন্য কাল মাক্সের একটি বাণী প্রযোজ্য। মার্ক্স বলেছিলেন ‘ইতিহাসে একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি কখনো হয় না।’ তাই মাক্সীয় সূত্র অনুযায়ী বাংলাদেশে আরেকটি এক-এগারো হবে না। অন্তত: যতোক্ষন রাজনীতির মাঠে অতন্ত্র প্রহরীর মতো জেগে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল শেখ হাসিনা শান্তির দূত জো বাইডেন ইরান
মন্তব্য করুন
আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক ড. হাছান মাহমুদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা।
আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের লোডশেডিং চলছে। গত বুধবার থেকে সংবাদপত্র বের হচ্ছে না। টানা ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধের বিশ্ব রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। না কোন প্রতিবাদে নয়, দাবী আদায়ের জন্য নয়। ছুটির ফাঁদে সংবাদপত্র বন্ধ আছে। সংবাদপত্রকে বলা হয় জরুরী সেবা। চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন জরুরী সেবা দেন, তেমনি সংবাদকর্মীদের কাজও হলো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেয়া। বিশেষ করে ছুটির সময় এটার প্রয়োজন আরো বেশী। এবার দেশে একটা দীর্ঘ ছুটি। এসময় সংবাদপত্র অনেক জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো, ছয়দিন যদি হাসপাতালে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বলতো ছয়দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে না। তাহলে কি হতো? আমিতো মনে করি, সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিষয়টিও তেমনি আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের এনিয়ে বিকার নেই।
প্রথম তিন মাস বর্তমান সরকারের জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করার ফলে এই নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়, নির্বাচনের পর কী ধরনের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সেটি ছিল সকলের কাছে একটি দেখার বিষয়। তবে সরকার প্রথম তিন মাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকট গুলোকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত সরকারের চেষ্টা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোন রকম অভিযোগ নেই।
তোফায়েল আহমেদ কি রাজনীতিতে এক অস্তমিত সূর্য? তিনি কি নিভে যাচ্ছেন? বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তিনি কি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নগুলো এখন খুব বড় করে সামনে এসেছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যারা তোফায়েল আহমেদকে দেখেছেন তারা আগের তোফায়েল আহমেদের ছায়াকেও দেখতে পারেননি। যে তোফায়েল আহমেদ ছিল সরব, যার ভরাট কণ্ঠস্বরে জাতীয় সংসদ প্রকম্পিত হত, যিনি সবসময় সবাইকে চমকে দিতেন বিভিন্ন দিন তারিখের হিসেব মুখস্থ বলে দিয়ে, যার সবসময় শত শত টেলিফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা মুখস্থ থাকত, যা স্মৃতিশক্তি নিয়ে সকলে প্রশংসা করত, রাজনীতিতে যিনি একজন যুবরাজের মত পদচারণা করতেন, নানা রকম বিতর্কের পরও তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন সেই তোফায়েল আহমেদ এখন কোথায়?