এডিটর’স মাইন্ড

‘তাজউদ্দীন’রা কেন উপেক্ষিত

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩


Thumbnail

১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ’৭১ সালের এই দিনে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেয়। সীমান্তবর্তী বৈদ্যনাথতলায় এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম মন্ত্রিসভা দায়িত্ব গ্রহণ করে। বৈধ্যনাথতলার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মুজিবনগর’। ইতিহাসে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম এ সরকারকে ‘মুজিবনগর সরকার’ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। আমার বিবেচনায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ১০ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল সময়কালটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমএমএ এবং এমপিরা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম নির্বাচিত হন উপরাষ্ট্রপতি। আর তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় নিশ্চিত করতে তিনি এক অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের পর তাজউদ্দীন আহমদই তার (বঙ্গবন্ধুর) দেখানো পথে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যান। স্বাধীন বাংলাদেশকে বাস্তবতায় রূপ দেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তাজউদ্দীন আহমদ অমর হয়ে থাকবেন চিরকাল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর প্রধান এ সেনাপতি ধীরে ধীরে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। একসময় তাজউদ্দীন আহমদ ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে ছিটকে পড়েন। অনেকের সঙ্গে আমিও একমত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসতই। জাতির পিতা সেভাবেই বাঙালি জাতিকে প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদ বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে সংগঠিত করেছেন। ’৭১-এর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধুর শূন্যতা অনেকটাই পূরণ করেছিলেন। এ বাস্তবতা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ’৭১-এর পর থেকেই আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি কুচক্রী মহল বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীন আহমদের তুলনা করার অর্বাচীন ও অপ্রয়োজনীয় চেষ্টা করে। ফলে, তাজউদ্দীন আহমদের কৃতিত্ব বড় করলে বঙ্গবন্ধুর অবদান খাটো করা হবে এরকম একটি ভ্রান্ত এবং বিভ্রান্তিকর ধারণা আওয়ামী লীগের মধ্যে পেয়ে বসে। এ কারণেই স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে উপেক্ষিত হতে থাকেন তাজউদ্দীন আহমদ, মুজিবনগর সরকার। তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার ৯ মাসে বহুমাত্রিক যুদ্ধ করেছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধ। মুজিবনগর সরকারে খুনি মোশতাক চক্রের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুদ্ধ। মুজিব বাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব। এসব প্রতিকূলতা জয় করে এগোতে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারকে। অনেক ক্ষেত্রে তাজউদ্দীন আহমদ কঠোর ছিলেন। স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি আপস করেননি। কোনো ছাড় দেননি। এ জন্যই বাংলাদেশ বিজয় লাভের পর তাজউদ্দীন আহমদের বিরোধিতাকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলে, চাটুকার এবং ষড়যন্ত্রকারীরা ঘিরে ফেলে বঙ্গবন্ধুকে। খুনি মোশতাক আর বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ছাত্রনেতারা একজোট হন তাজউদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধে। তাকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিপক্ষ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী বানানোর ষড়যন্ত্র ক্রমেই সফল হতে থাকে। তাজউদ্দীন চাটুকারিতা করতে পারেন না। ভুল তথ্য দিয়ে নেতাকে বিভ্রান্ত করতে পারেন না। নেতাকে অপ্রিয় সৎ পরামর্শ দিতে পিছপা হন না। ফলে ধীরে ধীরে তিনি অপ্রিয় মানুষ হতে থাকেন। খুনি মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, ওবায়দুর রহমানের মতো চাটুকার তোষামোদকারী ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুর চারপাশে জাঁকিয়ে বসেন। তাজউদ্দীন সম্পর্কে এত নেতিবাচক এবং অসত্য তথ্য বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া হয়, একপর্যায়ে দুই নেতার সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি করে। সৃষ্টি হয় দূরত্ব। বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীন আহমদের কাছে কখনো শুনতে চাননি ’৭১-এর ৯ মাস যুদ্ধের মেরুকরণ। কার কী ভূমিকা ছিল। বরং তাকে নানা মনগড়া কল্পকাহিনি শুনিয়েছে খুনি মোশতাক এবং ছাত্রনেতারা। অভিমানী, ব্যক্তিত্ববান তাজউদ্দীনও যেচে বঙ্গবন্ধুকে সেই সময়ের ঘটনাগুলো বলেননি। ফলে মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু একপক্ষীয় খণ্ডিত বক্তব্য পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকাকালে কখনো মুজিবনগরের আম্রকাননে যাননি। তাকে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের আত্মপ্রকাশের স্থানে না যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করা হয়েছিল। দুই নেতার দূরত্বের মধ্যেই ১৯৭৪ সালে তাজউদ্দীন আহমদকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেন বঙ্গবন্ধু। তাজউদ্দীন উপেক্ষার শেষপ্রান্তে গিয়ে দাঁড়ান। রাজনীতিতে কোণঠাসা হতে হতে তিনি অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়েন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর তাজউদ্দীন গ্রেপ্তার হয় প্রমাণ করেন নেতার যোগ্য সহচরদের আসল পরিচয় দুঃসময়ে। ৩ নভেম্বর ’৭৫-এ জেলে শহীদ হয়ে তিনি প্রমাণ করেন, আদর্শবানরা কঠিন সময়ে প্রাণ দেয়, চাটুকাররা বিশ্বাসঘাতক হয়। ৭৫-পরবর্তী সময়ে জোহরা তাজউদ্দীন যদি আওয়ামী লীগের হাল না ধরতেন, তাহলে আওয়ামী লীগের ইতিহাসে তাজউদ্দীনের পুনর্মূল্যায়নও হতো না। আজ তাজউদ্দীন জাতীয় চার নেতার সম্মান পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে তার বীরত্বগাথা আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন। কিন্তু আমার কাছে তাজউদ্দীন আহমদ শুধু একজন ব্যক্তি নন, একটি প্রতীক। সৎ মেধাবী, আদর্শের প্রশ্নে অটল নেতাকর্মীদের প্রতীক তাজউদ্দীন। যেসব রাজনীতিবিদ চাটুকারিতা আর তোষামোদ করে পদ-পদবি হাসিল করতে চান না, তারাই তাজউদ্দীন। নেতার ভালোর জন্য নেতাকে যৌক্তিক সমালোচনা এবং অপ্রিয় পরামর্শ দিতে যারা পিছপা হন না, তারাই তাজউদ্দীন। নেতার নির্দেশ বাস্তবায়নে যারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে তারাই তাজউদ্দীন। রাজনীতিতে যারা ত্যাগী, পরীক্ষিত, আদর্শবান তারাই তাজউদ্দীন। কঠিন সময়ে যারা পালায় না বা রংবদল করে না, দৃঢ় প্রত্যয়ে নেতার আদর্শের জন্য লড়াই করে, তারাই তাজউদ্দীন। যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য তাজউদ্দীন আহমদের মতো নেতাকর্মীরা অমূল্য সম্পদ। এরাই দলকে এগিয়ে নেয়। বিজয়ী করে। আওয়ামী লীগে সারা দেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন তাজউদ্দীন আহমদের মতো নিঃস্বার্থ, ত্যাগী কর্মী, নেতা। এরাই আওয়ামী লীগের প্রাণভোমরা। এদের জন্যই ’৭৫-এর পর কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আমি এক অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করি। দুঃসময়ে তাজউদ্দীনরাই লড়াই করে আর সুসময়ে তারা দূরে সরে যায়, উপেক্ষিত হন। অনাদরে অবহেলায় দীর্ঘশ্বাস নেন। সুসময় এলেই আওয়ামী লীগে ভিড় করে অতিথি পাখিরা, চাটুকার, সুবিধাভোগীরা। আগে এসব মতলববাজ শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রের চারপাশে ঘুরঘুর করত। এখন তৃণমূল পর্যন্ত এরা ছড়িয়ে পড়েছে। দুঃসময়ের তাজউদ্দীনরা সুসময়ে এসে নব্য মোশতাকদের কাছে ভীষণ কোণঠাসা। আওয়ামী লীগ আজকের অবস্থানে এসেছে কতগুলো কঠিন সময় পার করে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট। আওয়ামী লীগে বিভক্তি, আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশাল গঠন। ’৯১-এর নির্বাচনে বিপর্যয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবে নির্যাতিত আওয়ামী লীগ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। ২০০৭ সালে এক-এগারো। এই প্রতিটি কঠিন সময়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে দুটি ধারা লক্ষ করেছি। একটি ধারার নেতাকর্মীরা কঠিন সময়ে নেতার পাশে অবিচল থেকেছে। নেতার নির্দেশ পালন করেছে। আদর্শের জন্য লড়াই করেছে। নির্যাতন, নিপীড়ন সহ্য করেও আপস করেনি। আরেকটি ধারা, কঠিন সময়ে পালিয়েছে। আদর্শ বিকিয়ে দিয়ে নেতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। নেতার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। আপস করেছে। এর বাইরে আওয়ামী লীগে একটা অদ্ভুত প্রজাতি রয়েছে। এরা অনেকটা সাইবেরিয়া থেকে আসা শীতের পাখিদের মতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই এরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে। ক্ষমতাকেন্দ্রের চারপাশ দখল করে। মধু খায়। মধুর কথায় নেতাদের বশীভূত করে। তাদের চাটুকারিতা আর ভণ্ডামিতে নেতারা সম্মোহিত হন। তখন কঠিন দিনের তাজউদ্দীনদের চেনে না নেতারা। গত ১৪ বছরে এই ‘নব্য’রাই ক্ষমতাবান হয়ে গেছে। বিভিন্ন সংকটে যারা লড়াই করেছে তারা এখন বিতাড়িত। বিভিন্ন সংকটে যারা বিভ্রান্ত ছিলেন, তারাও এখন নব্য আওয়ামী লীগারদের পেছনে চলে গেছে। এদের কেউ কেউ অবশ্য এখন নব্য আওয়ামী লীগারদের মতো বীভৎস তোষামোদির পথ বেছে নিয়েছে। ফলে ন্যায়নিষ্ঠ নেতাকর্মীরা এখন বহুদূরে। শুধু সরকারে না, তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কমিটিগুলো এখন হঠাৎ বনে যাওয়া আওয়ামী লীগারদের দখলে। এটা আওয়ামী লীগের জন্য অশনিসংকেত। যখনই সুবিধাবাদী, তোষামোদকারী, চাটুকাররা আওয়ামী লীগে প্রভাবশালী হয়েছে, তখনই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দলটি বিপর্যয়ে পড়েছে। বিপর্যয়ে অপাঙ্ক্তেয় ত্যাগীরা এসে হাল ধরেছে, চাটুকার নব্য মোশতাকরা হয় পালিয়েছে না হয় দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সংকটের কথা বলছেন। ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। নির্বাচনে আগে চক্রান্ত হবে বলে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করছেন। এখনই সময়। আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদীদের চিহ্নিত করার। চাটুকারদের দূরে সরিয়ে ত্যাগী পরীক্ষিতদের সামনে আনার। নব্য মোশতাকরা যেন সরকারপ্রধানকে ঘিরে ফেলতে না পারে, তা নিশ্চিত করার। ক্ষমতাকেন্দ্রে মতলববাজদের হটিয়ে যোগ্যদের আনার এই তো সময়। না হলে দেরি হয়ে যাবে। নব্য আওয়ামী লীগাররা শুধু ক্রিম খাবে। এরাই নব্য মোশতাক। আর দুঃসময়ের কাণ্ডারিরা সংকট উত্তরণে মরণপণ লড়াই করবে। যেমন করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭১ সালে। মুজিবনগর দিবসে তাই ত্যাগী, আদর্শবান, নির্ভীক নেতাকর্মীদের দিন। নব্য মোশতাক আর লুটেরাদের প্রতিহত করার দিন। আওয়ামী লীগ কি পারবে সেটা করতে?

