মাহাথির মোহাম্মদ।
আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি। ১৯৮১ সাল থেকে টানা ২২ বছর মালয়েশিয়ার সরকারপ্রধান ছিলেন।
তাঁর নেতৃত্বে মালয়েশিয়া বদলে গেছে। ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মাহাথিরের নেতৃত্ব
এক উদাহরণ। মাহাথির মোহাম্মদ যখন তাঁর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্রের
নজর পড়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ধাবমান মালয়েশিয়ার প্রতি। এর কারণ ছিল মালয়েশিয়ার
গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব নেতা হিসেবে মাহাথির মোহাম্মদের উত্থান। তিনি মুসলিম নিপীড়নের বিরুদ্ধে
সোচ্চার ছিলেন। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাতেন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে
টুইন টাওয়ার হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মাহাথির
মার্কিন এ নীতির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। ইরাক আগ্রাসনের পর জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে মাহাথির
মোহাম্মদ যুক্তরাষ্ট্রকে আগ্রাসনবাদী এবং যুদ্ধবাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। মাহাথিরের
বক্তব্য সাড়া বিশ্বে তোলপাড় ফেলেছিল। পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়ায় কর্তৃত্ববাদী
শাসন, বিরোধী মত দমন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ইস্যু
সামনে এনেছিল। মাহাথিরকে চাপে রাখতে সেখানে উগ্র মৌলবাদীদের উসকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। মাহাথিরকে থামাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে গোপনে নানা সহায়তা
দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যাতে তারা মাহাথিরের বিরুদ্ধে শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে।
মালয়েশিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধী মত দমন নিয়ে সোচ্চার হয়েছিল। কিন্তু মার্কিন
প্রশাসন মালয়েশিয়ার সরকার পরিবর্তন করতে পারেনি। মাহাথির ২০০৩ সালে শান্তিপূর্ণভাবে
ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেও
অর্থনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করেনি। দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বেড়েই গেছে।
কারণ, অর্থনৈতিক কারণে মালয়েশিয়া ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আবার ক্রমবর্ধমান
অগ্রগতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়ারও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন ছিল। দুই দেশের বিশ্ব
রাজনীতি নিয়ে ভিন্ন অবস্থানের পর কূটনৈতিক সম্পর্ক অটুট ছিল। এ সময় মাহাথির মোহাম্মদ
এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি শত্রু হয় তাহলে
বিপজ্জনক আর যদি বন্ধু হয় তাহলে তা মারাত্মক।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পেশাদারিত্বের
এক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। বন্ধু বা শত্রু হননি। যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করতে এতটুকু
ভয় পাননি। আবার তাদের ভালো কাজের প্রশংসাও করেছেন।
ঠিক কুড়ি বছর
পর মাহাথিরের মতো একজন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বিশ্বনেতা দেখল বিশ্ব। সেই নেতার নাম শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার একটি বড় গুণ হলো- স্পষ্টবাদিতা। তিনি যা বিশ্বাস করেন তা সরাসরি বলেন।
কোনো রাখঢাক ছাড়াই। অপ্রিয় সত্য বলতে তিনি পিছপা হন না। সত্য সরাসরি স্পষ্ট করে বলার
বিপদ জেনেই তিনি অপ্রিয় সত্য উচ্চারণ করেন। রাজনীতিতে এ জন্য যেমন তাঁকে অনেক কঠিন
পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে, তেমনি জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা তিনি এ জন্য অর্জন করেছেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম, সে কখনো করে
না বঞ্চনা।’ এ কবিতার পঙ্ক্তি যেন শেখ হাসিনার পথচলার দিশারী। তিনি জানেন, অনেকে অসন্তুষ্ট
হবে, বিব্রত হবে তবুও তিনি ৭৫ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেছেন,
‘এত নেতা, এত বড় দল তারা কোথায় ছিল।’ ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কীভাবে হারানো
হয়েছে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অকপটে। বলেছেন, ‘গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র