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com



মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু: শেখ হাসিনাই হতে পারেন শান্তির দূত

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা। 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে শেখ হাসিনার বিশ্বশান্তির দর্শন জাতিসংঘ অনুমোদিত হয়েছে। এই বিশ্বশান্তি দর্শনের আলোকেই ইসরায়েল ইস্যুতে একটি রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে। 

বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে কঠোর এবং যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ গাজায় নিরীহ মানুষের ওপর অবিচার, হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সবসময় নিন্দা জানাচ্ছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার ঈদের শুভেচ্ছা ভাষণেও মধ্যপ্রাচ্যের মানবিক বিপর্যয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'মাদার অব হিউম্যানিটি' হিসেবে পরিচিত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্ব মানবতার কণ্ঠস্বর হয়েছেন। আর এ কারণেই বিশ্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। উদার মুসলিম দেশের নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে তিনি আলাদা একটি অবস্থানে রয়েছেন। বাংলাদেশ একদিকে যেমন ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা করে, অন্যদিকে ধর্মান্ধ মৌলবাদ এবং ধর্মের নামে উগ্র সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করে। আর এটি বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে। শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে বিশ্বের এমন একজন নেতা যিনি মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সংকট সমাধানের আলোকবর্তিকা হয়ে সামনে দাঁড়াতে পারেন। তার শান্তির মডেলকে সামনে রেখে যদি বিবদমান পক্ষগুলো আলোচনার টেবিলে বসে তাহলে ইসরায়েল ইস্যুতে শান্তি অসম্ভব নয়।

বিশ্বে যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা প্রায় অনেকেই বিতর্কিত এবং পক্ষপাতে দুষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্ব নেতার অবস্থানে থাকতে পারছেন না। চীন এই বিষয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবে পক্ষ করতে চায় না। তাছাড়া বিভাজিত বিশ্বে চীনের নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ মেনে নেবে না এটা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি রাশিয়া এখন নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে সমঝোতায় নেতৃত্ব দেওয়া পুতিনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এরদোয়ান ব্যাপারে ইসরায়েল সহ অন্যান্য দেশগুলোর একটি অবস্থান রয়েছে। তাছাড়া তুরস্ক এই বিতর্কে কতটুকু সহনীয় অবস্থায় থাকতে পারবে তা নিয়ে ব্যস্ত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এই অবস্থায় বিশ্বকে যুদ্ধাবস্থা থেকে সামাল দিতে পারেন একমাত্র শেখ হাসিনাই। তার শান্তির বার্তা যদি বিবাদমান পক্ষগুলো অনুধাবন করে তাহলে এই জটিল কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্ব শান্তি অসম্ভব নয়। আর এই শান্তির জন্য শেখ হাসিনাই হতে পারেন বিশ্ব নেতা। তার শান্তির দর্শন এবং তার শান্তির উদ্যোগের মাধ্যমে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি হতে পারে বিশ্ব।

ইরান-ইসরায়েল   শেখ হাসিনা   শান্তির দূত   জো বাইডেন   ইরান  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন যারা

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

পুরনোদেরকে অসম্মান না করে নতুনদের জন্য জায়গা করে দেওয়ার যে কৌশল সেটি রাজনীতিতে একটি শিক্ষণীয়। কিছু দিন আগেও যারা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাদের বদলে এখন আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন বেশ কিছু নেতা। যারা আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে ১১ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হওয়ার পর যাদেরকে বেশি পাদপ্রদীপে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন;

১. ড. হাছান মাহমুদ: ড. হাছান মাহমুদের পদোন্নতি ঘটেছে। এর আগে তিনি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী। এবার তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। স্পষ্টতই আওয়ামী লীগ সভাপতি তাকে পাদপ্রদীপে নিয়ে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও বটে। কোন কারণে সাধারণ সম্পাদকের পদ খালি হলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে। আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও ড. হাছান মাহমুদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই অনেকে মনে করছেন। আর এই সমস্ত বিবেচনা থেকেই আওয়ামী লীগে এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে সামনে আসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। 

২. জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন নিজ যোগ্যতায়। মাঠের নেতা হিসেবে তার দীর্ঘদিনের সুনাম ছিল। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। রাজনীতিতে চড়াই উতরাই এর মধ্য দিয়েই তিনি এগিয়ে গেছেন তার আদর্শের কারণে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার পর তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে গেছেন। তার পুরস্কার তিনি পেয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে উন্নীত হন। এবার নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের এই নেতা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এবং বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি এখন আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারক হয়ে উঠেছেন। 
৩. আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কর্মী বান্ধব হওয়ার কারণে তার অবস্থান আস্তে আস্তে দৃঢ় হচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের অন্যতম বাহাউদ্দিন নাছিম কর্মীদের কাছে আওয়ামী লীগ সংগঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত এবং সংগঠনের প্রশ্নে অকুতোভয় এবং একনিষ্ঠ এই নেতা মন্ত্রী না হয়েও আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন নীতি নির্ধারক হয়ে উঠছেন নিজ যোগ্যতায়। 

৪. আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক এর মতোই তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। কিন্তু তারপরও তিনি ভেঙে পড়েননি। সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। এবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থার প্রতিদান তিনি ভালো ভাবেই দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের একটি পালা বদল ঘটছে। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু কিংবা শেখ ফজলুল করিমের জায়গা আস্তে আস্তে এই সমস্ত নেতারা জায়গা করে নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের একটা পাইপলাইন তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। যেখানে পর্যায়ক্রমে নেতারা অপেক্ষমান অবস্থায় আছেন। নেতৃত্বের শূন্যতা আওয়ামী লীগে যেন না হয় সেজন্য একটি দূরদর্শী রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আব্দুর রহমান   জাহাঙ্গীর কবির নানক   ড. হাছান মাহমুদ   আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

অন্ধকার ছয়দিন

প্রকাশ: ১০:৩০ পিএম, ১২ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের লোডশেডিং চলছে। গত বুধবার থেকে সংবাদপত্র বের হচ্ছে না। টানা ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধের বিশ্ব রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। না কোন প্রতিবাদে নয়, দাবী আদায়ের জন্য নয়। ছুটির ফাঁদে সংবাদপত্র বন্ধ আছে। সংবাদপত্রকে বলা হয় জরুরী সেবা। চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন জরুরী সেবা দেন, তেমনি সংবাদকর্মীদের কাজও হলো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেয়া। বিশেষ করে ছুটির সময় এটার প্রয়োজন আরো বেশী। এবার দেশে একটা দীর্ঘ ছুটি। এসময় সংবাদপত্র অনেক জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো, ছয়দিন যদি হাসপাতালে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বলতো ছয়দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে না। তাহলে কি হতো? আমিতো মনে করি, সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিষয়টিও তেমনি আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের এনিয়ে বিকার নেই।  