২০০১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি।’ ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে
জেতাতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর ভূমিকা নিয়েও আওয়ামী লীগ সভাপতি একাধিক বক্তৃতায়
স্পষ্ট, খোলামেলা কথাবার্তা বলেছেন। এসব বক্তব্যের পার্শ¦প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে,
কোনো প্রভাবশালী দেশ অসন্তুষ্ট হবে কি না ইত্যাদি ভাবনা তাঁকে সত্য উচ্চারণে পিছপা
করেনি। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে জনগণকে পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রের কথা খোলামেলাভাবে জানিয়ে
দিয়েছেন। লাভ-ক্ষতির নিক্তিতে সত্যকে মাপেননি। এটাই শেখ হাসিনা। সাহসী উচ্চারণই শেখ
হাসিনার শক্তি। এ কথাটি আজ সবাই জানে। তবে ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় সংসদে দেওয়া
বক্তব্য অতীতের সব বক্তব্যকে ছাপিয়ে গেছে। জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে
তিনি ছিলেন আত্মপ্রত্যয়ী, স্পষ্টভাষী, আক্রমণাত্মক এবং সাহসী। প্রধানমন্ত্রীর যে কোনো
রাজনৈতিক বক্তব্যে একটি দার্শনিক মর্মার্থ থাকে। শেখ হাসিনার বক্তব্যের তাৎপর্য অত্যন্ত
গভীর। শুধু দেশের প্রেক্ষাপটে নয়, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার বক্তৃতা গভীর তাৎপর্যময়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ বক্তৃতায় তিনি গণতন্ত্রের সব শত্রুকে একসঙ্গে চিহ্নিত
করেছেন, সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি তাঁর বক্তৃতায় মুসলিম বিশ্বের সংকটও উঠে এসেছে।
এ বক্তৃতায় তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন আবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার
কথাও স্মরণ করেছেন। আমি মনে করি তিনটি কারণে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য আলাদা গুরুত্ব
রাখে। প্রথমত. সময়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময়টি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। জাতীয়
সংসদ নির্বাচন নিয়ে যখন নানামুখী মেরুকরণ ঠিক তখন সংসদ নেতার এ বক্তব্য। প্রধানমন্ত্রী
যখন এ বক্তব্য রাখছিলেন তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন ওয়াশিংটনে অবস্থান
করেছিলেন। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের কয়েক ঘণ্টা পরই ড. মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। নানা কারণে বিশেষ করে আগামী জাতীয়
সংসদ নির্বাচনের আগে মোমেন-ব্লিঙ্কেন বৈঠক ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বৈঠকের আগে
সংসদ নেতা কি ইচ্ছাকৃতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করলেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে কথাগুলো
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে সাহস পান না সেই কথাগুলো বলে প্রধানমন্ত্রী কি বাংলাদেশের
বার্তাটি পৌঁছে দিলেন। বৈঠকের আগে নিশ্চয়ই মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে মি. ব্লিঙ্কেন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জেনেছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক
বৈঠকে হয়তো এর দৃশ্যমান প্রভাব চোখে পড়বে না। কিন্তু মার্কিন নীতিনির্ধারকরা নিশ্চয়ই
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তাদের কৌশল পুনর্বিন্যাস করবে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও প্রধানমন্ত্রীর
বক্তব্যের সময়টি গুরুত্বপূর্ণ। যখন চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব-ইরান বৈরিতার ইতি ঘটতে
শুরু করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে একটি বলয় তৈরি হয়েছে। তখন ‘মুসলিম দেশগুলো
কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে’ বলে শেখ হাসিনা মূলত প্রগতিশীল, উদার মুসলিমপ্রধান
দেশগুলোর নেতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন। যেমনটি হয়েছিলেন মাহাথির।
প্রধানমন্ত্রীর
বক্তব্যের দ্বিতীয় তাৎপর্য হলো সব ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর জাতীয়
সংসদের ভাষণে গণতন্ত্রের পাঁচ প্রতিপক্ষকে একসঙ্গে চিহ্নিত করেছেন। শেখ হাসিনা সংসদের
ভাষণে যাদের সমালোচনা করেছেন তারা হলেন বিএনপি এবং তাদের নেতৃবৃন্দ। প্রথম আলো এবং
ডেইলি স্টার গোষ্ঠী। সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সর্বশেষ মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্র করছে এ পঞ্চভূত। বিএনপি
তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে নির্বাচনে যাবে না- এ দাবিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং উত্তেজনা
সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাতাস দিচ্ছে সুশীলরা। সুশীলদের এ তৎপরতাকে
ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রথম আলো গোষ্ঠী। সুশীলরা এবং প্রথম আলো মিলে দেশে আবারও এক-এগারোর মতো
একটি অনির্বাচিত সরকার আনতে চায়। এ জন্যই তারা বিএনপির আন্দোলনে মদদ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী
সুশীল নিয়ন্ত্রিত প্রথম আলো এক-এগারোর সময় কী ভূমিকা পালন করেছিল তা-ও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, এ পুরো গণতন্ত্রবিনাশী তৎপরতায় পৃষ্ঠপোষকতা
করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এ আগ্রাসী ভূমিকার কারণ তাদের স্বার্থ এবং ড. ইউনূসের
তৎপরতা। প্রধানমন্ত্রী কোনো রাজনৈতিক সভামঞ্চে বা সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে এ ষড়যন্ত্রের
মুখোশ উন্মোচন না করে কেন সংসদে করলেন? এ প্রশ্নের উত্তরে আমার মনে হয় তিনি ইচ্ছা করেই
এ বক্তব্যটি জাতীয় সংসদে রেকর্ড করে রাখলেন। জাতীয় সংসদে সংসদ নেতা হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে
একটি বার্তা দিলেন। যাদের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতার ‘ওলটপালট’ করতে চাইছে তাদের
দোষত্রুটি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বুঝিয়ে দিলেন ষড়যন্ত্রকারীরা অযোগ্য। ভালো বিকল্প নয়।
সংসদ নেতার ভাষণের তৃতীয় তাৎপর্য হলো- ক্ষমতাকে তুচ্ছজ্ঞান করা। আমার বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর
ভাষণের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কথা ছিল এরকম- “হ্যাঁ তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যে কোনো দেশে
ক্ষমতা উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে আরও কঠিন অবস্থার
মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।” প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্ষমতা’ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।
তারপরও তিনি সত্য উচ্চারণে দ্বিধাহীন। এখান থেকেই বোঝা যায় শেখ হাসিনা এখনো ক্ষমতার
মোহে দিকভ্রান্ত হননি। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ক্ষমতালোভীরা কত কিছু করে। যুক্তরাষ্ট্রের
মর্জি মতো চলার সব চেষ্টা করে। মার্কিন ভয়ে স্বাধীন ও স্বকীয় সত্তা বিসর্জন দেয়। কিন্তু
শেখ হাসিনা দেশের ও জনগণের স্বার্থের বাইরে কিছুই করেন না। এমনকি ক্ষমতা হারানোর ভয়েও
তিনি আদর্শ বিচ্যুত হন না। ক্ষমতার লোভে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কারও অন্যায্য প্রস্তাব
যে শেখ হাসিনা মানবেন না, এ বক্তব্য তাঁর এক দলিল।
প্রশ্ন হলো,
যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যি বাংলাদেশের ক্ষমতার ওলটপালট করতে চায়? এ জন্যই কি নির্বাচন ইস্যুকে
তারা সামনে এনেছে। একথা ঠিক বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ এখন রীতিমতো
বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেই দিয়েছে আগামী নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক
অর্থাৎ বিএনপির মতো প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ এ নির্বাচনে নিশ্চিত করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র
বলেছে, নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। এর কোনো ব্যত্যয় হলে তারা যে সেই
নির্বাচন মানবে না। এখন বিএনপি বুঝে গেছে তাদের ছাড়া নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে
গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই তারা আরও গো ধরে বসে আছে। এর ফলে গণতন্ত্র সংকটে পড়ার শঙ্কায়।
যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আগ্রহী হতো তাহলে
দুটি কাজ করত। প্রথমত. তারা নির্বাচন কীভাবে হচ্ছে তা দেখত। কারা অংশগ্রহণ করছে না
করছে তা তাদের দেখার বিষয় নয়। কারণ একটি দেশে অনেক রাজনৈতিক দল থাকে। সব দল সব নির্বাচনে
অংশ নেয় না। ব্যক্তিগত কারণে, দলগত কারণে অথবা কৌশলগত কারণে কোনো নির্বাচন থেকে একটি
রাজনৈতিক দল দূরে সরে যেতেই পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন মানে বিদ্যমান দলগুলোর মধ্যে যে
নির্বাচন হচ্ছে তা পরিপূর্ণ নিরপেক্ষ এবং অবাধ হচ্ছে কি না সেটি নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত.