এবার বাংলাদেশ দু’টি বড় উৎসব কাছাকাছি সময় উদ্যাপন করছে। ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করতে না করতেই, আগামীকাল (রোববার) ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ। বাঙালীর সবচেয়ে বড় উৎসব। এদেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। তবে বাংলাদেশে ঈদ-উল-ফিতর কেবল মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব নয়। এ অঞ্চলে বসবাসরত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এই উৎসবে আনন্দ করে। সম্প্রীতির বাংলাদেশে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’-এই রীতি চলে এসেছে দীর্ঘদিন। ইদানিংকার মতো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গিতে কোন ধর্মীয় উৎসবকেই দেখা হতো না। ঈদের দিন অন্য ধর্মের বন্ধুরাও বাসায় আসতো সেমাই মিষ্টি এক সাথে খাওয়া হতো। আবার হিন্দুদের পূজাতেও আমরা যেতাম। অনেক মজা হতো। যতো দিন যাচ্ছে আমাদের ধর্মীয় উদার নৈতিক চেতনাকে গ্রাস করে ফেলছে ধর্মান্ধ সংকীর্ণতা। এখন ঈদ উৎসব যেন অনেকটাই ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলিত। রমজান মাস জুড়ে এক ধরনের কঠোর বিধি নিষেধ থাকে যা স্বতঃস্ফূর্ত না। আরোপিত এবং লোক দেখানো। এই আরোপিত বিধি নিষেধ নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন কিছু ‘বক ধার্মিক’। এদের কারণে গত তিন ঈদে পহেলা বৈশাখ নির্বাসিত ছিলো। পবিত্র রমজানের সাথে পহেলা বৈশাখের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু তারপরও অতি উৎসাহী কট্টরবাদীদের দাপটে শৃঙ্খলিত হয় পহেলা বৈশাখ। অথচ বাঙালী হিসেবে পহেলা বৈশাখীই আমাদের প্রথম এবং প্রধান সর্বজনীন উৎসব। বাংলা বর্ষ বরণ বাঙালীর প্রাণের উৎসব। এই উৎসব অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বেশ কয়েক বছর পর এবার পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হবে বাঁধাহীন ভাবে। বাঙালী জাতি বর্ষবরণ করবে মুক্ত ভাবে। এটা আমাদের জন্য বড় আনন্দের উপলক্ষ্য তো বটেই। কিন্তু এত বড় উৎসব হবে সংবাদপত্রহীন! কি অদ্ভুত! সংবাদপত্র কি দায়িত্বহীন মালিকানার শিকার?

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে। সম্প্রীতির বন্ধনে অটুট। কিছু মানুষ যতোই কট্টর মৌলবাদী হোক না কেন, সাধারণ মানুষ এখনও উগ্র পন্থাকে সমর্থন করে না। এজন্য একই সময়ে একাধিক ধর্মাবলম্বীদের উৎসব এদেশে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয়। এবার রমজানের কথায় ধরা যাক না কেন। এবার রমজানের মধ্যেই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ‘ইস্টার সানডে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোজার মধ্যেই দোল উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায় রং উৎসবে মেতেছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কোথাও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা বলেননি যে, রোজার জন্য ইস্টার সানডে করা যাবে না কিংবা দোল উৎসব বন্ধ রাখতে হবে। ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায় কিছু উপরের তলার মানুষ। যারা ধর্ম প্রতিপালনের চেয়ে লোক দেখানোতে বেশী আগ্রহী। এদের হাতে ধর্ম এবং সংস্কৃতি কোনটাই নয়। এবার ঈদের পরপরই পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হচ্ছে-এজন্য আমি আনন্দিত। বাংলাদেশের মানুষের সামনে এটি এক অনন্য সুযোগ। এর মাধ্যমে প্রমাণ হতে পারে আমরা বাঙালী, আমরা অসাম্প্রদায়িক, আমরা উদার। এদেশের মানুষ যেমন ঈদ উৎসব করলো তেমনি বাংলা নববর্ষকেও বরণ করবে। এই বর্ষ বরণের উৎসব যেন ঢেকে দিচ্ছে সংবাদপত্রে ছুটি। এবার ঈদের ছুটিতে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিকরা। ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে মোট ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধ রাখার এক অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংবাদপত্র মালিকরা। পহেলা বৈশাখে কেন সংবাদপত্র বন্ধ থাকবে? কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ‘ঈদ সংখ্যা’ সাময়িকী প্রকাশ করেছে। এটা ভালো উদ্যোগ। সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে এই সব সাময়িকী গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি আশা করেছিলাম এবার যেহেতু কাছাকাছি সময়ে ঈদ এবং বর্ষবরণ তাই সংবাদপত্রগুলো পহেলা বৈশাখে একটা ছোট সাময়িকী করবে। আলাদা আলাদা সাময়িকী না করুক ঈদ সংখ্যা এবং নববর্ষ সংখ্যা মিলিতভাবে করবে। কিন্তু কোথায় কি, এবার পহেলা বৈশাখে কোন সংবাদপত্রই বেরুচ্ছে না। শুধু পহেলা বৈশাখ কেন? বাংলাদেশে এখন চলছে অন্ধকার সময়। ১০ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল দেশে কোন সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না। এটি নজীর বিহীন। 