যুক্তরাষ্ট্র সত্যি আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করে বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন
সম্ভব নয়। তাহলে তারা বিএনপিকে নির্বাচনে আনার উদ্যোগ নিত। একটি রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা
করত। যুক্তরাষ্ট্রের এখনকার অবস্থান দেখে মনে হতেই পারে তারা রাজনৈতিক সমঝোতা নয় বরং
বর্তমান সরকারকে চাপে ফেলতে চায়। অর্থাৎ নির্বাচন একটি উপলক্ষ মাত্র। বাংলাদেশ নিয়ে
যুক্তরাষ্ট্রের বহুমাত্রিক আগ্রহ আছে। বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের বাড়াবাড়ি রকমের উত্থান
যুক্তরাষ্ট্রের এ আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত নয়। নিষেধাজ্ঞা
উপেক্ষা করে ভারত চুটিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করছে। ভারতের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড়
গণতান্ত্রিক দেশকে চাপ দেওয়ার অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। তাই চীনবিরোধী অবস্থানের
পরও বিশ্ব মেরুকরণে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত অনুগত নয়। পাকিস্তান ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের
হাতছাড়া হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক সংকটে ডুবতে থাকা পাকিস্তান এখন খরকুটোর মতো চীনকে আঁকড়ে
ধরে বাঁচার শেষ চেষ্টায় ব্যস্ত। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র পালিয়েছে। এক সময় বিশ্ব
রাজনীতি এবং সামরিক কৌশলে এ উপমহাদেশ ছিল মার্কিন করতলগত। কিন্তু সেখানে এখন পতাকা
উড়িয়েছে চীন। চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের ‘গিনিপিগ’ হিসেবে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্যে হাত বাড়িয়েছে।
আরব বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারত। কিন্তু সেখানে মার্কিন সূর্য
এখন অস্তমিত প্রায়। নয়া অর্থনৈতিক আধিপত্যবাদে বিচলিত রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ। এ উপমহাদেশে
বাংলাদেশই একমাত্র স্বাতন্ত্র্য কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে টিকে আছে। ‘কারও প্রতি বৈরিতা
নয়, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব’- এ অবস্থানের জন্যই বাংলাদেশ যেমন চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক
সম্পর্ক বাড়িয়েছে, তেমনি ভারতের সঙ্গে বিশ্বস্ত বন্ধুত্বকে নিয়ে গেছে নতুন উচ্চতায়।
’৭১ এর আরেক পরীক্ষিত বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক অটুট রেখেছে বাংলাদেশ। গত ১৪ বছরে
অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন পরাশক্তিদের জন্য অত্যন্ত লোভনীয় এক ভূখ।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে এটি একটি আকর্ষণীয় বাজার। আর বঙ্গোপসাগরের কারণে বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে
গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামরিক উত্তেজনার কারণে ‘বাংলাদেশে’ এখন যুক্তরাষ্ট্রের
মনোযোগ অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আর এ কারণেই ইদানীং এ ছোট্ট ভূখন্ডের গণতন্ত্রের
জন্য মার্কিন নীতিনির্ধারকদের নিদ্রাহীন রাত। তারা এখানে একান্ত অনুগত কাউকে বসিয়ে
নিশ্চিত থাকতে চায়। তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কিছু সিদ্ধান্তে।
যেমন ৪ এপ্রিল জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি
প্রস্তাব পাস হয়। ইউরোপের কয়েকটি দেশ এ প্রস্তাব আনে। বাংলাদেশ এ প্রস্তাবের বিপক্ষে
ভোট দেয়। যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশেই অনেকে এ সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া
এ প্রস্তাবের বিপক্ষে যারা ভোট দেয় তারা হলো- চীন, বলিভিয়া, কিউবা, পাকিস্তান ইত্যাদি।
তাহলে কি বাংলাদেশ তার বহুল প্রশংসিত পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসেছে? বাংলাদেশ কি নতুন
বিশ্ব মেরুকরণে চীন-রাশিয়ামুখী? চার বছর ধরে সেগুনবাগিচার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরকম
অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা বাংলাদেশ সহজেই এড়িয়ে যেতে পারত। এসব সিদ্ধান্ত পশ্চিমা বিশ্বকে
অস্বস্তিতে ফেলেছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে অতিরিক্ত আবেগময় করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
কারও কারও আগ্রহ সন্দেহজনক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীনের আগ্রাসী অর্থনৈতিক কূটনীতির
ফলে কোণঠাসা যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন কারণে আওয়ামী লীগ সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু ভাবতে
পারছে না। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো- যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির
অব্যাহত লবিং এবং প্রচারণা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহলে এরা সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত
মিথ্যাচার করছে। এর ফলে মার্কিন নীতিনির্ধারকরা ভালোই বিভ্রান্ত হয়েছেন। আবার সরকারের