অবশ্য কেউ বলতে পারেন, এ যুগে সংবাদপত্র ৬ দিন না ৬ মাস বন্ধ থাকলো কার কি? এখন সংবাদের জন্য কে আর দৈনিক পত্রিকার অপেক্ষা করে? অনলাইন, টেলিভিশন, সোশাল মিডিয়ার এই যুগে কেউ আর খবরের জন্য সকালের সংবাদপত্রের অপেক্ষা করে না। সকাল বেলা এক কাপ চায়ের সাথে একটি সংবাদপত্র এখন উত্তেজনাপূর্ণ রোমাঞ্চ নয়। এসব ঘটনা প্রিন্ট মিডিয়ার অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠারই ইঙ্গিত। কিন্তু তারপরও প্রিন্ট মিডিয়া এখনও বিশ্বস্ততা এবং আস্থার প্রতীক। একজন পাঠক টেলিভিশনে বা অনলাইনে যতো সংবাদই দেখুক বা পড়ুক না কেন, দিনের শেষে তার নির্ভরতা ছাপা কাগজ। অনলাইনে কোন সংবাদ পাঠ করার পর তার সত্যতা যাচাই করে ছাপা কাগজে। তাই এখনও সংবাদ, সঠিক তথ্যের জন্য প্রধান নির্ভরতার জায়গা হলো সংবাদপত্র। তথ্যের এই বিশ্বস্ত উৎস বন্ধ আছে। টানা ছয়দিনের জন্য দেশের মানুষ সংবাদপত্র পাবে না। এই ছয়দিনকে বলা যায় অন্ধকার সময়। সংবাদপত্র বিহীন একটা দিন মানে অন্ধকার দিন-রাত্রি। গত ১০ এপ্রিল থেকে অন্ধকার ছয়দিন শুরু হয়েছে। আমরা যারা সেকেলে মানুষ। ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকা খুঁজি তাদের জন্য এই ছয়দিন দূর্বিসহ, অবর্ননীয়। 

প্রশ্ন হলো সংবাদপত্রের মালিকরা কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিলো? এই সিদ্ধান্ত দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে আরো সংকটে ফেলবে। বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের মালিকানা শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীদের দখলে। প্রধান সব সংবাদপত্রই কোন না কোন শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। বড় শিল্পপতিদের কাছে সংবাদপত্র হলো মর্যাদার প্রতীক। মুক্ত সাংবাদিকতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, পাঠকের কাছে দায় বদ্ধতা ইত্যাদি ব্যবসায়ীদের কাছে মূখ্য বিষয় নয়। সংবাদপত্র এখনকার মালিকদের কাছে ‘ক্ষমতা’ এবং ‘অস্ত্র’। এই ক্ষমতা দেখিয়ে তারা তাদের ব্যবসাকে সম্প্রসারিত করে। সুদৃঢ় করে। সরকার সংবাদপত্র মালিকদের ভয় পায়। ব্যাংক তো তটস্থ থাকে। তাই পত্রিকা থাকা মানে ব্যবসায়ীদের সব মুশকিল আসান। কর্পোরেট হাউসে এখন সাংবাদিকতা নেই, এক ঝাঁক ক্রীতদাস আছে। যাদের একমাত্র কাজ মালিকদের মনোরঞ্জন করা। এদের মধ্যে যিনি সম্পাদক তিনি হলেন সবচেয়ে বড় ক্লাউন। মালিকদের খুশী করাই তার একমাত্র কাজ। পেশাগত উৎকর্ষতা চুলোয় যাক। যিনি মালিকের স্বার্থ যতো নিবিড়ভাবে সুরক্ষিত করেন তিনি ততো বড় সম্পাদক। এই অস্ত্র প্রয়োগ করে মালিকরা প্রতিপক্ষকে ভয় দেখায়। যারা তাদের কথা শোনে না তাদের এই অস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করে। সংবাদপত্রের মালিকানা ব্যবসায়ীদের কাছে একধরনের বর্মের মতো। নিজেদের অপকর্ম, স্বেচ্ছাচারিতা জায়েজ করার জন্য সংবাদপত্রকে তারা ব্যবহার করে। সংবাদপত্রের মালিক হবার কারণে কেউ তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করেনি। এভাবেই চলছে সংবাদপত্র শিল্প। সংবাদপত্র এখন কর্পোরেট ক্রীতদাস। তাই মালিকরা সংবাদপত্র দুই দিন বন্ধ থাকলো না ছয়দিন বন্ধ থাকলো তা নিয়ে ভাবেন না। তারা তাদের ব্যবসা সুরক্ষা পত্রিকা দিয়ে কতটা হলো তা নিয়েই ব্যস্ত। সংবাদপত্র মালিকরা পাঠকের কাছে জবাবদিহিতার বিশ্বাসী নন। তারা দেখেন এই সংবাদপত্র তাদের স্বার্থ কতটা রক্ষা করতে পারছে। ছাপা কাগজ একদিন বের না হলে অনেক সংবাদপত্রের অনেক টাকা সাশ্রয়। এসব বিবেচনা করেই মালিকরা মনে করেছেন পত্রিকা যদি কয়েকটা দিন বন্ধই থাকে, কি এমন ক্ষতি। কিন্তু এই ছয়দিন সংবাদপত্র বন্ধ যে এক ভয়ংকর বার্তা দিলো তাকি মালিকরা অনুধাবন করেন? সংবাদপত্র ছাড়াও যে দেশ চলে, এমন এক ঘোষণাই কি দিলেন না মালিকরা। ভবিষ্যতে এর মূল্য দিতে হবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেই। 

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

সরকারের তিন মাস: সেরা অর্জন

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রথম তিন মাস বর্তমান সরকারের জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করার ফলে এই নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়, নির্বাচনের পর কী ধরনের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সেটি ছিল সকলের কাছে একটি দেখার বিষয়। তবে সরকার প্রথম তিন মাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকট গুলোকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত সরকারের চেষ্টা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোন রকম অভিযোগ নেই। 

সরকার এই প্রথম তিন মাসে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে;

১. নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা আদায়: ৭ জানুয়ারি নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এটি সরকারের একটি প্রধান অর্জন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনকে কীভাবে দেখবেন? নির্বাচনের পরে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের নানা রকম আগাম পূর্বাভাস ছিল, সংশয় ছিল। কিন্তু এই সংশয় উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সফলতা অর্জন করেছে। নির্বাচনের পর প্রায় সব দেশই নতুন সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে। এটি সরকারের জন্য একটি বিরাট অর্জন। এই সরকার যে এত তাড়াতাড়ি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে এটা অনেকেই ভাবতে পারেননি। 

২ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর করার জন্যই সাঁড়াশি উদ্যোগ: নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কিছু বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে একাধিক শিশুর মৃত্যু, অবৈধ হাসপাতালে রোগীদের ভুল চিকিৎসার মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তার সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে হাসপাতালগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। অবৈধ বেশ কিছু ক্লিনিক হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে দুর্নীতির মধ্যে ডুবে ছিল তা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মানুষ সরকারের এই অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছে এবং আশা করছে যে, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধের ক্ষেত্রে তার অবস্থান অটুট রাখবেন এটাই সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে।

৩. সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি: এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি বটে, তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকার সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রির যে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে ভ্যান রমজান মাসে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিতরণ ব্যাপকভাবে ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকাগুলোর মানুষকে সুবিধা দিয়েছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে মিলে দেশের ৩৫ টি জেলায় রাজনীতিবিদ, প্রশাসন নিজস্ব উদ্যোগে সুলভ মূল্যে রমজানের পণ্য বিতরণ করার মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তরমুজ নিয়ে যখন কিছু মধ্যসত্ত্বভোগী লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছে তখন কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকের বাজারের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে তরমুজ বিক্রি করে একটি নজির স্থাপন করেছে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় শিক্ষা যে, বিকল্প চ্যানেলের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পণ্য দিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তা খুব উপকার দেয়।

৪. ব্যাংক একীভূত করা: ব্যাংক একীভূতকরণ উদ্যোগটি নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরেই করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, যে সমস্ত দুর্বল ব্যাংক আছে, সেই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সকল ব্যাংক একীভূত করবে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় সীমা বেঁধে দিয়েছে। এই নির্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যে পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রাজশাহী, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সহ একাধিক ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। এর ফলে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে সকলে প্রত্যাশা করেন এ সমস্ত ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া বানানোর ক্ষেত্রে যারা দায়ী তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে ছাড় দেওয়ার জন্য যেন ব্যাংক একীভূত না হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