ভিতরের কিছু ব্যক্তির দায়িত্বহীন কর্মকান্ড দুই দেশের সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি করেছে।
এরকম বাস্তবতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কৌশলগত এক সাহসী সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁর জাতীয়
সংসদের ভাষণে। তিনি বুঝিয়ে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিনি মর্যাদার সম্পর্ক চান।
নতজানু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ হতে চান না। তিনি এটাও বুঝালেন অযোগ্য অনুগতের চেয়ে
যোগ্য সমালোচক ভালো।
যুক্তরাষ্ট্র
কি বাংলাদেশের সঙ্গে কিউবা, ভেনেজুয়েলা কিংবা সিরিয়ার মতো আচরণ করবে? নাকি মালয়েশিয়া,
তুরস্কের মতো আচরণ করবে? ৭১-এ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল।
সে সময় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র আর সোভিয়েত ইউনিয়নে
বিভক্ত ছিল বিশ্ব। এখন সেই যুক্তরাষ্ট্রও নেই, বাংলাদেশও সে রকম পরনির্ভর অবস্থানে
নেই। বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশ একে অপরের
ওপর নানাভাবে নির্ভরশীল। তাই বাংলাদেশ চট করেই মার্কিনবিরোধী অবস্থানে যাবে না। এটা
যাওয়াও অনুচিত হবে। আবার যুক্তরাষ্ট্রকেও বুঝতে হবে ধমক দিয়ে, ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশকে
‘গৃহপালিত’ রাখা এখন আর সম্ভব নয়। সেই বার্তাটি প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দিয়েছেন।
বিশ্ব নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা বুঝিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ অংশীদার হতে পারে, ক্রীতদাস
নয়। কিন্তু সমস্যা হলো প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ এবং সরকারের কিছু চাটুকার
ফিদেল ক্যাস্ত্রোর চেয়েও বড় মার্কিনবিরোধী হয়ে গেছেন। তারা এমন সব বেসামাল কথাবার্তা
বলছেন যা দুই দেশের সম্পর্কে বহুমাত্রিক অবনতি ঘটাতে পারে। প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতে
এ ধরনের উন্মাদনা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের যেমন বাংলাদেশকে দরকার, তার চেয়ে বেশি বাংলাদেশের দরকার যুক্তরাষ্ট্রকে। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘে শান্তি মিশনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয়। প্রধানমন্ত্রী মার্কিন চাপের বিপরীতে পাল্টা চাপ দিলেন। বিশ্বে ¯œায়ুযুদ্ধের পর নতুন মেরুকরণ হচ্ছে আবার। এ অবস্থায় বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে দর কষাকষি করতে পারে। চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে। কিন্তু সম্পর্ক শেষ করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতা নয়, মর্যাদার সম্পর্ক দরকার। মালয়েশিয়ার মাহাথির পেরেছিলেন। শেখ হাসিনাও পারবেন নিশ্চয়ই।
মন্তব্য করুন
কিউবার প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যার
বন্ধু, তার শত্রুর দরকার নেই।’ এ কথাটি যে কত বড় সত্য তা বাংলাদেশ এখন খুব ভালো করেই
বুঝতে পারছে। জো বাইডেনের সঙ্গে সেলফি, নৈশভোজে আমন্ত্রণের পর গত শুক্রবার সন্ধ্যায়
ভিসা নীতি প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যক্তি
এবং তাদের পরিবারের ওপর যখন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তখন প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে
অবস্থান করেছিলেন। সেদিনই তিনি জাতিসংঘে ভাষণ দেন। ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারির কয়েক ঘণ্টা
আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া। যুক্তরাষ্ট্র
সম্ভবত এমনই। তাদের হাস্যোজ্জ্বল চেহারার আড়ালে থাকে নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের ভয়ংকর
প্রতিজ্ঞা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ শুরুর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিল, বাংলাদেশ
নিয়ে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাইডেনের মিষ্টি কথা স্রেফ সৌজন্যতা। ‘বাংলাদেশের
সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চমৎকার’ সম্পর্ক ব্লিঙ্কেনের এমন মধুর বাণী স্রেফ কথার কথা। ভারত
কিংবা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের মত বদলাতে পারেনি। বাংলাদেশে
যুক্তরাষ্ট্র তার এজেন্ডা বাস্তবায়নের মিশনে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তাহলে সত্যি কি যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় বসাতে চায়? যারা হবে তাদের একান্ত অনুগত।
যেমনটি তারা করেছে পাকিস্তানে।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতার হাতবদলের একমাত্র উপায় হলো নির্বাচন। বাংলাদেশের
সংবিধান অনুযায়ী, আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত
নির্বাচন হবে কি না, হলেও তা কীভাবে হবে এ নিয়ে এখন নানা বিতর্ক, নানা আলোচনা। বিশেষ
করে গত শুক্রবার কয়েকজনের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণার পর নির্বাচন নিয়ে
অনিশ্চয়তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে একটি অসাংবিধানিক
বা অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করবে। গণতন্ত্রের মৃত্যু হবে। বাংলাদেশকে একাধিকবার
এরকম দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে। বাংলাদেশকে কি আবার সেই পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? মার্কিন
ভিসা নিষেধাজ্ঞা তারই যেন এক বার্তা।
বিএনপি একদফা দাবিতে আন্দোলন করছে। প্রতিদিনই সমাবেশ, রোডমার্চের মতো নানা কর্মসূচিতে
ব্যস্ত ১৬ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। বিএনপি বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন
হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন
নয়, এমন একটি অনড় অবস্থান নিয়েছে দলটি। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও একই দাবিতে
আন্দোলন করেছিল। বিএনপির তীব্র আন্দোলনের পরও সরকার সে সময় নির্বাচন করতে সক্ষম হয়।
২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থীরা ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছিলেন,
তখন সবাই মনে করেছিল এ সংসদ বেশি দিন টিকবে না। দ্রুতই আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন
অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ শেষ পর্যন্ত
পূর্ণ মেয়াদে কার্যকর থাকে। এটিই বাংলাদেশে ’৭৫-পরবর্তী প্রথম সংসদ যেখানে দেশের প্রধান
দুটি দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) একটির অনুপস্থিতি সত্ত্বেও মেয়াদ পূর্ণ করে। এর আগে
১৯৮৬-এর নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল। ’৮৭-তে সংসদ ভেঙে দেন এরশাদ। ’৮৮-এর নির্বাচন
আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলই বর্জন করে। ’৯০-এ গণআন্দোলনে এরশাদের পতন হলে, ওই সংসদও
বিলুপ্ত হয়। ’৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একতরফা নির্বাচন করে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে
বিরোধী দলগুলো তখন একাট্টা হয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন
করছিল। বিরোধী দলের দাবিতে উপেক্ষা করে বেগম জিয়া একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটেন। কিন্তু
আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে বেগম জিয়া সংসদ ভেঙে দিতে বাধ্য
হন। ওই সংসদ একটি কাজ করেছিল। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে
সন্নিবেশিত করেছিল, যা ২০১১ সালে সংবিধান থেকে অপসারিত হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি
অংশগ্রহণ করেছিল দলীয় সরকারের অধীনেই কিন্তু ওই নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপিদলীয় সরকারের
অধীনে আর কোনো নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনও বর্জন
করছে দলটি। এবার অবশ্য প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই বাংলাদেশের
গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন এবং দুর্নীতি পশ্চিমাদের জন্য বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের
কাছে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয়
ইউনিয়নের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা চরমে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হতে হবে,
অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের দাবিকে সমর্থন করেনি। কিন্তু ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচনের শর্ত জুড়ে দিয়ে নির্বাচন
কে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এটাই এখন বিএনপির শক্তির প্রধান উৎস। বিএনপি মনে করছে,
২০১৪ সালের মতো এবার আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করলে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমারা তা
মেনে নেবে না। ফলে এ নির্বাচনের আগে-পরে নানা নিষেধাজ্ঞা দেবে। বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক
সম্পর্ক গুটিয়ে নেবে। একতরফা নির্বাচন করলেও সরকার টিকতে পারবে না—এমন হিসাবেই বিএনপি
নেতারা ফুরফুরে আত্মবিশ্বাসী। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
গত ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনকে লেখা এক চিঠিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক
না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। বাজেটের অজুহাত দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে
আনুষ্ঠানিক চিঠিতে বলা হলেও এর পেছনে অন্য তাৎপর্য আছে। গত ৬ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফর করে। ওই সফরে তারা প্রধান
প্রধান রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে
কথা বলেন। নির্বাচন নিয়ে আপাতত বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা
নেই, এমন ধারণা থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ সিদ্ধান্ত নিল বলে আমার ধারণা। ইইউ শুধু যে
বাংলাদেশে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই নয়, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ইত্যাদি
ইস্যুতে হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে সম্প্রতি গৃহীত এক
প্রস্তাব বাংলাদেশের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের পোশাক খাতের
সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ। সেখানে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পায়। এ রপ্তানি সংকুচিত হলে
কিংবা জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার হলে বাংলাদেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। এমনিতেই
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রতিদিন কমছে। এরকম পরিস্থিতিতে
ইইউ বাণিজ্য সংকোচন নীতি নিলে তা হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো। তাহলে কি ইউরোপীয়
ইউনিয়ন বুঝেশুনেই হুমকি দিয়ে রাখল। ইইউ গণতন্ত্রকে মানবাধিকারের অন্যতম শর্ত মনে করে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত কি আগামী নির্বাচন ব্যাপারে তাদের অনাস্থার
প্রকাশ। একতরফা নির্বাচন করলে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবেই
কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে এ প্রস্তাব। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ যদি নির্বাচনকে
স্বীকৃতি না দেয়, তাহলে একতরফা (বিএনপিকে বাদ দিয়ে) নির্বাচনের ভার কি সরকার বইতে পারবে?
২২ সেপ্টেম্বরে কয়েকজনের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর বিভিন্ন মহলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
মুখে যে যাই বলুক, একটা ভয় সঞ্চারিত হয়েছে সরকারের ভেতর। আগামী ৭ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে। বিএনপি ছাড়া নির্বাচন যে যুক্তরাষ্ট্র
মেনে নেবে না, এটা এখন স্পষ্ট। প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন নিয়েই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের
শেষ অবস্থান জানাবেন। যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন চায় না, এমন বক্তব্য
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই দেওয়া হচ্ছে। ‘বাংলাদেশে একটি তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে
চায় যুক্তরাষ্ট্র—এমন অভিযোগ এসেছে শাসক দলের পক্ষ থেকেও। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে,
তারা বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে
যাই বলা হোক না কেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার জন্য বিশ্ব মোড়লের যে ভূমিকা
আছে, তার অস্বীকার করবে না কেউই। বিএনপি, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান
অবলীলায় একবিন্দুতে মেলানো যায়। বিএনপি বলছে, তারা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে
না। আর পরোক্ষভাবে পশ্চিমারা বলছে, বিএনপি ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। তাহলে
বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জন করে আর পশ্চিমা দেশগুলো যদি বলে বাংলাদেশের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক
হচ্ছে না। এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। সে ক্ষেত্রে কী হবে? গণতন্ত্র কি নির্বাসনে যাবে?
দেশে আবার একটি অসাংবিধানিক শাসন কায়েম হবে?
কয়েকজন বাংলাদেশির বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ ব্যাপারে
প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী
ছিলেন আত্মবিশ্বাসী, দৃঢ়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশিদের ওপর মার্কিন ভিসা নীতিতে ভয় পাওয়ার
কিছু নেই। বাইরের দেশ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হলে বাংলাদেশের জনগণও
তাদের নিষেধাজ্ঞা দেবে।’ মার্কিন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী। ঝুঁকি
নিয়ে হলেও বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়াবাড়ি নিয়ে তিনি কঠোর সমালোচনা করেছেন।
আত্মমর্যাদা এবং সম্মানের অবস্থান ধরে রেখেছেন। কিন্তু সরকারের মধ্যে অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর
অবস্থানের বিপরীত কর্মকাণ্ড করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
ভূমিকা বিতর্কিত, বিভ্রান্তিকর। সকালে তারা এক কথা বলে, বিকেলে বলে আরেক কথা। মার্কিন
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী যেন মতামত দেওয়ার প্রতিযোগিতায়
লিপ্ত হলেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বললেন, ‘নির্বাচনের আগে আর কোনো ভিসা নিষেধাজ্ঞা
আসবে না।’ এ তথ্য তিনি কোত্থকে পেলেন? আবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্কে বসে বললেন,
তিনি নাকি ভিসা নিষেধাজ্ঞায় ‘ভেরি মাচ হ্যাপি (খুব খুশি)।’ একাধিকবার তিনি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ
সম্পর্ক নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তা দায়িত্বহীনই শুধু নয়, কূটনীতির জন্য বিপজ্জনকও বটে।
বিশেষ করে দিল্লিতে জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবি তোলার পর ড. মোমেন যা বলেছেন,
তারপর তিনি কীভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকেন, তা ভেবে পাই না। যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে
প্রতিনিয়ত ভুল বার্তা দিয়ে তিনি সরকারকে বিভ্রান্ত করছেন কি না, সে প্রশ্ন এখন উঠতেই
পারে। সরকারের ভেতর বেশ কিছু মার্কিনপ্রেমী আসলে খুনি মোশতাকের ভূমিকায় অবতীর্ণ কি
না, তা ভাবতেই হবে। আওয়ামী লীগের কিছু হাইব্রিড নেতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে
নিজেদের গুরুত্ব বাড়ান। অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের কারও সঙ্গে ফটোসেশন করেই, সবকিছু ঠিক
হয়ে যাওয়ার বার্তা দেন। সকাল-বিকেল মার্কিন দূতাবাসে ধরনা দেন। পিটার ডি হাসকে রাজার
মর্যাদা দিয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে ধন্য হন। এরা এখন কী বলবেন? ‘যুক্তরাষ্ট্রকে
চটানো যাবে না’—আওয়ামী লীগে সারাক্ষণ যারা এ বার্তা দেন, ব্লিঙ্কেনকে মেইল দিয়ে যেসব
নব্য আওয়ামী নেতা ‘মার্কিন বশীকরণ’ বটিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দেন, তাদের মতলব কী? এরা
আসলে কার এজেন্ট। দলের ভেতর এসব অপরিণামদর্শী বাচালদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি পারবেন
দেশে একটি নির্বাচন করতে? নাকি মার্কিন অভিপ্রায়ের বাস্তবায়ন চলছে সরকারের ভেতরেই?
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
ভিসা নিষেধাজ্ঞা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন ভিসা নীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন ভিসা নীতি প্রাক পর্যবেক্ষণ দল
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিউইয়র্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
প্রথম পর্যায়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরপরই প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের মধ্যে খোঁজ খবর নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মহল টেলিফোনে একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছেন যে, কারা কিভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এলেন। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার জন্য এক ধরনের মরিয়া চেষ্টা দেখা গেছে। তবে লক্ষণীয় ব্যাপার যে প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ব্যক্তি ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর এক ধরনের ভয় এবং আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
আমি জ্যোতিষী নই। ভবিষ্যৎ গণনা আমার কাজ না। বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের আগে কি ঘটতে পারে কোন জ্যোতিষীর পক্ষেও এখন বলা সম্ভব কিনা আমার সন্দেহ । হয়তো তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আগামী দিনের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের একটি ধারণা পাওয়া যেতেই পারে। ১০০ দিনের মধ্যে দেশে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এ ব্যাপারে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন আগামী জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু দেশে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কিনা, তা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে কি বিএনপি অংশ নেবে? বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন করা কি আদৌ সম্ভব হবে? সেরকম একটি নির্বাচন কি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পাবে? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন এখন বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে। অফিসে, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে, চায়ের আড্ডায়, হাটে-বাজারে এসব নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। অজানা এক গন্তব্যে বাংলাদেশ।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটুকু অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হবে, নির্বাচনের পরিবেশ কতটুকু আছে তা পর্যবেক্ষণ করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি প্রতিনিধি দল আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশে আসছে বলে জানা গেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এর যৌথভাবে স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষা (পিইএএম) পরিচালনা করবে। ছয় সদস্যের এই প্রতিনিধি দল আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানা গেছে। নানা কারণে এই প্রতিনিধি দলের সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। বিশেষ করে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অনড় অবস্থান বারবার পুনরুক্ত করছে।
বাংলাদেশের ব্যাপারে পাঁচটি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনোরকম সমঝোতায় পৌঁছতে চাচ্ছে না। এ নিয়ে তাদের অনড় অবস্থানের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন। সেখানে তারা বিভিন্ন মার্কিন কূটনৈতিক কর্মকর্তার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলেট এর সাথে গত মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিব। এছাড়াও পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সাথেও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৈঠক করেছেন। উজরা জেয়ার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।