৫. অবৈধ দালান-কোঠার বিরুদ্ধে অভিযান: বিশেষ করে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রণালয় অবৈধ দালান এবং অনুমোদিত ভবনের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারের নতুন গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন। তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। বিশেষ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা। এখন পর্যন্ত যে অভিযান চলছে সেই অভিযান সরকারের সফল উদ্যোগের একটি বলেই অনেকে মনে করছেন। এছাড়াও সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ভালো কাজ করছে, যে কাজগুলো ফলাফল পেতে সাধারণ মানুষকে অপেক্ষা করতে হবে। 


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

তোফায়েল আহমেদ: রাজনীতিতে অস্তমিত সূর্য

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ০৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

তোফায়েল আহমেদ কি রাজনীতিতে এক অস্তমিত সূর্য? তিনি কি নিভে যাচ্ছেন? বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তিনি কি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নগুলো এখন খুব বড় করে সামনে এসেছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যারা তোফায়েল আহমেদকে দেখেছেন তারা আগের তোফায়েল আহমেদের ছায়াকেও দেখতে পারেননি। যে তোফায়েল আহমেদ ছিল সরব, যার ভরাট কণ্ঠস্বরে জাতীয় সংসদ প্রকম্পিত হত, যিনি সবসময় সবাইকে চমকে দিতেন বিভিন্ন দিন তারিখের হিসেব মুখস্থ বলে দিয়ে, যার সবসময় শত শত টেলিফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা মুখস্থ থাকত, যা স্মৃতিশক্তি নিয়ে সকলে প্রশংসা করত, রাজনীতিতে যিনি একজন যুবরাজের মত পদচারণা করতেন, নানা রকম বিতর্কের পরও তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন সেই তোফায়েল আহমেদ এখন কোথায়? 

এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তোফায়েল আহমেদ জয়ী হয়েছেন। সংসদে তাকে দেখা যায় কদাচিৎ। তবে তিনি এখন শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকটাই বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন। বিশেষ করে একাধিক অসুস্থতা তাকে এখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটা চলা করতে দেয় না। তার কণ্ঠস্বরের তেজও কেড়ে নিয়েছে তার একের পর এক অসুখ। 

তোফায়েল আহমেদের এক পাশ অনেকটাই অবশ হয়ে গেছে। আর এ কারণেই তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তবে এখনও তিনি লেখালেখি করেন এবং নানারকম রাজনৈতিক আলোচনায় তাকে আগ্রহীও দেখা যায়। তবে আগের যে তোফায়েল আহমেদ, যিনি যে কোন রাজনৈতিক আড্ডা এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মধ্যমণি হিসেবে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন, যার দিকে তাকিয়ে থাকত লক্ষ লক্ষ জনতা সেই তোফায়েল আহমেদ এখন নেই। 

অনেকেই মনে করেন যে, রাজনৈতিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিক ভাবেই তোফায়েল আহমেদ বেশি বিপর্যস্ত। বিশেষ করে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরুর প্রেক্ষাপটেই রাজনীতিতে তিনি নিজেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন। 

গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শোক দিবসের স্মরণে এক লেখায় কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু যখন আক্রান্ত হন, ৩২ নম্বর যখন খুনিরা ঘিরে ফেলে তখন তিনি বেশ কয়েক জনকে ফোন করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন তোফায়েল আহমেদে। হতাশাজনক হলেও তোফায়েল আহমেদ সেই টেলিফোনের পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। এই লেখাটির পর আওয়ামী লীগের মধ্যে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। অনেকে এটা নিয়ে হৈ চৈ করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তোফায়েল আহমেদ এর প্রতিবাদও করতে পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগ সভাপতিকে যারা চেনেন তারা সকলেই জানেন যে, বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে তিনি তথ্য প্রমাণ ছাড়া কোন বক্তব্য দেন না। এই ঘটনার পর আকস্মিকভাবে তোফায়েল আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অনেকে মনে করেছিলেন তিনি হয়ত নির্বাচন করবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন অসুস্থ শরীর নিয়ে। 

এখন তিনি জাতীয় সংসদে আসেন বটে তবে আগের মত সরব উপস্থিতি তার নেই। হয়ত রাজনীতির জীবনে তিনি শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। তবে রাজনীতির ইতিহাসে তোফায়েল আহমেদ চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তার রাজনৈতিক জীবনের দুটি ভাগ সবসময় আলোচিত থাকবে। একটি হল স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর একান্ত বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে তরুণ তুখোড় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ। আরেকটি হল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে তার বিতর্কিত এবং রহস্যময় ভূমিকা। কোন তোফায়েল আহমেদ ইতিহাসে বেশি আলোচিত থাকবেন তা সময়ই বলে দেবে।



তোফায়েল আহমেদ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন